গল্প :- প্রেমকাহন
পর্ব :- ০২
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
-:”আবির সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের দরজা খুলতেই হা হয়ে গেলো। কারন।
সে দেখলো পুরো ড্রইংরুম এ আবর্জনা দিয়ে ভরে আছে। চিপসের প্যাকেটের ময়লা, পিজ্জার ময়লা, বাদামের খোসা। ইত্যাদি……
আবির তখন রেগে গিয়ে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো। তানিয়া মনের আনন্দে সোফায় বসে কিটক্যাট খাচ্ছে আর এক এক করে প্যাকেটের খোসা মেঝেতে ফেলছে। আবির তখন রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–“কি হচ্ছে এসব?
–“খাচ্ছি দেখতে পাচ্ছো না?
–“হুম সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু মেঝে কেন নোংরা করছো?
–“তা নাহলে এই খালি প্যাকেটগুলো কই ফেলবো?
–“দেখো তানিয়া। আমি কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করি। এসব ময়লা এখনি পরিষ্কার করো।
–“আমি পরিষ্কার করতে পারবো না। বাসাই এসব কাজ আমি কখনো করি নি।
–“তাহলে এই আবর্জনার মধ্যেই বসে থাকো। (আবির রেগে গিয়ে বললো।)
তখন আবিরের দিকে না তাকিয়েই তানিয়া বললো
–“আমার কোনো সমস্যা নেই এভাবে থাকতে।
এরপর আর কোনো উপায় না পেয়ে অগত্যা আবিরই এসব কিছু পরিষ্কার করতে লেগে গেলো। আবির এসব কিছু পরিষ্কার করছিলো আর তানিয়া একের পর এক চকলেট খেয়ে আবার মেঝেতে ফেলছিলো। শেষমেশ আবিরের রাগ দেখে তানিয়া খোসা ফেলা বন্ধ করে রান্নাঘরে চলে যায়।
বাড়ি পরিষ্কার করে আবির চেয়ারে বসেছে এমন সময় তানিয়া এসে আবিরের হাতে একটা কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বললো।
–“নাও কফি খাও।
–“কি ব্যপার? হঠাৎ খেদমত করছো যে? (আবির খুশি হয়ে বললো)
–“এমনিই। (তানিয়ে দাঁত সব বের করে দিয়ে বললো)
তারপর আবির মাত্র কফি মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই কুলি করে সব ফেলে দিলো। আর চোখ মুখ বিকৃত করে বললো।
–“ওয়াক থু। এগুলা কফি?
–“আমার জন্য বানিয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি দেখে তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। (তানিয়া মুখ বাকিয়ে বললো)
–“তারমানে তুমি সামান্য কফিও বানাতে পারো না? এই যোগ্যতা নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলে?
কিন্তু তানিয়া কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
.
.
.
এরপর আবির একজন সিনেমার পরিচালকের সাথে দেখা করতে এসেছে। আসলে আবিরের একটা স্ক্রিপ্ট রেডি করে দেওয়ার কথা ছিলো। আবির এসে বসতেই পরিচালক বলা শুরু করলেন।
–“তোমাকে দিয়ে লাভস্টোরি হবে না। তুমি বরং ক্রাইম স্টোরি লিখো।
–“না স্যার আমি পারবো লাভস্টোরি লিখতে।
–“কি করে পারবে? জীবনে তো কখনো প্রেম করো নি।আর আজীবন লিখে গেছো ক্রাইম নিয়ে।
তখন আবিরের হঠাৎ মনে পড়লো তানিয়া তো প্রেম করেছে। তাহলে সে তানিয়ার কাছ থেকেই প্লট লিখায় সাহায্য নিতে পারবে। আবির তাই চটপট করে বলে ফেললো।
–“আমার স্ত্রী সাহায্য করবে আমাকে।
তখন পরিচালক যেন বিষম খেলেন। আর বললেন।
–“কি স্ত্রী? তুমি বিয়ে করলে কখন? মিথ্যা কথা বলছো তাইনা?
–“না স্যার সত্যি। আমাদের লাভ ম্যরেজ। এই দেখুন ছবি।
তখন আবির নিজের বিয়ের ছবি দেখালো পরিচালককে। পরিচালক দেখে হা হয়ে গিয়ে বললেন
–“এই মালটা….
কথাটা বলেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিব্বায় কামড় দিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন আবির চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পরিচালক তখন মুহুর্তে নিজেকে আবার সামলে নিয়ে বললেন।
–“বাহ, ভাবি তো বেশ সুন্দরী। একে সিনেমায় আসা উচিৎ।
–“এখন বিশ্বাস হলো তো যে আমি লাভস্টোরি লিখতে পারবো? (আবির হেসে বললো)
–“হুম,হুম। অবশ্যই পারবে।
.
.
এরপর আবির চলে আসে,
রাতে আবির বাসায় এসে তানিয়ার সাথে বেশ হেসে হেসে কথা শুরু করলো। আবিরের আচরণ দেখে তানিয়ার মনে সন্দেহ হলো। সে তখন আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–“আজ আচরণের এত পরিবর্ত্ন কেন? নিশ্চয় কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে?
–“নাহ নাহ। আরে তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আসলে আমার একটা সাহায্য দরকার।
তানিয়া তখন মনে মনে বেশ খুশী হলো। আবিরের কথা না শুনেই সে বললো।
–“সব ধরণের সাহায্য করবো আমি তোমাকে, যদি এখন আমাকে চিকেন বিরিয়ানি খাওয়াও।
–“কিহ. এখন?
–“হুম এখন। আমার চিকেন বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে।
তখন আর কোনো উপায় না পেয়ে আবির রান্নাঘরে চলে গেলো চিকেন বিরিয়ানি রান্না করতে।
রান্না শেষ,
চিকেন বিরিয়ানি খেতে খেতে তানিয়া বারান্দায় গিয়ে বসলো। এই ঘরের বারান্দাটা তানিয়ার বেশ প্রিয়। তার মনে হয় এই বারান্দায় বাগান করলে মন্দ হয় না।
এমন সময় আবির এসে তানিয়ার পাশে বসে বললো।
–“এবার কাজের কথায় আসি?
–“ওকে বলো কি সাহায্য?
–“আমার একটা লাভস্টোরির প্লট লাগবে। দেখো তুমি তো লাভ করে বাড়ি থেকে পালিয়েছো। তোমার থেকে বেটার কে আমাকে সাহায্য করতে পারে?
–“আমার লাভস্টোরিটা তেমন খাসা না। তুমি তোমার লাইফের লাভস্টোরি কেন লিখছো না? (তানিয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো)
আবির তখন চুপচাপ,
তাই তানিয়া চোখ বাকা করে আবিরের দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো।
–“এক মিনিট। তুমি কখনো প্রেম করোনি তাইতো?
–“হুম। (আবির কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললো)
–“কেন? আই মিন দেখতে তো ঠিকঠাক হ্যান্ডসামই আছো। তাহলে মেয়েরা তোমার প্রেমে পড়ে নি কেন?
–“আসলে আমি কখনো প্রেম করতে চাই নি।
–“কেন?
–“হারানোর ভয়ে। যদি সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়? ইনফ্যাক্ট আমি কখনো বিয়েই করতে চাই নি।
–“কেন?কেন?
বলেই তানিয়া দেখলো আবিরের চোখে বিষণ্ণতার ছায়া। তানিয়া তখন কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে বললো।
–“কিছু কি হয়েছে? মানে আমাকে কি বলা যাবে?
–“আমি যখন ক্লাস ফোর এ পড়ি তখনই আম্মু-আব্বু আলাদা হয়ে যায়। এর কয়েকমাস পর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এবং আমাকে দেশে রেখে দুজনই তাদের নতুন জীবনসঙ্গীর সাথে দেশের বাইরে চলে যায়। অবশ্য বাবা টাকা পয়সা পাঠাতো প্রচুর। আর আমি নানুর সাথে এই প্ল্যাটে থাকতাম। মা মাঝেমধ্যে কল করে খবর নিতো। কিন্তু কলেজে উঠার পর নানুও আমাকে ছেড়ে পরপারে চলে যান। এরপর থেকে সাজ্জাদের সাথেই আমি এই প্ল্যাটে থেকেছি। আর একারণেই আমি কখনো কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই নি। কারণ আমি ভয়ে থাকতাম যে আব্বু-আম্মুর মত হয়তো আমার সম্পর্কও ভেঙে যাবে আর তখন আমার সন্তানের পিতামাতা থাকার স্বর্তেও এতিমের মত জীবন কাটাতে হবে। যেমনটা আমি কাটাচ্ছি।
বলতে বলতে আবিরের চোখ থেকে কয়েকফোটা পানি বেরিয়ে এলো। তানিয়ার হঠাৎ আবিরের জন্য খুব খারাপ লাগলো। তার মনে হতে লাগলো ছেলেটার মনে কত কষ্ট অথচ সকলের সামনে কি সুন্দর করেই হাসিমুখে চলে।
তখন পরিবেশটাকে স্বাভাবিক করার জন্য তানিয়া বললো।
–“তুমি আমাদের দুইজনের কাহিনীর উপর লাভস্টোরি লিখতে পারো।
–“আমাদের কাহিনী? (আবির অবাক হয়ে বললো)
–“হুম। যেমন ছেলেমেয়ের রেলস্টেশন এ দেখা হবে।তারপর তাদের দুর্ঘটনাবশত বিয়ে হয়ে যাবে। কিন্তু একসময় মেয়ে ছেলের প্রেমে পড়ে যাবে।
আবির তখন মুখে দুষ্টামির হাসি এনে বললো।
–“মেয়ে ছেলের প্রেমে পড়ে যাবে???
–“আইমিন কাহিনী তে যেমন হয় আরকি। একটু রংচঙ মাখিয়ে লিখবে। ওকে ছেলে মেয়ের প্রেমে পড়ে যাবে।
(তানিয়া কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললো)
–“মানে তোমার প্রেমে? ইম্পসিবল। তোমার মত ডাইনির প্রেমে কেউ পড়বে না। ওই বিকি না সিকি ওইটা কেমন করে পড়লো কে জানে।
–“কিহ আমি ডাইনি?
–“হুম।
–“দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
এই বলে তানিয়া আবিরকে দৌড়ানো শুরু করে।
আবির সোফা পাড় করে উঠার সময় তানিয়া তার পা টেনে ধরে আর আবির তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে সোফায় পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে তানিয়া আর আবির একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তানিয়া আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে পড়ে।
.
.
পরদিন সকালে তানিয়া তার ফুফুকে কল করে।
অপরপাশ থেকে ফুফু কল ধরতেই তানিয়া বললো।
–“কেমন আছো ফুফু?
–“এইতো ভালো। তোরা কেমন আছস?
–“আমি তো ভালো আছি। কিন্তু আবির ভালো নেই।
–“কেন কি হয়েছে? (ফুফু কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন)
–“ওর তো বুকে ব্যথা শুরু হইসে আজ কদিন ধরে।অনেক বড় ধাক্কা খাইছেনা তাই।
–“কিসের ধাক্কা?
–“ওর বাবা হার্ট এট্যাক এ মারা গেছে। আর আবির সেই ধাক্কা খেয়েছে এখন ওর হার্টেও ব্যাথা শুরু হয়েছে।
–“ওর বাবা কেন হার্ট এট্যাক করেছে?
–“কারণ ওর দাদা হার্ট এট্যাক এ মারা গেছে।
–“সে কি। এটা তো মনে হয় ওদের বংশগত রোগ।
–“হয়তো, আচ্ছা ফুফু রাখি এখন। ওর হার্টে আবার ব্যথা শুরু হয়েছে।
এই বলে ফোন রাখতেই আবির আর তানিয়া হো হো করে হেসে দেয়। আর তানিয়া তখন আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–“ফুফুকে বলেছি কথাটা। এতক্ষণে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে গেছে হয়তো।
বলেই দুজনে আবার খুব করে হেসে নেয়।
.
.
পরদিন সকালে উঠে আবির বেশ তোড়জোড় করা শুরু করে। কারণ সে নিজের নকল ডেড সার্টিফিকেট বানাতে যাবে। আবির রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হবে, এমন সময় তানিয়ার মোবাইলে ফুফুর কল আসে।
কল ধরতেই অপরপাশ থেকে ফুফু বলে উঠলেন।
–“তানিয়া কাউকে পাঠা রেলস্টেশন এ। তোদের বাসা তো চিনি না।
তানিয়া ফুফুর কথা শুনে তোতলাতে তোতলাতে বললো।
–“কিহ ফুফু? তুমি এখানে আসছো?
–“হুম।
.
.
তারপর তাদের নিয়ে আসা হলো, আবির গিয়ে নিয়ে আসছে, তখন ফুফু এসেই আবিরের বাড়িঘর সব দেখা শুরু করলেন আর বলতে লাগলেন।
–“বাহ বেশ বড় বাড়ি।
এবার আবিরের দিকে তাকিয়ে বললেন।
–“তোমার মা কোথায়?
তখন আবির কিছু বলার আগেই তানিয়া বললো।
–“ওর বাবা মা তো বিদেশে থাকতেন। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর ওর মা ওখানেই স্যটেল হয়ে গেছেন।কয়েকমাস পর আমি আর আবির ও চলে যাবো।
তানিয়ার কথা শুনে ফুফু বেশ খুশি হলেন।
ফুফু আসাতে বাড়ির সব কিছু পাল্টে গেলো। তিনি আবিরকে কোনো কাজই করতে দেননা। কারণ আবিরের বুকে ব্যথা। তাই সব কাজ তিনি তানিয়াকে দিয়েই করান।
আবিরও নকল বুকের ব্যথা নিয়ে বেশ উপভোগ করতে থাকে তানিয়ার খাটুনি।
এরপর রাতে ফুফুর সাথে কথা বলতে বলতে তানিয়া সোফায় ঘুমিয়ে পড়ছিলো। কিন্তু হঠাৎ ফুফু হুংকার দিয়ে বললেন।
–“সেকি তুই এখানে কেন ঘুমাচ্ছিস? জামাইর সাথে গিয়ে ঘুমা। ঝগড়া হয়েছে নাকি?
তানিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বুঝতে পারলোনা কি উত্তর দিবে। তাই ফুফুর কথার সাথে হ্যা তে হ্যা মিলালো।
ফুফু আবার জিজ্ঞেস করলেন।
–“কি নিয়ে ঝগড়া হলো?
তানিয়া কিছু না ভেবেই উত্তর দিলো।
–“উমম…. ও রুটি একটা বেশি খাইসে তাই ঝগড়া হইসে?
তানিয়ার কথা শুনে ফুফুর নিচের চোয়াল ঝুলে পড়লো। তখন অবাক হয়ে বললেন।
–“এটা আবার কেমন ঝগড়া?
এরপর তিনি ধাক্কাতে ধাক্কাতে তানিয়াকে আবিরের রুমে নিয়ে ফেললেন।
রুমে ঢুকেই তানিয়া দরজা লাগিয়ে দিলো। আর সোজা গিয়ে আবিরের পাশে শুয়ে পড়লো।
–“সে কি তুমি আমার খাটে কেন ঘুমাচ্ছ?
–“চুপ একদম।
–“বেশি করলে ফুফুকে সব বলে দিবো।
–“বলো গা। আমি তো খাটেই ঘুমাবো।
–“ফুফ্ফু…..
–“ঠিক আছে, ঠিক আছে নিচে শুচ্ছি।
আবির ফুফু বলে ডাক দিতেই তানিয়া ভয়ে লাফ দিয়ে নিচে গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। আর মনে মনে ঠিক করলো আবিরকে কি করে জব্দ করা যায়।কিন্তু সে বুঝতে পারলো যে ফুফু থাকতে সে কিছুই করতে পারবে না।
.
.
চলবে………..