#প্রেমানন্দোল-১০
#তাসনিম_তামান্না
চারিদিকে হইহট্টগোল হাই ভলিউমে গান, নাচ, হাসাহাসিতে মেতে আছে সকলে। দ্বিধা মাথা ব্যথা নিয়ে বসে আছে। এতোক্ষণ বসে থাকায় মাঝায়ও অসম্ভব ব্যথা করছে। এর মধ্যে থেকে উঠে রুমে যেতেও কেমন লাগছে ব্যপারটা সকলের চোখে লাগবে। তাকে নিয়েই তো এতো আয়োজন সে চলে গেলে কীভাবে হবে? দ্বিধার কষ্ট হলেও হাসি মুখে মেহেদি হাতে দিয়ে বসে আছে। সকলের সাথে হাসি মুখে কথা বলছে। স্বাধীনকে দেখা যাচ্ছে না। দ্বিধার পাশ থেকে সকলে উঠে নাচতে গেলো। দ্বিধা টানাটানি করলেও দ্বিধা গেলো না। ক্লান্ত হয়ে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। মাথায় কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে চোখ খুলে দেখলো স্বাধীন দ্বিধার পাশে বসে মাথায় ম্যসেজ করে দিচ্ছে। দ্বিধা সোজা হয়ে বসলো
” মাথা ব্যথা করছে? ”
” না ঠিক আছি ”
” আমি এজন্য বিয়েতে এসব অনুষ্ঠান করতে চাই নি আপনার কষ্ট হবে বলে কিন্তু আমার বোন… ”
” ঠিক আছি আমি ”
“হুম। আপনার ফেন্ডরা আসে নি? ”
” না কাল আসবে ”
” ও ”
” হ্যাঁ। ”
স্বাধীন চুপ করে দ্বিধার পাশে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর স্বাধীন বলল
” খেয়েছেন কিছু? ”
” হ্যাঁ পকোড়া খেয়েছিলাম। আপনি খেয়েছেন? ”
কথার পিঠে কথা বলতে নিলেই সব কাজিন গুলো এসে দ্বিধা আর স্বাধীনকে টেনে স্ট্রেজে নিয়ে গেলো। দ্বিধা স্বাধীন নাচলো না দাঁড়িয়ে হাতে তালি দিতে লাগলো। সকলে ওদের দু’জনকে ঘিরে নাচতে লাগলো। স্বাধীন খেয়াল করলো স্বচ্ছ দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। স্বাধীন স্ট্রেজ থেকে নেমে স্বচ্ছের পাশে এসে দাঁড়ালো। স্বচ্ছ অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকালো। স্বাধীন স্বচ্ছের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকলো স্বচ্ছ আড়চোখে খেয়াল করে বলল
” কিছু বলবে? ”
স্বাধীন স্বচ্ছ সম্পর্কটা অদ্ভুত কখনো তুই আবার কখনো বা তুমি সেটা তাদের উপরে ডিপেন করে। স্বাধীন বলল
” তুমি কি কখনো শুধরাবে না? ”
” নান ওফ ইউর বিজনেস ”
” জানি। কিন্তু তবুও ঠিক হও সময় থাকতে থাকতে আমি চাইছি না তুমি কোনো ঝামেলায় জড়াও ”
স্বচ্ছ চুপ করে রইলো। স্বাধীন আবার বলল
” আমি কিন্তু জানি তুমি কোন খেলায় মেতেছ। সময় থাকতে শুধরে যা-ও ”
স্বচ্ছ স্বাধীনের দিকে একপলক তাকালো। স্বাধীন হেসে বলল
” আজ যখন তোমাকে পেয়েছি। আশা করি কাল আমার বিশেষ দিনেও তোমাকে আমার পাশে পাবো ”
স্বচ্ছ স্বাধীনের মুখ পানে চেয়ে চেয়ে দেখলো। স্বাধীন উঠে নিচে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর সাদিয়া ওপরে এসে সকলকে বলল
” তোমরা সকলে এনজয় করো। দ্বিধার রেস্টের প্রয়োজন ”
সকলে মেনে নিলো। দ্বিধা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই যেনো শান্তি ফিরে পেলো। তন্দ্রা ভাব আসতেই দরজা খুলে স্বাধীন খাবার নিয়ে আসলো। দ্বিধা চমকে লাফিয়ে উঠে বসলো। ভয়ার্ত চোখে স্বাধীনের দিকে তাকালো। স্বাধীন হেসে ফেললো বলল
” রিলাক্স আমি অন্য কেউ নয় ”
” না মানে হুট করে তো সেজন্য ”
” হ্যাঁ বুঝতে পারছি। খাবার আনছি খেয়ে নেন ”
” আপনি খেয়েছেন? ”
” না আপনার কষ্ট হচ্ছে আমি আপনাকে খাইয়ে দি ”
দ্বিধা চমকে গেলো বড় বড় চোখ করে স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে রইলো। অনুভূতি গুলো শূন্যে রঙিন ডানা মেলে আকাশে উড়াল দিলো। কথা বলার মতো শব্দ খুঁজে পেলো না। যেনো খুশিতে বাক হারা হয়ে গেলো। দ্বিধার মনে হলো মনের মতো একটা কেয়ারিং হাসবেন্ড পেয়েছে যেমনটা ও চাই তো ঠিক তেমনটা কতটা ভাগ্যবতী হলে এমন হাসবেন্ড পাওয়া যায়। নিরবতা সম্মতির লক্ষ্মণ ভেবে স্বাধীন ততক্ষণে তানদুরি রুটি ছিড়ে দ্বিধার মুখের কাছে ধরলো। দ্বিধা সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে খাবারটা মুখে পুরে চিবাতে লাগলো।
” আপনি-ও খান আপনি-ও তো খান নি ”
কথাটা বলে দ্বিধা সামনে বসা সুদর্শন পুরুষটাকে এক মনে দেখতে লাগলো। স্বাধীন তাকালে দ্বিধা চোখ সরিয়ে নিলো। স্বাধীন মুখ টিপে হেসে বলল
” লুকিয়ে দেখার কি আছে আমি তো আপনার ই মন ভরে দেখুন ”
স্বাধীনের কথা শুনে দ্বিধার বিশুম লেগে গেলো। স্বাধীন ব্যস্ত হয়ে পানি দিলো। আর খাবার পুরোটা সময় কেউ কোনো কথা বলল না। দ্বিধা লজ্জা পেয়ে আর স্বাধীনের দিকে তাকায় নি মুখ নিচু করে ছিল।
★
অনুষ্ঠানে দ্বিধাকে লাল রংয়ের শাড়ির সাথে গর্জিয়াস সাজ স্বাধীন কালো কোর্ট প্যান দু’জনকে পাশাপাশি বেশ মানিয়েছে। গেস্টরা একে একে এসে পরিচিত হয়ে নিচ্ছে দ্বিধা ও হাসি মুখে সকলের সাথে কথা বলছে। দ্বিধার বাবা-মা আসলে দ্বিধা তাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। দ্বন্দ্ব বলল
” কি রে দ্বিধা কা বাচ্চু কেমন আছিস ”
” তুই আমার ছোট ”
” সো হোয়াট? ”
দ্বিধা রেগে বলল
” আমার মুন্ডু ”
দ্বন্দ্ব এবার বাবা-মায়ের চোখ রাঙানোতে ভালোভাবে বলল
” কেমন আছিস আপুনি ”
দ্বিধা অভিমান করে বলল
” তোদের ছাড়া ভালোই আছি। তোরাও তো ভালো আছিস না আমার মতো আপদকে বাড়ি থেকে বিদায় করে ”
দ্বন্দ্ব আগুনে ঘি ডেলে দেওয়ার মতো করে বলল
” সে আর বলতে বিন্দাস আছি ”
দ্বিধার অভিমান পাহাড়ে গিয়ে ঠেকলো। দ্বিধা বাবা-মা স্বাধীনের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে গেছে। দ্বন্দ্ব আগুনে ঘি ডেলে স্বাধীনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। দ্বিধার রাগে দুঃখ কান্না পেলো।
কিছুক্ষণ পর দ্বিধার ফেন্ডরা আসলো। মৃধা তো দ্বিধাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছে যেনো কত জন্ম পর দেখা হলো। দু’জন দু-জনের প্রাণ কি না।
গেস্টরা আসায় দ্বিধার ফেন্ডরা স্ট্রেজ থেকে নেমে দূরে দাড়ালো। মৃধা শাড়ি ঠিক করতে করতে। হাটছিলো। ধাক্কা খেয়ে দু কদম পিছনে গেলো চোখ তুলে স্বচ্ছকে দেখে অবাক কন্ঠে বলল
” আপনি এখানে? ”
চলবে ইনশাআল্লাহ