#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৬
#writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
ভাবতে ভাবতেই রেহান নাম্বারটায় ফোন দেয়। রিং হতে না হতেই ওপাশ থেকে ফোন টা রিসিভ করে…
রেহান – বাবাহ আমার ফোনের জন্য ওয়েট করছিলে বুঝি? না হলে এতো তারাতারি ফোন রিসিভ করতে না নিশ্চয়?
— আমি তো সবসময়ই আপনার জন্য ওয়েট করে থাকি। সারাক্ষন শুধু আপনাকে নিয়েই ভাবি। জানেন? আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো যদি আপনাকে আরেক বার সামনাসামনি দেখতে পারতাম! আল্লাহ আমার ইচ্ছে পূরণ করেছে। এমনকি আপনার সাথে কথাও বলতে পারছি। সত্যি সব কিছুই কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে!
আজ আমি সত্যিই অনেক অনেক খুশি।
রেহান – (কি হলো এটা! এতো দেখছি ভুতের মুখে রাম রাম! যে কিনা আমাকে সহ্যই করতে পারতো না সে এখন বলছে আমার সাথে কথা বলতে পেরে খুশি! আশ্চর্য!
আর গলার স্বর টাও কেমন কেমন লাগছে! কি জানি কুহুর সাথে তো কোনো দিন ফোনে কথা হয়নি। ফোনে তো সবার স্বরই পালটে যায়। হতেই পারে এমন। কিন্তু ও হটাৎ এমন বিহেভ করছে কেনো? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি?…. মনে মনে)
— এইযে মিস্টার… কথা বলছেন না কেনো?
রেহান – হ্যা বলুন.. না মানে বলো…
— নিশ্চয় খুব অবাক হচ্ছেন? আমার মুখ থেকে এসব কথা শুনে? আসলে কি জানেন? অনেক মেয়েরা তো কখনো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। কাউকে ভালোবাসার কথা তো না ই। আমিও সেরকমই একজন।
আপনাকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু আমার বিহেইভিয়ার দিয়ে বুঝাই নি ইভেন আপনাকে মুখেও বলি নি। তাই হয়তো আপনার অবাক লাগছে। কি তাই তো?
রেহান – আর ইউ ওকে কুহু?
— কেনো আমার আবার কী হবে? আপনার কি মনে হয় আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
রেহান – না তা না। বাই দ্যা ওয়ে তুমি কে?
— আপনি কার কাছে ফোন করেছেন?
রেহান – ফোন কাকে করেছি তা জানিনা তবে আমি কুহুর সাথেই কথা বলতে চাই অন্য কারো সাথে না।
— আচ্ছা এতো কুহু কুহু করার কী মানে হই বলুন তো? ও তো আপনাকে পাত্তা ও দেয় না। তাহলে আপনি কেনো ওর জন্য ওয়েট করে আছেন?
রেহান – হোয়াট!! তুমি তার মানে কুহু না?
— না আমি কুহু না। আপনার কি মনে হয় কুহু এরকম বিহেভ করবে আপনার সাথে? ও তো আপনাকে সহ্যই করতে পারে না।
রেহান – জাস্ট সাট আপ ডেম এট তোমার সাহস তো কম না। তুমি কুহুর নামে এতো বাজে কথা বলছো কোন সাহসে? তুমি নিশ্চয় কুহুর বোন?
— হ্যা আমি জেরিন।
রেহান – ইউউ… তোমাকে যদি এখন কাছে পেতাম না কষে দুইটা থাপ্পড় মারতাম। লজ্জা করে না তোমার? নিজের বোনের বফের সাথে প্রেমের আলাপ করছো?
জেরিন – বোনের বফ?
রেহান – ইয়াপ.. আজ না হই কাল কুহু আমাকে ঠিকই মেনে নিবে। তখন তো আমাকে দুলাভাই ডাকবে তুমি !!
জেরিন রেহানের কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায়।
জেরিন – দুলাভাই মাই ফুট… দেখুন না আপি আপনাকে মেনে নেয় কিনা। কোনো দিনও মানবে না বুঝলেন কারন আপি শুধু তিশান ভাইয়াকে ভালোবাসে। আপির মনে তিশান ভাইয়ার জায়গা টা কেউ নিতে পারে নি আর পারবে ও না। আপনি তো কখনো না!!
রেহান – তিশান কে?
জেরিন – সেটা না হয় আপনার না জানাই থাক। না জেনেই যেহেতু ভালোবেসেছেন না জানাই থাকুক।
রেহান – তিশান কে? আন্সার মি….(চেচিয়ে)
রেহানের ধমক শুনে জেরিন কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
জেরিন – আপির বয়ফ্রেন্ড। ৩ বছরের ডিপ রিলেশন তাদের। জানেন? আপি তিশান ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে ইভেন নিজের থেকেও বেশি। এই জন্যই হয়তো আপনাকে মেনে নিতে পারছে না।
রেহান জেরিনের কথা শুনে কিছু না বলে ফোন টা কেটে দেয়। রেহানের এমন চুপ থাকার মধ্যেও তার ভয়াবহ রাগই প্রকাশ পায়।
রাগে রেহানের কপালের রগ টা ফুলে উঠেছে। হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। অনেক খন ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে রেহান। আর এরকম করার একটাই কারন নিজের রাগ কনট্রোল করার চেষ্টা করছে সে।
রেহান – তোমার তিশান কে ভালোবাসো তাই না? তিশান!
ভালো তো তুমি আমাকেই বাসবে। তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছি বলে টের পাওনি তাই না? রেহানের ভালো রুপ টাই চোখে পড়েছে তাই এড়িয়ে গেছো কাল থেকে ভয়ংকর রুপটা দেখবে! জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ্!
রেহান রেগে হাতের কাছে থাকা ফুলদানি টা তুলে আাছাড় মেরে ভেঙে ফেলে।
মাথায় দু’হাত দিয়ে চেঁপে ধরে বসে থাকে।
এদিকে কুহু ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। অনেক খন বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়ে অফলাইনে চলে যায়। কিছুক্ষন পরই কুহুর মা আসে…
কুহুর মা – খেয়ে আয় কুহু।
কুহু – ওকে মা আসছি।
কুহু খাবার টেবিলে গিয়ে বসে। জেরিন ও আগে থেকেই বসা ছিলো।
জেরিন কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অনেক খুশি!
কুহু – কিরে এতো খুশি খুশি! কোনো গুড নিউজ আছে নাকি?
জেরিন – (গুড নিউজ তো বটেই আপি! কিন্তু সরি গো…. তোমাকে তো বলা যাবে না!)
না না আপি গুড নিউজ কিসের আবার। এমনিতেই ভালো লাগছে আজ।
কুহু – ওহহ আচ্ছা খাওয়া শুরু কর।
জেরিন – হুম।
সবাই খাওয়া শুরু করে। কুহুর খাওয়া শেষ হতেই সে নিজের রুমে চলে যায়।
জেরিনও নিজের রুমে যায়। গিয়েই ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে রেহান ফোন দিয়েছে কিনা?
কিন্তা না! রেহানের কোনো ফোন বা ম্যাসেজ কিছুই আসেনি।
জেরিন – হুহহহ দেমাক কতো ছেলেটার! যাকগে আমিই ফোন দিয়ে দেখি।
জেরিন রেহান কে ফোন দেয় কিন্তু রেহানের ফোন অফ। জেরিন একটু পর পরই রেহান কে ফোন দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু রেহানের ফোন অফ।
জেরিন রেহান কে একটা ম্যাসেজ পাঠায় যাতে লিখা ছিলো….
” কাল আমার সাথে একবার দেখা করবেন প্লিজ? কিছু কথা ছিলো। ”
ম্যাসেজ টা দিয়েই জেরিন ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে…
রেহান ঘুম থেকে উঠে দেখে ৮ টা বাজে। রেহান একলাফে উঠে বসে পড়ে।
ভার্সিটির দেরি হয়ে যাবে তাই রেহান দ্রুত উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রেহান ফ্রেশ হয়ে আসতেই তার মা রুমে আসে…
রেহানের মা – আজ এতো বেলা অব্দি ঘুমালি যে?
রেহান – হ্যা। তুমি ডাকলে না যে?
রেহানের মা – তোকে কতো বার ডাকতে এসেছি আমি নিজেও জানিনা। তোর ঘুম ভাঙ্গলে তো?
রেহান – ঠিক আছে ব্রেকফাস্ট রেডি করো আমি আসছি।
রেহানের মা – হ্যা আয় তারাতারি।
রেহান ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। রেহান সবাইকে গুড মর্নিং জানায়।
রেহানের বাবা – রাতে কি ঘুম হয়নি?
রেহান – না। তাই তো সকালে উঠতে পারি নি।
রেহানের বাবা – হুম বুঝলাম। ভার্সিটিতে যাবে না?
রেহান – হ্যা যাবো বাবা। ( যেতে তো আজ হবেই!)
রেহানের বাবা – ওকে খেয়ে নাও তারাতারি।
রুপসা ( রেহানের ছোট বোন) – ভাইয়া আজ কিন্তু আমার পাওনা টা চাই।
রেহান – তোর আবার কিসের পাওনা শুনি? (ভ্রু কুঁচকে)
রুপসা – ঐযে আমার আইসক্রিম।
রেহান – ওরে বাবা! এখনো মনে আছে তোর। আমি তো ভেবেছিলাম তোর মাথায় গোবর ভরা কিছু মাথায় রাখতে পারিস না।
রুপসা – ভাইয়াআআআ……বেশি বলছো না তুমি?
রেহান – ওকে বাবা সরি। এই কান ধরছি (কান ধরার ভান করে)
রুপসা – হবে না। আইসক্রিম চাই।
রেহান – ঠিক আছে বাবা আনবে আনবো।
রেহানের বাবা – আচ্ছা ঠিক আছে এবার খেয়ে নে।
রেহান খাওয়া শেষ করে উঠে পরে।
রেহান ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে।
ভার্সিটি তে আসার পর অনেকক্ষণ ধরে রেহান কারো জন্য ওয়েট করছে।
এদিকে কুহু সানিয়া আর রিহার সাথেই ভার্সিটি তে ঢুকে।
ভার্সিটিতে আসার পরই কুহুর চোখ আটকে যায়।
তার ব্ল্যাক কিং!
বাহ আবার সেই আগের মতোই তবে আজ একটু ব্যাতিক্রম লাগছে!
সাদা শার্ট হাতা ফোল্ড করা, কালো জিন্স, চোখে সানগ্লাস, চুল গুলো বার বার অবাধ্য হয়ে চোখে পড়ছে।
কুহু একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
সানিয়া – কিরে… প্রেমে পড়লি নাকি?
রিহা – আমার তো মনে হচ্ছে সামথিং সামথিং!
সানিয়া – আরে এবার তো চোখ নামা। বেচারার নজর লেগে যাবে তো!
রিহা আর সানিয়ার হাসাহাসিতে কুহু ধ্যান ভাঙে।
কুহু – কি হয়েছে এভাবে হাসছিস কেনো?
সানিয়া – যাহ বাবা! দেখায় এতোটাই ব্যাস্ত ছিলি যে আমরা এতোখন কি বললাম কিছুই শুনলি না!
কুহু – বাজে কথা বন্ধ করে ক্লাসে চল।
সানিয়া – এখনো ও ক্লাস শুরুই হয়নি। তাছাড়া মনে হই ক্লাসে কেউ যায়ও নি। একটু পরে যাই?
কুহু – এখনি চল। কেউ যায়নি তো কি হলো? আমরা গিয়ে আড্ডা দিবো কিছুক্ষন।
রিহা – ওকে চল।
কুহু চলে যাওয়ার সময় একপলক রেহানের দিকে তাকায়। কুহু বেশ বুঝতে পারছে রেহান রেগে আছে। কিন্তু কেনো রেগে আছে তার কারন টা কুহুর অজানা।
চলবে…