প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর
পার্ট: ৯
চোখ খুলে থাকিয়ে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি, জিসান আব্বু আম্মু পাশে বসে কাঁদতেছেন, আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে আম্মু কান্না থামালেন
আম্মু: আজ দুদিন পর তোর জ্ঞান ফিরলো
আব্বু: আত্মহত্যা করার আগে আমাদের কথা একবারও মনে পরে নি
আমি: সাইয়ান এর সাথে পৃথিবীতে মিলন হওয়া যখন সম্ভব না তখন মরে যাওয়াই ভালো, কেন বাঁচিয়েছ আমাকে
আম্মু: আমরা কি জানতাম তুই যে হাতের রগ কেটে ফেলেছিস, আমি রান্না করছিলাম হঠাৎ একটি ছেলে এসে বললো তুই হাতের রগ কেটে মেঝেতে পরে আছিস তারপর তোকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি
আমি: কোন ছেলে
আব্বু: কে আবার সাইয়ান
আমি: ওকে তোমরা দেখেছ কিভাবে
আম্মু: ও তোর রোমে ঢুকতে পারে না তাই আমাদের দেখা দিয়েছে আর বলেছে তোকে যেন বাঁচাই ও তোর জীবন থেকে চলে যাবে
আমি: ওহ
আব্বু: সাইয়ান চলে যাবে শুনে মন খারাপ করেছিস
আমি:(নিশ্চুপ)
আব্বু: মন খারাপ করতে হবে নারে মা সাইয়ান তোরই হবে
আমি: কিভাবে সম্ভব
আব্বু: ব্ল্যাকম্যাজিক করে আত্মাদের আবার জীবত করা যায়
আমি: কিন্তু কে করবে
আব্বু: আমি এমন তান্ত্রিক খুঁজে বের করবো
আমি: তোমরা তো প্রথমে সাইয়ান কে মেনে নাও নি
আম্মু: আমরা প্রথম ভেবেছিলাম ও খারাপ আত্মা তোর ক্ষতি করবে কিন্তু ও যখন এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো তুই হাতের রগ কেটে ফেলেছিস তোকে যেন বাঁচাই ও তোর জীবন থেকে চলে যাবে তখনি বুঝেছি সাইয়ান তোকে অনেক ভালোবাসে
আব্বু: তুই সুস্থ হলেই আমি তান্ত্রিক এর কাছে যাবো
আমি: আমার যে জ্ঞান ফিরেছে সাইয়ান কে জানিয়েছ
আম্মু: ওকে জানাতে হয় নাকি ও তো এমনিতেই বুঝে যায়
আমি: বাসায় কবে যাবো
আব্বু: কয়েকদিন থাকতে হবে হাতটা একটু ভালো হলেই বাসায় নিয়ে যাবো
আমি: আজকেই চলো বাসায় গেলে এমনিতেই কমে যাবে
জিসান: দুলাভাই কে দেখেই বুঝি কমে যাবে হিহিহিহি
আমি: চুপ ফাজিল অনেক পেকে গেছিস
আব্বু: আজকের দিন থাক আগামীকাল সকালেই চলে যাবো
আমি: ঠিক আছে
পরদিন সকালে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম, হাতটা একদম নাড়াতে পারি না, আম্মু বললো রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে কিন্তু আমার রুমে তো সাইয়ান আসতে পারবে না তাই চিলকোঠোর ঘরে গেলাম
দরজার কাছে যেতেই সাইয়ান আমাকে দেখে একটা হাসি দিল যে হাসি দেখে বার বার প্রেমে পরা যায়, ও এসে আমাকে দরজা থেকেই কোলে তুলে নিল তারপর বিছানায় শুয়ে দিল, কাটা হাতটা আলতো করে ধরে হাতের নিচে একটা বালিশ দিয়ে দিল তারপর আমার মাথার পাশে বসে চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো
সাইয়ান আমাকে এতো ভালবাসে আমি বুঝতেই পারিনি, এমন ভালবাসা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার আর আমার ভাগ্য তো আরো অদ্ভুত যে একটা ভূতের প্রেমে পড়েছি হিহিহি
–এই পাগলী একা একা হাসতেছ কেন
–একা হাসতেছি যখন তুমিও হাসো তাহলে দুকলা হাসা হবে
–খুব ফাজি হয়ে গেছ এভাবে কেউ আত্মহত্যা করতে যায়
–তো কিভাবে করে গলায় ফাঁশি দিয়ে বিষ খেয়ে
–একদম চুপ আর কখনো এসব বলবা না
–এমনটা না করলে কি আম্মু আব্বু তোমাকে মেনে নিতো আর তোমাকে পৃথিবীতে আবার ফিরিয়ে আনতে চাইতো
–তাই বলে আত্মহত্যা
–বাদ দাও তো আচ্ছা আব্বু কি ব্ল্যাক ম্যাজিক এর কথা সত্যি বলেছে নাকি আমাকে মিথ্যে শান্তনা দিয়েছে
–না সত্যিই
–তার মানে আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য পেয়ে যাবো
–জ্বী ম্যাডাম এখন একটু ঘুমাও
–ওকে
ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম, ওকে আমার করে পাবো আর কোনো চিন্তা নেই তাই শান্তিতে ঘুমালাম
রাতে আব্বু এসে জানালেন এক তান্ত্রিক এর খুঁজ পেয়েছেন যে সাইয়ান কে আবার জীবিত করতে পারবে, তার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন আর সদ্য মারা যাওয়া কোনো কাটাছেড়া নেই এমন একটি যুবকের লাশ প্রয়োজন, লাশ, সাইয়ান এর কঙ্কাল আর টাকা নিয়ে অমাবস্যার রাতে তান্ত্রিক এর কাছে যেতে হবে,
আর সাতদিন পর শনিবারেই অমাবস্যা টাকা তো আছে কিন্তু অমাবস্যার দিনই মারা যাবে এমন যুবকের লাশ কোথায় পাবো, যদি অমাবস্যার দিন কোনো যুবক মারা না যায়
আব্বুর কয়েকজন ডক্টর ফ্রেন্ডস আছেন উনাদের আব্বু বলে রেখেছেন শনিবারে কোনো যুবকের লাশ মর্গে আসলে যেন আব্বুকে জানায়
সাতদিন যেন কাটতেই চাচ্ছে না, অপেক্ষার প্রহর সত্যিই খুব কষ্টের, সাইয়ান সবসময় চিন্তিত থাকে যদি এসব কাজে তান্ত্রিক সফল না হয়, আব্বু আম্মু ও অনেক টেনশনে আছেন আর আমি তো পুরো পাগল হয়ে আছি কবে সাইয়ান আমার হবে
অবশেষে অপেক্ষার দিন শেষ হলো, শনিবার আসলো কিন্তু এখনো কোনো লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি, আব্বু বিভিন্ন হাসপাতালে টাকা দিয়ে রেখেছেন লাশ আসলেই যেন খবর দেওয়া হয়
সারা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো কিন্তু কোনো লাশের সন্ধান আসলো না, সাইয়ান কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে গেছে
সন্ধ্যার অনেক পর হঠাৎ আব্বুর এক ফ্রেন্ড জানালেন লাশ পাওয়া গেছে ছেলেটি আজকেই মারা গেছে কিন্তু বড়লোকের ছেলে লাশ আনাটা রিস্ক হয়ে যাবে, আব্বু এসব শুনে ঘাবরালেন না প্রচুর টাকা নিয়ে সেখানে গেলেন, টাকা খরচ করে পুলিশ কে ঘুষ খাইয়ে অনেক জামেলার পর অবশেষে লাশ নিয়ে এলেন……
চলবে?