#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৯
১০.
জিরিশা বাসায় আসতেই শুনলো হুমাইরার বিয়ে।হুমাইরা মেয়েটা তার থেকে ৯ মাসের ছোট।তার বড় খালামনির ছোট মেয়ে মানে লিসার ছোট বোন।জিরিশা ভীষণ খুশি হয়।তিশার বিয়েতে যেতে পারিনি এবার অনেক দিন পরে আবার একটা বিয়ের দাওয়াত খেতে পারবে।জিরিশা ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন করলো হুমাইরাকে।হুমাইরা ফোন রিসিভ করতেই জিরিশা হেসে বলল,,,
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম বিয়ের কনে।কেমন আছেন?”
হুমাইরা ওপাশ থেকে লাজুক হেসে বলে,,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।উফ জিরিশা তুই ও না!আমাকে লজ্জা না দিলে হচ্ছে না”
জিরিশা খিলখিল করে হেসে বলে,,,
“আমার না একটু বেশিই ভালোলাগে তোদের লজ্জা দিতে।হি হি।যাই হোক ছবি দে তোর বরের।”
হুমাইরা লাজুক হাসে আবারও।তারপর বলে,,
“হোয়াটসঅ্যাপে দিচ্ছি দেখ।”
জিরিশার হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করে দেখে দু’টো মেসেজ।একটা আননোন নাম্বার থেকে আরেকটা হুমাইরার।জিরিশা হুমাইরার মেসেজ চেক করে হুমাইরার বরকে দেখে।জিরিশা বরকে দেখে হুমাইরাকে বলে,,
“মাশাআল্লাহ ভাইয়া অনেক সুন্দর দেখতে।নাম কি ভাইয়ার,কি করে!”
হুমাইরা আলতো হেসে বলে,,
“ওর নাম রিয়াদ রহমান।উনি একজন দারোগা।সিলেটি ফুয়া কিন্তু”
জিরিশা সিলেটি ফুয়া শুনে আবারও খিলখিল করে হেসে উঠলো।তারপর বললো,,,”তুই সেই সিলেটি ফুয়াই বিয়ে করছিস।বুঝবি তো তোর বর কি বলবে নাকি হা করে তাকিয়ে থাকবি।”
শেষের কথাটা বলেই জিরিশা জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে।হুমাইয়া বলে,,”যা সয়তান উনি সিলেটি ভাষায় কথা বলেন না”
জিরিশা টিটকারি মেরে বলে,,,
“আহারে সোনা তুমি বলবা আর আমি একটু খেপালে দোষ।যাই হোক কথাও বলা শেষ তাই না বরের সাথে”
হুমাইরা মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলে,,,
“উফ জিরিশা রাখ তুই ফোন।বড্ড জ্বালাস”
হুমাইরা কল কেটে দেয়।জিরিশা ফোন রেখে হাসতে থাকে।সে খুব করে হুমাইরাকে লজ্জা দিয়েছে।তারপর তার মনে পরে হোয়াটসঅ্যাপে সে একটা আননোন নাম্বার দেখেছে।দ্রুত ফোন খুলে নাম্বারটা দেখে মেসেজ চেক করে দেখে সেখানে লেখা বাড়ি পৌঁছেছো সাবধানে।জিরিশা ভয় পায় কে তাকে এমন মেসেজ দিতে পারে।সে তাড়াতাড়ি ব্লক মেরে দেয়।
রাতে জিরিশারা সবাই একসাথে খেতে বসেছে।সাহিদ ইসলাম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,,
“সবাইতো জানো হুমাইরার বিয়ে ৫ দিন পর।আমি ভাবছিলাম ফাহা আর মাহাজকেও যদি বিয়েতে পাঠানো যায়।নুরিন বলছিলো ওদেরও নিয়ে যেতে।”
তাশুরা খেতে খেতে বলেন,,,
“ভালোই হয় তো তবে।মাহাজ জিরিশার খেয়াল রাখতে পারবে তাহলে আমি তো ভীষণ ব্যাস্ত থাকবো”
সাহিদ জিরিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“তাহলে কি বলবো আমি মাহাজকে ফোন করে”
জিরিশা টেবিল থেকে উঠতে উঠতে বলে,,,
“তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো বাবা।আমি জানি আমার বাবা কখনো আমার খারাপ চাইবে না”
সাহিদ মেয়ের কথায় মুচকি হাসে।সে জানে তার মেয়ে তাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে।খেয়ে উঠে মাহাজকে ফোন করে।মাহাজ ফোন রিসিভ করে বলে,,,
“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।কেমন আছেন”
সাহিদ হেসে বলেন,,,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা তুমি কেমন আছে?”
মাহাজও হেসে বলে,,,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আঙ্কেল। কোনো দরকার ছিলো কি আঙ্কেল?”
সাহিদ বলেন,,”হ্যা বাবা।আসলে হয়েছে কি জিরিশার খালাতো বোনের বিয়ে সাতদিন পর।তা উনারা তোমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে।যদি তোমরা না যাও তাহলে ভীষণ মন খারাপ করবে”
মাহাজ বলে,,,”আঙ্কেল আমি আম্মুকে ডাকছি আপনি আম্মুর সাথে কথা বলুন”
মাহাজ শিরিন সুলতানাকে ডাক দেয়।শিরিন এসে ফোন নিয়ে বলে,,
“আসসালামু আলাইকুম ভাইজান কেমন আছেন”
সাহিদ সাহেবও হেসে বলেন,,,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম আপা।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন”
সাহিদ শিরিন সুলতানাকে সব বললে শিরিন বলেন,,,
“ভাইজান আমি আর আপনার বেয়ান তো যেতে পারবো না কিন্তু অবশ্যই মাহাজ ফাহা যাবে”
সাহিদ ইসলাম টুকটাক কথা বলে ফোন কেটে দেয়।ফোন কেটে শিরিন ফাহা মাহাজকে ডাক দেন।মাহাজ শিরিনকে ফোন দিয়ে চলে গিয়েছিলো।ফাহা মাহাজ আসতেই শিরিন বলেন,,,
“তোমরা জিরিশার সাথে ওর খালাতো বোনের বিয়েতে যাচ্ছো।দুইদিন পরে তোমরা তিনজন রওনা হবে।জিরিশার আম্মু একদিন পরে যাবে।”
মাহাজ বিরক্ত হয়ে বলে,,,
“আম্মু আমি মাত্র জয়েন করেছি। এখন কিভাবে তিন চারদিনের ছুটি নিবো”
শিরিন ছেলেকে ধমক দিয়ে বলেন,,,
“তুমি চাইলেই পারবে তা আমি খুব ভালো করে জানি।আর আমি চাইছি না আমাদের বাড়ির বউ কোথাও একা যাক।তুমি ওখানে গিয়ে ওকে আগলে রাখবে”
মাহাজ কিছু সময় ভেবে সম্মতি দিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।ফাহা তো ভীষণ খুশি।সে নিজের রুমে যেয়ে জিরিশাকে ফোন করে।জিরিশা বসে বসে কোরিয়ান ড্রামা দেখছিলো।তার ভেতরেই ফাহার ফোন আসে।সে বিরক্তে নাক মুখ কুচকে ফেলে।সে ফোন রিসিভ করে ফাহাকে বলে,,,
“ওই সয়তান মাইয়া ফোন দেওয়ার আর সময় পাইলি না।মাত্র একটা ড্রামা দেখতে বসেছিলাম।”
ফাহা আশ্চর্য হয়ে বলে,,,
“আমি কি করে জানবো তুই এখন ওই ঘোড়ার আন্ডার ড্রামা দেখতে বসেছিস।”
জিরিশা বিরক্ত হয়ে বলে,,,
“কি বলবি বল তাড়াতাড়ি।তোর সাথে আজাইরা কথা বলতি ইচ্ছা করতিছে না”
ফাহা রেগে বলে,,,,
“জিরিশার বাচ্চা।যা বলবো না তোরে ভালো কথা বলতে চাইছিলাম”
জিরিশা তপ্তশ্বাস ফেলে বলে,,”বোইন বল তুই কি বলতে চাস”
ফাহা চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে।সে প্রফুল্ল হয়ে বলে,,,
“আমি আর ভাইয়া যাচ্ছি হুমাইরার বিয়েতে।আমি ভীষণ খুশি!কতো দিন বিয়ে খাই না বল তো।ও শোন তার থেকে বড় কথা ভাইয়া কিভাবে যেনো রাজি হয়ে গেলো”
জিরিশা হতভাগ হয়ে গেলো!সেভাবেনি মাহাজ রাজি হবে কখনো।ও অবাক হওয়া কন্ঠে বলল,,,
“কিহ সত্যি মাহাজ ভাইয়া রাজি হয়েছে যেতে”
ফাহা আলতো হেসে বলে,,
“হ্যা সত্যি।আমার কি মনে হয় জানিস ভাইয়া তোকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।”
জিরিশা কোনো কথা বলে না।সে কথাটা ইগনোর করে অন্য কথা বলতে থাকে।জিরিশা ফাহার সাথে অনেক সময় গল্প করে ফোন রেখে দেয়।এখন সে আর ড্রামা দেখবে না।কারণ তার যে মাথায় ফাহার কথাটা ঘুরঘুর করছে।জিরিশা মাহাজকে নিয়ে ভাবতে থাকে।
চলবে….!