প্রিয় সমুদ্র – Orshiya Shohid Anu

0
465

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
~চিঠি: ০৯

প্রিয় সমুদ্র,

এ নামটি আমারই দেওয়া, তোমাকে আমার সমুদ্রের মতোই বিশাল মনে হতো। যার বিশালতায় ডুবে থাকতে চেয়েছি প্রতিটি মুহুর্তে। অনেক বছর পর আজ চিঠি লিখছি তোমায়, একসময়কার নিত্য অভ্যেস আজ হারিয়েই গেছে বলতে পারো।

সেই প্রথম প্রেমের দিনগুলো বেশ রঙিন ছিল আমাদের। তুমি বলেছিলে ভালোবাসো আর আমি দিয়েছিলাম শর্ত! “রোজ আমাকে নতুন নতুন এক একটা কবিতা লিখে দিতে হবে। ” তুমিও খুব সহজ ভাবেই মেনে নিয়েছিলে সে কথাখানি, কাব্যিক মানুষ ছিলে, না মেনে কি আর উপায় ছিল! তোমার দেওয়া সেই সকল কবিতাগুলি আমার ঝুলিতে আজও তেমন ভাবেই সংগ্রহীত রয়েছে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছি তা নিজের সাথে, একদম ধুঁলো জমতে দেয়নি।

যখন অধিকারবোধ তীব্র হতে শুরু করলো তুমিও আমার কাছে দাবি জানলে চিঠি লিখতে হবে তোমার ঠিকানায়। আমি যদিও সাহিত্যের কিছুই বুঝতাম না, তবুও কেন জানি তোমার কবিতার পাগলী ছিলাম। আমিও রাজি হয়ে গেলাম, সেই থেকেই শুরু হলো তোমার আমার “চিঠি-কাব্যের” প্রেম। তুমি আমাকে প্রথম যে কবিতাটি লিখেছিলে মনে আছে কি তোমার? আমার কিন্তু একেবারে মুখস্ত, কি বিশ্বাস হলোনা বুঝি! প্রমাণ দিচ্ছি তবে –

“প্রেয়সী তোমার নয়নে চেয়ে
হারিয়েছি আমি শব্দ,
প্রেয়সী তোমার ও এলোকেশে
হৃদয় হয়েছে স্তব্ধ!
তোমার ও দৃষ্টের সমুখে মত্ত আমার পঙক্তি
অনল পোড়া দগ্ধ এ মনের তুমি যে শুধু প্রশান্তি।
আলতা রাঙা চরণ তোমার
শাড়ির ভাঁজেতে মোড়া অঙ্গ,
টিপ আকা ঐ কপাল মাঝে
ওষ্ঠ আমার দিতে চায় তোমা সঙ্গ,
বুক মাঝারে রাখবো বেঁধে
দেবনা কভু হারিয়ে যেতে!
আমার এ জীবনসুতো বাঁধবো প্রেয়সী
শুধুই তোমার জীবন সাথে!”

কি অবাক হচ্ছো! এতো বছর ধরে কত শত বার পড়েছি এ কবিতাখানি, মুখস্থ তো হওয়ারই ছিল। সংসার সাজাতে গিয়ে, একটু বেশিই ব্যস্ত হয়ে গেছি, তোমার সাথে একলা সময় পার করা যেন হয়েই ওঠেনা আর। তবুও আমি জানি ভালোবাসা, বিশ্বাস, আস্থা, কোনোটাই আজো কমেনি তোমার আমার মাঝে।

দিনশেষে এখনো আমার তিনবেলার খাওয়ার খোঁজ তুমি আগের মতোই নাও। মাঝে মাঝে নাতি নাতনিরা কতো হাসি ঠাট্টা করে বলে “দাদু দেখি এখনো খুব রোমান্টিক। ” তোমাকে কতো বারণ করেছি বাচ্চাগুলোর সামনে এসব না বলতে, তুমি তো শোনার মানুষ নও উল্টো তুমি বলবে “ভালোবাসি যখন প্রকাশ করতে বয়সের কি বাঁধা আছে? কথা দিয়েছিলাম একসাথে বুড়ো-বুড়ি হবো, বয়স বেড়েছে বলে কি ভালোবাসার প্রকাশ কমে যাবে নাকি আমার। ” তখনই বুঝতে পারি তুমি আজো সেই বাচ্চাটি রয়ে গেছো।

এখনো তুমি নিয়ম করে বাজার থেকে আমার জন্য হলুদ গোলাপ নিয়ে আসো, মাঝে মাঝে তো তা দেখে বৌমারা ছেলেদের সাথে ঝগড়াঝাটি শুরু করে দেয়, তাদের কথা ” বাবা এখনো মায়ের জন্য গোলাপ আনে, আর তোমরা সারাদিন কাজ নিয়ে পড়ে থাকো। ভালোবাসার বালাই নেই একেবারে। ” আমার কিন্তু সেসব ভালোই লাগে। আমার জীবনের রঙধনু ছিলে তুমি, সবসময় রঙের মেলায় সাজিয়েছো আমাকে, সারাজীবন আমি তোমার সে রঙেই সেজে থাকতে চায়।

এখন চুলে পাক ধরেছে তবুও আমি রঙিন স্বপ্ন বুণি। সে স্বপ্ন যে তুমিই আমায় দেখতে শিখিয়েছো। আজ তুমি যতই আমাকে একা রেখে ঘুমিয়ে থাকোনা কেন, আমি যে চোখ বুজে, চোখ খুলে সবসময়ই তোমাকে সমুখে দেখতে পাই।

হয়তো আর কিছুমাত্র অপেক্ষা, তারপরই তো আবারও আমি তোমার বুকে মাথা রেখে শান্তির ছোঁয়াতে রাঙাবো নিজেকে।

ইতি
“তোমার ভালোবাসার নীড়”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে