#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-১৭|
সকাল সাড়ে ন’টা। রুহানি ভার্সিটির ক্যাম্পাস দিয়ে হাঁটছে দ্রুত গতিতে। হাতের পাতলা বই দিয়ে সূর্যটাকে আড়াল করে নিয়েছে। সাড়ে নটায় সূর্যের প্রখরতা দেখে রুহানির মনে হচ্ছে ভর দুপুর।
আজ ও অলরেডি ক্লাসের জন্য লেট করে ফেলেছে। তাই শর্টকাট হিসেবে সরু রাস্তা ছেড়ে মাঠ দিয়ে হাঁটছে। ফালাক দুতলা থেকে রুহানিকে দেখে দৌড়ে নামছে। ওদিকে ওর ক্লাসের সময় হয়ে গেছে৷ কিন্তু ক্লাসের পরোয়া না করে রুহানির কাছে ছুটে আসছে। ফালাক নিচে নেমে রুহানিকে পেল না। এক মুহুর্তের মধ্যে রুহানি গায়েব। ফালাক এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চারদিকে চোখ বুলালো। তারপর রুহানির ক্লাসের দিকে ছুটে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুহানিকে দেখা গেল। রুহানি দ্রুত পায়ে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। ফালাক দৌড়ানো থামিয়ে দিয়ে রুহানিকে ডাকল।
রুহানি কারো মুখে নিজের নাম শুনে থেমে গেল। কৌতূহল বশত পেছনে ঘুরে ফালাককে দেখে। ফালাক ওর দিকেই আসছে। ফালাক আসার পর পরই রুহানি স্নিগ্ধ হেসে বলল,
“হায়!”
ফালাক ছোট একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
“কেমন আছো?”
“জি ভালো।”
ফালাক রুহানির দিকে তাকাল। ওর মুখে মিষ্টি হাসি।
“তুমি আজকাল কোথায় থাকো?”
রুহানির মনে কৌতূহল জাগল। নুশার বলা কথা মনে পড়ল।
“কেন বলো তো?”
ফালাক কি বলবে বুঝতে পারছে না।
“ভার্সিটি তোমাকে মিস করে। মানে তোমার আমাকে জ্বালানো সময় গুলো মিস করি।”
ফালাকের কথা শুনে রুহানি ফিক করে হেসে দিল। তারপর বলল,
“সে রুহানি আর নেই। তাই মিস করতে থাকো।”
ফালাক ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“সে তো দেখতেই পাচ্ছি। আমি কি জানতে পারি কি করছো আজকাল? এই পরিবর্তনের রিজন কি?”
রুহানির মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
“কাজ করার চেষ্টা করছি। লাইক ইউ।”
রুহানির কথা শুনে ফালাক বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইল। রুহানি কাজ করছে। ব্যাপারটা ফালাকের হজম হচ্ছে না।
“কাজ! তুমি!”
রুহানি ফালাকের কথায় আর চোখে মুখে অবিশ্বাস দেখতে পেল। হালকা হেসে বলল,
“কেন আমি কি কাজ করতে পারি না?”
ফালাক রুহানির মলিন মুখটা দেখে বলল,
“সরি, প্লিজ কিছু মনে করো না।”
রুহানি শুকনো হেসে বলল,
“না, কি মনে করব? কিছু মনে করি নি।”
“তা কি করছো আমি কি জানতে পারি?”
রুহানির ফালাকের দিকে তাকাল। ফালাক অতি আগ্রহের সাথে চেয়ে আছে। রুহানি আমতা আমতা করছে। ফালাক বুঝতে পারল রুহানি বলতে চাইছে না। তাই বলল,
“ইট’স ওকে বলতে হবে না।”
রুহানি হাতের ঘড়ির দিকে চেয়ে তাড়া দেখিয়ে বলল,
“আমার ক্লাসের দেরি হয়ে গেছে অলরেডি। আমি আসছি।”
রুহানি ফালাকের উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেল। ফালাক ওকে থামাতে চেয়েও থামাল না। রুহানি এক প্রকার ফালাককে এভয়েড করে চলে গেল।
রুহানির এভাবে চলে যাওয়া ফালাকের সহ্য হলো না। ফালাক হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল।
ক্লাস শেষে ফালাক রুহানির ক্লাসের সামনে এসে দাঁড়াল। রুহানির জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু রুহানির ক্লাস শেষ হওয়ার নামই নেই। ফালাকের ফোন বেজেই চলেছে। ফালাক বারবার কেটে দিচ্ছে। এক প্রকার বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করে নিল।
ক্লাস রুমের দিকে চেয়ে ফোন রিসিভ করে নিল ফালাক। ওপাশের কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আসছি।”
ফোন কেটে রুহানির ক্লাসের দিকে একবার তাকাল। তারপর পকেটে ফোন রেখে চলে গেল।
.
রুহানি বাড়িতে ফিরে জানতে পারল ওর মা ওর বাবাকে নিয়ে হসপিটালে গেছে। ওর বাবা হটাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রুহানি যেভাবে ছিল সেভাবেই হসপিটালে চলে গেল। ডাক্তার ওর বাবাকে দেখছে। রুহানি ভেতরে ঢুকে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল,
“বাবার কি হয়েছে? এখন কেমন আছে?”
রুহানির মা-ও ডাক্তারের বলার অপেক্ষায় আছে।
ডাক্তার চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
“মনে হচ্ছে ঠিকমতো মেডিসিন নিচ্ছেন না। পাশাপাশি অনেক স্ট্রেসে আছেন। উনাকে সাবধানে থাকতে হবে আর নিয়মিত মেডিসিন নিতে হবে।”
রুহানি ওর মায়ের দিকে তাকাল। আর ওর মা ওর বাবার দিকে চেয়ে রুহানির থেকে নিজের দৃষ্টি লুকাল।
.
রুহানি ড্রয়িংরুমে গম্ভীর ভাবে বসে আছে। ওর পাশেই ওর মা আর ভাই। ওর বাবা ঘুমাচ্ছেন।
“কেন মা, কেন? বাবার মেডিসিন ঠিক মতো দিচ্ছো না কেন? আমাকে কেন বলো নি?”
রুহানির মা ভারি কন্ঠস্বরে বলল,
“আর কত, আর কত বলব রুহানি? তুই কোথায় থেকে এত টাকা এনে দিবি? তুই তো তোর সাধ্যমত চেষ্টা করছিস। বাড়ি ভাড়া আর বাজার আনার পর সামান্য কিছু টাকাই ছিল তা দিয়ে যতটা পেরেছি ওষুধ এনেছি। তোর বাবা-ই বলেছে। আমি বলেছিলাম রুহানি রাগ করবে। তার কথা পেট না বাচলে এমনিতেই মরে যাব, তখন আর ওষুধে কাজ হবে না। আগে পেট বাচুল তারপর ওষুধ।”
রুহানি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
“তাই বলে আমাকে কিছু জানাবে না?”
ওর মা অপরাধীর ভঙ্গিতে বলল,
“তোর বাবা নিষেধ করেছে। নিষেধ করবে না তো কি? যেখানে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠাব সেখানে মেয়ের ঘাড়ে বসে খাচ্ছি। মেয়ের উপর পুরো সংসারের দায়িত্ব দিয়ে বসে আছি।”
রুহান মাথা নিচু করে বসে আছে। ওর আর সহ্য হচ্ছে না।
বারবার মনে হচ্ছে যদি পরিবারের জন্য কিছু করতে পারতো। কিন্তু কি করবে? কি যোগ্যতা আছে ওর। কোন কিছু করার মুরদ নেই। ছোট থেকে আরাম আয়েশে বড় হয়েছে। নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে। রুহান উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
রুহানি আশ্বস্ত করে বলল,
“আগামীকালের মধ্যে টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। চিন্তা করো না।”
“কিন্তু তুই এত টাকা কোথায় পাবি?”
“মা নিশ্চিত থাকো চুরি-বাটপারি করব না। আমি সব ম্যানেজ করে নেব।”
সারারাত রুহানির ঘুম হলো না। কি করব টাকা জোগাড় করবে। গতকাল রাতে তো বলে দিল টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে কিন্তু কি করে ব্যবস্থা করবে?
.
রুহানি অগ্রিম পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে গেল। আগামীকাল শহরের সনামধন্য হোটেলে নাচ করবে। এই মুহুর্তে রুহানির জন্য আর কোন রাস্তা খোলা নেই। টাকার খুব প্রয়োজন। তাই রাজি হয়েছে। বাড়িতে ওষুধ নিয়ে ফিরেছে। রুহানির মা জিজ্ঞেস করায় বলেছে ধার নিয়েছে। রুহানি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
“আজ থেকে আমার জীবন আমার নয়। আমার ব্যক্তিগত কোন স্বপ্ন নেই। আমার জীবন আর আমার স্বপ্ন আমার বাবা-মা আর ভাই। ওদের সুখের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করলাম।”
রুহানি যদি কোন প্রোগ্রামে ড্যান্স করতো তাহলে সমাজ সেটা খারাপ চোখে দেখত না। কিন্তু যারা টাকার জন্য হোটেলে, বারে নাচ করে সমাজের চোখে তারা অসামাজিক, উশৃংখল, চরিত্রহীন। তাদের কোন সম্মান নেই। সে কাতারে আজ রুহানিও পড়ে গেল।
রুহানি পোশাকের সাথে ম্যাচ করে মুখে পাতলা জড়ির কাপড় বেঁধে নিল। যাতে কেউ ওকে চিনতে না পারে। এটাও কস্টিউমের একটা অংশ। সেদিনের মতো এক গাদা লোকের সামনে নাচ করে নিজের ভেতরটাকে মেরে ফেলে এসেছে। মাঝরাতে বাড়ি ফিরে পুরো রাত কেঁদেছে। তাই ভার্সিটিতে যেতে দেরি হয়ে গেছে।
প্রায় দিনের মতো দৌড়ে দৌড়ে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। পেছনে থেকে আবারও ফালাকের ডাক শুনল। আজ রুহানি প্রচন্ড বিরক্ত হলো। ক্লাস লেট হওয়া সত্ত্বেও ফালাক এসে ওর আরো দেরি করিয়ে দিচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে ফালাকের দিকে তাকাল। ফালাক রুহানির চোখে মুখে বিরক্তি ভাবকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
“লেট কেন?”
“তাহলে জানো আমি লেট এসেছি। জানার পরেও ডেকে কেন আরো লেট করে দিচ্ছো?”
চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলল।
“কারণ আমার কিছু কথা আছে। তোমাকে তো একদম পাওয়া যায় না।”
“কথা! আমার সাথে কি এমন কথা আছে যার কারণে আমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যাচ্ছো? বলো আমি শুনছি।”
ফালাক চারদিকে চেয়ে বলল,
“এখানে বলা যাবে না। অন্য দিকে চলো।”
রুহানি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এখন আমার তোমার কথা শোনার জন্য মঙ্গল গ্রহে যেতে হবে? তুমি কি চাইছো আমি পুরো ক্লাসটাই মিস করি?”
ফালাক শীতল কণ্ঠে বলল,
“ক্লাসের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আমার কথাগুলো। প্লিজ।”
রুহানি ফালাকের চোখে মুখে আকুতি দেখতে পেল। তাই আর না করতে পারল না। রুহানির মনে হচ্ছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবে। হয়তো কোন সমস্যায় আছে।
রুহানি ফালাকের পেছনে পেছনে বারান্দার শেষ মাথায় গেল। ফালাক রুহানির দিকে দু’হাত ভাজ করে ঘুরে দাঁড়াল। রুহানি ফালাকের দিকে চেয়ে আছে কি বলবে শোনার জন্য। ফালাক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“হয়তো তোমার কাছে আমার কথাগুলো ষ্টুপিডের মতো লাগবে বাট আমি এক বিন্দু মিথ্যা বলব না।”
রুহানি তাড়া দেখিয়ে বলল,
“আরে কথাটা তো বলো। তারপর বুঝব ষ্টুপিড কিনা।”
ফালাক রুহানির চোখে চোখ রাখল। রুহানির চোখ বলছে রুহানি কিছুই বুঝতে পারছে না।
“আমি আজ এক সুপ্ত অনুভূতির কথা বলব যা আমি কিছুদিন আগে আবিষ্কার করেছি। অসম্ভব সুন্দর একটা অনুভূতি যা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। রুহানি আমি সোজাসাপটা কথা বলতে পছন্দ করি তাই সোজাসাপটাই বলছি,আই লাভ ইউ।”
রুহানি ফালাকের প্রথম কথাগুলোর মিনিং খোজায় ব্যস্ত ছিল শেষের আই লাভ ইউ লাইনটা মাথার উপর দিয়ে গেল। থমকে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। একদমই ভরকে গেল।
মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দই বের হলো,”অ্যায়য়!”
ফালাক র্যহানির কাছ থেকে এমন রিয়েকশন আশা করে নি। ভেবেছিল রাগ করবে কিংবা অন্যকিছু কিন্তু রুহানির বিভ্রান্ত চেহেরা দেখে কিছুই বুঝতে পারল না।
“রুহানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
রুহানি দু পা পিছিয়ে কনফিউজড ফেস নিয়ে বলল,
“ভালোবাসা! কি বলছো মাথা ঠিক আছে? কিছু খেয়েছো?”
“রুহানি আমার মাথা একদম ঠিক আছে। আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকে চাই। অনেক দিন যাবত বলার সুযোগ খুঁজেছি কিন্তু পাই নি। এটাই সত্যি।”
রুহানি কি রিয়েক্ট করবে, কি রিয়েক্ট করা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারছে না।
“তোমার কথায় কি রিয়েক্ট করব বুঝতে পারছি না কিন্তু এসব উল্টো পাল্টা কথা আমাকে আর বলো না। বুঝলে? আমি যাচ্ছি।”
রুহানি নির্লিপ্ত ভাবে চলে যাচ্ছে।
“রুহানি আ’ম সিরিয়াস। আমি মজা করছি না কিংবা আমার মাথায় গন্ডগোল নেই। আই রিয়েলি লাভ ইউ। ট্রাস্ট মি।”
রুহানি ফালাকের দিকে ঘুরে বলল,
“ওকে আই ট্রাস্ট ইউ। বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ। এসব ভুলে যাও। আর প্লিজ কাউকে এসব বলো না।”
রুহানি চলে যাচ্ছে ক্লাসের দিকে।
ওর মধ্যে কোন ফিলিংস হচ্ছে না। ফালাক ওকে এমন কিছু বলতে পারে কল্পনাও করতে পারে নি। ফালাক ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। রুহানির এমন হাব ভাব একদমই আশা করে নি। রুহানি ক্লাসে মন বসাতে পারল না। শুধু ভাবছে ফালাক এমন একটা কথা কি করে বলতে পারে? ক্লাস শেষ হতেই বাড়িতে চলে গেল।
চোখ বন্ধ করলে ওই ঘটনাই মনে পড়ছে।
“ভালোলাগা, ভালোবাসা শব্দগুলো আমাদের জন্য নয়৷ আমাদের জন্য শুধু একটা শব্দই বরাদ্দ বেঁচে থাকার লড়াই।”
রুহানি চাঁদর মুড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল। কিন্তু ওদিকে ফালাকের চোখে ঘুম নেই। বারান্দায় রেলিঙের উপর বসে আছে। ভাবছে কি করে রুহানিকে হ্যা বলাবে। রুহানি রাজি হবে তো? রাজি যদি না হয় কি করবে? তবে চেষ্টা করে যাবে। আজ মনের কথাটা বলতে পেরেছে তাই অনেক।
পরের ক্লাসের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে রুহানিকে পাওয়া যায় নি। ফালাকের আজকাল রুহানি বিহীন ক্যাম্পাস বিষের মতো লাগে। তার পরের দিন রুহানি ভার্সিটিতে এলো। ফালাকের কথা ভুলেই বসেছে আর সেটা ফালাক ওর সামনে এসে মনে করিয়ে দিল।
“পুকুরের ওই পাড়ে ক্লাস শেষে দেখা করবে।”
“কেন? আমি ওখানে যাব না।”
“তাহলে এখানেই সিন ক্রিয়েট হবে। আমাকে দায়ী করতে পারবে না।”
রুহানি ফালাকের মুখের দিকে তাকাল। হ্যা ফালাক এটা করতে পারবে ওর মুখ বলছে। তাই রুহানি বলল,
“ওকে। আসব।”
ফালাক মুচকি হেসে চলে গেল। পুরো ক্লাসে রুহানি উশখুশ করেছে। কাউকে কিছু বলে নি। ক্লাস শেষে রুহানি ফালাকের বলা জায়গায় যায়। রুহানি এই ঘটনার সমাপ্তি চায় তাই গিয়েছে। ভার্সিটি ফাকা হতে চলেছে ধীরে ধীরে।
ফালাক রুহানির পরে পৌঁছাল।
রুহানি ফালাককে দেখে কড়া গলায় বলল,
“এখানে কেন? কি চাই তোমার?”
“উত্তর চাই। আমি তোমাকে একটা প্রপোজাল দিয়েছি তার উত্তর।”
“আমি উত্তর দিয়ে দিয়েছি। আর কোন উত্তর বাকি নেই।”
ফালাক একটু দূরে সরে দুহাত প্রসারিত করে বলল,
“কিসের কমতি আমার মধ্যে? কোন দিক দিয়ে তোমার অযোগ্য?”
রুহানির এই মুহুর্তে ফালাককে অনেক সিরিয়াস লাগছে। এর আগে এই ব্যাপারটা এতটা সিরিয়াস লাগে নি।
“রুহানি এন্সার মি। ডু ইউ হেভ বয়ফ্রেন্ড?”
“নাহ!” রুহানি মাথা নিচু করে উত্তর দিল।
“তবে আমাকে তোমার পছন্দ নয়?”
রুহানি দ্রুত উত্তর দিল,”তোমাকে আমার পছন্দ নয়।”
“কেন নয়? রিজন তো একটা দেখাতে হবে।”
রুহানি যা উত্তর দেয় সেই উত্তর থেকে ফালাক আরেকটা প্রশ্ন তৈরি করে। রুহানি হাপিয়ে যাচ্ছে আর বারবার ফালাকের কথার প্যাঁচে আঁটকে যাচ্ছে।
ফালাক আবারও বলল,
“তোমার কারো সাথে রিলেশন নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে কাউকে ভালোবাসবে বিয়ে করবে। তবে সে আমি কেন নই? কোন দিক থেকে আমি তোমার অযোগ্য আমি শুধু সেটাই জানতে চাইছি রুহানি।”
রুহানি চেঁচিয়ে বলল,
“আমি কাউকে ভালোবাসব না। আমি কাউকে বিয়েও করব না। আর যোগ্যতার কথা বলছো? লুক এট মি। কতটুকু চিনো আমাকে? কতটুকুই বা জানো?”
“এটুকুই কি যথেষ্ট নয়?”
“না যথেষ্ট নয়। তোমার আমার সম্পর্কে জানা জরুরী ছিল। ঠিক আছে ভুল যখন করেছো তখন আমি নিজেই তোমাকে জানাচ্ছি। আমি রাজিব শিকদারের মেয়ে রুহানি শিকদার। রাজিব শিকদার যে কি-না এক সময় টপ বিজনেসম্যানের একজন ছিল। কিন্তু আমাদেরই আপনজন আমাদের পিঠে ছুড়ি মারায় আজ আমরা রাস্তায় এসে নেমেছি। আমার বাবা প্যারালাইজড হয়ে পড়ে আছেন৷ অভাব অনটন শব্দগুলো রোজ একটু একটু করে আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। এতদিন কেন বলিনি কাউকে জানো? কারণ এখানে কিছ মানুষ আছে যারা আমার সত্যিটা জানলে আমাকে বাচতে দেবে না। তাই এতগুলো মাস ধরে সব হাইড করে গিয়েছি।”
রুহানি কাঁদতে লাগল। ফালাক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুহানির উপর দিয়ে এতকিছু বয়ে গেছে আর ও জানেই না।
রুহানি আবারও বলতে লাগল,
“কি ভাবে বেঁচে আছি জানো? আমি রুহানি যে টাকা পায়ের নিচে রেখে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছি সেই সামান্য টাকার জন্য কাজ করছি। এগুলো তোমার জানা জরুরী ছিল। তবে আর এই কথাগুলো আমাকে বলতে পারতে না।”
ফালাক ভেজা চোখে বলল,
“রুহানি, আই ডোন্ট কেয়ার।”
রুহানি রেগে গিয়ে বলল,
“বাট আই কেয়ার। আমি কখনো বিয়ে করব না। আমার লাইফ মানে আমার ফ্যামিলি। আরেকটা কথা জানো তো টাকার জন্য আমি হোটেলে নাচ করি। যারা হোটেলে নাচ করে তারা কোন টাইপ মেয়ে হয় সেটা তোমার জানার কথা। তাই আমার পিছ ছেড়ে দেও। আমার মতো থার্ডক্লাশ হোটেলে নাচা সস্তা মেয়ের জন্য নিজেকে কষ্ট দিও না।”
ফালাক রুহানির কথা শেষ হতেই ঠাটিয়ে রুহানির গালে থাপ্পড় মারল। তাল সামলাতে না পেরে রুহানি মাটিতে পড়ে গেল।
চলবে…….!