প্রিয় বেগম ২ পর্ব-২২

0
1250

#প্রিয়_বেগম
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #পর্ব_২২
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

‘ কুমু আপাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে আম্মা? ‘

শাহানা কাঠকাঠ গলায় তটিনীকে উত্তর দিলেন,

‘ বাচ্চাটা রাখা যাবে ন। এই মহলে এমন ঘটনা ঘটেছে কভু? কতবড় নষ্টা সে!’

‘ তাই বলে বাচ্চাটা কেন এর শাস্তি পাবে? ‘

শাহানা অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকালেন। তটিনী ভড়কে গেল। আমতাআমতা করে বলল,

‘ আমার যেটা ভালো মনে হলো সেটাই বললাম। ‘

শাহানা সরু চোখে চাইলেন এবার। গাল মুছে বললেন,

‘ এই দুইদিন কোথায় ছিলে তোমরা? তাড়াতাড়ি ফিরে এলে তো আজ শেহজাদ আর সাফায়াতের কোনো বিপদ হতো না। কোথায় ছিলে? ‘

তটিনী আঁতকে উঠে মায়ের ধমকে। ছোট স্বরে বলে,

‘ জংলাহাঁটার ডাকাত আস্তানা তো অনেকদূর আম্মা। তাই দেরী হয়েছে ফিরতে।’

‘ থেকেছ কোথায়? খেয়েছ কোথায়? ‘

তটিনী আঁড়চোখে খোদেজার দিকে তাকায় বিপন্ন চোখে। হামিদা এসে কিছু বলার আগেই শাহানা হাত তুলে বারণ করে। বলে,

‘ উত্তর দাও তনী। ‘

তটিনী আর্তস্বরে বলে,

‘ আম্মা আমি কি ছোট আছি যে এভাবে জেরা করছো? ‘

‘ তুমি বিপদে পড়লে, অশান্তিতে থাকলে কার আগে বেশি পুড়ায় জানো? কে অশান্তিতে ভুগে জানো? কোথায় থেকেছ উত্তর দাও। ‘

‘ ওর নানাজানের গুহায় ছিলাম। ‘

‘ গুহায়? ‘

‘ জ্বি। ‘

খোদেজা বলে উঠে,

‘ শাহানা এখন ওকে ছাড়ো। ছেলেদুটো কি অবস্থায় কে আছে আল্লাহ ভালো জানে। তাদের জন্য দোয়া করো। ‘

শাহানা তটিনীর দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,

‘ শেরহাম গিয়েছে তুমি দেখেছ? ‘

‘ দেখিনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস আছে ও গিয়েছে। ‘

‘ ওর জন্যই তো এত বিপদ। ও যাবে না কে যাবে? ‘

‘ না গেলেও তোমরা কি করতে পারতে আম্মা? গিয়েছে এটার জন্য শুকরিয়া আদায় করা উচিত না? ‘

‘ তুমি তর্ক কখন শিখেছ ? কার কাছ থেকে শিখেছ? ‘

তটিনী মাথা নামিয়ে নিল। হামিদা ওকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

‘ তোমার মায়ের মাথা গরম এখন। যাও ভাইজানদের জন্য দোয়া করো। ‘

________________

সায়রা রসাইঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় চুলোর পাশে চাবি রাখা। খোদেজা ভুলে রেখে গেছে। কুমদিনী সকলের মাথা নষ্ট করে দিয়েছে অপরদিকে শেহজাদ আর সাফায়াতের চিন্তা কেউ হুঁশে নেই। সে চাবিটা তুলে চুপিসারে পা বাড়ালো অপরূপার কক্ষের দিকে। অপরূপার চেঁচামেচি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সায়রা দরজা খোলার সময় কোথাহতে তটিনী চলে এল। বলল,

‘ একি! কি করছো সায়রা? ‘

সায়রা চমকে যায়। দুরুদুরু বুকে ফুঁ দিয়ে বলে,

‘ রূপাকে ছেড়ে দিচ্ছি। সে ভাইজান আর উনাকে উদ্ধার করার মতো সাহস রাখে। ‘

‘ কিন্তু ও সন্তানসম্ভবা। এই মুহূর্তে দৌড়ঝাঁপ করতে পারবে না। বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া তোমাদের বড় ভাইজান গিয়েছে উনাদের উদ্ধার করতে। আর সেটি এমন এক ভয়ংকর জায়গা যেখানে তুমি যাওয়া তো দূর বর্ণনা শুনলেই কেঁপে উঠবে। রূপাকে আমরা ওখানে যেতে দিতে পারিনা। ‘

‘ বড় ভাইজান তো শেহজাদ ভাইজান মরে যাক সেটা চায়। উনি কি সহিসালামতে উদ্ধার করবেন?’

‘ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভাইজানদের ও উদ্ধার করে আনবে। ‘

সায়রা কান্না চেপে বলে,

‘ কামীল ভাইজানের জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। উনি ভাইজানের অতি নিকটের মানুষ ছিলেন। সবসময় ভাইজানের বিপদে আপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ‘

‘ আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুক। উনি সবসময় সত্যের পথে থেকেছেন। তুমি চাবিটা দ্রুত রেখে এসো। মামীমা না পেলে চেঁচামেচি শুরু করবেন। ‘

সায়রা ফের চাবিটা রেখে আসে রসাইঘরে। অপেক্ষায় থাকে কবে ফিরবে ভাই স্বামী।

তটিনীর ভয়ে থাকে এই ভেবে তার বিশ্বাস সত্যি হবে তো? নিজের মিত্র-বাহিনীর বিরুদ্ধে গিয়ে ভাইদের সে উদ্ধার করবে তো? নাহলে যে সব শেষ হয়ে যাবে। তার সব আশা নিরাশায় পরিণত হবে।

_______

গহীর অভয়ারণ্যর পথ পাড়ি দিয়ে মরা নদীর পাড়ে গিয়ে শেরহামের ঘোড়া থামলো। তার ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি টের পেয়ে নদীর ধারে পাহাড়ারত শতাধিক ডাকাত সৈন্যগুলো সতর্ক হয়ে উঠলো। হুশিয়ারি দিল সাবধান হতে নইলে আক্রমণ করা হবে।
কানে শুনতে পায়নি এমন ভঙ্গিতে হেঁটে তাদের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালো শেরহাম। ততক্ষণে বুকে এসে গেঁথেছে দশ বারোটার মতো তীরের ফলা।
শরীর লোহাবর্মে বাঁধা ছিল বিধায় ঝড়ে পড়ে গেল সেগুলো। হিংস্র শ্বাপদের ন্যায় চিৎকার করে উঠলো শেরহাম। আক্রমণ করতে আসা একজনের গলা চেপে ধরে হেঁটে তার পেছনের জনের গায়ের উপর ছুঁড়তেই বাকিরা তলোয়ার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মুহূর্তেই অবিস্ময়কর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ঘটে গেল। রক্তাক্ত হলো মরা নদীর পাড়। নিজেও আহত হলো, সবাইকে ধরাশায়ী করলো সে। ডাকাত সর্দারের সতর্কবার্তা আসার পর বাকিরা যুদ্ধ থামিয়ে দিয়ে শেরহামকে যেতে দিল।

শেরহাম আস্তানায় চলে গেল। দু’দিন আগের ঘটনার কারণে সবাই তার উপর খেপে আছে কিন্তু সর্দারের হুকুম ছাড়া আক্রমণ করতে পারছে না। শেরহাম লম্বা লম্বা পা ফেলে বাসভবনে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল শেহজাদের সৈন্যরা বন্দি। সবাইকে জঘন্যভাবে মারা হয়েছে। বিশাল কামরাটির চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়া শেষে দক্ষিণ পাশেই শেহজাদ আর সাফায়াতকে দেখতে পেল সে। পেছনে হাত বন্দি করে রাখা। মাথাটা সামনে ঝুঁকে পড়া। অচেতন।
মুখের অবয়ব বুঝা যাচ্ছে না রক্ত মেখে থাকায়। গায়ের শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি রক্তলাল। শেরহাম চোখ সরিয়ে আসন গ্রহণ করে পায়ের উপর পা তুলে বসলো গুলজারের মুখোমুখি। আদেশ দিল,

‘ এদের পাঠিয়ে দে শীঘ্রই। এদের হাতে কিছু নেই। ‘

কালো পোশাক, ভয়ংকর চেহারার ডাকাত সর্দার কুটিল হেসে বলল,

‘ ভাইদের জন্য জ্বলে নাকি? ‘

শেরহাম সাথে সাথেই জ্বলে উঠে অগ্নিশিখার মতো। প্রকান্ড কামরাটিও কেঁপে উঠে তার গর্জনে।

‘ ভাই,বাবা,বন্ধু স্বজন প্রীতি এসবে আমি পরোয়া করিনা। আমার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। আমার সাথে সম্মুখযুদ্ধ কর, পেছনে বসে তামাশা বন্ধ কর। আর এই দুর্বল মনুষ্য জাতির সাথে লড়ে না মজা পাবি না কোনো লাভ। তোদের মতো সামান্য পিঁপড়ে মেরে হাত নোংরা করিনা আমি। নইলে এদের মারতে আমার দুমিনিট লাগবে। ‘

‘ এদের ছাড়বো একটা শর্তে। যদি শর্তে রাজী থাকিস তাহলে ছাড়বো। বল রাজী? ‘

‘ কি শর্ত? শেহজাদ সুলতানের বউ? ‘

‘ ওইটা চন্দ্রলাল চায়। আমার চাই অধিকার, ক্ষমতা। রূপনগরের একছত্র অধিকার যে ব্যাপারে পূর্বেই আমাদের চুক্তি হয়েছিল। তুই ক্ষমতা পেয়ে আমাদের সাথে ছলনা করেছিস। ‘

‘ তাই হবে। আগে এদের ছাড়। এদের কিছু হলে নগরের মানুষ ক্ষেপে যাবে। তখন আমার রাজত্ব নিয়ে টানাটানি পড়বে। এমনিতেই তোদের কারণে আমার বদনাম হয়েছে অনেক। আর বলব না। এদের ছাড় নয়ত। ‘

‘ নয়ত কি করবি? ‘

বলেই গুলজারের বিশালদেহী দেহরক্ষী ছুটে এল তার দিকে অস্ত্র নিয়ে। শেরহাম হাতের মুঠোয় থাকা দাহ্য বোমা তার দিকে ছুঁড়ে মারতেই সে ছিটকে পড়লো। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো সেখানে। আগুন নেভানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো অনেকে। বাকিরা ছুটে এল আক্রমণ করতে। গুলজার আদেশ দিল সবাইকে পিছিয়ে যেতে, যুদ্ধে না যেতে।
শেরহাম থামার নয়। মুঠোয় বালি কুড়িয়ে এইহাত ওইহাতে নিয়ে চোখ বুঁজে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর হাতের মুঠোর বালি ছুঁড়ে মারলো সবার দিকে। সাথে সাথেই চোখে অন্ধকার দেখলো সকলে। চোখে হাত চেপে ধড়ফড় করতে করতে শায়িত হলো মেঝেতে। শেরহাম শান্ত গলায় আরেকটি আদেশ ছুঁড়লো শুধু।

‘ এদের রূপনগর পাঠানোর ব্যবস্থা কর। লাশটাও। যদি কেউ তামাশা করার সুযোগ খুঁজিস সবকটাকে মেরে লাশ বানাবো। আমি মৃত্যুকে ভয় পাইনা। যাহ। ‘

কপালের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্ত মুছে বিকট শব্দ আবারও গর্জে উঠলো সে।

‘ যাহহ। ‘

গুলজারের নীরব সম্মতিতে সকলেই মুক্ত করলো শেহজাদ আর তার সৈন্যদের। শেরহাম সাফায়াত আর শেহজাদকে চোখা দৃষ্টিতে চেয়ে পায়ের উপর পা তুলে গা এলিয়ে ঠোঁটে বিড়ি গুঁজলো। গুলজার তাদের সকলকে রূপনগরের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিল। শেরহাম নিজেও শর্তসাপেক্ষে তাদের শর্ত মেনে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে রওনা দিল রূপনগরের দিকে।

___________

সন্ধ্যানাগাদ মহলের সিংহদ্বার পেরিয়ে চারজনের কাঁধে একটি মরদেহবাহী খাটিয়া প্রবেশ করলো। তার পেছন পেছন একে একে পাঁচ ছয়টি কাঠের তক্তাপোশে আহত ক্ষতবিক্ষত দেহগুলো। মহলের সকলেই ছুটে এল। অপরূপাকে ছাড়া হয়েছে শেহজাদ আর তার দলবলকে রূপনগরের নিয়ে আসা হয়েছে শুনে। সে ছুটে এসে সবার মাঝে শেহজাদকে খুঁজলো।
খুঁজে পেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। হাউমাউ করে ততক্ষণে কান্না জুড়ে দিয়েছে সকলে। অপরূপা ধপ করে বসে পড়লো মাটিতে। অনুপমা এসে ধরতেই ঝাপটে ধরে কেঁদে উঠলো সশব্দে। সায়রা ভাই, স্বামী দুইজনকে দেখার পরপরেই জ্ঞান হারিয়েছে। শেহজাদের বাকি সৈন্যরা বিলম্ব না করে সবাইকে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করলো। কামীলের লাশ দাপনের বন্দোবস্ত করা শুরু করলো। তটিনী কল্পনাও করেনি ভাইজানদের এই অবস্থা হবে। সে নিজেও স্তব্ধ, বাকহারা। কক্ষে গিয়ে সেও কান্নায় ভেঙে পড়লো। কোনদিকে যাবে সে?

মহলের কেউ কাউকে সামলানোর মতো অবস্থায় নেই। শাহজাহান সাহেব আর শেরতাজ সাহেব হাসপাতালে চলে গিয়েছেন। গভীর রাত করে ফিরে এসে জানালেন তাদের জ্ঞান কখন ফিরবে তা ডাক্তাররা বলতে পারছেন না। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় রক্ত দিতে হয়েছে। সুস্থ হয়ে হাঁটাচলা করতে কয়েকমাস সময় লাগবে।
অপরূপা বলল, ‘ আমাকে হাসপাতালে যেতে দিন। এভাবে আটকে রাখবেন না। আমার শান্তি লাগছে না। ‘

শাহজাহান সাহেব বাঁধা হয়ে বলেন, ‘ নাহ। ওদের সেবায় অনেক সেবক নিয়োজিত। কাল সকালে নিয়ে যাব সবাইকে। সবাই কামীলকে বিদায় দাও। আফসোস শেহজাদ আর সাফায়াত তাদের অতি বিশ্বস্ত বন্ধুকে শেষবারের মতো দেখতে পেল না। আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিক। ‘

খুব কাছের মানুষকে শেষ বিদায় দেয়ার সময় যখন স্বজনের কান্নায় আকাশও ভারী হয়ে উঠে ঠিক তেমন কামীলের শেষ বিদায়টাও হয়েছে মহল প্রাঙ্গনে দাঁড়ানো রক্ত সম্পর্ক বহির্ভূত আত্মার সম্পর্কের বাঁধনে আটকা পড়া মানুষগুলো গুমোট কান্নায়। জানাজার নামাজ পড়তে আসা মানুষ দলে দলে জমায়েত হয়েছে মহল অঙ্গনে। ঘোড়াশালে ঘোড়া রেখে এসে তাদের ফাঁকফোকর গলে মহল আঙিনায় উপস্থিত হলো শেরহাম। কাঁধে খাটিয়া তোলা শেরতাজ সাহেবের চোখদুটো রক্তবর্ণ হয়ে উঠলো তাকে দেখে।
কালেমা উচ্চারণ করে খাটিয়া নিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে হেঁটে গেল সকলে।

শেরহাম প্রাঙ্গনে চেয়ারের উপর বসে রইলো চুপচাপ। জানাজা শেষ করে কবরে মাটি দেয়া শেষে শেরতাজ সাহেব মহলে ফিরে বন্দুক নিয়ে ছুটে এলেন। উনাকে বন্দুক নিয়ে তেড়ে যেতে দেখে সকলেই পিছু দাওয়া করে ছুটে এল। উনি শেরহামের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে বলল,

‘ আজ তুমি মরবে নয়ত আমি। তোমার জন্য আজ কামীলের মৃত্যু হয়েছে। আমার সন্তানেরা মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আমি আমার সেই ঔরশকে ঘৃণা করি যেখান থেকে তোমার জন্ম হয়েছে। ‘

তটিনী হন্তদন্ত পায়ে ছুটে এসে বন্দুক সরিয়ে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো বলল

‘ না না। কি করছো মামু? এমনটা করো না। ‘

শেরহাম তীর্যক চোখে চেয়ে রয়েছে। শেরতাজ সাহেবের চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ে। বহুদিনের জমানো ব্যাথা গলগল করে জল হয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে। তিনি চেঁচিয়ে উঠে নিজের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলেন,

‘ আমি তোমার মতো কুলাঙ্গার সন্তান জন্ম দিয়েছি তাই আমার শাস্তি পাওয়া উচিত। তুমি, তোমার মা একটা মুহূর্তও শান্তি দাওনি আমাকে। তোমার মায়ের চাইতেও করুণ মৃত্যু হবে তোমার। ‘

তটিনী বন্দুক কেড়ে নিতে যেতেই উনি পিছু হেঁটে বলে,

‘ এগোবে না। আজকে নিজেকে শেষ করে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি নেব আমি। আর পারছিনা আমি। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। ‘

সিভান, সায়রা, সোহিনীসহ সকলেই কাঁদতে থাকে। হামিদা চেঁচিয়ে বলে,

‘ কি করছেন? আপনি মরে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে না। মাথা ঠান্ডা রাখুন। ‘

একছুটে এসে অপরূপা বন্দুক কেড়ে নিতেই শেরতাজ সাহেব মুখ থুবড়ে পড়ে শেরহামের পায়ের সামনে। তটিনী গিয়ে ধরে। উনি গর্জে ওঠে বলেন, তোমার পায়ে পড়লে তুমি এসব থামাবে? আজ শেহজাদ আর সাফায়াতের প্রাণ চলে যেতে পারতো। কামীলের মতো ওদেরকেও হারাতাম আমরা। ওদের হারালে কি নিয়ে বাঁচবো আমরা? তুমি কি চাইছো? ‘

শেরহাম কেদারায় হাতলে হাত ঠেকিয়ে মুখে হাত ঠেকিয়ে ঊর্ধ্বে চেয়ে থাকে। অপরূপা শেরতাজ সাহেবকে ধরে তোলে। নিয়ে যায় সদরকক্ষে। উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে সোহিনী। শাহানা ডাক দেয়,

‘ তনী ভেতরে এসো। দরজা বন্ধ করছি। ‘

তটিনী ফোঁপাতে ফোঁপাতে শেরহামের দিকে তাকায়। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে। শাহানা ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় তার মুখের উপর। তটিনী সশব্দে কেঁদে উঠে। শেরহামের নিকট গিয়ে তার কাঁধের পোশাক টেনে ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,

‘ এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় কেন আমাকে জড়ালে? কেন? আমি দুই পক্ষের কারো হার সইতে পারব না। কেন আমাকে জড়িয়েছ? উত্তর দাও। ‘

শেরহাম তার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকায়। তার রক্তজবার ন্যায় অক্ষিপট জ্বলজ্বল করে উঠে। শ্
অর্ধাঙ্গিনী তাই তার ভেতরকার শূন্যতা অনুভব করতে পেরে তটিনী ঝাপটে জড়িয়ে ধরে আরও জোরে কেঁদে উঠে বলে,

‘ আমি কোনদিকে যাব আল্লাহ?’

চলমান…
রিচেক করিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে