প্রেমময় প্রহরে তুমি পর্ব-০৮

0
3030

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮

৯.
আজকে মাহাজের জিরিশাদের কলেজে জয়েন এর প্রথম দিন।সে রেডি হয়ে নেয়।ফাহাও রেডি হয়ে নেয়।মাহাজ ফাহাকে নিয়ে যাবে।শিরিন জিরিশাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে মাহাজ না করে দেয়।কারণ সে চায় না কলেজের কেউ জানুক তার আর জিরিশার সম্পর্কের কথা।তাই সে না করে দিয়েছে।ফাহাকে নিয়ে বেরিয়ে পরে মাহাজ।কলেজের সামনে এসে ফাহাকে নামিয়ে দেয় মাহাজ।

ফাহা কলেজের ভেতরে ঢুকে যায়।মাহাজ বাইক রেখে আসতেই সে জিরিশাকে দেখতে পায়।লাল সবুজ মিশ্রনে একটা থ্রিপিচ পরা জিরিশা সাথে সবুজ হিজাব।মাত্র রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে টাকা দিচ্ছে।মাহাজ কিছু সময় তাকিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।জিরিশা টাকা দিয়ে কলেজে ঢোকে।প্রথম ক্লাস মাহাজের।মাহাজ তাদের আইসিটি টিচার।জিরিশা মৌ হিরার সাথে বসতেই ওরা বলে,
“জানিস আজকে নতুন স্যার আসছেন আইসিটির।আর প্রথম ক্লাসই তার”

জিরিশা ওদের কথায় ভড়কে যায়।তার মানে মাহাজের প্রথম ক্লাস তাদের সাথে।জিরিশার ভয়ও লাগতে থাকে।কারণ মাহাজ যদি তার উপর পড়ার বদলে অত্যাচার করে।জিরিশা ভাবনার মাঝেই মাহাজ রুমে ঢোকে সাথে প্রিন্সিপাল স্যারও।।সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দেয়।জিরিশা চারপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পরেছে সেও তাড়াহুড়ো করে দাঁড়িয়ে পরে সালাম দেয়।মাহাজের দিকে তাকাতেই থমকে যায়।আজকে মাহাজকে একটু অন্যরকম লাগছে।

আজকে মাহাজ চশমা পরেছে।তার জন্য তাকে আগের তুলনায় আরো সুদর্শন লাগছে।প্রিন্সিপাল স্যার সবাইকে বসতে বলে।সবাই এতো সময় মাহাজের রূপের তারিফ করছিল তার এমন গম্ভীরর্য ব্যবহার দেখে মেয়েরা তো একজন অন্যজনের উপর পরছে।যা দেখে জিরিশা বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকায়।প্রিন্সিপাল স্যার হাসিমুখে সবার দিকে তাকিয়ে বলেন,,,
“এই তোমাদের নতুন আইসিটি টিচার মাহাজ খান।”

সবাই মাহাজকে নিয়ে কথা বলতে থাকে।জিরিশা আড়চোখে মাহাজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার কোনো হেলদোল নেই।সে মুখ গম্ভীর করে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিন্সিপাল স্যার চলে যেতেই মাহাজ নিজের পরিচয় দেয়।অতঃপর সবাইকে নিজের পরিচয় দিতে বলে।সবাই একে একে নিজেদের পরিচয় দিতে থাকে।জিরিশার পালা আসতেই সে দাঁড়িয়ে বললো,,,
“জিরিশা ইসলাম।”

মাহাজ ওকে ‘সিট ডাউন’ বলে বসতে বলে।সে এমন ভাব করলো যেনো সে জিরিশা নামক কাউকে চেনে না!জিরিশার এতে বিরক্ত হলো কিছুটা।লোকটা যে একেবারে রসকষহীন তা সে খুব করে বুঝতে পারছে।সে কি করে থাকবে এমন রসকষহীন লোকের সাথে সারাজীবন।সবার পরিচয় দেওয়া শেষ হলে মাহাজ কিছু সময় পড়া নিয়ে অনেক কথা বলে।যা জিরিশার কানে একটাও ঢুকে না।সে তো আড়চোখে মাহাজকে দেখতে ব্যস্ত।

ঘন্টা পড়তেই মাহাজ গটগট করে হেঁটে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মৌ হিরা সহ পুরো ক্লাস মাহাজকে নিয়ে কথা বলছিলো।জিরিশা বিরক্ত হয়ে হিরা মৌকে রেখেই চলে যায়।হিরা মৌ জিরিশাকে দেখে নিজেদের ব্যাগ নিয়ে ওর পেছনে ছুটতে থাকে।জিরিশা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে সোজা মাঠের এককোনে বসে পরে।ওখানে আগে থেকেই ফাহা আফিয়া ওরা উপস্থিত ছিলো।মৌ হিরাও দৌড়ে এসে বসে।

আফিয়া জিরিশাকে মুখ গোমড়াকরে থাকতে দেখে বলে,,
“কিরে তুই এমন মুখ গোমড়া করে আছিস কেনো?কিছু হয়েছে!”

জিরিশা রাগে ফোসফাস করতে করতে বলে,,
“ওই ছ্যাচড়া মেয়েগুলো কিভাবে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলো।পেত্নীগুলো অন্যের বরের দিকে নজর দেয়।একদম ভালো হবে না তোদের”

ওরা সবাই হা করে জিরিশার দিকে তাকিয়ে আছে।জিরিশা নিজেও হতভম্ব হয়ে যায়।ও কি বলে ফেলেছে।নিজেরই লজ্জা লাগছে।কিন্তু ওর রাগ লাগার কারণ ও নিজেও বুঝতে পারছে না।ফাহা কিছু সময় পর বুঝতে পারে কাহিনী।ফাহা মুচকি হাসে।

সানজিদা বলে,,
“বোইন কি বলিস তুই।মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি”

ফাহা বিস্তর হাসি দিয়ে বলে,,
“আমি বুঝেছি ও কি বলেছে।আসলে তোদের বলা হয়নি একটা কথা।হঠাৎ করেই ওর আর মাহাজ ভাইয়ার এনগেজমেন্ট হয়েছে।তো ভাইয়া তো এই কলেজে নতুন জয়েন করেছে আজকে।হয়তো মেয়েরা তাকিয়ে ছিলো তাই রাগে এমন বলেছে।”

ফাহার কথা শুনে সবাই রেগে যায়।তারা এতো বড় কথা তাদের জানালো না।এতোদিন পরে বলছে তাও যদি জিরিশা রাগে কথাগুলো না বলতো।জিরিশা আর ফাহা অনেক কষ্টে ওদের রাগ ভাঙায়।মৌ লাফিয়ে উঠে বলে,,
“রাগ বাদ দে সবাই,জিরিশা তো ঝাক্কাস একটা খবর দিলো রে।আমি তো হেব্বি খুশি”

সিহা ভ্রু কুচকে বলল,,,”ঝাক্কাস খবর হলো কিভাবে?আর এতো খুশি হওয়ার কি আছে ভাই”

মৌ বলে,,
“খুশি হবো না মানে কি বলতেছিস তোরা।আইসিটি নিয়ে প্রতিবার সবাই টেনশনে থাকি।আর এখন তো আমাদের দুলাভাই আইসিটি টিচার জিরিশা উনাকে বললেই পাশ করিয়ে দিবে আমাদের।আহ কি শান্তি!এখন থেকে চিল করবো শুধু।”

মৌয়ের কথায় জিরিশা আর ফাহা বাদে সবার চোখ চিকচিক করতে লাগলো।এতো পৃথিবী থেকে চাঁদ ধরার মতো আনন্দ!জিরিশা দাঁত চেপে ওদের কার্যকলাপ দেখছে।সে তো খুব ভালো করেই জানে মাহাজ কেমন।যদি ও কিছু বলতে যায়,দেখা গেলো ওর গালগুলো আর আস্ত থাকলো না।বেডা বদমাশ!

ফাহা হতাশ হয়ে বলল,,
“সে আশা ছাড় তোরা।আমার ভাই তার বউ কেনো বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী আসলেও সে যেমন তেমনই থাকবে।জীবনেও শুধু শুধু পাশ করাবে না।”

ফাহার কথা শুনে সবাই আশাহত হলো।কিছু করার নেই আর।হিরা হঠাৎ জিরিশাকে জিজ্ঞেস করলো,,,
“কিরে দুলাভাই ক্লাসে তোর দিকে তাকালো না কেনো?”

জিরিশা হিরার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।সে আমতা আমতা করে বলল,,,
“উনি হয়তো ওই রকমই।দেখলি না ক্লাসে একবার এর জন্যও হাসেনি।গোমড়ামুখো,বদ লোক কোথাকার!”

কথাটা বলেই জিরিশা আপন মনে বিড়বিড় করলো,,,
“মেয়েবাজ লোক কোথাকার!”

আরেকটা ক্লাস করে সবাই যার যার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।জিরিশা আর ফাহা একসাথে হাঁটতে থাকে ফুটপাত দিয়ে।।জিরিশা ফাহাকে বলে,,
“আচ্ছা তোর ভাই কি ভালো হয়ে গেলো নাকি বলতো!”

ফাহা বলল,,,
“হ্যা আমিও এই দুই তিনদিন ধরে মানে তোদেন এনগেজমেন্টের পর থেকেই ভাইয়াকে একটু অন্যরকম লাগছে।মেয়েদের সাথে হয়তো এখন কথা বলে না”

জিরিশা ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে,,,
“হয়তো কে জানে!আমায় ভালো কি জীবনে বাসবে উনি।”

ফাহা জিরিশাকে শান্তনা দিয়ে বলে,,
“ইনশাআল্লাহ ভাইয়া ভালো হয়ে যাবে।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”

জিরিশা আর ফাহা ফুলের দোকানে যায়।ওখান থেকে দু’জনে দুইটা গোলাপ কিনে নেয়।জিরিশার প্রচুর ফুল পছন্দ।সে যে ফুলই হোক না কেনো!সে প্রায়ই ফুল কিনে নিয়ে যায় নিজের জন্য।দু’জনে হাঁটতে হাঁটতে আবার কলেজের সামনে চলে আসে।জিরিশা দেখে মাহাজ গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।জিরিশা আড়চোখে কিছু সময় তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।মাহাজ ওদের দেখে ফোন কেটে পকেটে ঢুকায়।ওদের কাছে এগিয়ে যায়।

মাহাজ ওদের কাছে গিয়ে ওদের বলে,,
“তোরা এখনো বাসায় যাসনি কেনো?দেখলাম তো সেই কখন বেরিয়েছিস”

জিরিশা বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মাহাজের দিকে।সে খেয়ালও করেছে তারা কখন বেরিয়েছে।লোকটা কি সত্যিই ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে।তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে নাকি।জিরিশার ভাবনার মাঝেই ফাহা বলল,,
“আসলে ভাইয়া জিরিশা আর আমি ফুল কিনতে গিয়েছিলাম তাই একটু দেরি হয়েছে”

মাহাজ আর কথা বাড়ায় না।জিরিশাকে রিকশায় পাঠিয়ে ফাহাকে নিয়ে বাইকে নিজেদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।মাহাজের আজকে প্রথম দিন থাকায় সে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে পেরেছে।আজকে তার মাত্র একটা ক্লাসই ছিলো তাও জিরিশাদের।

#চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে