প্রেমানন্দোল পর্ব-০২

0
1170

#প্রেমানন্দোল-২
#তাসনিম_তামান্না

“আমার বাদ দেওয়া রিজক্ট ** শেষে তুই কি-না তাকে বিয়ে করলি?”
স্বাধীন রেগে বলল
“মাইন্ড ইউর লাঙ্গগুয়েজ”
“আরে আমাকে ধম’কিয়ে কি হবে? যেটা সত্যি আমি সেটাই বলছি”
“আমি তোর কাছে শুনতে চাইছি কিছু?”
“শুনতে চাস নি তবুও আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে না-কি?”
“দায়িত্ব? বাহ! দায়িত্ব কি সেটা তুই জানিস?”
স্বচ্ছের কথা শুনে দ্বিধার না চাইতেও চোখ দিয়ে অবাধ্য নোনাপানি গড়িয়ে পড়লো। কানে শুধু স্বচ্ছের কথাগুলো বাজাচ্ছে। বিয়ের প্রথম দিনই এমন হতে হলো? বাকি দিন গুলো কেমন যাবে? স্বাধীন আর স্বচ্ছের কথার মাঝে দ্বিধা আর দাঁড়ালো না দ্রুত পায়ে রুমে চলে গেলো।
দ্বিধার যাওয়ার দিকে স্বচ্ছ তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল
“একটা শোন তোর বউয়ের সাথে প্রেম করার সময় আমাদের গভীর থেকে গভীর একটা সম্পর্ক ছিল আই মিন কি বলছিস বুঝতে পারছিস তো? অবশ্য তোকে কিছু বলা লাগে না তুই তো ইনটেলিজেন্ট তুই সবই জানিস”
নিজের বউয়ের সম্পর্কে এমন কথা শুনে কার না মাথার তার কেটে যাবে। স্বাধীন রেগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো। স্বচ্ছ সেটা দেখতে পেয়ে হেসে স্বাধীনের কলার ঠিক করতে করতে বলল
“ইশশ কষ্ট হচ্ছে আফসোস হচ্ছে? ব্যাপার না ডিভোর্স দিয়ে এবার ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করিস তোর দ্বিতীয় বিয়ের দায়িত্ব আমি নিজে হাতে নিবো টেনশন করিস না”
স্বাধীন স্বচ্ছকে ধাক্কা দিলো। স্বচ্ছ দুপা পিছনে গেলো। স্বাধীন বলল
“নো নিড। স্বাধীন কারোর দয়ায় বাঁচে না আর স্বাধীন যা করে বা করেছে বা করবে সবটা ভেবেই করে।”
“তুই ভাংগবি তবু মচকাবি না”
স্বাধীন বাঁকা হেসে বলল
“তুই এতো কিছু বললি আর এটা বললি না তো যে দ্বিধাকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় দ্বিধা তোকে রাস্তার সকলের সামনে চ’ড় মেরেছে। মেয়েটার সাহস আছে তাই না বল”
স্বচ্ছ ভাবড়ে গেলো। স্বাধীন স্বচ্ছের ভাঙ্গাচুরা দুঃখ ভরা মুখটা দেখে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।
দ্বিধা পাশ ফিরে বালিশে মুখ চেপে কাঁদছে। কাঁধে কারোর হাতের ছোঁয়া পেতে চমকে উঠল দ্বিধা। চোখমুখ মুছে মাথা তুলে স্বাধীনকে দেখলো নাক টানতে টানতে বলল
“ক্লান্ত আমি ঘুমাতে দিন”
“কাঁদছেন কেনো? মিথ্যা অপবাদ নিলেন কেনো? প্রতিবাদ করতে পারলেন না? যে অপরাধ করে আর যে আপরান সহয় দুজনই সমান অপরাধী। তাহলে আপনিও অপরাধী আপনাকে তাহলে কি শাস্তি দেওয়া উচিত”
“ডিভোর্স! আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই নি সবটা জেনেই কিন্তু কি এমন হলো যে আপনাকেই আমার বিয়ে করতে হলো?”
“বিয়ে পবিত্র বন্ধন এই বন্ধন থেকে আপনার মুক্তি মিলবে না দ্বিধা সে আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেনো”
“কেনো মিলবে না? আমি এই বিয়ে মানি না! আর আপনার সাথে সংসার করতে গেলে আপনার একটা সময় মনে হবে আপনি ভুল করছেন।”
“সেটা আপনাকে না ভাবলেও চলবে”
“না চলবে না। ব্যাপারটা যখন আমি জড়িয়ে আছি তখন অবশ্যই বিয়ের আগে আপনার উচিত ছিল আমার সাথে আলাদা করে এক বার কথা বলা উচিত। আর আপনি নিশ্চয়ই কিছু কারসাজী করছেন না হলে আমার একটা না বলায় আব্বু কখনোই হ্যাঁ বলবে না”
“ইনটেলিজেন্ট মেয়ে গুড। বলতে পারেন ফিলমি স্টাইলে কিছু করছি”
“কি করছেন”
“আজ না অন্য একদিন শুনবেন এখন ঘুমান আপনি না ক্লান্ত”
“হ্যাঁ আমি খুব ক্লান্ত। ক্লান্তির কারণ আপনি! আজ আমার চোখের পানির কারণ ও আপনি। না আজ আপনি আমাকে বিয়ে করতেন আর না ঔ ঘৃণিত লোকটা আমায় নিয়ে বাজে কথা বলত আপনাদের মাঝে আমাকে কেনো টানলেন কি দোষ আমার”
“আপনার কোনো দোষ নেই। আমার মনে হয়েছে আমার লাইফপাটনার হিসেবে আপনি পারফেক্ট”
“এটা মনে হওয়ার কারণ? আমি মিস ওয়ার্ল্ড নয়”
“আপনার সোজাসাপটা উত্তর গুলা যে আছে ওগুলায়”
“মানে?”
“কিছু তো একটা হবে”
“আপনি অদ্ভুত ভাবে কথা বলছেন কেনো?”
“মুড নাই তাই”
দ্বিধা চুপ হয়ে গেলো। বুঝে গেছে ঘাড় ত্যাড়া লোকটার সাথে কথা বলে আর যায় হোক মেজাজটা আগে খারাপ হবে তার আগে রাগ সামলে চুপ হয়ে যাওয়ায় ভালো। ক্লান্তিতে দুচোখ ছাপিয়ে ঘুম নেমে আসলো।
দুপুরে আর খেলো না দ্বিধা। ঘুম থেকে উঠে স্বাধীনকে আর দেখতে পেলো না সারাবাড়িটা সাদিয়ার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখলো। বিকালে বসে দুই শাশুড়ী বউমা মিলে গল্প করছিল ইতিমধ্যে দুজনে ফ্রি হয়ে গেছে।
“তুমি বসো আমি চা বানিয়ে আনি”
“আমি চা বানিয়ে আনি আম্মু”
“আজ নয় নতুন কেবল আজই এ বাড়িতে আসছ আর কয়দিন যাক তারপর তোমার হাতের চা কেনো রান্না ও খাবো।”
প্রতিত্তোরে দ্বিধা হাসলো। সাদিয়া চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর হুট করে কোথা থেকে স্বচ্ছ এসে দ্বিধার গা ঘেষে বসে পড়ল। দ্বিধা চমকে উঠে দাঁড়ালো কিন্তু কোথাও যেতে পারলো না। তার আগেই দ্বিধার হাত স্বচ্ছের হাতের মুঠোয় বন্দি হয়ে গেলো। দ্বিধা হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো তবুও ছাড়াতে পাড়লো না হাতে ব্যথায় চোখে পানি চলে আসলো। এদিকে স্বচ্ছ শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল
“এতো লোভ তোর? শেষে কি-না এই বাড়ির ছেলেকে ফুসলিয়ে বিয়ে করে নিলি আসলেই তোর বুদ্ধি আছে বলতে হবে। পাকা খেলোয়াড় তুই”
দ্বিধা রেগে গেলো
“স্বচ্ছ মুখ সামলে কথা বলুন তুই তোকারি করছেন কেনো?”
“ওহ মাই গড এতো চেজ্ঞ? তুমি থেকে আপনি? তাহলে আমিও তুমি থেকে তুই এ আসতেই পারি”
“স্বচ্ছ ভুলে যাবেন না আমি আপনার সম্পর্কে কে হই?”
“সেখানেই তো আমার প্রবলেম আমার পাখি অন্য কেউ নিয়ে চলে গেলো সেটা মেনে নিতে পারছি না”
“স্বচ্ছ হাত ছাড়ুন আমি কিন্তু চিৎকার দিবো”
“হ্যাঁ তো চিৎকার দিবি তো আমি কি করবো দে চিৎকার এসে দেখুক সবাই দেবরের সাথে নষ্টামি করছিস”
“ছিঃ আপনি কতটা নিচ আপনার মুখের ভাষায় সেগুলো প্রকাশ পায় পদে পদে। এখন আমার ভাবতেই নিজের ওপরে ঘৃণা লাগে কি করে আপনার মতো মুখোশ ধারী মানুষটাকে আমি একটা সময় ভালোবেসে ছিলাম”
“ইশ আর আমার পাখি অন্য কেউ নিজে ভাগ বসালো সেটাতে আমার আফসোস হচ্ছে”
“কি হচ্ছে এখানে?”
স্বচ্ছ, দ্বিধা দুজনে চমকে গেলো। স্বচ্ছ দ্বিধার হাত ছেড়ে দিলো। দ্বিধা অন্য হাত দিয়ে হাত মালিশ করতে লাগলো। দ্বিধা পাশ ফিরে স্বাধীনকে দেখতে পেলো। মটেও তার ভয় লাগছে না। যে যা ভাবয়ার ভাবুন ভয় নিয়ে জীবন চলে না। দ্বিধা দৃঢ় প্রতিবাদী গলায় চোখ মুখ শক্ত করে বলল
“আপনার ভাই আমার হাত ধরে ছিল”
স্বাধীন তাকিয়ে রইলো ওদের দুজনের দিকে। তার মনের কি চলছে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। স্বচ্ছ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। স্বাধীন দ্বিধা হাত আলত হাতে ধরে বলল
“ওপরে চলুন”
দ্বিধা চমকালো। বিস্ময় চোখে স্বাধীন আর তার ধরে রাখা হাতের দিকে তাকালো।
রুমে এসে খাটে বসিয়ে ওয়াসরুম থেকে বালতিতে করে পানি আর সাবান আনলো। সাবান পানি দিয়ে দ্বিধার হাত ধুতে লাগলো। দ্বিধা চুপচাপ দেখতে লাগলো। যখন দেখলো স্বাধীন বার বার দ্বিধার হাত ধুয়ে দিচ্ছে তখন দ্বিধা বলল
“কি করছেন? বার বার হাত ধুচ্ছেন কেনো?”
“আমি চাই না আমার জিনিসে অন্যর স্পর্শ লাগুক যেটা আমার সেটা পুরোটায় আমার একটু ও অন্যর নয়। যেমনঃ- আপনি। আপনি শরীর মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু আমার বসবাস থাকবে অন্য কারোর হস্তক্ষেপ আমি সহ্য করবো না।

চলবে ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে