#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং ১
প্রিয় পৃথিবী,
সুভাশিষ নিও। জানি, বেশ কিছুদিন ধরে তুমি ভালো নেই। গত কয়েকমাস তোমার উপর দিয়ে এক মহামারীর ঝড় বয়ে চলেছে। তুমি তো মাতৃধরণী। চোখের সামনে হাজার হাজার সন্তান প্রতিদিন ঝরে যাচ্ছে, হার মানছে এক ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে। এসব দেখে তুমি কি ভালো থাকতে পারো? আসলে আমরা কেউ ই ভালো নেই। মৃত্যুভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘরের কোণে বসে থাকাকে কি বেঁচে থাকা বলে, তুমিই বলো?
আজ পাঁচমাস হতে চলেছে তোমার সাথে আমার দেখা হয় না। তোমার নদীর কুলকুল ধ্বনি, খোলা প্রান্তর, সাঁঝের আকাশ, পানিতে টইটুম্বর ঝিল এসব কিছুই দেখা হয় না। খুব মনে পড়ে আগের দিনগুলো যখন মুক্ত পাখির মতো ছুটে বেড়াতাম পথে-প্রান্তরে, প্রাণ ভরে নিতাম বিশুদ্ধ অক্সিজেন, তোমাকে অনুভব করতাম হৃদয়গহীনে।
সেই যেদিন তোমার বুকে বিধাতা আমাকে পাঠিয়েছিলেন সেদিন থেকেই তোমার-আমার সম্পর্ক। তোমার বুকে হামাগুড়ি দিয়েছি, ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটতে শিখেছি। ধীরে ধীরে বড় হয়েছি আর জীবণ যুদ্ধে লড়তে শিখেছি…। কী হল, হাসছো? ভাবছো, সেদিনের মেয়ে হয়ে এতো কথা বলছি? তা ঠিক, তোমার ঝুলি যে অনেক অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। কত যুদ্ব, কত তুফান, কত মহামারীর সাথে পাঞ্জা লড়েই তো টিকে আছো তুমি।
আমরা, তোমার সন্তানেরাই কত আঘাত দিয়েছি তোমাকে, দূষিত করেছি তোমার নদী, সাগর, বাতাস আর মাটি। তুমি সব বুক পেতে নিয়েছো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে চালিয়ে দিয়েছি নিজেদের কর্মফলগুলোকে। আচ্ছা, এই মহামারীও কি আমাদেরই কর্মফল? তুমি কি সত্যিই কষ্ট পাচ্ছ আমাদের দুর্ভোগ দেখে নাকি খুশী হচ্ছো তোমার প্রকৃতি পুনরায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে বলে? শুনেছি নদী আর সাগরগুলোর পানি পরিষ্কার হয়ে গেছে, বাতাস শিশামুক্ত হয়েছে, সমুদ্র সৈকতগুলোতে জন্মেছে লতাপাতা, এসেছে অনেকরকম জলজ প্রাণী। সত্যিই কি তাই? তোমার এই বেপরোয়া সন্তানদেরকে আটকে রেখে বোবা সন্তানদের প্রাণোচ্ছল খেলাধুলা দেখছো প্রাণভরে?
হয়তো আমরা এই শাস্তির-ই যোগ্য। তবু ক্ষমা করো আমাদেরকে। এ অভিশাপ থেকে মুক্তি দাও। আমরা যে ভালো থাকতে চাই। তুমিও ভালো থেকো। ভালোবাসা নিও।
ইতি
তোমার এক অযোগ্য সন্তান।