প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব-১১

0
2017

#প্রেমময় #তৃষ্ণা
#writer-#TaNiA[🖤]
#part-11

কলি মন খারাপ করে বসে আছে,সামনে বিশাল নদী।এপারে মানুষ জন থাকলেও ওপারে কিছু জঙ্গলের মতো আর ক্ষেত দেখা যায়।এপারের বাড়ী গুলো এখান থেকে অনেকটা দূরে,এই জায়গায় তেমন মানুষজন আসে না,তাই কলি যখনি ফুফুর বাসায় আসে এখানে আসতে ভুলে না,জায়গাটা যেমন নিরিবিলি, তেমনি দেখতে সুন্দর। কিছু কাশফুল নদী ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।আর তার পাশেই মাথা উঁচুকরে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল কয়েকটা বট গাছ।কলি যখনি এখানে আসে,মনে মনে চিন্তা করে বট গাছগুলোর বয়স কতো হবে।কারন এই গাছএলো নাকি তার বাবার আমল থেকে দাঁড়িয়ে আছে।সূর্যের আলো তার তীক্ষ্ণ রশ্মিপাত করে বুঝিয়ে দিচ্ছে রোদের তীব্রতা, তাই কলি উঠে একটু ছায়ায় গিয়ে বসলো।আর নদীর বুকে কিছু ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করছে,কলির কাছে মনে হচ্ছে পাথর গুলোর আঘাত সোজা কলির বুকে গিয়ে লাগছে,তা না হলে কেনো এতো কস্ট লাগে।বুকের চিনচিন করে ব্যাথাটা আজকাল একটু বেশি করছে,যা কলিকে ঘুমাতে দেয়না শান্তি মতো।এর ওষুধ কি,এর ওষুধ কি আজও আছে তা কলির জানা নেই।
|
|
শুভ কলির ফুফুর বাড়ীর সামনে এসে পড়েছে।কিন্তু কলিকে কিভাবে খবর দিবে,শুভর কথা শুনে কলি আসবে কিনা সেটাও সন্দেহ,পিচ্ছি হলে কি হবে তেজ দিয়ে ভরা শরীল।কিন্তু শুভও নাচরবান্দা কলির সাথে কথা না বলে এ গ্রাম থেকে যাবে না।তাই কলির কাজিন মামুনকে ফোনদিলো।____হ্যালো,আসসালামালাইকুম ।_____ ওলাইকুমআসসালাম, আমি শুভ বলছি।_____শুভ,কলির শুভ।____হুমমম শুভ একটু হেসে উত্তরটা দিলো।_____কেমন আছেন ভাই।_____আলহামদুলিল্লাহ, তোমার একটু হেল্প লাগবে ভাই।____কলির সাথে দেখা করতে চান, তাইতো।____হুমমম, তুমি কি করে জানলে।____মামী ফোন দিয়ে আপনার কথা বলেছে।কারন আমি ছাড়া এই বাড়ীর কেউ আপনার আর কলির কথা জানে না,তাই আর কি।
___আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা।____আসলে কলি খুব ভেঙ্গে পরেছে,খাওয়া দাওয়া ছেড়ে সারাদিন নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখতো,ওর এসব পাগলামি দেখে মামী ভয় পেতে লাগলো,কলি আবার আগের মতো উল্টাপাল্টা কিছু করেনা বসে।তাই আমি ওকে এখানে নিয়ে আসলাম জাতে ওকে চোখে চোখে রাখতে পারি।___ধন্যবাদ, মামুন, তুমি জানো না তুমি আমার কি উপকারটা করেছো।আমি নিজেও এই জিনিসটা নিয়ে ভয়ে ভয়ে ছিলাম,আমি জানি ও আমাকে নিয়ে একটু পজেসিভ। একটু উনিশবিশ হলে,নিজের ক্ষতি করার চেস্টা করে।___হুমমম সেটা আমিও জানি।___আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই মামুন,কিন্তু আমার কথা জানলে দেখা করতে চাইবে না,জিদ ধরে বসে থাকবে,প্লিজ একটি মেনেজ করতে পারবে।___ও চিন্তা করবেন না ভাইয়া,আমার কিছুই করতে হবে না।আমি বলেদিচ্ছি ও কোথায়,আপনে নিজেই ওর সাথে দেখা করতে পারবেন।
|
|
এর পর মামুন শুভকে লোকেশন টা বুঝিয়ে দেয়।শুভও কিছুটা খুঁজার পর হঠাৎ চোখে পরে নদীর পারের গাছগুলোর নিচে একটা মেয়ে বসে আছে,আর কিছুক্ষন পরপর নদীতে কিছু একটা ছুড়ে মারছে।শুভর বুঝতে বাকি রইলো না এটা কলি ছাড়া আর কেউ না।শুভ আস্তে আস্তে কলির কাছে গিয়ে কিছুক্ষন কলির দিকে তাকিয়ে কলির পাশে গিয়ে বসে পড়লো। এভাবে হঠাৎ কেউ কলির পাশে বসায় কলি প্রথমে ভয় পেয়ে যায়।তাকিয়ে দেখে এতো শুভ।শুভও কলির দিকে তাকিয়ে আছে,আর মুখে সেই মনোমুগ্ধকর হাসি,যা দিয়ে সবাইকে ঘায়েল করতে পারে।কিন্তু মুহুর্তে কলির শুভর এংগেসমেন্ট এর কথা মনে পরে যায়।মুখটা মলিন করে রাগে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে,শুভ কলির হাতটা ধরে ফেলে,___জান,কোথায় যাও।____জাহান্নামে, যাবেন।___ছি, কি সব বলছিস, আমি তোকে নিয়ে জান্নাতে যেতে চাই।আর তুই আমাকে ফেলে জাহান্নামে যাচ্ছিস।It’s not right, jan..।এই কে আপনে, কখন ধরে জান জান করছেন।আবার আমার হাত ধরে রেখেছেন। আমি আপনাকে চিনি না।তাই আমাকে একা ছাড়ুন, প্লিস।কলি শুভর কাছ থেকে এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে চলে যেতে নিলো।
|
|
শুভ এবার কলির সামনে এসে দাঁড়ালো, সরি জান,এই দেখ কানে ধরলাম,আর এমন হবে না।___দেখুন সরুন আমার সামনের থেকে,আর আপনে এখানে কি করছেন,এখন তো আপনার হবু বউয়ের সাথে থাকার কথা।ও বুঝতে পারছি, দাওয়া দিতে আসছেন, তাইতো।কি সব বলছিস, শোন আগে আমার কথা,আমি কিছু শুনতে চাইনা বলে কলি আবার হাটা ধরলো।____
|
|
এবার শুভর মাথা গরম হয়ে গেলো।স্টোপ কলি,এক কদম আর বাড়বি না,তাহলে আমার থেকে খারাপ কিন্তু আর কেউ হবে না(শুভ অনেকটা চিল্লিয়ে)।কলি ভয় পেয়ে যায় শুভর এমন আচরন দেখে।শুভ কলিকে টেনে গাছের পিছে আড়ালে নিয়ে যায়।ওর হাতটা পেছনের দিকে বাকিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে,ভালোবাসি বলে মনে করিসনা,তুই আমার মাথায় উঠে নাচবি।আমি শুভ মাথায় তুলতে পারলে,আছার ও মারতে এক মিনিটও সময় লাগবে না।শুভর এমন আচরন দেখে কলি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়,তবুও নিজেকে শুভ থেকে ছুটানোর চেস্টা করছে,তা দেখে শুভ হেসে দিলো।তোর মনে হয় তুই আমার সাথে পারবি।আর সাপের মতো ফুসফুস করছিস কেনো,কিছু বলবি।কলি কিছু বলতে নিলে,শুভ মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়,আগে আমার কথা শোন,আমি যেখানে ছিলাম,সেখানে কিছু সমস্যার কারনে আমি তোকে কল করতে পারিনি,তার জন্য সরি আমি আগেই বলছি,আর এংগেসমেন্ট এর কোনও কিছুই আমি জানতাম না সত্যিই বলছি।তাই আমি ওটা কেনশালড করে দিয়েছি, আর সবাইকে তোর কথা বলেও দিয়েছি।এবার তুই বল,কি বলতে চাস।
|
|
___ছাড়ুন আমায়।___শুভ কলিকে ছেড়ে দিলো।___কলি নিজের হাতটা ডলতে ডলতে,করলেন না কেনো,করেই ফেলতেন,আমি কি ধরে রেখেছি,এংগেসমেন্ট না করে আমার উপর দয়া করছেন মনে হয়,লাগবে না আপনার দয়া।আমিও বাবাকে বলে দেবো আমার জন্য একটা প্রিন্স খুঁজে আনতে, বলার সাথে সাথে শুভ কলির গাল দুটো চেপে ধরে।শুভ চোয়ালটা শক্ত করে,দাঁতেদাঁত চেপে বলে,কি বললি তুই।আবার বলতো,আজকাল তোর সাহস বেশি বেড়ে গেছে।আমাকে রাগাশ না কলি তোর জন্য ভালো হবে না,আমাকে এখনো চিনিস নি তুই,আমার আরো একটা রুপ আছে যা তোকে দেখাতে চাই না,আর কি যেনো বললি,এখন তোর আরও একটা প্রিন্স লাগবে।মনে রাখিস তোর প্রিন্স শুধু আমি,এই জীবনে অন্য কারো হওয়ার শখ থাকলে এখনি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেদে,তা না হলে এমন হাল করবো তোর, স্বপ্নেও আমাকে ছাড়া কাউকে দেখতে চাইবি না।
|
|
___শুভ কলির গালটা এমন ভাবে ধরে রেখেছে যে ব্যাথায় গলির চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো,কিন্তু শুভর সে দিকে কোনও খেয়ালই ছিলো না।কিন্তু হঠাৎ কলির চোখের পানি দেখে শুভ কলিকে ছেড়ে দেয়, কলি সাথে সাথে নিচে বসে পরে কাঁদতে থাকে।শুভ ও নিচে বসে কলিকে বুকে জরিয়ে ধরে।কলিও শুভর বুকে মাথা রেখে কান্না করতে থাকে।শুভ জানে এতো দিন ধরে যে কস্টগুলো মনের মধ্যেছিলো,তাই আজ অশ্রু হয়ে ঝরে যাচ্ছে।তা না হলে,এই কস্ট পাথর হয়ে যাবে।মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষকে কান্না করতে দেওয়া ভালো,এতে কস্ট দূর হয়ে মনটাও হালকা হয়।
|
|
অনেকক্ষন ধরে শুভ কলিকে শান্ত করার চেস্টা করছে, কিন্তু পারছে না।এবার শুভ কলির মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে,স্টোপ জান,অনেক হয়েছে,দেখ কাঁদতে কাঁদতে চেহারার কি অবস্থা করে ফেলেছিস।এখনতো একটু থাম,এতো জল আসে কোথা থেকে।___এবার কলি আরো জরে জরে কাঁদতে থাকে।____এ কারনেই লোকে বলে,পিচ্ছিদের সাথে প্রেম করতে নেই।___কিইই আমি পিচ্ছি, তাহলে আমার সাথে প্রেম করতে আসছেন কেনো।আপনার বয়সের কাউকে খুঁজে নেন।কলি উঠতে নিলে।
শুভ হাতটা ধরে কলিকে কাছে টেনে,ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।ঘটনা আকষ্মিক ঘটায় কলি কিছুটা শোকড হয়ে যায়।কিছুক্ষন পর শুভ কলিকে ছেড়ে দিয়ে,কলির কানে সামনে ফিসফিসিয়ে বলে,আমি তোকে মোটেও পিচ্ছি মনে করিনা জান,পিচ্ছিদের সাথে কি মানুষ এসব করে বলতো।তুইতো আমার বউ।শুধু ঘরে নেওয়া বাকি।এবার কলি হেসে দিলো।এতোক্ষন পর শুভ কলির মুখে হাসি ফুটাতে পারলো,যে হাসিতে শুভ তার ক্লান্তি দূর করতে পারে,মনের শান্তি ফিরে পেতে পারে।
|
|
শুভ কলি কিছুক্ষন নদীরপারে বসে তাদের মধ্যে সব ঝামেলা,নিজেরাই মিটিয়ে ফেললো।কলি আবার জেনো তার প্রাণটা ফিরে পেলো,যা এতোদিন ছটফট করছিলো।মনের যে অসুখে কলি ভুগছিলো তার সেই অসুখ জেনো পালিয়ে গেলো শুভ নামক ঔষুধে।শুভকে মামুনের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলো কলি।মামুনও ওদের দুজনকে একসাথে দেখে অনেক খুশি হলো।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে