#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭
ফাহা জিরিশাকে একা মাহাজের সাথে রেখে যাওয়ার জন্য সে ফাহাকে মনে মনে গালি দেয় ইচ্ছামতো।সে অস্বস্তি ও লজ্জায় পরে যায়।কিভাবে সে থাকবে মাহাজের সাথে।মাহাজ এখনো তার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।মাহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“তুমি সারাটা বিকাল এখানে কাটিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেছো নাকি”
জিরিশা নড়েচড়ে উঠে অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,,”না..না..তা কে..নো হ..বে!”
মাহাজ বিরক্তি নিয়ে বলে,,”তাহলে এখানে না দাঁড়িয়ে থেকে চলো ঘুরে আসি কোথাও”
জিরিশা মাহাজের দিকে তাকিয়ে পরে।হঠাৎ জিরিশার তাকাতে চোখাচোখি হয়ে যায় তার মাহাজের সাথে।লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে সে।তার হৃদ স্পন্দন আগের তুলনায় অনেক জোড়ে জোড়ে যাচ্ছে। সে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলতে থাকে।মাহাজ জিরিশার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে ভ্রু কুচকায়।সে জিরিশার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,
“শাড়িটা ঠিক করো আমি দাড়াচ্ছি তোমার সামনে”
মাহাজ তাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে পরলো।জিরিশা দ্রুত পেট ঢেকে ফেলল।জিরিশা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
“হয়ে গিয়েছে আমার।চচচ..লুন!”
মাহাজ নিজের বাইকে উঠে।জিরিশাও উঠে বসে।কিন্তু মাহাজকে ধরে বসে না।মাহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,,”ধরে বসো না হলে পরে যাবা”
জিরিশা হালকা ভাবে মাহাজের কাঁধে হাত রাখে।মাহাজ যেই টান মারে তখন সে মাহাজের পিঠের উপর পরে।মাহাজ এতো জোড়ে চালাচ্ছে যে জিরিশা শেষে না পেরে লাজ লজ্জা ছেড়ে মাহাজকে জড়িয়ে ধরে।মাহাজ জিরিশাকে নিয়ে একটা পার্কে আসে।পার্কটা অনেক বড়।আর গাছপালা দিয়ে ভরা।জিরিশা বাইকে থেকে নেমে বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।মাহাজ বাইকে এক সাইডে রেখে জিরিশার কাছে আসে।জিরিশা এখনো মাহাজকে জড়িয়ে ধরেছিলো তার কথা ভাবছে।
সে আগে কখনো কোনো ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরেনি।জিরিশা মাহাজ পার্কের ভেতরে ঢোকে।জিরিশা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়।আশেপাশে সব কাপলের ছড়াছড়ি।মাহাজ জিরিশার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।জিরিশা একবার হাতের দিকে আর একবার মাহাজের দিকে তাকিয়ে পরক্ষ করে নেয়।দুজন হাঁটতে থাকে।জিরিশা আশেপাশের সব কিছু দেখছিলো।জিরিশা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরে।জিরিশাকে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে মাহাজ ভ্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে।
জিরিশা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে কিছু একটার দিকে।মাহাজও তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই বুঝতে পারে জিরিশার এমন দাঁড়িয়ে পরার কারণ।মাহাজ তাকে টেনে ওখান থেকে নিয়ে আসে।জিরিশা এখনো স্থির হয়ে আছে।মাহাজ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,,
“এগুলো এখন স্বাভাবিক।সবাই এমন করছে এভাবে রিয়াকশন দিয়ে না।”
জিরিশা মাহাজের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে,,
“পার্কে এতো মানুষের সামনে ঠোঁটে চুমু খাওয়া স্বাভাবিক বিষয় আপনার তাই মনে হয়”
জিরিশার হুস আসে সে কাকে কি বলে ফেলেছে।লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছা করছে তার।সে কখনো ভাবেইনি এমন লাগামছাড়া কথা সে মাহাজের সামনে বলে ফেলবে।লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে সে।মাহাজ রাশভারী কন্ঠে বলে,,
“লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই এতে কয়েকদিন পর আমি তোমার বর হচ্ছি তাই এগুলো স্বাভাবিক বলা।”
জিরিশা লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।এই সাইডে কেউ নেয় তেমন।মাহাজের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে।সে আশেপাশে ভালো করে দেখে নেয়।না কেউই নেয়।সে জিরিশার অনেকটা কাছে চলে আসে।জিরিশা ভয় পেয়ে যায়।সে কখনোই মাহাজকে বিয়ের আগে তাকে স্পর্শ করতে দেবে না।তার ভেতরে আবার সে একবার জড়িয়ে ও ধরেছে।এগুলো ভীষণ লজ্জার জিরিশার কাছে।মাহাজকে দেখে জিরিশা মাহাজের থেকে দূরে সরে দাড়ায়।মাহাজ তাকে তার কাছে এনে হিজাব ঠিক করে দেয়।
জিরিশা ভীষণ লজ্জা পায়।সে ভেবেছিলো মাহাজও তার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করতে চাইছে।সে এতো অস্থির হয়ে পরে মাহাজের সামনে তা বলার বাইরে।কিন্তু অস্থির হওয়ার কারণটা সে বুঝতে পারে না।মাহাজ তাকে বাসায় দিয়ে আসে।জিরিশা বাইক থেকে নেমে চলে যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে বলে,,
“আপনি ভীষণ অসভ্য মাহাজ ভাইয়া”
মাহাজ জিরিশাকে দিয়েই চলে যায়।জিরিশা গলি দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পায় নিহান নামের ছেলেটাকে।তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সে দ্রুত পা চালিয়ে চলে আসে বাসায়।ছেলেটা তাকে ভালোবাসে হ্যা সত্যি ভালোবাসে।তার থেকে একবছরের সিনিয়র।তাই হয়তো পেলো না তার ভালোবাসাকে।নিহান নামের ছেলেটা জিরিশাকে কখনোই সেইভাবে ডিস্টার্ব ও করেনি একদিন শুধু তার মনের কথা বলেছিলো।
জিরিশা বুঝিয়ে বলেছিলো।নিহান জিরিশার কথা শুনে তাকে বলেছিলো আর কখনো তাকে ডিস্টার্ব করবে না।আর সে তার কথা রেখেছে।জিরিশাকে আর কোনোদিনই ডিস্টার্ব করেনি।কিন্তু জিরিশা ভয় পায়।যদি কখনো মন ঘুরে যায় তাই নিহানের সামনেও কম পরার চেষ্টা করে।
বাসায় এসে শাড়ি পাল্টে নেয়।আসফি তার কাছে গল্প শুনতে আসে আজকের।
সে আসফিকে বলে সে বিকালে কোথায় কোথায় ঘুরেছে।
আসফিও খুশি হয়ে তার আপুই এর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।আসফি বলে,,,
“আপুই মাহাজ ভাইয়া আর তুমি ছবি তোলনি একসাথে”
আসফির কথাটা বলার সাথে সাথেই জিরিশার ফোনে টুং করে শব্দ হয়।জিরিশা আসফিকে পাঠিয়ে দেয়।ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফাহার মেসেজ।ফাহা কতোগুলো ছবি পাঠিয়েছে।সে ছবিগুলো নামাতেই দেখে তার আর মাহাজের অনেকগুলো ছবি।সে ছবিগুলো ভালোভাবে দেখতে থাকে।একটা ছবিতে জিরিশা লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর মাহাজ তার দিকে।মাহাজের কথা মনে হতেই হৃদয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো।জিরিশা ভাবে,সে কি মাহাজকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।
জিরিশার মনে পরে মাহাজের তখনকার কথা।মাহাজ কি বলেছিলো,তার সম্পদ বাইরের কাউকে দেখাতে চায় না মানে সে কি তাকে পছন্দ করতে করতে শুরু করেছে।আবার তাকে নিয়ে ঘুরতেও গেলো।নাকি তাদের বিয়ের জন্য তার সাথে মানিয়ে নিতে চাইছে।জিরিশা ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে আপনমনে বলে,হয়তো তার জন্যই।
#চলবে,,,,,,!