#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৭
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
কুহু ক্লাসে যাওয়ার সময় হটাৎ কেউ তার হাত ধরে টান দেয়। কুহু ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিলেই কুহুর মুখটা চেঁপে ধরে।
কুহু সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়! রেহান দাড়িয়ে আছে। চোখ মুখ দিয়ে যেনো রক্ত ঝড়ছে!
কুহু – আ… আপনি?
রেহান – কেনো? এখানে কাকে একসেপ্ট করছিলে? তিশান কে? (প্রচন্ড রেগে)
কুহু – মানে? তিশান কে?
রেহান – ওহহ না চেনার ভান করছো তাই না? দেখো কুহু আমাকে রাগিও না। ভালোই ভালোই বলো তোমার তিশান টা কে?
কুহু – কোন তিশান কোথাকার তিশান আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। (অবাক হয়ে)
রেহান কুহুর কথা শুনে আরও প্রচন্ড রকমের রেগে যায়।
রেহান – একদম ন্যাকামি করবা না কুহু। সোজাসাপ্টা উত্তর দাও। তিশান কে? ভালোই ভালোই সব বলো নয়তো কোনো দিন তিশান কে তোমার আশেপাশেও যদি দেখি তো আস্ত রাখবো না।
কুহু রেহানের ধমক শুনে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
সবকিছু যেনো কুহুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কে এই তিশান? কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
রেহান – কি হলো? এখন মুখটা অফ কেনো? কথা বের হয়না কেনো এখন? ওহহ বুঝেছি তোমার তিশান কে নিয়ে আমার কাছে কিছু বলার ইচ্ছে নেই তাই তো?
না বলতে চাইলে বলো না তবে একটা কথা বলে দিই আমি তোমাকে চাই মানে চাই। তোমার তিশান কে বলো ভালোই ভালোই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে নয়তো ওর কপালে খারাপ আছে বলে দিলাম।
রেহান রেগে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে কুহু এখনো বোকার মতো দাড়িয়ে আছে।
কুহু – এই লোকটা কি পাগল? কি সব বলে গেলো! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কে তিশান। আমি তো কোনো দিন তিশান নামের কাউকে দেখবো দূরে থাক নামও শুনি নি।
এদিকে সানিয়া আর রিহা কিছুদূর যাওয়ার পরই পেছন ফিরে তাকায়…
সানিয়া – কুহু…. কুহু কোথায় গেলো?
রিহা – আমাদের সাথেই তো আসছিলো। পেছনে ছিলো কই গেলো ও?
সানিয়া – ওফফফ এই মেয়ে টা না! কিছু না বলেই চলে গেলো। এখন কোথায় খুঁজবো বল তো?
কুহু ক্লাসথেকে বের হয়ে একপ্রকার দৌড়ে নিজের ক্লাসের দিকে যেতে থাকে।
দৌড় দিয়েই সানিয়া আর রিহার সামনে পড়ে…
সানিয়া – এই তুই কোথায় ছিলি? হাওয়া হয়ে গিয়েছিলি নাকি?
রিহা – হ্যা সেই তো। আমিও ভাবলাম আমাদের মাঝ খান থেকে তোকে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলো নাকি?
কুহু – হ্যা সেটাই তো করেছে (অন্যমনস্ক হয়ে)
রিহা – কিহহহ? (অবাক হয়ে)
সানিয়া – তোকে কেউ কিডন্যাপ করেছে আবার এনে দিয়েও গেছে? বলি তুই তো পাগল হয়েছিস এবার আমাদেরও পাগল করে ছাড়বি!
কুহু – আরে রাখ না। আচ্ছা তিশান কে চিনিস?
কুহুর এমন প্রশ্নে সানিয়া রিহা দু’জনই অবাক হয়ে যায়।
সানিয়া – তিশান? (অবাক হয়ে)
রিহা – তিশান আবার কে?
কুহু – জানিস না তাইনা? হ্যা আমিও তো জানিনা তিশান কে?
রিহা – কুহু তুই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছিস?
কুহু – আরে না! সত্যিই বলছি আমিও তো চিনি না তিশান কে?
সানিয়া – হয়েছে? এবার তোর এইসব কথা বন্ধ করে ক্লাসে চল। ক্লাস বোধহয় শুরু হয়ে গেছে।
কুহু – হ্যা চল।
সানিয়া আর রিহা কুহুকে নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। ক্লাসে সবাই যার যার মতো মন দিলেও কুহুর মন পড়ে আছে রেহানের বলা কথা গুলো ভাবতে!
কুহু – ( কে এই তিশান? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। ওফফফ! আমি তো পাগল হয়ে যাবো এতো টেনশনে।)
ক্লাস শেষে কুহু একা একাই বের হয়ে আসে।
সানিয়া আর রিহা পেছন পেছন দৌড়ে বের হয়।
রিহা – কুহু…. ফেলে রেখেই চলে যাচ্ছিস কেনো? ওহহ ভার্সিটি তে উঠতে না উঠতেই পালটে ফেললি?
কুহু – কি পালটে ফেললাম? (অবাক হয়ে)
সানিয়া – বুঝতে পারছিস না কি? আমাদের।
কুহু – তোদের পালটাবো? পাগল হলি নাকি?
সানিয়া – তাহলে এভাবে ফেলে রেখে নিজে নিজেই চলে যাচ্ছিলি কেনো?
কুহু – সরি রে। আসলে মাথায় অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে তাই ভুল হয়ে গেছে।
রিহা – ওকে। এখন কি বাসায় চলে যাবি?
কুহু – হ্যা তো?
সানিয়া – না মানে কিছুক্ষণ থাকবি না?
কুহু – নাহ।
রিহা – কুহু… তুই কি কোনো কারনে আপসেট?
কুহু – আরেহ না। আমি একদম ঠিক আছি।
রিহা – দেখ আমাদের বলতে পারিস। আমরা তো তোর ফ্রেন্ড তাইনা। হেল্প ওত করতে পারি। বলেই দেখ না।
সানিয়া আর রিহা জোর করায় কুহু রেহানের বলা সব কথা বলে দেয়। রিহা সানিয়া দুজনই অবাক হয়ে যায়….
সানিয়া – তিশান মানে? রেহান ভাইয়া কি ভাবছে তোর বফ আছে? যার নাম তিশান?
কুহু – হ্যা।
রিহা – কি বলিস? আমরা তো জানি তোর কোনো বফ নেই ইভেন তুই কোনো রিলেশনও করিস নি। তাহলে তিশান আসলো কোথ থেকে। তুই কোনো দিনও আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকাস নি। আমরা নিশ্চয় জানতাম।
সানিয়া – আমার কি মনে হই জানিস? রেহান ভাইয়াকে কেউ তোর নামে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে। এই জন্যই রেহান ভাইয়া তোকে ভুল বুঝছে।
কুহু – হোয়াট? ঐ ছেলে আমাকে ভুল বুঝলো বা ঠিক বুঝলো তাতে আমার কি যায় আসে। আমার একটাই কথা তিশান কে? আমি কোনো দিন রিলেশন করি নি তাহলে উনি কেনো এই সব বলছে?
আমি এতো বড় মিথ্যে মেনে নিবো কেনো?
সানিয়া – তার জন্য তো ভাইয়া কে সবটা বলতে হবে তাইনা। না বললে তো ভাইয়া ঐ মিথ্যাটা কেই সত্যি মনে করবে।
রিহা – কুহু তুই মন খারাপ করিস না। দেখ আমার কি মনে হই জানিস কেউ হয়তো তোকে আর ভাইয়াকে নিয়ে জেলাস ফিল করছে। এতো স্মার্ট একটা ছেলে তোর পিছন পরে আছে অথচ তুই পাত্তাও দিচ্ছিস না তাই কেউ তোর নামে বাজে কথা বলেছে ভাইয়াকে।
তুই কিছু চিন্তা করিস না আমি নিজে ভাইয়ার সাথে কথা বলবো। আমি ভাইয়াকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।
কুহু – আজিব ওকে কি বলবি তুই। ওকে কেনো বুঝাতে যাবি। কে ও? আমি শুধু জিগ্যেস করবো আমার সম্পর্কে এতো খারাপ কথা বলার সাহস হলো কি করে।
সানিয়া – আচ্ছা বাবা এবার বাড়ি চল।
রিহা – হ্যা তুই বরং বাড়ি যা। গিয়ে রেস্ট কর। তোর এমনি তেই মাথা গরম। বাড়ি যা।
কুহু সানিয়া আর রিহা বেরিয়ে যায়। কুহুকে এক রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে সানিয়া আর রিহা অন্য রিকশায় উঠে যায়।
এদিকে কিছুক্ষন পরই রেহান পুরো ক্যাম্পাস খুজতে শুরু করে। কিন্তু কুহুকে কোথাও দেখতে পায় না। রেহান কালকের মতো গেইটের বাইরে এসে ফুচকাওয়ালার কাছে যায় কিন্তু সেখানেও কুহুকে দেখতে পায় না। রেহানের প্রচন্ড রাগ হয় কুহুর উপর।
রেহান – এই মেয়েটার সাহস দেখে আমি বরাবরই অবাক হচ্ছি। এতো সাহস হয় কি করে ওর!
কালকে এতো বলার পরও আজ চলে গেলো! বার বার বলেছিলাম আমি পৌঁছে দিবো। আমার জন্য ওয়েট না করেই চলে গেছে! নিশ্চয় ওর তিশান ওকে পৌঁছে দিবে তাই চলে গেছে।
আজ যদি ওকে রাস্তায় পাই না জ্যান্ত পুঁতে দিবো বেয়াদব মেয়ে!
রেহান রেগে হনহন করে বাইকের কাছে গিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়।
কুহু – এই লোকটা আসলেই বাজে। না জেনেই আমাকে এতো গুলো কথা শুনিয়েছে! আর কোনো দিনও উনার সামনেও যাবো না ফালতু লোক কোথাকার।
বাসার সামনে এসে কুহু রিকশা থেকে নেমে অবাক হয়ে যায়….
রেহান কুহুর বাসার সামনে দু’হাত বুকে গুঁজে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রেহান কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক টা রেগে আছে সে।
রেহানের কথা গুলো মনে পড়তেই কুহুর রাগ উঠে। কুহু রেহান কে উপেক্ষা করে বাসায় ঢুকে পরে৷ রেহান কে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি এমনকি নিজেও কিছু বলেনি।
রেহান কুহুর কাজে আরও রেগে যায়।
রেহান – এখন তো আমাকে এড়িয়ে যাবেই। তোমার তিশান কে পেয়েছো না! ইচ্ছে করছে তোমাকে আর তোমার ভালোবাসার তিশান দু’জনকেই উপরে পাঠিয়ে দিই।
কুহু বাসায় এসেই নিজের রুমে চলে যায়। জেরিন বিষয় টা খেয়াল করেই বুঝতে পারে কুহুর কিছু একটা হয়েছে।
জেরিন – নিশ্চয় আমার হিরো কিছু একটা বলেছে আপি কে। না হলে তো আপি এতটা চুপচাপ কোনো দিন থাকেনি। ওফ! আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে!
চলবে…