#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং-০১
প্রিয় বাবা,
জানো?ছোটবেলায় মা যখন রাজকুমারির গল্প বলতো তখন ভাবতাম, ইশ!আমার জীবনেও যদি ঐ রাজকুমারির মতো একজন রাজকুমার আসতো।যে কিনা আমার ইচ্ছাগুলো নিজের ইচ্ছা ভেবে নিয়ে পূরণ করে দিবে অনায়াসে,যে কিনা আমার চাওয়াগুলো বুঝে নিবে বলার আগে আর নিরবে ভালোবেসে যাবে আমায় নিঃস্বার্থভাবে।জানো বাবা?এখন ভাবি তখনকার ভাবনাতে ভূল কি ছিল?নাহ্!কোনো ভূল ছিলো না আমার সে ভাবনাতে।স্বার্থপর এই দুনিয়াতে কেউ আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে যাক।কিন্তু বাবা আমি নিজেই এ বেলায় বড্ড স্বার্থপর ছিলাম।মা বলেছিলো আমাকে যদি তুমি আল্লাহ্ তায়ালার কাছে মন উজাড় করে কিছু চাও তবে আল্লাহ্ তোমাকে কখনও ফিরিয়ে দিবে না।জানো বাবা,সেই থেকে প্রত্যেক নামাজের পরে আমার প্রার্থনাতে ছিলো সেই মানুষটা।সব সময় ভাবতাম এখনো কেনো সে আসলো না।কিন্তু আমি এখন বুঝি আমার প্রার্থনা বৃথা যায় নি।আমার রব আমায় ফিরিয়ে দেয় নি।তবে সে আমার জন্য রাজকুমার পাঠায়নি,পাঠিয়েছে স্বয়ং মহারাজাকে।যার কাছে সত্যিই আমার ইচ্ছাগুলোই একান্ত তার নিজের ইচ্ছা।বাবা,তোমাকে আমার একটা গোপন কথা বলি কারণ তুমি তো জানোই সামনাসামনি এই কথা তোমাকে বলতে পারবো না।আচ্ছা তাহলে বলেই ফেলি আমি না প্রায়ই টের পাই রাতে কে যেনো আমার গায়ের কাঁথা ঠিক করে দিয়ে কপালে চুমু এঁকে দেয়।আরে বাবা তুমি বলা লাগবে না আমি এটাও জানি কিভাবে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে গেলে সকালে উঠে নিজেকে বিছানায় পাই।যখন আমার মন খারাপ থাকে তখন কেউ সদ্য অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এড়িয়ে দেয়ার কথা না চিন্তা করে আমার মন ভালো করার উপায় খুঁজে।সেদিন স্কুল আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো তোমার প্রিয় শিক্ষক কে?একমুহুর্ত চিন্তা না করে বলেছিলাম আমার বাবা।এই কথা শুনে তুমি স্যারদের সামনেই একগাল হেসে উঠলে। জানো বাবা,আমার প্রিয় মুহুর্ত হচ্ছে কফি নিয়ে তোমার সাথে আড্ডা।তুমি একমাত্র ব্যক্তি যে আমার ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্ররণা।আমার শক্তি।আমার শিকড়। কেউ যখন আমাকে তোর বাবা বড্ড ভালোমানুষ তখন আমি মুচকি হাসি আর মনে মনে বলি তুমি কি জানো আমার বাবা আমার কাছে আরও বেশি ভালো।আমি কখনো কারো সাথে লংড্রাইভে যাই না কেন জানো?কারণ তোমার সাথে হোস্টেল থেকে ফেরার পথে একলা রাস্তায় তোমার খালি গলায় গাওয়া গানটা যে আমায় আরও বেশি টানে।বন্ধুদের সাথে লংড্রাইভে গিয়ে আমি সেই আনন্দ হারাতে চাই না বলেই যাই না।কিন্তু আমি তো তোমাকে সে কথা বলবো না।মাধ্যমিকে উঠার পর যখন এক বড় ভাই আমার হাতে চকলেট আর প্রেমপত্র ধরিয়ে দিয়েছিলো। সেদিনও কেঁদেছিলাম আমি।আর তুমি হাসছিলে। একসময় তোমার হাসিটা আমার রাগের কারণ হয়ে যায়।আর নিশ্চুপে মাথা থেকে সরে যায় সেই ছেলেটার কথা।কিন্তু পরদিন ঐ ছেলেটাই আমাকে ছোট আপু বলায় বড্ড হেসেছিলাম।বাবা আমি কিন্তু আপু বলার রহস্যটাও জানি।জানো?বাবা ভাইয়ের মৃত্যুর পরে তুমি যখন বাড়ি ফিরছিলে তখন হঠাৎ করে ওরা বলেছিলো সেই সর্বনাশা নদীটা নাকি তোমাকে আমার কাছে থেকে নিয়ে চলে গেছে।বিশ্বাস করো বাবা,আমার মনে হয়েছিলো কে যেনো আমার সবচেয়ে বড় সম্পদটা ছিনিয়ে নিয়েছে।মনে হচ্ছিলো নিজের জীবনেরর বিনিময়ে তোমাকে ফিরিয়ে আনি।আমার জীবনের সেই দিনটি ছিল এক কালো অধ্যায়।মনে হচ্ছিলো আমি সারাজীবনের জন্য তোমায় হারিয়ে ফেলেছি।হয়তো সেদিনও প্রভু আমার উপর সহায় ছিলেন।তাই হয়তো আমার কল্পনার সেই মহান মানুষকে আমি ফিরে পেয়েছি।আজও আমার মোনাজাতে সেই মহারাজায় থাকে।কখনো বলা হয়নি বাবা ভালোবাসি,বড্ড বেশি ভালোবাসি।
ইতি,
তোমার পুচকি