#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ৪
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
।
সুহা খাটে বসে রইল গুটিশুটি মেরে ।বড় বড় শ্বাস
পরছে এলোমেলো ভাবে ।
চোঁখ দিয়ে জল পরছে অঝোর ধারায়।ঠোঁট কাঁপছে মৃদু।
মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ,যা হলো এটা নিয়ে কিছুতেই কিছু ভাবতে পারছেনা ,কিছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা অবিশ্বাস্য লাগছে নিজের কাছে।
সুহা মাথা নিচু করে , কপাল হাঁটুতে ঠেকিয়ে বসে ভাবতে লাগল কাব্যের কথা,
ওর বড় বোনের বিয়ের সময় কাব্য অস্ট্রেলিয়া ছিল লেখা পড়ার জন্য,
সুহা শুধু শুনেছিল ওর বোনের একজন দেবর আছে আর সে বাইরে থাকে। লেখা পড়া শেষ করে দেশে ফিরবে।
এ বিষয়ে সুহার কোনো আগ্রহই ছিল না শুধু বোনের মুখে নামটা শুনেছিল।
নামটা ওর খুব ভাল লেগেছিল।
কিন্তু কখনও ফটো বা কোনোভাবে দেখার ইচ্ছে হয় নি।
ওর বড় বোন সানার বিয়ের দের বছর পর কাব্য দেশে ফিরে ।
কাব্য দেশে ফিরার অনেক দিন পর সুহা একদিন ওর বোনের মেয়ে স্নেহাকে দেখার জন্য ওদের বাসায় আসে
তখন প্রথম কাব্যের সাথে দেখা হয়।
সুহা দেখে একটি ছেলে ফোনে কথা বলে নিচে নামছে,
ছেলেটার চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে খুব রেগে আছে কিন্তু রাগটা যেন তার সৌন্দর্যকে একটুও কমাতে পারেনি। সুহার দু চোঁখ আটকে গিয়েছিল ওকে দেখে ।
কাব্য তখন ফোনে কারো সাথে ভীষন রেগে কথা বলছিল ,কথা বলার এক পর্যায়ে কাব্য রেগেমেগে ফোনটা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে।
সুহা সেটা দেখে একটা চাপা চিৎকার দিয়ে দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
‘
সুহার চিৎকার শুনে কাব্যের চোঁখ পড়ে সুহার দিকে ও তাকিয়ে দেখে রেড কালারের কামিজ আর হোয়াইট কলারের পায়জামা ও ওড়না পরা একটা মিষ্টি পরি চোঁখ মুখ খিচকে হাত দিয়ে কান চেপে ধরে দাড়িয়ে রয়েছে,
চুলগুলো বেনি করে এক পাশে রাখা।
মেয়েটাকে এক পলক দেখে কাব্যেকের সমস্ত রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল,সেখানে জন্ম নিল একরাশ ভালো লাগার অনুভুতি।বিদেশে থাকতে কত মেয়ের সাথে রিলেশন করেছে কিন্তু কাউকে দেখে মনের ভেতর এমন অনুভুতি হয়নি।কাউকে দেখেই হার্ট বিট ফাস্ট হয় নি ।কিন্তু এই মেয়েকে এক নজর দেখার পর থেকে হার্ট বিট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে।সে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকালো।
‘
সুহা কিছুক্ষন পর চোঁখ খুলে দেখল ছেলেটা তার সামনে দাড়িয়ে অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে,
সুহা কোনো কিছু না বলে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে বোনের রুমে চলে আসে।
সুহা ছোটবেলা থেকেই রাগী মানুষদের ভয় পায়।
,
সুহার পিছন ফিরে দৌড় দিতেই কাব্যরের নজর যায় সুহার পিটে থাকা তিলটার উপর,
সেটা দেখে কাব্যের বুকের বা পাশে সুক্ষ ব্যাথা অনুভুত হলো।ও শুকনো গলায় একটা বড় ঢোক গিলে সুবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ।
বোনের কাছে ছেলেটার সম্পর্কে জানতে চাইলে যানতে পারে ছেলেটা তার বোনের দেবর কাব্য ,আরো জানতে পারল বিদেশে কাব্যের একাধিক মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল।আর কাব্যের ভয়ংকর রাগের কথা।
সেই থেকে কাব্যের প্রতি ওর কোনো আগ্রহই রইল না ।
কাব্যের সাথে ওর পরিচয় হওয়ার পর থেকে,যতবার ওর সাথে কাব্যের দেখা হয়েছে, কাব্য বিভিন্ন ভাবে সুহার সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু সুহা সবসময় ওকে এড়িয়ে গেছে ।
ফর্মালিটির দুই একটা কথা বলেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত।কাব্যের সাথে কথা বলতে অস্বস্তি হতো ওর মনে হতো কোনো প্লে বয়ের সাথে কথা বলছে।
কাব্যের সাথে পরিচয় হবার পর থেকে প্রায়ই কাব্যকে ওর ভার্সিটিতে দাড়িয়ে থাকতে দেখতো ।কাব্য একদিন ভার্সিটিতে সুহার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল আর সুহা কথা না বলে চলে যাচ্ছিল সেটা দেখে কাব্য রেগে গিয়ে যখন জোর করছিল সুহাকে কথা বলার জন্য ,তখন ভয়ে সুহা কেঁদে দিয়েছিল।তারপর থেকে কাব্য ওর সাথে কোনো কথা বলার চেষ্টা করতো না শুধু দাড়িয়ে তাকতো ।তাই এই বিষয় নিয়ে সুহা ততোটা মাথা ঘামায় নি।
ভেবেছিল এখানে কোনো মেয়ের সাথে হয়তো রিলেশন করছে তাই আসছে।
সেদিনের পর থেকে কোনো ছেলে সুহার সাথে কথা বললে পরেরদিন সুহা কথা বলতে গেলেই সে এড়িয়ে যতো,
সুহা বিষয়টা প্রথম খেয়াল না করলেও পরে দেখলো ভার্সিটির কোনো ছেলেই ওর সাথে কথা বলে না ও বলতে গেলেই তারা কেমন ভয়ে ভয়ে ওকে এড়িয়ে যায়।
এসব বিষয় কিছুই সুহার মাথায় ঢুকল না কিন্তু সে বিষয়টাতে ততোটা পাত্তা দিলনো না।
কারন ভার্সিটিতে কোনো ছেলের সাথে সুহার গভীর কোনো সম্পর্ক ছিলো না।
তার কিছুদিন পর ভার্সিটিতে একটি নতুন ছেলে সুহার সাথে মিস বিহেভ করে আর ওর হাত ধরে ,
কাব্য সেদিন ছেলেটাকে এতো মার মেরেছিল মারতে মারতে শেষে ছেলেটার হাতটাই ভেঙ্গে দিয়েছিল ।
সেটা দেখে সেদিন সুহা ভয়ে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
জ্ঞান ফিরে নিজেকে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করেছিল কিন্তু গায়ে ছিল প্রচন্ড জ্বর যে জ্বর সারতে
টানা সাত দিন লেগেছিল ।
সেদিনের পর থেকে কাব্যকে দেখলে ভীষন ভয় পেতো।
কাব্যকে সামনের দিকে দেখলে ও পিছন দিক দিয়ে পালিয়ে যেত।
ভয়ে বোনের বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রায়।
কিন্তু কাব্য প্রতিদিনই ভার্সিটিতে গিয়ে দাড়িঁয়ে থাকতো।
এভাবেই চলছিল দিন।
কিন্তু বোনের একমাএ মেয়ের জন্মদিন হওয়ায় বাধ্য হয়ে এখানে আসতে হলো ।আর এসে এমন বিশ্রী ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো।
কাব্য ভাইয়া কেন এমন করছেন আমার সাথে ,আমার কাছে কি চান উনি?
যতই আমি তাকে এড়িয়ে চলে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছি ততই উনি এগ্রেসিভ হয়ে আমার আরো কাছে চলে আসছেন।
।
হাঠাৎ আযানের সুর কানে আসায় ভাবনায় ছেদ পরলো আমার।
হাঁটু থেকে মাথা তুলে বসলাম,মাথাটা ভার হয়ে আছে
সারা রাত জেগে থেকে কান্না করার জন্য হয়তো এমন হচ্ছে ।
ঠোঁটে এখনও মনে হচ্ছে কাব্য ভাইয়ার স্পর্শ লেগে আছে ।উন্মাদের মতো হাতের উল্টো পিট দিয়ে কয়েক বার ঠোঁট জোরা মুছতে লাগলাম,কিন্তু নাহ তবুও মনে হচ্ছে স্পর্শটা যাচ্ছে না ।
উঠে দাঁড়ালাম আবার শাওয়ার নিতে হবে ,পানি দিয়ে এই স্পর্শগুলো মুছে ফেলতে হবে তা নাহলে শান্তি পাবো না।
আমার সমস্ত শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এই অপরাধের জন্য কাব্য ভাইয়াকে কঠোর শাস্তি দেই।
কিন্তু কি করবো আমি ,কি শাস্তিই বা দেবো এই দানবটার সাথে কিছুতেই পেরে উঠবো না আমি।
আর এই অপ্রীতিকর ঘটনা আমি কাউকে কিভাবে বলবো।
মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম আর কোনদিন কাব্য ভাইয়ার সামনে আসাতো দূরের কথা এই বাড়িতেও আর কোনদিন আসবো না, যত দিন উনি এখানে আছেন।
দরকার পরলে ভার্সিটিতে ও আর যাবো না।
‘
ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখে চমকে উঠলাম ,চোঁখ দুটি কেমন ফুলে লাল হয়ে আছে অতিরিক্ত কান্না করার জন্য।
ঠোঁটের দিকে চোঁখ পরতেই রাগে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো ,চোঁখে সামনে বার বার রাতের ঘটনাটা ভেসে উঠতে লাগল ,মনে হচ্ছিল ঠোঁট দুটি নিজের থেকে আলাদা করে দেই।
এলোমেলো ভাবে দু হাত দিয়ে সমস্ত মুখে পানির জাপটা দিতে লাগলাম।
।
শাওয়ার সেরে নামাজ পরে নিলাম।
তারপর জানালা খুলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম সকাল হওয়ার অপেক্ষায়।
কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই এখান থেকে চলে যেতে চাই ।কিছুতেই উনার মুখমুখি হতে চাইনা।
এই ভয়ংকর কালো রাতটা আমার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাই ।
।
সকাল হতেই নিচে নেমে আসতে লাগলাম,ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছি কোথাও কাব্য ভাইয়া আছেন কিনা সেটা দেখার জন্য ।
উনি ঘুম থেকে দেড়িতে উঠেন জানি তবুও কেন যানি ভয় করছে।
উনাকে এখানে না দেখে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম।যত দ্রুত সম্ভব এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরতে হবে।
নিচে নামতেই আপুর সাথে দেখা হলো ।
আমাকে দেখেই আপু আতংকে উঠে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,
চোঁখ মুখের এই অবস্তা কেনো?রাতে কি আমি ঘুমাই নি?
রাতে ভীষন মাথা ব্যাথা করেছিল তাই ঘুম হয়নি বলে আপুকে ম্যানেজ করলাম।
স্নেহাকে নিয়ে খেলা করছি,বাবুটা দেখতে একদম কিউটের ডিব্বা।গুলোমোলো একটা পুঁতুল দেখলেই শুধু আদর করতে ইচ্ছা করে।
হাসলে আবার গালে ছোটছোট দুইটা ডিম্পল পরে পুতুলটার।
কি যে মিষ্টি দেখায় ওকে হাসলে সেটা বলে বুঝাতে পরবো না।
ও আমার খুলে বসে হাসছে আর খেলা করছে ।
আর আমি ভয়ে ভয়ে কিছুক্ষণ পর পর উপরে তাকাচ্ছি কাব্য ভাইয়া আসছেন কিনা দেখার জন্য।
আপুকে তাড়া দিতে লাগলাম বাসায় ফিরার জন্য,
কিন্তু আপু তো আর আমাকে নাস্তা না করিয়ে বাসায় ফিরতে দিবেন না ।
কাজের লোকের সাহায্যে আপু নাস্তা ডাইনিং এ সাজাতে লাগলেন।
আমি স্নেহাকে নিয়ে বসে আছি কিন্তু মনে একটুও শান্তি পাচ্ছি না ।জানি না কেন কোন এক অজানা ভয়ে বাব বার বুক কেঁপে উঠছে ।
ভালোই ভালোই এই বাসা থেকে বেরিয়ে পরতে পারলেই বাঁচি।আর সেটা অবশ্যই কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই।
।
নাস্তার টেবিলে বসে আছি আমি ,আপু আর উনার শাশুড়ী ।আপুর শশুড় বেঁচে নেই আপুর বিয়ের অনেক বছর আগেই তিনি মারা গিয়েছেন।আর দুলাভাই ব্যবসার কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে কাটান ।
আপুর বাসায় মানুষজন বলতে আপু,আপুর শাশুড়ী ,কাব্য ভাইয়া,স্নেহা আর কাজের লোকজন।
নাস্তা করছি কিন্তু খাবার আমার গলা দিয়ে নামছে না,বার বার উপরের দিকে তাকাচ্ছি,
শুধু মনে হচ্ছে এই বুঝি উনি এসে পরলেন এই বুঝি উনি এসে কোনো কান্ড ঘটিয়ে ফেলেন।
‘
আমার এই অবস্তা দেখে আন্টি জিজ্ঞেস করতে লাগলে ,আমি খাচ্ছি না কেন কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি ,
আমি উনার এমন প্রশ্নে মৃদু হেসে মাথা দু দিকে নাড়লাম।
আন্টি অনেক ভালো মানুষ, ভীষন মিশুক এবং একজন পরিপাটি আধুনিক মহিলা,দেখতেও ভীষন সুন্দর।
কথা বার্তায় ,পোশাকে ,কাজে কর্মে উনার আধুনিকতা ও বুদ্ধিমতার পরিচয় পাওয়া যায়।
উনার চোঁখের দিকে তাকালে বুঝা যায় এই বুদ্ধিদীপ্ত অভিজ্ঞ চোঁখ দুটি কিছু না বললে ও অনেক কিছু বুঝে যায়।
আপুর বাসার সবাই অনেক ভালো শুধু কাব্য ভাইয়া ছাড়া ।আমি নিশ্চিত হসপিটালে যখন আন্টি ছোট ছেলের জন্ম হয়েছিল তাকে পাল্টে ফেলে কেউ এই বজ্জাতটাকে রেখে গেছে।
আন্টির মতো একজন অসাধার মহিলার ছেলে কখনই এই বজ্জাতটা হতে পারে না।
নাস্তা কোনো মতে সেরে আপু আর আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম ।
বাইরে এসে চোঁখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলাম।
আহ্! কি শান্তি এই অসহ্য প্রাণিটা আর কখনও আমার নাগাল পাবে না।
ভাবতেই ভীষন আনন্দ লাগছে।
শ্বাস নিয়ে চোখ খুলে তাকালাম,তাকিয়েই আমি
৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম।(চলব)