প্রেমকুঞ্জ পর্ব-০৩

0
971

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_০৩

———-

“হ্যালো কে বলছেন?

টেলিফোন কানে ধরে চুপ হয়ে আছে ফরহাদ! গলার স্বর টা যে নিলুর চিনতে কষ্ট হচ্ছে না। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। এদিকে নিলু শেষ বারের মতো হ্যালো বলে টেলিফোন রেখে দিল। তবুও ফরহাদ টেলিফোন ধরে রাখল। খুব কষ্ট করে নাম্বার টা জোগাড় করেছে সে। মাঝে মধ্যে যখন ইচ্ছে করে নিলুর গলার স্বর তখন’ই এমন ভাবে টেলিফোন করে। ফরহাদের মন আজ বেশ ফুড়ফুড়ে! এর কারণ হচ্ছে তার মনের কথা মিলে গেছে। নিলু আজও শাড়ি পড়ে এসেছে। খুব হালকা রঙের একটা সুতি শাড়ি। খুব সুন্দর লাগছিল তাকে দেখতে। রোদের চাকচিক্য যেন তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফরহাদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কিন্তু নিলু ফিরে তাকাল না। ভেবে রেখেছিল যদি তার দিকে ফিরত তাহলে সে তাকে বলতো,
“এক থোকা কৃষ্ণচূড়া ফুল তোমার খোঁপায় বাঁধলো খুব সুন্দর লাগতো নিলু!

কিন্তু বলা হলো না! কারণ নিলু ফিরে তাকাল না। এতে ফরহাদের মন সামান্য ক্ষুণ্ন হলেও মনের কথা মিলে যাবার কারণে বেশ খুশি সে! এই খুশিতে ছাদে এসে আরেকটা সিগারেট ধরাল।

——

তাড়াহুড়ো করে ফোনটা ধরতে এলাম। ভেবে ছিলাম আবরার হয়তো ফোন করেছে কিন্তু না , কে করলো তাও জানি না। ইদানিং অবশ্য কতোসব উদ্ভট লোকজন কল করে। তেমনি হবে একজন। আবরার আজ আসবে ভেবে আজও শাড়ি পড়ে গিয়েছিলাম। টিএসসি রোডের সামনে ঘন্টা খানেকের মতো ছিলাম। তবুও দেখা পেলাম না তার। হুম ভালো লাগছে না কিছু ভালো লাগছে না। হুট করে এমন উধাও হবার কি কোন মানে আছে!

মন ঠিক করতে তিতিরের ঘরে এসে কড়া নাড়লাম। ওর সাথে কথা বললে মন ভালো হয়ে যায়। কেমন রসিকতা করে কথা বলে শুনতে ভালো লাগে!

“কে?

“আমি!

“আমি কি তোমার নাম নেই?

“গর্দভ আমি তোর বড় আপা!

“আমার বড় আপার নাম আছে, বল নাম বল!

“রসিকতা হচ্ছে তিতির!

“বিছানা ছেড়ে উঠলো তিতির। এতোক্ষণ শুয়ে শুয়ে দুদিন আগের খবরের কাগজটা পড়ছিল সে। নিলুফার শেষে রেগেই ঘরে ঢুকে পড়ল। তিতির স্বাভাবিক গলায় বলল, “কি বলো আপা, রসিকতা করবো কেন?

“তাহলে এমন উদ্ভট কথাবার্তা বলছিস কেন পাগল হয়ে গেছিস নাকি?

“আরে না আপা, সেদিন আমার এক বন্ধু কি বলল জানো?

“না জানি না!

“তাহলে শোন, সেদিন এক বন্ধু বলল রাতের বেলায় নাকি খারাপ কিছু মানুষের রূপ নিয়ে ঘোরাফেরা করে।

“তোর আমাকে খারাপ কিছু মনে হলো।

“সেজন্য’ই তো পরিক্ষা করলাম!

নিলুফার কথা না বাড়িয়ে তিতিরের কোলের কাছে খবরের কাগজটা দেখল‌। চোখ ছোট করে বলল,

“তুই দুদিন আগের খবরের কাগজ কেন পড়ছিস তিতির!

“সময় কাটানোর জন্য আপা , সময় কাটানো।

“কেন, আজ বাইরে বের হস নি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেস নি!

“না ইচ্ছে করছে না তাই যাই নি, তুমি কিছু বলবে।

“না তেমন না, এভাবেই এলাম তোর ঘরে। কেন আসতে পারি না।

“পারবে না কেন, আলবাদ পারো।

“তা তোর ওই বান্ধুবীটার খবর কি করে তিতির?

“কোন বান্ধবী?

“ওই সাদা চামড়ার!

“ইরা’র কথা বলছো।

“হ্যাঁ এমন’ই হবে নামটা!

“জানি না তো দেখে নি অনেক দিন হলো?

“কি বলিস, মেয়েটা তো সেদিন এলো আমাদের বাসায়!

তিতির নিলুর চোখে দিকে তাকাল। নিলু স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে রইল। তিতিরের বিশ্বাস অর্জন করছে। কিন্তু তার বলা কথাটা মিথ্যে ছিল। তিতিরের কি অবস্থা হয় এটা দেখার জন্য’ই বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলল। তিতির খবরের কাগজে নজর দিয়ে বলল, “তা ভালো তো, কিছু বলেছি নাকি আমার ব্যাপারে।

“তোর জন্য অপেক্ষা করেছিল, বসেও ছিল অনেকক্ষণ। পরে তুই না আসায় চলে গেল।

“ওহ আচ্ছা!

“কি ওহ আচ্ছা করছিস, মেয়েটা কেন এলো বল।

“যাহ বাবা, আমি কি করে বলবো। আমি তো আর তাকে আসতে বলি নি বলো।

“হুম তাও ঠিক!

অতঃপর আরো কিছুক্ষণ গল্প করলাম তিতিরের সাথে। একসময় দেখলাম সে হামি ছাড়ছে। অনেক রাত হয়েছে, এখন উঠে আসা দরকার। তাই চলে এলাম। উঁকি দিলাম শ্রেয়ার ঘরে। টেবিলেই মাথা গুঁজে ঘুমিয়ে আছে শ্রেয়া। বুঝলাম না ঘুমানোর হলে তো খাটেই ঘুমানো যায়। টেবিলে ঘুমানোর দরকার কি..

——

“নিলু, নিলু মা!

বাবার ডাক শুনে ঘর থেকে বের হলাম। দেখি বাবা গোসল করতে যাবার জন্য তৈরি হয়েছে।

“কি হয়েছে?

“আজান দিয়েছে!

“না দেয় নি তবে সময় হয়েছে, তুমি গোসল করতে যাও। আজ জুম্মার দিন!

“মনে আছে মা, কিন্তু দেখ পায়ের নখ গুলো বেশ বড় হয়ে গেছে।

“তোমার পায়ের নখ শক্ত, পানিতে চুবিয়ে রাখো। আমি এসে কেটে দিচ্ছি।

“আচ্ছা মা!

অতঃপর বাবা’র পায়ের নখ কাটতে বসলাম। হুট করেই মায়ের চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। কান্ড টা কি হয়েছে আর কে ঘটিয়েছে বুঝতে সময় লাগলো না। ঊষা’র কাজ! বেচারি আজ পোলাওতে পানি বেশি দিয়ে ফেলেছি, যাকে বলা যায় খিচুড়ি। মা তাকে খুব বকছে। মেয়েটা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে শুধু শুনেই যাচ্ছে।

এর মাঝেই শ্রেয়া এসেছে শাড়ি পড়ে। মা’র চক্ষু এখন চড়াকগাছ। ঊষা’র রাগ এখন তার উপর’ই ঝাড়ছে।

“ছিঃ ছিঃ ছিঃ তোকে শাড়ি পড়তে বলেছে কে। শাড়ি পড়লে ঘুরে বেড়ালে কি পরিক্ষায় নাম্বার ভালো আসবে নাকি হুম বল। কিসব পড়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস তুই। কান্ড দেখো মেয়ের। বলি তুমি কি কিছু বলবে না তোমার মেয়ে কে।

বাবা কথা বাড়াচ্ছে না, চুপ হয়ে আছে। মা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি শ্রেয়ার দিকে। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে শ্রেয়া কে। বড় বড় লাগছে আর সুন্দরী ও। আমার বোন টা যে এতো সুন্দর আগে জানতাম না তো।

মা এবার অভদ্র ভাষায় কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। বাবা বলে উঠেন, “আহ চুপ করো না!

“কি চুপ করব , তুমি দেখছো না তোমার মেয়ের কান্ড। শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আহা কি সুখ, এতো সুখ নিয়ে থাকিস কি করে শুনি।

শ্রেয়া মিন মিনয়ে বলল, “তুমি আমাকে কেন এভাবে বলছো মা, আপাও তো শাড়ি পড়ে।

“মেয়ের কথা শোন, বলি তুমি আর আপা কি এক হলি নাকি। নাকি আপা তোর মতো পড়াশোনা করে বল দেখি। শুধু পাড়িস চ্যাটাং চ্যাটাং কথা! মুখের কথা মাটিতে না পড়তেই মুখে মুখে তর্ক করছিস। দেবো একটা…

তিতির চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কি শুরু করলে কি তোমরা!

শ্রেয়ার চোখে পানি টল টল করছে। মা চুপ হয়ে গেলেন। তিতির মার দিকে তাকাতেই মা রান্না ঘরে চলে গেলেন।
শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই এসব কি পড়েছিস বুড়ো দের মতো। জানিস রাস্তার টোকাই রা এভাবে শাড়ি পড়ে।

শ্রেয়ার চোখ থেকে এবার অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আমি বারণ করলাম তিতির কে। শুধু শুধু কেন সবাই মেয়ে টা কে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। তিতির গম্ভীর স্বরে বলে গেল, শাড়ি বদলে পড়তে বস গিয়ে যা!

শ্রেয়া চলে গেল। বেশ খারাপ লাগল ওর জন্য। বুঝি না সবাই ওর পিছনেই কেন লেগে থাকে। একটু শখ করেই না হয় পড়ল শাড়ি খানা। এতো বলার কি আছে।

——

দুদিন পর আবরার কল করল নিলুফারের টেলিফোনে। শ্রেয়া এসে ধরল,

“হ্যালো কে বলছেন?

“নিলুফার আছে!

“আপা আছে আপনি কে বলছেন?

“তুমি কি শ্রেয়া বলছো!

কপাল কুঁচকে গেল শ্রেয়ার। গম্ভীর স্বরে বলল, আপনি কে বলছেন?

“শ্রেয়া তোমার আপা কে গিয়ে বলো আবরার ফোন করেছে।

“লাইনে থাকুন বলছি!

শ্রেয়া টেলিফোন রেখে গেল নিলুফারের ঘরে। দরজার পর্দা সরিয়ে দেখল নিলুফার টেবিলে বসে আছে। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নিলুফার বলল, কে ফোন করেছে?

“আবরার! তোমাকে চাইছে?

“গিয়ে বল আপা ঘুমাচ্ছে, এখন তাকে ঘুম থেকে উঠানো যাবে না।

“তুমি বুঝি তার সাথে কথা বলবে না!

“না!

“কেন?

“ইচ্ছে করছে না, এখন ঘুমোতে ইচ্ছে করছে। ঘুমোবো, তুই যা এখান থেকে!

শ্রেয়া চলে এলো। আবরার কে বলল “আপা ঘুমোচ্ছে। এখন তাকে উঠানো যাবে না।

আবরারের গলা জড়িয়ে এলো। “আচ্ছা” বলেই ফোনটা কেটে দিল সে। নিলুফার বিছনায় এসে বালিশে মাথা রাখল। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। অভিমান করেছে সে। ভালোবাসা যন্ত্রণা তাকে যেমন পুড়িয়ে মারছে সে চায় আবরার কেও তেমন পুড়িয়ে মারুক। জানুক ভালোবাসায় যেমন সুখ আছে তেমন কষ্টও আছে। সুখের ভাগিদার যদি দুজন হয় তবে কষ্টের ভাগিদার কেন সে একা হবে, কি দায় পড়েছে তার।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে