গল্প :- প্রেমকাহন
পর্ব :- ০১
Writer :- Kabbo Ahammad
~রেললাইনের উপর একটা মেয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।আত্মহত্যা করতে এসেছে হয়তো। তা দেখে আবির কিছুটা অবাক হয়ে গেলো। ট্রেন আসতে এখনো তিনঘণ্টা বাকি। আর মেয়েটা এখন থেকেই লাইনের উপর শুয়ে আছে।
কৌতূহল বশত আবির মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো।মেয়েটা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আবির গিয়ে রেলবিটের উপর মেয়েটার ঠিক পাশেই বসলো। তারপর মেয়েটার চেহেরা ভালো করে তাকিয়ে লক্ষ্য করলো। চেহেরাটা কেমন যেন পরিচিত-পরিচিত লাগছে। কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে। কিন্তু মনে করতে পারছে না।
আবির পাশে বসার পরেও মেয়েটা চোখ খুলছেনা দেখে আবির-ই কথা বলা শুরু করলো।
–“আবহাওয়াটা সুন্দর। কিন্তু ক্ষুধার কোনো ব্যবস্থা করলে আরো ভালো হতো।
এ কথা শুনেই মেয়েটা চোখ খুলে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–“এক্সকিউজ মি। কে আপনি? আর এখানে কেন বসলেন?
–“আমি তো উঠে যাবো এখান থেকে। কিন্তু আপনি এখানে মরতে এসেছেন তাই আপনাকে একটা কথা বলতেই হচ্ছে যে আপনার টাইমিং এ প্রচুর সমস্যা আছে।
–“মানে?
–“মানে, ট্রেন আসতে এখনো তিনঘণ্টা বাকি।
তখন সাথে সাথেই মেয়েটা ধড়পড় করে উঠে বসে বললো।
–“কিহ? এখনো তিনঘণ্টা বাকি?
–“হুম। আর এতক্ষণে আপনার ক্ষুধাও লেগে যাবে। আর এই রোদে আপনি কালোও হয়ে যাবেন।
–“হ্যালো মিঃ আমি মরতে যাচ্ছি। বিয়ে করতে না।কালো হয়ে মরবো নাকি সাদা হয়ে মরবো এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যপার। আর শুনেন আপনার এই কথাগুলো আমার ভালো লাগছে না। আর এই কথাগুলো দ্বারা আপনি আমার উদ্দেশ্য ও চেঞ্জ করতে পারবেন না। (মেয়েটা রেগে গিয়ে বললো)
–“না,না,না…আমি আপনার উদ্দেশ্য চেঞ্জ করতে আসি নাই। আমি তো চাই আপনি এখানে পড়ে মরেন।
মেয়েটা এবার অবাক হয়ে কান্না কান্না চোখে আবিরের দিকে তাকালো।
এবার আবির বললো।
–“দেখুন আমি হচ্ছি একজন লেখক। রিয়্যাল লাইফ গল্পগুলোকে আমি রংচঙ মাখিয়ে সুন্দর করে জনগণের কাছে পৌছে দিই। আর জনগণ ও বেশ পছন্দ করে। এখন আপনি যদি এখানে মরেন তাহলে আমি একটা সুন্দর গল্প হাতে পাবো। আর এরজন্য তো আমার জানা জরুরী যে আপনি কেন মরতে এসেছেন।দেখুন হাতে কিন্তু এখনো তিনঘণ্টা সময় আছে। আপনি চাইলেই আপনার আত্মহত্যার কাহিনী আমাকে বলে যেতে পারেন। না মানে যদি কোনো সমস্যা না থাকে।
–“দেখুন আপনি আপনার ম্যান্টল চেকআপ করুন।আমি মরতে যাচ্ছি এখন।
–“হুম, যার জন্য মরতে যাচ্ছেন সে জানে?
মেয়েটা এবার কিছুটা অসহায়ের মত হয়ে বললো।
–“চলুন। ওখানে গিয়ে বসি।
.
.
–“আমার নাম তানিয়া।
–“এক মিনিট। তানিয়া চৌধুরী? মাস্টার মাইন্ড স্কুলের তানিয়া?
তানিয়া অবাক হয়ে বললো
–“হ্যা, কিন্তু আপনি কি করে জানলেন?
–“আরেহ, আমি আবির। একসাথে ক্লাস টু পর্যন্ত পড়ছি আমরা।
–“আবির…? আমার ঠিক মনে পড়ছে না।
এবার আবির তার গ্যালারী থেকে ছোটবেলার কয়েকটা ছবি তানিয়াকে দেখাতেই তানিয়া চিৎকার দিয়ে বললো
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
–“অহ মাই গড। আবির? মোটু? কত হ্যান্ডসাম হয় গেছো।
–“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন বলো কেন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলে?
–“ছেলেটার নাম বিকি.
–“কি বিকি? আমার ফ্রেন্ডের একটা কুত্তা আছে ওইটার নাম ও বিকি।
–“শ্যাট আপ আবির। ওর আসল নাম বিকাল। আমি বিকি ডাকি। আমাদের রিলেশন একবছরের। আজকে বাসা থেকে পালানোর কথা। কিন্তু আমি তো পালিয়ে চলে এসেছি। ও এখনো আসে নি। আর ফোন ও বন্ধ।
–“বাসা থেকে পালিয়েছো কেন?
–“বাবা কখনো আমার পছন্দ মেনে নিবেন না। আর বাড়ির একমাত্র মেয়ে আমি। তাই সবাই চাইবে নিজেদের পছন্দের পাত্রের সাথে আমার বিয়ে হোক।এতক্ষণে তো সবাই জেনে গেছে যে আমি পালিয়ে গেছি। চিঠিও লিখে এসেছিলাম একটা। পুরো গ্রামে হয়তো কথাটা ছড়িয়ে গেছে এতক্ষণে। দাদুকে সবাই ছিঃ ছিঃ করছে হয়তো। এখন তুমিই বলো কোন মুখে আমি বাড়িতে যাবো। আর একারণেই আত্মহত্যা করতে এসেছিলাম। আর এখন মনে হচ্ছে আত্মহত্যা করতেই হবে।
–“আচ্ছা তানিয়া, আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।
–“কি আইডিয়া?
–“দেখো। আমি বিকি সেজে তোমার সাথে তোমার বাড়িতে যাবো। তারপর সেখানে গিয়ে নিজেকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করবো যে আমি বড়লোক বাবার নষ্ট হওয়া ছেলে। আমিই তোমাকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি কিন্তু তোমার কোনো ইচ্ছা ছিলো না পালানোর। আমি নিজকে খারাপ সাজাবো প্রচুর।আর আমার হাতে যেহেতু এখনো তিনঘণ্টা আছে।সেহেতু তিনঘণ্টা র মধ্যে নাটকটা করে চলে আসতে পারবো।
–“দেখতে বোকা মনে হলেও এতটা বোকা নও তুমি।
আবির তখন চোখ ছোট-ছোট করে বললো
–“যাবে? চলো।
–“হুম চলো………
.
.
.
–“ছোট হুজুরররর….তানিয়া আপামণি ফিরা আইসে।
বলেই বাড়ির দারোয়ান দৌড়াতে দৌড়াতে কথাটা গিয়ে তানিয়ার বাবাকে বললো। তানিয়ার বাবা নাহিদ চৌধুরী একজন পুলিশ কমিশনার। তানিয়া বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে এই খবরটা বাতাসের আগেই পুরোগ্রামে ছড়িয়ে গেছে। সামনা-সামনি না হলেও সবাই পিছুপিছু চৌধুরী পরিবারকে গালি দিয়েছে। তানিয়ার দাদুর ইতিমধ্যেই শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তানিয়ার আসার খবর পেয়ে তিনি এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছেন।
এদিকে তানিয়া আবিরকে বিকি সাজিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। গ্রামের ছোটবড় প্রায় সকলেই তানিয়া আর তার সাথের ছেলেটাকে দেখতে এসেছে।
আবির তখন তানিয়ার গা গেষে দাঁড়িয়ে তানিয়ার কানেকানে বললো।
–“তোমার বাবা পুলিশ কমিশনার এটা আগে বলোনি কেন?
–“আমি তো ভাবছি তুমি সব জানো। এখন বাড়াবাড়ি না করে যে নাটকটা করতে এসেছ তা শুরু করো।
তানিয়ার পরিবারের লোকদের সামনে আবির বসে আছে। সবাই আবিরকে খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তখন তানিয়ার বাবা নাহিদ চৌধুরী শুরু করলেন।
–“নাম কি?
এখন আবির মনে যেন কিছুটা সাহস পেলো।
–“আবির। (পুরো নাম কাব্য চৌধুরী আবির)
তখন পাশ থেকে তানিয়ার ফুফু অবাক হয়ে বললো।
–“কি? কিন্তু তানিয়া চিঠিতে যে লিখেছে বিকি নামের কারো সাথে পালাচ্ছে।
আবির এবার জিব্বায় কামড় দিয়ে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আবির তখন তানিয়ার ফুফুর দিকে তাকিয়ে বললো।
–“আসলে আমার নাম আবির। কিন্তু তানিয়া আঁদর করে বিকি ডাকে।
তখন তানিয়ার ফুফু অবাক হয়ে বললেন।
–“হ্যা? বিকি কেমন নাম রে তানিয়া? আমি ত কুত্তার নাম ও বিকি রাখবো না।
এটা শুনে আবির মুখ টিপে হেসে বললো।
–“জ্বী ফুফু আমিও তানিয়াকে বলছি যে এটা কুত্তার নাম। কিন্তু তানিয়া তো আমার কথা শুনেই নি।
ওদিকে তানিয়া আবার বিষদৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালো। আবির হঠাৎ লক্ষ্য করলো তানিয়ার বাবা, চাচা সবাই ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। যেন এখনি গুলি করে উড়িয়ে দিবে। আবির এবার ঢোক গিলে বললো।
–“আসলে তানিয়ার কোনো দোষ নাই। আমিই ওকে ভাগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও রাজি হয় নি।
এবার তানিয়ার দাদা আবিরের দিকে তাকিয়ে বললেন।
–“তোমার বাবা কি করে?
–“জ্বি, আমার বাবা অনেক বড় ব্যবসায়ী।
–“তুমি কি করো?
–“আমি বাবার টাকা উড়াই। এইটাই আমার কাজ। আর তাছাড়া মাঝেমধ্যে কয়েক পেক লাগিয়ে দিই, মাঝেমাঝে ক্লাবে পার্টিতেও যাই। (আবির হেসে জবাব দিলো)
তানিয়ার দাদা তখন কিছুটা হতাশ হলেন। তিনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই তানিয়ার ফুফু বললেন।
–“আমার ছেলে খুব পছন্দ হয়ছে। হ্যান্ডসাম আছে, বাবার টাকাপয়সাও আছে আর কি লাগে?
তখন তানিয়া আর আবির মুখ হা করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। এবার তানিয়ার ফুফু তানিয়ার দাদাকে অন্যরুমে ডেকে নিয়ে বুঝাতে লাগলেন।
–“দেখো বাবা। ছেলে কিন্তু প্রচুর সৎ। নাহলে কেউ কি নিজের খারাপ গুণ কারো সামনে এভাবে বলে? আর ছেলে যদি খারাপ হতো তাহলে তো তানিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যেত। আমাদের কাছে আসতো না। আর একটা কথা, সবাই জেনে গেছে তানিয়া বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। এখন ওর বিয়ে দেওয়াও কষ্ট হবে।তারচেয়ে ওদের দুজনের আজকেই আমরা বিয়ে পড়িয়ে দিই। সবদিক দিয়ে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
–“সব ঠিক আছে। কিন্তু ছেলের ঘরবাড়ি, বাবা-মা না দেখে আমরা কি করে মেয়েকে তুলে দিব?
–“দেখো বাবা। তানিয়া যেহেতু ছেলেকে পছন্দ করেছে সেহেতু ছেলের ঘরদোর ভালোই হবে।
তখন তানিয়ার চাচিরা এসেও তানিয়ার ফুফুর কথায় মত দিলেন।
.
.
এদিকে আবির আর তানিয়া ভেবে নিয়েছে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তানিয়ার দাদা এসে বললেন যে এখন এই মুহূর্তেই তানিয়া আর আবিরের বিয়ে হবে।
তারপর সামান্য কিছু মানুষ আর কাজী কে ডেকে তানিয়া আর আবিরের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো। তানিয়া তার বাবাকে প্রচুর ভয় পায় তাই সে মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারেনি। আর আবির তো এসব দেখে এখন শুধু অজ্ঞান হওয়ার অপেক্ষায়।
.
.
তারপর ট্রেনে করে আবির আর তানিয়া ঢাকায় আবিরের বাড়িতে যাচ্ছে। আবির বিশাল এক ফ্ল্যাটে একা থাকে এক বন্ধুর সাথে। ফ্ল্যাটটা আবিরের বাবার।বলতে গেলে আবির বেশ বড়লোক বাবার ছেলে। মাসে মাসে তার বাবা তার জন্য বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে দেয়। টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় আবির বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে দিতে পারে।
এরপর তারা ঢাকা চলে এলো। তানিয়াকে বাইরে রেখে আবির ঘরে ঢুকতেই তার বন্ধু সাজ্জাদ চিল্লানো শুরু করলো।
–“তোর কোন সকালে আসার কথা আর তুই এখন আসছিস?
আবির কিছু না বলে তানিয়াকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসলো। সাজ্জাদ তানিয়াকে দেখে হা হয়ে গেলো।
–“আরেহ ইয়ার, এত সুন্দরী মেয়েটা কে?
–“আমার বউ.
–“কি? তুই বিয়ে কখন করলি? আর আমাকে পর্যন্ত জানালি না?
–“তুই এক কাজ কর। তুই এবার তোর বোনের বাসাই চলে যা। দশ বারোদিন পর আবার চলে আসিস।
–“কেন দশ বারোদিন পর ভাবি কয় যাবে?
–“সব পরে বলবো। তুই এখন যা।
তারপর সাজ্জাদ তার গাট্টিগোচ্ছা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
সাজ্জাদ বেরিয়ে যেতেই তানিয়া এলোপাথাড়ি আবিরকে কিলঘুষি মারতে লাগলো আর বলতে লাগলো।
–“খুব হিরো সাজার শখ হয়েছিল তাইনা? সুন্দরি মেয়ে দেখলেই হিরো সাজতে ইচ্ছা করে?
আবির তানিয়ার হাত ধরে তাকে সোফায় বসিয়ে বললো।
–“আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।
তানিয়া চোখ ছোট ছোট করে বললো।
–“কি আইডিয়া?
–“দেখো। এক সপ্তাহ পর তুমি ফুফুকে কল করে বলবে আমার বুখ ব্যথা করতাছে। যদি জিজ্ঞেস করে কেন তবে বলবে বাবা হার্ট এট্যাক করে মারা গেছে সেই ব্যথা আমি সহ্য করতে পারিনি তাই। আর এর তিনদিন পর ফুফুকে ফোন করে বলবা আমি হার্ট এট্যাক করে মারা গেছি। আমি একটা নকল ডেড সার্টিফিকেট তৈরি করে দিবো। ওইটা নিয়ে সবাইকে দেখাবে তুমি। বাস্, তুমি তোমার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়।
কথাটা শুনে তানিয়া খুশি হয়ে বললো।
–“বাহ, তোমাকে দেখলে চালাক মনে হয় না। কিন্তু আসলে তোমার মাথায় ভালো বুদ্ধি আছে। আচ্ছা ঠিক আছে আমি ঘুমাবো এখন।
এই বলে তানিয়া আবিরের রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখন আবির তাকে টেনে ধরে বললো।
–“এক মিনিট, এক মিনিট। ঘরে জায়গা দিয়েছি তাই বলে এই না যে রুমেও জায়গা দিবো। তুমি ড্রইংরুম এ সোফায় ঘুমাবে। আর আমি রুমে ঘুমাবো।
এই বলে আবির দৌড়ে গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো। তানিয়া একরাশ রাগ নিয়ে সোফায় শুতে শুতে বললো।
–“দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি মজা।
.
.
চলবে……………..