প্রিয় “হৈমন্তী” – Orshiya Shohid Anu

0
521

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
~চিঠিঃ-০৮

[রবী ঠাকুরের “গল্পগুচ্ছ” গ্রন্থ থেকে ৮০+ ছোটগল্পের নাম দিয়ে সাজানো চিঠি]

প্রিয় “হৈমন্তী”,

ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে সেদিনের সেই “ঘাটের কথা” কি মনে পড়ে আজ তোমার? মনে পড়ে কি সেই “একরাত্রি” পার করেছিলাম দুজন দুজনের নয়ন পানে চেয়ে! তারপরই তো “মেঘ ও রোদ্র” পোহাতে শুরু করলাম আমরা একসাথে৷ পথের ধারের “বোষ্টমী” “ভিখারিণী” আমাদেরকে একসাথে দেখেলেই ডেকে বলতেন “একটা আষাঢ়ে গল্প” শুনবি আয়।

“কাবুলিওয়ালা” জেঠুর থেকে রোজ নতুন নতুন আয়না “উদ্ধার” করে নিজেকে দেখার বায়না করতে তুমি।
“ভাইফোঁটা” এগিয়ে এলো, সেদিন তোমার ” দিদি” আমাকে ফোঁটা দিয়ে দিদি-ভাইয়ের “দেনাপাওনা” শোধ করলেন। “খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন” এর দিন “রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা” আর “তারাপ্রসন্নের কির্তী” দেখে গ্রামের সকলে কি আনন্দটাই না পেয়েছিল!

সেই যে “রবিবার” “নিশীথে” তোমার সাথে দেখা করতে গিয়ে “ল্যাবরেটরি” ঘরের পাশ থেকে আমাদেরকে ধরে ফেললেন তোমার “ঠাকুরদা”। “প্রতিবেশিনী” “সুভা”, “রাসমণির ছেলে”, “হালদারগোষ্ঠী”, সবাইকে এমনভাবে হাকডাক দিলেন যেন তিনি কোন “চোরাই ধন” পেয়েছেন। আমাকে তিনি সকলের সমুখে “বদনাম” করলেন, আর তোমাকে পণ করালেন যেন তুমি আমাকে ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে পারো। সেই “পণরক্ষা” করতেই তুমি “মাল্যদান” করলে অন্য পুরুষের গলায় এদিকে তোমাকে হারিয়ে আমি হলাম “নষ্টনীড়”।

তুমি তখন অন্য বাড়ির “গিন্নি”, আর আমি দিন রাত নাওয়া খাওয়া ভুলে মৃতপ্রায় “কঙ্কাল” হয়ে গেলাম তোমার শোকে। তার কিছু দিবস পরই “পোস্টমাস্টার” এর নিকট হতে তোমার চিঠি পেলাম। তুমি লিখেছিলে “সম্পত্তি-সমর্পণ” সংক্রান্ত কারণে তোমার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। তোমার “সদর ও অন্দর” না বুঝেই তারা তোমাকে “ত্যাগ” করেছেন। সেই “শেষের রাত্রি” সকল “প্রতিহিংসা” ভুলে “ক্ষুধিত পাষাণ” হয়ে ছুটলাম তোমাকে আনতে।

তোমাকে আবার করে পেয়ে সেদিন মনে হয়েছিলো যেন আমি “মণিহারা” “মুকুট” পেয়েছি, সে যেন আমার কাছে ছিল “রিতীমত নভেল”। সকল ” মানভঞ্জন ” শেষ করে আমার জীবনের “খাতা” আবারো নতুন করে “সংস্কার‍” হলো। “পাত্র ও পাত্রী” হলাম আমরা দু’জনে, অনন্ত “দৃষ্টিদান” করলাম “শুভদৃষ্টি” এর সেই ক্ষণে। “যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ” আর “রাজটিকা” লাগিয়ে আমার সেই “দুরাশা” জীবনের “শেষ পুরষ্কার” হলে তুমি।

কিছু দিবস স্বামী হিসেবে “পয়লা নম্বর” এই থাকলাম। আমি ছিলাম তোমার জীবনের “চিত্রকর” আর তুমি ছিলে আমার এ হৃদয়কুঠুরির একমাত্র “তপস্বিনী”। দূর শহরে পাড়ি দিলেই “স্ত্রির পত্র” যেন আমার সকল বুদ্ধিকে “দুর্বুদ্ধি” করে ফেলতো। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল।

হঠাৎ করেই কিভাবে জানি তোমার আমার মাঝে
“ব্যাবধান” এর সুর বেজে উঠলো। সে সুর এতোটাই বিশাল হয়ে গেছিল যে তার রেশ ধরে আজ তুমি আমার কাছে “অপরিচিতা”। তোমার জীবনে হয়তো আমি “অনধিকার প্রবেশ” করেছিলাম। তোমার সকল “ইচ্ছাপূরণ” করতে আমি ব্যার্থ ছিলাম, আজ তাই হয়তো সম্পর্কের “জয়পরাজয়” এর গল্পে পরাজয় হলো আমার ভালোবাসার৷

কখন যে ভালোবাসার মাঝে “করুণা” এসে গেল বুঝতেই পারিনি, আমার জীবনের “মধ্যবর্তিনী” তোমার কাছেই আমি হয়ে গেলাম “আপদ”৷ ” মাষ্টারমশায়” বলতেন “কর্মফল” একদিন ভোগ করতেই হয়। “ডিটেকটিভ” “অধ্যাপক” “মহামায়া” শুনিয়েছিলেন “একটি ক্ষুদ্র পুরাতন গল্প” যা ছিল “গুপ্তধন” নিয়ে। তুমিও তো আমার জীবনে তার ন্যায় “স্বর্ণমৃগ” হয়েই ছিলে। তবে কোন পাপের “প্রায়শ্চিত্ত” স্বরুপ আমার জীবনকে “নামঞ্জুর গল্প” বানিয়ে দিলে তুমি? “দর্পহরণ” এর ন্যায় তুমি “প্রগতি-সংহার” করে আমার জীবন থেকে সকল সুখের “ছুটি” কেন দিয়ে দিলে বলতে পারো?

এ জীবনের “সম্পাদক” তো তুমি ছিলে না তবে কেন “বিচারক” হতে গেলে! আমার এ জীবনকে দুঃখ দিয়ে রাঙিয়েই যখন দিলে, তবে সে দুঃখ হতে “মুক্তির উপায়” কেন বলে গেলেনা? হয়তো সম্পর্কের সকল “সমস্যাপূরণ” আমি করে উঠতে পারিনি, তাতে আমি বরাবরই “ফেল” করেছি, তা বলে এতো বড় “শাস্তি” আমাকে না দিলেও পারতে!

এমনটাই বুঝি আমাদের নিয়তি ছিল, এই বুঝি ছিল আমাদের ভালোবাসার “সমাপ্তি”!

ইতি
তোমার অপরাধী ” বলাই”

[বিঃদ্র ছোট গল্পের নাম গুলোকে আলাদা করতেই অত্যাধিক বার (” “) চিহ্ন প্রয়োগ করা হয়েছে]

-Anu

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে