প্রেমানন্দোল পর্ব-১৬

0
879

#প্রেমানন্দোল-১৬
#তাসনিম_তামান্না

স্বাধীন দ্বিধার লজ্জা মাখা রক্তিম মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
” আপনি কি জানেন? আপনি লজ্জা পেলে আপনার মুখের দু’পাশে আর নাক লাল হয়ে যায়। ইচ্ছে হয় চু-মু খেতে। ”
দ্বিধার লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো। আস্তে করে বলল
” অসভ্য। ঠোঁটকাটা। ”
” অসভ্য, ঠোঁটকাটা রূপটা শুধু বউয়ের জন্য ”
” আপনি পাজি হয়ে যাচ্ছেন ”
স্বাধীন হেসে বলল
” সেটাও বউয়ের জন্য ”
” সেটা বউয়ের জন্য কেনো? আমি আপনার কি করলাম? ”
” আপনি তো আমার মন চুরি করে রেখেছেন। কাজে মন বসতে চাই না ”
দ্বিধা সন্দিহান কন্ঠে দু-হাত কোমড়ে রেখে বলল
” কি হয়েছে বলুন তো? আজীব বিহেভ করছেন কেনো? কিছু আজেবাজে খেয়ে এসেছেন না-কি? ”
স্বাধীন শব্দ করে হাসলো বলল
” আজ কেমন প্রেম প্রেম পাচ্ছে ”
” ইশ! থাকেন আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন ”
দ্বিধা একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। এমনিতেই এখানে থাকলে স্বাধীনের এমন লজ্জাজনক কথা শুনলে কখনো বেহুশ হয়ে যায়।
.
.
রাতে খাবার টেবিলে সকলে থাকলেও স্বচ্ছ বেশি একটা সকলের সাথে বসে খায় না। আজ স্বচ্ছ নেই দেখে স্বাধীনের বাবা বলল
” এসব ওকালতি করে কি পাও? আমার ব্যবসায় তো বসতে পারো না-কি ”
” স্বচ্ছ আছে। ওকে তো কিছু করতে দেখি না দায়িত্বটা ওকে দিন ”
হুংকার দিয়ে উঠে বললেন ” আমার ব্যবসাটা আমি লাটে উঠাতে চাইছি না ”
” এখানে ব্যবসা লাটে উঠানোর কিছু পেলাম না আমি ”
” তোমাকে কাজটা দিতে চেয়েছি তুমি করলে করবে না হলে থাক দরকার নাই ”
” আমি স্বচ্ছকে যত দূর জানি স্বচ্ছকে যে দায়িত্ব দেওয়া স্বচ্ছ সেটা সততার সঙ্গে ফুলফিল করে কাজে এতোটুকু পরিমাণ ফাঁক রাখে না। আর আমার দিয়ে ওসব ব্যবসা হবে না তাই আমার আশা ছেড়ে দেন ”
স্বাধীনের বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন। “বয়স হচ্ছে তার ছেলেদের ওপরে দায়িত্ব দিয়ে নিজে হালকা হতে চাই কিন্তু সেটা আর হচ্ছে কই? ছোট ছেলেকে তিনি ভরসা করতে পারছেন না। তবুও এটা নিয়ে ভাবা উচিত। তার-ও একটা অধিকার আছে। সে-ও তো এবাড়ি ছেলে তার সন্তান তার রক্ত বইছে অস্বীকার করবে কীভাবে? ”

রুমে এসে ঘুমানোর জন্য বেড ঠিক করতে করতে দ্বিধা বলল
” আপনার সাথে ইনপটেন কিছু কথা ছিলো ”
স্বাধীন ল্যাপটপ রেখে আড় মোড়া খেয়ে বলল
” বলুন মহারানী কি বলতে চান ”
” সিরিয়াস ইস্যু হেয়ালি করবেন না প্লিজ ”
” কাকে নিয়ে? ”
” স্বচ্ছকে নিয়ে ”
” কেনো ও আবার কি করলো ”
” আপনি জানেন না স্বচ্ছ বে-আইনি কাজের সাথে যুক্ত ”
স্বাধীন স্বাভাবিক কন্ঠে বলল “জানি”
” তাহলে এখনো কিভাবে শান্ত হয়ে বসে আছে? কিছু করুন এটা বারাবাড়ি রকমের হয়ে গেছে ”
” কি করবো বলুন কম চেষ্টা করি নি তবুও স্বচ্ছ আমার একটা কথাও শুনি নি রাতে মেয়ে নেশাদ্রব্য ওর একাকিত্ব জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে। ও নিজ থেকে না চাইলে আমি মনে হয় না কিছু করতে পারবো ”
.
.
আজ পূর্ণমার চাঁদ উঠেছে। সে দিক পানে উদাসীন ক্লান্ত চাওনিতে তাকিয়ে আছে স্বচ্ছ। মনটা তার বড় অশান্ত হয়ে আছে কোনো কিছুতে ঠিক মতো মন দিতে পারে না। বারে বারে মৃধার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। চোখটা বড্ড তৃষ্ণাতক মৃধাকে একপলক দেখার নেশায় যেনো পাগল প্রায় দুদিন ধরে কলেজের সামনে গিয়েছে তবুও মৃধার দেখা মেলে নি। নিজের মনের ব্যাকুলতা বেশ করে টের পাচ্ছে। আর এসবের কারণও বুকে ডিপ ডিপ করে বাজচ্ছে। ” শেষে স্বচ্ছ ও কোনো মেয়ের প্রেমে পরলো? “স্বচ্ছ হাসলো। তার মনের ব্যকুলতা তার প্রিয়শী কে জানান দিতে হবে খুব শীগ্রই।

মৃধা আজ কয়েক দিন পর ইউনিভার্সিটিতে আসলো। সেদিনের ঘটনার পর মৃধার মা জাহিদ আসতে বারণ করছিলো। কারন মূলত তারা ভয়ে ছিল। আবার না কিছু ঘটে বসে। কিন্তু কয়দিন নিজেকে বাড়ি বন্ধি করে রাখবে মৃধার? এভাবে তার দম বন্ধ হয়ে আসে মাথায় সবটা এলো মেলো হয়ে যায়। কোনো একটা কারণে দমবন্ধ করা কষ্ট হয়… দমবন্ধ করা কান্না পাই… এতো কষ্ট হওয়া কারণ কি? এতো গুলো বছর মৃধার কারোর ওপরে ফিলিংস আসে নি। হুট করে এক অচেনা ছেলে এসে মন চুরি করার মতো একটা অপরাধ মূলক কাজ করলো? এর জন্য তার শাস্তি পাওয়া উচিত… কঠিন শাস্তি…
কিন্তু তার মনে যে ভিষণ কষ্ট, অভিমান, অভিযোগ, একাকিত্ব…! তার ভিতরটা যে অপরাধে কলুষিত হয়ে গেছে। কালো আধরে ভালো মানুষটা হারিয়ে গেলে।
এতোদিন পর ফেন্ডদের কাছে এসে মনটা ভালো হয়ে গেছে কিছুটা তবুও ক্ষণে ক্ষণে স্বচ্ছের ভাবনায় ডুবে যাচ্ছে। বিথি বলল
” কি হয়েছে তোর এমন অন্যমন্যষস্ক হয়ে আছিস কেনো? ”
মৃধা চমকে উঠে বলল ” কই আছি আমি বল শুনছি ”
” না তুই শুনছিস না আমরা সবাই সেটা দেখতে এবং বুঝতে পারছি ”
” হ্যাঁ সেটাই কি হয়ে সেটা বল ”
মৃধা পাশ কাটানো হয়ে বলল
” দূর আমার আবার কি হবে বলতো? ওসব বাদ দিয়ে চল আমার ক্ষুদা লাগছে কিছু খেয়ে আছি ”
কেউ না জানলেও দ্বিধা বেশ করে মৃধার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে।

কলেজ শেষ করে মৃধা বাসায় রওনা দেওয়ার জন্য রিকশা খুজছিলো কোথা থেকে স্বচ্ছ এসে মৃধাকে ডাক দিলো মৃধা চমকালো স্বচ্ছ কাছে এসে বলল
” মৃধা তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো ”
মৃধা নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করলো। কঠিন কন্ঠে বলল
” আপনাকে না বলেছি তুমি তুমি না করতে আপনি বলুন ”
স্বচ্ছ হাসলো চমৎকার হাসি। মৃধা হাসিটা দেখলো স্বচ্ছ সচারাচর হাসে না খুবই কম হাসে। আর তার এই মায়া ভারা হাসিতে কত মেয়ে ঘায়েল হয় সেটা কি স্বচ্ছ জানে? এই যেমন এখন মৃধা ঘায়েল হলো। স্বচ্ছের কথায় মৃধার ঘোর কাটলো স্বচ্ছ বলল
” আপনার সাথে আমার স্পেশাল কথা আছে ”
মৃধা ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
” আমার সাথে আপনার আবার কি স্পেশাল কথা থাকতে পারে? ”
” থাকতে পারে না? ”
” অবশ্যই না। আপনাকে ঠিক ভাবে চিনিও না ”
স্বচ্ছের একটু মন খারাপ হলো। বলল
” আস্তে আস্তে আমাকে জেনে জাবেন। এতো তারা কিসের? বাকিটা জীবন তো পড়েই আছে ”
স্বচ্ছের কথায় মৃধা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে। মৃধা চোখ ছোট ছোট করে বলল
” কি বলছেন বলুন তো? আপনাকে আমার সন্দেহ লাগছে ”
” বলতে চাইছি অনেক কিছু কিন্তু বলতে পারছি না। চলুন কোথাও গিয়ে বসি ”
মৃধা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
” আপনার সাথে আমার কোথাও গিয়ে বসে কথা বলার সম্পর্ক নয়। তাই যা বলার এখানেই বলুন ”
” স্পেশাল কথা তো স্পেশাল ভাবে বলতে হয় এভাবে রাস্তায় রোদে পুড়ে বলা যায় না-কি? ”
” বললেই বলা যায়। তাই ঝটপট বলে ফেলুন আমার তাড়া আছে ”
স্বচ্ছ কথাটা বলতে কিছুটা সময় নিলো মৃধা তাড়া দিতে লাগলো
” আপনি কি আমার আধার জীবনের এক ফালি ভালোবাসার আলো হবেন যা দিয়ে আমার চারিপাশ আলোয় আলোকিত করে রাখবেন। আমার পথ চলার সঙ্গী হবেন? আমি আপনাকে চাই। খুব করে চাই। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে না দেখলে আমার দমবন্ধ হয়ে আছে ভিষণ কষ্ট হয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে