প্রেমময় প্রহরে তুমি পর্ব-০৬

0
3310

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৬

৮.
বিকাল ৪টা বাজে।ফাহা আর জিরিশা শুয়ে শুয়ে গল্প করছে।শিরিন সুলতানা তার মাঝেই উপস্থিত হন।শিরিনকে দেখে দু’জনে উঠে বসে।শিরিন দুইটা হলুদ শাড়ি আর সাদা ব্লাউজ ওদের সামনে রেখে বলে,
“বসন্তে তো কোথাও ঘুরতে যাসনি দুজনের কেউ।আজকে শাড়ি পরে ঘুরে আয় যা”

জিরিশা খুশি হয়ে বলে,,
“সত্যি আন্টি তুমি আমাদের একা কোথাও ঘুরতে যেতে বলছো আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না”

শিরিন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,,
“আমি কি বলছি তোরা একা যাবি।মাহাজ তোদের নিয়ে যাবে।আর একা কোথাও যাওয়ার কথা ভুলে যা,এখন থেকে যেখানেই যাবি মাহাজ নিয়ে যাবে।”

ফাহা হতাশ হয়ে বলে,,
“তাই তো বলি নিজে এমন সেধে শাড়ি পরতে বলছে কেনো।আমি যাবো না ভাইয়ার সাথে।ভাইয়া গেলেই নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের ঘোরা।”

শিরিন ফাহার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
“চুপচাপ রেডি হয়েনে।কিছু সময়ের ভেতরই বের হবে মাহাজ তোদের নিয়ে”

জিরিশা মন খারাপ করে বলে,,
“আন্টি আমি তো শাড়ি পরতে পারি না”

শিরিন বলে,,”সেজে নে আগে,ব্লাউজ পরে আমাকে ডাকিস”

শিরিন চলে যায়।জিরিশা আর ফাহা রেডি হতে থাকে।জিরিশা মুখে হালকা পাউডার,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে কাজল দেয়।আর ফাহা সাজে জিরিশার থেকে একটু বেশি।সাজ শেষে শিরিনকে ডাক দেয় জিরিশা।জিরিশার লজ্জা লাগছিলো অনেক।শিরিন তাকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেয়।শাড়ি পরা শেষ হতেই শিরিন জিরিশার মুখটা তুলে বলে,
“মাশাআল্লাহ আমার মাহাজের বউকে তো পরির থেকে কম সুন্দর লাগছে না।নজর না লাগুক কারো আমার পরি বউমাটার দিকে”

জিরিশা লজ্জা পেয়ে বলে,
“আন্টি তুমি না।আমি কিন্তু এখনও উনার বউ হয়নি”

শিরিন জিরিশাকে বলে,,
“তুই তো আমার মাহাজকে পরিপূর্ণ করতেই এসেছিস।তোরা যে একে ওপরের পরিপূরক।মাহাজ ছাড়া জিরিশা অসম্পূর্ণ আর জিরিশা ছাড়া মাহাজ।”

ফাহা ততক্ষণে শাড়ি পরে ফেলেছে।ও শাড়ি নিজেই পরতে পারে।তাই কোনো সমস্যা হয়নি ওর।মাহাজ এসে দাঁড়াতেই ফাহা মাহাজকে জিরিশার পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়।জিরিশা ভড়কে যায় ফাহার কাজে।ফাহা হেসে একটা ছবি তুলে নেয়।তার এই ছোট ছোট মুহুর্তেের ছবি তুলে রাখতে ভালো লাগে।আর এগুলো সে একটা কারণে করছে।সে এই ছবিগুলো দিয়ে একটা কাজ করবে।

শিরিন দু’জনকে একসাথে দেখে বলে,
“মাশাআল্লাহ আমার রাজপুত্রকে তার রানীর সাথে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে।কখনো যেনো নজর না লাগে আমার রাজপুত্রের আর তার রানীর।”

মাহাজ কিছু বলে না।সে গম্ভীর মুখে সব শুনতে থাকে। জিরিশা অপ্রস্তুত হয়ে যায় শিরিনের কথা শুনে।শিরিন মাহাজের হাতে জিরিশার হাত দিয়ে বলে,
“কখনো এই হাতটা ছাড়িস না মেয়েটার।বড্ড ভালো মেয়েটা কষ্ট দিস না।আগলে রাখিস সারাজীবন”

মাহাজ মাথা নাড়ায়।ফাহা অবাক হয়ে যায়।অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে মাহাজের দিকে।সে কখনোই ভাবেনি মাহাজ মাথা নাড়াবে।জিরিশা দ্রুত মাহাজের হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে ফেলে।ওরা বাসা থেকে বের হয়ে পরে।ফাহা মাহাজকে সূর্যমুখী বাগানে যাওয়ার কথা বলে। মাহাজ রাজি হয় না।পরে ফাহার জোরজবরদস্তিতে তাকে রাজি হতে হয়।ওদের বাসা থেকে ৬-৭ মিনিট হাটলেই সূর্যমুখী বাগান।কিন্তু ওরা শাড়ি পরে হেঁটে যেতে পারবে না। এর জন্য মাহাজ নিজের বাইকে আর ফাহা আর জিরিশা রিকশায় আসে।রিকশা থেকে নামতেই জিরিশা টাকা দেবে তার আগেই মাহাজ রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে দেয়।এতে বিরক্ত হয় জিরিশা ভীষণ।আর ফাহা সে তো মজা নিচ্ছে দুজনের কাজ দেখে।

ওরা কোনটায় যাবে তা নিয়ে কনফিউজড হয়ে যায়।কারণ ওখানে অনেকগুলো বাগান ছিলো।মাহাজ ওদের নিয়ে সুন্দর একটা বাগানে আসে।মাহাজ নিজের ক্যামেরা দিয়ে ফাহাকে অনেকগুলো ছবি তুলে দেয়।ফাহা তো ছবিগুলো দেখে অনেক খুশি হয়।ফাহা জিরিশাকে জোড় করে দাঁড় করিয়ে দেয়।জিরিশা মোটেও দাঁড়াতে চাইছিলো না।

জিরিশা অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়ায়।ফাহা তাকে পোস বলে দিচ্ছিল। জিরিশা নার্ভাসনেসের কারণে ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছিলো না।মাহাজ তার কাছে এসে তাকে দেখিয়ে দেয় কিভাবে দাঁড়াতে হবে।এতে জিরিশার নার্ভাসনেস আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়।কিছু ছবি তোলার পরে ফাহা দুজনকে একসাথে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,
“দাঁড়াও কিছু ছবি তুলে নেই তোমাদের।”

মাহাজ না বলে কিন্তু ফাহাও শোনার মতো পাত্রী না।সে বলেছে যখন ছবি তুলবে তো তুলেই ছাড়বে।সে কয়েকটা ছবি ক্লিক করে নিলো।তারপর তারা বের হলো।সামনেই ফুসকার দোকান ছিলো।ফাহা মাহাজের কাছে বায়না ধরে ফুসকা খাওয়ার।কিন্তু মাহাজ তো এটা মোটেও দিবে না।তাই জিরিশা বলে,
“চল আমি তোকে খাওয়াচ্ছি কেউ না খাওয়ালে মনে হয় আমরা খেতে পারবো না”

জিরিশা আড়চোখে মাহাজের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে ফাহার হাত ধরে ফুসকার দোকানের সামনে আসে।দুই প্লেট ফুসকা ওর্ডার দেয়।মাহাজ বিরক্তি নিয়ে ফোন ঘাটচ্ছে।ফুসকা দিলে ফাহা জিরিশা খেতে থাকে।হঠাৎ একটা মেয়ে এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে।জিরিশা খাওয়া বাদ দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় মেয়েটার দিকে।মেয়েটা মাহাজকে বলে,,
“এটা তো তোমার বোন আর এই মেয়েটা কে তোমার হবু বউ নাকি”

মাহাজ প্রচুর বিরক্ত হয়েছে তা তার মুখের ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মেয়েটা মাহাজকে বিরক্ত হতে দেখে বলে,
“তুমি ঠিক আগের মতোই আছো।কিন্তু তুমি তো আমাকে কখনো ফুসকা খেতে নিয়ে আসোনি এই মেয়েটাকে কেনো নিয়ে এসেছো”

মাহাজা রেগে যায়।যা তার লাল হওয়া চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ফাহা ভয়ে চুপ করে আছে।জিরিশা নিজের মতো খাচ্ছে। সে এইসব ফালতু কথা শুনতে চাইছে না।মাহাজ মেয়েটার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“গেট আউট ফ্রম হেয়ার”

মেয়েটা চারপাশে তাকালো।মাহাজ কথাটা একটু জোড়েই বলেছে।সবাই তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।মেয়েটা অপমানিত হয়ে চলে যায়।জিরিশা,হাসে মিটমিট করে।কয়েকজন ছেলে জিরিশার দিকে তাকিয়ে ছিলো আর নিজেদের ভেতরে কিছু বলাবলি করছিলো যা মাহাজ বুঝে যায়।সে জিরিশার কাছে এসে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।জিরিয়া হতভম্ব হয়ে যায়।হুট করে এমন হওয়াতে।সে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।মাহাজ এমন কেনো করছে বুঝতে পারে না।

মাহাজ তার কানে ফিসফিস করে বলে,,
“শাড়ি যখন পরতে যানো না তাহলে পরেছো কেনো!আমি আমার সম্পদ বাইরের কাউকে দেখাতে পছন্দ করি না”

জিরিশা কেঁপে উঠলো।সে বুঝলো তার পেটেট কাছ থেকে শাড়ি সরে গিয়েছিলো যা আড়াল করতেই মাহাজ তার কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে।তাই তো সে ভাবে মাহাজ কিভাবে তার উন্মুক্ত পেটে হাত দিচ্ছে কারণ সে তো পেট ঢেকে এসেছিলো।জিরিশার অনেক অস্থির লাগছিলো।ফুসকা খাওয়া শেষ করে ফুচকাওয়ালা মামাকে টাকা দিয়ে দেয়।ওখান থেকে ফাহা বাহানা দিয়ে কেটে পরে সে চায়ছিলো জিরিশা আর মাহাজ একান্তে কিছু সময় কাটাক।

#চলবে,,,,!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে