#প্রিয়_বেগম
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #পর্ব_৯
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা
ফজরের আজানের পরপর মসজিদে মুসল্লীদের নামাজের জন্য আহৃবান করছেন ইমাম সাহেব। অপরূপা ওযু করে সবেমাত্র কক্ষে প্রবেশ করলো। তার নামাজ কালাম, আর কোরআন পাঠ শেষ হতেই শেহজাদ মসজিদ থেকে ফিরে এল। ফের শুয়ে পড়লো বিছানায়। চোখ বুঁজে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকলো। অপরূপা চুল হতে তোয়ালে ছাড়িয়ে চুল ঝেড়ে জানালায় তোয়ালে শুকোতে দিয়ে শেহজাদের কাছে ফিরে এল। শেহজাদের পাশে গিয়ে বসে দোয়া-দরুদ পড়ে ফুঁ দিল কানে, চোখে।
শীর্ণ মুখখানা দেখে তার বড্ড খারাপ লাগলো। কত রক্তক্ষরণ হয়েছে মানুষটার। সে শেহজাদের চুলে হাত বুলাতেই খেয়াল করলো চুলগুলো আধভেজা। সে তার মাথায় জড়ানো ওড়না দিয়ে আলতো করে চুলগুলো মুছে দিল। খেয়াল করলো শেহজাদের শরীর উত্তপ্ত। মুখের একপাশে হাত রেখে নিজের কোমল ঠোঁটদুটোর ছাপ বসিয়ে দিল দু ভুরু মাঝখানে, নাকে, চোখের পাতায়, ঠোঁটের ভাঁজে ভাঁজে। উষ্ণতা শুঁষে নিয়ে একহাতে জড়িয়ে শেহজাদের মাথার কাছে মুখ ফেলে সেভাবে ঘুমিয়ে পড়লো।
****
তটিনীকে ফিরতে না দেখে কেদারা ছেড়ে দাঁড়ালো শেরহাম। কক্ষ থেকে বেরিয়ে গটগট পায়ে হেঁটে গোসলখানায় যেতেই দেখলো তটিনী ভেজা চুল মেলে জলঘাটের উপরে বসে আছে। গায়ের ওড়না গোসলখানার লোহা সংলগ্ন তাকে রাখা।
শেরহামের পায়ের আওয়াজ টের পেয়ে ঘাড় ফিরাতেই তার লাল টকটকে হয়ে আসা চোখদুটো দেখে খানিকটা অনুশোচনা হলো শেরহামের। তবে তা বেশিক্ষণ রইলো না। একহাতে কখনো তালি বাজে না।
হনহনিয়ে তটিনীর সামনে গিয়ে ওড়না তুলে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে দিল সে। তারপর দু হাঁটুর নীচে হাত গলিয়ে তটিনীকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো কক্ষের উদ্দেশ্য। লালচে হয়ে আসা নাকের অগ্রভাগ কাঁপছে তটিনীর। পাতলা ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কেঁপে চলেছে ভয়ানক রোষানলে।
শেরহাম কক্ষে নিয়ে গিয়ে তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তোয়ালে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ ধর, চুল মুছে নে। ‘
তটিনীর নড়চড় নেই। তীব্র রাগে সে দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েছে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। এই লোকের চরম আমর্ষতাকে সে প্রশয় দিয়েছিল গতরাতে। এজন্য নিজেকে কু**পিয়ে খন্ডবিখন্ড করতে ইচ্ছে করছে।
শেরহাম নিরুত্তাপ দৃষ্টিতে চেয়ে বন্দুক তলোয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। একবার চোখা দৃষ্টিতে তটিনীর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘ এত নাটক। নিজেই কাছে এসছে। আর এখন ভং ধরেছে যেন আমি জোরাজোরি করেছি। মজা নিতে প্রস্তুত তারপর হুশ ফিরলে ঢঙের শেষ নেই। ফা*লতু মেয়েমানুষ। এদের পিষে মারা উচিত। নিজেকেও শত ধিক্কার। এরপূর্বে কত আগুনসুন্দরী তার হাতেপাশে ছিল তার উতকৃষ্ট উদাহরণ অপরূপা। কিন্তু এতটা উন্মাদনা ভেতরে কাজ করেনি কখনো। তটিনীর বেলায় এটা কি লালসা নাকি তার ভ্রম কাজ করে? মহাবিরক্ত সে নিজের উপর। তটিনীকে নিকাহ করার পেছনে উদ্দেশ্য অন্য ছিল অথচ নিজের খেলায় সে নিজেই হারছে।
দাঁতে দাঁত পিষে তাকাতেই দেখলো তটিনী শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে সে স্বাভাবিক অথচ সে ভেতর ভেতরে মরে যাচ্ছে অনুশোচনায়। এসব ভুলে কি করে সামনে এগোবে সে? নিজেকে পুতঃপবিত্র রেখে এই সম্পর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করাটাই ছিল তার উদ্দেশ্য। অথচ এখন আগাগোড়াই অপবিত্র সে। এমন অস্বাভাবিক একটা সম্পর্ক লালন করেও তারা একে অপরের অনেকটা নিকটে এসেছিল। আর দশটা দম্পতির মতো মধুর রাত কেটেছিল, হয়ত তার চাইতেও বেশি। নিজের জৈবিক চাহিদার তাড়নায় জীবনের প্রথম পুরুষস্পর্শে সে নেতিয়ে পড়েছিল, তখন একটুও অনুতাপ হয়নি, ঘৃণা লাগেনি, অদূর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা মাথায় আসেনি। মাথায় আসেনি এই জা**নোয়ার লোকের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করাটাই তার আসল ও একমাত্র লক্ষ্য। মনে হয়েছিল এই মানুষটা তাকে এভাবেই ধরে রাখুক আজীবন। এভাবেই হৃদয়মাঝে ডুবে থাকুক। কামুকতায় শান্তি খুঁজতে গিয়ে আজ তার এই দশা। কি
মাথার চুল টেনে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো সে।
শেরহাম চোখ ঘুরিয়ে তার কান্না দেখে কিছুক্ষণ স্থির চোখে চেয়ে রইলো। চোয়াল, চিবুক শক্ত হয়ে এল তার। দৃষ্টি কঠিন করে ধপধপ পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে।
____________________
অপরূপার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ভোরের আলো ঢুকেছে কক্ষে। জানালার পর্দা উড়ছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে কানে।
সে সেভাবে আধশোয়া অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করলো। বিছানায় শেহজাদ নেই। তড়িঘড়ি করে উঠে রসাইঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই খাবারঘরের সামনে গিয়ে থামলো। শেহজাদকে সবার সাথে বসে খেতে দেখলো। রসাইঘরে যেতেই দেখলো সকালের খাবার খাচ্ছে সবাই। তাকে দেখে ফুলকলি এগিয়ে এল।
‘ তোমার এতক্ষণে ঘুম ভাঙলো? বাহবা গো। এতবেলা করে কেউ ঘুমায় বুঝি? ‘
অপরূপা চুপ করে রইলো। খোদেজা তাকে আপাদমস্তক দেখে খাবার চিবোতে থাকলো।অপরূপা খোলাচুল খোঁপা বেঁধে নিয়ে মাথায় কাপড় টেনে নিল। আয়শা তার জন্য রুটি হালুয়া নিয়ে এসে বলল,
‘ মাংস খুব শক্ত হয়েছে ভাবীজান। শেহজাদ ভাইজান খাননি। মাথায় চাপ পড়ছে নাকি। তুমি দুপুরে মাংস একটু নরম করে রেঁধো। ‘
অপরূপা খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলল, ‘ আচ্ছা।’
সায়রা সোহিনী কেউ কথা বলতে এল না। অপরূপা খাওয়া শেষে কুমুদিনীকে ডাকলো,
‘ কুমু আপা আমার কক্ষে এসো। কথা আছে। দ্রুত। ‘
কক্ষ হতে বেরিয়ে গেল সে। কক্ষে গিয়ে কুমুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কুমুদিনী এসে কক্ষ ঝাড়ু দিতে লাগলো। অপরূপা রুক্ষস্বরে বলল,
‘ এসব আমি পারব। আমার কাজ কেউ করুক তা আমার পছন্দ নয়। কাল তুমি মহলের পেছনে কি করছিলে? সত্যি কথা বলো।’
কুমুদিনী অবাক চোখে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠলো। বলল,
‘ ধুর দোলনা চড়তে গেছিলাম। মাঝেমধ্যে যাই। ওইদিকে বেলী ফুলের গাছ থেইকা ফুল নিয়ে মালা গাঁথি। বেলী আমার বড্ড পছন্দের। ক্যান জিগাইতেছ? ‘
অপরূপা সন্দিহান কন্ঠে বলল,
‘ কাল ওখান থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠে দেখি এতবড় ঘটনা ঘটে গেল। আমি কিন্তু সন্দেহ করছি তোমাকে। তোমার হাতের ফুলগুলোতে কি এমন কিছু ছিল যার কারণে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম? সত্যি বলবে। আমি সম্রাটকে বলে তোমাকে মহল থেকে বের করার পন্থাও খুব ভালো করে জানি। ‘
কুমুদিনীর চোখমুখ রাগে ছেয়ে গেল। উঁচু গলায় চেঁচিয়ে বলল,
‘ মাগোমা এসব কেমন কথা? আমি এসব কাজ কেন করব? তওবা আমি ছোট বেলা থেইকা কাজ করি এইখানে। এই মহল আমার সবকিছু। আমি ক্যান এইসব করতে যাব? সম্রাটরে আমি কত সম্মান করি। আমি তার ক্ষতি ক্যান চামু? ‘
কুমুদিনী একনাগাড়ে চেঁচাতে থাকলো। শেহজাদ কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে অপরূপার নামে উল্টাপাল্টা কথা বুঝাতে লাগলো। অপরূপা জানে শেহজাদ এসব বিশ্বাস করবে না। কিন্তু অপরূপাকে অবাক করে দিয়ে শেহজাদ বলল,
‘ নিজের দোষ ঢাকতে এসব করা মোটেও ভালো কাজ নয়। অন্তত তোমার কাছ থেকে এসব আশা করিনি আমি। ওকে আমরা চিনি অনেক বছর ধরে। সত্যিটা না বলে প্রতি পদেপদে আমাকে হতাশ করছো তুমি। ‘
অপরূপা বলল,
‘ আপনার কি মনে হচ্ছে না আমার অজ্ঞান হওয়ার পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে? ওকে এতবছর ধরে চেনেন তাই অবিশ্বাস করতে পারছেন না। আমাকে দুবছর ধরে চেনেন তাই বলে অবিশ্বাস করছেন? ‘
‘ মোটেও না। আমি এমনটা বলিনি। কুমু তুই যাহ। ‘
কুমু দৌড়ে চলে যেতেই অপরূপা বলে উঠলে,
‘ আমি বলেছেন এমনটা। আপনার বুঝানোর ধরণটাও পরিবর্তন হয়ে গেছে। আপনি আমার সাথে কেমন আচরণ করছেন তার উপর নির্ভর করছে মহলের বাকিসবাই আমার সাথে কেমন আচরণ করবে। আপনি আমার সাথে রুক্ষ স্বরে কথা বললে ওরাও বলবে। কারণ সবাই আপনাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। ‘
‘ সেই জায়গাটা অর্জন করো যাতে সবাই আমার প্রেক্ষিতে তোমাকে বিশ্বাস অবিশ্বাস না করে। আমার মাথাব্যথা করছে, আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না। ‘
‘ আপনি একবারও জানতে চাইবেন না কেন আমি অজ্ঞান হলাম? কেন আপনাকে আঘাত করলাম? ‘
‘ কাল তো অস্বীকার করছিলে। আজ স্বীকার করছো তবে? ‘
অপরূপা করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনি আমাকে কতটা অবিশ্বাস্য চোখে দেখছেন তা ভেবেই মরছি আমি। এই চাইতে খারাপ পরিস্থিতিতে আপনি আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। আজ কি হলো? আপনার বিশ্বাস হয় আমি নিজের স্বার্থে আপনাকে আঘাত করতে পারি? ‘
‘ বললাম তো আমি কিছু জানতে চাই না রূপা। আমার মাথায় যন্ত্রণা করছে। দু দুবার আঘাত করেছ তুমি। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। ‘
অপরূপা কক্ষ হতে হনহনিয়ে বের হয়ে গেল। কুমুদিনী কাতলা মাছ কাটছিলো। অপরূপা হনহনিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে বটি কেড়ে নিয়ে হাত চেপে ধরে বলল,
‘ খোদার কসম করে বলছি আমার শান্তি কেড়ে নেয়ার জন্য তোমাকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। স্বীকার করো তুমি যদি কোনো অপরাধ করে থাকো। ‘
কুমুদিনী একছুটে খোদেজার পেছনে লুকিয়ে বলল,
‘ মা বেগম দেখেন আপনাগো বউ আমারে সন্দেহ করতেছে শুধু শুধু। আমারে বাঁচান। আমি কি করব? আমি কিছু করিনাই। ‘
অপরূপা রাগে ফুঁসছে। তার চোখে রাগের আস্ফালন সরূপ টলটলে জল। সকলেই কুমুদিনীর চেঁচামেচি শুনে এসে ভীড়লো রসাইঘরে। খোদেজা বলল,
‘ কি হয়েছে? কি করেছে ও বলবে তো। ‘
অপরূপা ফুঁসতে ফুঁসতে সবটা খুলে বলল। কুমুদিনী বলল,
‘ আমার ঘরে গিয়া দেখো কত ফুল আছে ওইখানে। আমি ফুলপাগল সব্বাই সেইডা জানে। সম্রাট ভাইজানও জানে। তুমি আমার লগে ক্যান শত্রুতা করতাছো? নিজের দোষ ঢাকোনোর লাগি আমারে জড়াইতাছো। তুমিই তো মহলে পা রাখছিলা সবার ক্ষতি করার জন্য। এখন ভাইজানরে কাছে পাইয়্যা চুপিচাপি শত্রুতা করতাছো। ‘
অপরূপা বটি ছুঁড়ে ফেলে খোদেজার পেছন থেকে টেনে আনলো তাকে। শক্তপোক্ত একটা চড় বসিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বলল,
‘ একদম বাজে কথা বলবে না। নিজের সীমার মধ্যে থাকো।’
কুমুদিনী চিৎকার দিয়ে উঠলো। ওমাগো কোমর ভেঙে গেল।
সবাই হতভম্ব চোখে চেয়ে আছে। সায়রা কুমুদিনীকে তুলে বাইরে বের করে দিল। শেহজাদ এসে বলল,
‘ কি হয়েছে? সকাল সকাল এত চেঁচামেচি কেন? অশান্তি আর ভালো লাগছেনা। ‘
সবাই চুপ করে আছে। বাইরে কুমুদিনীকে কাঁদতে দেখে, ভেতরে অপরূপাকে ফুঁসতে দেখে শেহজাদের বুঝতে বাকি রইলো না কি হচ্ছিল এখানে। কুমুদিনী কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘ আপনের বউ আমারে চড় মারছে ভাইজান। ধাক্কা মারছে। আমি তার বয়সে বড় হই সেইডা সে ভুলে গেছে। কাজের লোক তাই গায়ে হাত তুলতে বাঁধে নাই। ‘
শেহজাদ অপরুপার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এল। কক্ষে নিয়ে এসে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘ কি করতে চাইছো তুমি?’
অপরূপা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শেহজাদ বলল,
‘ তুমি আমাকে আঘাত করেছ সেটা আমি ভুলে গেলাম। হয়েছে শান্তি? আর কুমুদিনীকে আমি ডেকে জিজ্ঞেস করব। দয়া করে শান্ত হও। আমার শান্তি চাই। ‘
বলেই বেরিয়ে গেল কক্ষ হতে। আবার কি মনে করে ফিরে এসে অপরূপাকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ আর অশান্তি করো না। শান্ত হও। ‘
অপরূপা কান্না চেপে স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। শেহজাদ বেরিয়ে যাচ্ছিলো। অপরূপা বলে উঠলো,
‘ একবারও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন ‘ রূপা কি হয়েছে তোমার? কি বলতে চাও তুমি? একবারও বুঝার চেষ্টা করেছেন কেন আমি এমন করছি? ‘
শেহজাদ ‘চ’ কারান্ত শব্দ করে পিছু ফিরে বলল,
‘ হ্যা শুনতে চাই। বলো কি হয়েছে তোমার। মনখুলে বলো কি বলতে চাও। শুনছি আমি। ‘
অপরূপা একদৃষ্টে চেয়ে নিজেকে সামলে বলল,
‘ কিছু বলার নেই আর। যা বলার ছিল তার শোনার উপযুক্ত নন আপনি। এটুকু বুঝেছি অবিশ্বাস আপনাকে আমার কাছ থেকে অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছে। যেদিন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করবেন আমি আপনাকে স্বেচ্ছায় আঘাত করিনি সেদিন শুনতে আসবেন, কি বলতে চাই আমি। ‘
‘ যেটা মনে করো তুমি। আমি বেরোচ্ছি। অন্দরমহলে আর কোনো ঝামেলা করো না। ‘
বলেই চলে গেল সে। সে চলে যেতেই অপরূপা দরজায় মাথা ঠেকালো।
কিছুক্ষণ পর সাফায়াত এল। বলল,
‘ ভাইজান দুঃখীত বলেছেন। তোমাকে কষ্ট দিতে চাননি তিনি। ‘
অপরূপা মৃদু মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ আপনার ভাইজানকে বলবেন আমিও দুঃখিত। আমি উনাকে ইচ্ছে করেই দু দু’বার মাথায় আঘাত করেছি। ‘
সাফায়াত কি বলবে খুঁজে পেল না। চলে গেল সে। ভাইজান রূপাকে কতটা ভালোবাসেন তা সে জানে। বিশ্বাস আছে মান অভিমান মিটিয়ে নেবেন উনি।
খোদেজা হাঁটতে হাঁটতে কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালেন। দেখলেন অপরূপা বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে রয়েছে। তিনি কয়েক মুহূর্ত
চেয়ে থেকে ধীরপায়ে হেঁটে এসে অপরূপার মাথায় হাত রাখতেই অপরূপা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে বলল,
‘ চলে যান দয়া করে। পরের মা কখনো নিজের মা হয় না। আমাকে বুঝার জন্য কোনো মানুষ খোদা সৃষ্টি করেননি এটা আমি বুঝে গিয়েছি। আমাকে সান্ত্বনা দেবেন না। না আশ্বাস দেবেন । আমি আর কারো কাছে কোনো কৈফিয়ত দেব না। কপালে যা আছে তাই হবে। আমি যার জন্য এই মহলে আছি তিনি আমাকে অবিশ্বাস করছেন। আর কারো বিশ্বাস, ভরসা আমার প্রয়োজন নেই। চলে যান। আমি আপনার পুত্রকে ইচ্ছে করেই মেরেছি। ‘
খোদেজা কি বলবেন খুঁজে পেলেন না। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা। আবার কোন ঝড় আসতে চলেছে কে জানে? উনি শুধু বললেন,
‘ শেহজাদের সাথে আমি কথা বলব। তুমি নিজেকে একা করে নিওনা। আমি তোমাকে অবিশ্বাস করছিনা, সত্যিটা জানতে চাই। ‘
অপরূপা চোখ বুঁজে নিজেকে শান্ত করলো। সম্রাট ফিরে এসে তাকে বুকে আগলে নেবে।
_____________
জাহাজের খালাসিরা পণ্য নামাচ্ছে জাহাজ হতে। শেহজাদ সেখানে অবস্থান রত। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। শ্রমিকদের হাঁকডাকে চারপাশ মুখর। ফকফকা আকাশের বুকে নীল রঙের মেঘ ছোটাছুটি করছে। সে বড়সড় দম ফেলে দূরে দূরবীন তাক করতেই একটা ছোটখাটো জাহাজকে ছুটে আসতে দেখলো। তার পেছন পেছন একটা বড়সড় ট্রলার। ট্রলারের ইশারায় জাহাজটিকে বেশ রয়েসয়ে থেমে যেতে হলো। ট্রলারে যারা ছিল তারা সকলেরই মুখ ঢাকা। সবার হাতে অস্ত্র। যাত্রীবাহি জাহাজে জলদস্যু!!
সে চেঁচিয়ে কামীল, কাশিমকে ডাক দিল। সাফায়াত ছুটে এল। সাথে কাশীম আর কামীল। শেহজাদ আদেশ করলো,
‘ জাহাজ ফেরাও। ওই জাহাজে জলদস্যু হামলা করেছে। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলো। যাও। ‘
সবাই প্রস্তুত হয়ে রওনা দিল। তাদের জাহাজ আসতে দেখে জলদস্যুরা দ্রুত পালিয়ে গেল লুটপাট করে। শেহজাদের জাহাজ থামতেই সেই জাহাজে প্রবেশ করলো তার সৈন্যরা। সাফায়াত ডেকে বলল,
‘ ভাইজান ক্যাপ্টেন আহত হয়েছেন। ‘
শেহজাদ সেই জাহাজে গেল। ক্যাপ্টেনের হাতে চা*কু মেরেছে দস্যুরা। রক্তপাত হচ্ছে। কয়েকটা যাত্রীও আহত।
পাশ দিয়ে আরও একটা জাহাজ যাচ্ছিলো। যাত্রী আহত শুনে তারা খোঁজ নিয়ে জানা গেল সেখানে দু’জন ডাক্তার আছেন। চিকিৎসার কথা শুনে সেই জাহাজ হতে একজন ডাক্তার ছুটে এলেন। শেহজাদের সমবয়সী হবে। বেশ সুদর্শন পুরুষ।
ক্যাপ্টেনের সাথে সেই ডাক্তার লোকটার পরিচিতি হয়ে গেল। তারা মামাতো ফুপাতো ভাই হয়। আহত সবার চিকিৎসা করার পর শেহজাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানালো, সে একটা ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করার জন্য রূপনগরে যাচ্ছে। সাথে তার চাচা আর কাকী আছেন। উনারা সুলতান মহলে আজকের অতিথি।
সাফায়াত জানালো, আপনি সুলতান মহলের সম্রাটের সাথে কথা বলছেন যদিও উনি এখন অন্য একজন আছেন ক্ষমতায়। কিন্তু সম্রাট হিসেবে সবাই শেহজাদ সুলতানকেই চেনেন এখনো পর্যন্ত। ডাক্তার ছেলেটা খুশি হলো। উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘ চাচাকে একথা জানাতেই হয়। উনি শেহজাদ সুলতান বলতেই পাগল। খুব নাম করেন আপনার। আমার কত সৌভাগ্য আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল। ‘
শেহজাদ হেসে বলল,
‘ মনে হচ্ছে আপনার চাচাকে আমি চিনি। কি নাম আপনার? ‘
‘ আমার নাম তাঈফ মুস্তাফী । আমার চাচার নাম আবুল ফজল মুস্তাফী । ‘
শেহজাদ ফজল সাহেবকে নিয়ে আসার আদেশ করলো। উনি উনার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে এলেন। উনার স্ত্রীর চোখদুটো শুধু দৃশ্যমান। আগাগোড়া কালো বোরকায় আবৃত। শেহজাদের সালামের উত্তর অত্যন্ত মিষ্টিকরে দিলেন উনি। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেন। কাছ থেকে রাজপুত্র দেখলেন যেন। শেহজাদের সাথে কথা বলার পর উনার মনটা ভালো হয়ে গেল। কি অমায়িক মানুষ!
উনার চোখদুটো, কন্ঠস্বর এত পরিচিত মনে হলো শেহজাদের । রূপার চেহারাটা দৃশ্যমান হলো মানসপটে। তারপর সাথে সাথেই বুক ভার হয়ে গেল। মেয়েটাকে না ভাবলেই সে শান্তিতে থাকে।
ক্যাপ্টেনের মামা হন ফজল সাহেব। ক্যাপ্টেন আর তাঈফও সমবয়সী। তারা একে অপরকে তুই বলে সম্বোধন করছে। সাফায়াতের সাথে তাদের বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে কয়েক মুহূর্তে। ক্যাম্পেইনকে নাদির নামে সম্বোধন করতে দেখা গেল।
শেহজাদ সবাইকে মহলে আমন্ত্রণ জানালো। এবং সৈন্যদের দিয়ে সেই খবর মহলে পাঠিয়ে দিল।
___________
অতিথি আসছে শুনে রসাইঘরে কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে। অপরূপা আজ কক্ষ হতে বের হয়নি। খোদেজার কথায় ফুলকলি কয়েকবার এসে জিজ্ঞেস করে গেল ভালোমন্দ। সে খাবেনা, উঠবে না, যাবে না বলে ফুলকলিকে পাঠিয়ে দিল।
সবাই আর কিছু বলেনি। শেহজাদ ফিরলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
অপরূপা মাগরিবের নামাজ পড়ে নিল। আগরবাতি জ্বালিয়ে রসাইঘরের উদ্দেশ্যে যেতেই শেরহামের মুখোমুখি হলো। শেরহামের কানে গিয়েছে একআধটু খঞ্জনা। ঠেস দিয়ে বলল,
‘ আমিই নাহয় বেশি খারাপ ছিলাম। এখন দেখি মনের মানুষের সাথে থেকে তোমার অবস্থাটাই বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছে। আহারে আফসোস। ‘
অপরূপা আঙুল তুলে বলল,
‘ নিজের ধ্বংস ডাকবেন না। খোদা ছেড়ে দেন কিন্তু ছাড় দেন না এটা মনে রাখবেন। ‘
শেরহাম চোখমুখ শক্ত করে বলল,
‘ আমার ধ্বংস চাইতে চাইতে নিজে না কখন ধ্বংস হয়ে যাও। ‘
তটিনী কোথাহতে উড়ে এল। শেরহামের দিকে চোখা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অপরূপাকে বলল,
‘ চলো এখান থেকে। ‘
শেরহাম হনহনিয়ে তার কক্ষের দিকে চলে গেল।
শেরহামের পেছন পেছন সামাদ আর মুরাদও এল কিছুপর। শেরহামকে কোনো একটা খবর দিতে তারা ছুটছে।
যেতে যেতে হঠাৎই তটিনী আর অপরূপার মুখোমুখি পড়ে গেল। তটিনী বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘ অমানু*ষের বাচ্চা। ‘
সামাদ শেরহামের কাছে চলে গেল। বলল,
‘ হুজুর অনেকগুলো ডাকাত দেখলাম। হাতে তলোয়ার নিয়ে ছুটে চলেছে। ওরা বোধহয় আমাদের লোক না। আপনাকে জানাতে এলাম দ্রুত।’
‘ আমাদের লোক না মানে? তো কারা হবে? ‘
‘ ওরা ডাকাত। কি ভয়ংকর গতিতে নগরে প্রবেশ করলো। মনে হচ্ছে একটা কেলেংকারী ঘটিয়েই ছাড়বে আজ। ‘
শেরহাম বলল,
‘ অশ্ব বের কর। বেরোবো। আবার কারা মর**তে এল? ‘
সামাদ বলল
‘ জ্বি। আরেকটা কথা বলতে চাচ্ছি হুজুর। আপনাকে কোপাতে চেয়েছে ওই মেয়েটা, আর আপনি ছেড়ে দিলেন ওই মেয়েকে? আপনি একটা পিঁপড়েকেও ছাড় দেন না, সেখানে এই মেয়েকে..
শেরহাম ঘাড় ফিরিয়ে বলল,
‘ কি বলতে চাচ্ছিস। ওকে আমি মাফ করে দিয়েছি? সুযোগ পেলে শোধ তুলে নেব। শেহজাদ ফেরেনি এখনো? ‘
‘ না। কে জানে এতক্ষণ কি করছে? গুদামের মালিকদের খবর দিয়েছি। কাল সকালে এসে নিয়ে যাবে খাদ্যশস্য। ‘
‘ শেহজাদ এলে টাকাপয়সার হিসেব সব বুঝে নিবি। এক পয়সাও ছাড় দিবি না। ওর ভাব দেখে মনে হয় আমার হয়ে কাজ করছে না, আমি ওর হয়ে কাজ করছি। ‘
‘ ঠিক আছে। ‘
শেরহাম পকেটে পিস্তল ভরতে শুরু করলো। অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল মহল থেকে। তারপর কালো ঘোড়াটির পিঠে চড়ে টগবগিয়ে ছুটে চললো সৈন্য নিয়ে। বাচ্চাদের আমসিপড়া পড়ানো হয় অমন একটা মাদ্রাসার আশেপাশের সব বাড়ি থেকে বাচ্চা তুলে নিয়ে যাচ্ছে ডাকাতদল। শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে সকলেই মুখোশ পড়া ডাকাত। হাতে মস্ত বড়বড় ধারা**লো তলোয়ার। একজন দু’জন নয়। শতশত। ঘোড়ার খুঁড়ের শব্দে যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। শেরহাম আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলো। তারপর ঢুকে গেল তাদের ভীড়ে। সুকৌশলে একজনকে আক্রমণ করে পা টেনে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে এসে বুকের উপর হামলে করে মুখোশ টেনে খুলতেই সেই ডাকাত প্রাণের ভয়ে জানালো তারা চন্দ্রলালের লোক। শেরহাম বিকট শব্দে গর্জে তার বুকের ম**ধ্যে তলোয়ার গেঁথে দিতেই ওর মুখটা রক্তে ভরে উঠলো। সারা নগরের ধূলো উড়িয়ে ডাকাতরা অনেকগুলো বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে গেল। শেরহাম সামাদকে বলল,
‘ বুড়ো চালাকি শুরু করেছে আমার সাথে।
ওকে গিয়ে সাবধান কর। বাচ্চাগুলোকে ফেরত নিয়ে আয় রাতের মধ্যে । আমাকে যদি যেতে হয় তাহলে একটাকেও জ্যাম্ত রাখবো না বলে দিবি। ‘
সৈন্যরা পরাগ পাহাড়ের উদ্দেশ্য রওনা দিল।
এদিকে মহলে ফিরে অতিথিশালায় ঢুকলো শেরহাম। রক্তাক্ত অবস্থায় মহলে গেলে শেহজাদের কানে গেলে সে তাকে সন্দেহ করবে। তাই অতিথিশালায় গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে কেদারায় বসলো।
সামাদ আর মুরাদ ডাকাতদের ব্যাপারে কথা বলছিল তাদের কক্ষে। সাথে বস্তা হতে পয়সা ঢালছিলো সাবধানে। যেগুলো তার কোষাগার হতে সরিয়েছিল। হঠাৎ কক্ষের বাইরে পদধ্বনি কানে আসতেই সাবধান হয়ে উঁকি দিতেই তটিনীকে দেখতে পেল। শেরহামকে রক্তাক্ত অবস্থায় অতিথি শালায় ঢুকতে দেখেছিল সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তাই ছুটে এসেছে জিজ্ঞেস করতে কাকে খু**ন করে এসেছে।
সামাদ আর মুরাদ বের হওয়া মাত্রই তটিনীর উপর হামলে পড়ে মুখ চেপে ধরলো। তটিনী গোঙাতে লাগলো। সামাদ ওর মুখ চেপে ধরে দেখলো সিংহদ্বার পেরিয়ে শেহজাদ আর সাফায়াতের ঘোড়া এসে থেমেছে। পেছনে ঘোড়ার গাড়িতে অতিথিরা।
সামাদ তার মুখ চেপে ধরে কক্ষে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। মুরাদ কাপড় এনে মুখ বেঁধে দিল। দু-হাত পেছনে নিয়ে গিয়ে বেঁধে দিল।
তারপর বুকের ওড়না টেনে নিয়ে ফেলে দিল নীচে। তখুনি ঠকঠক করে কেঁপে উঠলো দরজা। শেরহাম ডেকে উঠলো।
‘ এই দরজা খোল। ‘
তটিনী তার গলা শুনে গোঙাতে থাকলো। তটিনীকে লুকিয়ে সামাদ দরজা খুলে উঁকি দিয়ে বলল,
‘ আসছি হুজুর। ‘
‘ কতবার বলেছি পানির কলস নিয়ে আসতে। কুমুদিনীকে বল। ‘
‘ বলতেছি হুজুর। ‘
তটিনীর চোখ ফুঁড়ে হল বের হলো শেরহামকে চলে যেতে দেখে।
শেরহাম কক্ষে গিয়ে কেদারায় বসে উরুতে দু-হাত ঠেকিয়ে বসে ভাবছিলো চন্দ্রলালের কথা। এই বুড়ো তার কথা অমান্য করেছে। একে শাস্তি না দেয়া অব্দি তার শান্তি নেই। দরজা ঠেলে সামাদ এসে বলল,
‘ হুজুর ওই মেয়েটি কক্ষের বাইরে এসে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো। হয়ত শেহজাদ সুলতানকে গিয়ে সবটা বলার জন্য। ‘
শেরহাম খ্যাঁক করে বলে উঠলো,
‘ কোন মেয়ে? ঘাড় ধরে নিয়ে আয়। এক কো**পে মা**থা আলাদা করি। ‘
মুরাদ মুখের পট্টি টান দিয়ে খুলে তটিনীকে ধাক্কা দিয়ে ছুঁড়ে মারলো কক্ষের ভেতর। আর কোনো উপায়ান্তর না দেখে এই পথ বেছে নিয়েছে তারা। শেরহামের কবলে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত তারা তা জানে। তাই তটিনীর গায়ে হাত দেয়ার কথা ভাবতে পারেনি।
তটিনী মুখ থুবড়ে পড়লো শেরহামের সামনে। কেঁদে উঠে চোখ তুলে শেরহামকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে ঘৃণাভরে তাকালো। শেরহাম তাকে তুলতে যেতেই সে শেরহামকে ধাক্কা দিল। শেরহাম কয়েক পা দ্রুত পিছিয়ে গেল। শেরহাম এগিয়ে আসতেই তার রক্তে ভেজা শরীর জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো তটিনী। শেরহামের চোয়াল শক্ত হতে দেখে সামাদ আর মুরাদ দ্রুত পালিয়ে গেল সেখান থেকে। তটিনী কাঁদতে কাঁদতে শেরহামকে সরিয়ে দিতে যাবে শেরহাম তাকে নিজের সাথে চেপে ধরে রুক্ষস্বরে বলল
‘ আমি ওদের এসব কিছু করতে বলিনি। ‘
তটিনী শান্ত হতে লাগলো।
_____________
শেহজাদ আর সাফায়াত ফিরেছে শুনে সদর কক্ষে সায়রা, সোহিনী, শবনম আর আয়শা ছুটে এল। দেখলো তিন’জন ভদ্রলোক আর একজন মহিলা বসে আছেন কেদারায়। শেহজাদ বলল,
‘ ওরা আমার বোন। তোমরা তো ডাক্তার বাবুকে চেনো। উনাদের দুজনের সাথে পরিচিত হয়ে নাও। উনি ডাক্তার তাঈফ মুস্তাফী, আর উনি ক্যাপ্টেন নাদির মেহমাদ। আমাদের অতিথি। ‘
সকলেই সালাম দিয়ে মাথায় ভালো করে কাপড় টেনে নিল সংকুচিত হয়ে। হেসে সালামের উত্তর দিলেন ফজল সাহেব।
সায়রা মিনমিন করে শেহজাদকে বলল,
‘ আপুকে খুঁজে পাচ্ছি না ভাইজান। কক্ষেও নেই। ‘
শেহজাদ অতিথিদের সামনে কিছু বলতে চাইলো না। অন্দরমহলে আসতেই অপরূপার মুখোমুখি হলো। অপরূপা ওকে পাশ কাটাতে যাবে তখনি ফজল সাহেবকে দেখলেন। ফজল সাহেব ডাকলেন,
‘ রূপা মা কেমন আছ তুমি? ‘
অপরূপা তীর্যক দৃষ্টিতে শেহজাদকে দেখে বলল,
‘ ভালো। ‘
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেল। মহিলাটিকে খেয়াল করলো না। তটিনীকে নিশ্চয়ই সামাদ আর মুরাদ কিছু করেছে! সে সদর দরজা পার হয়ে অতিথিশালার দিকে যেতেই নাদির মেহমাদ বলে উঠলো,
‘ মেয়েটি মামীমার মতো দেখতে না? ‘
তাঈফ মুস্তাফী বলে উঠলো
‘ তাই তো।
***
শেহজাদ ফজল সাহেবকে বলল,
‘ কিছু মনে করবেন না। ও বোধহয় কোনোকিছু নিয়ে চিন্তিত আছে। ‘
ফজল সাহেব হেসে বললেন,
‘ ওকে তো চিনি আমি। কোনো সমস্যা নেই সম্রাট সাহেব। ‘
‘ আপনারা বসুন। আমি আম্মাকে খবর দিচ্ছি। আমার একটা বোনকে পাচ্ছি না। ওকে খুঁজে দেখতে হবে। ‘
‘ আপনি যান। সমস্যা নেই। ‘
শেহজাদ চলে যেতেই স্ত্রীর দুচোখের দিকে তাকাতেই টলটলে চোখদুটো দেখতো পেলেন ফজল সাহেব। হাত ধরে ডাকলেন, ‘ অনুপমা ওর নাম অপরূপা। যার কথা তোমাকে বলেছিলাম। ‘
খোদেজা শাহানা সকলেই অনুপমার কাছে এল। নিকাব খুলতেই সকলেই দ্বিধাগ্রস্তের মতো চেয়ে থাকলো। এই মহিলা তো অপরূপার মতোই। মহিলা বারবার চোখ ঘুরিয়ে অপরূপাকে খুঁজতে ব্যস্ত। তার অপু।
অপরূপা ফিরে এল যখন সৈন্য বললো শেরহাম সুলতানের কাছেই উনার বেগম আছে । ফিরে এসে অনুপমাকে চোখে পড়ার সাথে সাথেই কপাল কুঁচকে গেল তার। অনুপমা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো।
চলবে