প্রেমচতুর্দশী পর্ব-০৪

0
866

#প্রেমচতুর্দশী💛
[পর্ব-৪]

~|11`|
খাবারের সামনে মুখ গোমড়া করে বসে আছে রিশমি।জেনো খাবার দেখেই মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তার।এ খাবার মনে হয় আজ গলা দিয়ে নামবে না তার।
সামনের দুই টেবিলে বসে আছে অহমি আর নিরা তাদের সামনে বসে আছে রিশমি আর রিথি।
রিথি হলো নিরার মেয়ে।
অহমি আর নিরা মুচকি মুচকি হাসছে।নিরা মুচকি হেসে রিশমিকে বলে উঠলো।

– কি হলো রিশু বেবি তাড়াতাড়ি খাও আফটারঅল তোমার পছন্দ করা রেস্টুরেন্টের খাবার।খাও খাও শুরু করো,(মুচকি হেসে)

রিশমি কাদো কাদো মুখ করে অহমি,নিরার দিকে তাকালো।এরপর বলে উঠলো।

– মাম্মা আমার বমি আসছে ইয়াক এই খাবার গুলো সামনে থেকে সরাও,,!(কাদো কাদো মুখ করে)

রিশমি সামনে থাকা খাবার গুলোকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো নাক ছিটকে।
রিশমির সামনের প্লেটে কিছু সামুদ্রিক কাচাঁ কাছে টুকরো টুকরো করে রেখে গোলাপি কালারের ভাতের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া।
ব্যাস এইটুকু দেখেই রিশমির অবস্থা খারাপ।
রিশমির অবস্থা দেখে নিরা,রিথি হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।
রিশমির অবস্থা বুঝে অহমি দ্রুত ওয়েটারকে ডাক দিলো।

– ওয়েটার এই খাবারটা নিয়ে যান আর আইসক্রিম নিয়ে আসুন।
কথামতো ওয়েটার খাবারটা নিয়ে যায় আর আইসক্রিম নিয়ে আসে।

– নাও এইবার আইসক্রিম খাও।
রিশমি কোনমতে খেয়ে উঠে দাড়ায় আর করুন কন্ঠে বলে।
– মাম্মা আমি আর কিছু খাবো না চলো।

নিরা,রিথি আর অহমি মুচকি হাসে।এরপর উঠে যায়।
অহমি বিল পে করে বাহিরে গাড়ির সামনে আসে।আর নিরাকে জিজ্ঞাসা করে।
– নিরা আর কোথাও যাওয়া যায় বলোতোহ্।(ভাবুক গলায়)

– আন্টি আমরা চাইলে কোন পাহাড়ি এলাকা বা গ্রামঞ্চলে যেতে পারি।(রিথি)

– হুম তা ঠিক বলেছো তাহলে তো কোন গ্রামঞ্চল থেকে ঘুড়ে আসি।
বলেই অহমি সহ সবাই গাড়িতে বসলো।

অন্যদিকে।
রাগে সেহরিশের শরীর কাপঁছে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে আছে সে।
এত্তক্ষণ ইফাজের বলা সব কথা শুনেছে সে।রাগটা মাত্রাত্তিক্ত বেড়েই চলছে একসাথে।অহমি আর তার মাঝেকার দূরত্বের জন্য শুধুমাত্র ইফাজ দায়ী।
ভাবতেই সেহরিশের অবাক লাগছে সেই ছেলেটাকে নিজের বন্ধুর চেয়ে বেশি ভাইয়ের চোখ দেখতো সেই ছেলের জন্য অহমির তার কাছ থেকে এতো দূরে।সেহরিশ রাগে ফোস ফোস করতে করতে জোরে পর্দা সরিয়ে রুমের ভেতরে চলে গেলো।
সেহরিশের হঠাৎ রুমে এইভাবে প্রবেশ করাতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ইফাজ,অর্ণা দুজনেই।
রাগে সেহরিশের চোখ,মুখ লাল হয়ে এসেছে।
সেহরিশ তেড়ে গিয়ে ইফাজের কলার ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলো।

– তোকে আমি আমার ভাইয়ের চোখে দেখেছিলাম আর তুই কি করলে?আমাকে আর অহমিকে আলাদা করে দিলি। ওইদিন তুই আমার ফোন থেকে অহমিকে মেসেজ করেছিলি যে আমায় ডিভোর্স দিতে।(রাগে চিৎকার করে)

অর্ণা ভয়ে দেয়ালের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে।কথাবলার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। অর্ণা বেশ ভালোই বুঝেছে সেহরিশ তাদের সব কথা শুনে নিয়েছে এখন নিশ্চয় তাদের রেহাই নেই।
এদিকে ইফাজ আপ্রাণ চেস্টা করছে কলার থেকে সেহরিশের হাত ছাড়ানোর কিন্তু পারছেই না।
ইফাজ ভালোই বুঝেছে সেহরিশ যখন এতোটা রেগেছে আজ নাহয় কিছুনা কিছু করবেই।

~|12`|

অহমিরা গ্রামঞ্চলে আসলো ঘুরতে।এখানের প্রাকৃতিক পরিবেশটা খুব মনোমুগ্ধ কর।রিশমি হা হয়ে চারদিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছে।
হালকা মৃদ্যু বাতাসের তালে তালে প্রতিটা গাছের পাতা গুলো আপন গতিতে নড়ে যাচ্ছে।যেনো তারা বাতাসের গতির সাথে তালে তাল মিলিয়ে নাচঁছে।

অহমি আর নিরা গভীত একটা নিশ্বাস নিয়ে ছাড়লো।রিথি দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে প্রকৃতিকে অনুভব করছে।
রিশমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।ভাবছে এখানে সে তার মাম্মা,আন্টি,একটা ভালো বন্ধুর চেয়ে বোন রয়েছে।সবাই রয়েছে শুধু তার পাপা নেই।
রিশমির পাপার কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছে।মাঝে মাঝে খুব অভিমান হয় তার পাপার প্রতি কেনো তাদের ছেড়ে ওই দূরে বিশাল আকাশের স্টার হয়ে গেছে।

রিশমি তো আর জানেনাহ্ তার পাপা এখনো স্টার হয়নি।তার মাম্মাযে তাকে সেই অতীত থেকে লুকিয়ে রাখার জন্য দিনের পর দিন মিথ্যা বলে যাচ্ছে।
রিশমিকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অহমি মিহি কন্ঠে রিশমিকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো।

– কি হয়েছে রিশমি মাম্মা তুমি এভাবে একলা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে কি ভাবছো,,?(মিহি কন্ঠে)

রিশমি মন খারাপ করে বলে উঠে।
– মাম্মা পাপার কথা মনে পড়ছে পাপা যদি আজ এখানে থাকতো কতো মজা হতো।আচ্ছা পাপা কেনো আমাকে রেখে আকাশের স্টার হয়ে গেছে?(মন খারাপ করে)

রিশমি কথা শুনে ভ্রু কুচকে ফেলে অহমি।রিশমি কথাতে বারবার সেহরিশের কথা মনে পড়ছে তার ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলসে অহমি।এইমুহুর্তে রিশমিকে কি মিথ্যা বলবে মনে মনর একটু একটু করে সাজানোর ব্যর্থ চেস্টা করছে।
নিরা অহমির ব্যাকুলতা দেখে গভীর একটা নিশ্বাস ছাড়লো।

~|13`|

ইফাজকে টানতে টানতে ড্রয়িংরুমের সামনে এনে ফেলল সেহরিশ।আর চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে ডাকতে লাগলো সেহরিশ।

– আজ যাই হোক না কেনো ইফাজ তোর একটা শাস্তি তো হবেই তাও ভয়ংকর তোকে তো আমি জেলে দিবো।আমার আর অহমির সম্পর্কের মাঝে তুই তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে ডুকিস কিভাবে!আজ তোর জন্য এতোটা বছর অহমি আর আমি এতটা দূরে আছি।(রাগে)
চৌধুরী পরিবারের সবাই এসে উপস্থিত হলো ড্রয়িংরুমে।
এদিকে ইফাজকে ফ্লোরে পড়ে কাতরাতে দেখে ইফাজের মা মিসেস তরা হন্তদন্ত হয়ে ইফাজের কাছে ছুটে এসে নাক ছিটকে চিন্তিত গলায় বললেন।

– একি ইফাজ বাবা তুই ফ্লোরে শুয়ে এভাবে কাতরাচ্ছিস কেনো?তোর কি কোন রোগ উঠেছে,,?(চিন্তিত গলায় নাক ছিটকে)
ইফাজ রাগী চোখে মিসেস তরার দিকে তাকালো।

– কাকিমনি এত বছর তোমরা সবাই মিলে বলেই এসছো অহমি নাকি কোন পরপুরুষের সাথে পালিয়ে গেছে তবে ভেবে দেখেছো কেন পালিয়েছে?(রাগী গলায়)
মিসেস তরা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল।

– এ আর কি হয়তো লোকটার উপর আসক্ত হয়েছে তাই পালিয়ে গেছে।(মুখ ভেংচি দিয়ে)

সেহরিশ রাগে চোখ বন্ধ করে নিলো।এরপর বাজঁ খাই গলায় বলে উঠলো।
– তোমার ছেলে দায়ী এর জন্য আমার ফোন থেকে অহমিকে উল্টোপাল্টা মেসেজ দিয়ে ডিভোর্স দিতে বলে।আর অবাকের বিষয় হচ্ছে যে তোমার ছেলে আমার আর অহমির জন্য ডিভোর্স পেপার তৈরী করিয়েছে।ওর জন্য গত ৭ টা বছর ধরে অহমিকে অনেক কথা শুনিয়েছো।ওর নামে অনেক মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়েছো,,!!সব নস্টের গোড়া যে তোমার এই ছেলে বুঝতে পেরেছো আর আর অহমি যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তখন তখন অহমি প্রেগনেন্ট ছিলো,,!!(কথাটা বলতে বলতে হাপিয়ে উঠে সেহরিশ)

মুহুর্তেই সবার মাঝে নিস্তব্দতা বিরাজ করা শুরু করলো।কথাগুলো শুনে যেনো পুরো চৌধুরী পরিবার বাকরুদ্ধ।
মি. ইমরান ছেলের করা কাজের জন্যে লজ্জিত অনুভব করলেন।আস্তে করে মাথা নিচু করে ফেললেন।
মিসেস তরা চুপ করে সেহরিশের দিকে পাথরের ন্যায় তাকিয়ে আছে।এত বছর অহমির নামে উনি অনেক বাজে কথা বলেছেন সেই সব যুক্তি নিছকই মিথ্যার ছলে পড়ে বলেছেন তাও ওনার ছেলের জন্য ভাবতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেন মিসেস তরা।
সেহরিশ এবার অর্ণার দিকে তাকালো।
এরপর আঙ্গুল তুলে বলল।
– তোকে আর তোর ভাইকে আজ যদি এখানে দেখেছি তো দেখেনিস এই সেহরিশ চৌধুরী কি জিনিস,,(বলেই সেহরিশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো)

~|14`|
– আন্টি দেখো ওখানে ফুচকা বিক্রি করছে চলোনা আমরা ফুচকা খাই।(এক্সাইটেড হয়ে)

– হুম রিথি ঠিক বলেছে মাম্মা চলোনা আমরা ফুচকা খাই।কতদিন ধরে খাইনি,,(ফুচকার দোকানের দিকে তাকিয়ে)

নিরা আর অহমি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো।নিরা বলল।
– হুম ম্যাম চলুন সত্যিই অনেক দিন ধরে ফুচকা খাওয়া হয়না।(মুচকি হেসে)

কথাটা শোনা মাত্রই রিথি আর রিশমি দৌড় দিলো।দৌড় দিতে গিয়ে ইটের সাথে পা লেগে উল্টে হয়ে পড়ে গেলো রিশমি।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে