প্রেমময় আসক্তি পর্ব-১০

0
1458

#প্রেমময়_আসক্তি
#পর্ব_১০
#নন্দিনী_চৌধুরী

১০.

আদ্রিয়ানের সুইমিংপুলে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে লিজার ভাই নিয়াজকে।নিয়াজের হাত পা দুইটাই ভেংগে দেওয়া হয়েছে। পঙ্গু হয়ে এখন পরে আছে। আদ্রিয়ান ওর সামনে দাঁড়ানো। ধারালো চাকু নিয়ে। নিয়াজের আত্মা ভয়ে যায় যায় অবস্থা। আদ্রিয়ান নিয়াজের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো আর ওর সামনে ছুড়িটা ঘোরাতে ঘোরাতে বললো,,

আদ্রিয়ান: তোর বোনের কলিজা কত বড়! ও আমার রোদেলাকে তুলে নিয়ে গেছে। ওর গায়ে হাত তুলছে। এতো বড় কলিজা নিয়ে তোর বোন চলে? এখন নিজের বোনের সাথে তুইও জরিতো ছিলি। বোনকে তো নাহলে ভাগিয়ে দিলি। কিন্তু তুই বাঁচবি কিভাবে? তোর বোনকে আমি আগেও না করেছিলাম আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু তোর বোনের কলিজা অনেক উঁচু! ও আমার জানের দিকে হাত দিয়েছে। আর তুইও আমার কলিজার দিকে হাত দিয়েছিলি। আজকে তোর এই হাত আমার বাচ্চারা খেয়ে ফেলবে।

বলেই আদ্রিয়ান নিয়াজের দুই হাত কেঁটে দিলো আর ছুঁড়ে মারলো পানিতে আর আদ্রিয়ানের দুই বাচ্চারা হামলে খেতে লাগলো। আদ্রিয়ান নিয়াজের দুই পা দেহ থেকে আলাদা করে দিলো। আর নিয়াজ ততক্ষনে নিজের শ্বাস ত্যাগ করে ফেলেছে। হাত পা বিহীন দেহটা পানিতে দেওয়া হলো। আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়াতেই পিছন থেকে একটা চিৎকারের আওয়াজ পেলো।

নাহহহহহহহ!!!

আদ্রিয়ান পিছনে তাকিয়ে দেখে রোদেলা দাঁড়ানো আর ওর চোখে পানি চেহারায় ভয় স্পষ্ট। আদ্রিয়ান আসতে করে বললো,

আদ্রিয়ান: Shit!

আদ্রিয়ান রোদেলার দিকে এগোতে নিলে রোদেলা ভয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,

রোদেলা: আমার কাছে আসবেননা প্লিজ। আমাকে মারবেন না। আমি কাউকে কিছু বলবোনা। আমাকে মারবেন না।

আদ্রিয়ান রোদেলার কথা কানে না নিয়ে রোদেলার কাছে গেলো। আর রোদেলা এতোটাই ভয় পেয়েছে যে ও এখান থেকে যাওয়ার শক্তিও পাচ্ছেনা। আদ্রিয়ান এসে রোদেলার হাত ধরতেই রোদেলা আদ্রিয়ানের বুকে সেন্সলেস হয়ে পরে যায়। আদ্রিয়ান রোদেলাকে জরিয়ে নেয় নিজের সাথে। আদ্রিয়ান ভালো করেই জানে। রোদেলা বেশি ভয় পেলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে কোলে তুলে বাসার দিকে পা বাড়ায়।

সকালের দিকে আদ্রিয়ানকে যখন সায়মন জানায় যে রোদেলাকে লিজা তুলে নিয়ে গেছে। আদ্রিয়ান সেই মূহূর্তে লিজাদের আস্তানায় হামলা চালায়। নিয়াজ লিজাকে পালাতে সাহায্য করলেও নিয়াজ ধরা পরে যায়। আদ্রিয়ানের লোক ওকে মেরে হাত পা ভেংগে দেয়। আর রোদেলা সেন্সলেস থাকায় তখন কিছু টের পায়নি। আদ্রিয়ান নিয়াজকে রোদেলাকে বাসায় নিয়ে আসে। রোদেলাকে রুমে রেখে নিয়াজকে শায়েস্তা করতে যায় সে। রোদেলার জ্ঞান ফিরতে নিজেকে অচেনা বাসায় দেখে অবাক হয়। বিছানা থেকে উঠে বাহিরে এসে সুইমিংপুলের কাছে গিয়ে দেখে আদ্রিয়ান একটা লোককে কি ভয়ানক ভাবে মারলো। এটা দেখে রোদেলা ভয় পেয়ে যায়।

বর্তমানে,,,,

রোদেলার মাথার কাছে বসে আছে আদ্রিয়ান। রোদেলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে। ঘুমন্ত অবস্থায় এক মোহময়ী নারী লাগছে তার কাছে। যার চেহারায় সব মোহ আটকে আছে। আদ্রিয়ান রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,

আদ্রিয়ান: “আচ্ছা আমার তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় এতো সুন্দর মোহময়ী লাগে কেন নেশামই? ঘুমন্ত অবস্থায় ইচ্ছা করে তোমাকে শুধু দেখেই যাই। জেগে থাকা অবস্থায় অবশ্য তুমি একটা খরগোশের বাচ্চা যে খালি লাফালাফি করে। কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় একটা বিড়ালের বাচ্চা তুমি। এই জন্য তোমাকে এতো ভালো লাগে। তোমার প্রেমে পরে এখন মদ আমাকে নেশা করাতে পারেনা। কিন্তু তোমার কাছে থাকলে তুমি আমার আশেপাশে থাকলে আমাকে একটা নেশায় পাগল করে দেয়।”

আদ্রিয়ান একটু চুপ করে থেকে আবার বলতে শুরু করলো,

আদ্রিয়ান: হয়তো তুমি আমাকে এখন ভয় পাবে ঘৃণা করবে। কারন তুমি আমাকে খুন করতে দেখেছো। কিন্তু বিশ্বাস করো। আমি কোনো নিরীহকে মারিনি কোনোদিন। আমি তাদেরকেই মেরেছি বা মারবো যারা আমাকে বা তোমাকে কস্ট দেওয়ার চেস্টা করবে। আমার আমির থেকেও তুমি আমার কাছে অনেক দামী। যদি আমার আগে মৃত্যু তোমার কাছে আসতে চায় তবুও আমি আগে সেই মৃত্যুকে বরণ করবো। তবুও তোমাকে কিছু হতে দেবোনা। খুব ভালোবাসি আমি তোমাকে নেশামই। জানো আমাকে ভালোবাসার কেউ নেই। প্লিজ আমাকে তুমি ছেড়ে চলে যেওনা। তাহলে যে মরে যাবো আমি।”

আদ্রিয়ান কথাগুলো বলে রোদেলার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলো। আদ্রিয়ান রাফসানকে জানিয়েছে যে সে রোদেলাকে উদ্ধার করে এনেছে আর রোদেলা তার কাছেই আছে। সন্ধ্যার ভিতরে রোদেলাকে বাসায় পাঠাবে সে। আদ্রিয়ান রাফসানের সাথে রোদেলাকে নিয়ে কথা বলেছে। একদম সোজা ভাবেই বলেছে সে যে সে রোদেলাকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চায় তাকে। রাফসানের আদ্রিয়ানকে বাজে লোক মনে হয়নি কোনোদিন। এতো ভালো বিজনেসম্যান খারাপ হবেনা তার বিশ্বাস। তাই রাফসানের এতে মত থাকলেও সে জানিয়েছে সে আগে তার বাবা আর রোদেলার সাথে কথা বলবে এই বিষয়ে।

রাফসান এসেছে রিয়াকে রিসিভ করতে। রিয়া আজকে ঢাকায় আসছে। রাফসানের সাথে মুন ও এসেছে। হয়তো মুনের মতো হতভাগা কপাল কম আছে। যে সে নিজেই নিজের ভালোবাসার মানুষের হবু বউকে রিসিভ করতে এসেছে। মুনের কলিজাটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। কিন্তু সে তা না পারছে বলতে আর না পারছে সয্য করতে। রাফসান দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তখন বাস এসে থামে বাস স্টেন্ডে। বাস থেকে রিয়া নামলো। মুন প্রথমে রিয়া কে সেটা চিনতে পারছিলোনা। কিন্তু রাফসান যখন ফোন কেটে রিয়াকে হাই দেয় তখন চিনতে পারে কোনটা রিয়া। রাফসান রিয়াকে মুনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।

রাফসান: রিয়া এ হলো মুন। আমার বোন রোদেলার বান্ধুবি। আর মুন এ হলো রিয়া আমার হবু বউ।

রাফসানের মুখে হবু বউ কথাটা শুনে মুনের বুকটা ভেংগে যাচ্ছিলো। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে মুখে মিথ্যা হাসি নিয়ে রিয়ার সাথে আলাপ করলো সে। রিয়া রাফসানের ফ্লাটের ওখানেই ফ্লাট নিয়েছে। রিয়া আর রিয়ার বান্ধুবিরা থাকবে। কথা শেষ করে ওরা তিনজন গাড়িতে গিয়ে বসলো। মুন ইচ্ছা করে পিছনে বসলো। কিন্তু রিয়াও পিছনে বসলো। রাফসান মুনকে বললো,

রাফসান: মুন তুমি সামনে এসে বসো। রিয়ার তো কত গুলো ব্যাগ সাথে ওর রাখতে সমস্যা হবে। তুমি সামনে এসে বসো।

মুন রাফসানের কথা শুনে কি বললবে বুজতেছে না। রিয়াকে সামনে নিলেইতো হতো। তার ব্যাগ এখানে রাখলে হতো। মুন কি চোর যে ব্যাগ নিয়ে যাবে।

মুন পিঁছনের সিট থেকে এসে সামনের সিটে এসে বসলো। কিন্তু এখন সমস্যা হলো এটা ও সিট ব্যাল্ট লাগাতে পারেনা। রাফসান সেটা বুজতে পেরে ওর সিট ব্যাল্টটা লাগিয়ে দিলো। তারপর গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

কলেজে,,,,,,

আজকে রুবা আর কাশু শুধু আসছে কলেজে। রোদেলাতো আদ্রিয়ানের কাছে আর মুন রাফসানের সাথে রিয়াকে আনতে গেছে। তাই ওরা দুজন আসছে। আজকে ওদের একটা ভ্যাক্সিন দিতে হবে সেটা দিবে। ভ্যাক্সিন দেওয়ার দায়িত্বে কলেজে আসছে আরাভদের হাসপাতাল। আর মেডিকেলের ডাক্তাররা একে একে সবাই ভ্যাক্সিন দিলো। এবার রুবার পালা। রুবা ইঞ্জেকশন খুব ভয় পায়। কাঁপতে কাঁপতে টেবিলের সামনে গিয়ে আরাভকে দেখে থমকে গেলো রুবা। আরাভ রুবাকে দেখে একটুও অবাক হয়নি। কারন সে আগেই জানতো রুবা এখানে পড়ে। আর সে রুবাকে দেখেছেও। রুবা আরাভকে দেখে আপনা আপনি হাত পিঠে চলে গেলো। আরাভ জিনিশটা খেয়াল করে হাঁসলো।রুবা লজ্জায় কিছুই বলতে পারছেনা করতে পারছেনা। রুবা গিয়ে চেয়ারে বসলো।

আরাভ: হাতটা দিন।

রুবা আসতে করে হাতটা দিলো। ভয়ে হাত কাঁপছে ওর। আরাভ বিষয়টা বুজতে পেরেছে। আরাভ যখন রুবার হাতে ইঞ্জেকশন পুষ করতে যাবে রুবা চোখ খিচে বন্ধ করে আরাভের হাত খামচে ধরলো। আরাভ আসতে করে রুবার হাতে পুষ করলো ইঞ্জেকশন। ইঞ্জেকশন দেওয়া শেষ হলে আরাভ বলে,

আরাভ: শেষ এবার আমার হাতটার প্রতি দয়া করেন একটু।

আরাভের কথা শুনে রুবা চোখ খুলে তাকায়। আরাভ হাসছে আর বলছে,

আরাভ: অনেক বেশি ব্যাথা লাগছে তাইনা?
রুবা: কই নাতো!
আরাভ: না মানে যেভাবে আমার হাতটাকে ধরছেন। দেখেন চামড়া উঠে গেছে আপনার রাক্ষসি মার্কা নখের জন্য। একটা সামান্য ইঞ্জেকশনকে এটো ভয় পান মিস চেইন খোলা!
রুবা আরাভের মুখে এমন ডাক শুনে রাগে লজ্জায় তাড়াতাড়ি করে উঠে চলে যায়। আর আরাভ হাসতে থাকে।

এদিকে,,,,,

রোদেলার জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফিরে নিজেকে আবার অন্য একটা রুমের খাটে আবিষ্কার করে। রোদেলা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে একটা অনেক বড় রুম এটা। সব কালো রং এর ফার্নিচার দিয়ে রুম সাজানো। দেওয়ালে আদ্রিয়ানের অনেক ছবি। রোদেলা বিছানা থেকে নেমে ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখছে। তখন আদ্রিয়ান খাবার নিয়ে রুমে ডুকে আর দেখে রোদেলা ঘুরে ঘুরে ওর রুমটা দেখছে। আদ্রিয়ান হেসে বলে,,,

আদ্রিয়ান: ঘুম হয়েছে ভালো নেশামই।

নেশামই ডাকটা শুনে রোদেলা পিছনে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখলো। আর সেই তখনকার আদ্রিয়ানের ওই লোকটাকে মারা দৃশ্য মনে পরে গেলো। সাথে সাথে রোদেলা আদ্রিয়ানকে বললো,

“আপনি আপনি একটা খুনি। আপনি একটা সাইকো।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে