#প্রেমচতুর্দশী💛
[পর্ব-৩]
~|8`|
সময় ছুটছে তার আপন গতিতে সেহরিশের দিনগুলি কাটঁছে প্রতিদিন নিয়ম করে চাঁদের সাথে কথা বলে আকাশের শত তারার মাঝে অহমিকে অনুভব করে।
বেলকনির রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে আছে সেহরিশ।আশেপাশের ব্যাস্ত শহরের খেটে খাওয়া দিন-মজুর মানুষ গুলোর প্রতিনিয়ত বাচাঁর জন্যে লড়াই করার আকাঙ্খা গুলোকে আপন দৃষ্টিতে দেখছে সেহরিশ।
ব্যাস্ত মানুষ গুলি কেমন নিজের তাড়ায় ছুটে বেড়াচ্ছে কেউ অফিসে যাওয়ার জন্য তো কেউ আজকের দিন একটু পেটে দানা দেওয়ার জন্য।
সেহরিশের বেলকনি থেকে আশেপাশের পথ-ঘাট সব কিছুই দেখা যায়।
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চারদিকে একবার করুন চোখে পর্যবেক্ষণ করে নিলো সেহরিশ।সেহরিশের চোখ পড়লো দূরে তপ্ত রোদের মধ্যে খালি পায়ে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা একটা ৭ কিংবা ৮ হবে।
ময়লা ছেড়াঁ জামাকাপড় পড়ে লোকজনের কাছে হাত পেতে ভিক্ষে চাচ্ছে।
কিন্তু নিষ্ঠুর সমাজের কিছু কিছু লোক তাকে গালমন্দ করে রাগারাগী করে চলে যাচ্ছে আর কিছু লোক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অতিমাত্রার কম লোকজন ছেলেটাকে কিছু টাকা বা খাবার দিয়ে যাচ্ছে।
(আসলে কি আমাদের পৃথিবীর সমাজ সভ্যতার একটাই নিয়ম দরিদ্ররা যেখানে শত গালমন্দ সেখানে।
পৃথিবীটা আজ এত সুন্দর এই সমাজের নানা পেশার মানুষদের জন্য হোক না তারা গরীব কিংবা কালো।
আমরা যদি সমাজে গরীব,ধনী নির্নয় না করে সবাইকে একটু ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নেই তাহলে পৃথিবীতে আর কোন উঁচু,নিঁচু’র ভেদাভেদ সম্পর্ক থাকবে না থাকবে শুধু আত্বীয়ত্বার সম্পর্ক।যদি সত্যিই এইরকমটা হয় তাহলে পৃথিবীতটা আসলেই জান্নাতে পরিণত হবে।যেখানে একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের স্নেহ,ভালোবাসা,পরম সহিষ্ণুতা থাকবে।)
সেহরিশ এক দৃষ্টিতে পিচ্চি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।মনের মধ্যে কেমন একটা অদ্ভুদ লাগছে ছেলেটার জন্য মায়াত্বতা অনুভব করছে সেহরিশ।
কাঁধে কারো স্পর্শে পিছে ঘুড়ে তাকায় সেহরিশ।দেখে অর্ণা দাড়িয়ে আছে।সেহরিশ বিরক্ত চোখে অর্ণার দিকে তাকালো।
– এই তোমাকে বলেছিলাম আমার ঘরে ঢোকা প্রয়োজনবোধ করবে না..!বের হও আমার রুম থেকে!(বিরক্ত নিয়ে)
সেহরিশের বিরক্তি দেখে অর্ণা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো।
– তোমার হবু বউ আমি সেই সুবাদে তোমার রুম কি তোমাকে ছোঁয়ার অধিকারও আছে আমার(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
সেহরিশ হবু বউ কথাটা শুনে লাল চোখে অর্ণার দিকে তাকালো।সেহরিশের তাকানো দেখে অর্ণা ভয়ে তারাতারি সেহরিশের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে ফেলল।
– বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে,?(জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো সেহরিশ)
অর্ণা ভয়ে,রাগে তারাতারি রুম ত্যাগ করলো।সেহরিশ দরদর করে ঘামছে দাড়িয়ে থাকতেও কস্ট হচ্ছে তার।দ্রুত পায়ে সোফায় গিয়ে বসলো।হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে।
সেহরিশ গভীর গভীর নিশ্বাস নিচ্ছে।
~|9`|
বাগানে পানি দিচ্ছে অহমি ফুল গাছের পাতা গুলো কেমন শুকিয়ে গেছে।তা দেখে গভীর নিশ্বাস ছাড়লো সে।কতদিন ধরে এই গাছগুলোর যত্ন নেওয়া হয়না।
ভাবতেই অহমি পুনরায় একটা নিশ্বাস ছাড়লো গাছে আপন মনে পানি দিতে লাগলো অহমি।
পিছন থেকে কারো ডাকে গাছে পানি দেওয়ার ধ্যান ভাংলো অহমির।
– ম্যাম..!
অহমি পিছে ঘুরলো দেখলো নিরা দাড়িয়ে আছে।অহমি নিরাকে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠলো।
– অহ্ নিরা তুমি এসেছো ভালোই হয়েছে খুব একা একা লাগছিলো আর বোরিংও তাই ভাবলাম গাছে পানি দেই।ভালোই হয়েছে তুমি এসেছে এখন গল্প করে একটু সময় কাটানো যাবে..!(মুচকি হেসে)
নিরাও মুচকি হাসলো এবং বলে উঠলো।
– ম্যাম আজ তো অফ ডে তাহলে চলুন কোথাও ঘুরে আসি।(মুচকি হেসে)
নিরার কথা শুনে পিছন থেকে ফুরফুরে কন্ঠে রিথি আর রিশমি বলে উঠলো।
– মাম্মা তাহলে আজকে আমরা কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি ইয়াহু।(খুশিতে লাফ দিয়ে বলে উঠলো রিশমি)
রিশমির লাফানো দেখে অহমি আর নিরা একসাথে হেসে উঠলো।
-তো ম্যাম কোথায় যাওয়া যায়?(ভাবান্বিত কন্ঠে)
অহমি ভাবছে কোথায় যাওয়া যায়।রিশমি ফট করে বলে উঠলো।
– মাম্মা এইবার আমরা আজ রেস্টুরেন্ট যাবো চলো না প্লিজ।(বাহানা করে)
অহমি আর নিরা দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিরা বলল।
– ঠিক আছে বলো কোন রেস্টুরেন্টে যাবে।
রিশমি ভেবে বলল।
– Izumi আর Le souffle তে যাওয়া যাক,,?(করুন চোখে)
অহমি ভ্রু কুচকে নিরার দিকে তাকালো।নিরা ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে একটু হেসে বলে উঠলো।
– আচ্ছা আচ্ছা যাবো আমরা তো তাহলে সবাই রেডি হয়ে নাও আর রিথি তুমি আমার সাথে চলো।(বলেই নিরা রিথির হাত ধরে রিথিকে নিয়ে গেলো)
~|10`|
– ভাই ওতো ওর কাছে আমায় ঘেষতেও দেয়না এখনো আমায় ধমক দিয়ে রুম থেকে বের করে দিলো।(রাগে,ক্ষোভে বলে উঠলো অর্ণা)
ইফাজ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো।
– আরে ধুরু এই অহমিটাকর সেহরিশের লাইফ থেকা সরালাম এত অহমির বিরুদ্ধে কথা বললাম তবুও এই সেহরিশের মন থেকে অহমিকে সরাতে পারলাম না বিরক্ত লাগছে গত ৭ বছরে একবারও অহমির বিরুদ্ধে সেহরিশের মুখ থেকে একটাও কথা বের হয়নি ?(বিরক্ত হয়ে)
ইফাজের কথা শুনে অর্ণা ভ্রু কুচকে বলে উঠলো।
– মানে ব্যাপারটা কি বুঝলাম না..?(ভ্রু কুচকে)
– তোকে একটু বললে তুই বুঝবি না শোন পুরোটা বলি।
ইফাজ গভীর নিশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলো
– আমি,অহমি সেহরিশ,লিজা,আমান আর প্রীতি কলেজ থেকেই বেস্টফ্রেন্ড।আর এই বন্ধুত্বের মাঝেই আমি অহমিকে ভালোবেসে ফেলি।কিন্তু অহমি আমাকে নয় সেহরিশকে ভালোবাসতো বাট সেহরিশ অহমিকে ভালোবাসতো না আর তেমন তার সাথে মিশতোও না কারন অহমি একটু গ্রাম্য মেয়ে টাইপ ছিলো সব ছেলেমেয়েদের সাথে কম মিশতো বাট আমাদের সাথে টুকিটাকি কথা বলতো আর সে সময়ের মধ্যেই আমি অহমিকে ভালোবেসে ফেলি।এরপর আমরা একদিন সব ফ্রেন্ড মিলে একটা ক্যাফেতে মিট করি সেখানে আমরা অনেক আড্ডা দেই সেই দৌড়ান আমরা সবার বড় হয়ে কি হওয়ার ইচ্ছা জানতে চাই সবার আগে লিজা,আমান,প্রীতিকে জিজ্ঞাসা করা হয় এরপর সেহরিশকে জিজ্ঞাসা করা হয় বাট সে কিছু বলে না অহমিকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে সে ডক্টর হতে চায়।ইভেন কলেজ থেকে কিছুদিন পর ৫ বছরের ডক্টারি কোর্সও নিবে।সেদিনের মতো আমরা সবাই চলে যাই।
সময় তার গতিতে চলতে থাকে এর মধ্যেই আমি অহমির প্রতি আরও ইউক হয়ে পড়ি।কিন্তু তখনি শুনি অহমি আর সেহরিশ নাকি বিয়ে করে ফেলেসে।কথাটা শুনে আমি নিজেকে আটকাতে পারিনী।তখন বাড়িতে এসে দেখি ওদের বিয়ে প্রায় শেষ পর্যায়ে এরপর থেকে আমি অহমিকে বিরক্ত করা শুরু করি।ইভেন এমন চলতে চলতে অহমি প্রেগনেন্টও হয়ে। আর অহমি সেহরিশ দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলে বাট অহমির টা প্রকাশিত হলেও সেহরিশ বলতে যাবে।আমি ওদের এক না হতে দেওয়ার জন্য অহমির ফোনে সেহরিশ সেজে মেসেজ পাঠাই আর সেহরিশের সাইন নকল করা একটা ডিভোর্স পেপার পাঠাই অহমির কাছে ব্যাস ওমনি অহমিও ডিভোর্স পেপারে সাইন করে বাড়ি থেকে চলে যায় সেই হতে সেহরিশকে ভুল বুঝিয়ে আসছি বাট সেহরিশ বুঝতেই চাইছেনা।(রাগে ফোস ফোস করে পুরো কথাটা বলল ইফাজ)
সবকথা শুনে মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে ইফাজের মুখের দিকে তাকালো অর্ণা।তার ভাই এত বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে আসছে গত ৭ বছর আগে আর কথাটা সে এখন জানছে।
– ভাই তুই তো মহাভারত সৃষ্টি করে ফেলছিস কিন্তু কথাগুলো আমাকে আগে বললি না কেনো?(মুখে হাত দিয়ে)
ইফাজ দম ছেড়ে বাকাঁ হেসে বলে উঠলো।
– বললে কি আর এতকিছু করতে পারতাম তুই যে সেহরিশের প্রেমের টানে সব বলে দিতি এমনিও অহমিকে আমি পাগলের মতো খুজঁছি ইমিডিয়েটলি ওর লোকেশনও আমি বের করে ফেলেছি এখন শুধু দেখ আমি কি করি,,(বাকাঁ হেসে)
চলবে।
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)