#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ১৩
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
রেহানের বাবাও মেয়ের মুখটা দেখে অনেক খুশিই হয়। কারন মেয়ে দেখতে সত্যিই খুব মিষ্টি।
রেহানের বাবা – মনে হয় খুব কেঁদেছে মামুনি টা।
রেহান অবাক হয়ে যায়। দেখতে আসলে কোনো মেয়ে কাঁদে নাকি? অবশ্য যদি বয়ফ্রেন্ড থাকে তাহলে তো কাঁদবেই। যেমনটা আমার অনুভব হচ্ছে। আমি যেমন আমার কুহুর জন্য কষ্ট পাচ্ছি এই মেয়েটাও বোধহয় তার বয়ফ্রেন্ড এর জন্যই কেঁদেছে। (মনে মনে)
না চাইতেও রেহান মেয়েটার দিকে তাকায়।
সাথে সাথেই রেহান দাড়িয়ে যায়….
রেহান – কুহুওওও……..! (খানিকটা চিৎকার করে)
রেহানের মুখে নিজের নামটা শুনতে পেয়ে কুহুও চমকে যায়। সামনে তাকিয়ে রেহান কে দেখতে পেয়ে সেও স্তব্ধ হয়ে যায়।
দু’জন দু’জনার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার হাসির শব্দে তাদের ধ্যান ভাঙ্গে।
রেহানের বাবা – কী রেহান? কেমন দিলাম সারপ্রাইজ টা? বলেছিলাম না মেয়ে দেখতে অনেক সুন্দর! তোমার পছন্দ হয়েছে তো?
রেহান একবার তার মায়ের মুখের দিকে তাকায় আরেকবার তার বাবার দিকে। দু’জনের মুখেই হাসি। রেহানের কাকা আর কাকিমাও হাসছে। তার মানে সবাই প্লান করে?
কিন্তু ওরা জানলো কিভাবে কুহুর কথা!
রেহানের মা – আরে এবার তো বসবি নাকি দাড়িয়েই থাকবি।
রেহান তারাতারি করে বসে যায়। কুহুর দিকে তাকাতেই দেখে মেয়েটার চোখমুখ ফুলে গেছে। মনে হয় অনেক কেঁদেছে।
কুহুর মা – দেখেন আপা আপনাদের কথায় আমিও আমার মেয়েটাকে কিছুই জানাই নি। মেয়েটা আমার কতোই না কষ্ট পেয়েছে। (হেসে)
রেহানের মা – হ্যা। তা তো দেখতেই পারছি৷ আর উনি (রেহানকে উদ্দেশ্য করে) সারা রাত বোধহয় ঘুমাতে পারেনি।
রেহানের বাবা – আচ্ছা এবার তো আসল কথায় আসতে পারি।
কুহুর বাবা – হুম নিশ্চয়। ওদের সারপ্রাইজ দেয়া শেষ এবার আমাদের কাজ টা করে ফেলি।
রেহানের বাবা – আমি চাই সামনের সপ্তাহেই বিয়েটা হোক যদি আপনাদের কোনো অসুবিধা না থাকে তো।
কুহুর বাবা – না না আমাদের কোনো সমস্যাই নেই।
হটাৎ রেহান বলে উঠে….
রেহান – আপনারা যদি বলেন তো আমি কি কুহুর সাথে একটু কথা বলতে পারি?
কুহুর মা – শুনো ছেলের কথা আজ বাদে কাল যাকে বউ বানাবে তার সাথে কথা বলতে পারমিশন চাইছে!
কুহুর মার কথায় সবাই হেসে দেয়। রেহান কিছুটা লজ্জা পায়।
কুহুর মা – কুহু রেহান কে নিয়ে যা।
কুহু রেহান কে নিয়ে নিজের রুমে যায়।
রুমে আসতেই রেহান ধুম করে দরজা টা লাগিয়ে দেয়।
রেহান – কান্না করছিলা কেনো? (রেগে)
কুহু অবাক হয়ে রেহানের দিকে তাকায়…
রেহান – কি হলো কথা বলছো না যে?
কুহু – আপনি ফোন বন্ধ করে রেখেছেন এর মধ্যে মা বাবা কাল রাতে আমার রুমে এসে বলছে কাল বাড়িতে মেহমান আসবে। আমি যেনো রেডি হয়ে থাকি। আমি বুঝতে পারছিলাম কি হতে চলেছে। আপনাকে হাজার বার ফোন করেও পাইনি। অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি।
রেহান – ( আমার অবস্থাই দেখি… মনে মনে।)
রেহান কে চুপ থাকতে দেখে কুহু বলে উঠে….
বিয়ে করবেন বলে কাল থেকে ফোন বন্ধ রেখেছেন তাইনা। আজ যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ হতো তাহলে তো ঠিকই রাজি হয়ে যেতেন।
রেহান – আমি ইচ্ছে করে ফোন বন্ধ রাখি নি কুহু। কাল বাবা মা বিয়ের কথা বলায় রেগে ফোন আছাড় দিতেই ভেঙে যায়। আর তোমার সাথে কথা বলতে পারিনি। আর তুমি কি হ্যা? তুমিও তো অচেনা ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছো।
কুহু – আমি কি করবো? বাবাকে অনেক ভয় পাই তাই। (অসহায় ভাবে) আচ্ছা আপনি তো আমাদের বাসা চিনেন তাহলে? আপনি কি বুঝতে পারেন নি মেয়েটা আমিই?
রেহান – আরে বাপ… এটাই তো আমার ভুল আমি তো নববধূর মতো মাথা নিচু করে আনমনা হয়ে হেটেই চলেছি। একবারও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখিনি। যদি দেখতাম তাহলে তো খুশিতে নেচে উঠতাম।
কুহু হেসে দেয়।
রেহান – আচ্ছা তোমার ঐ ভিলেন বোন টা কোথায়?
কুহু – জেরিন?
রেহান – ও ছাড়া আর কে ভিলেন হতে পারে বলো?
কুহু – আরেহহ ও তো ফুপা ফুপির সাথে মার্কেটে গেছে। চলেও আসছে বোধহয়।
রেহান – এই জন্যই তো দেখতে পারছি না। যাই বলো এবার আমি নিশ্চিত হলাম। এমনিই তোমার বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছিলো না জানি কোন দিন আবার কাউকে জামাই বানিয়ে ফেলে! তাই আর কোনো রিস্ক নিবো না।
কুহু হেসে দেয়। অনেক্ষন কথা বলার পর কুহুর দরজায় কেউ নক করে। কুহু গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে জেরিন।
জেরিন – আপিইইই আমার দুলাভাই এর বাসার লোক এসে গেছে! এই তুমি রাজি তো?
কুহু – হুম। ঘরে আয়। তোর দুলাভাই কে দেখবি না?
জেরিন এর ভেতর তো লাড্ডু ফুটছে। যাক আপি রাজি হয়ে গেছে এখন আমার আর রেহানের মাঝে কেউ নেই। ভাবতে ভাবতে জেরিন রুমে আসে। এসেই ১০০০ বোল্ডের শক খায়। আচমকা জেরিনের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে…
রেহানননন…!
জেরিন হা হয়ে আছে। রেহান মুচকি হেসে জবাব দেয়।
রেহান – ইয়েস শালিকা আমি! কেনো অন্য কাউকে আশা করছিলেন বুঝি?
জেরিন থ মেরে যায়।
জেরিন – আপি আমি কি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে পারি?
কুহু – হ্যা বল। — বলেই রুম থেকে চলে যায়।
কুহু চলে যেতেই জেরিন বলে উঠে…
জেরিন – রেহান আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন? আপনি তো জানেন আপির বফ আছে। তিশান ভাইয়ার সাথে আপির অনেক ডিপ রিলেশন। আপনি সব জেনে শুনে এমন ভুল টা করছেন কি……
বাকিটা বলার আগেই রেহান অনেক জোরে জেরিনের গালে থাপ্পড় মারে।
রেহান – চুপ বেয়াদব মেয়ে! তোর ভাগ্য ভালো তুই মেয়ে। যদি ছেলে হতি তোর শরীরের কোনো হাড় ঠিক থাকতো না সবকটি ভেঙে দিতাম বুঝেছিস? তোর সাহস কম না আমার কুহুর সম্পর্কে এতো খারাপ কথা বলছিস। তুই কি মনে করেছিলি আমি কিছুই জানতে পারবো না তাই না?
জেরিন গালে হাত দিতে ছলছল ছোখে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
জেরিন – আপনি তো নিজেই তিশান ভাইয়ার সাথে….
রেহান – চুপপপ। তিশান না তোর সাজানো তিশান! বুঝে গেছি আমি।
রেহানের কথা শুনে জেরিন ভয়ে চুপসে যায়। রেহান তার মানে সব কিছু জেনে গেলো!
রেহান – চলো আমার সাথে — বলেই জেরিনের হাত টা ধরে টেনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। কুহু ওদের দেখে ভয় পেয়ে যায়। রেহান এতো টা রেগে আছে দেখে কুহুরও ভয় করছে। কুহু ভয়ে ভয়ে ওদের কাছে যেতেই রেহান হাতে ইশারা করে কুহুকে থামতে বলে। কুহু থেমে যায়।
রেহান আবার জেরিনকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
জেরিনের বাবা, মা কুহুর বাবা মা আর রেহানের পরিবারের সবাই বসে কথা বলছে। রেহান জেরিনের হাত টা ছেড়ে দেয়।
রেহানের বাবা – রেহান চলো আমরা এবার বাসায় যাই।
রেহান – বাবা তোমরা যাও। আমার উনাদের সাথে কিছু কথা আছে।
চলবে…