#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং-৫
প্রিয় ট্যাম্পু,
আমি জানি তুই এই নাম শুনলে রেগে যাস কিন্তু আমার যে তোকে এই নামে ডাকতে খুব ভালো লাগে। আচ্ছা, কেমন আছিস? জানি উত্তর দিবি তুই সবসময় ভালোই থাকিস। তোকে অনেকদিন পর চিঠি লিখছি যদিও এই চিঠি লেখার সূত্রপাত তুই করেছিলিস বিশাল আকারের বাজারের লিস্টের মতো রোল বানিয়ে আর তারপরে প্রতিটা বিশেষ দিনের আমার বিশেষ উপহার থাকে তোর লেখা মুক্তোর দানার মতো গোটা গোটা অক্ষরমালার চিঠি। আমি না তোর বাজারের লিস্টটা হারিয়ে ফেলেছি, অনেক খুঁজেছি, পাইনি রে। আজকের লেখার সূচনায় আসি…
তোকে আজকে চিঠি লেখার মুল কারণ হচ্ছে আজ তোর জন্মদিন তাই। ভাব-সম্প্রসারণে যাওয়ার আগে তোকে জানাচ্ছি তোর মনের মতোই পবিত্র অসংখ্য রঙীন আর সুগন্ধী ফুলেল শুভেচ্ছা এবং আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে তোর জন্যে যত্নে রেখে দেওয়া এক বালতি ভালোবাসা। কী ভাবছিস? আমি জানি তুই কি ভাবছিস, তোকে আমি ভালোই বাসি না তাহলে সেটা যত্নে রাখা হলো কীভাবে! তাইতো? আচ্ছা বলছি তার আগে বলি, শুভ জন্মদিন আমার প্রিয় বান্ধবী।
এবার বলি শোন, তোকে যে আমি কতটা ভালোবাসি তা আমি নিজেও জানি না। তুই ভেবে দেখ একমাত্র তুই যার সাথে আমার প্রায় ১৬/১৭ বছরের বন্ধুত্ব, সেই নার্সারী থেকে। হ্যাঁ মানছি তখন তুই আমার বান্ধবী ছিলিস না। কীভাবে থাকতি বল? তুই তো আমার সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্র। আমি থাকতাম স্কুলের মাঠে-গাছে-রাস্তায় আর তুই পুরো সময়টা ক্লাসের এককোণে চুপটি করে বসে থাকতিস একা। তোকে নিয়ে আমরা কত যে হাসাহাসি করতাম, আবার সম্মানও করতাম কারণ তোকে দেখলে সবারই ভিতর থেকে সম্মান বের হতে বাধ্য তুই এতটাই নিষ্পাপ আর পবিত্র।
সেই সঙ্গপ্রিয় চঞ্চল আমাকে যখন দলছুট করে ২০০৭ সালে গার্লস স্কুলে ভর্তি করা হলো তখন সবার আগে তুই আমার হাত ধরেছিলিস। তারপরেই তো তোর সাথে আমার বইয়ের ভাষায় জনম-জনমের দোস্তি হয়ে গেল। মনে আছে, ক্লাসের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বসে বসে গল্প করার কথা? তুই রোজ সকালে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে প্রাইভেট পড়তে নিয়ে যেতিস আমি উঠতে চাইতাম না তাই। আমি পড়তে না গেলে তুই ও যেতিস না। আমরা স্কুলেও একসাথেই যাওয়া-আসা করতাম হেঁটে আর সারা রাস্তা আমি দুষ্টামি করতাম তুই সেগুলো দেখে হাসতি। জানিস, তুই একদিন স্কুলে না গেলে আমার নিজেকে পথহারা পথিক মনে হতো। মনে হতো আমি কাউকে চিনি না, এখানে আমার কেউ নেই। আচ্ছা দোস্তি হওয়ার আগের কাহিনী একটু মনে করিয়ে দেই তোকে। কাকতলীয় ভাবে নবম শ্রেণীতে তোর আর আমার শ্রেণী রোল আগে-পিছে ছিল। আমি বরাবরই ফাঁকিবাজ ছিলাম আর তুই পড়ুয়া ছিলিস। পরীক্ষার হলে তোকে আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর দেখাতে বলেছিলাম কিন্তু তুই দেখিয়েছিলিস না। জানিস, সেদিন তোকে খুব অহিংকারী মনে হয়েছিল আর আমার এই ভাবনাটাই পরবর্তীতে আমাকে অনেক অনুতপ্ত করেছিল।
আমার কলিজার টুম্পারানী,
তোকে লিখতে বসলে তোর সাথে কাটানো আমাদের স্বপ্নমাখা স্মৃতির ডালি খুলে যায় আমার চোখের সামনে। আমি ভেবেই পাই না কোনটা রেখে কোনটা লিখবো তারপর এক পর্যায়ে জগাখিচুড়ি একটা জিনিস তৈরি হয়ে যায়। আমি যে তোর মতো গুছিয়ে লিখতে পারি না রে।
একটা সময় ছিল যখন তোর সাথে আমার প্রায় রোজই দেখা হতো কিন্তু এখন হয়তো বছরে ২/১বার দেখা হয়। তুই বলতিস যে তুই আমার ফোনে একটা মিসকল দিতিস আর আমি তোর বাড়িতে হাজির হয়ে যেতাম কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব হয় না। তুই ভাবতেই পারিস যে আমি হয়তো তোকে অবহেলা করি অথবা তোকে আমার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবীর মতো ভালোবাসি না। বিশ্বাস কর, তোকে যে আমি কতটা ভালোবাসি তা প্রকাশ করতে পারবো না আর তোকে অবহেলা করার সাহস না আমার কখনও হয়েছে আর না হবে। তোর জায়গা আমার কাছে সব সময় আলাদা আর বিশেষ। আসলে এখন আগের মতো সময় হয় না রে আর তুই তো বাইরে বের হোস না।
জানিস ট্যাম্পু,
তুই আমার একমাত্র খুব কাছের একজন যাকে আমি নির্দ্বিধায় সব বলতে পারি। আমি যেকোনো বিপদে পড়লে তুই এতো সুন্দর করে সমাধান দিস আমাকে যেটা আর কেউ পারে না। হয়তো এজন্যেই এই দীর্ঘ ১৬/১৭ বছরে তোর সাথে আমার একদিনও মনোমালিন্য হয়নি অথবা কারণ এটাও হতে পারে যে তুই আমাকে এতটাই ভালো বুঝিস যে মনোমালিন্যের প্রয়োজনই হয়নি। সত্যিই তুই আমাকে আমার চেয়েও ভালো বুঝিস যতটা আমি তোকে বুঝি না। আমি তোকে বোঝার চেষ্টাই করিনি কখনও। তুই তো জানিস আমার বেশি কথা বলতে আর বেশি কথা শুনতেও ভালো লাগে না। এই পুরো পৃথিবীতে তুই একমাত্র মানুষ যার ঘন্টার পর ঘন্টার বিরতিহীন কথা আমি বিরক্তিহীন ভাবে শুনেছি। জানিস কেন? কারণ আমি জানি তোর কথাগুলো আমি ছাড়া কেউ শোনে না। কতদিন এমন হয়েছে যে তোর কথা শুনতে শুনতে আমার ঝিমুনি এসে যেত, আমি তবুও তোর হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর তুই বরাবরের মতো আমার হাত ধরে বসে থাকতিস। আমি একটা সময় ভাবতাম আমি যাতে তাড়াতাড়ি চলে আসতে না পারি তাই তুই আমার হাত ধরে থাকতিস কিন্তু পরে বুঝেছি, তুই আমার সাথে একাত্ম হয়ে থাকতে চাইতিস, হয়তো তুই চাইতিস আমি তোর স্পর্শের মাধ্যমে তোর ভিতরের কথাগুলোও শুনে নেই কিন্তু আমি সব সময় সফল হতে পারিনি।
টুম্পু,
তোর সরলতা, পবিত্রতা, নিষ্পাপ হাসি আমাকে সব সময় প্রভাবিত করেছে তোর মতো হওয়ায় জন্য কিন্তু আমি হতে পারিনি। আল্লাহ তো সবাইকে তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ দেন না অথবা আমিই হয়তো সেভাবে চেষ্টা করিনি। আমার জন্য দোয়া করিস যেন আমি একদিন তোর মতো হতে পারি। তুই অনেক ভালো থাক, এভাবেই বাচ্চাদের মতো সরলতার প্রতিমা হয়ে থাক সবসময়। নিজেকে পাল্টিয়ে ফেলিস না কখনও, তুই পাল্টে গেলে আমার কী হবে বল! কে আমার চোখ দেখে আমার ভিতরের সব কথা পড়তে পারবে? কে আমার অপেক্ষায় থাকবে? যাতে আমি গেলে মন ভুলানো তার মিষ্টি হাসিমাখা কথার ঝুলি নিয়ে বসতে পারে? আর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কে আমি যাবো বলে আমার প্রিয় খাবার রান্না করে রাখবে যত্ন করে, বল? আল্লাহ তোকে দীর্ঘজীবী করুন, তুই আরও পবিত্র আর সফল হ জীবনে এই দোয়া করে সমাপ্তি আনছি।
ইতি
তোর রিতু