প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব : ৬৫
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)
সেদিন সন্ধ্যার আগে ইরার শ্বাশুড়ি ইরাকে বলে-
: “মাগরিবের নামায পড়ে আমি হসপিটালে যাবো। তুমি ওকে নিয়ে থাকতে পারবে না? ”
শ্বাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে ইরা ভীত কন্ঠে বলে-
: ” মা ভাইয়ারাও তো কেও নেই, একা এত বড় বাসায়…..”
ইরার শ্বাশুড়ি যেখানেই যায় ওকে সাথে করে নিয়েই যায়, আজ তিনি একা যাবেন, কথাটা ইচ্ছে করেই বললেন ইরাকে। ইরা নিজ থেকে যেতে চায় কি-না তা দেখবার জন্য। ইরা কিছু-মূহর্ত পর বলে-
: ” মা আমি আপনার সাথে গেলে কি কোন সমস্যা?”
তিনি কিছুক্ষন মৌন থেকে বলেন-
: “না, না, কোন সমস্যা না, পাছে তুমি যেতে অনিচ্ছুক হও কিনা তাই বলিনি”
: ” না মা, আমি বাবাকেও বলেছি, তাকে দেখবার ইচ্ছার কথা, আপনি যদি না যাওয়াটা ভালো মনে করেন, তাহলে আমি বড় চাচীদের ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকি এতক্ষণ? ”
: ” না, না, কোন দরকার নাই, আমার সাথে ছাড়া ও বাড়ি একা কখনো যাবা না তুমি। তার সবগুলো বউ একেকটা চালাকের একশেষ, তুমি আমাদের সবাইকে ভালোবেসে, ঘরের মেয়ের মতো মিশে গেছো এ পরিবারে, তাই তাদের হিংসার শেষ নাই। কি না কি বলে তোমার কানে বিষিয়ে দিবে, তার দরকার নাই বাবা, তুমি বরং নামাযটা পড়ে তৈরি হয়ে নাও। আমরা একসাথেই যাব হসপিটালে। কথাগুলো বলে তিনি ড্রইংরুমের ব্যালকনি থেকে তার ঘরে চলে গেলেন।
ইরার ভালো লাগলো শ্বাশুড়ির এমন অকপট স্বীকারোক্তি। এত অকাজ করার পরও তারা ওর ভালোটাকেই বেছে নিয়েছে ওকে মূল্যাশন করতে।
ঐদিন ও নিজ কানে বড় চাচীকে বলতে শুনেছে – “বাড়ির বৌগো এত আল্লাদ কিছের, আল্লাদ দিয়া মাথায় উঠায়োনা”
ওর শ্বাশুড়ি উত্তরে তাকে বলেছেন –
: ” ভাবী ও এই বাড়ির বৌ তা ঠিক আছে, ওর বয়স কত তাও-তো দেখতে হবে”
: “হইছে, আর সাফাই গাওয়া লাগবো না, আমাগো বিয়া হয় নাই কম বয়ছে? আমরা কি এমন পা তুইলা বইছা আছিলাম নিহি, ঘরের ছব কাম একা হাতে করছি। ননদ, দেবরগো কাপড় পর্যন্ত ধুয়া পিন্দাইছি”
উত্তরে ইরার শ্বাশুড়ি চুপ থেকেছেন। কষ্ট তাকেও কম করতে হয়নি। বড়-জায়ের তো মাথার উপর একমাত্র শ্বাশুড়ির জ্বালা ছিলো, আর তার উপর শ্বাশুড়ি তো ছিলোই বাড়তি জ্বালা হিসেবে ছিলেন এই বড়-জা নিজে। তিনি শ্বাশুড়ির চেয়ে বেশী জ্বালিয়েছেন তাকে। এমনকি নিজের ছেলের বৌ গুলোর সাথেও এই এক তরফদারী। জ্বালানোর, তরফদারীর এই চক্র ভাঙতে চান তিনি। তাই শুরু থেকেই অন্যভাবে তৈরী করেছে বৌ-শ্বাশুড়ির সম্পর্ককে। নিজের বৌ থাকাকালীন সময়ের কষ্ট, না পাওয়া, ছোট ছোট আবেগ অনুভূতি গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি যেমনটা আশা করতেন তেমনি শ্বাশুড়ি হয়েছেন ইরার কাছে।
ইরা নামায পড়ে তৈরি হয়ে নেয়। নূহাকেও ব্যাগ থেকে জামা, ডায়াপার বের করে তৈরী করে। নিজের রাবার দিয়ে একটা পোনিটেল করে দেয়। সামনের ববকাট চুলগুলো আঁচড়ে দিয়ে চুমুনখায়। মাশাল্লাহ কি সুন্দর দেখতে নূহা।
ইরা নিজে তৈরী হচ্ছিলো আর নূহা অপরদিকে ইরার লিপস্টিক দেখে তা মাখার চেষ্টা করে। ইরা ওর এ কান্ড দেখে হেসে দেয়। লিপস্টিক যে ঠোঁটে দেয় তা-ও সে জেনে গেছে এ বয়সে। পরে ওর হাত থেকে সেটা নিয়ে ভুজংভাজাং ভাবে তা দিয়েও দেয় ওর ঠোঁটে। লিপস্টিক দিয়েছে ভেবে সেই খুশি সে। ইরার শ্বশুড়ি উঁকি দিলে বেরিয়ে পরে ওরা ৷
একসাথে নিচে নেমে তারা গাড়িতে করে হসপিটালে রওনা করে। নূহাকে ইরা নিজের কোলেই রেখেছে। কোলে বসে নূহা দুষ্টামি করছে ইরার সাথে। ওর বোরকার স্টোন গুলো একটা একটা করে খুঁটছে নূহা, ইরা যত নিষেধ করছে, নূহা এক একটা স্টোন খুলে নিষিদ্ধ কাজটা করে ফেলার অপরাধবোধ পাশকাটিয়ে আনন্দে খিলখিল করে হাসছে। ইরার শ্বাশুড়ি পাশে বসেই দেখছিলেন তা। কে বলবে তাদের প্রথম দেখা মাত্র কয়েকঘন্টা আগে হয়েছে। ওদের আনন্দ যেন এত কাছে থাকা তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। কারন তার মনে খুটখাট চলছে। তিনি বের হওয়ার আগে স্বামীকে জানিয়েছেন ইরার হসপিটালে আসার কথা। কি হতে যাচ্ছে তা ভেবেই ফোনের দুইপ্রান্তের দু’জনই বেশ চিন্তিত। কোনকিছু বলা যত সহজ নিজে তা মানা ততোই কঠিন। ইরা ওকে বলা গল্পের বাবা-মাকে কঠোর বলেছে। কিন্তু বাবার লা*শ দেখতে যাওয়া মীরার প্রতি কোন মমত্ব তখন ইরার হয় নি। হলে ও, ওর ভাই অন্তত ওর মাকে বোঝাতে যেতো যে এই দেখাটা চিরজীবনের জন্য শেষ দেখা।
তার এমন উসখুস ভাব দেখে ইরা বলে-
: “মা আপনি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত? ”
তিনি অপ্রস্তুত কন্ঠে বলেন –
: ” নাতো”
আবার নূহা ওকে ব্যাস্ত করে রাখে। ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই তারা হসপিটালে পৌঁছে যায়। তারা গাড়ি থেকে সেখানে নেমেই দেখেন- মুরসালিন ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে ভিতরের দিকে যাচ্ছেন। রেবেকা একটা ডাক দিলেন ওকে, তিনি তার ছেলেকে দেখে একটু যেন ভরসা পেলেন। ছেলের সাথে চোখাচোখি হওয়া মাত্র ইরাকে পেছনে ফেলেই দ্রুত পায়ে ওর কাছে যান তিনি । ইরা নূহাকে হাঁটিয়ে আনছে৷ দূরন্ত নূহা একবার এদিকে যায় তো একবার ঐদিকে যায়। ওকে সামলে নিতেই দুজনের মধ্যে ব্যাবধান বেড়ে যায়৷ ইরা তাকিয়ে দেখেন তারা কি যেন বলছেন নিজেদের মধ্যে। মুরসালিন ইরাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কথা বলছে মায়ের সঙ্গে। তাদের দুজনের কপালের ভাঁজ, কুঁচকানো চোখ, মলিন মুখ, শূন্য দৃষ্টি বলে দিচ্ছে দুশ্চিন্তাগ্রস্ততার কথা। কেমন অস্বস্তি হয় ইরার। মনে মনে ভাবে- “এটা এ পরিবারবের কোন কালো রহস্য নয়তো?”
পরোক্ষণে নিজেকেই নিজে ধমক দেয়, কি সব ভাবছি আমি। এমন কিছু হলে তো বাবা-মা দুজন একত্রে এ বিপদ সামাল দিতো না। ভাবতেই ইরা বেপরোয়া নূহাকে কোলে নিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটা দেয়।
ঐপাশে রেবেকা বেগম সিঁড়ির কাছে এসে ইরার দিকে চোখ পরতেই থমকে দাঁড়ান, ইরার কথা এতক্ষণে যেন মনে পরলো তার। অপরাধবোধ লুকানোর জন্য একটা হাসি হাসলেন তিনি। মুরসালিন ও ইরাকে দেখে হাসার চেষ্টা করলো, কপট, প্রাণহীন সেই হাসি, এক পলক চেয়েই ইরা চোখ সরিয়ে ওর অগ্রাহ্যতা ওকে ফিরিয়ে দিলো। মুরসালিন নূহাকে ইরার থেকে নিজের কোলে নিলো। ইরার সবকিছু কেমন অস্বাভাবিক ঠেকছে। একজনকে দেখতে এসেছে ও, এত রাখঢাক, এত গোপন কথার কি আছে তা কিছুই বুঝতে পারছে না ও। অবশেষে লিফটে উঠে ফ্লোর সিক্সে প্রেস করে মুরসালিন ইরার কাছটায় দাঁড়ায়। ইরা অস্পৃশ্যে মতো ছোঁয়া বাঁচায় যেন মুরসালিনের থেকে। অবশেষে ওরা পৌঁছে যায় কাঙ্খিত ফ্লোরে। পৌঁছেই দেখে মোখলেস সাহেব রিপোর্ট হাতে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন ফোনে। ওদেরকে দেখে ফোন রেখে ওদের কাছে এসে দাঁড়ান তিনি। স্ত্রীর সাথে চোখাচোখি হলে দু’জনেই চোখ বাঁচিয়ে নেয় যেন। যেনো চোখাচোখি হলেই পর্দা ফাস হয়ে যাবে। হাসি মুখে পথ দেখিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি ইরাকে বলেন-
: ” তুমিও আইবা ভাবার পারি নাইক্যা”
: “একা বাসা তাই…”
কেবিনের কাছে এসে মোখলেস সাহেব আর্দ্র কন্ঠে বলেন-
: “খাঁড়াও মা মা জননী, কয়ডা কথা কইয়্যা লই তোমার লগে”
ইরার থমকে দাঁড়ায়, একটা মাত্র দরজার পার্থক্য এত এত রহস্যের। ওর ভিতরকার অস্থিরতা রক্তের সাথে মিশে বাড়িয়ে দিচ্ছে শরীরের রক্তচাপ , শীততাপনিয়ন্ত্রক হসপিটাল হওয়া সত্ত্বেও ইরার শরীরের ঘাম তা জানান দিচ্ছে। মুখলেস সাহেব ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন-
: “আমরা যে তোমারে কত্ত ভালোবাছি তা কি তুমি জানো?”
ইরার আবারো অস্বস্তি হয় এ জায়গায় এমন কথা শুনে, তারা প্রত্যেকে যে ওকে অকৃত্রিম ভালোবাসেন তা ও জানে এবং এ ভালোবাসার জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে। এ কথা এখানে জিজ্ঞেস করার কোন যৌক্তিক মানে খুঁজে পায় না ও। ওর কৌতুহলি দৃষ্টি আর কন্ঠে মৌনতা দেখে মোখলেস সাহেব আবারো বলেন-
: ” জীবণে চলার পথে যাই হোউক, আমগো এই ভালেবাছার কমবেছ হইবো না, যে কুন ব্যাপারে তুমি যাই বুঝো মা জননী এই অধমেগো ভুল বুইঝো না”
ইরার সন্দেহ পাকাপোক্ত হয় তার এমন অপ্রাসঙ্গিক কথায়, নিশ্চয়ই ঐখানে গরমিল কিছু রয়েছে। মনে মনে সম্ভব্য কিছু ভাবতে থাকে ও-
ঐ মেয়ের বিয়ের পরদিন ডিভোর্স দেয়া স্বামী কি মুরসালিন? / নাকি ঐ মেয়ে ওর শ্বশুরের অন্য পক্ষের স্ত্রীর? / নাকি ঐ মেয়ে ওর শ্বাশুরির আগের ঘরের ?
এসব হাবিজাবি ভাবতেই কেবিনের দরজায় ধাক্কা দেয় ইরা নিজেই। দরজা খুলতেই হাসপাতালের কেবিনের চিরাচরিত দৃশ্য চোখে পরে ওর। বিছানায় শোয়া রোগী, শিয়রের কাছে আপন কারো বিনিদ্র জেগে থাকা। কেবিনেটের উপরে ফল, জুস, পানির বোতল, কয়েকটা বাক্স, ঔষধপত্র।
এতকিছু উপেক্ষা করে ইরা মনোনিবেশ করলো বিছানায় শায়িত রমনীর দিকে। বুক অবধি টানা সাদা চাদর, মুখে অক্সিজেন মাস্ক থাকায় তার আদল বোঝা গেলো না। তাকে পুরোপুরি দেখতে তার কাছে গেলো ইরা, ইরাকে দেখে তন্দ্রালু মাজেদা খালা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। এ যে বিছানায় শায়িত মীরার সহোদরা ইরা তা কেও না বলে দিলোও বুঝতে একটুও সময় লাগে না তার। চাপা নাক, জোড়া ভ্রু, পাতলা গোলাপি ঠোঁট সবই এক। দুজনের পার্থক্য বুঝাতেই যেন খোদা গায়ের রঙে একটু তফাৎ করে দিয়েছেন। মীরার গাত্রবর্ণ দুধেআলতা, আর ইরার উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ।
ইরা একেবারে বেডের কাছে গিয়ে বেডে ঘুমিয়ে থাকা দুপুরের গল্পের মনের জোর ওয়ালা মেয়েটাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়, ও যেন হসপিটালের কেবিনের দরজা খুলেনি, খুলে ফেলছে গ্রীক পুরাণের “প্যান্ডোরা বক্স”। যা খোলার আগ পর্যন্ত ওর জীবণে সুখ, হাসি, আনন্দ ব্যাতিত অন্য কিছুই ছিলো না। এই প্যান্ডোরা বক্স খুলে ও ওর জীবণে লজ্জা, ঘৃণা, দুঃখের জায়গা দিলো। আকন্ঠ তিক্ততায় ভরে উঠলো শায়িত তার মুখশ্রী চিনতে পেরে, পরক্ষনেই মনে পরলো তার লান্ড ভন্ড জীবণের ঝড় গুলোর কথা। সবকিছুর হিসেব করতে ওর সময় লাগলো ক্ষণকাল। এরপর আর দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না ইরা। এতটুকু মেয়ের এত চমক সহ্য হয়?
ও সেন্সলেস হয়ে ঝড়ে ভাঙা গাছের মতো করে মেঝেতে পরে গেলো।
চলবে….
প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব : ৬৬
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)
স্বামী হিসেবে সাকলায়েন আর যেমনই হোক টাকাপয়সায় ওর টান বড্ড কম। আয় রোজগার তো নেই, তবুও যেখান থেকে যাই এসেছে হাতে নিজের খরচেরটা রেখে তুলে দিয়েছে সাথীর হাতে। সংসারে বানের স্রোতে আসা অঢেল টাকা খরচের যেন রাস্তা নেই। এই উপচে পরা টাকার স্রোতে ওর চারিত্রিক ত্রুটি, অবহেলা, দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার দোষগুলো ঢাকা পরে গেছে। চরিত্রে সকলেরই টুকটাক সমস্যা থাকে, সাথীর মেইন ফোকাস টাকাপয়সা। ছোট থেকেই নিদারুন অর্থকষ্টে বড় হয়েছে ওরা। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, সমাজ ওকে শিখিয়েছে টাকা কি জিনিস! তাই টাকাপয়সার ব্যাপারে ওর এমন ভাবনা।
নিজের ফ্ল্যাট থাকায় বাসাভাড়া লাগে না, সামান্য ইউটিলিটি বিল শোধ করে বাকিটা মনমতো খরচ করে। “এদিন এমনিই যাবে” ভাবা সাথী বোনকে ঢাকায় এনে দেশের প্রথম সারির একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলো, বিয়ের সেই বছরই কিস্তিতে কিনলো গাড়ি। গয়নাগাটি ও করলো কিছুকিছু। নিজে তদারকি করে বাবা মায়ের ঘরদোর ঠিক করে দিয়েছে ও। গ্রামে বেড়াতে গেলে সবার জন্য হাতভর্তি কেনাকাটা, দান খয়রাত, অবহেলিত লোকদের সাহায্য করা, এসবে মজে থেকেছে সাথী। ওর বর সাকলায়েনকে পরিচয় করিয়েছে দানবীর হাজী মোহাম্মদ মহসিন এর মতো, যার অর্থ এবং দানের প্রাচুর্য প্রচুর, গ্রামে খুব সুনাম তার। উঠতি বয়সের মেয়েরা সাথীর এমন সুখ আর ওর পরিবরের এমন আকস্মিক উত্থান দেখে মনে মনে সাথীর ভাগ্যকে হিংসা করে, গোপনে দোয়ায়, নামাজে সাথীর বরের মতো বর পেতে চায়। শুধু উঠতি বয়সের মেয়েরাই না, গ্রামের সকলের মুখে মুখে একটাই কথা এমন মেয়ের জামাই যেন সকালের হয়। যে বাবা-মা আগে নিজেদের সীমাবদ্ধতার, প্রয়োজনের কথা ফোন করে জানাতো সাথীকে, তারা এখন ফোন করে অভাবী-দুস্থ কারো জন্য সাহায্য চেয়ে। সাথীও সাধ্যমতো সাহায্য করতে পিছুপা হতো না। অন্যের অনুগ্রহে বড় হওয়া পরিচয় ঘুচতে থাকে দানের সুবাদে৷ বেশ সুখেই কাটছিলো ওদের দিন। সকালে উঠে আগে পান্তা খেতো ওরা, কোনোদিন শাকভাজি, তো কোনদিন কাঁচামরিচ পেয়াজ। চারচারটা মেয়ের সংসারের খরচ সামাল দেয়ার জন্য একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি বলতে সাথীর বাবাই একমাত্র ছিলেন৷ সবসময় তিনি সংসার খরচের আগে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়েছেন। তারপর যা থাকতো তা দিয়ে কোনমতে টেনেটুনে চলতো সংসার। ছেলে নেই তার মেয়েরাই তার একমাত্র ভরসা। মানুষ হয়ে চাকুরি বাকরি করে বাবা-মায়ের দুঃখ বুঝবে৷ দুঃখ বুঝেছে মেয়েরা, তার কষ্টও স্বার্থক হয়েছে। জীবনের সায়হ্নে আসা সাথীর বাবা কাদের মিয়া এখন তৃপ্ত, সন্তুষ্ট। তার সব দায়িত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের মতো আগাগোড়া বুঝে নিয়েছে বড় মেয়ে৷ এখন যেন তার ম*রে*ও সুখ।
সাথীর বোন মিথিও সারাজীবন কষ্টে মানুষ হলেও হঠাৎ এ প্রাচুর্যের মধ্যে এসে কেমন ভড়কে যায় প্রথমটায়। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সাথে মিশে দ্রুত খাপ খেয়ে নেয় শহরের আদলে। শো রুমের ড্রেস, দামী ব্যাগ-জুতা, ইম্পোর্টেড ওয়াচ, দামী গাড়িতে করে যাতায়াতে যে আভিজাত্য, সুন্দরী মিথি যেন সবসময় এসবেই অভ্যস্থ, আর এসব যেন ওর জন্যই সাজে। কোন প্রকার জড়তা নেই বেশী পানিতে পরা অল্প পানির মিথির। সকলে জানে ওর বাবা বিরাট ব্যবসায়ী, গ্রামে অঢেল সম্পদ, প্রতিপত্তির কথাও জানে কেও কেও। দুদিন আগেও যে ওর লজ্জা নিবারনের কাপড়টা পরতে হতো অন্যের কাছে চেয়ে তা-ও দিব্যি ভুলে গেছে ও। এসব নোংরা অতীতকে এমন ভাবেই ভুলে গেছে ওরা যেন এমনটা কখনো ছিলোই না।
কিন্তু ইদানীং দিনকাল ভালো যাচ্ছে না সাকলায়েনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নির্বাচনে ওদের দলের পদপার্থী নেতা এবার বিপুল ভোটের ব্যাবধানে হেরে যায়। আয় রোজগারের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে ও নিঃস্ব প্রায়। টাকা পয়সা না থাকলে মন মেজাজও ভালো থাকে না৷ এদিকে নিজের অম্যতব্যয়ী জীবণের খরচের সাথে ও যুক্ত করেছে আরো উপরী খরচা। সাথীর সাথে পাতানো সংসার খরচ, ওর এই সেই বায়না, চাহিদা তার উপর শালী মিথির পড়ার খরচও যোগ হয়েছে। মুরগী জ*বা*ই করার আগে যেমন খাইয়ে দাইয়ে মোটা করে এটাকে ও সেভাবেই ধরে নিয়েছিলো। কিন্তু এখননতা গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাকলায়েনের হঠাৎ এমন বিপর্যয়ে অভিজাত লাইফ লিড করা সাথী-মিথিরা কেমন বিপাকে পরে যায়। সাকলায়েনের যেন বোধ ফিরে আসে, এতবছর তোমাদেরকে দেখেছি আমি, এখন তোমরা আমাকে দেখো। সাথী অঢেল টাকা হাতে পেয়ে এত কিছু করলেও পায়ের নিচে মাটি শক্ত করার কথা দূরে থাক মাটিই করতে পারেনি। আয় রোজগার না থাকলে যে একটা মাস অন্ততঃ চলবে সে টাকাটাও জমা নাই ওদের হাতে৷ টাকা হাতে এলেই হয় শপিং এ চলে গেছে, নয়তো জুয়েলার্সের দোকানে। এখন এত বছর ধরে এমনি লাইফ লিড করে, মানুষের কাছে বড় সেজে যে অবস্থা দাড়িয়েছে তাতে হঠাৎ এমন বিপর্যয় মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ওদের।
সবার জীবণেই উত্থানপতন থাকে কিন্তু ওদের যা ছিলো তারচে বেশী শে-অফ করা ওরা কিভাবে নিজেদের এমন জীবণ এডজাস্ট হবে? মেনে নেয়ার চেয়ে বড় ব্যাপার বাইরের মানুষ কি ভাববে ওদের ব্যাপারে? দিন পনেরো কোনমতে চললেও এর পর যেন আর চলেই না সংসার নামের গাড়ি। ব্যাবসা কিংবা চাকরী করলে অন্তত একটা অপেক্ষা থাকতো সুদিনের। কিন্তু সাকলায়েন তো কোন কাজই পারে না, ছাত্র থাকা অবস্থা থেকে এমনি ভাবে তৈরী করে নিয়েছিলো ওর ঐ বায়বীয় ক্যারিয়ার।
সাথী সাকলায়েনের সাথে আলাপ করে ব্যাবসা শুরুর কথা বলে। দরকার পরলে জমানো সব গয়না বিক্রি করে দিবে ইনভেস্টের জন্য। সাকলায়েন ব্যাবসার ব্যাপারে ক’অক্ষর গোমাংস। সারাজীবন পরের চাটুকারিতা করে পার করা ওর ব্যাবসা জ্ঞান আসবে কোত্থেকে। ও পারে দোকান দোকান থেকে চাঁদা তুলতে, পারে কলেজের ভর্তি, পরীক্ষার ফি/রেজিষ্ট্রেশন এর সময় গায়েবী স্ক্রল নম্বরের নামে হাজার হাজার টাকা তুলতে৷ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ভর্তিতেই লাগতে আড়াই থেকে তিন হাজার সেখানে ওরা এই গায়েবী স্ক্রল নম্বর কয়েক হাজার টাকায় বেচে টাকার পাহাড় করে ফেলতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে এত গুলো ডিপার্টমেন্ট, এত এত স্টুডেন্ট, বছরে ভর্তি, আর পরীক্ষার জন্য রেজিষ্ট্রেশন চলতেই থাকে। তার মধ্যে এই সেই উপরী ধান্ধা তো আছেই। বিভিন্ন তহবিলের টাকা, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এসব থেকেও আয় হতো ভালোই। এমন যার ক্যারিয়ার তার ব্যবসা জ্ঞান না থাকাই স্বাভাবিক। তবুও সাথী সব গয়না বিক্রি করে ব্যাবসায় বসায় সাকলায়েনকে। একটা ডিপার্টমেন্টন্টাল স্টোর দিয়েছিলো অনেক বড় করে। কিন্তু এতদিন যে আরাম আয়েশ, সুযোগ সুবিধা ছিলো তার খেসারত ও কিছু দিতে হচ্ছে তাকে। বর্তমান ভিপি এসে আগের ভিপিকে দৌড়ের উপর রেখেছে মামলা হামলা দিয়ে। শান্তি নেই তাদের চ্যালাদেরও। তবুও আতঙ্কে, বাস্তবিক পরিস্থিতিতে সাকলায়েন সত্যি বুঝেছিলো রোজগারের রাস্তা তৈরীর প্রয়েজনীয়তা। তাই প্রাণপণে চেষ্টা করছিলো ব্যাবসাটাকে দাঁড় করাতে। কেনমতে চলেছিলোও তা টুকটুক করে। কিন্তু অপজিশন পার্টির মামলায় সাকলায়েনকে হঠাৎ যেতে হলো জেলে, মাস ছয়েক পরে আয়ব্যায়ের হিসাবে পাওনার চেয়ে দেনাই বেশী দাঁড়িয়েছে টাকার অংক। বছরের মাথায় বিক্রি করতে হয়েছিল ফ্ল্যাট। মাস ছয়েকে সেই টাকাও শেষ হয়ে গেলো কর্পূরের মতো।
কম টাকায় বাসা ভাড়া করেছিলো ঢাকার একটু ভিতরকার দিকে। একদিকে সংসার খরচ অন্যদিকে স্বামীকে জেল থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা। সবদিকেই দেখতে হয়েছিলো সাথীকে একা হাতে। মীরার মতো সাথী নিজেই ধরেছিলো সংসারের হাল। দু’জনে পেরেও ছিলো তা, তবে দু’জনের পথই আলাদা। মীরা জ্ঞান, শ্রম বেচে খেয়েছে আর সাথী, মিথি খেয়েছে শ*রী*র বেচে।
———-
: “এসব প্যাচাল যদি পারিস তাহলে তোর আর আসার দরকার নাই আমার বাসায়” উত্তপ্ত কন্ঠে কথাটা বললো মীরা।
: “তুই আমাকে ঝাঁটা মারলেও আমি আসবোই, বলে লাভ নাই”- আমের আচার খেতে খেতে শান্ত কন্ঠে বললো ইরা।
আচারের টকের চোটে ইরা জিভ দিয়ে টাক দেয় তালুতে। জীবণেও আচার না খাওয়া ওর ইদানিং আচারের দিকে ঝোঁক বেড়েছে। প্রেগ্ন্যাসিতে এমন হয়, মীরার ও নূহা পেটে থাকার সময় পোড়ামাটি খাওয়ার ক্রেভিং ছিলো। একেকজনের একেকটার ক্রেভিং হয় এমন সময়ে। মাজেদা খালা খুব ভালে আচার বানায়। মীরা কয়েক বয়াম পাঠিয়েছিলো অসুস্থ ইরাকে দেখতে গিয়ে। সেগুলো নাকি শেষ করে ফেলেছে ও এ কয়দিনেই।
: “মা’র বাসায় যাবি এ বৃহস্পতিবার? আমিও তাহলে যাবো, তুই না গেলে একা ভালো লাগে না। এ সপ্তাহে একটা ইভেন্ট আছে তিনদিনের, সেখানে জয়েন করে, একটু ব্রেক নিবো সামনের সপ্তাহটা, ক্লান্তিতে শরীর ডুবে আছে, মাঝে মাঝে দমবন্ধ লাগে, আমার একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার”
ইরা মীরার কথাটা পুরোপুরি উপেক্ষা করে বললো-
: ” আপা শোন, এই যে তোর অসীম গতিতে ছুটে চলা, তোর ডেসটিনেশন কি? তা-কি তুই জানিস? ”
: ” কোন ডেসটিনেশন নাই, আয় করো, খরচ করো, মেয়েটাকে মানুষ করো, এই হচ্ছে, হবে যতদিন বাঁচি”
: ” দিনশেষে মন খুলে কথা বলবার কেও নাই বলে এই ক্লান্তি, আগে তো টুম্পা ছিলো, এখন তো টুম্পাও বিয়েসাদী করে সংসারী হয়েছে, আপা এজন্যই
তোর এমন দমবন্ধ লাগে”
আড় চোখে তাকায় মীরা ইরার দিকে, এবার ইরা কি বলবে তা ও জানে,
: ” সবাইকে তো গুছিয়ে দিলি, তুই নিজেই তো এলেমেলো ”
: “তারপর? ”
: “মানে?”
: “মানে ঘুরেফিরে সেই পুরাতন কাসুন্দি”
ইরা বোনের কাছে এসে বসে ওর হাত চেপে ধরে, তারপর কাতর কন্ঠে বলে-
: ” অনেক বছর তো থাকলি একা, এবার….”
: “কতবার বলবো এসব প্যাচাল পিটবি না আমার সাথে?”
: ” দুদিন পরে মেয়েকে স্কুলে দিতে হবে, মেয়ে যখন দেখবে সবার মা এবং বাবা আছে, আর ওর শুধু মা আছে, ওর মনে তখন কি চাপ পরবে ভেবেছিস তুই”
: ” সবার সব থাকে না ইরা”
: “এটা তুই বুঝবি, আমি বুঝবো, অবুঝ ও কি এটা বুঝবে?”
: “তোরা যা বলিস তা এত সহজ না ইরা”
: “সহজ ভাবলেই সহজ, একবার ভাবতো ঐ যে মানুষটার জীবণটা যে আজও এমন অগোছালো এর জন্য কে দায়ী? মায়ের বাসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস তুই, মা এসব বুঝায় বলে তোকে। তুই কি বরাবরই অবাধ্যই থাকবি বাবা-মায়ের প্রতি”
উত্তেজিত হয়ে মীরা বলে-
: “ইরা সবকিছু এত সহজ কেন ভাবিস তোরা? অপরাধবোধে আমি ওর সামনে দাঁড়াতেই সাহস পাই না, আর তোরা কিভাবে বলিস ওর সাথে সংসার শুরু করতে? আর আমার একার চাওয়ায় কিছু আটকে আছে?”
: ” তোর প্রতি তার টান আছে বলেই সে আজও পর্যন্ত স্যাটেল হতে পারলো না, বাবা মা*রা যাবার পর থেকে তিনি ভীষণ একা হয়ে পরেছে”
: “দূর থেকে এমন মনে হচ্ছে ইরা, আসলে ওর ভিতরেও এমন দ্বিধা দ্বন্দ্ব আছে। সবকিছুকে এত সহজ ভাবিস না”
: “ফিওনা নিজে সেদিন মায়ের কাছে এসেছে, কথা বলেছে এ ব্যাপারে, তারমানে ওরাও এমন কিছু ভাবছে”
: “আমার পক্ষে সম্ভব না ইরা, একটা সন্তান নিয়ে আমি….
কিছু সময় চুপ থেকে মীরা আবার বলে-
: “ইরা এসব আমার ভাবনাতেই হয় না, বাস্তবে কি করে হবে?”
: “আপা মন থেকে চাইলেই সম্ভব, তার জীবণটা তুই নিজ হাতে নষ্ট করেছিস, তাই প্রথম পদক্ষেপটা তোরই নেয়া উচিত, ফলাফল যাই হোক দায় মিটানোর চেষ্টাটা অন্ততঃ করা উচিত তোর”
: “এত বছর পর এভাবে ফেরা যায় না ইরা, আমার পক্ষে সম্ভব না”
মৌণ হয়ে অন্যত্র তাকিয়ে থাকে ইরা, তারপর বলে-
: “আপা, যাই বলিস তুই, আমি বরাবরের মতো এখনো বলবো আবারও ভুল করছিস তুই”
মীরা রুক্ষ কন্ঠে বলে-
: ” ভুল তো কম করিনি এ জীবণে, আবীর না-হয় আমার “প্রিয় ভুল” হয়েই থাক…
চলবে….
প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব : ৬৭
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)
মীরার তত্ত্বাবধানে নেয়ার পর গত তিন বছরে “মীরা ফ্যাশন” উত্তরোত্তর উন্নতি করেছে। যতটা সহজে বলা গেলো কথাটা একা পথচলাটা কিন্তু এত সহজ ছিলো না। একা কেন বললাম?
নিলাম পরবর্তী সময়ে বিজনেসটাকে ঢেলে সাজানোর ঐ কঠিন সময়ের পথটা মীরাকে একাই পাড়ি দিতে হয়েছিল, কারন কারখানা বুঝে পাওয়ার পরের মাসেই মীরার ছায়াসঙ্গী টুম্পাকে চলে যেতে হয় ওর প্রিয়জনের কাছে। ওদের বিয়েটা হয়েছিলো বেশ আগেই, গোপনে, ফয়সাল কানাডায় যাওয়ার আগেই সন্তর্পণে সেরে ফেলেছিলো বিয়েটা। টুম্পাদের যা পারিবারিক স্থিতি তাতে ভবিষ্যতে ওদের অর্থনৈতিক ব্যাবধান আরো বেড়ে যাবে ভেবে এমন সিদ্ধান্ত নেয় ফয়সাল। টুম্পাকে ভীষণ ভালোবাসে ও, ওকে জীবণ সঙ্গী হিসেবে পেতে চায় যে কোন কিছুর বিনিময়ে। তাই নিশ্চিন্ত হতে বিয়েটা সেরে ফেলে কানাডা পাড়ি দেয়ার দিনই ।
শেষ মূহুর্তের সিদ্ধান্ত হলে যা হয়, ফয়সালের বন্ধুরা সব তৈরী করে রেখেছিলো৷ ফয়সাল কোনমতে পৌঁছে সই করে টুম্পাকে একবার মাত্র আলিঙ্গন করেই গাড়িতে উঠে পরেছিলো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। ব্যাপারটা অনেক পরে জেনেছিলো মীরা। ফয়সাল যাওয়ার পর থেকেই চেষ্টা করছে টুম্পাকে ওর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অনেক বছরের চেষ্টায় যখন তা সফল হয় তখন এমন এক সময় যে মীরার টুম্পাকে বেশ প্রয়োজন। সময় চেয়েছিলো টুম্পা ফয়সালের কাছ থেকে। কিন্তু মীরাযে শুধু পেয়েই গেছে টুম্পার থেকে তাই ওকে বড্ড প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তখনই ছুটি দিয়েছিলো ও টুম্পাকে। ব্যাবসায়িক চাপ সত্ত্বেও সে সময় টুম্পার প্রবাস জীবনের দরকারি কেনাকাটা করেছিলো দুজন মিলে। ঠা*ডা পরা গরমের দিনে শীত প্রধান দেশ কানাডার জন্য গরম কাপড় খুঁজে পুরো বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, গাউসিয়া, হকার্স মার্কেট চষে বেড়িয়েছে ওরা। ফিরবার পথে ফুচকা, হালিম, জিলাপি, নয়তো স্টার কাবাবে ঢু মেরেছে দুজনে। টুম্পার যেদিন ফ্লাইট ছিলো মীরার সেদিন জরুরী একটা কনফারেন্স এটেন্ড করার কথা ছিলো। কিন্তু মীরার জীবণে টুম্পার প্রায়োরিটি কনফারেন্সের আগে। টুম্পাদের পরিবারের ঢাকায় কোন আত্নীয় না থাকায় মীরার বাসায়ই উঠেছিলেন তারা। কাজে ব্যাস্ত থাকা মীরা ছুটি নিয়েছিলো সবরকম দায়-দায়িত্ব থেকে, টুম্পার বাড়ির লোকদের আপ্যায়ন করতে। ঐ দুটো দিন মীরার ঘোরের মধ্যে কেটেছে। পরিবার বিচ্যুত মীরা নিজের পরিবারের সাথে নতুন এ পরিবারটাকেও পেয়ে ছিলো। টুম্পাকে সরিয়ে ততদিনে ইশ্বর ওর জীবণের ব্যালেন্স রক্ষা করেছে ইরাবতীকে ফিরিয়ে দিয়ে। এবার আর ঘৃণাভরে না, পরম মমতায় আগলে নিয়েছে ইরা বোনকে। মাকে সবটা বলেছে কিসের ভিতর দিয়ে গেছে ওর জীবণ। মায়ের সাথে বোনের দূরত্ব কমাতে ইরার ভূমিকা ছিলো চোখে পরার মতো। ইরার শ্বশুর শ্বাশুড়িও বুঝিয়েছেন তাকে। মেয়েটা অনেক তো পেলো কষ্ট এবার একটু বুকে টেনে নিন ওকে।
মা-তো? মন নরম হয়েছে তারও। একটু সময় লাগলেও দুটো পরিবার এক হয়েছে মাঝখানে অনেক বছরের ব্যাবধানের পর। এজন্য মীরা মোখলেস সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞ। পৃথিবীর কোন ভাষা, বাক্য ব্যায়ে এ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন যথার্থ হবে তার জানা নেই মীরার। মুখলেস সাহেব পরম মমতায় বেঁধে ফেলেছেন ওদের দুই বোনকে। তিনিও কৃতজ্ঞ ওদের প্রতি। মেয়ের জন্ম না দিয়েও দুই দুটি মেয়ের বাবা হয়েছেন তিনি। তার একটাই চাওয়া, ওরা এমনি অকৃত্রিম ভালোবাসে যেন তাকে সবসময়।
আরেক দিকে বিজনেসে ফিন্যান্স ইনভেস্টর লোরাকে পেয়ে সমন্বয় হয়েছে অর্থনৈতিক ব্যালেন্স।
লোরা ওর দেয়া টাকাটা ধার হিসেবে দিলেও মীরা টাকাটা ইনভেস্টরের ইনভেস্ট হিসেবেই নিয়েছে। টাকাটা কিভাবে দিবে তা মীরা জানতে চাইলে লোরা বলেছে তুমি চাইলে একসাথে দিও, না পারলে মান্থলি ইন্সটলমেন্টে। মীরা মান্থলি ইন্সটলমেন্টকে প্রেফার করেছে। তাতে ওর উপর চাপ কম পরবে। তবে এই একবছর সময় চেয়েছে ও একটু ঘুরে দাঁড়াতে, যাতে ভঙ্গুর এ ব্যাবসাটকে স্মুথলি দাঁড় করাতে পারে। লোরা সনান্দে সময় দিয়েছে। টাকা রিটার্নে লোরা বছর খানিক সময় দেয়াতে মীরা সাহস পেয়েছে বিজনেসকে ঢেলে সাজাতে। তবে এ একবছর ব্যাবসার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকে লোরার একটা অংশ আলাদা করে রেখেছে মীরা ২য় মাস থেকে। যে সময়টাতে পাশে দাঁড়িয়েছে লোরা তাতে কোন কিছুতেই এর প্রতিদান হবে না। এমনকি ওর বর রাহাতের অবদানও অস্বীকার করার উপায় নেই মীরার৷ আল্লাহ ওদের দুজনকে এর উত্তম প্রতিদান দিক। এমন দোয়া মীরা সবসময় ওদের জন্য করেছে। তবে লোরার একটা অনুরোধ ও আছে – দেশের বাইরে থাকার দরুন বাংলো প্যাটর্নের বাড়ি তৈরীর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না ওদের, মীরার গাজীপুরের বাড়ির মতো স্নিগ্ধ সুন্দর, গাছঘেরা একটা বাড়ি তৈরীর তদারকি ওকে করে দিতে হবে, এমনি আবদার ছিলো লোরার। মীরা সহাস্যে গ্রহণ করেছে লোরার এ আর্জি।
বিজনেস রিস্টার্ট করার প্রথম বছরটা মীরা একেবারে মনপ্রাণ দিয়ে বিজনেসটাকে সময় দিয়েছে। বিজনেসের সাসটেইনেবলিটির জন্য এর কোয়ালিটি, প্রোডাক্টের আপটুডেট ডিজাইন, মার্কেট ডিমান্ড, রিজেনেবল প্রাইজ রেঞ্জ, সাপ্লাই চেইন, বায়ার ডিলিং সব কিছুতে কঠোর নজরদারি রেখেছে। দেশবিদেশের স্বনামধন্য পোশাক ব্র্যান্ডের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি, চ্যালেন্জ, ওয়ার্কিং প্রসেস সম্পর্কে পাড়াশোনা করেছে প্রচুর ৷ জয়েন করেছে বিভিন্ন কনফারেন্স, ফেয়ার আর বাৎসরিক ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে। ঘুরে দাঁড়নের গতি মন্থর হলেও পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি ওকে। প্রতিবন্ধকতা যে ছিলো না তা বললে ভুল হবে। প্রতিবন্ধক তো সেই কবেই তৈরী ছিলো মীরার জন্য। যা ও আবিষ্কার করেছে নিলামের দিন। সেই অদৃশ্য প্রতিবন্ধক মিলন এখনো মীরার পিছু ছাড়েনি। ঠিক কোন দামে মীরা কিনেছিলো এমন শত্রু মাঝেমধ্যে ওর খুব ইচ্ছে হয় জিজ্ঞেস করে মিলনকে।
কম দামে প্রোডাক্ট ছাড়া, মার্কেটে বাকীতে মালামাল দেয়া, বছর জু্ড়ে ছাড়, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি দিয়ে মীরাকে হারাতে গিয়ে বাজার নষ্ট করেছে মিলন। ও একা নেই ওর সঙ্গী হয়েছে নিঃস্ব, ভঙ্গুর রাজিবকে। রাজিব এত কিছু করে এখন মিলনের ফ্যাক্টরির ম্যানেজার হিসেবে আছে।
এতকিছুর পরও দমে যায়নি মীরা, মাটি কামড়ে পরে ছিলো ও দিন পেরিয়ে মাস, আর মাস পেরিয়ে বছর ধরে। মাসের পর মাস লাভের মুখ দেখা তো দুরে থাক টার্গেট মতো বিক্রিই হয় নি, এদিকে কারখানা ভাড়া, স্টাফদের বেতন, সংসার খরচ এগুলো তো আছেই। তবুও কিন্তু কোয়ালিটিতে আপোষ করেনি ও । নিজেকে শান্ত রেখে ব্যাবসাটাকে টেনে নিয়ে গেছে সামনের দিকে।
মাঝেমাঝে ক্লান্ত, অবশ্রান্ত ওর মনে হয়েছিল সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে যাক কোথাও, এমন কোথাও যেখানে ওকে না কেও চিনবে, না কেও জানবে। কি হবে এত খেটে, পরিশ্রম করে। কিন্তু দিনশেষে নূহার আদুরমাখা বুলি, মায়াভরা হাসি, দুষ্টুমিতে মীরার সকল কষ্ট, ক্লান্তি কর্পূরের মতো উবে যেতো, সারাদিনের যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত মীরা নূহার কাছাকাছি এসে বেঁচে থাকার কারন খুঁজে পেতো।
টুম্পার চলে যাওয়ার পর মীরা অনেক ভেবে ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টের বিজনেসটার দায়িত্ব পুরপুরি ফাহাদকে দিয়ে দেয়। কারখানাকে টেনে তুলবার রসদের যোগান আসে ওর সেই বিজনেস থেকে। দুটো মেইনটেইন করা টাফ ছিলো। তবে মীরা বিশ্বাস করে – ইচ্ছা, সৎ সাহস, আর পরিশ্রমী হলে সবাই সব করতে পারে। তার জন্য যা দরকার তা হচ্ছে ম্যানেজম্যান্ট। মীরা কষ্ট হলেও নিয়ম করে প্রতিদিন একবার আউটলেট গুলোতে ঢু দিতে চেষ্টা করতো। মাসের শেষ দিন অনেক রাতে বাড়ি ফিরতো হিসেব করে। ফাহাদ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে মীরার কাজকে সহজ করে দেয়। মীরাও ওর যোগ্যতা আর বিশ্বস্ততার মূল্যায়ন করে মোট ব্যাবসার ৫ শতাংশ হারে লাভ দেয় ওকে। যাতে ব্যাবসাটার প্রতি ওর নিষ্ঠা শতভাগ বজায় থাকে সবসময়।
——
সেদিন বিকেলেই নিজের বাড়ি ফিরে যায় ইরা, যাওয়ার আগে বলে যায় কাজকর্মের ব্যাস্ততা শেষ হলে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে। মীরা বরাবরের মতো এবারও পাত্তা দেয়নি। ওর সব ফোকাস এখন সামনের সম্মেলনে বেস্ট পারফর্ম করা। ইতোমধ্যে ওখানে ওদের ড্রেস গুলো পাঠিয়ে দিয়েছে স্টলে সাজাতে। কিছু ড্রেস পাঠিয়েছে রেম্পের মডেলদের জন্য। পরশু থেকে দুইদিনের সম্মেলন শুরু হবে। তাই চেকলিস্ট চেক করে করে আগেভাগে কাজগুলো গুছিয়ে রাখছে মীরা।
দেখতে দেখতে সম্মেলনের দিন এসে গেলো। নূহাকে নিয়ে মীরা মাজেদা খালাকে ওর মায়ের বাড়িতে যেতে বলে। কারন আজকের সারাদিন ওকে ওখানেই থাকতে হবে। মীরা খালাকে বলেছেন রাতে ফিরবার সময় তাদেরকে নিয়ে আসবে। তারা বেরিয়ে গেলো মীরার আগেই। নূহা ওর মা’কে জড়িয়ে চুমু খেয়ে বিদায় নেয়। নানু এখন নূহার খুব ভালো বন্ধু।
তাড়াহুড়ো করলে যা হয়, একটা দরকারী কাগজ খুঁজে পাচ্ছিলো না মীরা। এমন ইভেন্টে যাওয়ার সময় প্রতিবারই টুম্পাকে ভীষণ মিস করে মীরা। মেয়েটাকে ফোন দেয়া হয় না। নোটপ্যাডে এক কোণে ঝটপট লিখলো Call tumpa…। ইতোমধ্যে নতুন এসিস্ট্যান্ট তমা সময়ে আগেই এসে পৌছে গেছে বাড়ির সামনে। ম্যাসেজে জানিয়েছে তা। টুম্পা যাওয়ার পর পরই ওকে নিয়োগ দিয়েছে মীরা। গত কয়েকবছর কাজ করার সুবাদে মোটামুটি সবকিছু নখদর্পনে এসে গেছে তমার। মীরা বেরিয়ে একটা সিএনজি করে রওনা দেয়।
ইভেন্টে গেলে সেলের চেয়ে বেশী হয় ব্যাবসায়িক পরিচিতি। নতুন নতুন মানুষ, বিজনেস আইডিয়া, প্রতিবন্ধকতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। সবচেয়ে ভালোলাগে পরিচিত মানুষগুলোর সাথে দেখা হওয়াটা। যারা এত বছর একসাথে কাজ করে, অভিজ্ঞতা, পরামর্শ, মতামত শেয়ার করে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে চলেছে এতদিন ধরে। সেদিন মোটামুটি ভালোই কাটে। গতবারের চেয়ে এবার তুলনামূলক সেল বেশী হয় মীরার। মীরা এ বছর ড্রেসের দাম মেকিং চার্জে, প্রফিট না রেখে বিক্রি করেছে। যাতে বেশী মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।
মেলার সব কাজ শেষ করে রাতে ফিরবার সময় মায়ের বাসায় রাতের খাবার খেয়ে নূহা আর মাজেদা খালাকে নিয়ে বাসায় ফিরে মীরা। খাওয়াদাওয়া করে আসায় দ্রুত শুয়ে পরে ওরা। নূহা ঘুমিয়ে গেলেও ঘুম নেই মীরার। উদ্যোক্তার সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান আগামীকাল। টপ পরর্ফম লিস্টে ওর নামও রয়েছে। ওর চেয়ে বড় বড় উদ্যোক্তাও রয়েছে সেখানে। তাদের মধ্যে তিনজনকে বেস্ট এক্সিলেন্স এওয়ার্ড দেয়া হবে। এত জন সেরা উদ্যোক্তাদেরকে টপকে বেস্ট এক্সিলেন্স এওয়ার্ড পাওয়া টাফ। তবুও স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। আগামীকাল এওয়ার্ডটা ওর ঘরেই আসবে এমন প্রত্যাশাই করছে ও।
নূহা ঘুমিয়ে পরলে আলগোছে বিছানা ছাড়ে ও। আগামীকালের জন্য ড্রেস, এক্সেসরিস গুছিয়ে রাখার জন্য ড্রেসিং রুমে যায়। গিয়ে দেখে ওর পেইজের সবচেয়ে সুন্দর গাউনটা এনে রেখেছে তমা। লাল রঙের গাউনটা ব্রাইডাল কালেকশন হিসেবে করেছিলো মীরা। তমাকে হোয়াটসএ্যাপে একটা বকা দিলো এটা কেন এনেছে ও তা বলে। তমা উত্তরে একটা হাসির ইমোজি পাঠিয়েছে। তারমানে ও ইচ্ছে করেই এ কাজটা করেছে। উপায় না পেয়ে সেটার সাথে মেচিং জুয়েলরী গুছিয়ে রাখে। জুয়েলরী বলতে একটা সোনার চেইন আর হীরা বসানো পেনডেন, কানে ছোট্ট দুল। হাতের ব্রেসলেট, আর সিম্পল রিং।
আগামীকাল ওর জন্য একটা বিশেষ দিন। কারন নমিনেশনে মিলনের পেইজের নামও রয়েছে। তাই এওয়ার্ড পাওয়ার ইচ্ছেটা এত তীব্র ওর।
চলবে….
প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব : ৬৮
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)
গতরাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিলো। বেশ কয়েক বছর ধরেই মীরা লক্ষ্য করেছে প্রকৃতির হিসেবে গন্ডগোল হচ্ছে, গরমের দাপট প্রায় পুরো বছরজুড়ে থাকছে। বছরের ছয় ঋতুর অস্তিত্ব কেবল বইপত্রেই বিদ্যমান, আদতে বছর ঘুরছে তিন ঋতুতে। গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত। সময়ের হিসেবে বর্তমানে হেমন্তকাল হলেও দিনের বেলা গুমোট গরম, আর শেষ রাতে শীত শীত । এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের অবস্থা নাকাল।
গত কয়েকদিনের গুমোট গরমের পর এরকম একটা বৃষ্টির ভীষণ দরকার ছিলো। চারপাশে আজ অন্যরকম স্নিগ্ধতা। বাড়িতে হুট করে কোন প্রিয়জন এলে যেমন আনন্দ লাগে, তেমনি লেগেছে গতরাতের বৃষ্টিটাকে, খুব কাছের কোন প্রিয়জনের হুট করে আগমণ যেন। বৃষ্টি এলে বাকী সকলে যখন দোর, জানালা বন্ধ করে, মীরা তার ঠিক উল্টো। ও বাড়ির সব জানালা দরজা খুলে দেয়৷ মুহূর্তেই ঘরদোর স্নিগ্ধ, ঠান্ডা বাতাসে মোহিত হয়ে যায়।
আজ খুব সকালে ঘুম ভেঙেছে মীরার। অন্যদিন হলে বিছানা ছাড়তো না ও। কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানা ছাড়তে হলো ওকে। ঘুম থেকে উঠে ওর ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দাটায় প্রতিদিনের মতো আজও দাঁড়ালো ও । ঝুল টবে ঝুলে থাকা মানিপ্ল্যান্টের পাতার কিনারায় শিশিরের মতো বৃষ্টির পানি আটকে আছে ফোটায় ফোটায়। দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। সামনে তাকাতেই ওর খেয়াল হলো বাড়ির সামনের আমগাছের পাতা গুলোর রঙ মলিন হতে শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই বর্ণহীন হয়ে ঝড়ে পড়ার অপেক্ষা ওদের। বেশ কয়েকবছর ধরেই এমন দেখে আসছে ও, এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে না।
এ সময়টা প্রকৃতি রুক্ষ রূপ নেয়, ঝড়ে পরার জন্য। ঝড়ে পরা যে সবসময় বেদনার না, তাই যেন এরা বলে যায় বছর ঘুরে বারবার। নতুন করে তৈরী হতেই ওদের এই ঝড়ে পরা, এই আত্মত্যাগ। প্রকৃতি আমাদের অনেক কিছু শিখায়, কিন্তু আমাদের চোখ বাঁধা অদৃশ্য ভবিষ্যতের স্বপ্নে, বাস্তব দেখার সময় এক মুহূর্তে ও নাই অদেখা ভবিষ্যতের তৈরীতে।
বারান্দার উত্তর দিক থেকে দমকা বাতাসের ঝাপটা লাগে মীরার শরীরে। এক রাশ প্রশান্তির বিনিময় করে প্রতিদিন এরাই মীরার ক্লান্তিকে ধুয়ে মুছে নিয়ে যায়। উত্তুরে এ বাতাস, পাতার ঝড়ে পরার জন্য তৈরী হওয়া, হাত-পায়ের চামড়ায় টান ধরা,
জানান দিচ্ছে শীতের আগমনকে। শীত রওনা দিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতিতে এলো বলে। গতরাতে ওর মা জাহানারাও বলেছিলেন যে এটা শীত নামানো বৃষ্টি। বুক ভরে শ্বাস নেয় মীরা। ম্যাট টেনে পনেরো মিনিটের জায়গায় পাঁচ মিনিট ইয়োগা করে আজ ব্যাস্তার দরুন। প্রতিদিনকার জীবণের এই রেট-রেসে নামার আগে নিজেকে এটুুকু সময় দেয় ও৷ সেখান থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে মীরা বাথরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। রুমে এসে মেয়ের কাপড় গোছগাছ করে সামনে রাখলো, তারপর মেয়ের বইপত্র ব্যাগে গুছিয়ে দিলো ও, নূহার মিসকে বলা হয়েছে আজ তিনি যেন ওকে ওর নানু বাড়িতে গিয়ে পড়ায়। নূহা এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বলে মিসকে ওর মায়ের বাড়ি চিনিয়ে রেখেছে মীরা। এ বছরে স্কুলে ভর্তির সময় নূহার ভীষণ অসুখ করে। ধানমন্ডি নিবেদিতা হসপিটালে টানা পনেরো দিন ভর্তি রাখতে হয়েছিলো ওকে। হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি, ওর সুস্থ হওয়ায় জানুয়ারি মাসটা কেটে গেলো, ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি হয়ে গেলো পুরোপুরি সুস্থ হতে। নূহার হার্টের এই সমস্যাটা বেশ ছোটবেলায়ই ধরা পরেছে। ছোট্ট বলে অস্ত্রপোচার করা হয়নি। ওষুধের দ্বারা ঠিক করতে চেষ্টা করেছেন ডাক্তাররা। হাসপাতাল, অপারেশন, ডাক্তার এসবের ঝামেলায় তাই সাড়ে পাঁচবছর হওয়া সত্ত্বেও স্কুলে দিতে পারেনি মীরা নূহাকে৷ ইরা অবশ্য বলেছিলো ওকে বছরের মাঝামাঝি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দিতে, রাজি হয়নি মীরা। ওর ইচ্ছা মেয়েকে বাংলা মিডিয়ামেই দিবে। তাই মিস রেখে পড়ানো হচ্ছে ওকে। মীরার মেয়ের পড়ার ব্যাপারে কোন প্যারা নাই। ও গতানুগতিক মায়েদের মতো পড়ো, পড়ো করে মাথা নষ্ট করে না। পড়া, আর বইয়ের তলে চাপা পরে ওর শৈশবের আনন্দ নষ্ট হোক তা ও চায় না। পড়াটাকে আনন্দময় করার যত চেষ্টা ওর। তাইতো শত কষ্ট হলেও রাতের বেলা বই পড়িয়ে শোনায় মীরা নূহাকে। আর নূহা? এ বয়সেই ওর বইয়ের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০০-তে।
মেয়েটা এমনিই বাবা ছাড়া বেড়ে উঠছে। আশেপাশের বাচ্চাদের বাবা মা, পরিবার এমন ছবি দেখে “বাবা কোথায়?” এমন প্রশ্নের মুখোমুখি ও হয়েছে মীরা বেশ কয়েকবার। মীরা প্রথমে এড়িয়ে গেলেও, এখন আর এড়াতে পারে না। মীরা প্রথমে ভেবেছিলো বলবে- “মা*রা গেছে” কিন্তু মৃ*ত্যুর মতো এত জটিল একটা টার্মটার সাথে এত অল্পবয়সে নূহাকে পরিচয় করাতে মন চায়নি মীরার, তাই বেখেয়ালে একদিন নূহার এই প্রশ্নের উত্তরে মীরা বলেছে- “তোমার বাবা বিদেশ থাকেন ” জাস্ট বলার জন্য বলা। সেদিন আর্ট স্কুলে নতুন এক বন্ধুকে নূহা বলছে ওর বাবা বিদেশ থাকেন। অথচ একই শহরে বাস করছে ওরা, একই আকাশের নিচে। তবুও গত তিনবছরে কারো সাথে কারো দেখা নেই। এসব ভাবতেই মনকে শক্ত করলো মীরা। এসব ভেবে লাভ কি? শুধুই হৃদয়ে র*ক্ত*ক্ষ*রণ। সুযোগ সন্ধানী কিছু পুরুষ ব্যাতীত মীরার এই অন্ধকার অতীত নিয়ে কেও নাড়াচাড়া করে না। মীরার মায়ের বাড়ির লোকেরা, ইরার শ্বশুর বাড়ির আত্নীয়, খুব কাছের আপনজন সবাই এমন ভাব যেন এমন একটা অতীত ছিলোই না কোনোদিন। আর নূহা! ও যেন আকাশ ফুঁড়ে এসেছে মীরার কোলে। ব্যাপারটা খুব ভালো লাগে মীরার। এমন একটা সাপোর্টিভ পরিবেশের জন্যই মীরা দ্রুত ওভারকাম করতে পেরেছে।
এসব ভাবনাকে মাথা থেকে বের করে ও গেলো রান্নাঘরে নূহার জন্য খিচুড়ি বসাতে, যদিও নূহা বড় হওয়ার পর খিচুড়ি তেমন খেতে চায় না, তাও দুই-এক চামচ খেলেও সেটা ওষুধের মতো কাজ করবে ভেবে রান্না করলো ও। খিচুড়ি বসিয়ে ও গেলো গোসলে। গোসল শেষে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে ড্রেসিং রুমে গিয়ে চটপট ড্রেসটা পরে নিলো ও৷ ড্রেস পরে, চুল অর্ধেক স্ট্রেট করে দৌড়ে গেলো রান্নাঘরে। মেয়ের খিচুড়ি যে চুলায় ভুলেই গিয়েছিলো ও। চুলার আঁচ কমিয়ে রান্নাঘরের প্লাগে স্ট্রেটনার লাগিয়ে চুল এবং খিচুড়ি দুটোর খেয়ালই রাখলো মীরা। সবচুল স্ট্রেট হওয়ার আগেই খিচুড়ি তৈরী হয়ে গেছে। মুরগীর স্টক আগেই তৈরী ছিলো বলে দ্রুত তৈরী হলো খিচুড়ি। মেয়েটার পেট নরম গতকাল থেকে৷ তাই সকাল সকাল পেলাউর চাল, অর্ধেক কাঁচা কলা আর আগে তৈরী করে রাখা মুরগীর স্টক দিয়ে খিচুড়ি করলো ও এই সকালে। মাজেদা খালা দেখলে দিবে বকা। এত ব্যাস্ত দিনে কেন ও এমন ঝামেলা করতে গেলো তাই বলে, তিনি ও-তো পারতেন রাঁধতে। কিন্তু মীরার তাকে বেশী হ্যাপা দিতে চায়নি। নূহার খাবার তৈরীর জন্য যাতে তার নূহার থেকে দূরে না থাকতে হয় তাই ওর এই হ্যাপা পেহানো সেই শুরু থেকে, এতবছরে এটা অভ্যাস হয়ে গেছে ওর । আর ঝমােলা? এতো মীরার নিত্যদিনকার সঙ্গী। বরং ঝামেলাহীন দিনকে বড্ড বিবর্ণ লাগে ওর।
চুল স্ট্রেইট করা হলে দ্রুত সাজলো ও। “ও এমনিতেই সুন্দর, সাজলে ওকে সুন্দর লাগে না”-এমন একটা কথা কেও একজন বলতো ওকে। ভেবেই হাসি পেলো ওর। সাজগোছ শেষ করে নূহা, মাজেদা খালাকে রেখেই বাইরে থেকে দরজা লক করে বেরিয়ে যায় ও। সকাল সকাল না বেরুলে পৌঁছুতে দেরি হবে। বাসা থেকে বের হয়েই মীরা ওর মা জাহানারাকে কল করে জানায় ওর বেরুনোর কথা, ফোন রাখার আগ মূহুর্তে মীরা বলে-
: ” মা, শোন…
আজ আমার একটা বিশেষ দিন, তুমি আমার জন্য একটু দোয়া করো তো…”
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দেয় ও। মেয়ের কথা শুনে জাহানারা হাসে। জীবণের এই দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিটি কাজে যাওয়ার আগে এমনিভাবে দোয়া চায় মীরা মায়ের কাছে। বাবা-মায়ের অবাধ্যতার প্রমাণ ওর কষ্ট, যন্ত্রণাময় অতীত জীবণ। আর বাবা মায়ের দোয়া, সাপোর্ট যে কি তা ও খুব টের পেয়েছে গত তিনবছরের জীবণে। মীরার জীবণে একাকিত্ব ছাড়া বাকী সবকিছুই সাফল্যের নামান্তর। ঐ একলা থাকাটাই মীরার সাকসেসফুল হওয়াটা ঝুলে আছে সমাজের চোখে। তার উপর রাজিবের সাথে ছাড়াছাড়ির পর ফেসবুকের ইনবক্স, রাতবিরাতে ফোনকল এসব বেড়ে গেছে। পরিচিত জনদের মধ্যে অনেকেরই একা মীরার প্রতি সদয় হয়ে খোঁজখবর নেয়া বাড়িয়ে দিয়েছিলো হুট করেই। তারা ব্যাবসা, সংসার, ছোট্ট মেয়ে কিভাবে সামলায় মীরা তা নিয়ে প্রশংসা দিয়ে কথা বলা শুরু করলেও সে কথা শেষ হতো একা থাকা কষ্টের জীবণের আফসোস নিয়ে। মীরা যখনই কথার এমন টোন ধরতে পেরেছে তখনি হয় ফোন রেখে দিয়েছে নয় এড়িয়ে গেছে। অপমানও করেছে কাওকে কাওকে। এক বাড়িতে তো বাড়িওয়ালা আর তার বিবাহ উপযুক্ত ছেলে দু’জনেই উঠেপড়ে লেগেছিলো ওর পিঁছু৷ তার উপর বাড়ির মা, মেয়ে বউদের বাঁকা দৃষ্টি। তাদের চোখে ডিভোর্সি,একা থাকা সুন্দরী মীরা এক আতংকের নাম। কত্ত ইনসিকিউরড এরা নিজের ছেলে, ভাই, আর বরদের ব্যাপারে। তার উপর এক শ্রেণীর অকর্মণ্যরা তো রয়েছেই, যারা বাবা, স্বামী, ভাইদের ঘাড়ে বসে খেয়ে,পরে থেকে নির্ভেজাল হিংসা করে মীরাকে। তাদের ওকে খাটো করে বলা কথা, ওর সাকসেস মানতে না পারা হিংসাই প্রমাণ দিতো তাদের অকর্মণ্যতার। তারা পিঠ পিছে নানা কথা বলতো মীরার ব্যাপারে। মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু। কথাটা যে কত্ত সত্যি তা একলা চলে খুব টের পেয়েছে মীরা।
তবুও জীবণের শত ব্যাস্ততায়ও এসব থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে ওকে। চরিত্রে কাঠিন্য এনে, কর্কশ কন্ঠে কথা বলে, ব্যাবহারে অসৌজন্যমূলক হয়ে বাঁচতে হয়েছে এদের থেকে। তবুও সবসময় পুরোপুরি পেরে উঠেনি ও। যার বদৌলতে বাড়ি বদল করতে হয়েছিল গত তিন বছরে বেশ কয়েকবার। সমাজে একা থাকা বিশেষ করে সিঙ্গেল মাদারদেরকে মনে করে এরা পুরুষ বিবর্জিত হয়ে পুরুষের সঙ্গ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। একটু চেষ্টা করলেই এদের নাগাল পাওয়া সহজলভ্য। আর বিছানায় টানা তো আরো সহজ। একটা মেয়ে যে একলা নিজের জীবণ বয়ে চলতে পারে তারা তা ভাবে না। সুযোগ সন্ধানী এ পুরুষগুলো তাদের সে*ক্স স্টার্ভ ভাবে। যৌণতা পুরুষ নারী উভয়ের জীবণেরই স্বাভাবিক বৃত্তি। তবে সমাজে এমন অনেক নারীর উদাহরণ রয়েছে যারা অল্প বয়সে সন্তান নিয়ে বিধবা হয়েও বাকী জীবণ একা পার করেছে। এমন পুরুষের সংখ্যা কত?
এর ব্যাতিক্রমও যে কেও নেই, তা বলবে না মীরা। সমাজের এমন অনেক মানুষও আছে যারা পুরুষ হয়েও নির্লোভ সাহায্য করেছে মীরাকে, মেয়ে, মা, বৌ হয়েও মীরাকে বাঁকা নজরে দেখেনি। অকপট প্রশংসায় প্রেরণা দিয়েছে ওকে।
তবে মীরার খারাপের মুখেমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাই বেশী। বেশ কয়েকবার এসব ঝামেলা হওয়ার দরুন ওর মা বলেছিলো ওদের বাড়ির নিচতলাটায় এসে পরতে। কিন্তু মীরা যায়নি, কারন ওর মনে হয়েছে এতে ওর সাফল্যে ওর পরিশ্রম, মেধার খাটো হওয়ার সুযোগ থাকবে। তাছাড়া ওদের বাড়ির নিচতলাটায় বেশ কয়েকটা ভাড়ার দোকান বের করার দরুন জায়গা বেশ ছোট। এই অজুহাতে মীরা এখানে আসা বাতিল করেছে। আর ওর মা এবং ইরা এসব উটকো ঝামেলাকে পুঁজি করে এসব এড়ানোর জন্য হলেও বিয়ে করতে তাগিদ দেয় মীরাকে। তাদের কথাবার্তায় মনে হয় মীরা যেন অবিবাহিত এক মেয়ে।
——–
বিদেশী কুটনৈতিক আসার কারনে রাস্তা বন্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পৌঁছুবার পথে প্রচুর জ্যাম ছিলো। তমা গাড়ির জানালা দিয়ে বারবার বাইরে তাকাচ্ছে, সামনে কতগুলো গাড়ি আছে তা দেখছে বারবার। গুগল করে জ্যামের এরিয়া আর দূরত্ব ও দেখছে। ওর এমন আচরণে অস্থিরতার প্রকাশ পাচ্ছে। মীরা নিজেকে ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করছে। স্পিচে কি বলবে তা গুছিয়ে নিচ্ছে মনে মনে। কলম দিয়ে প্যাডে লেখা স্পিচের দুইএকটা শব্দ বাদ দিচ্ছে কখনো বা যুক্ত করছে এক আধটা লাইন। ওর পৌঁছুবার কোন তাড়া নেই যেন। তমা একটু অবাক হয় মীরার আচরনে। মীরা দীর্ঘ সময় ওর তাকিয়ে থাকা লক্ষ্য করে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে – কি?
তমা মাথা নেড়ে উত্তর দেয় কিছু না।
ওর অবাক হওয়া দেখে মীরা হেসে বলে-
: “আমদের দুজনের চিন্তা তো তুই একসাথে করে ফেলছিস, তাই কুল আছি, দেখে আমাদের হাতের বাইরে যা তা নিয়ে ভেবে কি হবে? এইযে জ্যামে বসে আছি, এতে আমাদের কিন্তু কোন দোষ নেই, তাছাড়া কিছু করারও নেই তাহলে, ফালতু ভেবে কি হবে? অনুষ্ঠান সূচি দেখ, দেড়ি হলে বড়জোর রেম্প শোটা মিস হবে, কি আর করা, ইউটিউব থেকে দেখে নিবো নাহয়। তুই কান্দিস না প্লিজ..
: ” আপু, আমি কাঁদছি না ”
: “তাহলে মুখটা গোমড়া করে রাখিস না, কি সুন্দর লাগছে তোকে, মাশাল্লাহ”
: “আপু আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে, মনে হচ্ছে দেবলোক থেকে মর্তে পরী এসেছে ”
মীরা মুচকি হেসে বলে-
: “মাশাল্লাহ বল”
তমা ফিক করে হেসে বলে-
: “মা-শা-আল্লাহ”
দুজনে তারও আধ ঘন্টা পর পৌঁছুলো ভ্যানুতে। ভাড়া মিটিয়ে হলে প্রবেশ করলো দুজনে। তমা গেলো রেম্প ইভেন্টের ড্রেসিং রুমে ওদের পোশাক পরে রেম্প হয়ে গেছে কিনা তার খবর নিতে। আর মীরা প্রবেশ করলো মূল ফটকের লাল গালিচা দিয়ে।
ওকে রিসিভ করবার জন্য কেও না থাকলেও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হল ভর্তি সাকলে তখন মঞ্চের নাচ দেখা রেখে দেখছে অনিন্দ্য সুন্দরী মীরাকে।
চলবে…..