গল্প :- প্রেমকাহন
পর্ব :- ০৪ এবং শেষ
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
-:”পরদিন বিকেলে আবির ফুলের দোকানে গেলো ফুল কিনতে। ফুল কিনে বাইকে করে সে বাড়িতে চলে এলো। আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তখন বাড়ির বাইরের দরজার সামনে আসতেই আবির পুরুষ মানুষের জুতা দেখতে পেলো। তাই তাড়াতাড়ি বাসাই ঢুকে সোজা বারান্দায় গিয়ে দেখতে পেলো। তানিয়ার সাথে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আবির বুঝতে পারলো এই ছেলেটা বিকি। তাই সে হুট করে ফুলগুলো নিজের পেছনে লুকিয়ে ফেললো।
তানিয়া আর সেই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবির ছেলেটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–“হাই আমি আবির।
ছেলেটাও আবিরের সাথে হাত মিলিয়ে বললো।
–“আমি বিকাল। তানিয়ার বয়ফ্রেন্ড।
–“আচ্ছা তাহলে তোমরা কথা বলো আমি আসছি। (আবির সামান্য একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো)
–হুম। তাই ভালো হবে আমাদের একটু প্রাইভেসির প্রয়োজন। (বিকি মুখ বাঁকিয়ে জবাব দিলো)
আবির তখন আর কিছু না বলে বারান্দা থেকে চলে এলো আর হাতের ফুলগুলোও ডাস্টবিনে ফেলে দিতে ভুললো না।
.
.
–“বিকি তুমি আবার কেন এসেছ? (তানিয়া)
–“তানিয়া, তুমিই তো বললে যে এটা একটা দুর্ঘটনার বিয়ে। তাই আমি তোমাকে নিতে এসেছি।
–“আমি কি তোমাকে একবার ও বলেছি যে আমি তোমার সাথে যাবো। আমাকে নিয়ে যাও।
–“আমি তো এটাই বুঝতে পারছিনা যে তুমি এখানে আছো কেন?
–“কারণ আমি আবিরকে ছাড়তে পারবোনা।
–“মানে?
–“হতে পারে আমাদের বিয়েটা দুর্ঘটনাবশত। কিন্তু বিয়েটা মিথ্যে ছিলো না।
–“আসল কথা বললে কি হয়? এক রাতের মধ্যে ওই আবির কি এমন দেখিয়েছে যে তুমি আর ওকে ছাড়তে চাইছোনা? (বিকি রেগে গিয়ে বললো)
–“বিকি…
–“যদি সেটা না হয় তাহলে কি কারণে ওকে ছাড়তে চাইছোনা তুমি?
কথাটা বলতে বলতে বিকি তানিয়াকে চেঁপে ধরলো।
তানিয়া তখন বিকিকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে বললো।
–“কারণ আমি আবিরকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওর অভ্যাস হয়ে গেছে আমার। এই অভ্যাস আমি আর ছাড়তে পারবোনা।
–“কিহ????
–“হুম। আর একটা কথা বিকি। আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসিনি। ওটা সেইপ ভালোলাগা ছিলো।এবার দয়াকরে তুমি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও আর কখনো আসবেনা।
এরকম অপমানের পর বিকি আর এক মুহূর্ত ও অপেক্ষা না করে বেরিয়ে চলে এলো।
বিকি চলে যাওয়ার পর তানিয়া ভাবলো সে এখনি গিয়ে আবিরকে তার মনের কথা বলে দিবে। তাই দ্রুত সে আবিরের রুমে গিয়ে দেখলো। আবির খাঁটে বসে আছে। তানিয়াকে দেখামাত্রই আবির জিজ্ঞেস করলো।
–“কি বিকি চলে গেছে?
–“হুম।
–“তা তুমি যাও নি কেন?
–“আমি গেলে কি তুমি খুব খুশি হতে?
–“অহ কামন তানিয়া। তুমিও জানো যে আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা না। এসব নাটক করে এখন লাভ কি? এর চাইতে ভালো তুমি তোমার বিকির কাছে চলে যাও আমিও একটু শান্তিতে বাঁচতে পারবো।
আবিরের মুখে এমন কথা শুনে তানিয়া আর কিছু না বলে কয়েক পা পিছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
.
.
তারপর সকালে তানিয়া আবিরের জন্য নাস্তা রেডি করে ডাইনিং টেবিলে রেখেছে। আবির ও সেখানে ছিলো। তখন হঠাৎ তানিয়ার মোবাইলে একটা কল এলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো ফুফু কল করেছে।
কল রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে ফুফু বললেন।
–“তানিয়া কি করছিস এখন?
–“এইতো আবিরের জন্য নাস্তা বানাচ্ছিলাম।
–“আচ্ছা তাড়াতাড়ি তোরা এখানে চলে আয়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
–“কেন ফুফু? কিছু হয়েছে?
–“তোর দাদু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
–“কি বলছো তুমি? আমরা এখনি আসছি।
.
.
এরপর তানিয়া আর আবির তানিয়ার পরিবারের সামনে বসে আছে। বিকিও বসে আছে এখানে। এবার তানিয়ার বাবা হুংকার দিয়ে বললেন।
–“সত্যি করে বল এই ছেলেটাই বিকি নাকি আবির বিকি?
তানিয়া বাবার ভয়ে হাত উঠিয়ে দেখিয়ে দিলো যে বিকিই বিকি। তানিয়ার জবাব শুনে বিকি হো হো করে হেসে দিয়ে বললো।
–“আমি বলেছিলাম না যে আমিই বিকি আর ওই ছেলেটা একটা ফ্রড।
এবার আবির আর তানিয়ার দিকে তাকিয়ে তানিয়ার বাবা বললেন।
–“তোমরা দুজন আমাদের বিশ্বাস ভেঙেছো।
এবার আবির তানিয়ার বাবাকে বাধা দিয়ে বললো।
–“বাবা, তানিয়ার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার।
–“চুপ। আমাকে একদম বাবা বলবে না। বিশ্বাসঘাতক।
আবির এবার কোমল স্বরে তানিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
–“একটা কথা বলি মাপ করবেন আমাকে। আপনি একবার ভেবে দেখুন আপনি কি কখনো আপনার মেয়ের বিশ্বাস ভাঙেন নি?
–“মানে? (তানিয়ার বাবা হুংকার দিয়ে বললেন)
–“মানে, আপনি এমন কিছু করেছেন যাতে করে তানিয়ার আপনার প্রতি বিশ্বাস ভেঙে গেছে। নাহলে একটা মেয়ে তার ভালোবাসার কথা তার সবচাইতে কাছের মানুষ তার বাবাকে কেন বলতে ভয় পাবে? কেন তার এটা মনে হবে যে তার পছন্দ করা ছেলেকে তার বাবা মেনে নিবে না? কেন পরিবারের ভয়ে সে আত্মহত্যা করতে যাবে? কেন পরিবারকে না বলা কথা সে আমার মত একজন অপরিচিতকে বলবে? বলেন?
আবিরের কথাগুলো শুনে তানিয়ার বাবা ধুপ করে সোফায় বসে পড়লেন। এবার তানিয়ার দাদা বললেন।
–“এখন যেই সিদ্ধান্ত হবে তা তানিয়ার উপর। তানিয়া কি আবিরের সাথে থাকবে নাকি আবিরকে ডিভোর্স দিয়ে বিকির কাছে যাবে সেটা ওর ব্যপার। তবে আবির এখনো আমাদের জামাই। তাই ওর পূর্ণ খাতিরদারি যাতে হয়। আবির তুমি রুমে যাও।
.
.
কিছুক্ষণ পর,
ফুফু তানিয়ার কাছে দৌড়ে এসে বললেন।
–“আবির তো রুমে নেই। বাড়িতেও নেই।
–“মানে?
তানিয়া দৌড়ে আবিরের রুমে গিয়ে দেখলো সেখানে আবির নেই। ড্রেসিংটেবিল এর উপর তানিয়া একটা চিঠি পেলো। চিঠিটা খুলেই বুঝতে পারলো এটা আবিরের লিখা-
“প্রিয় তানিয়া,
আমি চলে যাচ্ছি। যখন বলবে তালাকের পেপার পাঠিয়ে দিবো। চিন্তা করো না নতুন জীবনে আল্লাহ তোমাকে অনেক সুখী রাখবে। কিন্তু আমার খুশি থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। কারণ তোমার অভ্যাস হয়ে গেছে আমার। তোমার খারাপ কফি, পোড়া রুটি, ঘরের জায়গায় জায়গায় তোমার আবর্জনা করা আর সেগুলোর উপর আমার চিল্লানো, প্রতিদিন সকালে মেকাপ ছাড়া তোমার চেহেরা দেখে ভয় পাওয়া। এরকম মনে হচ্ছে ছোট কোনো নেকীর কাজ ছিলো যেটা করে আমার খারাপ হয়েছে। জাস্ট কিডিং।
কিছুদিনের জন্য হলেও তুমি আমার জীবনকে আলোকিত করে দিয়েছো। হয়তো পুরোজীবনই তোমাকে মিস করে কাটিয়ে দিবো। আই থিংক তুমিও আমাকে মিস করবে।
তোমার খারাপ সময়ের সাথী
আবির”
চিঠিটা পড়েই তানিয়া মেঝেতে বসে পড়ে। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে।
.
.
চার বছর পর……..
–“মাম্মা। এদিকে দেখো কি এনেছি তোমার জন্য।
তানিয়া তাকিয়ে দেখলো তার তিনবছরের ছেলে রোহান তার জন্য ফুল নিয়ে আসছে। তানিয়ার হাতে ফুলগুলো দিয়েই রোহান তার আধো আধো বুলিতে বললো।
–“শুভ বিবাহ বার্ষিকী মা।
তানিয়া তখন তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
–“কে শিখিয়ে দিয়েছে?
–“বাবা।
তানিয়া তখন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আবির ঘরে ঢুকছে। তানিয়া আবিরকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো।
–“আজ আমাদের চতুর্থ বিবাহ বার্ষিকী।
–“হুম। আমি ভাবছি সেদিন তুমি না এলে কি হতো।
–“কোনদিন?
–“যেদিন আমি তোমাকে ছেড়ে চলে আসছিলাম।
এরপর তানিয়া আর আবির আগের কথাগুলো কল্পনা করতে থাকে, চলেন আমারাও একটু ঘুরে আসি।
সেদিন চিঠিটা পড়ে যখন তানিয়া কাঁদছিল তখন ফুফু এসে বললেন সে যদি আবিরের সাথেই তার জীবন কাটাতে চায় তাহলে আবিরকে যেন আটকায় সে।
তারপর রেলস্টেশন এ এসে দেখলো আবির টুলে বসে আছে। তানিয়া তখন পেছন থেকেই বললো।
–“আত্মহত্যা করার ইচ্ছা নাকি? যদি আত্মহত্যা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বলে রাখি যে ট্রেন আসতে আরো তিনঘণ্টা বাকি।
আবির তখন অন্যদিকে তাকিয়ে বললো।
–“আমি তোমার মত পাগল না যে আত্মহত্যা করবো।
এই বলে আবির উঠে যাচ্ছিলো তখন তানিয়া আবিরের হাত ধরে তাকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো
–“ছেড়ে চলে যাচ্ছো? তালাকের পেপার কি তোমার আব্বু সাইন করবে? দেখো এতটা জলদি নেই কিন্তু ট্রেন আসতে যেহেতু তিনঘন্টা আছে সেহেতু আমরা এখানে বসে গল্পসল্প করতে পারি।
তানিয়া আবিরকে টেনে নিয়ে বসিয়ে বললো।
–“তো মিস্টার আবির। তুমি আমাকে যে চিঠিটা দিয়ে গিয়েছো সেটা নিয়ে কিছু কথা বলার ছিলো।
প্রথম প্রশ্ন -“এমন কোন অসুখ আছে যা ডাক্তার বৈদ্য দিয়েও সারানো যায় না?
–“এইডস।
–“উহু হয় নি। রোগটার নাম লাভ।
দ্বিতীয় প্রশ্ন -“তোমার চিঠিতে মেয়েটার ঘর নোংরা করার অভ্যাস ছিলো। প্রথম প্রথম তুমি বকা দিতে মেয়েটাকে, কিন্তু পরে গিয়ে আর বকাও দিলে না। তবুও মেয়েটা ময়লা করা বন্ধ করলো না। কেন বলো তো?
আবির ঠোঁট বাকিয়ে দিলো। এর অর্থ সে জানে না।
তখন তানিয়া এবার জবাব দিলো।
–“কারণ মেয়েটার তোমার বকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো। আর আমার গবেষণা অনুযায়ী ওই মেয়েরও তোমার প্রতি ভালোবাসা জন্মে গিয়েছিলো।আর তুমি এতটাই বোকা যে ওই মেয়েটাকে ছেড়েই চলে যাচ্ছো।
আবির তখন অবাক হয়ে তানিয়ার দিকে তাকালো।
আবিরকে অবাক হতে দেখে তানিয়া ভাব নিয়ে বললো।
–“এখন তুমি যদি স্টেশন এর সব মানুষের সামনে হাঁটুতে ভর দিয়ে সেই মেয়েকে প্রপোজ না করো তবে মেয়েটা তোমাকে কথা দিচ্ছে যে সে তোমার সাথে ঢাকা যাবে না।
এই বলে তানিয়ে ঘুরে চলে যাচ্ছিলো আর আবির তার হাত ধরে তাকে থামিয়ে দিলো। তারপর হাঁটুর উপর ভর দিয়ে তানিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো আবির আর বললো।
–“সো, মিস তানিয়া। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন?
–“না। (তানিয়া বললো)
–“তো আর কিভাবে প্রপোজ করবো? (আবির মুখে বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বললো)
–“আমাদের বিয়ে তো হয়ে গেছে। তুমি আবার বিয়ের প্রপোজ কেন করছো?
–“ঠিক আছে তাহলে অন্যভাবে করি।
–“না লাগবে না আর। উঠো।
তারপর আবির উঠে দাঁড়াতেই তানিয়া তাকে সকলের সামনে জড়িয়ে ধরলো।
এমন সময় স্টেশনের কোনো এক মাইকে বেজে উঠলো।
“হার ঘাড়ি বাদাল রাহি হেয় রুফ জিন্দেগি।
চাও হেয় কাভি,কাভি হেয় ধুপ জিন্দেগি।
হার পাল ইয়হা, জি ভয়ার জিও
জো হে সামা…. কাল হো না হো।.
.
.
সমাপ্ত……………
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)