প্রিয়দর্শিনী পর্ব-৩৪+৩৫

0
1167

#প্রিয়দর্শিনী
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-৩৪

রিন্তাসহ ওর পুরো পরিবার পান্থ এবং আহসান শাহরিয়ারের কাছে ক্ষমা চায়। পান্থ ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই গ্রহন করে। রিন্তা যে ওর ভুলটা বুঝতে পেরেছে এটাই অনেক। রিন্তা তরুনিমার সাথে দেখা করার জন্য ওর ঘর খুঁজতে থাকে।

: কিছুতেই এই বিয়ে হবে না। ওর জন্য আমার এতোকিছু সহ্য করতে হলো। শুধু ওর জন্য! ভাগ্যিস মামীর থেকে এনগেজমেন্টের পিকগুলো দেখতে পেয়েছিলাম। তোর জন্য আমি নুহাশের ভালোবাসা পাইনি। আর তুই এতো সহজে সুখী থাকবি তা কি করে হয় বল। আফটার অল তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড, এতো সহজে তো তোকে সুখের নৌকায় উঠতে দিব না।

দরজার বাইরে থেকে কথাগুলো শুনে থমকে দাঁড়ালো রিন্তা। দরজা ঠেলে ভিতরের সেই ব্যক্তিকে দেখার জন্য ঢুকতেই পেছনে থেকে কারো এক অদ্ভুদ আওয়াজে ভড়কে যায় রিন্তা। পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখে অন্তু চোখ পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে নিজের বুকে থুতু দিয়ে নিজেকে শান্ত রেখে বলে-

: কি সমস্যা? এই ভাবে ভয় দেখানোর মানে কি?

: এক মিনিট! ভয় দেখালাম কখন? আরেকজনের ঘরে কি উঁকি দিচ্ছিলেন?

: কিছু না। আমি তরু আপুর ঘর খুঁজছিলাম।

: তরু আপুর ঘর সামনে। এটা নয়।

: ওহ.. আচ্ছা। স্যরি।

ক্ষীণ স্বরে কথাটা বলে অন্তুকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল রিন্তা। রিন্তা চলে যেতে দরজা ঠেলে বের হলো সৃষ্টি। সৃষ্টিকে দেখে অন্তুর মাথা আগুন জ্বলে উঠে। সৃষ্টি অন্তুকে দেখে কিছুটা থতমত খেয়ে বলল-

: তুমি এখানে অন্তু?

: তেমন কিছু না। আসলে রি…..

অন্তুর কথা শেষ হবার আগেই সৃষ্টি ওর কথা মাঝে ধমকের সুরে বলে উঠে-

: আমার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কি করছিলে? আড়িপেতে কথা শুনছিলে তাই না?

: এক্সকিউজ মি! আমার কোনো ইচ্ছে নেই যে তোমার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আড়িপেতে কথা শুনবো। আর তুমি যা…

অন্তুর চোখে মুখে তীব্র রাগের ছাপ দেখা দিচ্ছে। অন্তু খানিকটা রাগান্বিত সুরেই কথাগুলো বলতে নিলে তরুনিমা এসে অন্তু থামিয়ে সেখান থেকে নিয়ে চলে যায়।

: আমি তোকে কতো বলেছি অন্তু যে তুই সৃষ্টির সাথে কোনো ধরনের মিসবিহেভ করবি না। তবুও তুই আজকে.. কেন ভাই?

তরুনিমা অন্তুকে নিজের ঘরে নিয়ে এসে চিকন সুরে কথাগুলো বলল। অন্তু মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তরুনিমা অন্তু গাল হালকা ভাবে ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল-

: আমার জন্য রাগটাকে দমন করে রাখতে পারিস না?

: তোমার জন্যই তো চুপ করে আছি আপু। নইলে তো মেয়ে হয়েছে কি হয়েছে তোমার সাথে যা করেছে ইচ্ছে তো করছে জেলে দিয়ে দেই।

অন্তুর শেষের কথায় তরুনিমা ফিক করে হেসে দেয়। তরুনিমা হঠাৎ হাসাতে অন্তু জোড়া ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে অন্তু মাথার চুলগুলো হালকা এলোমেলো করে দেয়। তারপর মৃদু হেসে পাশ ঘুরে বলে-

: এই পৃথিবীতে মানুষ খুন, চুরি প্রভৃতি যত বাহ্যিক অপরাধ আছে সেগুলো করলে আদালতে মামলা হয়, জেল হয়, ফাঁসি হয়। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করার, মন ভাঙার কোনো মামলা হয় না। যদি হতো তাহলে হয়তো আদালতে যতোগুলো কেসের ফাইল আছে তারচেয়ে শত কোটি কেসের ফাইল জমা হতো এইসবের জন্য।

———————————————————–

সবাই যার যার মতো রেডি হয়ে শপিং করার জন্য বের হতেই সৃষ্টি হুট করেই বায়না করে বসে সে আমার সাথে একই গাড়িতে যাবে। নিজেকে যথেষ্ট সংযত রাখার চেষ্টা করে নিজের হাত ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলে সৃষ্টি আরও শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে। পান্থ বিষয়টা খেয়াল করেছেন কিনা জানি না কিন্তু উনি আমার পিছনেই ছিলেন এবং খুব সাবলীল কন্ঠে বলে উঠেন-

: সৃষ্টি তুই মামনি আর বাবার সাথে গিয়ে গাড়িতে বস! আমাদের গাড়িতে জায়গা নেই।

: কেন ভাইয়া? তোমরা দুইজনই তো যাবে। আমি যাই আর তরুরও বোর লাগবে না।

: ওর বোর লাগবে নাকি ওর এনজয় লাগবে সেইটা আমি ডিসাইড করবো তুই না! যেটা বলছি সেটা কর! গাড়িতে জায়গা নেই বলেছি মানে নেই যাহ!!

চোখে মুখে খানিকটা রাগ ফুটিয়ে আর ধমকের সুরেই কথাগুলো বললেন পান্থ। আমি উনার এমন ব্যবহারে রীতিমতো চমকালাম। সৃষ্টির গালে মনে হয় এখনই দুটো ঠাস ঠাস করে চড়িয়ে দিবেন এমন মনে হচ্ছে আমার। মাহিম ভাইয়া চাবির গাড়ি নিয়ে গাড়ির সামনে আসতে পান্থ বলে উঠে-

: ভাইয়া তুমি আমার সাথে ফ্রন্ট সিটে বসো। তিথি ভাবি আর তরুনিমা ব্যাক সিটে বসবে। আর গাড়ি আমি ড্রাইভ করবো।

পান্থর এমন কথায় মাহিম ভাইয়া, তিথি এবং আমিসহ সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। সকাল বেলা তো ঠিকই ছিল কিন্তু এখন হঠাৎ এমন কি হলো যে উনি এমন বিহেভ করেছন। আমার দিকেও কিছুটা রাগান্বিত ভাবেই তাকিয়ে আছেন এবং আমাকে এড়িয়েও চলছেন তিনি।

শপিংমলের সবাই যার যার মতো কেনাকাটা করছে। আমি পুরো এদিক ওদিক শুধু পান্থকে খুঁজে যাচ্ছি। বিয়ের সব রিচুয়ালসে তিথি আর আমি একই ড্রেস পরবো এবং মাহিম ভাইয়া আর পান্থও সেইম পরবে। তাই সেদিকে আমার কোনো আলাদা মাথাব্যথা নেই।একজন পছন্দ করলেই হবে। আমি কিছু জিনিস কেনার বাহানা দিয়ে পান্থকে খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একজন মানুষের উপর, আর সে হলো নুহাশ। যেই মানুষটার প্রতি একসময় আমি আসক্ত ছিলাম। যাকে ঘিরে একসময় দেখেছিলাম হাজারো স্বপ্ন এবং কিছু মিথ্যে প্রতিশ্রুতিও পেয়েছিলাম এই মানুষটার থেকে। পুরো দেহ যেন এক প্রকার থমকে গেল। সবচেয়ে বেশি খটকা লাগছে তাকে এখানে আবিষ্কার করে, যা একেবারেই আমার ধারনার বাইরে ছিল।

———————————————————

নুহাশ আর তরুনিমা একটি টেবিলের বিপরীত পাশের দুটি চেয়ারে বসে আছে। তরুনিমা নুহাশকে যেমন দেখে ঠিকই তেমনভাবে নুহাশও তরুনিমাকে দেখে ফেলে। নুহাশের কথাই তরুনিমা শপিংমলের উপর তলায় রেস্টুরেন্ট এসে বসে। নুহাশ এক ধ্যানে তরুনিমার দিকে তাকিয়ে আছে। তরুনিমা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে।

: কেমন আছো তরু?

নুহাশের ক্লান্ত মিশ্রিত কন্ঠে ওর নামটা শুনে তরুনিমার ওর দিকে তাকায়। সামান্য মৃদু হাসি দিয়ে বলল-

: আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। তুমি কেমন আছো এবং তোমার মা?

: ভালো।

: সিরায়াসলি?কিন্তু নুহাশ নামের যেই মানুষটার সাথে আমার বিচ্ছেদ ঘটেছিল তার সাথে আজকে মানুষটার কোনো মিল নেই। আগে যেমন সেই মানুষটার মাঝে উজ্জ্বলতা বিরাজ করতো সেই উজ্জ্বলতাও নেই আজ। চোখের নিচে কালো ডার্ক সার্কেল পরে গেছে। শরীরটাও বড্ড শুকিয়ে গেছে সেই নুহাশের।

: সময়ের সাথে সাথে বাহ্যিক ভাবে মানুষের পরিবর্তন আসে। আমারও ঠিক এমনটাই হয়েছে।

তরুনিমা কিছু বলতে নিয়েও আর বলতে পারলো না। রিন্তা ওকে ফোন দিয়ে ওর অবস্থান জানার চেষ্টা করে। রিন্তা ওদের সাথে এসেছে। তরুনিমাই এক প্রকার জোর করে এনেছে ওকে।

: আমি আসছি এখন।

তরুনিমা উঠে চলে যেতেই নুহাশ পিছু ডেকে বলে-

: সত্যিই কি তুমি ভালো আছো তরু?

নুহাশের এমন প্রশ্নে তরুনিমা থমকে দাড়ায়। নুহাশ যদি ওর করা এই প্রশ্নের জবাবটা যদি আরো কয়েকটা মাস আগে জানতে চাইতো, হয়তো তখন ওর নিকট এই প্রশ্নের কোনো জবাব থাকতো না। কিন্তু আজ আছে। সে পুনরায় পিছু ঘুরে স্মিত হেসে জবাব দেয়-

: আর দুইদিন পর আমার বিয়ে নুহাশ। আশা করি আমাকে আর কিছু বলতে হবে না।

: এই বিয়ে ভেঙে দাও তুমি তরু। আমি তোমাকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি যে আমি তোমাকেই ভালোবাসি। সৃষ্টিকে আমি কখনোই ভালোবাসিনি। ওর মিষ্টি মায়াবী কথার মায়ার জালে পড়ে গিয়েছিলাম। তাই সেদিন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।

: এসবকি বলছো তুমি নুহাশ এটা কখনোই সম্ভব না। আর যাই হোক না কেন সৃষ্টি নাও ইজ ইউর ওয়াইফ!

কিছুটা জোরালো ভাবেই কথাটা বলে তরুনিমা। নুহাশের পরের কথাগুলো তরুনিমা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

: সৃষ্টির সাথে আমার আর দুই সপ্তাহ পর মিচুয়ালি ডিভোর্স হয়ে যাবে। গত ছয়মাস ধরে আমরা দুজন আলাদা থাকছি। আর আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করেছিলে উনি আজ চারমাস আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন।

তরুনিমা আর কোনো কিছু বলার ভাষা পেল না। নুহাশ আবারও একই কথা বলায় তরুনিমা এবার একটু ভারী এবং চাপা গলায় বলল-

: জানো নুহাশ কখনো ভাবিনি দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসতে পারবো এবং বিশ্বাস করতে পারবো। আর এই দুটো জিনিসই সেই মানুষটা আমাকে করতে বাধ্য করেছেন। নিজর অস্তিত্বটাকেও হারিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু তিনিই আমাকে বুঝিয়েছেন যে কখনো কারো জন্য নিজেকে এবং নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করতে নেই। তাহলে তার আর মূল্য থাকে না। আর তুমি ভালো থাকার কথাটা জিজ্ঞেস করলে না? হ্যাঁ আমি অনেক বেশি ভালো আছি। আর আমি এমন একজনের ভালোবাসায় আবদ্ধ যার থেকে তুমি চাইলেও আমাকে তোমার জীবনে নিয়ে আসতে পারবে না। প্রয়াজনে সে আমাকে মেরে নিজেও মারা যাবে তবুও সে আমাকে অন্যকারো হতে দিবে না। আমার প্রতি ওর ভালোবাসা যতোটা নিঃস্বার্থ ঠিক প্রয়োজনে ততোটা হিংস্র হতে পারে। আর আমি চাই সেইটা হোক। ভালো থেকো তুমি।

তরুনিমা ওর কথাগুলো শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আর নুহাশ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। হয়তো এটাই ওর প্রাপ্য ছিল।

#চলবে____

#প্রিয়দর্শিনী
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-৩৫

সকাল থেকে সবার তড়িঘড়ি শুরু একটু পরই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। দুপুরের আগেই হলুদের অনুষ্ঠানে শেষ হয়ে সন্ধ্যার দিকে মেহেদীর অনুষ্ঠান শুরু হবে। হলুদ এবং সাদা নেট দিয়ে বর আর কনের উভয়ের স্টেজ সাজানো হয়েছে। কনে আর বরের একই সাথে হলুদের অনুষ্ঠান হলেও উভয় পক্ষের কেউ কাউকে দেখতে পারবে না। আর যাতে তারা একজন আরেকজনকে দেখতে না পারে সেজন্য মাঝে হলদে শিফনের কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই কাপড়টার দুই পাশে হলুদ গাদা ফুলও লাগানো হয়েছে।

তরুনিমা আর তিথিকে সাজিয়ে দেয়ার জন্য মেকআপ আর্টিস্ট আনা হয়েছে। তরুনিমা আর তিথি দুজনই সফট ইয়েলো কালারের গারারা পরেছে। চুল গুলো দুজনেরই মাঝ বরাবর সিথি টেনে উল্টোভাবে পেঁচিয়ে বেনুনী করে সামনে এনে রাখা হয়েছে। তিথি ভদ্র মেয়ের মতো সেজে নিলেও তরুনিমা একটু পরপর একেকটা খুঁত বের করছে। যেটাতে মহিলাটি খুবই বিরক্ত হচ্ছেন। এক পর্যায়ে যখন সাজগোজ প্রায় শেষের দিকে তরুনিমা হুট করে ওয়াশরুমের বাহানা দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে নিজের চেহারাকে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে-

: হায় আল্লাহ! কি বানিয়েছে আমাকে এই ডাইনি মহিলা! পান্থর সামনে গেলে উনি বলবেন আমাকে আমি দুনিয়ার সব আটা ময়দা লাগিয়ে বসে আছি। সব মেকআপ একটু পর যেন খসে খসে পড়ে যাবে। ধুর! আমি সাজবো না বাবা এই মহিলার কাছে আমাকে ভূত বানায় দিবে! এই তিথিকেও বলেছিলাম যে সেজো ওরে তো ভূত বানাইছেই আমাকে তো পেত্নী বানাবে। নারে বাবা আমি এখন আর ওয়াশরুমে থেকে বের হচ্ছি না।

প্রায় পনেরো থেকে বিশ মিনিট হয়ে গেছে তরুনিমা ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না। রিন্তা অনুষ্ঠান শুরু হবে দেখে দুজনকে নিতে এসে দেখে এই ঘটনা। সেও অপেক্ষা করছে তরুনিমার বের হওয়ার। রিন্তা কাচা হলদের রঙের শাড়ি পড়ছে এবং সাথে কপালে ছোট হোয়াইট স্টোনের টিকলি এবং কানে ঝুমকো। মেকাপ সে বাসা থেকে করে এসেছে। তরুনিমার দরজায় অনেকবার ধাক্কা দেয়ার পরও আরও ত্রিশ মিনিট পর তরুনিমা ওয়াশরুমে থেকে বের হলে ওকে দেখে সবাই পুরো অবাক। রিন্তা অবাকের সুরে বলল-

: এটা কি তরু আপু? তুমি এখনো রেডি হও নি? এই যে ম্যাম আপনি তো বললেন উনার মেকাপ প্রায় শেষ তাহলে আমি তো দেখছি মেকাপের “ম”-ও করেন নি।

মেকাপ আর্টিস্টের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলল রিন্তা।

: এক্সকিউজ মি ম্যাম! আমি মিথ্যে বলিনি। আগে দেখুন উনি বিয়ে করবে নাকি করবে না? নইলে এইভাবে মেকাপ কেউ ধুয়ে ফেলে? এতো কষ্ট করে মেকাপ করলাম।

মহিলাটি কিছুটা জোরালো কন্ঠে বলল কথাগুলো। তরুনিমা মহিলার কথাগুলো ধপ করে যেন ওর মাথায় আগুন ধরে উঠে। সে ধমকে দিয়ে চোখে মুখে রাগ ফুটিয়ে বলল-

: ও হ্যালো ম্যাডাম! আমি বিয়ে করবো নাকি করবো না সেইটা আমার ব্যাপার আপনি কে এসব বলার? আর কষ্ট করে মেকাপ করেছেন ! এহহ..! মেকাপ তো করেন নি আমাকে সাক্ষাৎ ডাইনির দুই নম্বর বোন বানিয়েছেন। আমার বরযদি দেখতো আপনি আমাকে এইভাবে পেত্নী সাজিয়েছেন তাহলে সে আমাকে দেখে ভয়ে পালোতো! যদিও সে ভয় না এগুলোতে কিন্তু আমি তো নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছে কোনো পেত্নী এসেছে। আর আপনার মেকাপ এগুলো তো খসে খসে সিমেন্টের মতো পড়ে যাবে এখুনি। এখন বলবেন বাকিরা তো কমপ্লএইন করেনি। বাকিরা কমপ্লেইন করে নি কারন বাকিরা আপনার হুলিয়া দেখেই ঘাবড়ে গেছে তাই কিছু বলেনি।

তিথি মেহুসহ সবাই ওকে থামানোর চেষ্টা করছে। ওর এই প্রথম এমন ভাবে কথা বলায় সবাই রীতিমতো টাসকি খেয়ে গেছে।মেকাপ আর্টিস্ট চলে যেতে নিলে সবাই উনাকে আটকায় কিন্তু তরুনিমা অকপটে বলে উঠে-

: এখন আপনি আসতে পারেন। আমি সাজবো না আপনার কাছে। আমি নিজেই সেজে নিব। হুহ…

তিথিও ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। তিথি রিন্তাকে ইশারা করে বাইরে নিয়ে চলে আসে। মেহুকেও তরুনিমার বাইরে যেতে বলে দজার খট করে আটকে দেয়।

সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। পান্থ আর মাহিম দুজনই হালকা হলদে রঙের পাঞ্জাবী এবং সাথে সাদা ধুতি পাজামা পরেছে। একদিক দিয়ে পান্থ আর মাহিম স্টেজের দিকে যাচ্ছে অন্যদিকে তিথি রিন্তা আর মেহু মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওরা ওরা তাদের কাছে গেলে পুরো বিষয়টা জানতে পারে। পান্থ সবাইকে তরুনিমার ঘরের দরজার বাইরে থেকে চলে যেতে বলে।

তরুনিমা চুপচাপ বেডের উপর পা তুলে বসে আছে। সে একবার ড্রেসিং টেবিলের দিকে দেখছে আর একবার নিজের দিকে দেখছে। কিভাবে সাজলে পান্থ ওকে পছন্দ করবে সেটা নিয়ে সে ভাবছে শুধু।

———————————————————–

সময় খুব তাড়াতাড়ি যাচ্ছে। একটু পর সবাই ডাকাডাকিও শুর করে দিবে। মেহু ভাবি, রিন্তা আর তিথিকে তা ঘর থেকে বের করে দিয়েছি নিজে সাজবো বলে। বেড থেকে নেমে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে টুলটায় বসলাম। আর নিজেকে এবং মেকাপের জিনিসগুলো সাথে পাশে থাকা হলদে রঙের গোলাপ ফুলের তৈরি গহনাগুলোকে দেখছি।

: ধুর! ভালো লাগে না! এদিকে যার জন্য সাজতে চাচ্ছি তিনিই তো উপর থেকে আমার সাথে বিন্দুমাত্র কথা বলেন নি। দেখা হলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন শুধু। কোনো কিছু বলছেন না।

আয়নায় তাকিয়েই নিজের সাথে নিজেই কথাগুলো বলছি আমি। হুট করে দরজায় টোকা পরতেই আমি কিছু বলতে নিব তার আগে পান্থর গলা শুনে যেন নাচতে মন চাইল। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের অবস্থা দেখে চুপসে গেলাম। উনি আবার দরজায় টোকা দিয়ে যা বললেন তাতে একপ্রকার দরজা খুলতে বাধ্য হলাম আমি। উনি আমাকে ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করেই দরজা লাগিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে দিয়ে নিজের মুখ এগিয়ে বলেন-

: কি সমস্যা? রেডি হতে এতোক্ষণ লাগে?

উনার আচমকা এমন আচরনে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। উনাকে আজকে আরও সুন্দর লাগছে। কিন্তু নিজের উপর বড্ড রাগ উঠছে সাথে উনার উপরও কারন উনি আজও চশমা পড়েন নি। উনি কি বুঝেন না উনি যদি চশমা না পড়েন চোখে তাহলে উনার অক্ষি গহ্বরের গহীন মায়ায় আমি হারিয়ে যাই। আমার তখন হুশই থাকে অন্য কোনো দিকে। এই চোখেই নিজেকে আটকে ফেলতে ইচ্ছে করে।

পান্থ তরুনিমার কোনো হেলদোল না পেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওকে ড্রেসিং টেবিলে সামনে নিয়ে টুলটায় বসায় এবং ড্রেসিং টেবিলে ছড়িয়ে থাকা জিনিস আর তরুনিমাকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নেয়।

উনি আমার গাল হঠাৎ হাত ছোঁয়াতে আমি হুশ থেকে বেরিয়ে এসে দেখি উনার ঠোঁটে জোড়ার ফাকে বাকা ভাবে আইশেডো ব্রাশ ঝুলিয়ে রেখেছেন। আমি উনাকে কিছু বলতে নিলে উনি মুখে থেকে ব্রাশটা নামিয়ে চাপা কন্ঠে বলেন-

: যেভাবে এক ধ্যানের আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে সেই ধ্যানেই থাকো। একটা কথাও বলবে না। নইলে তোমার আজকে…

কথাটা শেষ না করেই একটা অদ্ভুত বাকা হাসি হাসলেন উনি। তবে আমার বুঝতে রইল না যে উনি কি বুঝাতে চাইছেন। আমি লক্ষ্মী বাচ্চার মতো চুপচাপ বসে আছি। আর উনার দিকে তাকিয়ে আছি।

#চলবে____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে