#প্রেমসাগরের_উত্তাল_ঢেউ
লেখিকা-লাবিবা নুসরত
||পর্ব-১১||
অফিসে বসে নিজের ল্যাপটপে কাজ করছিলেন মিস্টার ইজাজ। হঠাৎ তার ফোনে টুংটাং আওয়াজ আসে। ফোন হাতে নিয়ে তিনি দেখেন একটা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।
মেসেজের উপর ক্লিক করে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার হার্টবিট বেরে যায়।
কারন সেখানে কয়েকটা ছবি ছিল। কাঁপা হাতে তিনি ছবি গুলোর উপর হাত বোলালেন।
স্পষ্ট প্রাচীকে দেখা যাচ্ছে। তার জামার কিছু কিছু অংশ ছিড়ে গিয়েছে। মুখটাও ফেকাশে।
ইজাজের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। মেয়ের এই অবস্থা সে মেনে নিতে পারছে না।
হঠাৎ একটা কল আসে ইজাজের নাম্বারে। সে দ্রুত রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পুরুষ কেউ বলে,
“কি হলো মিসস্টার ইজাজ? মেয়ের ছবি গুলো দেখেছেন? কেমন লাগলো এই রূপে দেখতে?”
ইজাজ~”কে তুমি? আর আমার মেয়ে কোথায়?”
অপরপাশ থেকে অট্টহাসির আওয়াজ আসে।
“মেয়ের জন্য অনেক দরদ না? কিন্তু আফসোস তাকে তো আর পাবেন না!”
ইজাজ~”তুমি কার মেয়েকে নিয়ে কথা বলছো ভুলে যেও না। আমি তোমার কি হাল করতে পারি কোনো ধারনা আছে?”
অপরজন শেষ একটা কথা বলে।
“সবকিছু টাকা আর ক্ষমতা দিয়ে হয় না মিস্টার ইজাজ।”
কল কেটে গেলো। ইজাজ আরেকবার কল দেয়ার ট্রাই করলো কিন্তু ফোন সুইচ অফ।
আরেকটা কল আসলো তার ফোনে। এবার কলটা জাহিন করেছে।
রিসিভ করতেই জাহিন বলল,
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল। প্রাচী বলেছিল যে আমার সাথে দেখা করবে। প্রায় দুই ঘন্টা আগে। এখনো আসে নি। আমি অনেকবার কল করেছি ফোন সুইচ অফ বলে। আপনি জানেন ও কোথায়?”
ইজাজ~”জাহিন অনেক বড় বিপদ হয়েছে।”
জাহিন~”কি হয়েছে আঙ্কেল? কোনো সমস্যা? প্রাচী কই?”
ইজাজ~”প্রাচীকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।”
জাহিন~”হোয়াট? কি বলছেন?”
ইজাজ~”আমি ঠিকই বলছি। একটু আগে আমার ফোনে প্রাচীর ছবি এসেছে। মেয়েটার মুখ একদম ফ্যাকাশে। আর তার কিছুক্ষণ পর কল করেছিল একটা ছেলে। আমি জানি না ও কে! আমার মেয়েকে কি করেছে!”
জাহিন~”আঙ্কেল আমি চিন্তা করবেন না। আমি আসছি।”
ইজাজ~”আমার এক কাছের বন্ধু থানার ওসি৷ আমি তাকে কল করি নাকি?”
জাহিন~”না। পুলিশ আগেই আনবেন না। আমি দেখছি। আগে বাসায় আসি।”
ইজাজ~”আচ্ছা আমিও আসছি।”
_________________________
মিস্টার ইজাজকে অসময়ে বাসায় আসতে দেখে বেশ অবাক হলেন লারা।
তিনি ইজাজের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“কি হয়েছে তোমার? আজ অসময়ে বাড়িতে আসলে? আর মুখটা এমন কেন?”
ইজাজ~”প্রাচী কখন বের হয়েছিল বাসা থেকে?”
লারা~”সে তো আরও অনেকক্ষন আগে৷ জাহিনের সাথে দেখা করবে বলে বের হয়েছিল। আমি ওকে এখনই কল করতাম।”
ইজাজ~”আচ্ছা। জাহিন কি এসেছে?”
লারা ভ্রু কুচকে বলল,
“জাহিন কেন আসবে? আচ্ছা আমি বরং প্রাচীকে একটা কল করি।”
লারা যেতে নিলে কলিংবেল বেজে উঠে। সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দেয়। জাহিন এসেছে। সে ভিতরে এসে স্বাভাবিক ভাবেই লারাকে সালাম দেয়। লারা এখন জাহিনকে একা দেখে জিজ্ঞেস করে,
“জাহিন? তুমি একা কেন? প্রাচী কই?”
জাহিন ফট করে উত্তর দেয়,
“ওর একটা বান্ধবির সাথে দেখা হয়েছে সেখানেই আছে।”
লারা~”দেখেছো মেয়ের কান্ড? এদের নিয়ে আর পারি না।”
জাহিন ইজাজকে বলে,
“আংকেল চলুন আমরা একটু ঘরে যাই।”
লারা~”কেন? তোমরা কি করবে?”
ইজাজ~”আহা! কিছু কথা আছে। জরুরি। তুমি কি যেন করছিলে? সেটা করো যাও।”
ইজাজ আর জাহিন ভিতরে গেল। লারা কিছুই বুঝতে পারছেন না এদের কান্ড। কি করতে চাচ্ছে কে জানে।
ঘরে এসে ইজাজ জাহিনকে বলে,
“লারা কে কিছু বলার দরকার নেই। যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।”
জাহিন~”ওকে আংকেল। এখন কাউকে জানানোর দরকার নেই। আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?”
ইজাজ~”আমার তো শত্রুর অভাব নেই বাবা। বিজনেস এর কারনে অনেক শত্রু। এখন কার নাম বলবো? আর কয়জনকে ধরবো?”
জাহিন~”আংকেল প্রাচী তো বিপদে আছে। সবকিছু তারাতাড়ি করতে হবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়াটাই উত্তম।”
ইজাজ~”এই জন্য আমি পুলিশের কথা বলেছিলাম।”
জাহিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা কল আসে ওর ফোনে। দ্রুত কলটা রিসিভ করে কিছুক্ষণ কথা বলে সে। কিন্তু কি বলে সেটা বোঝা যায় না।
কল কেটে জাহিন ইজাজকে বলে,
“আংকেল আমি একটা জায়গায় যাচ্ছি৷ হয়তো প্রাচীকে পেয়ে যেতে পারি৷”
ইজাজকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জাহিন চলে যায়৷ ইজাজ বুঝতে পারলো না জাহিন কিভাবে প্রাচীর খোঁজ পেল? আর এভাবে চলেই বা কেন গেল? তাহলে কি জাহিন আগে থেকেই প্রাচীর খোঁজ নিয়েছিল? এসব ভাবছিল ইজাজ। এরমধ্যেই লারা আসে।
“জাহিন ওভাবে চলে গেলো কেন?”
ইজাজ~”ওর একটা কাজ আছে।”
লারা~”আমার কাছে মিথ্যা বলবে না। কি হয়েছে আমার মেয়ের? আমি সব শুনেছি। এখন বলো? কোথায় আমার প্রাচী?”
ইজাজ~”দেখো পেয়ে যাবো ওকে। চিন্তা করো না। সমস্যা নেই কোনো।”
লারা~”সমস্যা নেই মানে? আমার মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মেয়েকে এনে দাও।”
ইজাজ~”শান্ত হও লারা। জাহিন গিয়েছে তো। দেখবে ঠিক পেয়ে যাবে।”
লারা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন৷ কিছুক্ষণ পরে ঘরে আনোয়ার, ফারহানা আর প্রহর আসে। লারাকে এভাবে কান্না করতে দেখে তারা ঘাবরে যান। প্রহর মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে মা? কান্না করছো কেন?”
লারার হুশ নেই। ইজাজ বললেন,
“প্রাচীকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।”
প্রহর~”কিহ!”
ইজাজ আনোয়ার আর ফারহানাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এই অবস্থায় প্রহরকে কেন নিয়ে এলেন?”
ফারহান~”ও আসতে চেয়েছিল ভাইজান। তার আগে বলুন কি শুনি? প্রাচীর কি হয়েছে?”
ইজাজ সবাইকে সবকিছু খুলে বলেন।
আনোয়ার~”জাহিন বলল যে পুলিশ ডেকো না আর আপনিও শুনে নিলেন? আর ও কিভাবে জানলো প্রাচী কোথায়?”
ইজাজ~”আমি জানি না। হয়তো কোনো কারন আছে।”
প্রহর চুপচাপ বসে আছে। ফারহান এর পাশে বসে ওকে ধরে রেখেছে।
হঠাৎ সে বলে উঠে,
“মা ফারহানকে কল দিন। ও তো সাহায্য করতে পারবে। শহরের অনেক জায়গা ওর চেনা আছে।”
ফারহানা~”আচ্ছা মা তুই টেনশন করিস না। বাচ্চাটার জন্য নিজেকে শান্ত রাখ।”
প্রহর কোনো উত্তর না দিয়ে ওভাবেই বসে থাকে।
_____________________
জাহিন একটা পুরোনো গোডাউনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশ ভালো ভাবে দেখে সে ভিতরে যায়। কেউ নেই৷ পুরো ফাঁকা। হঠাৎ একটা চেয়ারে বাধা অবস্থায় সে প্রাচীকে দেখতে পায়। প্রাচীর জামা-কাপর কিছুই ঠিক নেই৷ মুখে,হাতে,পায়ে মারের দাগ। অজ্ঞান হয়ে আছে সে। জাহিন দৌড়ে প্রাচীর কাছে যায়। ওর বাধন খুলে নিজের কোলের ভিতরে নিয়ে নেয়।
জাহিনের চোখ বেয়ে টপ করে এক ফোটা পানি গরিয়ে পরে।
প্রাচীর শরিরে রক্তে মাখামাখি। মুখটা একদম শুকনো। মাত্র কিছু ঘন্টার ব্যাবধানে কি হয়ে গেলো!
জাহিন সময় নষ্ট না করে প্রাচীকে কোলে তুলে নেয়। তখনই কেউ বলে উঠে,
“কি ব্যাপার? চলে যাচ্ছো নাকি?”
জাহিন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা
ছায়া মূর্তি দেখতে পায়। জাহিন বলে,
“কে তুই হ্যাঁ? সামনে কেন আসছিস না? একটা মেয়েকে এমন অত্যাচার করতে লজ্জা করে না? সাহস থাকলে সামনে আয়!”
ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে সামনে এগোতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,,,,,,,,,