প্রেমচতুর্দশী পর্ব-০৫

0
1023

#প্রেমচতুর্দশী💛
[পর্ব-৫]

~|15`|
অনেকক্ষণ আগেই বাড়িতে চলে আসছে অহমিরা।রিথি আর রিশমি দুজনে মিলে স্টাডি করছে।অহমি আর নিরা দুজনে মিলে বাগানে বসে গল্প করছে।

– ম্যাম আর যাই বলুন না কেনো রিশমির আজ ভালোই শিক্ষা হয়েছে আর মনে হয়না ইজুমি রেস্টুরেন্টের আশেপাশে ঘেষঁবে।(হাসতে হাসতে)
অহমি নিরার কথা শুনে প্রতিবারের মতো ছোট্ট করে মুচকি হাসলো।

– আচ্ছা নিরা সোহাগ কি আর বিডিতে ফিরবে না,,?(মুচকি হেসে)
মুহুর্তেই মুখ কালো করে নিলো নিরা।সোহাগ যে আর কখনোই ফিরবে না ওর কাছে বিডিতে সেটা ২ বছর আগেই সাফ সাফ বলে দিয়েছে সোহাগ।
নিরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে বলে উঠলো।

– ফিরবে ম্যাম এইতো আর কিছুদিন পরই ফিরবে আমার কাছে,রিথির কাছে।(দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে)
কথার প্রসঙ্গেই নিরা কৌশলে বলে উঠলো।

– আচ্ছা ম্যাম আর কতদিন রিশমিকে মিথ্যা বলবেন?আর কতদিন ওকে মিথ্যা বলে যাবেন যে ওর বাবা নেই আকাশের স্টার হয়ে গেছে।আসলে আমি জানি ম্যাম রিশমির বাবা বেচেঁ আছে।আর আমি‌এও জানি যে রিশমির পাপা কে?সেহরিশ চৌধুরী তাইনা( করুন চোখে অহমির চোখের দিকে তাকিয়ে)

নিরার কথা শুনে যেনো অহমি চমকে উঠলো।হার্টবিট দ্রুত ছুটতে লাগলো।অহমির নিশ্বাস ভারী হয়ে যেতে লাগলো ক্ষণে ক্ষণে নিশ্বাস ফেলছে অহমি।অহমির ব্যাকুলতা দেখে আবারো মিঠে হাসলো নিরা।
মাথা নিচু করে সেও গভীর নিশ্বাস ছাড়লো।অহমি যতই‌ ওকে এসব কথা না বলুক নিরার ধারনাতেই সব প্রকাশ পেয়েছে সে।

– ম্যাম আপনি ভাবছেন আমি এসব কি করে জানি আমি আপনার ল্যাগেজ গোছানোত সময় একটা ডায়েরী আর কিছু ছবি পেয়েছি যেটাতে আপনার আর স্যারের কিছু মুহুর্তের ছবি ছিলো,,!!আর তখন আমি ব্যাপরটা এতই স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারেনি বাট সেদিন অপারেশন থিয়েটারে যখন ডক্টর আহসান স্যারের অপারেশন করছিলো তখন আপনি এক কোনায় দাড়িয়ে ছিলেন আপনার চোখ মুখ আর স্যারকে দেখেই আমি ব্যাপরটা বুঝতে পেরেছিলাম,,(মাথা নিচু করে)

অহমি মাথা নিচু করে বসে আছে।আর চোখ থেকে টুপটুপ পানির বর্ষন হচ্ছে।নিরা আবারো গভীর শ্বাস আবারো বলে উঠলো।

– ম্যাম আপনি ভুল করেছেন গত ৭ বছর ধরে আপনি সত্যিটা যাচাই করতে পারতেন শুধু শুধু কাউকে একটা মেসেজের উপর বিশ্বাস করে ভুল বুঝাটা আসলেই ভিত্তিহীন।আর গত ৭ বছর ধরে রিশমির বাবা থেকেও সে বাবা নামক লোকটার ভালোবাসা পায়নি কেবল আপনার জন্য।আপনি ভুল করছেন ম্যাম রিশমির জীবনের থেকে ওর পাপার ছায়া আপনি চাইলেও মুছতে পারেন না ম্যাম এটা বড্ড বেমানান এখনো সময় আছে রিশমিকে সব বলে দিন ওকে ওর পাপার সাথে থাকতে দিন!!আমি চাইনা যে রিশমিও রিথির মতো‌ওর পাপার আদর না পাক(গভীর শ্বাস নিয়ে)

অহমির আর নিরার সামনে বসার শক্তি হলো না চুপ করে উঠে বাড়িতে ভেতরে ডুকে যেতে লাগলো।
অহমির পালিয়া যাওয়া থেকে মুচকি হাসলো নিরা।

– আপনি চাইলেও সত্য থেকে পালাতে পারবেন না ম্যাম কারন নিয়তি যে সব লিখে রেখেছে,,??(মুচকি হেসে)
নিরাও বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।

~|16`|

– মাম্মা এই আংকেলটা তোমার সাথে কি করছে,,! আর এইটাই বা কি!(ভাবুক কন্ঠে)

রিশমি হাতে অহমির ডায়েরীটা আর সেহরিশ আর অহমির কিছু ছবি নিয়ে দাড়িয়ে আছে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে। অহমিকর রুমে প্রবেশ করতে দেখে রিশমি গরগর করে কথাটা বলে দিলো।
রিশমির কথায় থমকে দাড়ায় অহমি।ভ্রু কুচকে রিশমির দিকে তাকায়।সাথে পুরো রুমে একবার চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে।
দেখে পুরো রুম ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাপড়-চোপড়ে।
অহমির চোখ বড় বড় হয়ে যায় রিশমির হাতে সেহরিশ আর তার ছবি সাথে সেই ডায়েরীটা যেই ডায়েরীর প্রতিটা পাতায় সেহরিশকে নিয়ে লেখা যা গত বেশ কিছু কয়েক বছর ধরে সে লিখেছিলো।
নিজের লুকানো ভালোবাসাকে একটু একটু ফুটিয়ে তুলেছিলো এই ডায়েরীতে।

অহমি আর পারলো না ফুপিয়র ফুপিয়ে কান্না করে দিলো।এদিকে মায়ের হঠাৎ এভাবে কেদেঁ উঠায় রুমে থাকা রিথি সহ রিশমি দুজনেই বিস্ময়কর চোখে অহমির দিকে তাকিয়ে আছে।

– মাম্মা তোমার কি হয়েছে তুমি কাদঁছো কেনো,,?দেখো আমি রুম গুছিয়ে দিচ্ছি তাও তুমি কান্না করো না।এই রিথি মাম্মা কান্না করছে চলনা রুমটা দুজনে মিলে গুছিয়ে নেই হয়তো মাম্মা এটার জন্য কান্না করছে।(কাদো কাদো গলায়)

রিথি কাচুমাচু হয়ে এসে রিশমির পাশে দাড়ায়।অহমি হাজারো চেস্টা করে আজ চোখের পানি লুকাতে পারেনা। আজ কতগুলো দিন পর আবারো সেই একই ভাবে কাদঁছে অহমি যেই কান্নাটাকে ৫ বছর আগে বিসর্জন দিয়েছিলো সে।

রিশমি আর পারলো না মায়ের কান্না দেখে কান্না করে দিলো।সাথে রিথিও কান্না করে দিলো।
এদিকে উপরে প্রচন্ড কান্নার শব্দ শুনে হন্তদন্ত হয়ে উপরে ছুটে আসলো নিরা।এসে দেখলো রিথি,রিশমি সাথে অহমি কান্না করছে।রিশমির পায়ের নিচে সেহরিশ,অহমির কিছু ফটো আর সেই পুরনো ডায়েরীটা পড়ে আছে।
নিরা বেশ ভালোই বুঝতে পারলো অহমি কেনো কান্না করছে।

অহমির কান্না দেখে গভীর নিশ্বাস ছাড়লো নিরা।অহমির কাছে গিয়ে অহমি কাধেঁ হাত দিলো।কাধেঁ কারো ছোঁয়া পেতেই তার দিকে তাকালো অহমি দেখলো নিরা।নিরাকে দেখতেই কস্টরা জেনো আরও দলা পাকিয়ে এলো।নিরাকে জরিয়ে কান্না করতে লাগলো অহমি।
আর নিরা অহমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

– ম্যাম আম নিজেকে সামলান দেখেন তো আপনার জন্য না বুঝে বাচ্চাটা দুটোও‌ কান্না করছে!!(অহমির মাথায় হাত বুলিয়ে)

অহমি থামলো না।কিছুক্ষণ এভাবে যাওয়ার পর অহমি কান্নার বেগ কমিয়ে নিলো।
এরপর নিরাকে ছেড়ে রিশমির কাছে গেলো আর রিশমির গাল ধরে বলে উঠলো।

– লুক এট মি রিশমি বাবুই।(বলেই ফ্লোর থেকে তার আর সেহরিশ কিছু ছবি ওঠালো)

– লুক রিশমি বাবুই দেখো এটা তোমার পাপা আর তোমার পাপা আকাশের স্টার হয়নি আমাদের কাছেই আছে তোমার পাপা,,??(নাক টেনে)

রিশমির কান্না অটোমেটিকলি অফ হয়ে যায়।পাপার কথা শুনে মুহুর্তেই ‌রিশমির চোখ উজ্জল হয়ে উঠে।
জোরে নাক টেনে উঠে।তা দেখে অহমি আবারো বলে।

– তুমি কি তোমার পাপার কাছে যেতে চাও,,??

রিশমি চোখ বড় বড় করে হা করে বলে উঠে।
– আবার পাপা সত্যিই বেচেঁ আছে স্টার হয়নি।

অহমি মাথা নাড়ায় যার মানে নাহ্।রিশমি খুশিতে অহমির গলা জড়িয়ে বলে উঠে।

– মাম্মা আমি পাপাইয়ের কাছে যাবো প্লিজ আমায় নিয়ে চলো,,??(আদুরে গলায়)

অহমি মুচকি হেসে রিশমিকে জড়িয়ে ধরে।এদিকে নিরাও আজ খুশি হয়েছে।নিরা রিথির দিকে তাকালো দেখলো রিথি মন বিষন্ন করে রিশমি আর অহমির দিকে তাকিয়ে আছে।
কোথাও না কোথাও রিথি পাপা শব্দের অর্থ বোঝে।
সোহাগের কথা মনে পড়তে চোখ থেকে এক ফোঁটা পানির বর্ষন হয় নিরা।কিন্তু তা পরম যত্ন সহকারে মুছে নেয়।আর রিথির কাছে গিয়ে ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।রিথিও মায়ের জড়ানো দেখে মাকে জড়িয়ে ধরে।

~|17`|

– এই বাবু তুমি কেগো কোথা থেকে এসেছো??(ভ্রু কুচকে বলে উঠলো পৃথা)
পৃথার কথা শুনে সামনে দরজায় দাড়িয়ে থাকা পুচকি মেয়েটার দিকে তাকালেন মিসেস তরা আর মিসেস নিতু সাথে মি.আজমীন আর মি.ইমরান।
এত্তক্ষণ সবাই ড্রয়িংরুমেই উপস্থিত ছিলেন সবাই।হঠাৎ গাড়ির হর্নের শব্দে আর পৃথা কথা শুনে সামনে তাকালেন ওনারা।

– তুমি কে বাবু,,?(মিসেস তরা)

রিশমি সবার কথা শুনে খানিকটা বিচলিত হলো সাথে একটু ভয় পেলো।এই প্রথম মাম্মাকে সাথে না নিয়ে এইরকম একলা আসলো সে।

– আমি রিশমি আমার মাম্মা বলেছে এই বাড়িতে নাকি আমার পাপা থাকে,,!!আমার পাপা কোথায়।(করুন চোখে)

রিশমির কথা শুনে মিসেস নিতু আর মি. আজমীন অবাকের সাথে রিশমির দিকে তাকিয়ে রইলো।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে