প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব-০২

0
2623

#প্রেমময় তৃষ্ণা
#writer -TaNiA[🖤]
#part-2



শিশুকালে ভালোবাসা নামক যে রসের সৃষ্টি হয়,সেটি ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরো পরিপক্ব হতে থাকে।অর্থাৎ মনের মধ্যে ভালোবাসা নামক জিনিসটির একটি জগৎসৃষ্টি হতে থাকে।কিশোর বয়সের ভালোবাসা ভয়ংকর হয়ে থাকে।এ বয়সে লজ্জাটা একটু বেশীই কাজ করে,এসব কারণেই মনের কথা মুখে আনতে পারে না।তাই ভালোবাসা নামক এই জিনিসটি কস্টদায়ক হয় কিশোর -কিশোরী বয়সে।



কলিও শৈশব এর গন্ডি পেরিয়ে কিশোরীতে পরিণত হয়েছে।তাইতো তার মধ্যে আবেগ,ভয় আর লজ্জাটা একটু বেশিই কাজ করছে এখন।শৈশবে শুভর সাথে কাটানো দিনগুলো কলি আজও ভুলেনি,তার কাছে যে শুভ আজও তার রাজকুমার। তবে এই রাজকুমারকে কলি এখন চিনে না।কারন রাজকুমার এর পরিবর্তন কলিকে প্রতিনিয়ত পুড়িয়েছে।



আর গত দুবছর শুভকে দেখতে না পাড়ার বেদনাটা এখন অভিমানে পরিণত হয়েছে কলির মধ্যে।তাইতো শুভ বার বার খবর দেওয়ার পরও কলি একবারও শুভর সাথে দেখা করতে যায়নি।যাবেই বা কেনো।কলির মন প্রাণ জুরে শুভর বিচরণ হলেও শুভর মনে কি আছে কলি আজও জানতে পারেনি।হয়তো কিছুই নেই।তাইতো কতো সহযে এই দুবছরে কলির সাথে শুভ একটিবারও দেখাতো দূরে থাক কথাও বলেনি।তাহলো কেনো এখন দেখা করতে চায়।এতো দিন যেমন ছিলো,এখন ও থাক।
যাবো না আমি_______আমি আর এই দহনে পুড়তে চাইনা শুভ ভাই।বিছানায় শুয়ে মাথার উপরে চলতি ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে কলি এতো বছরের হিসাবের ছক কষছিলো।



কলি দুদিন ধরে স্কুলে যায় না শুভর কারনে। তবে আজ মার বকাবকি তে স্কুলে না গিয়ে পারছে না।তাই আকাশীরং এর স্কুল ড্রেসটা পরে।দুটো বেনি করে,স্কার্ফ মাথায় পেছিয়ে কলি চললো শিলার সাথে স্কুলে।যাওয়ার সময় কোনও ভয় নেই,কারন কলি জানে শুভ এতো সকালে কলির সাথে দেখা করতে জীবনেও আসবে না।তাইতো কলি,শিলা আর শিলার ছোট বোনটার সাথে গল্প করতে করতে স্কুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো।ঠিক তখনি একটা জিপ এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।কলি জিপটার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
জিপটাতে মাহির আর ইনাম ছিলো।

কলি উঠে পড়ো।তোমাকে ভাইয়া নিয়ে যেতে বলেছে।

-কোন ভাইয়া!
কোন ভাইয়া মানে!শুভ ভাইয়া।
-আমাকে কেনো নিতে বলবে।আপনি কানে মনে হয় কম শুনেছেন ইনাম ভাইয়া।গিয়ে আবার ভালো করে যেনে আসুন।

আরেরেরে কোথায় যাও,দেখো কলি ভাইয়া কিন্তু খুব রাগ করবে।তখন কিন্তু আমরাও কিছু করতে পারবো না।
-করুক রাগ,আমার কি…আমি কি তাকে ভয় পাইনি।আমি এখন পিচ্ছি কলি না, যাকে উনি যা বলবে তা শুনবে।আমি এখন আসি আমার স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বায়…।

এদিকদিয়ে ইনাম আর মাহির একেওপরের দিকে তাকিয়ে আছে।কলির এমন আচরনে।



কলি মনে করেছে এভাবে ও শুভ থেকো দূরে থাকতে পারবে।কিন্তু কলির ভাবনায় পানি ঢালতে শুভ স্কুলে এসে হাজির।
-দুবছর পর দেখলেও শুভকে দূর থেকেই চিনতে পেরেছে কলি।’আর চিনবেই না কেনো,৬ফুট লম্বা, চওড়া বডি,দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিয়মিত হয়তো জিম করে,কালো সিল্কি চুল গুলো বাতাসে বার বার এলোমেলো হচ্ছে,আর শুভ হাতের আঙ্গুল গুলো দিয়ে সামলাচ্ছে।ওয়াইট কালারের সার্টটা হাতের দিকটা ফোল্ডার করে রেখেছে।চোখে সানগ্লাস পরেই এদিকওদিক তাকাচ্ছে।সবশেষে বলা যায় আগের থেকে আরো হ্যান্ডসাম ও সুন্দর ওয়ে গিয়েছে।’
-কলির তখন শুভকে খুব বলতে ইচ্ছা করছিলো,ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই শুভ ভাইয়া।দেখেন আমিতো চোখ সরাতে পারছি না,কিন্তু আশেপাশের সব চুন্নিরাও আপনাকে গিলে খাচ্ছে।কলি এতোক্ষন পর বুঝতে পরেছে শুভ তাকেই খুঁজতে এসেছে।কারন কাজ না থাকলে শুভ স্কুলে আসেনা।তাছাড়া মাঝে মাঝে শুধু কলির সাথে দেখা করতে আসতো শুভ।এতো বছর পর শুভকে স্কুলে দেখে সবাই তাকিয়ে আছে।
‘কিন্তু শুভর কারো তাকানো তোয়াক্কা করার সময় নেই,তাই সোজা হাটা ধরলো কলির ক্লাশের দিকে।ক্লাশে গিয়েই কলির এক বেনী টানতে টানতে নিজের গাড়ীর সামনে নিতে লাগলো।আর এদিক দিয়ে কলি শুভ ভাইয়া ছাড়ো আমায় লাগছে বলে চিল্লাচ্ছে,কিন্ত শুভর কানে কিছু আসছে না।ডোন্ট কেয়ার একটা লুক।কলিকে টানতে টানতে গাড়ীতে বসালো।’


গাড়ী চলছে তার নিজ গতিতে,আমি আড় চোখ দিয়ে শুভ ভাইকে দেখলেও,তার কোন পাত্তা নেই।সে সামনে তাকিয়ে গাড়ী এমন ভাবে চলাচ্ছে , জীবনে মনে হয় আগে গাড়ী চালায়নি।গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে একটা খালি রাস্তায় শুভ ভাইয়া গাড়ীটা থামালো।আমি বড় বড় চোখ দিয়ে তার দিকে তাকালাম।


-এখানে কেনো গাড়ী থামালেন,আমি একটু পাশেপাশে আরো ভালো করে লক্ষ করে।
|
‘তোর সাথে কথা বলা দরকার, তাই এই জায়গাটা বেস্ট। এখানে কেউ ডিস্টার্ব করবে না আমাদের।কেনো কোনও সমস্যা ।’
|
-নিশ্চয়ই আপনি আমাকে মেরে ফেলার প্লানিং করেছেন।এখানে মেরে ফেললে আমাকে কেউ খুঁজেও পাবেনা।
|
‘কি যা তা বলছিস তোর মাথা ঠিক আছে তো, আমি কেনো তোকে মারবো।’
|
-তাহলে কথা বলার জন্য কেউ এমন জায়গায় আনে,চারদিকে তাকিয়ে দেখছেন মানুষতো দূরে থাক,কুত্তা বিলাইও নাই একটা।
|
‘ওওও তাহলে এ কথা।আমার এমন আজগুবি চিন্তা দেখে শুভ ভাইয়া হাসতে লাগলো।’
|
উফ! কি করে এ মানুষটা।এমনেই আমি তার জন্য ঘায়েল,তার উপর উনি এমন করে হাসছে,শুভ ভাইয়া হাসি বন্ধ করুন তা না হলে আমি মরে যাবো।কলি মনে মনে কথা গুলো বলে যাচ্ছে।কলির হ্রদয়ের স্পন্দন যেনো বেরেই চলছে।আর শুভর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।


ওকে স্টোপ নাউ,এখন বল তোর সমস্যা কি।
|
আমার আবার কি সমস্যা, আমি কি বলেছি কিছু।(কলি)


তাহলো এমন করছিস কেনো।আমার সাথে দেখা করতে চাইছিস না কেনো।দেখ দুবছর আগে তোর সাথে দেখা করতে পারিনি,আর্জেন্ট কাজ পড়ে গিয়েছিলো বলে চলে যেতে হয়েছিলো।তার জন্য সরি।আর এতে এতো রাগ করার কি আছে।


কাজ শেষ করতে করতে কি দুবছর লাগে শুভ ভাইয়া।এই দুবছরে কি একবার ও আমার কথা মনে পরেনি।কলি জানালার দিকে মুখটা ঘুড়িয়ে রেখে কথাগুলো বলছে।কারন কলির ছোট ছোট চোখ গুলো দিয়ে অশ্রু পড়ছে।যা কলি শুভকে দেখাতে চায় না।
|
কলিইই,আমার দিকে ঘুড় ,ঘুড় বলছি।আমি কিন্তু দ্বিতীয় বার বলবো না।
|
কলি ভয়ে শুভর দিকে ঘুড়লো।
|
এবার বল কলি তোর কি সমস্যা।কেনো এমন আচরণ করছিস।আমি এবার চলে গেলে কবে আসবো জানি না,আসতে পারবো কিনা তাও জানি না।তাই বলছি তোকে,কোনও সমস্যা থাকলে বল, আমি সমাধান করার চেস্টা করবো।আর তোর কেনো এমন মনে হলো আমি তোকে মনে করিনি।হয়তো ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু তোকে ভুলিনি।ভুলে যদি যেতাম তাহলে কি আজ তোর সাথে দেখা করতে আসতাম বল।



এবার কলি নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে পারলো না,ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগলো মুখে হাত দিয়ে।আপনি অনেক খারাপ শুভ ভাইয়া।আমাকে একবারও ফোন করেননি,একবারও খোঁজ নেননি।আপনি আমাকে ভুলে গেছেন।আপনি আমাকে প্রমেজ করেছিলেন আমাকে ছেড়ে যাবেন না।কিন্তু আপনি চলে গেছেন।আমি জানি এবার গেলে হয়তো আর আসবেন না।কিন্তু আমি কি করবো বলেন আমি যে আপনাকে____কলি আর বলতে পারলো না।কান্নার মাত্রা বেড়ে গেলো।



কলির এ কান্না শুভর কাছে স্বাভাবিক লাগলো না।তবুও শুভ কিছু বললো না,কিন্তু কলির কান্না দেখে শুভর বুকে চিনচিন করে ব্যাথা করতে লাগলো।এ ব্যাথা আজকের থেকে না,কলিকে সেদিন ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই যতোবার শুভর কলির কথা মনে পড়তো তখনিই এ ব্যাথাটা অনুভব করতো।
শুভ বুকের মধ্যে হাত দিয়ে গাড়ীর সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।শুভ এতোটা অবুঝ না,কলির মনের কথা শুভ অনেক আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো।কিন্তু কলিকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে চায়নি শুভ তাইতো এই দুবছর কলি থেকে দূরে থেকেছে।শুভ ভেবেছিলো কলি থেকে দূরে সরে থাকলে কলি সব ভুলে যাবে কিন্তু কলি কিছুই ভুলেনি।



stop crying koly…I do not tolerate your tears at all….I say stop….আমি মরিনি এখনো।এভাবে কেনো কান্না করছিস।কান্না থামা না হলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো কিন্তু।


কলি এতোক্ষন পর শুভর দিকে তাকালো।শুভর চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে।কলি বুঝতে পারছে না কেনো।কারন কান্না তো ও করেছে তাহলে চোখ শুভর কেনো লাল হবে।শুভর চোখে চোখ পড়ায় কলি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো।আমি বাসায় যাবো শুভ ভাইয়া।


তা তো দিয়েই আসবো,তোকে কি এখানে রাখতে এনেছি আমি যতোসব। শুভ একটা সিগারেট ধরিয়ে দুই আঙ্গুলের মাঝে রেখে ফু দিয়ে ধোয়া গুলো বাহিরে ছাড়ছে।কিছুক্ষন পর নিরবতা কাটিয়ে শুভ,তোর বয়স কতো এখন।
১৬ বছর…..[কলি]
আমার কতো এখন জানিস ৩০।তোর থেকে ১৪ বছরের বড়।সময় চলে গেলোও বয়সের এই গ্যাপটা কখনো কমবে না।তোর মাত্রই নতুন জীবন শুরু হয়েছে।জীবনটাকে উপভোগ কর,লেখাপড়া ভালো করে কর,দেখবি আমার থেকে ভালো কাউকে তুই পাবি।
|
আমি আতোশত বুঝি না।[কলি]
|
চুপ একদম…..ধমক দিয়ে।
|
ধমকের কারনে কলি আবার কাঁদতে থাকে।
|
আবার শুরু করলি তুই….।
|
মন ভাঙ্গার থাকলে ছোটবেলায়ই ভেঙ্গে দিতেন, তখন এমন আশা দিয়েছিলেন কেনো।
|
তখন তুই পিচ্ছি ছিলি তোকে বুঝানো যাচ্ছিলো না।কিন্তু এখন তুই পিচ্ছি নেই বড় হয়েছিস অনেক।এখন তোর সব কিছু বুঝতে হবে তোর জন্য কি ভালো কি খারাপ।


আমি এখন বড় হয়েছি,তাহলে সমস্যা কি আপনার।আমি সুন্দর না বলে,নাকি আমার বাবা গরীব বলে আমাকে যোগ্য মনে হয় না।এসব কথা গুলো কলি মাথা নিচু করে শুভকে বলছে।কারন হয়তো আজকের পর শুভকে আর পাবেনা এসব বলতে।



একথা বলার সাথে সাথে কলির গালে একটা থাপ্পড় পড়লো।শুভ দাঁত কটমট করে বলতে লাগলো,খুব বেশি কথা বলতে শিখে গেছিস।আগে ছোট ছিলি বলে কিছু বলেনি,কিন্তু তোর এসব আজগুবি কথা এখন আর সহ্য করবো না আমি মনে রাখিস।



আমি বাসায় যাবো।গালে হাত দিয়েই কথাটা বললো কলি।



শুভও বাড়ীর দিকে রওনা দিলো।কলির বাড়ীর সামনে গাড়ী থামানোর সাথে সাথে কলি গাড়ী থেকে নেমে বাড়ীর দিকে যেতে লাগলে শুভর ডাকে পিছে তাকায়।
শুভ একটা পেকেট কলির দিকে এগিয়ে ধরে,এতে একটা ফোন আর সিম আছে তোর জন্য।কখনো মনে পড়লে ফোন দিস আমায়।আমার নাম্বার লিখা আছে।



কলি শুভর দিকে তাকিয়ে পেকেটটার দিকে তাকালো আমার লাগবে না শুভ ভাইয়া।আর চিন্তা করবেন না আমি আর আপনাকে জ্বালাবো না।কলি আর এক মিনিটও দাঁড়ায়নি বাড়ীর ভেতরে চলে গেলো।আর শুভ কলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।



কলি বাড়ীতে এসে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে অনেক কেঁদেছে আজ।কাঁদতে কাঁদতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পরেছে।মন খারাপ হলেই কলি জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে, আজও তাকিয়ে আছে।
সামনে বিস্তৃত মাঠ,আর মাঠের এক পাশে আছে একটি গাছ।তার শীষ গুলো আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগীতায় দাঁড়িয়ে আছে,কিন্তু লাগাল পায় না।কলিরও নিজেকে ওই গাছটার সাথে তুলনা করছে,সেও তো শুভ নামক মানুষটি কে ধরতে এতো বছর চেস্টা করেছে কিন্ত কলিও লাগাল পায় নি।

চলবে…..।

[গল্পটা ধৈর্য রেখে পড়বেন।আসতে আসতে ভালো লাগবে।আমি যতো সম্ভব কিশোর/কিশোরী কালের প্রথম ভালোবাসাটা তুলে ধরার চেস্টা করছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে