#প্রেমময়ী_বর্ষণে_তুই(০৬)
লাবিবা ওয়াহিদ
আফনা বুকে দু’হাত গুজে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চুইংগাম চিবুচ্ছে আর ইসহাকের রেডি হওয়া দেখছে। ইসহাক অনেকটা পারফিউম দিয়েই খান্ত হলো। অতঃপর আফনার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-“কী সমস্যা? এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিস কেন?”
-“আমারে ঘুরতে নিয়ে যাবি?” ইসহাকের কথার উত্তর না দিয়ে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে প্রশ্ন করলো!
-“তুই অসুস্থ! এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার কিসের ঘুরাঘুরি? যা গিয়ে রেস্ট নে, আমি গেলাম!”
-“কই যাবি?”
-“আ..ফ.. ফ.. ফ্রেন্ডের সাসাথে ঘুরতে!” তুতলিয়ে বললো ইসহাক। অতঃপর আফনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ধপাধপ পা ফেলে আফনাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো। ইসহাক চলে যেতেই আফনা অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।
-“তুই কী ভাবছিস আমি বুঝি না, তুই কই যাচ্ছিস? হাহা! আজ তুই একা না মনু, আমিও তোর পিছু নিবো!”
বলেই রুমে গিয়ে বোরকা পরে মাথায় কোনোরকম হিজাব পরে দিলো দৌড়! আদনান বাসায় নেই, আম্মু টিভি দেখায় ব্যস্ত। আফনা অবশ্য তাকে বলে গেছে ইসহাকের সাথে বেরিয়েছে। আফনা ইসহাকের রিকশার পিছন পিছন আসছে। কিছুটা দূরে যেতেই ইসহাক একটা মেয়েকে তার রিকশায় রিসিভ করলো। আফনা কিটকিটিয়ে হেসে বললো,
-“আমার সিক্সথ সেন্স কখনো ভুল বলে না। যা ভেবেছিলাম তাই হলো। ভাবীকে আমার জোস লেগেছে। নো চিন্তা তোমাদের কাবাবে হাড্ডি হলেও বাসরে হাড্ডি হবো না হেহেহে!”
ভিলেনি হাসি দেয় আফনা। ইসহাকদের রিকশা আবারও চলতে শুরু করলে আফনাও রিকশাওয়ালাকে চলতে বললো। অবশেষে ওরা একটা পার্কে গিয়ে নামলো। সেখানে ইসহাক এবং তার পাশে থাকা মেয়েটি একসাথে ফুচকা খেলো। ওদের একসাথের কয়েকটা পিক তুলে আফনা ভিলেনি হাসি দিয়ে বাসায় চলে গেলো। তবে তারও বেশ ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু আপাতত সে না খাওয়াই বেটার মনে করলো৷ তার মাথায় যে দুস্টু বুদ্ধি কিলবিল করছে।
রাত প্রায় ৯টার পর ইসহাক বাসায় ফিরেছে। আফনা তখন আদনানের সাথে ভিডিওগেম খেলতে ব্যস্ত৷ আফনা এমন ভাব ধরে আছে যেন সে কিছুই জানে না। ইসহাক আফনার দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ইসহাক তার বিছানায় গিয়ে বসতেই আফনা একটা বক্সের সব ছবি ইসহাকের মাথায় ফেললো। ইসহাক তখন পানি খাচ্ছিলো, এসবে বেচারার গলায় পানি আটকে যায় এবং সে মুখের পানি ফ্রুত করে ফেলে কাশতে লাগে। আফনা কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না করে একটি চেয়ার টেনে বসলো। আপাতত সে ইসহাকের কাশির বন্ধের অপেক্ষায় আছে। ইসহাকের কাশি থামতেই ইসহাক চেঁচিয়ে উঠলো,
-“কী সমস্যা? এভাবে এতোগুলা ছবির মানে কী?”
-“আরে আগে ছবিগুলো দেখ তারপর বুঝবি!”
ইসহাক একটা ছবি হাতে নিয়ে দেখলো কোনো এক মেয়ের ছবি। অন্যগুলো দেখেও বুঝলো এখানে প্রায় অনেক মেয়ের ছবি আছে!
-“এগুলার মানে কী?”
-“এগুলা তোমার উড বি!”
-“মানে কী? এই সবগুলারে বিয়ে করবো নাকি?”
-“উহু, একজনকে!”
-“দেখ আফনা, যা বলার সোজাসাপ্টা বলবি, ঘুরায় ফিরায় কথা বলা বন্ধ কর নয়তো তোরে থাপড়া…”
ইসহাক কিছু বলার আগেই চুপ হয়ে গেলো। চুপ বললে ভুল হবে, অবাক হয়ে হা করে আছে। কারণ, সে আফনার ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। আফনা তার ফোনটা সরিয়ে বললো,
-“আম্মু তোমার জন্য মেয়েদের ছবি কালেক্ট করেছে, এখন তুমি ডিসাইড করো কাকে বিয়ে করবা?”
-“তোর কাছে এই পিক আসলো কোথা থেকে?”
-“আমি তোমাকে কী বললাম? ডিসাইড করো?”
-“কী চাস তুই?”
-“তোরে হেল্প করতে!” বলেই চুইংগামের প্যাকেট ছিঁড়ে চুইংগাম মুখে পুরে নিলো।
-“আর?”
-“তুই যদি আমারে রিকুয়েষ্ট করিস তাহলে ভেবে দেখবো!”
-“কিছুক্ষণ আগেই তো বললি, আমাকে হেল্প করতে চাস?”
-“বলেছিলাম বুঝি? ঠিক আছে তাহলে বলেছি! এখন পা ধরে রিকুয়েষ্ট কর নয়তো ছবিটা ডিরেক্ট ফুপির কাছে…”
বলেই আফনা ভিলেনি হাসি দিলো। ইসহাক সেইরকম ফুঁসতে লাগলো।
-“তোর পা ধরে হেল্প চাওয়া আমার বয়েই গেছে।”
-“ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না। তুই হেল্প না চাইলে আমার কী করার। এখন এই ছবিগুলা থেকেই মেয়ে খুঁজে বিয়ে কর, আমার কী?”
বলেই আফনা উঠে চলে গেলো। আর ইসহাক সেখানেই গালে হাত দিয়ে বসে আছে। কিছুদিনের মধ্যে ইসহাকের বিয়ের চাপ বেড়ে যায়। বেচারা কী করবে না করবে বুঝতেই পারছে না। তার মাকে সরাসরি ভালোবাসার কথা বলতে গেলে তাকে সেদিনই শেষ করে দিবে৷ এদিকে আফনা ইসহাকের অবস্থা দেখে আর মজা নেয়। অবশেষে ইসহাক উপায় না পেয়ে আফনার কাছেই আসলো। আফনা ইসহাককে দেখেও না দেখার ভান ধরে ফোন টিপছে।
আধঘন্টা হয়ে গেলো ইসহাক কিছু বলছে না। এদিকে আফনাও বেশ মজা নিচ্ছে। অবশেষে নিরবতা ভাঙে ইসহাক।
-“দেখ তোর দুইটা পায়ে পরি প্লিজ আমার সাথে নিহার বিয়েটা ঠিক কর! যা চাইবি তাই দিবো তাও প্লিজ কিছু একটা কর বইন! ভুলিস না কিছুদিন আগে এক বাক্স তোর পছন্দের জিনিস দিছি!”
আফনা চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ ইসহাকের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“সত্যি তো?”
-“তিন সত্যি!”
-“ওকে। ভাবীর একটা ছবি কালেক্ট করে আমারে দে আর পরের প্ল্যান শুন!”
বলেই আফনা তার প্ল্যান বললো। আফনার প্ল্যানিং শুনে ইসহাকের দুশ্চিন্তা নিমিষেই কেটে গেলো। ইসহাক মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর,
ইসহাক টিভি দেখছিলো সাথে আম্মু, বাবাইও। তিনজনের মধ্যে আফনা একটা বক্স এনে টি-টেবিলে সবগুলো মেয়ের ছবি ঢাললো। অতঃপর ইসহাকের উদ্দেশ্যে বললো,
-“দেখো ভাইয়া, তুমি যদি এখন আমার হবু ভাবী সিলেক্ট না করো, ফুপি বলেছে তোমার কান ছিঁড়ে লাথি মেরে বাসা থেকে বের করতে। অতঃপর ফুপিও তোমার ব্যবস্থা নিবে।”
-“পরলো বাজ!” ইসহাক মুখটা মলিন করে বললো। আম্মু হেসে বলে,
-“আফনা একদম ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস। কী ইসহাক? এখন কই পালাবি?”
-“আর কোথায় পালাতে পারি বলো? তোমরা যা অত্যাচার শুরু করলা!”
বলেই ইসহাক মেয়ে খুঁজার জন্য ছবি ঘাটতে লাগলো। এমন ভাব ধরছে যেন মনোযোগ দিয়ে মেয়েগুলোকে দেখছে৷ অতঃপর ইসহাকের কাঙ্ক্ষিত ছবিটি সে পেয়ে গেলো৷ মুচকি হেসে ছবিটি নিয়ে আম্মুকে দেখিয়ে বললো,
-“দেখো মামী, আমার এই মেয়েটিকে পছন্দ!”
-“আলহামদুলিল্লাহ!!”
★
-“দেখ ফাহান, তুই ভালো করেই জানিস আমি বিয়ে বাড়ির ঝামেলা একদম সইতে পারি না। তাও কেন জোরাজুরি করছিস?”
-“আমি জানি তুই লাইক করিস না কিন্তু আমারই বা কী করার বল তো? আমার বন্ধু তো জেদ ধরে বসে আছে। তোকে আমার নিয়ে যেতে হবেই হবে।”
-“ফাইজলামির লিমিট থাকার দরকার, রাবিশ!!”
-“এই তোকে জাজ করতে বলি নাই! তুই যাবি ব্যাস! আমি ওকে বলে রেখেছি, তোর আশেপাশে কেউ ঘেঁষতে পারবে না, তোর আলাদা খেদমতগারও রেডি করেছে। প্লিজ ভাই আমার চল না, বিলিভ মি অনেক বেশি মজা হবে সত্যি!”
-“বিয়েতে মজা হয় বুঝি, সড়গোল ছাড়া?”
-“বুঝেছি তুই মানবি না। তবে নো টেনশন, আমি তোর লাগেজ গুছিয়ে দিচ্ছি, আগামী পরশু আমরা গ্রামে যাচ্ছি!”
-“এই ফাহান, একদম না!!”
-“কী বললি শুনতে পাইনি!”
-“কানে কী বাজ পরসে?”
-“হ্যালো হ্যালো!? কিছু বললি?”
রায়াফ দাঁতে দাঁত চেপে রাগে ফুঁসছে। রায়াফের অবস্থা দেখে ফাহান হেসে চলে গেলো রায়াফের লাগেজ গুছাতে। ফাহানের পিছে জিনিও ছুটেছে। দুজনের এক্সাইটমেন্ট দেখে রায়াফের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। তখনই রায়াফের কল এলো। রায়াফ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো ফাহানের পিএ ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে কানে দিলো।
-“হ্যালো স্যার?”
-“কোনো খবর?”
-“আছে স্যার। মেয়েটি **** ভার্সিটির থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট এন্ড তার নাম আফনা লিলি!”
-“থ্যাংকস!”
বলেই কল কেটে দিলো রায়াফ। অতঃপর বেলকনির ডিভানে হেলান দিয়ে আনমনে বলে উঠে,
-“লিলি? নাকি শাপলা?”
~চলবে।