#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা
পর্ব-২২
পান্থ নিজের চেম্বারের টেবিলের উপর দুইহাত ভাজ করে মাথা এলিয়ে বসে আছে। প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা করছে সেই সাথে পুরো পৃথিবী ঘুরছে ওর। হসপিটালের এসে পেইনকিলার খেয়েছে ঠিকই কিন্তু তাতে যেন কাজ করছে না। হালকা ঠান্ডা আবার গরমও লাগছে। এসি অফ করে ফুল স্পীডে ফ্যান ছেড়ে বসে আছে ও। কিছুক্ষণ রিন্তা পান্থর চেম্বারে ঢুকে দেখে পান্থ হেড ডাউন করে আছে। ওর কক্ষে যে কারো প্রবেশ পড়েছে তার উপস্থিতি পান্থ উপলব্ধি করতে পেরেছে। রিন্তা পান্থর সামনে যেয়ে হালকা কাশি দিয়ে কছু বলতে নিবে তার আগেই পান্থ আগের অবস্থায় বিদ্যমান থেকে বলে –
: কিছু বলবে রিন্তা তুমি?
রিন্তা কিছু বলার আগে পান্থ যে ওর উপস্থিতি আন্দাজ করতে পারায় রিন্তা অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-
: তুমি কিভাবে বুঝলে যে আমি….
পান্থ রিন্তার কথা শেষ না হতে দিয়েই নিজে বলে-
: তুমি ছাড়া আমার এসিসটেন্ট অন্যকাউকে আমার পারমিশন ছাড়া এলাউ করে না। আর সেইটা তুমি জানো। এখন বলো কি বলতে এসেছো? যদি ইমপর্টেন্ট কিছু না থাকে তাহলে আমরা পরে কথা বলি। আই নিড সাম রেস্ট নাও।
পান্থ মাথা উঠাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তাই সে মাথা না উঠিয়েই অত্যন্ত শান্ত ভাবে কথাগুলো রিন্তাকে বলে। তাতেই রিন্তা যেন অনেকটা স্বস্তি পায়। কারন পান্থর কক্ষে যে ও ছাড়া অন্যকারো ঢুকার পারমিশন নেই সেইজন্যই ওর গুরুত্ব যে কতোটুকু তা সে বুঝতে পেরেছে। সে মাথা থেকে সবকিছু ঝেড়ে দিয়ে বলে-
: আসলে আই এম রিয়েলি স্যরি পান্থ। তোমার জন্য গতকাল পায়েস বানিয়ে এনেছিলাম কিন্তু তুমি খেতে পারো নি। একচুয়েলি আমি জানতাম না তোমার পায়েসে এলাচি পছন্দ করো না। এলাচির ফ্লেভার তোমার অপছন্দের এবং তোমার তাতে প্রবলেম হয়। নইলে আমি তোমাকে এলাচি ছাড়া পায়েস বানিয়ে খাওয়াতাম। ভাগ্যিস কালকে তরু আপু আমাকে বিষয়টা জানিয়েছিল নইলে…
পান্থ রিন্তার মুখে তরুনিমা নামটা শুনে চমকালেও সে টেবিলে থেকে মাথা উঠাতে নিলেও উঠাতে পারে না। তবুও আস্তে করে মাথা উঠিয়ে রিন্তুার কথার মাঝে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে-
: তরুনিমা? সে কিভাবে?
রিন্তা ওকে পুরো ঘটনা খুলে বলে। পান্থ রিন্তার সামনে তেমন কিছু প্রকাশ করল না। সে চুপচাপ কথাগুলো শুনে পুনরায় মাথা নামাতে নিলে রিন্তা পান্থর আচরনে অন্যরকম কিছু আন্দাজ করতে পেরে ওর কপালে হাত দিতেই চমকে উঠে বলে-
: তোমার তো অনেক জ্বর! সেইজন্যই তুমি এইভাবে বিহেভ করছো পান্থ! ওয়েট আমি এখনোই ডক্টর আর নার্সকে ডাকছি!
পান্থ পুরো কথাটা শুনার আগেই ওর দুচোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। সে আর কারো কোনো কথাই শুনতে পারে না।
———————————————————-
দরজা খুলে “শাহরিয়ার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি”-র চেয়ারম্যান স্যার আহসান শাহরিয়ার হঠাৎ আমার বাসায় আসাতে রীতিমতো চারশত বিশ ভোল্টে ঝটকা খেয়েছি আমার এমন লেগেছে। এর চেয়ে সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো উনি ঘরে প্রবেশ করতে না করতেই সোজা ডাইনিং টেবলি গিয়ে দেখেন অন্তু খিচুড়ি গিলছে। অন্তুর খাওয়া দেখে চেয়ারম্যান স্যার হেসে কুটিকুটি হয়ে গেছেন। আর আমার ভাই বেচারা আমার দিকে বাচ্চাদের মতো চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। উনি হাস্যজ্জ্বল দৃষ্টিতে আমাকে জিজ্ঞেস করেন-
: খিচুড়ি কে রান্না করেছে? তুমি নিশ্চয়ই মামনি?
আমি সামাজিকতা বজায় রেখে মাথা নাড়াতেই উনি আমার বাবাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন-
: তাহলে চলুন কবির হাসনাত সাহেব আজকে দুজন মিলে জমিয়ে আপনার মামনির হাতে খিচুড়ি আর আলু ভাজা এবং বেগুন ভাজা খাই। আর বাহিরে যেহেতু বৃষ্টিও পড়ছে সেই জমবে! হা… হা..
আমার বাবা আমি অন্তু উনার কথাগুলো মাথা উপর দিয়ে যায়। একদিক দিয়ে বাবা তার অভিমান এক সাউডে রেখে চেয়ারম্যান স্যারের সাথে খেতে বসেন। অন্তত সেইজন্য হলেও উনার পাতে আমি এক পিস বেগুন ভাজা বেষি দিলাম। উনি এতো যেন মহাখুশি। খুব আয়েশ করে তিনি খাবার খেলেন। আর খেতে আমাকে বলেন-
: জাস্ট ফ্যাবুলাস মামনি! তোমার আন্টিও এমন খিচুড়ি বানায় না। কিন্তু প্লিজ তোমার আন্টিকে আবার বলো না তাহলে আমার খাওয়া বন্ধ করে দিবেন।
: সমস্যা নেই তো আঙ্কেল! আরেকটা বিয়ে করে নিবেন। তখন আপনার সেকেন্ড ওয়াইফ রান্না করে খাওয়াবে।
অন্তু রস করে কথাটা বললে আমি ওর দিকে রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে তাকলে অন্তু চুপ করে যায়। এদিকে স্যার হু হা করে হেসে দেয়। আমি কথা সামাল দেয়ার জন্য বলি-
: ইটস ওকে স্যার। ম্যাম কিছুই জানবে না।
: ওয়েট! এইটা তোমার বাসা আমার অফিস নয় সো ডোন্ট কল মি স্যার। ওকেহ মামনি?
আমি উনার কথার প্রতিউত্তরে তেমন কিছু না বলে শুধুই মাথা নাড়াই। উনাকে আমি খুব বেশি চিনি না। উনি সবকিছুতে অনেক কড়াকড়ি জানতাম। কিন্তু উনার ভিতর যে একটা বন্ধুত্ব পরায়ন ভাব আছে তা আজকে বুঝলাম।
বাবার সাথে চেয়ারম্যান স্যার বসে কি কথা বলছেন তা কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। উনি হঠাৎ করে আমাদের বসায় আসাতে আমার পুরো মাথায় জগাখিচুড়ি লেগে গেছে। সবার খাওয়া শেষ হলেও এদিকে আমার বজ্জাত ভাই অন্তু আমার আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খিচুরি গিলছে। আমি অগ্নি চক্ষু নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে অন্তুকে বলি-
: এই তুই কিরে? এখানে বসে বসে খিচুরি গিলছিস! জীবনেও মনে হয় খাস না! একটু গিয়ে দেখ না চেয়ারম্যান স্যার বাবার সাথে কি কথা বলছে?
অন্তুর কোনো মাথাব্যথা নেই। সে আপন মনে খিচুরি খেয়েই যাচ্ছে। খিচুরি খেতে খেতে অন্তু বলে-
: আচ্ছা আপু তুমি এমন করছো কেন? তুমি কি চুরি করেছো নাকি খুন করেছো নাকি উনার ছেলেকে কিডন্যাপ করেছো যে এইভাবে টেনশন করছো? আমাকে খাইতে দাও। আরেকটু খিচুরি থাকলে দাও তো!
অন্তুর কথা শুনে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলে আমি অত্যন্ত ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠি-
: ওই চেয়ারম্যান স্যারের ছেলে কিডন্যাপ করলেও ভালো হইতো বুঝলি? খিচুরি খাবি তাই না? নে খা! বেশি করে খা!
আমি অন্তুর প্লেটে দুই চামচের বেশি খিচুড়ি তুলে দিয়ে হনহন করে সেখান থেকে ড্রয়িং রুমে যেতেই দেখি চেয়ারম্যান স্যার চলে গেছেন। বাবার দিকে তাকাতেই দেখি বাবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আমি নরম সুরে বাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি-
: কি হয়েছে বাবা? চেয়ারম্যান স্যার এমন কি বললেন যাতে তুমি এতো চিন্তিত হয়ে গেছো?
: কি বলবেন আহসান সাহেব? উনি যে কি বলতে চেয়েছিলেন তা উনিই জানেন। উনি আমাকে তো কিছুই বলতে পারলেন না। হুট করে উনার ফোনে রিন্তা নামে একটা মেয়ের ফোন আসাতে তিনি তাড়াহুড়ো করে চলে গেলেন। আমি জিজ্ঞেস করাতে বললেন যে পান্থর অবস্থা ভালো না। ও নাকি হসপিটালে এডমিট। তাই তিনি ছুটে গেলেন।
বাবা শেষের কথাগুলো শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। ভেতরটা কোনো এক অজানা ব্যথায় মোচর দিয়ে উঠে আমার। আমি আর সপান্থর অবস্থা ভালো না বলতে কি বুঝানো হয়েছে? উনাকে তো গতকাল ভালো দেখেছিলাম। আজকে কি হলো এমন? কিছু বুঝতে পারছি না। এক অস্থিরতা কাজ করছে নিজের ভিতর। বাবা আমার কাধে হাত রাখতে আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি।
#চলবে____
#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা
পর্ব-২৩
তিথি অফিসে খুব মনোযোগ সহকারে নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছে। কেউ যে তার দিকে চাতক পাখির মতো একদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার প্রতি তিথির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মাহিম পিয়নকে দিয়ে তিথির কাছে একটা ফাইল পাঠালে তিথি একবার মাহিমের দিকে তাকালে দেখে মাহিম ল্যাপটপে কাজ করছে। তিথির ডেস্কের থেকে মাহিমের কেবিনের দূরত্ব বেশি নয়। তিথি ফাইল খুলে দ্বিতীয় পৃষ্ঠা খুলতেই একটা চিঠি পায়। চিঠিটা দেখে তিথি রীতিমতো হতবাক হয়ে যায়। কারন এই চিঠিটা তিথিই একসময় মাহিমকে দিয়েছিল। তিথি নিজেকে খুব শান্ত রেখে ফাইলটা একপাশে রেখে দিয়ে আবার নিজের কাজে মনোনিবেশ করে। মাহিম বেচারা মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে নিজের কাজে মন দেয়। আর তিথি তা দেখে বলে-
: এতো সহজে নয় মি: মাহিম শাহরিয়ার। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন যে আপনি আমার অভিমান ভাঙাবেন। তো দেখি আর কি কি করতে পারেন আপনি! হি..হি..
তিথি কথাগুলো মনে মনে বলে আড়ালে হেসে নিয়ে আবার কাজ করা শুরু করে।
…….
তরুনিমা রুবিনা শাহরিয়ার সাথে করিডোরে বসে আছে। আহসান শাহিরিয়ার ডক্টরের সাথে কথা বলছেন। অন্তু যতোটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছে। মিসেস রুবিনা যতোটা স্ট্রণ হোক না কেন নিজের সন্তানের এমন অবস্থায় নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করেও পারছেন না। তরুনিমা মিসেস রুবিনার কাধে হাত রাখতে তিনি অশ্রু ভেজা কন্ঠে তরুনিমাকে বলেন-
: এমন কেন হলো? নিশ্চয়ই কালকে সারারাত ব্যালকনিতে বসে ছিল। কতোবার নিষেধ করেছি এমনটা না করতে!
তরুনিমা মিসেস রুবিনার কাধে এক হাত রাখা অবস্থা অন্যহাতে মিসেস রুবিনা এক হাত নিজের হাতের মুঠো নিয়ে চাপা কন্ঠে বলে-
: চিন্তা করবেন না আন্টি। উনি ঠিক হয়ে যাবেন। কিছু হবে না উনার। ডক্টর নার্স সবাই আছেন সবাই উনাকে সুস্থ করে তুলবেন।
রিন্তা পান্থ কেবিনে ঢুকতে পারেনি। সে ওর চেম্বারে চুপ করে বসে বসে কান্না করছে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। ও যে পান্থকে কতোটা ভালোবাসতে শুরু করেছে তা শুধুমাত্র রিন্তা নিজেই জানে। রিন্তা ফোনের পরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসতেই পান্থর চেম্বার থেকে বেরিয়ে পান্থর কেবিনের দিকে ছুট লাগায়।
ডক্টর পান্থর কেবিন থেকে বের হতেই তরুনিমাসহ সবাই ডক্টরকে ঘিরে ফেলে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে ডক্টর বলেন-
: আই এম স্যরি। একচুয়ালি….
আহসান শাহরিয়ার কিছু বলার আগেই তরুনিমা আর শান্ত থাকতে না পেরে ডক্টরের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলে-
: কি হয়েছে ডক্টর? আপনি সেই কখন উনার কেবিনে ঢুকে বসে আছেন! বের তো হলেনই না বাইরে যে একজন রোগীর ফ্যামিলি বসে আছে কোনো মাথাব্যথা আছে! এতোক্ষণে বের হলেন! তারপর বের হয়ে বলছেন যে স্যরি! আপনাদের ওই একটাই সমস্যা কিছু হলেই স্যরি! এই স্যরি ছাড়া আর কোনো শব্দ কি আপনারা খুঁজে পান না!!
তরুনিমার এমন ভাবে কথা বলাতে ডক্টর তব্দা খেয়ে যায়। উনি আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিলে তরুনিমা এবার চেঁচিয়ে বলে-
: এখন আবার আমতা আমতা করছেন কেন? বলুন কি বলবেন! বলুনন…!!
: উনাকে প্লিজ কেউ একটু থামান! আমার এমনিতেও বিপি প্রবলেম। প্লিজ মি: শাহরিয়ার উনাকে একটু থামান!
তরুনিমা এমন রিয়াকশনে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।অন্তু তরুনিমা কাছে এসে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। তরুনিমার চোখে মুখে এক অজানা ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখা দিচ্ছে। ভেতরে যেন এক প্রকার ঝড় উঠেছে। যেই ঝড়টা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রিন্তা দূর থেকে সব দেখে সামনে এসে পরিবেশটাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। এদিকে ডক্টর নিজের পকেট থেকে একটা বিপির ট্যাবলেট খেয়ে বিপি ঠিক করে বলেন-
: দেখুন পান্থ এখন ঠিক আছে। স্যরি বলেছি নিউজটা দিতে দেরি হবার জন্য।
রিন্তা অগ্রসর হয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে অশ্রু ভেজা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-
: ডক্টর, কি হয়েছিল একচুয়ালি পেসেন্টের?
: ঘুম কম হওয়া এবং কোনো কারনে অত্যধিক ঠান্ডার জন্য উনার নিউমোনিআ দেখা দিয়েছে। কিন্তু ডোন্ট ওরি সিরিয়াস পর্যায়ে যায় নি। এছাড়াও উনার মাইগ্রেনের পেইন এতোটাই বেড়ে গেছে যার জন্য সবমিলিয়ে উনি পরে সেন্সলেস হয়ে যান। আর উনি মাইগ্রেনের ঔষুধ না খেয়ে এমনকি জ্বরের জন্য দুটো পেইনকিলার খেয়েছেন যেটা একটু হলেও সাইড এফেক্ট ক্রিয়েট করেছে। আমরা উনাকে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে উনি ঘুমাচ্ছেন এখন। আর দুটো দিন অবজার্ভেশনে থাকবে উনি।
তরুনিমা যেন এখন হাফ ছেড়ে বাঁচে। ওর উপর থেকে যেন কোনো বড় সর পাথর নেমে গেছে। নিজেকে ওর অনেক হালকা লাগছে। তবুও যেন পান্থকে দেখার জন্য ওর ছটফট করছে। সে পান্থর জন্য এই অদ্ভুত অনুভূতির কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছে না। তরুনিমার ফোনে কবির হাসনাতের ফোন আসাতে সে সেখান থেকে চলে যায়।
প্রায় অনেকদিন কেটে গেছে। পান্থ এখন কিছুটা সুস্থ। তরুনিমার সময় হলেই পান্থকে হসপিটালে এসে দেখে যায়। পান্থর সাথে তরুনিমা তেমন কোনো কথাই বলেনি। ভিজিটিং আওয়ারে মাঝে মাঝে দেখে যায়। আর মাঝে মাঝে বাসা থেকে ওর জন্য খাবার নিয়ে আসে। পান্থর বাবা মা তরুনিমাকে এতোটা খেয়াল রাখতে দেখে নিজেরাও কিছু জিনিস উচ্চে করে তরুনিমার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। পান্থ তরুনিমার এমন কর্মকান্ডগুলোকে বলতে গেলে ওর অনেক ভালো লাগে। কিন্তু সে নিজেও চুপ করে থাকে। কিছুই বলে না। রিন্তা যেন সেটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না। রিন্তা চাইছে না পান্থর আশেপাশেও তরুনিমাকে ঘেষতে দিতে। কিন্তু ও কিছুই বলতে পারছে না।
রিন্তা পান্থর কেবিনে বসে ওর ফাইলগুলো চেক করছে। তখন তরুনিমা পান্থ কেবিনে ঢুকতেই রিন্তা বলে উঠে-
: আচ্ছা তুমি পান্থকে দেখার জন্য সবসময় কেন আসো তরু আপু? একদিন অথবা দুইদিন আসলেই তো পারো। কারন তুমি তো অনেক ব্যস্ত থাকো কাজ নিয়ে। টায়ার্ড হয়ে যাবে না?
তরুনিমার অত্যন্ত শান্ত এবং শীতল কন্ঠে বলে-
: আচ্ছা রিন্তা তুমি এখানে প্রতিদিন কেন আসো?
রিন্তা তরুনিমার এমন প্রশ্ন শুনে হচকচিয়ে বলে-
: আমি পান্থর ফ্রেন্ড আর আমি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট আমার তো আসতেই হবে।
: হুমম… ইউ আর কারেক্ট। এজ আ পান্থর ফ্রেন্ড এন্ড মেডিকেল স্টুডেন্টের হওয়াতে তুমি যেমন তোমার দায়িত্ববোধ থেকে আসো। আর তুমি সেইজন্য টায়ার্ড হও না। আমিও আমার কিছু দায়িত্ববোধ থেকেই এখানে আসি(পান্থর দিকে একবার তাকিয়ে)। নাহলে এখানে আসার প্রয়োজন হতো না। আর এতো আমি টায়ার্ড হই না। আই হোপ তোমার আর প্রশ্ন থাকবে না।
পান্থ তরুনিমার কাছ থেকে রিন্তার প্রতি এমন কোনো জবাব প্রত্যাশা করে নি। কিন্তু তরুনিমার এমন উপযুক্ত জবাব শুনে সে বড্ড খুশি হয়। রিন্তা আর কিছু না বলে ক্লাসের বাহানা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
মাহিমকে পান্থর ব্যাপারে কিছুই জানানো হয় নি। আর এদিকে মাহিম তিথির অভিমান ভাঙানো বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু তিথি সেগুলো সব যেন জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। মাহিম তো আর জানে না যে তিথির অভিমান তো অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছে। তিথি মাহিমের শুধু ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। মাহিমও যেন হাল ছাড়ছে সে তার ভালোবাসার মানুষটির অভিমান ভাঙিয়ে তার কাছে ফিরিয়ে আনবেই!
ব্রেক টাইমের পর কোনো কাজ না থাকায় তিথি অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা হাটা শুরু করে। কিন্তু সে তার বাসার রাস্তার দিকে যায় না উল্টো পথ দিয়ে হাটা শুরু করেছে। সিলেটের আবহাওয়া একেক সময় একেক রকম হয়। আজকেও হালকা মৃদু বাতাস বইছে। তিথির সামনে ওদের কোম্পানিরই কিছু কন্সট্রাক্টশনের কাজ চলছে। মাহিম সেখানেই দাঁড়িয়ে একজন ব্যক্তির সাথে কথা বলছে। তিথি মাহিম কে দেখে উল্টো পথে হাটা শুরু করতে নিলেই লক্ষ্য করে মাহিমের বিল্ডিং এর উপর থেকে একটা ইট মাহিমের উপর পড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তিথি মাহিমের থেকে অনেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। সে কি করবে কোনো কিছু যেন বুঝতে পারছে না। সে শুধু মাহিম বলে জোরে চিৎকার দিয়ে নিজের চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
#চলবে____
(বাস্তবিকতা ও কাল্পনিকতার সংমিশ্রনে গল্পটি সাজানো। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গুড লাক।)