#প্রেমময় তৃষ্ণা
#Writer -TaNiA[🖤]
#part-3
”
”
”
শুভ ছাদে দাঁড়িয়ে সিগেরেট টানছে,আর ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছিলো,সামনে ফাহিম এসে দাঁড়ালো। ফাহিম শুভর বেস্ট ফ্রেন্ড। ছোটবেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে।শুভর সুখ দুঃখ কস্টের ভাগিদার ফাহিম।শুধু শুভর ফ্রেন্ড না,অর্পার হাসবেন্ডও ফাহিম।অর্পা ইনাম ও মাহিরের বড় বোন।
|
ফাহিমকে দেখে শুভ ফোনটা কেটে পকেটে রেখে দিলো।ফাহিম শুভর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।হয়তো কিছু বোঝার চেস্টা করছে।
|
কিরে কিছু বলবি,এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।কিছু বলার থাকলে বল।
|
কলির কি খবর,তুই বলেছিস তোর মনের কথা।
|
না….এখনো বলা হয়নি।
|
শালা এখনো কার জন্য অপেক্ষা করে আছিস।এই দুবছর তো কলি কলি করে মাথা খারাপ করে ফেলেছিস।ঘুম আসতো না বলে কতো রাত নেশা করেছিস।শুধু ওকে ভুলাবার জন্য।তবুও তো ওকে ভুলতে পাড়তি না।নেশাগ্রস্ত হয়েও কলিকে এনে দেওয়ার জন্য জিদ করতি।তোর কলির প্রতি ভালোবাসার পাগলামি আমি দেখেছি।তাইতো এবার বললাম কলিকে মনের কথা বলে দে।বয়সের যে ব্যবধান টার কারনে তুই কলি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলি।তা তোর ভালোবাসার সামনে খুবই নগণ্য শুভ,তাহলে কেনো বলিসনি।
|
শুভ কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে,ছাদের রেলিং এ দুহাত দিয়ে আকাশটার দিকে তাকিয়ে _____কারন আমি দেখতে চেয়েছিলাম,আমার প্রতি কলির কি ফিলিংস কাজ করছে।ছোট্ট যে পিচ্ছিটা আমার আগে পিছে ঘুড়তো,সে পিচ্ছি টা এখন বেস বড় হয়ে গিয়েছে জানিস।আর আমার কল্পনার থেকে সুন্দর হয়ে গিয়েছে।আগে তো মায়াপরী ছিলো,যার মায়াজালে আমি আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম,কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে ওর মায়া ও সৌন্দর্য দুটোই বেড়ে গিয়েছে।আর বড় হবার পর কি ও আমায় ভুলে গিয়েছে নাকি এখনো আমায় স্মরণ করে তা জানার দরকার আমার। আমি যে ওর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি তা বলার আগে ওর মনের কথাটা ও জানতে চেয়েছিলাম।
|
শুভ কিছুক্ষন নিরব থেকে আবার বলতে শুরু করে,আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটা খুব হালকা না।প্রথম দেখাতে চোখে চোখ রেখে,হাতে হাত রেখে,স্বপ্ন দেখেই বলে ফেলা যায় না আমি তোমাকে ভালোবাসি।প্রথম দেখা,প্রথম ভালোবাসা,প্রথম স্পর্শ এসবই ভালোবাসার রাস্তা যা এক সময় এক হয়ে মিলিতো হয়ে ভালোবাসায় রুপ নেয়।আর তখন কোন শক্তিই তাদের আলাদা করতে পারে না।কিন্ত অনেক সময় আমার মতো যারা ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না,তাদের ভেতরে একটা পাখি ছটপট করে,জানিস ফাহিম সেই পাখিটির নাম কি,”মনপাখি”।মনপাখির কাছে আমরা সবাই হেরে যাই।
|
হুম! সবই বুঝলাম,তুই আজকাল কাব্য হয়ে গিয়েছিস কিন্তু যার জন্য এতো ভালোবাসা,তার কাছে গিয়ে কি জানতে পারলি।
|
শুভ ফাহিমের দিকে তাকিয়ে মুখে এক প্রশস্ত হাসি দিলো।যার রহস্য ফাহিম বুঝতে পারলো না।তাই ক্যাবলাকান্তের মতো শুভর দিকে তাকিয়ে আছে।শুভ তা বুঝতে পেরে,ফাহিমের দুকাধে হাত রেখে বললো_____
|
জানিস দোস্ত, কলিও আমাকে সীমাহীন ভালোবাসে।দুবছর ওর থেকে দূরে থাকার পরও,আমার পিচ্ছি আমাকে ভুলেনি,বরং আমাকে ওর সারা হ্রদয়ে বিচরন করে রেখেছে।আমি ওর চোখে আমাকে না পাওয়ার কস্ট দেখেছি।সত্যি বলছি ওর কস্ট দেখে আমার ভেতরটা কি যে শান্তি লেগেছে তোকে বুঝাতে পারবো না।আমি এতোটা বছর যে #প্রেমময় তৃষ্ণায় ভুগেছি।কলিও সেই #প্রেমময় তৃষ্ণা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করেছে।আমারতো এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা, আমার পিচ্ছিটাও আমাকে ভালোবাসে।কলির ভেতরে বাহিরে অন্তরের সব জায়গায় এই শুভর বসবাস।
|
কিন্তু জানিস আমি না একটা জিনিস খুব খারাপ করে ফেলেছি।তাই এই নিয়ে একটু চিন্তিত হচ্ছি।
|
কি করেছিস শুভ…।
|
এর পর শুভ কলিকে কি কি বলেছে সব বললো ফাহিমকে।
দোস্ত কলির যে বয়স, এ বয়সটা খুব ভয়ংকর,ভালোমন্দ,দিক বেদিক বিবেচনা করার মতো বয়স হয়নি,আমার ভয় হচ্ছে আবেগে পরে আবার ভুল কিছু না করে ফেলে।
|
ফাহিমের কথা শুনে শুভও আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পরে।
|
আমি জানি তুমি আর ফিরবে না,ধরবে না আমার হাত।
তবুও ছিলাম এতোদিন তোমার অপেক্ষায়, কারন এই অপেক্ষায় যে অনেক শান্তি পেতাম,স্বস্তি পেতাম আমি।কিন্তু আজ যে সব শেষ।তোমাকে ফিরে পাওয়ার আশাটাও এখন আর করা যাবে না।মনের কস্টটা বাড়তে বাড়তে অনেক বেশি বেড়ে গেছে শুভ ভাই।আমি আর সইতে পারছিনা….কিছুক্ষন আগে কলি কয়েকটা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে এসব মনে মনে বলে যাচ্ছে।বলতে বলতে কলি অজানা এক ঘুমের দেশে পারি দিলো।এ দেশ থেকে বের হতে কলি পারবে কিনা জানে না।কিন্তু ওর মন যে শান্তি চায়।তাই শান্তির খোঁজে এমন ভুল ডিসিশন কলি নিয়ে নিলো।হয়তো শুভর সাথে আর দেখা নাও হতে পারে,হয়তো কলি ফুল হবার আগেই ঝড়ে যাবে।
|
[কিশোরী বয়সটাই এমন,এই বয়সে কিশোর /কিশোরী না শব্দটা শুনতে নারায।জীবনের সবচেয়ে ভুল ডিসিশন গুলো এই বয়সেই বেশি নেওয়া হয়।কারন আবেগ খুব বেশি কাজ করে তাদের মধ্যে।আর আবেগে পরে কিশোর/কিশোরী ভালোমন্দ কিছুই বিবেচনা করতে পারেনা।]
|
ইনাম,মাহির আর শুভর ছোট বোন রিহা শুভর রুমে বসে গল্প করছে,আর শুভ বসে বসে ফোন টিপছে আর কলির কথা চিন্তা করছে।কেনো জানি মনটা খুব অস্থির হয়ে পড়ছে।
“অর্পাও শুভর রুমের দিকে যেতে নিলে কেউ একজন অর্পার হাতটা ধরে টান দিয়ে অন্য রুমে নিয়ে যায়।অর্পা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেও হাত ধরা লোকটি কে দেখে ভয়টা দূর হয়ে যায়।কিন্তু রাগটা বেড়ে যায় ফাহিমের উপর।ফাহিম অর্পার কোমড়কে শক্ত করে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরেছে।
‘কি হচ্ছে কি ফাহিম, আমাকে এভাবে আনার মানেটা কি।’
বউয়ের সাথে রোমান্স করতে মানে লাগে না
জান,,ফাহিম অর্পার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়।
ছাড়ুন ফাহিম আমাকে,কেউ এসে পড়বে প্লিস।
–আর কতো অর্পা,আর কতো আমাকে শাস্তি দিবে,প্লিস অর্পা এবার তো ক্ষমা করো।
আমি ক্লান্ত, আমি পিপাসিত তোমার ভালোবাসার।
ফাহিম অর্পার কাধে একটা ডিপ কিস করলে অর্পা কেপে উঠে।দুহাত দিয়ে ফাহিমকে সরানোর চেস্টা করে।কিন্তু ফাহিমকে এক কদমও সরাতে পারে না।বরং অর্পার কোমড় এক হাত দিয়ে নিজের সাথে আরো চেপে ধরে ফাহিম,আরেক হাত দিয়ে অর্পার ঘাড়ের চুলগুলো ধরে অর্পার মুখটা কাছে টেনে নিয়ে অর্পার ঠোঁটকে নিজের আয়ত্তে করে নেয়।অর্পা নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেস্টা করে ব্যর্থ হলে,হাল ছেড়ে দেয়।অর্পা বুঝতে পারে ফাহিমের ছাড়ার ইচ্ছা না হলে ও আর কিছুই করতে পারবে না।ফাহিমও অনেক দিনের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে নিজের ভালোবাসা মানুষটিকে কাছে পেয়ে,হোক না তা জোড় করে,তাতে কি।তার ভালোবাসার কোন ত্রুটি নেই।কিন্তু অর্পাই বুঝতে চায় না।
অনেকক্ষন পর ফাহিম অর্পাকে ছেড়ে দেয়।অর্পা ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে চলে যেতে নিলে ফাহিম এক হাত ধরে ফেলে,এখনো সময় আছে অর্পা ভালোবাসার মানুষকে কাছে টেনে নেও,তানা হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
|
ফাহিম চলে যায়,নিজ বাসায়।আর অর্পা ওখানেই দাঁড়িয়ে থেকে নিরবে চোখের জল ফেলছে।কেনো ফাহিমকে ক্ষমা করতে পারছে না অর্পা নিজেও জানে না।অনেক বড় অপরাধ তো করেনি।ভালোবাসার মানুষটি কে পেতে হয়তো কিছু মিথ্যা বলেছে ফাহিম।আর এটাই ফাহিমের দোষ।
|
সকালে কলির মা নামায পড়তে উঠে।নামায শেষে মেয়েকে একবার দেখতে আসে।কলি ঘুমিয়ে ছিলো। মেয়েকে দেখে রুম থেকে বের হতে নিলে নিচে মেঝের দিকে চোখ পড়ে,ঔষুধ এর খালি পেকেট।পেকেট তুলে হাতে নিয়ে দেখে ঘুমের ঔষুধ। কলির মা খুব ভালো করেই চিনতে পারে।কারন এই ঔষুধ গুলো কলির মায়ের।যা ডক্তর কিছু দিন আগে দিয়েছিলো।কারন কলির মায়ের ঘুমের সমস্যার কারনে প্রচুর মাথা ব্যাথা করতো।অনেক গুলো ঔষুধ ছিলো,কিন্তু এখন খালি।কলির মা ফাহমিদা বেগম কাপা কাপা হাতে কলিকে ডাকতে লাগলো,এভাবে অনেকক্ষন ডাকার পরও যখন কলি উঠছে না,তখন ফাহমিদা বেগম চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।চিৎকার শুনে কলির বাবা দৌঁড়ে এসে ফাহমিদার কাছ থেকে সব জানতে পেরে মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করলো তাড়াতাড়ি।
চলবে…..।