#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০ (চিঠি নং ০৫)
(বঙ্গবাণী~দেশ মাতৃকার নিরব কথন)
প্রিয়,
হতাশার হুতাশনে যবে আমি দগ্ধ হইয়াছি মর্মজ্বালায়, সবে কিছু নবীন প্রত্যুষে প্রত্যুদ্গত হইয়া দূর করিয়াছে মোর বক্ষের নির্মম শূলগুলিকে। শিরবিদ্ধ হরিণীর মত চকিতে চাহিয়া আমি তাদের আপন আলয়ে স্থান দিয়াছি, একটু শান্তি খুঁজিয়া নিতে তাহাদের আমি গভীর মমতায় আগলে রাখিয়াছি। তবু আশায় নৈরাশ্য করিল তারা আমায় কোন মহিতে? আমার রমনীকূলের সম্ভ্রম নিয়া ছিনিমিনি খেলিয়া বর্বরোচিত কাণ্ডের কর্তা হইলো তাহারাই। আমার নিরপরাধ সন্তানদিগকে খুন করিতে তাহাদের বিন্দুমাত্রও কুণ্ঠাবোধ হইলো না। বিবর্জিত ইতিহাসের ব্যবচ্ছেদ করিতে যাহারা আগাইয়াছে, তাহারাই আজ কলুষিত করিল, কলঙ্কিত করিল আমার গর্বিত ইতিহাসকে। কিসের দ্বারা চুনকাম হইবে এ পঙ্কিলতার?
আমি ভালবাসিয়াছি আমার সকল সন্তানদিগকে, সেহেতু তাহাদের কারো নিন্দা করিবার বোধ আমার নাই। তবু আজ আক্ষেপের সহিত বলিতে হইতেছে যে, আমি তাহাদের কাছে জীবন্মৃত। আমাকে জয় করিয়াছে, কিন্তু আমার অন্তর্নিবিষ্ট সুখ/দুঃখকে তাহারা জয় করিতে পারে নাই। স্বাধীন বলিয়া আখ্যা দিইয়াছে, কিন্তু আমার সন্তানগুলিকে স্বাধীন করিতে পারে নাই। আমার সন্তানেরা বাড়িয়া উঠিয়াছে আমারই বুকে, বোবা বাদী হইয়া। তাহারা কাপুরুষোচিত আচরণে আজ লজ্জিত নহে, তাহারা আজ কুকর্ম সম্পাদনে বীরত্ব প্রদর্শন করিয়া থাকে। আমার বক্ষ হইতে স্বেচ্ছাচারী, ধোকাবাজ শ্বেত ভালুক (ইংরেজ)-দের তারাই ঠিকই উৎখাত করিয়াছে, কিন্তু তাহাদের মতাদর্শ মানিয়া আজও নিরব গোলামী করিতেছে। তাহারা ভুলিয়াছে স্বসংস্কৃতি, তাহারা আজ মায়ের বুলি আওড়ালে অভদ্রোচিত মুর্খতা বলে। তাহারা বিদেশি ভাষায় বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হইয়া তৃপ্ত হয়। দেশমাতৃকার ঋণ তাহারা শোধ করুক এ আমার কাম্য নহে, আমি কেবলই তাহাদের ঘুমন্ত বিবেকের উদ্দেশ্যে বলিতে চাই – “হে আমার বৃক্ষচারীরা! তোমরা তোমাদিগের পরষ্পরের সহিত সুশৃঙ্খলা বজাইয়া রাখিবে। তোমরা আমায় নিয়ে আলগা পিরিতে সগর্বিত হইয়া না ফুলিয়া, নিজেদের ভ্রাতাগণের জন্য কিছু করিবে। ক্ষুদার্থের মুখে অন্ন জোগাইবে, দাঙ্গা হাঙ্গামায় জড়াইও না নিজেদের। আমার পৃষ্ঠে বিচরিত দুষ্কৃতকারীদের শায়েস্তা করার ক্ষমতা থাকিলে শায়েস্তা করিবে, অন্যথা তাহাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিও। অবনীর শান্তিশৃঙ্খলই আমার শান্তি, তাহাতেই আমার বেদনার উপশম হইবে।”
ইতি,
বঙ্গভূমি
[আমরা দেশের কথা বলি, দেশের জন্য কত দরদই না দেখাই। কিন্তু এই মুখের ফাঁকা বুলি আওড়িয়ে আমরা কি করতে পারি?
আমাদের পৃথিবীতে কেন আল্লাহ পাঠালেন?
আমরা স্বাধীনতা দিবস মানি, বিজয় দিবস জানি… কিন্তু জানি না দেশপ্রেমের মূল্যবোধের প্রকৃত মর্ম। আমরা জানি না যে, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখলে, ইসলামী চিন্তাধারায় সমাজ গড়লে, অন্যায় অপরাধ মুক্ত করলেই আমরা মূলত প্রকৃত দেশসেবক, আদর্শ নাগরিক এবং আল্লাহর কাছে যাবার প্রেরণায় অনুপ্রাণিত।
কাল্পনিক চিত্রটি এই আদর্শেরই প্রতিফলন, এখানে কল্পিতরূপে দেশ তার সন্তানতুল্য নাগরিকদের কিছু বলতে চায়… ]
____মারইয়াম জামীলা (মাইশা জাফরীন)