প্রিয় বাবা – Nadia sultana

0
619

#‍‍গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগীতা_২০২০
চিঠি নং-০১

প্রিয় বাবা,
বাবা পুরো একটা বছর কেটে গেল তবু তুমি এলে না। তবে জানো তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমি একটুও ক্লান্ত হয়নি। কেন জানো! আসলে আমার বন্ধুদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। ওরা ওদের বাড়ির লোকের কাছে শুনে আমায় বলেছে, তুমি নাকি আর কোনও দিন ফিরবে না কারণ নাকি তুমি চলে গেছো না ফেরার দেশে ।ওদের কথা শুনে আমার হাসিই পেয়ে গিয়েছিল। আমি জানি তুমি ফিরবে, ফিরবে , ফিরবে। তুমি করোনার প্রতিষেধক নিয়েই ফিরবে আমার দেশকে তুমি সুস্থ করে তুলবে ।
তুমি আমায় একটা গল্প বলেছিলে মনে আছে! গল্পের শেষে বলেছিলে, তুমিও ওই গল্পের নায়কের মত একটা দেশ খুঁজে বের করবে সেখান থেকে তুমি করোনার প্রতিষেধক নিয়ে ফিরবে। জানি ওমন একটা দেশ খুঁজতেই তুমি গিয়েছ।

জানো ক’দিন আগেই আমাদের স্কুলের অনুষ্ঠানের শেষে মাকে একটা মূর্তি দেওয়া হল, মা কাপড় দিয়ে চোখটা মুছে ছিল। মাকে কিছু বলতে খুব জোর করল ওরা। মা কিছু বলতে পারল না।
আমায় দেখে সবাই মুখ দিয়ে এমন একটা আওয়াজ করতে লাগল যেন আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে। মাইকটা আমার সামনে দিলে আমি বলতাম আমার বাবা হারিয়ে যায়নি, খুঁজতে গেছে। খুঁজতে গেছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা, আর আন্তরিকতাকে। এ কথাটা কেন মনে হল জানো? তুমি চলে যাওয়ার পর টিভিতে যতবার তোমার আর করোনার প্রতিষেধকের কথা দেখিয়েছে ততবার বাড়ির ফোনটা বেজেছে, কলিংবেলে আওয়াজ হয়েছে। সবাই এসে মাথায় হাতও বুলিয়েছে। কিন্তু তুমি শিখিয়েছিলে না, আসল ভালবাসা আর মেকি ভালবাসার ফারাক কীভাবে ধরা যায় সেই পদ্ধতিটা। তাতে করে বুঝে গেছি ওরা ঠিক ভালবাসে না। তুমি থাকলে তুমিও এমনটাই ভাবতে….
দেখো তোমায় আর একটা কথা বলতে ভুলে গেলাম তুমি চলে যাওয়ার পর মা ক টা দিন কিচ্ছু খায়নি। টিভিতে, কাগজে, ম্যাগাজিনে কটা দিন শুধু তোমার আর ওই প্রতিষেধকের কথা। তারপর আস্তে আস্তে সবাই ভুলে গেল। মা একটা চাকরি পেল। মাঝে আরও আপন মানুষ হারিয়ে গেলো, তখন আমাদের বাড়ির সামনে ক দিন ক্যামেরার ভিড় ছিল, তোমার কথা হচ্ছিল, মা ইন্টারভিউও দিল। তখন ভেবেছিলাম তুমি হয়তো এবার আসবে। কিন্তু না…এবারও তুমি এলে না।
ওইদিন মাও বলে দিলো তুমি চলে গেছো না ফেরার দেশে তোমাকে খেয়ে নিয়েছে প্রানঘাতী করোনা। আমি মায়ের সঙ্গে তর্ক করেছিলাম। মা তখন চুপ করেছিল।

সবাই আস্তে আস্তে ভুলে গেল। জানি সবাই ভুলে যাবে, শুধু আমি ভুলব না।
স্কুলে একটা রচনা লিখতে দিয়েছিল তুমি কী হতে চাও এটা নিয়ে। আমি লিখেছিলাম বড় একজন ডাক্তার এবং গবেষক হতে চাই। কেন জানো! তুমি যেটা পারোনি আমি সেটা করে দেখিয়ে দিবো বাবা,দেখিয়ে দিবো আমি তোমার সন্তান। এখন খুব মন দিয়ে পড়ছি। ডাক্তার হতেই হবে।

তোমায় একটা মিথ্যা কথা বলেছি। চিঠির শুরুতে বলেছিলাম না, বন্ধুরা তুমি আসবে না বললে আমার হাসি পায়, ওটা মিথ্যে কথা। আসলে আমার কান্না পায়।

এখন ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে মাঝে মাঝে শুনতে পাই না তুমি আসবে শুধু শুনতে পাই আসবে না, ধ্বংস হয়ে গেছে, সবাই মারা গেছে। বাবা তুমি ফিরে এসো, এসো প্লিজ। আসার সময় কিচ্ছু আনতে হবে না।
ঠিকানা জানি না তাই লেখাটা নৌকা বানিয়ে জলে ছেড়ে দিলাম। আমি জানি লেখাটা ভেসে ভেসে তোমার কাছে যাবে। তুমি পড়ে নিজের কাছে রেখে দিয়ো। আর হ্যাঁ মাকে বলো না আমি তোমায় চিঠি লিখেছি, তাহলে খুব রেগে যাবে। মা বলে বাবার কথা সব সময় ভাববে না।

ইতি- প্রিন্স

#কলমে_নাদিয়া সুলতানা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে