প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব-১৪

0
2170

#প্রেমময় #তৃষ্ণা
#writer-#TaNiA[🖤]
#Part-14

জীবন কতো অদ্ভুত, কিছুক্ষন আগেও শুভর কাছে সব কিছুছিলো,আর এখন শুভ নিজেকে একদম নিঃস্ব মনে করছে,বেঁচে থাকার কোনো কারনও আজ শুভ খুঁজে পাচ্ছে না।___কিছুক্ষন আগে কলিকে হসপিটালে নিয়ে আসা হলো।ফোন করে আগেই সব রেডি করে রাখা হয়েছিলো, দেশের সব বড় বড় ডক্তররাও আজমাল ও আজহার চৌধুরীর এক ফোনকলে হাজির হয়ে পরেছে,কিন্তু এতো ডক্তর এসেই বা কি হবে যদি কলির বাঁচার শেষ ইচ্ছা টাও না থাকে।ডক্তর যথাসাধ্য চেস্টা করবে বলে গেলো।আর বাকিটা আল্লহর ইচ্ছা আপনারা দোয়া করুন।রোগীর অবস্থা তেমন ভালো না।
ডক্তরের কথা শুনে সবাই টেনশনে পরে গেলো।আজমাল চৌধুরী চেয়ারে বসে পড়লো।হঠাৎ শুভর কথা মনে পরলে,এদিকওদিক তাকিয়ে দেখে শুভ হসপিটালের করিডোর এর ফ্লোরে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেকে দেখে আজ আজমাল চৌধুরীর নিজেরি খুব মায়া লাগছে,কি থেকে কি হয়ে গেলো।আজমাল চৌধুরী শুভকে দেখে বুঝতে পারলো,কলির কিছু হয়ে গেলে সে তার নিজের ছেলেকেও সারাজীবন এর জন্য হারিয়ে ফেলবে।এই মেয়েটাকে যে তার ছেলে কতোটা ভালোবাসে তা আজ নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছে।কলির নিথর দেহটা যখন রাস্তায় পড়ে ছিলো,শুভ এক প্রকার পাগল হয়ে গিয়েছিলো।রাস্তায় বসেই শুভ বিলাপ করতে থাকে,অনেক কস্টে সবাই শুভকে ধরে গাড়ীতে উঠায়।তাই আজ নিজেও বসে বসে কলির জন্য দোয়া চাইতে লাগলো ছেলের মুখের দিকে চেয়ে।
||
||
শুভ বসে বসে কলি আর ওর কেটে যাওয়া ভালোবাসার মুহুর্তগুলো চিন্তা করছে,কতে না মধুর ছিলো সেই দিনগুলো।ভালোইতো ছিলাম আমরা কেনো এমন হলো কলি,আমার গুনাহর শাস্তি আল্লাহ তোকে কেনো দেবে।দিলে আমাকে দিতো।আমি মাথা পেতে নিতাম।কিন্তু আমি এখন কি করবো কলি,তোকে ছাড়া না বাঁচাতে পাড়বো,না মরতে।আমাকে এতো বড় শাস্তি দিসনা না জান,ফিরে আয় তোর শুভর কাছে,শুধু একবার ফিরে আয়।ওয়াদা করছি,এই জীবনে প্রান থাকতে তোকে আমি আর কোনও দিন নিজের থেকে আলাদা হতে দেবো না।ফিরে আয় কলি,আমার জন্য,আমার ভালোবাসার জন্য।আমি তোকে অনেক কস্ট দিয়েছি।এসে আমাকে তোর নিজের হাতে শাস্তি দে।তবুও আমাকে একা ফেলে চলে যাস না।আমাকে এতো বড় শাস্তি দিস না।অনেক বছর তোর অপেক্ষায় ছিলাম,এখন আর আমাকে অপেক্ষা করাইছ না।আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না,ধৈর্য যে আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে।
||
||
কলির পরিবারও এসে হসপিটালে হাজির হলো।কলির এমন অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না কলির বাবা।মেয়ের এই অবস্থার জন্য নিজেকে দোষী করছে।তাই বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।কলির বাবার এমন অবস্থা দেখে ডক্তর তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলো।কলির মায়েরও অবস্থা ভালো না,শুভর জন্য একবার মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছে,কিন্তু এবার আল্লাহ কি তাদের মুখের দিকে তাকাবে।এই চিন্তায় শেষ।
||
||
হঠাৎ অপারেশন রুমের লাল বাতিটা নিভে গেলো।এতোক্ষন পর শুভও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।কেউ কিছু জিঙ্গেস করার আগেই শুভ ডক্তরের সামনে এসে দাঁড়ালো, ডক্তর শুভর দিকে তাকিয়ে____আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেস্টা করছি,কিন্তু আমার মনে হয়কি রোগীর নিজেরও বাঁচার কোনও ইচ্ছা নেই।তবুও আমরা আশা ছাড়ছি না,৪৮ ঘন্টা না যাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারবো না।ডক্তর একটু নিরব হয়ে আবার বলা শুরু করলো,৪৮ ঘন্টার মধ্যে রোগীর জ্ঞান না ফিরলে,হয়তো রোগী কমাতে চলে যাবে,অথবা।_____অথবা কি ডক্তর বলুন।(শুভ)
সরি রোগীকে আর বাঁচানো যাবে না।আপনারা এখন শুধু উপরওয়ালার কাছে দোয়া করুন।এখন তিনিই পারে রোগীকে বাঁচাতে। শুভ ডক্তরের কথা শুনে আর ওখানে দাঁড়ালো না,চলে গেলো।সবাই শুভর যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে,কেউ কিছু বুঝতেই পারছে না শুভর বিহেভিয়ার।
||
||
কিছুক্ষন পর ফজরের আযানের ধ্বনি শোনা গেলো।শুভ হসপিটাল থেকে বের হয়ে মসজিদে চলে গেলো,অজু করে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলো।এদিক দিয়ে ফাহিম ও মাহির বের হলো শুভকে খুঁজতে, কিছুদূর গিয়ে এক মসজিদ এর সামনে কিছু লোকের ভিড় দেখতে পায়।সমস্যা কি দেখার জন্য ফাহিম ভেতরে একটু উকি দিলো,আর যা দেখতে পেলো তা দেখার স্বপ্ন হয়তো ফাহিম কখনো করেনি।শুভ নামাযের সিজদায় চিৎকার করে কান্না করছে।শুভর এই আর্তনাদে আশেপাশের মানুষজনের চোখেও কিছুটা জল এসে পড়ছে।ফাহিম স্থব্দ হয়ে পরেছে।ফাহিমের চোখেও জল এসে পরেছে।ফাহিম ভালো করেই জানে শুভ কলিকে কতোটা ভালোবাসে,কলির প্রতি শুভর ভালোবাসা সীমাহীন, এতে কোনও সন্দেহ নেই।কোনও একটা কারনে হয়তো নিজেকে কলি থেকে দূরে রাখতে চাইছে,কিন্তু এতে কলির প্রতি ওর ভালোবাসা কমে নি।কস্ট তো শুভও পেয়েছে প্রতিদিন।হয়তো শুভর কস্টটা কারো চোখে পড়েনি।মাহির এসে শুভকে এভাবে দেখে শোকড হয়ে পরে,কারন এতোদিন কলির নামটিও যে মানুষটির সামনে নেওয়া যাচ্ছিলো না,আজ সেই মানুষটিই কলির জন্য প্রাণ ভিক্ষা যাচ্ছে আল্লাহর কাছে।মসজিদের ঈমান এসেও অনেক বুঝায় শুভকে,কিন্তু শুভর কারো কথা জেনো কানে দিয়ে ডুকছে না।কাঁদতে কাঁদতে শুভ একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।কিছু মানুষের সাহায্য নিয়ে শুভকে হসপিটালে নিয়ে আসা হলো।জ্ঞান ফিরে শুভ নিজেকে হসপিটালের বেড এ পেলো।লাফ দিয়ে উঠে পরে,কেবিন থেকে বের হতে নিলে কিছু ওয়ার্ড বয় বাধা দিতে নিলো,কিন্তু শুভর রাগের সামনে আর পারলো না।শুভ সোজা কলিকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে চলে গেলো,ডক্তর আর নার্স বাধে সেখানে যাওয়া সবার নিশেধ কিন্ত শুভকে কেউ আটকাতে পারলো না।
||
||
কলির হাতটা খুব শক্ত করে ধরে বসে আছে শুভ,মনে হয় হাতটা ছেড়েদিলেই কলিকে আবার হারিয়ে ফেলবে।কলির হাতটা শুভর বুকের বামপাশে ধরে,আমি তোকে অনেক কস্ট দিয়েছি রে,তাইতো রাগ করে আছিস।চলে জেতে চাস আমাকে ছেরে।আমাকে শাস্তি দিতে চাস তাই না,তাইতো দেখ এমন ভাবে পড়ে আছিস।আমার বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে,এই ব্যাথা ক্রমশ বাড়ছে জান,আমি সইতে পারছি না।প্লিস উঠ জান,একবার শুধু চোখটা খোল,এই বুকে আগলে রাখবো তোকে,কোথায় জেতে দিবো না,সারাজীবনের জন্য তোকে আপন করে নেবো।শুধু একবার আমাকে ক্ষমা করে দে কলি।শুধু একবার……তোকে ছাড়া তোর এই শুভ বিষন একা,আমার কাছে ফিরে আয় জান,ফিরে আয়।বলেই শুভ কেঁদে দেয়।
||
||
আসলাম আমীর বেডে শুয়েই মেয়ের জন্য কান্না করছে,তার পাশেই বসে আছে আজমাল চৌধুরী। ____আমার মেয়েটার উপর কোনও রাগ থাকলে ওকে মাপ করে দিয়েন চৌধুরী সাহেব।মেয়েটা আমার একদম মাসুম,দিনদুনিয়ার তেমন কিছুই জানে না।____আমীর স্যার এসব কি বলছেন।আমি জানি,এসবের জন্য আমিও কিছু দায়ী,আমি আমার ছেলের মনের কথা বুঝতেই পারিনি,অন্যের কথায় কান দিয়ে কলির মতো মেয়ের নামে অনেক কিছু বলে ফেলেছি,আপনে পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।___আসলাম আমীর আজমাল চৌধুরীর হাতটা ধরে আমার মেয়েটাকে বাঁচান, আমার একমাত্র মেয়ে, আজ আমার জিদের কারনে ওর এই অবস্থা।নাহি আমি বিয়ের জন্য ওকে জোর করতাম,নাহি ও এখানে আসতো,আর নাহি এসব হতো,আসলাম আমীরও কেঁদে উঠে।আজমাল চৌধুরী তাকে সান্তনা দিচ্ছে।
||
||
এভাবে দুদিন কেটে গেলো,এই দুদিনে শুভ শুধু নামাযের সময় কলিকে একা ছেড়ে গিয়েছে।তাছাড়া রাত দিন শুভ কলির সাথেই ছিলো,এই অপেক্ষায় কখন কলি তার চোখ খুলবে।অবশেষে শুভর দোয়া আল্লাহ কবুল করলো।কলির জ্ঞান ফিরলো।চোখ খোলার চেস্টা করতে লাগলো,হাতটা নাড়তেই বুঝলো কেউ তার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে তার হাতের উপর শুয়ে আছে।
কলির বুঝতে পারছে না কে এটা,কারন কলি শুভকে একদমই আশা করেনি।কলির হাতের উপর মাথা রেখে শুভ ঘুমিয়ে পড়েছিলো ক্লান্তে।হঠাৎ কলির হাতের নড়াচড়ায় শুভর ঘুম ভেঙ্গে গেলো,ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে দেখে কলি চোখ গুলো খোলার চেস্টা করছে,কিন্তু আলো তার চোখে লাগছে বলে ভালো করে খুলতে পারছে না।
কলিকে জ্ঞান ফিরতে দেখে শুভ ডক্তরকে ডাক দিলো,সাথে সাথে তিনজন ডক্তর ও দুজন নার্স প্রবেশ করলো,আর শুভকে বের করে দিলো,তারা কলিকে চেকআপ করবে বলে।
শুভ বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো,এতোক্ষনে এ সবার কানে পৌঁছে গেলো কলির জ্ঞান ফিরার কথা,সবাই যে যেখানে ছিলো হসপিটালের করিডোর এ এসে পরলো।
ডক্তর গুলো সব বের হলে,শুভ সব ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলো,ডক্তরাও আশা দিলো আপাতোত কলি এখন আশংকা মুক্ত,এই সংবাদ শুনার পর সবার চেহারায় খুশির সীমা রইলো না,গতদু’দিন যে টেনশনে ছিলো তা যেনো এই খুশির সামনে কিছুই না।আজমাল চৌধুরী খুশিতে আসলাম আমীরকে জরিয়ে ধরলো।তারা সবাই কলির সাথে দেখা করার জন্য যেই না,রুমে প্রবেশ করতে চাইলো।তখনি ডক্তরের এক কথায় সবার আবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
_____আসলে রোগী আপনাদের কারো সাথে দেখা করতে চায় না।আর আমারও মনে হয় এই মুহুর্তে রোগীকে বেশি বিরক্ত করাও ঠিক না।
____কিন্তু শুভ সব শুনেও না শোনার মতো করে কলির সাথে দেখা করতে চলে গেলো।কারন শুভ ভালো করেই জানে কলি এসব রাগ করেই বলছে।কলির বাবাও বুঝতে পারলো মেয়ে তার রাগ করে আছে এখনো,তাই এসব কথা বলছে।
____তখনি মাহির এসে কলির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,চিন্তা করবেন না স্যার, ভাবী আমাদের রেগে আছে।রাগ ভাঙ্গলেই সব ঠিক হয়ে যাবে,আর তাছাড়া শুভ ভাইয়াতো আছেই,ভাবীর রাগ ভাঙ্গিয়েই ছাড়বে।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে