প্রিয় বেগম ২ পর্ব-০২

0
1346

#প্রিয়_বেগম
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #পর্ব_০২
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

তটিনীর কথায় সাফায়াত থামতেই শেরহাম তার মুখে পরপর কয়েকটা ঘুষি বসালো। সাফায়াত ছিটকে পড়ে গেল মেঝেতে। শেরহাম গর্জে বলল,

‘ তোর বোন নিজের কারণে আঘাত পেয়েছে। আমার দিকে আঙুল তোলা খুব সহজ না? অভ্যাস হয়ে গেছে তোদের। সব কটাকে বের করে দেব মহল থেকে। ‘

শাহানা বলল,

‘ আল্লাহর ওয়াস্তে তোমরা শান্ত হও। সাফায়াত আর হাতাহাতি করো না। দ্রুত ডাক্তার ডাকো। ‘

শেরহাম তটিনীর দিকে একঝলক তাকিয়ে তার রক্তাক্ত হাতটা ঝাড়তে ঝাড়তে বেরিয়ে গেল হনহনিয়ে। সাফায়াত ডাক্তারকে খবর পাঠাতেই ডাক্তার সাহেব চলে এলেন। তটিনীর কপালের রক্তপাত বন্ধ করলেন। কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ মহলে এসব কি হচ্ছে? এর আগে তো এসব ঘটেনি। শেহজাদ সাহেব কোথায়? ‘

কেউ কিছু বলতে পারলো না। তটিনী শাহানার কাঁধে মাথা ফেলে রেখেছে। সিভান এসে বলল,

‘ ডাক্তার বাবু, বড় ভাইজানও আঘাত পেয়েছে। আসুন। ‘

ডাক্তারের আঙুল ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো সে। সকলেই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। শেরহাম সুলতান নিজেকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে না তাকে গ্রহণ করা যায়, না ছুঁড়ে ফেলা যায়। কিন্তু সে সবাইকে ছুঁড়ে ফেলার মতো সাহস রাখে। অপরূপা সিভানের পিছু পিছু গেল। শেরহামকে সামাদ আর মুরাদ অনুনয় বিনয় করছে ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়ার জন্য। সে নিতে নারাজ। ধমকাধমকি করছে। অপরূপা পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে মনে পড়লো সেই দিনগুলির কথা। তখন সে শেরহাম সুলতানকে রহমান নামে চিনতো। কয়েকদিন একটানা দেখা না পাওয়ায় সে পাগলের মতো আচরণ করেছিলো। তখন সে বিন্দুমাত্র বুঝতে পারেনি তার সাথে ছলনা করা হচ্ছিল। এমন একটা মানুষ শেরহাম সুলতান যার হৃদয় বলতে কিছু নেই। আগাগোড়া একটা পাষাণ, লোভী, নির্দয় মানুষ।

সবার জোরাজোরিতে শেরহাম শান্ত হয়ে বসলো। ডাক্তার তার হাতের রক্তপাত বন্ধ করে, কপালে ঠোঁটের পাশে মলম লাগিয়ে সাদা ব্যান্ডেজ বেঁধে দিল। সিভান গ্লাসে করে পানি নিয়ে এল। শেরহামের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল খানিকটা ধমকের সুরে বলল,

‘ নাও খাও। তুমি এত মারপিঠ করো কেন? ‘

শেরহাম পানি খেতে খেতে ওকে ভালো করে দেখলো। চোখ নাক কপাল হুবহু তাকে নকল করে এসেছে। সিভান বলল,

‘ শেহজাদ ভাইজান মারপিঠ করে না। ‘

শেহজাদের নাম শোনামাত্রই পিত্তি জ্বলে উঠলো শেরহামের। গ্লাস ছুঁড়ে মেরে ধমকে উঠে বলল,

‘ আবারও শেহজাদ ভাইজান। সে মারপিঠ করেনা। সোজা মানুষ মা*রে। আমার দু’দুজন সৈন্যকে মে**রেছে। একদম খু**ন করেছে। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করে আয়। ‘

সিভান চোখ বড়বড় তাকিয়ে রইলো। অপরূপাও বিস্মিত। সম্রাট খু**ন করেছে!!

শেরহাম কেদারায় মাথা এলিয়ে দিল। সাথেসাথেই অপরূপাকে চোখে পড়লো। চোখের দৃষ্টি শক্ত হয়ে এল। ছলনাময়ী। লোভী। সবারই সৌন্দর্য আর অর্থবিত্ত নামযশের প্রতি লোভ। সব মেয়েই শেহজাদ সুলতানের মতো মহামতি, সত্যবাদী, ন্যায়, পরোপকারী, গুণী, সুদর্শন মানবের প্রেমে পড়ে। সবাই তাকে লোভী বলে। আসল লোভী তারাই। সবাই লোভী। এদের সে উচিত শান্তি দেবে।

অপরূপা বলল,

‘ আমাকে কয়েদে প্রবেশের অনুমতি দিন। উনার হাতে আঘাত পেয়েছেন। খেতে পারছেন না। ‘

এমন নম্রভাষী অপরূপাকে দেখে চোয়াল ঝুলে পড়লো শেরহামের। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে ঝাঁজালো গলায় বলল

‘ নাটক করতে এসেছ? না খেলে না খাক। তোমার ওদিকে যাওয়াটাই বন্ধ। যাও। দেখি কি করতে পারো।’

অপরূপা কড়া গলায় বলল,
‘ ভালোই ভালো বলছি। এরপরের বার অনুমতি চাইবো না। ‘

শেরহাম দাঁড়িয়ে পড়লো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ কি করে যাও আমি দেখবো। ‘

বলেই হনহনিয়ে চলে গেল পাশ কেটে। অপরূপার কাছে সিভান এসে বলল,

‘ সুন্দর বউ শেহজাদ ভাইজানকে আমিও দেখবো। কিন্তু বড় ভাইজান যেতে দেয় না কাউকে। ‘

অপরূপা বলল,

‘ আমি নিয়ে যাব তোমাকে। ‘

সিভানকে নিয়ে সে রসাইঘরে চলে গেল। অভিষেক উপলক্ষে হরেকরকমের রান্নার আয়োজন করা হয়েছে। কুমু, টুনু, মতিবানু, আর ফুলকলি মিলে সব রান্না করেছে। সৈন্যদের খাবার পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অপরূপা শেহজাদের জন্য খাবার বেড়ে নিল। বড় থালায় ভাত, হরিণের মাংস ভুনা, কাতাল মাছের কালিয়া, ডাল নিল। হামিদা সবকিছু ওর হাতের কাছে বাড়িয়ে দিতে দিতে জানতে চাইলো, সে এতদিন কোথায় ছিল, কিভাবে সৈন্যদের হাত থেকে পালিয়েছিল। অপরূপা সবটা খুলে বললো। সে ভেবেছিল তার জন্য সম্রাট ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে একারণে সবাই তাকে দোষারোপ করবে কিন্তু কেউ তেমন কিছু বললো না। তাই সে সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। তাকে যে করেই সম্রাটকে বের করে আনতে হবে।

খাবারের থালা প্রস্তুত করা শেষেই সাফায়াত বলল,
‘ রূপা কুঠুরির সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ‘
অপরূপা অবাক গলায় বলল,
‘ মানেটা কি? তাহলে সম্রাট কি অভুক্ত থাকবেন? ‘
খোদেজা অস্থির হয়ে বলল,
‘ কিছু একটা করো। না খেয়ে খেয়ে মরে যাবে ছেলেটা। ‘
অপরূপা বলল,
‘ এভাবে কেন বলছেন? উনি এসব ইচ্ছে করে করছেন। আমি যাতে যেতে না পারি। ‘
তটিনী শেরহামের জন্য খাবার বেড়ে নিল। তাতে ঘুমের পথ্য মিশিয়ে দিচ্ছিলো। অপরূপা বলল,
‘ কি করছেন এসব? ‘
তটিনী শক্তমুখে বলল,
‘ আজকেই উনার শেষরাত। মেরে ফেলবো। ‘
সকলেই আঁতকে উঠলো। শাহানা পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ এসব মুখে আনেনা মা। এসব কি দিয়েছ? সবেমাত্র তোমার নিকাহ হয়েছে। এরকম করোনা। ‘

তটিনী রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল,
‘ সবাই চুপ থাকুন। ‘
অপরূপা বলল,
‘ এসব ঘুমের ঔষধ। আমি চিনতে পেরেছি। ‘
তটিনী বলল,
‘ তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো কেন? তোমার কি মনে হয় ও এমনিএমনি চাবিটা দিয়ে দেবে? ও ঘুমিয়ে গেলে আমি চাবি এনে দেব। ‘
অপরূপা প্রসন্ন কন্ঠে বলল,
‘ অনেক ধন্যবাদ ‘।
তটিনী হনহনিয়ে চলে গেল। শাহানা ডুকরে কেঁদে উঠে বলল, ‘ কপালটা এত খারাপ মেয়েটার। ‘
অপরূপা সান্ত্বনা খুঁজে পেল না। মাঝেমধ্যে নিজেকে দায়ী মনে হয় সবকিছুর জন্য।

তটিনী কক্ষের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। শেরহাম তার সৈন্যদের সাথে কথা বলছে। কাল বিকেলের মধ্যে যারা তাদের মজুতের বিশ শতাংশ জমা দেয়নি সবাই যেন হাজিরা দিতে আসে। ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে।
তারা বেরিয়ে যেতেই তটিনী খাবারের থালা হাতে কক্ষে প্রবেশ করতেই শেরহাম খেঁকিয়ে উঠে বলল
‘ এই নিয়ে যা এসব। খাব না আমি। ‘
তটিনী দস্তানা বিছিয়ে তার উপর থালা রাখলো।

সুলাইমানি আকিক পাথরের প্লেটে করে খাবার খায় মহলের পুরুষেরা। তাতে ঔষধ কিংবা বিষ থাকলে সেই প্লেট নীল বর্ণ ধারণা করে। আজও তাই হলো। বিষয়টা মাথায় ছিল না তটিনীর। যখন মাথায় এল তখন দেখলো শেরহামের ক্ষুরধার চোখ প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে ততক্ষণে। তটিনী কিছু
বুঝে উঠার আগেই বাসন তুলে মেঝেতে আছাড় মারলো শেরহাম। তটিনীর গলা চেপে ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,

‘ তুই বিষ মিশিয়েছিলি? তোর এত বড় স্পর্ধা! তোকে আজ খু*ন করেই ছাড়বো আমি। ‘

তটিনী কোমরে আঘাত পেল। আঘাতে জর্জরিত হয়ে কেঁদে উঠলো হু হু করে। শেরহাম রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে রসাইঘরের উদ্দেশ্য চলে গেল।

অপরূপা থালা হাতে রসাইঘর থেকে সবে বেরিয়েছিল। সাফায়াত চাবি আনতে গিয়েছে। এতক্ষণে শেরহাম সুলতান নিশ্চয়ই খাওয়াদাওয়া সেড়ে ঘুমে তলিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু শেরহাম সুলতানের স্বয়ং আগমনে সে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো। শেরহাম এসে বলল,

‘ কুঠুরিতে সৈন্যরা ছাড়া কারো যাওয়া নিষেধ। যদি কেউ কথা অমান্য করার চেষ্টা করে তাকে আমি খু**ন করে ফেলবো। ‘

অপরূপা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল,

‘ আমি যাবই। আপনি আপনার সীমা পেরিয়ে যাচ্ছেন। একজন মানুষ আপনার কারণে এতদিন যাবত অনাহারে আছে, কষ্টে আছে। আপনি যা করছেন তা ঘোর অন্যায়। ‘

শেরহাম থালাটা উল্টে দিল। ঝনঝন ঝনঝন শব্দে মেতে উঠলো চারপাশ। সকলেই ছুটে এল। দেখলো খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেঝেতে। অপরূপার দুচোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে। কত যত্ন করে সম্রাটের জন্য খাবার বেড়েছিল সে। শেরহাম চলে গেল। অপরূপা খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে দুফোঁটা চোখের জল ফেলে অগ্নিময় কন্ঠে বলল,

‘ এই দাম আপনাকে দিতে হবে শেরহাম সুলতান।’

সৈন্যরা খাবারের জন্য এল মধ্যরাতে। সাফায়াতকেও যেতে বারণ করেছে শেরহাম। সাফায়াতও যেতে পারছেনা। অপরূপা শেহজাদকে কথা দিয়েছিল সে রাতের খাবার নিয়ে আসবে। তা ভেবেই অপরূপার দুঃখ লাগলো। কষ্টে তার বুক ফেটে যেতে লাগলো। চোখ মুছলো আর খাবার বেড়ে দিল। সৈন্যকে বলল, ‘ সম্রাটকে বলবেন আমি নিরুপায়। ‘
সৈন্যটি খাবার নিয়ে চলে গেল। বন্দি সৈন্যদের খাবারও পাঠিয়ে দেয়া হলো। শেরহাম আদেশ দিয়েছিল শুধু শুকনো রুটি, আর ভাজি দিতে। কিন্তু তা কেউ শোনেনি।
অপরূপার আশায় ছিল শেহজাদ। সৈন্যকে খাবার নিয়ে আসতে দেখে গর্জে বলল,
‘ রূপা কোথায়? ‘
‘ মাফ করবেন হুজুর। দ্বিগুণ প্রহরী রাখা হয়েছে। বেগম আসতে পারছেন না। ‘
শেহজাদ বলল,
‘ তাকে গিয়ে বলো আমি খাব না। যাও। নিয়ে যাও। খাব না আমি। ‘
সৈন্যটি খাবারের থালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শেহজাদ বসে পড়লো। কি মনে করে আবার খাবারের থালাটা নিল। বলল, ‘ বেগমকে বলবে আমি খেয়েছি পেট ভরে। ‘
সৈন্যটি মাথা দুলিয়ে চলে গেল। অপরূপাকে এসে বলল,
‘ সম্রাট পেট ভরে খেয়েছেন। ‘
অপরূপা শান্তি পেল।
সায়রা সোহিনীদের সাথে ঘোড়াশালে গেল টিংটিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য। টিংটিং তাকে দেখে খুশিতে নেচে উঠলো। লাফাতে লাগলো। অপরূপা তার গলা ধরে চুপটি করে চোখ বুঁজে রইলো। কি করে সে সম্রাটকে উদ্ধার করবে? কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না সে।
সায়রা বলল, ‘ তুমি লাগাম ধরতে পারো রূপা? ‘
অপরূপা পরাগ পাহাড়ের ঘটনাটি তাদের খুলে বললো। তারা অবাক হয়ে সবটা শুনলো। বলল,
‘ ভাইজানকে উদ্ধার করাটাও তোমার পরীক্ষা। আমাদের ভরসা তুমি। ভাইজান ওখানে বেশিদিন থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। ‘
অপরূপার মনটা কেঁদে উঠলো। সে ভেবেছিল আজ রাতটা গ্রিলের এপাশে বসে সম্রাটকে নিজ হাতে খাইয়ে সারারাত গল্প করবে। কিছুই হলো না।

______________

শেরহাম কক্ষে এসে দেখলো তটিনী কোমরের ব্যাথায় কোকাচ্ছে। সোহিনী আর শবনম তাকে দেখে মাথা নত করে বেরিয়ে গেল চুপচাপ। তটিনী তার আগমনে কোমর ঢেকে দিল। চোখ বুঁজে রইলো। শেরহাম বিড়িতে আগুন ধরিয়ে বলল,
‘ খাবার নিয়ে গিয়েছে সৈন্যরা। তোর কি হয়েছে আবার? বিষ মিশিয়েছিস। বউ বলে মারিনি অন্য কেউ হলে মেরে গুম করে ফেলতাম। তোকে মারলে তো সবাই বউখেকো বলবে। ‘

তটিনী আহত স্বরে বলল,

‘ সোহিনী আমাকে সবটা বলেছে। তুমি খাবার ফেলে দিয়েছ। অমানুষ কোথাকার। আমাকে তালাক দাও। ‘

শেরহাম ধপাস করে বিছানায় শুইয়ে বলল,

‘ দেব। অপেক্ষা কর। ‘

বলেই সে ঘুমিয়ে পড়লো পাশ ফিরে।

_______________

অপরূপা ঘুমাতে গেল না। শেরহামের লোকেরা আলাপআলোচনা করছিল সদর ঘরে বসে। অপরূপা তখন আড়ালে দাঁড়িয়ে তা শোনার চেষ্টা করছিল। কাল জাহাজ আসছে। জাহাজে চাল, ডাল, কাঁচা তরকারি। মজুতঘরে খাদ্য সংকট হবে না। শেরহামের লোকগুলো বড়ই চতুর। তারা কখনোই নগরের ভালো চাইবে না। তাদের গতিবিধি লক্ষ করছিল দাঁড়িয়ে। এখনো পর্যন্ত তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হয়নি।
সবাই ঘুমাতেও চলে গেল সদর ঘরের আলো নিভিয়ে। সদর ঘরে পার্শ্বকক্ষে তারা কয়েকজনের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। কক্ষে আলো কমে এলেও অপরূপা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। বারবার মনে হচ্ছিল কোথাও একটা ঘাপলা আছে। শেরহামের সাথে আলাপের বাইরে তাদের আর কিসের কথা থাকতে পারে। শেরহাম সুলতান ঘুমাতে গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। তাহলে?
তার সন্দেহ সঠিক হলো। দুরুদুরু বক্ষে সে দেখলো সদর কক্ষের দরজা ঠেলে হারিকেনের আলো ছোট করে জ্বালিয়ে গুটিগুটি পায়ে বের হয়ে যাচ্ছে সামাদ আর মুরাদ সহ আরও কয়েকজন। অপরূপা কক্ষে গিয়ে দ্রুত মুখ বেঁধে তীর ধনুক পেছনে নিয়ে বেরিয়ে গেল। ঘোড়ার পিঠে চড়ে একসাথে কোথাও একটা ছুটে চলেছে সৈন্যগুলো। একজনও আশেপাশে নেই। তারমানে সবাই ধান্দায় আছে। কি করতে চলেছে তারা? অপরূপা ঘোড়াশাল হতে টিংটিংকে নিয়ে তাদের পিছুপিছু ছুটে গেল। কিছুদূর গিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে সে দেখলো সৈন্যগুলো সেই পরাগ পাহাড়ের জাদুকরগুলোর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে। সেই জাদুকরদের অপরূপা স্পষ্ট চেনে। তাদের সাথে সেই ঘোড়ার গাড়িটি। যেটিতে করে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল।
টিংটিংয়ের হ্রেষাধ্বনি কানে যেতেই তারা সতর্ক হয়ে এদিকওদিক তাকাতে লাগলো।
অপরূপা লুকিয়ে পড়লো।
তারা নিজেদের মধ্যে আবারও কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের শেরহামের কয়েকজন সৈন্যরা কয়েকটা মেয়েকে নিয়ে এসে ঘোড়ার গাড়িতে তুলে দিল। মেয়েগুলো বাঁচার জন্য হাঁসফাঁস করছে। তাদের হাতপা মুখ বাঁধা। যুবতী সুন্দরী মেয়ে। অপরূপা ধনুক নিয়ে তীর ছুঁড়লো অতি সন্তর্পণে। একটা তীর গিয়ে গেঁথে গেল সেই জাদুকরের বাহুতে। অন্যটা শেরহামের সৈন্য মুরাদের বাহুতে। ঘোড়ার তীব্র হুংকার, আর পরপর তীর ছুটে আসায় তার কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। দ্রুতগতিতে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে ছুটে পালালো। অপরূপা আফসোস-আক্ষেপ করে ‘চ’ কারান্ত শব্দ করে মহলে ফিরে এল।

এদিকে চোখ ছুটতেই শেরহাম টের পেল তার গায়ের উপর তটিনীর পা দুটো তোলা। সে সরিয়ে দিতেই তটিনী ব্যাথায় কুকিয়ে উঠতেই শেরহাম বলল,

‘ পা সরা। মাথা খারাপ করবি না। ‘

তটিনী কোকাতে কোকাতে পা দুটো আরও আরাম করে তুলে দিল। শেরহাম সরিয়ে কক্ষের বাইরে এসে দ্বিতল চত্বরে দাঁড়াতেই মহলের সদর দরজা ঠেলে ধনুক হাতে অপরূপাকে প্রবেশ করতে দেখলো। পেছনে তটিনীও দাঁড়ানো। অপরূপাকে এই বেশে সে নিজেও স্তব্ধ। এতরাতে কোথায় গিয়েছিল রূপা?

চলবে…
রিচেক করা হয়নি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে