গল্প :- প্রেমকাহন
পর্ব :- ০৩
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
-: সকালে ফুফু এসেই ধাক্কাতে ধাক্কাতে তানিয়াকে ঘুম থেকে তুললো। তানিয়া চোখ মেলে তাকাতেই ফুফু বললেন।
–“তোকে বলার পরেও জামাইর সাথে না শুয়ে নিচে শুয়েছিস।
–“তুমি রুমে কি করে এলে?
–“জামাই ঘুম থেকে উঠলো ঘন্টাখানেক হয়েছে আর তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস। তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা বানা।
তখন তানিয়া ধড়পড় করে উঠে বসে বললো।
–“কি আমি নাস্তা বানাবো?
–“হ্যা, তুই না তো কে বানাবে?
এই বলে ফুফু টানতে টানতে তানিয়াকে নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকালেন।
তারপর ফুফু আর আবির ডাইনিং টেবিল এ বসে আছে। আর তানিয়া তখন নাস্তা এনে টেবিলে রাখতেই দুজনে হা হয়ে গেলো। কারন পোড়া রুটি আর পোড়া অমলেট। তখন ফুফু রেগে গিয়ে বললেন।
–“তুই পাউরুটি ও টোস্ট করতে পারিস না?
–“এমন ভাব করছো যেন আমাকে কখনো শিখিয়েছ? (তানিয়া মুখে ঝামটা দিয়ে জবাব দিলো)
–“আচ্ছা আজ থেকে আমি তোকে রান্না শেখাবো।
এরপর থেকে ফুফু চব্বিশ ঘন্টা তানিয়াকে নিয়ে রান্নাঘরে পড়ে আছেন। বিভিন্ন রকম রান্নাও শিখিয়েছেন।
চারদিন পর আজ ফুফুর চলে যাওয়ার সময় হয়েছে।তানিয়া আর আবিরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফুফু গাড়িতে উঠে বসলেন।
ফুফু যাওয়ার পর আবির আনমনেই বলে উঠলো।
–“ফুফু অনেক ভালো মানুষ তাইনা?
–“হুম তা তো অবশ্যই। আমার দেখা বেস্ট মহিলা উনি।
এবার তানিয়া হুট করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–“আর তোমাকে বলছি। এতদিন ফুফুর জন্য সব কাজ করেছি। আর না। এখন যাও আমার জন্য কফি নিয়ে আসো।
–“আমি?
–“হুম তুমি।
তানিয়া তখন আবিরকে ঠেলে রান্নাঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।
কিছুক্ষণ পর আবির তানিয়ার হাতে কফি দিয়ে বললো।
–“একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
–“কি কথা?
–“যদি বিকি কখনো ফিরে আসে তবে কি তুমি চলে যাবে?
কথাটা শুনে তানিয়া কিছুক্ষণ আবিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো।
–“আমি জানিনা। হয়তো চলে যাবো বিকির কাছে।আসলে আমরা মেয়েরা না ইমোশনাল পুল একেকটা।বিকি আসলে আমিও হয়তো ইমোশনাল হয়ে পড়বো।
আবির তখন কিছু না বলে শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। এই মুচকি হাসির মধ্যে এক ধরণের হাহাকার ছিলো যা তানিয়ার চোখ এড়ায়নি।
.
.
বিকেলে সাজ্জাদের সাথে মাঠে দেখা করতে এসেছে আবির। আবিরকে দেখেই সাজ্জাদ জিজ্ঞেস করে উঠলো।
–“কিরে? তুই আমাকে বললি দশ বারোদিনের জন্য আফার বাসাই যেতে। আজকে চৌদ্দদিন হয়ে গেছে।
–“সাজ্জাদ তোকে কিছু কথা বলবো আমার বিয়ে নিয়ে।
–“কি কথা?
এরপর আবির তার বিয়ে কিভাবে দুর্ঘটনাবশত হয়েছিল তা সাজ্জাদকে বললো। সব শুনে সাজ্জাদ বললো।
–“তো এখন তোর হার্ট এট্যাক এর যে নাটক টা করছিলি ওইটা কন্টিনিউও কর।
–“সেটা আর আমি করতে পারবো না রে।
–“কেন?
–“আমি তানিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওর দুষ্টামি, ওর রাগ, হাসি সব আমাকে পাগল করে দেয়।
–“ভাবি কি ভাবে তোর ব্যপারে?
–“সেটা আমি জানিনা।
–“দেখ, তুই যদি ভাবিকে ভালোবাসিস তাহলে গিয়ে সোজাসুজি প্রপোজ কর। সম্পর্কটা যদি নষ্ট হওয়ার তাহলে এমনেই হবে। আর ভাবিও যদি তোকে ভালোবাসে তাহলে তো সব ঠিকই হয়ে যাবে।
–“সত্যিই কি প্রপোজ করবো?
–“হ্যা, কর।
.
.
রাত্রে বাসাই ঢুকা মাত্রই আবিরের নাকে বিরিয়ানির গন্ধ ঢুকলো। রান্নাঘরে ঢুকে দেখলো তানিয়া বিরিয়ানি রান্না করেছে। আবির তখন মুখে দুষ্টামির হাসি ফুটিয়ে বললো।
–“কি ব্যপার আজ হঠাৎ?
–“কিছু না। তোমার জন্য রান্না করতে ইচ্ছে করলো তাই করলাম।
–“বাহ বাহ। দেখি তো কেমন হয়েছে?
আবির প্লেটে বিরিয়ানি নিয়ে চামচ দিয়ে কয়েক চামচ মুখে দিয়ে বললো।
–“বাহ, চমৎকার।
–“তাহলে আমিও খাই।
এই বলে তানিয়া এক চামচ মুখে দিতেই ওয়াক থু বলে ফেলে দিলো। তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–“লবণ অনেক বেশি। কি করে খেলে।
–“ও এমন কিছু না। তুমি এতটা কেয়ার করে আমার জন্য রান্না করলে সেটাই আমার জন্য অনেক। আর তাছাড়া লবণ কামানোর জন্য কয়েকটা আলু সেদ্ধ করে দিয়ে সামান্য টমেটো কেচাপ দিলেই হয়ে যাবে।
আবিরের কথামত তানিয়া বিরিয়ানিতে লবণ কমিয়ে নিয়ে এলো। এরপর দুজন একসাথে খেয়ে নিলো।
আজ বাসন ধোয়ার জন্য তানিয়াকে আর বলতে হলো না। সে নিজেই বাসন ধুয়ে দিলো।
রাতে তানিয়া সোফায় শুতে গেলো। তখন আবির এসে বললো।
–“তুমি চাইলে খাটে শুতে পারো।
তানিয়া তখন চোখ ট্যাড়া করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–“আজ মত চেঞ্জ করলে কেন? কোন উদ্দেশ্য আছে নাকি?
–“এতই যখন সন্দেহ করছো ঠিক আছে তুমি এখানেই ঘুমাও।
এই বলে আবির যখন চলে যাচ্ছিল তখন তানিয়া বললো।
–“না,না,না ঠিক আছে চলো।
.
.
তারপর আবির বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো মাঝে বালিশ দিয়ে তানিয়া অন্যপাশে শুয়ে পড়লো।
আবির ল্যাপটপ এ নিজের গল্প সেইভ করছিলো এমন সময় তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো তানিয়া মোবাইলে কিছু পড়ছে। আবির তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো।
–“কি পড়ছো?
–“ফেসবুকে একজন লেখকের গল্প পড়ছি।
–“নাম কি লেখকের?
–“লেখকের নাম Kabbo Ahammad। আর উনার নতুন গল্পের নাম #প্রেমকাহন। উনার আরো অনেক গল্প আছে। তার মধ্যে
#ভাবি_যখন_বউ
#বদলে_যাওয়া_জীবন অন্যতম। যেটা বেশিরভাগ পাঠকই পছন্দ করেছে।
–“ওয়াও গ্রেট। নতুন কি গল্প লিখবেন উনি?
–“উনার নতুন গল্প মে বি “পুনর্জন্ম”। নতুন জীবন আর ইরা নামের এক মেয়ের স্বপ্নে দেখা কিছু কাহিনীর উপর গল্পটা এগিয়ে যাবে। যেটা সম্পূর্ণ রহস্য আর থ্রিলার এ ভরে রাখবে পাঠকের মন।
–“বাহ, তাহলে তো আমাকেও পড়তে হবে
#পুনর্জন্ম গল্পটা।
–“হুম। আমি তো অবশ্যই পড়বো।
সকালে আবির পরিচালকের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পর তানিয়া সোফায় বসে ছিলো। এমন সময় দরজায় টোকা পড়তেই তানিয়া গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আর দরজা খুলতেই চমকে কয়েক পা পিছিয়ে এলো সে।
কারন দরজার বাইরে বিকে দাঁড়িয়ে আছে।
তানিয়াকে দেখেই বিকি দৌড়ে এসে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। তানিয়া তখন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অবাক হয়ে বললো।
–“বিকি তুমি?
–“হ্যা তানিয়া আমি। কিন্তু তুমি এটা কি করলে? বিয়ে করে ফেললে?
–“তো কি করবো? তুমি তো সেদিন এলেনা। কেন এলেনা তুমি? (তানিয়া রেগে গিয়ে বললো)
–“তানিয়া, সেদিন আসার পথেই আমার বাইক এক্সিডেন্ট হয়। ডান পা তে ফ্রেকচার হয়েছিলো।বারোদিন হাসপাতালে ছিলাম আমি। মোবাইল ও ছিলো না। কি করে যোগাযোগ করতাম আমি? আজ তোমার বাড়িতে তোমার বন্ধু পরিচয়ে গিয়ে জানতে পারলাম তুমি বিয়ে করে এখানে চলে এসেছ। তানিয়া চলো প্লিজ।
বিকি তানিয়ার হাত ধরতেই তানিয়া হাত সরিয়ে বললো।
–“বিকি তুমি এখন যাও। আমি এখন কিছু ভাবতে পারছি না। তুমি যাও প্লিজ।
–“তানিয়া…..
–“বিকি যাও তো।
তারপর বিকিকে কিছু না বলতে দিয়ে তানিয়া দরজা লাগিয়ে দিলো। বিকি চলে যেতেই তানিয়া বুঝতে পারলো না যে সে কেন বিকির সাথে যেতে আগ্রহী না।কেন সে বিকির প্রতি আর কোনো আগ্রহ পাচ্ছে না?
তবে সে এটুুকু জানে যে আবিরের মোহে পড়ে গেছে সে। আবিরকে ছাড়তে পারবে না সে।
বিকেলে আবির বাসাই এসে দেখলো তানিয়া মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তানিয়াকে জিজ্ঞেস করার পরেও সে আর কিছুই বললো না।
.
.
রাতে আবির প্ল্যান করলো যে আগামীকালই সে তানিয়াকে প্রপোজ করবে।
তাই পরদিন বিকেলে আবির ফুলের দোকানে গেলো ফুল কিনতে। ফুল কিনে বাইকে করে সে বাড়িতে চলে এলো। আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
তখন বাড়ির বাইরের দরজার সামনে আসতেই আবির পুরুষ মানুষের জুতা দেখতে পেলো। তাই সে বাসাই ঢুকে সোজা বারান্দায় গিয়ে দেখতে পেলো। তানিয়ার সাথে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আবির বুঝতে পারলো এই ছেলেটা বিকি। তাই সে হুট করে ফুলগুলো নিজের পেছনে লুকিয়ে ফেললো।
.
.
চলবে…………
.
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)