প্রিয়দর্শিনী পর্ব-১২+১৩

0
1211

#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-১২

অফিসের সমস্ত কাজ করে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হতে নিলে হঠাৎ তরুনিমার সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। এইভাবে হর্ন না বাজিয়ে ঝড়ের গতিতে টুস করে গাড়িয়ে থামিয়ে গাড়ির গ্লাসটা নিচে নামাতেই চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে যায় তরুনিমার। কারন তরুনিমার সামনে স্বয়ং মি: শিমপাঞ্জির বংশধর ওরফে পান্থ। যদিও শিমপাঞ্জির বৈশিষ্ট্যর সাথে পান্থর কোনো মিল নেই তবুও তরুনিমা ওকে এই নামে ভূষিত করেও ভেবে পাচ্ছে না যে তাকে এই নামটা কেন দিয়েছে? মেজাজ যতোটুকু খারাপ হয়েছিল এখন পান্থকে দেখে মেজাজটা পুরোই বিগড়ে গেছে ওর। তবুও এইবার আর কোনো কথা না বাড়িয়েই গাড়িসহ পান্থকে পাত্তা না দিয়ে সাইড কেটে চলে আসতেই পান্থ যেন পিপীলিকার মতো গাড়ি নিয়ে পিছু পিছু আসছে তরুনিমার। পান্থ যখন খেয়াল করে যে তরুনিমা পান্থকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না তখন অবশেষে পান্থ নিজের দুই পকেটে দুই হাত গুজে দিয়ে তরুনিমার সামনে এসে দাড়িয়ে ওর দিকে ঝুঁকে ভ্রু নাচাতে তরুনিমা লক্ষ্য করে যে পান্থকে অন্যদিনের চেয়ে আজকে অদ্ভুত লাগছে। পরে সে নিজেও একটু পান্থর দিকে এগিয়ে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করতেই পান্থ যেন ভড়কে যায়। হয়তো ভাবতেই পারে নি যে তরুনিমা তার দিকে এমনভাবে তাকাবে। তরুনিমা পান্থর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের তর্জনী আঙুলটাকে ওর মুখের সামনে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলে-

: আজকে চোখে চশমা পড়েন নি কেন?

তরুনিমার মুখে আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে পান্থ তব্দা খেয়ে যায়। তরুনিমা একই প্রশ্ন করলে পান্থ একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল-

: আসলে আজকে হঠাৎ করে চশমাটা ভেঙে গেছে তাই চশমা পরি নি।

: ওহ… সেই জন্যই বোধহয় সামনে যে মানুষ আছে সেইটা খেয়াল করতে পারেন নি বোধ হয়। তাই তো হর্ন না বাজিয়ে ঝড়ের গতিত আমার উপর গাড়িয়ে চালিয়ে দিতে এসেছেন।

পান্থ তরুনিমার কথাগুলো শুনে যেন আরেকদফা তব্দা খায়। তরুনিমা যে এইভাবে কথা বলতে জানে সেইটা আজকের ঘটনায় সে নিশ্চিত হয়। পান্থ এইবার এমন ভাবে হেসে দিল যেই হাসিতে তরুনিমা রাগ করবে নাকি মায়ায় জড়িয়ে যাবে বুঝে উঠতে পারছে। তরুনিমা নিজের রাগটাকে প্রাধান্য দিয়ে অত্যন্ত ঝাঝালো কন্ঠে বলল-

: এই! আপনি আবার হাসছেন? আমার সামনে হাসবেন না খবরদার! নইলে পঁচা পানিতে চুবিয়ে মারবো। শিমপাঞ্জি একটা!

শেষের অংশটুকু বিরবির করে বললেও পান্থ শুনে ফেলে কথাটা। পান্থর যেন হাসি আর থামছে না। কিন্তু এখন আর হাসতে সে পারছে না। অতি কষ্টে নিজের হাসিটাকে থামিয়ে বলল-

: আচ্ছা মিস টুকটুকি আর হাসবো না। এইবার চলুন আমার সাথে।

: কোথায় যাবো আমি আপনার সাথে? আর আপনি আমাকে মিস টুকটুকি বললেন কেন?

তরুনিমা পান্থ রাগান্বিত সুরে জিজ্ঞেস করলে পান্থ একটা ভেংচি কেটে বলল-

: এহ..হে… আপনি যেমন আমাকে শিমপাঞ্জি নামে ডাকলেন আমিও আপনাকে মিস টুকটুকি বললাম। তাও তো ভালো নাম দিয়েছি। যদিও সিসিমপুরের টুকটুকির সাথে আপনার কচুর মিল আছে।

তরুনিমা ড্যাবড্যাব করে পান্থর দিকে তাকিয়ে আছে। পান্থ এইবার জোরালো কন্ঠে বলল-

: এইভাবে তাকিয়ে না থেকে গাড়িতে উঠে বসুন।

তরুনিমা যেন এইবার পুরো লজ্জায় নিজের মাথা কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ওর কি ভূতে নাকি পেত্নিতে ধরেছে সেইটা ওর ঠাওর করতে পারছে না। অতঃপর নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল-

: বেশ করেছি আপনাকে শিমপাঞ্জি বলেছি। শিমপাঞ্জি কোথাকার। হাউএভার, তার আগে বলুন আমরা যাচ্ছি কোথায়?

: চশমা কিনতে যাচ্ছি। যেহেতু আমার চোখে চশমা নেই আর আমি না দেখেই আপনার উপর গাড়ি চালিয়ে দিচ্ছিলাম তাই এজ আ ডাইরেকশন কোচ হিসেবে আপানাকে নিচ্ছি। এখন উঠুন ম্যাডাম। অলরেডি দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর বাকি কোনো প্রশ্ন থাকলে করবেন।

তরুনিমা আর কিছুই বলল না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে একটু পর পান্থ নীরবতা ভেঙে নিজেই বলল-

: মেহুর কাছে আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছিলাম। এখন তো দেখছি আরও অনেক কিছু জানার বাকি আছে। তবে আমি যতোটুকু জানি তোমার ব্যাপারে তা হয়তো কেউ জানে না তরু।

শেষের লাইনটুকু পান্থ মনে মনে বলে। কিন্তু আগের দুটো লাইন ঠিকই তরুনিমার কান অবদি পৌঁছানোর পর তরুনিমা কিছু বলতে নিয়ে থেমে যায়। কারন ওর এখন আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না।

তরুনিমা গাড়ির জানালা ভেদ করে বাইরের গাছ গুলোকে দেখতে থাকে যেগুলো গাড়ির গতির সাথে পিছনে চলে যাচ্ছে। পান্থ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই গুনগুনিয়ে বলে উঠে-

“অলির কথা শুনে বকুল হাসে
কই তাহার মত তুমি আমার কথা শুনে
হাসো না তো।।”

আচমকা লাইন দুটো শুনে তরুনিমা পান্থ দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই পান্থ জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থামাতেই তরুনিমা হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায়। পান্থ সেইটা বুঝতে পারে তবুও সে অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় একটা ছোট হাসি দিয়ে বলল-

: আসুন চশমার দোকান এসে গেছে।

তরুনিমা আর কিছু না বলে দুজনই চশমার দোকানে যায়। অনেক খোঁজার পর পান্থ নিজের পছন্দ মতো ওর চশমাটা কিনে নেয়। চশমাটা যদিও তরুনিমা পছন্দ করে দিয়েছে। কারন পান্থ চশমার ফ্রেম কেনার জন্য কোনো ধরনের এফোর্ট দেয় নি। সে শুধু এইটা ওইটার খুঁত ধরে গেছে। অবশেষে তরুনিমা বিরক্ত হয়ে নিজেই একটা পছন্দ করে পান্থকে দেখতে বলে। পান্থ না দেখেই এইটাই কিনে নেয় যেটাতে তরুনিমার একটু খটকা লাগলেও কিছু বলে না। তরুনিমাকে বাসায় ড্রপ করে তরুনিমার কাছে একটা প্যাকেট দেয় পান্থ। আর বলে সেটা যেন সে মেহুকে দেয়। আর বাকি কোনো প্রশ্ন সেটাও যেন মেহুকে জিজ্ঞেস করে।

প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। তরুনিমা আর পান্থর হুটহাটই দেখা হয়ে যায়। তরুনিমার পথের সাথে পান্থর পথ কিভাবে মিলে যায় তা তরুনিমা ভেবেই পায় না। তরুনিমার বাবা আর অন্তু ঢাকায় ফিরে গেছেন। যাওয়ার আগে কবির হাসনাত তার মেয়েকে তার প্রিয় শহরটায় ফিরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু একসময় যে শহরটা তরুনিমার বড্ড প্রিয় ছিল সেই শহরটাই আজ তার অপ্রিয়ের তালিকায় নাম লিখে গেছে। তবুও নিজের বাবাকে প্রতিবারে মতোই কেবল একটা সান্ত্বনা দেয় ও। কোনো একবার আবার সে ফিরে আসবে সময় হলে। কবির হাসনাতও সেই আশা নিয়ে চলে যান। কিন্তু কখনো কি আর ফিরে যেতে পারবে সে তার সেই পুরোনো শহরে যেখানে রয়েছে তার এক বিষাদময় স্মৃতি সেটাকে ভুলে যেতে পারবে ও?

—————————————————

সিলেটের এক রিসোর্টে এসে জুস হাতে নিয়ে এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছি। আসার বিন্দুপরিমান ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও অফিসিয়াল প্রোগ্রাম বিধায় বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। একটু পর লক্ষ্য করি সারা প্রোগ্রামে এসেছে। সে আমাকে দেখা ভাত্রই আমার কাছে আছে।সারাকে আজকে অনেকটাই সুন্দর লাগছে। ওকে আমি কখনোই শাড়ি পরতে দেখিনি। আজকে ওকে শাড়ি পরিধানরত অবস্থায় দেখে বড্ড অন্যরকম লাগছে। সারা আমার কাছে এসে বলল-

: কি অবস্থা তরু আপু? প্রোগ্রাম শেষ?

: আরেহ না! শুরুই হয় নি আর শেষ হয়ে যাবে। এখনো চেয়ারম্যান স্যারই আসেনি এখনো। আচ্ছা সারা, তুমি কি জানো কেন এই প্রোগ্রাম?

: না, তরু আপু। আমাকে শুধু বলেছে চেয়ারম্যান স্যার একটা অফিসিয়াল পার্টির অরগানাইজ করেছেন। বাধ্যতামূলক আসতে হয়েছে আমাকেও।

প্রথমে ভেবেছিলাম সারাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানতে পারবো। কিন্তু এখন দেখছি সারাও কিছু জানেন না। অফিসের সবারই উপস্থিত দেখছি শুধুমাত্র মাহিম ভাইয়া বাদে। সারার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ যা দেখলাম তাতে আমার চোখ যেন কপালে উঠে গেছে। কারন এইখানেও মি: শিমপাঞ্জি এসে হাজির। উনি যাতে আমাকে না দেখতে সেইজন্য সারাকে নিয়ে অন্যস্থানে চলে আসি। সারাকে এভাবে টানতে টানতে নিয়ে আসাতে বেচারি আমার দিকে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। সারা হঠাৎ এদিক সেদিক লক্ষ্য করে আমার দিকে কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলল-

: কি হলো তোমার আবার? এইভাবে এখানে নিয়ে আসলে?

আমি সারার কথা এক কান ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়ে শুধু এটাই ভাবছি উনি আমাদের অফিসিয়াল পার্টিতে কি করছেন? সারা আমার গায়ে হালকা টোকা দিতেই আমি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি। ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখি মাহিম ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। সারা মাহিম ভাইয়াকে দেখে সেখান থেকে কোল্ড ড্রিংকস আনার মিথ্যে অজুহাত দিয়ে চলে যায়। আমি মাহিম ভাইয়ার সাথে কথা বলতে মোটেও ইচ্ছুক নই। তবুও উনার দিকে লক্ষ্য করে দেখি উনি আজকে যথেষ্ট ফরমাল হয়ে এসেছেন। আজকে দেখে মনে হচ্ছেই না যেন উনি আমাদের অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা। সেইজন্যই হয়তো সারা উনার দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ খেয়াল করে দেখি মি: শিমপাঞ্জিও ফরমাল ড্রেস পরেছেন। দুজনের পোশাক প্রায় নয় সম্পূর্ণই একই ব্লু কালারের ড্রেস। মাথা যেন পুরো জ্যাম হয়ে আছে। পান্থ আমাকে খেয়াল করে যখন এদিকেই এগিয়ে আসতে নিলেন আমি মাহিম ভাইয়া কোনো কথা বলার আগেই উনার থেকে পাশ কাটিয়ে চলে আসি। পান্থকে এড়িয়ে যাওয়ার মূল কারন হলো উনার বকবকনি। আর উনার কোনো কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি আমি কিছু বলতে যাই তখনই উনি হু হা করে হেসে দেন। যেই হাসিটা আমাকে যেন উনার প্রতি বিরক্তের চেয়ে অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। কিন্তু এসব কিছুকে কোনোভাবেই নতুন করে জায়গা দেয়ার সৃষ্টি করা বোকামি ছাড়া কিছুই হবে না। দ্বিতীয়বার সেই বোকামি আমি করতে চাই না।

কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যান স্যার এসে পার্টি অংশগ্রহণ করেন। সাথে উনার মিসেসও রয়েছেন। এই প্রথম স্যার আর ম্যামকে একসাথে দেখা হয়েছে আমার। ইতিমধ্যে অনেক প্রেস এবং মিডিয়াও এসে গেছে। উনাদের নামও আমার ঠিকমতো জানা নেই। তবে এই কোম্পানিতে কাজ করে যতটুকু বুঝেছিলাম আর তা হলো উনারা এমপ্লোয়িদেরকে নিজের পরিবারের মতো মনে করেন। চেয়ারম্যান স্যার সবার সাথে পরিচিত হয়ে সামনে গিয়ে হ্যান্ড মাইকটা হাতে নিয়ে বললেন-

: লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান! থ্যাংকস ফর এটেন্ডিং দ্য পার্টি। একচুয়ালি আজকে আপনাদের সবাইকে একজনের সাথে পরিচিত করিয়ে দিতে চাই। তবে তার আগে কিছু কথা বলতে চাই আপনাদেরকে আর সেটা হলো:

শুরুতেই আপনারা জেনে এসেছেন যে এই কোম্পানিতে একজন বস আছে। কিন্তু সে সেইটা আপনারা জানেন না। আর কোম্পানির নামটিও আলাদা রাখা হয়েছিল। আমাদের “শাহরিয়ার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির” অাওতাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও এটি অন্যভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল সিলেটে। আর এই বুদ্ধি এবং এই কোম্পানিটাকে আজকে এতো দূর আনার জন্য আমি যতটুকু করেছি তার চেয়ে অধিক করেছে আমার বড় ছেলে এবং এই “টি- টেক” কোম্পানির মালিক মাহিম শাহরিয়ার যাকে আপনারা এতোদিন “টি-টেক” -এর সিনিয়র কর্মকর্তা মি: মাহিম আহমেদ নামে চিনতেন। সে আসলে “শাহিয়ার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান মি: আহসান এন্ড মিসেস রুবিনা শাহরিয়ার এর বড় ছেলে মি: মাহিম শাহরিয়ার। কাম অন মাই বয়! কাম অন স্টেজ!

একমাত্র ম্যানেজার সাহেব ছাড়া বাকি সবাই যেন হতোবাক হয়ে রয়েছে। কেউ ভাবতেই পারেনি যে মাহিম ভাইয়া আমাদের বস। তবে আরো একজনের চেহারায় যেন কোনো চমকে চিহ্ন নেই সে যেন জানতোই যে মাহিম ভাইয়া আসলে কে? সে নিজের চোখমুখকে অত্যন্ত স্বাভাবিক করেই রেখেছে। আমার এইবার চোখ যায় আরো দুইজনের উপর আর তা হলো তার মিনহাজ ভাইয়া এবং মেহুর ভাবির দিকে। আমি যেন আরেকদফা অবাক হই যে ওরাও এই সেইম পার্টিতে। তারমানে সকালে ভাবি এই পার্টির কথা বলছিল আমাকে। সব যেন মাথা উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। আহসান শাহরিয়ার উল্লাসিত কন্ঠে আবার বললেন-

: প্লিজ, গিভ আ বিগ ক্ল্যাপ ফর হিম! ওয়েলকাম মাই সন ওয়েলকাম! ও হ্যাঁ! আরেকটি ইমপর্ট্যান্ট কথা, সবাই তো আমার বড় ছেলে সাথে পরিচিত হয়েছেনই। তবে আমার কিন্তু একটা ডায়মন্ড নয় উপরওয়ালা আমাকে দু দুটো ডায়মন্ড দিয়েছেন। আরেকটা ডায়মন্ড হলো মি: আহসান এন্ড মিসেস রুবিনা শাহরিয়ার এর ছোট ছেলে পান্থ শাহরিয়ার যে কিনা ইতিমধ্যে নিজের নাম ওয়ান অফ বেস্ট সাইকিয়াট্রিক তালিকায় করে নিয়েছে। প্লিজ কাম অন দ্য স্টেজ এন্ড গিভ এন এনাদার ক্ল্যাপ ফর হিম।

এইবার যেন আমি পুরো চারশত বিশ ভোল্টেজের শকড খাই। কারন এদের কাউকে দেখে মনেই হবার নয় যে মাহিম ভাইয়া আর ভাবির ফ্রেন্ড পান্থ উনারা দুই ভাই। আমি চুপচাপ দেখে যাচ্ছি আর ক্ল্যাপ করে যাচ্ছি। মাহিম ভাইয়া এইবার নিজের হাতে মাইকটা নিয়ে বললেন-

: আমার বাবা আই মিন মি: আহসান শাহরিয়ার উনি আমাকে আজকে “টি- টেক” মালিক অথবা বস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যদিও এখন কিছুটা পরিবর্তন হলেও তবে আমি আপনাদের মাঝে যেমন ছিলাম তেমন ভাবেই থাকবো। এই “টি- টেক” এর বস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাটা আমার স্বপ্ন ছিল কিন্তু সেইটাকে বাস্তবায়ন করা তখনই সম্ভব করা গিয়েছে একমাত্র আপনাদের সহযোগিতার ফলে। আর হ্যাঁ আমাকে এইখানে নিয়ে আসার জন্য যেমন আমার বাবা আমার পাশে যেমন ছিলেন ঠিক তেমনই আমার মামনি মিসেস রুবিনা শাহরিয়ার এবং আমার একমাত্র সাপোর্টার যে কিনা সবসময় আমাকে প্রতিটি কাজে উৎসাহ দিয়েছে আমার ছোট ভাই এবং আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমার ভাই পান্থ শাহরিয়ার। সবার কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ।

পান্থ এইবার নিজে মাইটা হাতে নিয়ে বলল-

: আমার বড় ভাই মাহিম শাহরিয়ার আমার সম্পর্কে যা বলেছে সেইটা ভাইয়ার দিক থেকে সে বলেছে। তবে আমিও একটা কথাই বলতে চাই বাবা মি: আহসান শাহরিয়ার আমাকে তিনি তার আরেক যেই ডায়মন্ড বলেছেন তা তৈরি হওয়ার জন্য আমাকে আমার বড় ভাইয়া সাহায্য করেছেন। আর মামনি উনি তো আমাদের একজন শিক্ষক হিসেবে ছোট থেকে গাইড করে এসেছেন। উপরওয়ালার কাছে চিরকৃতজ্ঞ উনি এমন পরিবার দিয়েছে আমাকে। ধন্যবাদ।

মিসেস রুবিনা যেন তার দুজন ছেলের কপালে আদর করে দিলেন। তার যেন আজকে সকল শ্রম সার্থক হয়েছে। তাদের ছেলেদের তিনি মানুষ করতে পেরেছেন। সন্তানরা যখন মানুষের মতো মানুষ হয়ে নিজের ঠিকানায় পৌঁছে যেতে পারে প্রত্যেক মা -বাবার সকল পরিশ্রম তখন সার্থক হয়ে যায়। এক পরিপূর্ণ পরিবার দেখতে পেরে নিজের কাছেই এক অন্যরকম ভালো লাগছে। হঠাৎ করে কেউ আমার কাধে হাত রাখলে আমি পিছনে তাকাতেই চমকে উঠি।

#চলবে____

#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-১৩

তরুনিমা পিছন ফিরে তাকাতেই লক্ষ্য করে যে পান্থ দাঁড়িয়ে আছে ওর পিছনে সেই মায়াবী হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে। সে পান্থকে ওর পিছনে দেখে চমকে যায় তাই সে স্টেজের দিকে আবার ঘুরে তাকাতেই পান্থ তরুনিমা কাধে হাত দিয়ে ওকে ডেকে বলল-

: কি ভাবছেন, মিস টুকটুকি? খুব তো বলেছিলেন যে আপনি আমার পার্টিতে আসবেন না। মেহু আর মিনহাজকেও মানা করে দিয়েছিলেন। এখন?

: আমি আপনার পার্টিতে আসেনি। আমি অফিসিয়াল পার্টিতে এসেছি। যদি সেটা না হতো তা হলো আমি আসতাম না এবং আপনার পার্টিতেও যেতাম না।

তরুনিমা শক্তভাবে কথাটা বললে পান্থ নিজের দুই হাত ক্রস করে জড়িয়ে রেখে বলল-

: আচ্ছা আপনি কি প্রতিদিন চিরতার রস খান নাকি?

: জ্বি?

তরুনিমা পান্থ এমন প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে পান্থ একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল-

: না মানে… চিরতার রস তো অনেক তেতো হয় তাই বললাম আরকি, চিরতার রস খান নাকি? সবসময় চেহারায় একটা খিটখিটে মেজাজ নিয়ে থাকেন। একটু হাসতেও তো পারেন।

: এট ফার্স্ট, আমি হাসতে পারি না। এন্ড সেকেন্ড আমি এইভাবেই কথা বলি। এখন যদি আপনার ভালো না লাগে ইউ মে গো নাও। ওকে?

তরুনিমা কথাগুলো সোজাসাপ্টা ভঙ্গিমায় বলে পান্থকে সাইড কেটে চলে যায়। পান্থ ওইভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই একটা ছোট শ্বাস ফেলে বলল-

: ওকেহ!

: কি ওকে রে?

মাহিম পান্থর কাধে হাত রেখে কথাটা বললে পান্থ কথা ঘুরানোর জন্য এদিক সেদিকে মাথা ঘুরিয়ে বলল-

: দেখছিলাম সবকিছু ঠিক আছে নাকি?

: আসলেই নাকি অন্যকিছু দেখছিলি?
মাহিম পান্থর দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকাতে পান্থ কথা ঘুরিয়ে বলল-

: না ভাইয়া, অন্যকিছু না। আচ্ছা শুনো, যাকে নিজের মনের কথাগুলো বলবে বলে এতো বছর জমিয়ে রেখেছো তাকে পেয়েছো?

মাহিম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একজনকে ফোনে দেয়ার অজুহাতে সেখান থেকে চলে গেলে পান্থ বিপরীতে একটা বাকা হাসি দেয়। তরুনিমা সারার সাথে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ মেহু আর মিনহাজ সেখানে আসলে ওরা কিছু বলার আগেই তরুনিমা পুনরায় একই কথা বলে। বিভিন্ন ধরনের কথা বলার মাঝে মাহিম এসে তরুনিমাকে ডাক দিয়ে রিসোর্টের বাইরে একটা ছোট বাগান আছে সেখানে নিয়ে গিয়ে মাহিম বলল-

: তরুনিমা একচুয়েলি তোমাকে আমার কিছু বলার ছিল। আসলে….

তরুনিমা মাহিমকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে অত্যন্ত শান্ত গলায় বলল-

: আপনার কিছু বলার আগে আমি আপনাকে কিছু কথা বলে নিতে চাই। দেখুন মাহিম ভাইয়া, আমাদের পৃথিবীটা খুবই ছোট এবং তার চেয়েও ছোট আমাদের জীবন পরিধি। সেই ছোট জীবনে আমাদের এমন একজনের প্রয়োজন পরে যে কিনা আমাদের সকল সময়ে পাশে থাকবে। তাই এমন সবাইকে তার জন্য একজনকে পছন্দ করা উচিত যে তাকে আগলে রাখতে পারবে, তাকে ভালোবাসতে পারবে। কোনো একসময় যাতে সে যেন গর্ব করে বলতে পারে যে তার পছন্দটা সঠিক ছিল, তার অনুভূতিগুলোও সেই মানুষটার জন্য পুরোপুরি সঠিক ছিল। তাহলে আর ভুল কোনো মানুষকে ভালোবাসার জন্য আফসোস করতে হবে না। কারন পরস্পরের প্রতি যদি পরস্পরের কোনো অনুভূতি বা কোনো ভালোবাসা না থাকে তাহলে সেটাকে সম্পর্ক বলা চলে না। আশাকরি আপনি আমার কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন।

মাহিম তরুনিমা কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। তরুনিমার কথাগুলো শেষ হয়ে গেলেও মাহিম ওর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। সে একটা হাসি দিয়ে বলল-

: আপনি ঠিকই বলেছেন তরুনিমা। একটা কথা কি জানেন তরুনিমা,
“যা তুমি চেয়েছো প্রতিনিয়ত, তা যদি তোমার না হয় তাহলে সেটাকে পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করতে নেই।”
তাই আমার যেটা নয় সেটাকে আমি কখনোই পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করছি না। কিন্তু যেটা একান্ত তাকে তো আমি পাওয়ার চেষ্টা করতেই পারি।

মাহিম তরুনিমাকে কথাটা বলতে বলতে নিজের পকেট থেকে চিঠিটা বের করে তরুনিমার দিকে এগিয়ে দেয়। তরুনিমা চিঠিটা মাহিমের হাত থেকে নিয়ে সেটা পড়ে যেন সে হতবাক হয়ে যায়।

—————————————————–

মেহু আর মিনহাজের সাথে তরুনিমা এবং সারা বাসায় চলে আসে। তরুনিমা সিটের সাথে মাথা এলিয়ে দিয়ে বাইরের তাকিয়ে আছে। সারা নিজের বাড়ির রাস্তায় নেমে যাওয়ার পর তারাও নিজেদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়। গাড়ি যখন মিনহাজদের বাড়ির সামনে এসে থামে মেহু তরুনিমাকে ডাক দিলে তরুনিমা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতেই ওর পাশে খেয়াল করে সারাকে খুঁজতে নিলে মেহু বলল-

: সারা ওর বাসায় নেমে গেছে। তোমাকে ও বিদায়ও জানিয়েছে কিন্তু তুমি মনে হয় খেয়াল করো নি তরু। যাক গে, আমাদের গন্তব্য এসে গেছে নামতে হবে।

মেহু ভাবির কথা শুনে আশেপাশে লক্ষ্য করে দেখি যে আমরা বাড়ি চলে এসেছি। বাড়িতে ঢুকে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে টাওয়ালটা ব্যালকনির একপাশে রেখে বিছানার এক পাশে এসে বসি। হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চোখ পরতেই পান্থ কথাগুলো যেন মনে পড়ে যায়। নিজেকে নিজে পর্যবেক্ষণ করে বললাম-

: সবার চেহারায় হাসি মানায় না। কিছু কিছু মানুষের চেহারায় তেতো রূপটাই মানানসই। কারন তেতো মানুষগুলো সহজে কষ্ট দিতে পারে না।

মাঝরাতে হঠাৎ করেই ঝুম করে বৃষ্টি নেমে আসে। ব্যালকনির দরজাটা খোলা রাখায় শো শো করে বাতাস চলে এসে ঘরকে যেন পুরো শীতল করে দিয়েছে। উপর থেকে জানালা দিয়ে ভেতরে বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির পানিগুলো এসে আমার বালিশ সহ আমার মুখটাকে হালকা ভিজিয়ে তুলেছে। তারই সাথে আমার ঘুমও যেন চলে যায় না ফেরার দেশে। চোখ ডলতে ডলতে জানালা লাগিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই মৃদু শীতল বাতাসে যেন শরীরের লোমকূপগুলো যেন দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ এতো রাতে ফোন আসায় তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করতে দেখি শিমপাঞ্জি ফোন দিয়েছে। মেজাজ যেন পুরোই বিগড়ে যায় আমার রাগে কটমট করতে করতে নিজেকেই নিজে বললাম-

: এই ব্যাটার কোনো টাইম সেন্স নেই আসলেই! যখন তখন ফোন দিয়ে বসে! আজকে বাংলা সাবান দিয়ে এমন ধোয়া ধোবো আর কখনো ফোন দিবে না। হুহ!

অনেক সাহস নিয়ে ফোনটা রিসিভ করেই কিছু বলার আগে উনি বললেন-

: বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে?

উনার এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে যেন মনে হলো আমি যেন অন্য কোনো গ্রহে বাস করি আর উনি আরেক গ্রহে। এতোক্ষণ মেজাজ খারাপ ছিল কিন্তু এখন যেন উনার এমন প্রশ্নে এবার কিছু না বলে টুস করে ফোনটা কেটে দেই। তারপর বেডে ধপ করে বসে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করি। আরো কয়েকবার পান্থ ফোন দিলে তারপর রাগে ফুসতে ফুসতে ফোনটা ধরেই ঝারি দিয়ে বললাম-

: এই যে মিস্টার! মাঝরাতে কি তামাক পাতা সেবন করেছেন? এতো রাতে কাউকে ফোন দেয়। আর ফোন দিয়েছেন ভালো করেছেন তা বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে নাকি এইটা কেমন কথা? আপনি কি অন্য গ্রহে থাকেন যে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে নাকি তা আপনার ঘর থেকে দেখা যায় না। যত্তোসব!

আমি কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে দম নিলাম। কিন্তু লক্ষ্য করে বুঝতে পারলাম যে উনি চুপ করে আছেন কোনো কথা বলছে না। পরক্ষণে মনে হলো যে একটু কি বেশি বলে ফেললাম? নাহ! আমি মোটেও বেশি বলিনি যা বলেছি ঠিক বলেছি।

: আমি ঢাকা চলে এসেছি একটু আগের ফ্লাইটে। আর এখানে বাতাস বইছে অনেক তাই ভাবলাম আপনাকে একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি। আসলে আমার বুঝা উচিত ছিল যে এই সময়ে ফোন দেয়াটা উচিত না। তবে ভেবেছি যে আপনি নিশ্চয়ই সজাগ। বৃষ্টিবিলাস করছেন হয়তো তাই ফোন দিয়েছিলাম।

উনি খুবই শান্ত এবং ঠান্ডা গলায় কথা বলায় কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করে। উনার সাথে এতো রাগ দেখানোটা ঠিক হয়নি। উনি আবারও বললেন-

: জানেন, সিলেটের বৃষ্টির মজাই আলাদা হয়। আর আপনার তো বাড়ির সামনে থেকে পাহাড় দেখা যায় সেটাতে এক অন্যরকম প্রশান্তি লাগে। আর…

আমি কানে ফোন রেখে গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনিতে গিয়ে উনার কথার মাঝেই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললাম-

: বৃষ্টি এখনো প্রবাহমান। তবে এখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে না। তবুও এই বৃষ্টির ফোঁটাগুলো অনেক ভালো লাগছে। আর মনে হচ্ছে অনেক যুগ পেরিয়ে গেছে বৃষ্টি উপভোগ করা হয়নি আমার।

ব্যালকনির রেলিং ঘেষে বাম হাতে ফোন রেখে ডান হাতটা বৃষ্টির দিকে এগিয়ে দেয়ার পর যখন ধীরে ধীরে বৃষ্টির পানিগুলো হাতে এসে পরছে এ যেন এক অন্যরকম মানসিক প্রশান্তি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে কতো বছর এই বৃষ্টিতে হাত ভিজাই না। পান্থ হঠাৎ করেই আস্তে আস্তে বলে উঠেন-

:”Rain is not only drops of water.
It is the LOVE of sky 4 earth.
They never meet each other.
but send LOVE this way.
Enjoy the LOVE of nature.”
(সংগৃহীত)

কথাটা শেষ করে পান্থ ফোনটা কেটে দেন। উনার কথাগুলো কে মনের কোনো এক স্থানে গেথে নিলাম। বৃষ্টির ফলে কোথা থেকে এক ভেজা মাটির ঘ্রাণ আসছে। এই ঘ্রাণ খুবই প্রখর যেটা মনকে অনেকটাই শান্তি দেয়। সত্যিই প্রকৃতিকে উপভোগ করতে হবে। প্রকৃতি তো কোনো দোষ করেনি তবে কেন প্রকৃতির সাথে অভিমান করে থাকতে হবে? নিজেকে যেন আজ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি।

#চলবে____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে