#প্রিয়_বেগম
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #পর্ব_৩৪
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা
হন্তদন্ত পায়ে মহল প্রাঙ্গনে এসে থামলো কাশীম আর আরও বেশ কয়েকজন সৈন্যর ঘোড়া। ধুপধাপ ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে এল সবাই। শেহজাদ পায়চারি করছিলো। তাদের দেখে প্রাঙ্গনে ছুটে গেল। কাশীমের বিশাল দেহ উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছে। শেহজাদ শুকনোমুখে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি হয়েছে কাশীম? ‘
কাশীম বিরসমুখে বলতে থাকে, শেরহাম সুলতানের বিশ্বস্ত সৈন্য সামাদ আর মুরাদসহ প্রায় একুশজন সৈন্যকে বন্দী করেছে তান্ত্রিক আর ডাকাতরা মিলে। কয়েকলগ্ন পূর্বেই নদীর ধারে তাদের সবার লাশ পড়েছে। তারা নগরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। তাদের উদ্দেশ্য সুলতান মহল আক্রমণ করা।
শেহজাদের কপাল ঘেমে উঠলো। কড়া মেজাজে বলল,
‘ আর আমাদের সৈন্যরা কোথায়? ‘
‘ তারা শুরুতেই অজ্ঞান করছে আর তারপর হত্যা করছে। তাই আমি সকলকে সতর্কতা সহিত নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেছি। তাদের সাথে অন্যভাবে লড়তে হবে। নগরের সবাইকে সতর্ক করেছি যাতে তারা সবাই সাবধান থাকে। অপ্রয়োজনে না বেরোয়। ‘
সাফায়াত বলল,
‘ ভাইজান, তনী,নানাজান তো বাইরে আছে। ডাকাতরা ভাইজানকে খুঁজছে। ‘
শেহজাদ কাশীমকে বলল,
‘ মসজিদে সৈন্য পাঠাওনি? ‘
কাশীম বলল,
‘ জ্বি সেটাই বলতে যাচ্ছিলাম। আমরা মসজিদে গিয়েছি। মাইকে ঘোষণা করেছি ডাকাতদের কথা।
শেরহাম সুলতান, উনার বেগম আর নানাজানকে সেখানে পাইনি। কয়েকজন মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম। তারা জানালো বেগমের প্রসববেদনা উঠায় উনাকে উনার স্বামী গাড়িতে তুুলে নিয়ে গিয়েছেন। আমি ভাবলাম উনারা মহলে ফিরেছেন তাই সামাদ আর মুরাদের খবরটাও দিতে এলাম। ‘
প্রসববেদনার কথা শুনে সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়লো । শাহানা, খোদেজা সকলেই নেমে এল।
শাহানা বলল, ‘ কাশীম দ্রুত তাদের খুঁজে বের করো। হায় খোদা আমার মেয়েটা কত কষ্টেই না আছে। ‘
সাফায়াত বলল, ‘ আমরা বেরোচ্ছি আম্মা। শান্ত হোন। ‘
‘ দ্রুত করো। শেরহাম এসবের কিছু জানেনা, কিভাবে ওকে সামলাবে? হায় আল্লাহ আপনি ওদের দেখুন। সহিসালামতে ফিরিয়ে আনুন। ‘
শেহজাদ আর সাফায়াত দেরী না করে বেরিয়ে পড়লো। কাশীম মহলের সদর দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল, অযথা কেউ বাইরে আসবেন না। পরিস্থিতি এখন ভয়ানক। যেকোনো সময় ওরা মহলে হামলা করতে পারে। গোলাগুলির শব্দে ভয় পাবেন না।
মহলের সবাই ভয়ে আল্লাহ’কে ডাকতে লাগলো। খোদেজা সন্ধ্যায় ডাক পাঠিয়েছে সেই দাত্রীকে। আজ,কাল কিংবা পরশু অপরূপার তনী দু’জনেরই প্রসব বেদনাউঠার কথা। তাই উনি চেয়েছিলেন দাত্রী উনার ছোট্ট নাতনিকে নিয়ে মহলে উঠেন আগেভাগেই। আজকে উনার চলে আসার কথা। কিন্তু আসেননি এখনো।
উনি কি রওনা দিয়েছেন নাকি উনার কুটিরেই আছেন। রওনা দিলে তো শেরহাম উনাকে পাবেন না। চিন্তিত হয়ে পড়লেন খোদেজা । তনীর প্রসববেদনার কথা শুনে অপরূপা ভয়ে চুপসে গিয়েছে। তারমধ্য নগরে ডাকাত সন্ত্রাসদের আগমন। অবর্ণনীয় চিন্তায় ক্রমেই তার শরীর খারাপ করতে লাগলো। হাত পা অসাড় হয়ে আসা শুরু করলো। বিছানায় পড়ে রইলো সে কুন্ডলী পাকিয়ে।
————
ছাইরঙায় ঢেকে গিয়েছে পরিষ্কার আকাশ। মেঘের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ধরণী কাঁপিয়ে মাঝেমধ্যে ঝিলিক দিচ্ছে তীব্র আলোর ঝলকানি। রবিউল আওয়াল মাসের চাঁদ আর তারার মেলায় আলোকিত আকাশ গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। প্রবল হাওয়ায় গাছের পাতা দোলার শনশন শব্দ হচ্ছে।
তটিনীর পানিভাঙা দেখে কয়েকজন মহিলা শেরহামকে জানিয়েছিল মসজিদ হতে কিছুটা দূরে একজন বৃদ্ধ মহিলা একা থাকেন। তিনি সুপরিচিত একজন দাত্রী। ভালো নামযশ উনার। বেশ অভিজ্ঞ দাত্রী তিনি। তটিনীকে সেখানে নিয়ে যেতে বললেন। শেরহাম দেরী না করে তটিনীকে নিয়ে রওনা দিয়েছিল। নানাজান আর উনার ভৃত্য দু’জন তার পিছুপিছু রওনা দিল। অসময়ে আকাশের এমন রূপ দেখে ভড়কে গিয়েছেন নানাজান। আকাশের দিকে মুখকরে দোয়া করলেন ‘ হে পরওয়ারদিগার , মা আর বাচ্চাকে হেফাজত করুন। তাদের সুস্থ রাখুন। সমস্ত বালা মুসিবত দূর করে দিন। ‘
আকাশের গর্জনের সাথে সাথে ঘোড়ার গাড়িও শব্দ তুলে থেমে গেল আচমকা। শেরহাম জিজ্ঞেস করলো, কি হলো?
কোচোয়ান বলল,
‘ এখানেইন হুজুর। ওই যে সরু পথটা দেখছেন, সেটা ধরে চলতে হবে। ওইখানে বুড়ির কুটির। দ্রুত আসুন। ‘
তটিনী ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় তার সারাদেহ অসাড় হয়ে এসেছে। চোখ ফুঁড়ে জল বেরোচ্ছে। তবে মনের শান্তি একটাই তার মানুষ তার কাছে রয়েছে। তার কাছে আছে। বুক খামচাতেই শেরহাম তার মুখের দিকে তাকালো। কপালে ঠোঁট চেপে বলল,
‘ এই তো চলে এসেছি। আরেকটু ধৈর্য ধর। ‘
তটিনী তার পাঞ্জাবি এমনভাবে খামচে ধরলো যেন সে চাইছেনা শেরহাম তাকে রেখে কোথাও যাক। কষ্টেসৃষ্টে বলল,
‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? তুমি আমাকে রেখে যেওনা। আমার কিছু হবে না। ‘
‘ আমি যাব না। ‘
‘ কথা দাও। ‘
শেরহাম রাগীস্বরে বলল,
‘ এত কথা বলিস কেন?’
তটিনী কাঁদতে লাগলো। হাত পা মোড়রাতে লাগলো। শেরহাম গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরলো। তটিনীর আর্তচিৎকার তার সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। শক্তি প্রয়োগ করে তটিনী তার গলাটা আঁকড়ে ধরে রাখলো। শেরহাম বুকের সাথে চেপে ধরে মুখে চুমু দিতে দিতে বলল, ‘ আজ তোর বাচ্চা আসবে। খুশি হবি তো কাঁদছিস কেন? ‘
তটিনী আরও জোরে কেঁদে উঠে বলল,
‘ খুব কষ্ট হচ্ছে। ও আল্লাহ। ‘
শেরহাম তাকে জড়িয়ে ধরে রেখে দ্রুত পা চালালো। উন্মাদের মতো হাঁটতে লাগলো আশপাশ না দেখে। এর চাইতেও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে সে পূর্বে, কিন্তু এতটাও অসহায় বোধ করেনি। ফিনফিনে করে বৃষ্টি শুরু পড়া শুরু হয়েছে। লোকায়েত হতে দূরে নির্জন একটা জায়গায় দাত্রী মায়ের বাসস্থান। রাস্তা থেকে নেমে নিম্নাভিমুখী সরু পথ দিয়ে অনেকদূর হেঁটে যেতে হয়। দু’ধারে ঝোপঝাড়, আর গাছপালা। কোচোয়ানের হাতে হারিকেন। হারিকেনের আলোয় সেই পথ ধরে তটিনীকে নিয়ে হেঁটে চলেছে শেরহাম। হারিকেনের শিখা বাতাসের চোটে নিবুনিবু প্রায়। তটিনী ভয়ে, ব্যাথায়, কষ্টে শেরহামের সাথে লেপ্টে রইলো। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে লাগলো ব্যাথা।
কোচোয়ান শেরহামের আগেই কুটিরের সামনে গিয়ে কয়েকবার ডাক পাড়লো। একটা ফুটফুটে পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে বের হয়ে এল কুটির হতে। গায়ে সেলোয়ার-কামিজ মাথায় কালো হিজাব প্যাঁচানো। ফর্সাটে মুখ জ্বলজ্বল করছে রাতের অন্ধকারে। বেরিয়ে এসে তটিনীকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
‘ আপনার বেগমের বাবু হইবো সাহেব? ‘
শেরহাম মাথা নাড়লো। মেয়েটি চেঁচিয়ে ডাকলো,
‘ দাদীজান রোগী আইছে। আমার সাথে আসেন সাহেব। ‘
মেয়েটির ডাকে একজন বৃদ্ধা বেরিয়ে এল কুটির হতে। মাথার সাদা চুল গায়ে সাদা শাড়ি। বলল,
‘ ভেতরে নিয়া আসো তারে। ‘
শেরহাম তটিনীকে নিয়ে গেল। দরজা ছোট হওয়ায় মাথা নীচু করে প্রবেশ করলো কুটিরে। চেরাগ জ্বলছে সেথায়। বাতাসে তা নিবুনিবু প্রায়। ঘরের এককোণে হারিকেন রাখা আছে। তবে শিখা ছোট করে দেয়া। মেয়েটি আলো বাড়ালো। ঘরের রাখা মাটির কলস, মাটির হাঁড়িপাতিল, থালা বাসন, চটে বিছানো নকশীকাঁথা চোখে পড়লো। একপাশে শুকনো লাকড়ি-পাতা রাখা আছে, তারপাশের মাটির চুলোয় আগুন জ্বলছে। গরমপানির বুদবুদ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মেয়েটি শেরহামকে বলল,
‘ আঁতুড়ঘরে আসেন সাহেব ‘
শেরহাম সেই কক্ষে গেল। মেয়েটি চোখের পলকেই বিছানা পেতে দিল। বালিশ রেখে বলল,
‘ এখানে শুইয়ে দিন সাহেব। হিজাব খুলে দিন।আমি পানি লইয়া আসি। দাদীজান আইবো এখন।’
শেরহাম হাঁটু গেড়ে বসলো। তটিনী শুইয়ে দিতেই তটিনী তার গলা ছাড়লো না। রোধ হয়ে আসা কন্ঠে বলে,
‘ কোথায় যাচ্ছ? ‘
শেরহাম তাকে জোর করে শুইয়ে দিল। হিজাব খুলে অর্ধসিক্ত মুখ কপাল হতে ঘাম মুছে দিয়ে সারামুখে ঠোঁট চেপে চুম্বন করে হাতটা নিজের আঙুলের ভাঁজে নিয়ে চুমু খেয়ে বলল,
‘ যাচ্ছি না কোথাও। আছি। ‘
তটিনী ডুকরে উঠলো। খামচে ধরলো শেরহামের পাঞ্জাবি । শেরহাম ছাড়িয়ে নিল। দু পা বাড়িয়ে ফের তটিনীর দিকে তাকাতেই পাশের কক্ষ হতে বৃদ্ধা বলেন,
‘ বেরিয়ে আসেন। আমার দেখা লাগবো। বাইরে একটা মানুষ আপনারে ডাকতেছে। ‘
তটিনী শেরহামের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভেঙে কেঁদে চাদর খামচে ধরলো। চোখ গলে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। শেরহাম এগিয়ে এল তার দিকে। হাঁটু ভেঙে বসে দু’হাতে গাল আঁকড়ে চোখের জল মুছে দেয়। কপালে গভীর চুম্বন করে বলল,
‘ আমি ফিরে এলে সেদিন খুব করে কাঁদিস, তার আগে নয়। ‘
তটিনী তার হাতদুটো ধরে রেখে কেঁদে যায়। শেরহাম বেরিয়ে পড়ে। মুখোমুখি হয় বৃদ্ধার। তিনি সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। শেরহাম পাঞ্জাবির পকেট হতে পয়সা নিয়ে বাড়িয়ে দেয়। বলে,
‘ এখানে যা আছে সবটা রাখুন। মহল থেকে আপনাকে আরও দেয়া হবে। ‘
বৃদ্ধার সন্দেহ সঠিক হলো। এ তো শেরহাম সুলতান! এর মা একজন জাদুকর ছিল। সেও তো একজন জাদুকর। ষোল বছর বয়সে মহল ছেড়েছিল! আজ সে তার দুয়ারে? এত পরিবর্তন!
তটিনীর চিৎকার ভেসে আসছে।
মহিলার চোখমুখ দেখে শেরহাম বলে, আমি শেরহাম সুলতান। ভেতরে যে আছে সে আমার বেগম। তার চাইতে বড় কথা সে শেহজাদ সুলতানের বোন, সম্রাট সলিমুল্লাহর একমাত্র কন্যা সুলতানা শাহানার বড়মেয়ে তটিনী মাহমুদা। তাড়াতাড়ি যান। ও কষ্ট পাচ্ছে।
বৃদ্ধা পয়সা নেয় না। বলেন, ‘ কাজের আগে পয়সা নিইনা। পরে নিমু। ‘
শেরহাম বলে, ‘ ঠিক আছে। তাহলে পরে দেব। এখন যান।’
বৃদ্ধা ঘোমটা টেনে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন। তটিনীর কান্নার শব্দ জোরালো হয়। বৃষ্টি থামছে ধীরে ধীরে। নানাজান, কোচোয়ান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শেরহাম বেরোনোমাত্র নানাজান উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
‘ তাড়াতাড়ি বেরোচ্ছিস না কেন? মসজিদের মাইকে করে তোর ভাইয়ের সৈন্যরা ঘোষণা দিয়েছে ডাকাতরা নাকি এদিকে আসছে। তুই ওই ঘোড়ার গাড়িটা নিয়ে তাড়াতাড়ি পালা। তোর সাথে সাথে তোর বউ বাচ্চার উপর বিপদ আসবে। তোর হাতে কোনো অস্ত্র নেই, গায়ে লোহবর্ম নেই। তুই মহলে যাহ আগে। ‘
শেরহাম কপালের ঘাম মুছে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কখন ঘোষণা করেছে?’
‘ এইতো এখানে আসার পথে শুনলাম। যা, দেরী করিস না। আমি আমার গাড়ি সরিয়ে ফেলেছি যাতে ওদের চোখে না পড়ে। ‘
‘ ওরা এত তাড়াতাড়ি প্রবেশ করলো কি করে? সামাদরা কোথায়? ‘
‘ সেটা তো গেলে জানতে পারবি। তুই তোর ভাইয়ের সৈন্যদেরও জানিয়ে রাখবিনা এই বিষয়টা? যদি এমন হয় তোর সৈন্যদের ওরা কব্জা করে নিয়েছে। ‘
‘ না এটা হতে পারেনা। ‘
শেরহাম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কি করবে সে এখন? তনীকে রেখে কিভাবে যাবে? নিজেকে আজ এতটা অসহায় দেখে নিজেই স্তব্ধ শেরহাম সুলতান। একসময় যাদের সাথে পাপ কাজের অংশীদার হতো সে তাদের কথা ভেবে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে তার। হাতের মুষ্ঠি জোরালো হয়। কপাল বেয়ে দরদরিয়ে ঘাম ঝড়তে থাকে। আকাশে মেঘেদের ঘনঘটা। উর্ধ্বে তাকিয়ে সে বিমূঢ় হয়ে ভাবে, তার তওবা কি কবুল হয়নি?
______
ডাকাত সৈন্যদের দেখামাত্রই মানুষ প্রাণপণে ছুটতে থাকে। মসজিদের ভেতরে যারা নামাজরত অবস্থায় ছিল তাদের সকলকে বন্দি করে ডাকাত সৈন্যরা।
মসজিদের মৌলবিকে ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। গলায় তলোয়ার ঠেকায় গুলজার। পড়নে কালো রঙের পোশাক। গলায় সিলভার রঙের পুতির মালা, হাতের লাল রঙের মোটা সুতো,এককানে একটা দুল, লম্বা চুল মাথার উপর ঝুঁটি করা, হিংস্র, কুৎসিত চেহারা। বিকট গর্জন তুলে বলে,
‘ বল শেরহাম সুলতান কোনদিকে গিয়েছে? সত্যি বল নয়ত প্রাণ দে। ‘
মৌলবি সাহেব ভয়জড়ানো গলায় বলেন,
‘ খোদার কসম করে বলছি, আমি জানিনা শেরহাম সুলতান কোনদিকে গিয়েছে। ‘
দু’জন ডাকাত সৈন্য দুটো মহিলাকে টানতে টানতে নিয়ে এসে গুলজারের পায়ের কাছে ফেলে। বলে,
‘ কয়েকজন বলছিল এরা নাকি দেখেছে। কিন্তু এরা স্বীকার করতে চাইছেনা। ‘
গুলজার মহিলাদুটির দিকে এগিয়ে যায়। মৌলবি সাহেব বলে উঠেন, মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান। এটা পবিত্র জায়গা। এইখানে এইসব করবেন না।
মৌলবি সাহেবের পেট বরাবর লাথি বসিয়ে দূরে ছিটকে ফেলে দেয় গুলজার। দু’জন গিয়ে লাথি বসাতে থাকে একনাগাড়ে। গুলজার মহিলাদুটির হিজাব টেনে ধরে। চুলের মুঠির মতো ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,
‘ বল কোনদিকে গিয়েছে। নইলে এখানেই শেষ করব তোদের। ‘
মহিলাদুটি কাঁদতে থাকে। একজনের স্বামী এসে ছাড়িয়ে নিতে চায়। গুলজার তার কাঁধ ধরে ধাক্কা মারতেই লোকটা দেয়ালে বাড়ি খেয়ে পড়ে যায়। মহিলা কেঁদে উঠে বলে,
‘ বলছি আমি। ছেড়ে দিন আমাদের। ‘
‘ আগে বল। কোনদিকে গিয়েছে?’
‘ এখান থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত দাত্রীর কুটিরে গিয়েছে। উনার বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাই। ‘
গুলজার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মহিলা মাথা চেপে ধরে কাঁদতে থাকে। একজন সৈন্য এসে বলে,
‘ মহলের দিকে যায়নি শেরহাম সুলতান। সেইপথে দেখা যাচ্ছেনা তাকে। অন্য কোথাও গিয়েছে। ‘
গুলজার হো হো করে হাসে। দুহাত উপরে তুলে মসজিদ হতে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে, ‘ খোঁজ পেয়ে গেছি। শেরহাম সুলতান এবার কোথায় পালাবি তুই। বিশ্বাসঘাতক! তোর মৃত্যু আমার হাতে। ‘
ঘোড়ার পিঠে চড়ে উল্কার গতিতে সকলেই ছুটে চলে দাত্রীর কুটিরের দিকে। শেহজাদ আর সাফায়াত মসজিদে পৌঁছে দেখে আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে মৌলবি সহ অনেক মানুষ। সবার বক্তব্য শুনে সে আর এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে তেজী ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসে। ছুটে চলে ডাকাতদের পিছু পিছু। ভাইজান বড়ই বিপদে।
দূর হতে আগত একদল ঘোড়ার পায়ের ক্রুরধব্বনি কর্ণরন্ধ্রে প্রবেশ করামাত্রই শেরহাম বারান্দা থেকে নেমে পড়ে দ্রুত। নানাজান সরোষে বলে উঠেন
‘ বলেছি না ওরা এসে পড়েছে। যাহ তাড়াতাড়ি পালিয়ে যাহ। আমরা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকবো। ‘
শেরহাম বলল,
‘ কিন্তু তনী? ‘
‘ তনীর কিছু হবে না। ওদের ক্ষতি করবে না। আমি ব্যবস্থা করে নেব। ‘
‘ আমি নিশ্চিত হতে পারছিনা।’
‘ তোকে যেটা বলেছি সেটা কর। তুই থাকলে বেশি বিপদ হবে। এখানে ওরা আক্রমণ করলে কাকে বাঁচাবি তুই? তোর বউকে এখন নড়াচড়া করা যাবে না। ‘
শেরহাম তা শুনে পা বাড়ায়, দ্বিমত পোষণ করেনা, নানার কথায় যুক্তি আছে। তারা তনীর ক্ষতি করতে পারে। পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। যদি মসজিদের কারো কাছ থেকে খবর পায় তাহলে তো এখানে চলে আসবে। না তনীকে নিরাপদে রাখতে হবে। কিন্তু তনী কি আদৌ নিরাপদে আছে? ভাবনার দোলাচালে দ্রুত পা চালায় সে।
কিন্তু এগোতে পারেনা আর। যেতে ইচ্ছে করেনা এভাবে। কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে তাকায়। বলে,
‘ মনে হয় ওরা ডাকাত না, শেহজাদের সৈন্য হতে পারে । আর কিছুক্ষণ থাকি। ‘
নানাজান হাঁক ছেড়ে বলেন,
‘ মরতে চাস তুই? প্রাণের মায়া নেই? আমার কথা না শুনে আজ তোর এই দশা। ‘
শেরহাম কুটিরের দিকে তাকায়। তনীর কান্না বন্ধ হয়ে গেছে কেন? কোনো সাড়াশব্দ নেই।
ক্রমাগত উৎকন্ঠিত হয়ে পড়ে সে। যেতে ইচ্ছে করে না। মনের দৌর্মনস্যে আটকা পড়ে । নানাজান কোচোয়ানকেও পালাতে বলে। কোচোয়ান বের হয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটে চলে। শেরহামও ফের পালিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কোচোয়ান তাকে ডাকতে থাকে। আকাশে বিদ্যুৎ ঝলকানি দিয়ে উঠে। মিনি সেকেন্ডের জন্য আলোকিত হয়ে উঠে পুরো পৃথিবী। কোথাও বড়সড় বাঁজ পড়ার শব্দ হয়। শেরহাম বৃষ্টিতে ভিজে যেতে থাকে। তবে সে গমন বেশি দীর্ঘ হয় না। বেশিদূর এগোতে পারেনা সে। থমকে যেতে হয়। বিদীর্ণ হওয়া আকাশ আর দমকা হাওয়ার মাঝে কর্ণরন্ধ্রে এসে পৌঁছায় সুচিক্কণ একটি কন্ঠস্বরের দুনিয়াতে আসার আগমন বার্তা। শেরহাম পা থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় নানাজানের দিকে। জ্বলজ্বলে দেখা যায় তার ক্ষুরধার চোখদুটো। নানাজান চোখ বুঁজে নিয়েছেন। দু-হাত তুলে শুকরিয়া আদায় করছেন। বাচ্চা মেয়েটা দৌড়ে বেরিয়ে আসে। খুশিমনে বলে,
‘ ছেলেবাবু আইছে সাহেব। লাল টুকটুক ছানা।’
শেরহামের পা দুটো নড়েনা। কন্ঠনালী বেয়ে একটা বড়সড় ঢোক নেমে যায় নীচে। এত দূর্দশার মধ্যেও ঠোঁটের কিনারায় হাসির রেখা ঢেউ খেলে যায়। নানাজান এই প্রথম তার প্রসন্ন চেহারা দেখেন এত কাছ থেকে। শেরহাম হাঁটুতে হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে পড়ে। আকাশের দিকে মুখ করে লম্বাচওড়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বুঁজতেই নানাজান এসে বুকে জড়িয়ে ধরে। শেরহাম চুপ হয়ে থাকে। তার জীবনে তনীর আগমন তার মুক্তি যেদিন বোধগম্য হয়েছে সেইদিনটা আর আজকের দিনটা তার আনন্দের। এত এত না পাওয়ার ভীড়ে তনী আর তনীর বাচ্চা তার জীবনের সর্বোচ্চ পাওয়া। খোদাতায়ালার দেয়া সর্বোত্তম উপহার। সেদিন সবাইকে মুক্তি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় যখন সে শুনতে পেল
তার অংশ তনীর গর্ভে বেড়ে উঠছে সেই মুহূর্ত আর আজকের মুহূর্তের মতো আনন্দ আর খুশি কোনোদিন আসেনি তার জীবনে। তার পঁচন ধরা হৃদয়ে যে সুবাস ছড়িয়েছে, আলো চিনতে শিখিয়েছে, ভবিষ্যৎ অন্ধকার জেনেও ভালোবেসেছে, তাকে এমন একটি মুহূর্ত উপহার দিয়েছে সেই মেয়েটিকে সে ভীষণরকম ভালোবাসে।
কোচোয়ান ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় শেরহাম না আসায়। নিজের জান বাঁচানো ফরজ।
নানাজান তাকে বাচ্চার কাছে যাওয়ার জন্য বলা শেষ করে উঠার আগেই ডাকাত সৈন্যদের ঘোড়ার গুলি ছুটে আসে। শেরহাম ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। নানাজানকে বলে,
‘ কুটিরে যাও। দরজা বন্ধ করো। যাও। ‘
‘ কিন্তু তুই। তোকে বারবার বলেছি পালাতে। কথা শুনিসনি আমার। ‘
শেরহাম একদৃষ্টে ডাকাতদের ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ যা বলছি তাই করো। দরজা বন্ধ করো ভেতর থেকে। আমি বলার আগ পর্যন্ত কেউ বেরোবে না। ‘
নানাজান উনার ভৃত্যদুজনকে নিয়ে কুটিরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয় ভেতর থেকে। শেরহামের কানে বাজতে থাকা তার বাচ্চার কান্না। ডাকাত সৈন্যদের ঘোড়াগুলি, ঘোড়ার গাড়িগুলি বিদ্যুৎবেগে ছুটে আসে। ঘিরে ফেলে তাকে। তলোয়ার, ধনুক তার করে হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সকলে। সবার পেছন থেকে আবির্ভাব ঘটে গুলজার ডাকাত সর্দারের। নরপিশাচের মতো ময়লা দাঁত দেখিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠে সে। কুটিরে থাকা বৃদ্ধাও উনার নাতনি কেঁপে উঠেন ভয়ে। নানাজান হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে ডাকে, আল্লাহ রহম করো।
বৃদ্ধা বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বসে থাকে ভীত হয়ে।
গুলজার লাফ দিয়ে নামে ঘোড়ার পিঠ হতে। শেরহাম হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে। গুলজার তার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে হো হো করে হেসে বলে,
‘ এই কুটিরের চারপাশে কেরোসিন দে। ‘
ডাকাতরা সকলেই কেরোসিন ছুঁড়তে থাকে কুটিরে। শেরহাম সেদিকে চেয়ে আচমকা গুলজারের নাক বরাবর ঘুষি বসায়। এলোপাতাড়ি ঘুষি মারতে মারতে ভেজা মাটিতে শায়িত করে গুলজারকে। বুকের উপর লাথি বসাতে থাকে। পেছন থেকে বন্দুক দিয়ে একজন আঘাত করে বসে থাকে। সাথে সাথে মাথা চেপে হাঁটু ফেলে বসে পড়ে শেরহাম। তার হাতদুটো পেছনে নিয়ে গিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। গুলজার ঘুষি বসায় ইচ্ছেমতো। তারপর মুখটা হাত দিয়ে ধরে তার দিকে তুলে বলে,
‘ সুলতান বংশের একটাকেও বাঁচিয়ে রাখবো না। সবকটাকে একে একে মারবে এবার। তোকে রসিয়ে কষিয়ে মারার উৎসব শুরু হয়ে গেছে পাহাড়ে। এবার তুই দেখবি গুলজার আরও কত কি করতে পারে। ‘
শেরহামের মাথা ঝুঁকে পড়ে সামনে। নাক, কপাল ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। চোখের আলো নিভে আসে। যেন জগতের সব আলো কমে আসছে। গুলজারের এত হৈহৈল্লা, হাসির আওয়াজ কোনোকিছুই তার কানে প্রবেশ করেনা। শুধুই প্রবেশ করে একটি বাচ্চার কান্না। ডান চোখের কোণা হতে একফোঁটা তপ্ত জল গড়িয়ে পড়ে ভেজা মাটিতে। তাকে ধরে বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় গুলজার আর সাতজন সৈন্য । আর বাকিরা কুটিরে লাগিয়ে দেয়। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠে কুটিরে। ভেতরে থাকা সকলের আর্তনাদে তপ্ত হয়ে উঠে পরিবেশ। দরজা পুড়তে পুড়তে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বৃদ্ধা হায়হায় বলে আহাজারি শুরু করে।
হুমায়রা তটিনীর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে থাকে। তার কান্না থামায়। আগুন দেখে ওড়না দিয়ে ভালো করে ঢেকে নেয় বাচ্চাটিকে। কুটিরের পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় হারিকেন নিয়ে। নানাজান তটিনীর গায়ের উপর আগুনের আঁচ কমানোর জন্য বৃদ্ধার সমস্ত কাপড়চোপড় দিয়ে ঢেকে দেয় তটিনীকে। আগুনের আঁচ বাড়তে থাকে। কলসের পানি ফুরিয়ে আসে। নানাজানের ভৃত্য দুজনকে ধরে নেয় ডাকাতেরা। পরপর গুলি ছুঁড়ে। চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তারা। নানাজান বের হয়ে আসে। তারা গুলি ছুঁড়ে। নানাজানও মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। নানাজানের পিছুপিছু বৃদ্ধা মহিলাটিকে ধরে নিয়ে আসে তারা। উনি পালাতে চান। গুলি খেয়ে চিৎ হয়ে পড়ে যান।
নানাজান চেয়ে দেখে তারা এগিয়ে গিয়েছে তটিনীর কক্ষে। তিনি বুকে হাত চেপে বলে,
‘ তোদের উপর আল্লাহর গজব পড়ুক। ধ্বংস হোক তোদের। ‘
হন্য হয়ে বাচ্চাটাকে খুঁজতে থাকে তারা। পায় না। তটিনীর দিকে এগোনোর কথা যখন ভাবে তখন প্রচন্ড গোলাগুলি আর শেহজাদ সুলতান আর তার সৈন্যদের দেখে সকলেই বেরিয়ে আসে। ঘোড়ার পিঠের উপর চড়ে বসে। কুটিরের পেছনের পথ দিয়ে জঙ্গলের পথ ধরে পালিয়ে যায় অতিদ্রুত। শেহজাদের তীর গিয়ে পড়ে তাদের কয়জনের পিঠে। তারা থামেনা। পালিয়ে যায়।
শেহজাদ আর সাফায়াত এমন ধ্বংসলীলা দেখে হতভম্ব, হতচকিত।
ঘোড়া থেকে নেমে নানাজানের কাছে ছুটে যায় শেহজাদ। নানাজান বুকে হাত চেপে ধরে আছেন। সাফায়াত পুড়তে থাকা কুটিরে ঢুকে তটিনীকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। কোলে তুলে বের করে আনে। তার চুপসে যাওয়া শরীর দেখে মুখ ধরে ডেকে বলে,
‘ বোন। এ কি হলো? চোখ খোলো। হায় আল্লাহ! ভাইজান তনীর বাচ্চা কোথায়? ‘
শেহজাদ নানাজানের দিকে তাকিয়ে সে প্রশ্ন করে।
নানাজান রক্ত নির্গত হওয়া বুকে হাত চেপে চোখ মেলেন। শেহজাদ বলে,
‘ কি হলো এসব নানাজান? আমি কাউকে বাঁচাতে পারলাম না। ‘
‘ আমার কাজ শেষ তাই সময়ও ফুরিয়ে এসেছে ভাই। ওদের একটা পুত্রসন্তান হয়েছে। কিন্তু ও ওর বাচ্চাটার মুখটাও দেখতে পেল না, ছুঁতেও পারলো না। ওকে মেরে ফেলবে সবাই মিলে। ‘
নানাজানের চোখ বেয়ে জল গড়াতে থাকে। শেহজাদ জিজ্ঞেস করে
‘ কোথায় বাচ্চা? বাচ্চা নেই নানাজান। ‘
‘ আছে আছে। ‘
অস্ফুটস্বরে কালেমা উচ্চারণ করেন নানাজান। ধীরেধীরে ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। শেহজাদ বাকহীন চেয়ে রয়।
কাশীম দাত্রীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। গুলি উনার দেহে অতদূর প্রবেশ করতে পারেনি। নানাজানের ভৃত্য দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। শেহজাদ আর সাফায়াত পরাজিত সৈনিকের মতো বসে থাকে লাশের মাঝে। হূমায়রা বেরিয়ে আসে আড়াল হতে। সাফায়াতের তটিনীকে কোলে ধরে রেখেছে। হূমায়রা তাই শেহজাদের দিকে বাবুকে বাড়িয়ে দেয়। শেহজাদ কম্পিত হস্তে হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নেয়। ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে দিতে চোখ বুঁজে ফেলে, সাফায়াত হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে জোরে, কেঁপে উঠে। শেহজাদের শরীর দুলে উঠে। সৈন্যরা সকলেই ভেজা মাটিতে মশাল গেঁড়ে নতজানু হয়ে বসে পড়ে। সবার লাশ আর তটিনীকে নিয়ে মহলে ফিরে আসে সবাই। মহলেও জাদুকরেরা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে।
চলমান…