Sunday, October 5, 2025







প্রিয় বেগম পর্ব-২৪

#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_২৪
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

ঘটনাটির পর শেহজাদ মহল ছেড়ে বেরিয়ে যায়। কারো কথা শোনে না। বারণ মানে না। অম্বরের বুকে যেমন ঘোর অমানিশা ঠিক তেমন মহলের ভেতরেও । অন্দরমহলে খোদেজার তীব্র আহাজারিতে সকলের হৃদয়ভার।
“আপনি আমার আম্মা নন! তাহলে আমার আম্মা কে?” প্রশ্নটা তার মায়ের মনকে তীব্র আঘাত করেছে। যার মুখের দিকে তাকালেই তার জীবনের সকল অপূর্ণতা, দুঃখ, পুরোনো ব্যাথা ঘুঁচে যেত আজ তার প্রশ্ন মায়ের হৃদয়ে ঝড় তুলে দিয়েছে। খোদেজার বুকের ভেতরটা ব্যাথায় খিঁচিয়ে ধরে আছে। বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে সে কেঁদে যাচ্ছে। শাহজাহান সাহেব পা ফেলে ফেলে অন্দরমহলে খোদেজাকে দেখে গেলেন। দূরে দাঁড়িয়ে দেখলেন। লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন।
হামিদা সায়রা শাহানা তটিনী সবাই মিলে খোদেজাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে শান্ত হচ্ছে না। নিজেকে শান্ত করতে পারছেনা। তার তিনটা বাচ্চা গর্ভে মারা গেল। আর তিনটে কোলের বাচ্চা চারমাস, ছ’মাস, সাতমাস বয়সে । একটা বাচ্চাও বাঁচাতে পারেনি। খোদেজা তখন সন্তানশোকে অর্ধমৃত, পাগলপ্রায়। খায় না, ঘুমায় না, কথা বলে না, থেকে থেকে কাঁদতে থাকে ঠিক সে-সময় সারা মহল আলোকিত করে শেহজাদের আগমন ঘটলো। তাকে নিয়ে এলেন সম্রাট সলিমুল্লাহ। হৃষ্টপুষ্ট শরীরের একটা তুলতুলে শিশুকে হাত পা নেড়ে কাঁদতে দেখে খোদেজা বিচলিত হয়ে উঠে, ড্যাবড্যাব করে তাকায়, শীর্ণমুখে হাসে, কাঁপা-কাঁপা হাতে শিশুটির হাত ছুঁই, গাল ছুঁই, কোলে নেয়। এক লহমায় তার সমস্ত কষ্ট ধুঁয়েমুছে যায় সেই বাচ্চাটির ছোঁয়ায়। খোদেজা তাকে আদর করে হাউমাউ করে কাঁদে। বুকের সাথে চেপে ধরে রাখে। পরম মমতায় সেই শিশুকে মায়ের ভালোবাসায় মুড়িয়ে রেখে একটু একটু করে বড় করে তোলে। শেহজাদের সাথে এই মহলের কারোরই মিল নেই। চেহারায় একেবারেই নয়। গুণে সে অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। খুবই অল্পবয়স থেকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে থাকে সে। ছয় বছর বয়স থেকেই সে সম্রাট সলিমুল্লাহ’র সাথে মজলিশে বসতো। দেশ দেশান্তর হতে আগত বিদ্বান ব্যক্তিবর্গরা আশ্চর্য হতেন এক অল্পবয়সী সুদর্শন বালক কি সুন্দর করে মজলিশে ফয়সালা দিতে সাহায্য করছে দাদাজানকে। তার এই উত্তম গুণাবলিতে মুগ্ধ হয়ে পাশ্ববর্তী গ্রামপ্রধান তাকে সুবর্ণখচিত বাহুবন্ধনী উপহার দেয়। এছাড়া নানান উপহারসামগ্রী আর সম্মাননা পায় সে। তাকে দেখে খোদেজার বুক গর্বে ফুলে উঠে। শেহজাদ যখন আম্মা আম্মা বলে ডেকে সারা হতো খোদেজার মনে হতো সে সবচাইতে সুখী একটা মানুষ। তার একটা রূপকথার রাজপুত্তুর আছে। সেই রাজপুত্তুর একটু একটু করে পরিণত হলো রাজপুরুষে। আজ সে শুধুই মায়ের গর্ব নয় আজ সে পুরো রূপনগরের গর্ব। যে অন্ধকারে খোদেজা তাকে বড় করেছে পরম যত্নে আগলে রেখে সেই অন্ধকার আজ আবারও খোদেজার সব শান্তি বিনষ্ট করে দিয়েছে। আড়ালে দাঁড়িয়ে খোদেজার আহাজারি দেখে অপরূপার খারাপ লাগলো। মায়ের আদর ভালোবাসা বুঝি এমন হয়? গর্ভের সন্তান না হয়েও উনি কতটা ভালোবাসে, আর তার মা তাকে রেখে চলে গিয়েছিল! জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। একজন আদর্শ মা হওয়া অনেক সংগ্রামের।
পেছন থেকে শক্তপোক্ত একটা হাত তার মুখ চেপে ধরলো হঠাৎ। নিয়ে গেল সেখান থেকে।

কক্ষে নিয়ে গিয়ে শেরহাম তার মুখ ছেড়ে দিতেই অপরূপা অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল,

আপনার হয়েছেটা কি? কি চান আপনি? দূরে যান।

গেলাম। ওখানে কি করছিলে? ওদের নাটক দেখছিলে? ওসব অনেক পুরোনো নাটক। তোমার হাসিখুশি থাকা দরকার। পরশু আমাদের নিকাহ।

অপরূপা আঙুল তুলে বলল,
আপনাকে আমি নিকাহ করব না। কিছুতেই না। আপনি আমার কথা রাখেননি। আমিও রাখব না। গলায় তলোয়ার ধরলেও আমি আপনাকে নিকাহ করব না।

শেরহাম কটমটে গলায় তেড়ে এসে বলল,

ও পালিত পুত্র সেটা বলেছি। ভুল কি বলেছি? আমি কি মিথ্যে বলেছি কিছু? আমাকে রাগাবে না অপা।

অপরূপা চেঁচিয়ে বলল,
আপনার রাগে আমার কিছু যায় আসে না। আপনার মতো মানুষের সাথে জীবন কাটানো সম্ভব না আমার পক্ষে। এর চাইতে মরে যাওয়া ভালো।

শেরহাম ওর দুবাহু দেয়ালে চেপে ধরে বলল,
আমি দেখব কি করে নিকাহ না করো তুমি। করতেই হবে।

অপরূপা সিক্তনয়নে তাকিয়ে বলল,
আপনি আমায় জোর করবেন?

হ্যা জোর করব। আমার রাজত্ব চাই, রাণী চাই, এই মহল চাই। নইলে সব ধ্বংস করে দেব। তুমি আমার অবাধ্য হবে না অপা।

আপনি এত নিকৃষ্ট! আমি মানুষ চিনতে এত ভুল কি করে করলাম? আপনার কি এই মহলের কারো দুঃখে কষ্ট হয় না? নিজের ভাইকে কি করে এত কষ্ট দিলেন? একজন মায়ের কাছ সন্তানকে দূরে করে দিলেন। আপনার ভালো হবে না একটুও। সবার অভিশাপে শেষ হয়ে যাবেন আপনি।

অ্যাই চুপ একদম চুপ।

অপরূপার হাত আরও জোরে মোচড়ে ধরলো সে। অপরূপা তার হাতে কামড় বসালো জোরে। শেরহাম ব্যাথা পেয়ে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে শক্তপোক্ত চড় বসাতেই অপরূপা ছিটকে পড়লো। আর্তনাদ করে উঠে অপরূপা পুনরায় ফিরে চাইলো। কেঁদে উঠে বলল,

আপনার পাপ আমি ধ্বংস করে দেব। আপনাকেও করব। আর বরদাস্ত করব না এসব।

শেরহাম তেড়ে গিয়ে ওর গলা চেপে ধরে। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। অপরূপার চোখ উল্টে আসে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সারাশরীর তড়পাতে থাকে। শেরহাম শেষ মুহূর্তে এসে ছেড়ে দেয়। অপরূপা কাশতে থাকে। কাশতে কাশতে চোখ লাল হয়ে আসে। নিঃশ্বাস উঠানামা করতে থাকে। শেরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

পরশু নিকাহ পড়ানো হবে। নইলে চড়াতে চড়াতে গাল লাল করে ফেলতাম। শুধু একবার যদি ওর হয়ে কথা বলো কষ্ট দিয়ে মারব। তোমাকেও মারব, বাকিদেরকেও মারব।

অপরূপার চোখবেয়ে নীরবে জল গড়ায়। কথা বলতে পারেনা সে।
কাঁদতে কাঁদতে অনেকক্ষণ হাঁপায়। বলে,

একশবার বলব। উনিই সম্রাটের যোগ্য। উনিই যোগ্য নেতা। আপনি উনার নখের যোগ্যও নন। আপনার দাদাজান ঠিক মানুষের হাতে রাজত্ব তুলে দিয়েছেন।

অপা গায়ে হাত তুলতে বাধ্য করবে না।

বাকি রেখেছেন কোথায়? আমি অর্ধমৃত হয়ে গেছি আপনার এই রূপ দেখে। এমন কঠোর মানবকে আমি ভালোবাসিনি। আমি যাকে কঠোর নির্মম ভেবেছিলাম এই মহলে এসে উনিই সুপুরুষ। আপনি একজন ডাকাত, অভিশপ্ত সন্তান, নিষ্ঠুর ভাই, অযোগ্য রাজা। আপনাকে আমি ঘেন্না করি। আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন। ছলনা করে ফাঁদে ফেলেছেন। কেন এমন করলেন?

শেরহাম মাথা ঠান্ডা করে ওর সামনে এসে বসে। গালে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে বলে,

অপা আমার দিকে তাকাও। আমি তোমার সাথে কোনো ছলনা করিনি। না তোমাকে ঠকিয়েছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তুমি আমাকে। তোমাকে এসব কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। না শেহজাদ, না এই মহলের কোনোকিছু নিয়ে। কিছু নিয়ে ভাববে না তুমি। তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তা দেব। তুমি শুধু আমাকে নিয়ে ভাববে।
আমি আমার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য এতকিছু করছি। নইলে কিছু করতাম না।

অপরূপা ওর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
আমার কথার নড়চড় হবে না। আপনাকে ভালোবাসিনা আমি। মরে গেছে সেসব ভালোবাসা। যে কুফরী কাজে লিপ্ত আমি তাকে ভালোবাসিনা।

শেরহাম ওর মুখের দু’পাশে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে তুলে বলল,

তো কাকে ভালোবাস? এখন আবার বলো না ওই শেহজাদের মতো কাউকে তোমার ভালোবাসা উচিত ছিল।

অপরূপা ওর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, ছিঃ মুখে কিছু আটকায় না।

কিছু আটকাবে কেন? যেভাবে গান গাইছো তাই মনে হচ্ছে। লাশ বানিয়ে ফেলব বলে রাখলাম ।

শেষের কথাটা ধমকে বলে শেরহাম।

অপরূপা মেঝেতে থু থু ছিটিয়ে বলে,
আপনি ভালোবাসা শব্দটাকে অপবিত্র করে ফেলেছেন। আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার নোংরা কাজে আপনাকে সায় দেব?

শেরহাম রাগ সামলাতে না পেরে বলল,
আরেহ তোমার সাথে এত কথায় বা কেন বলছি আমি। কে তুমি? কি যায় আসে তোমার এই ধমকাধমকিতে? আমার একটা সন্তান চাই নয়ত তোমাকে কি দরকার? আমার উত্তরসূরি প্রয়োজন। ব্যস, তারপর তোমার মুক্তি। অবশ্য সন্তান রেখে তুমি যাবেই বা কোথায়? তোমাকে থেকে যেতে হবে। আমার সাথে থেকে যেতে হবে এখানে। সন্তান রেখে কোনো মা পালাতে পারে বুঝি? আচ্ছা যাও। তুমি যদি চাও তাহলে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষের কাছে পাঠিয়ে দেব। কোনো সমস্যা নেই। টাকা বিলিয়ে দিলে বউ হতে রাজী অনেক মেয়ে। তোমাকে তোমার মজনুর কাছে ছুঁড়ে ফেলে আসবো। ও আবার আমার জিনিসের প্রতি অনেক আক্রোশ। তা হোক নিত্যনতুন বা ব্যবহৃত।

অপরূপার হাত পা অসাড় হয়ে আসে। চোখ ফুঁড়ে যেন রক্তবর্ষণ শুরু হয়। টেনে ধরে শেরহামের কাঁধের পোশাক। খামচে ধরে ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় জানতে চায়,

কে? এসব কার কথা বলছেন?

শেরহাম ওর কানের কাছে মুখ বাড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,

সুলতান মহলের পালিতপুত্র।

অপরূপা এক ঝটকায় সরে পড়ে। তার অক্ষিকোটর হতে চোখের জলের সাথে বিস্ময় বিস্ফুরিত হয়। একদৃষ্টে শেরহামের মুখপানে তাকিয়ে থাকে। অস্বাভাবিক মনে হওয়ার কারণে নয়, বরং নিজের ভাবনা সত্যি হওয়ার কারণে অপরূপা ঝটকা খেল। হতচকিত হলো। তাকে মহল থেকে বের করে দেয়ার দিন তার মন ঠিক এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। তাছাড়া তার সাথে উনার কোমল নমনীয় ব্যবহার, মোহনীয় দৃষ্টি, তার অসুস্থতা, বৈরাগ্য নিয়ে এত উৎকন্ঠা সবকিছু একটা কথার ইঙ্গিত করতো। তারমানে সুভার কথাটাও ঠিক ছিল? প্রতিবার যাত্রাপালায় গ্রামে গেলে উনি তার খোঁজ করতেন?
অপরূপা হাত পা কুড়িয়ে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে। সারা শরীর কাঁপে তার ক্রন্ধনে। বিড়বিড়িয়ে বলে, হায় আল্লাহ এ কেমন সংকটে ফেললেন আপনি?

শেরহাম বলল,
ও তোমার খোঁজ নিত তাই তুমি আমার লক্ষ্যবস্তু। ঠিক সে কারণেই আমি তোমাকে নিশানা করেছি। আর তুমি আমাকেই ভালোবাসলে। আমি যতই নিষ্ঠুর হই না কেন তোমাকে কিন্তু ভালোবাসি। তোমার প্রেমে না পড়ে থাকা যায় না। আর আমি তোমাকে নিকাহ করব। চোখের সামনে ওকে একটু একটু করে ধ্বংস হতে দেখবো। রাজত্ব নেই, প্রিয়া নেই। কি দশা হবে ওর ভাবতে পারছো? আমার এমনিতেও এমন একজনকে দরকার ছিল যে আমার সন্তানের মা হবে। পেয়েও গেলাম। এক ঢিলে দুই পাখি মারলাম ।

অপরূপা মাথা তুলে তাকায়।
উনাকে ভাঙার জন্য আমাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন?

শেরহাম মেজাজ সামলে রেখে বলে,
তুমি তো ওকে ভালোবাস না। তাহলে অযথা প্রশ্ন করছো কেন? তুমি আমাকে ভালোবাস। অস্বীকার করতে পারবে ভালোবাস না? আমাদের সংসার হবে। সন্তান সন্ততি হবে। ভালো থাকবে তুমি। আমি তোমার নিষ্ঠুর পতিদেব হব তুমি আমার নিষ্ঠুরপ্রিয়া বিন্দুবাসিনী। পরম ওর প্রাণোবধূকে মেরেছে ছলনা করার জন্য। তুমিও যদি এমন করো তোমাকেও মেরে ফেলব আমি। তাই সাবধান।

অপরূপা মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলল,
বাঁচার চাইতে আপনার মতো মানুষের সাথে ছলনা করে মরা ভালো।

সাথে সাথেই গুলির আওয়াজ কানে আসে সবার কানে। সারা মহলের সকলেই আঁতকে উঠে। অপরূপা দাঁড়িয়ে পড়ে। দরজার দিকে ছুটে যায় কৌতূহল বশত। শেরহাম ওর হাত টেনে ধরে ওর মুখের দুপাশে জটলা পাকানো কোঁকড়াচুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে,

তুমি এখন থেকে এই কক্ষে বন্দি থাকবে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে সব ধ্বংস করে দেব। তোমার কারণে মহলে আগুন জ্বলবে।

অপরূপা ওর সাথে ধস্তাধস্তি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে বলে,

নাহ, নাহ।

****

সাফায়াত অন্দরমহলে পা রাখতেই সবাই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো শেহজাদের খোঁজ নিতে।
খোদেজা দাঁড়িয়ে পড়ে কান্না আটকে বলল, শেহজাদ কোথায়? এখনো ফিরেনি? কোথায় গিয়েছে?
সাফায়াত শুকনো মুখে জবাব দিল, বাগান প্রাঙ্গনে বসে আছেন। উনাকে কেউ বিরক্ত করবেন না।
খোদেজা কান্নার হেঁচকি তুলে বলল,
আমি যেতে পারব না?
না পারবেন না। উনি একা থাকতে চাইছেন একা থাকতে দিন।
খোদেজা কেঁদে উঠে পুনরায়। সায়রা সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
আম্মা কাঁদবেন না। ভাইজান কখনো অতটা কঠোর হবেন না যে আপনাকে ছেড়ে যাবে। আপনার পুত্র আপনারই আছে। ভাইজান আপনাকে অনেক ভালোবাসেন। আপনি জানেন ভাইজানের রাগ, অভিমান বেশি তাও কেন কষ্ট পাচ্ছেন?
খোদেজা মাথা নাড়ে। সবাইকে কি করে বুঝাবে তিনি রূপা মেয়েটিকে দূরে সরিয়ে রেখে ছেলের মনে কষ্ট দিয়েছেন। তিনি এখন কি করবেন? এই সময় শেহজাদের পাশে রূপা মেয়েটাকে জরুরি ছিল। যে ভালোবেসে ভরসা যোগাবে। যাকে পাশে দেখে শেহজাদ শক্তি পাবে। কিন্তু তা কখনোই সম্ভব নয়। শেরহাম ওর মনের কথা জানতে পারলে আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠবে। খোদেজা হু হু করে কেঁদে উঠে।

বিকট শব্দে গুলি বর্ষণ হয় হঠাৎ। শুধু একটা গুলির আওয়াজ সারা মহল কাঁপিয়ে তুলে যেন। বাগান প্রাঙ্গন থেকে আওয়াজটা এসেছে। সকলেই ভয়ে কেঁপে উঠলো। খোদেজা কান্না থামিয়ে বলল,

আমার শেহজাদ!!

সায়রা সাফায়াতের কাছে হাতের বাহু ঝাঁকিয়ে বলে,

গু*লির আওয়াজ কোথা থেকে এল?

সাফায়াত হতচকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমতাআমতা স্বরে বলে,

আমি দেখছি। কিছু হয়নি।

সাফায়াত ছুটে। তার পেছন পেছন সায়রা তটিনীরা সবাই ছুটে যায়।

নীচু ছোটখাটো সাদা চাদরে ঢাকা টেবিলের চারপাশে ঘেরুয়া কেদারার একটা কেদারায় শেহজাদ গা ছেড়ে বসা। কেদারাটি দুলছে। হাতে মস্তবড় বন্দুকটি হাত খসে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা । শাহজাহান সাহেব, শেরতাজ সাহেবের পেছন সাফায়াত এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। সাফায়াতকে সরিয়ে সায়রা শেহজাদের কাছে ছুটে সামনে গিয়ে বসে। বন্দুকটা নিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে বহুকষ্টে। শেহজাদের মুখ ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে ডাকে, ভাইজান!

শেহজাদ ঝট করে ওর রক্তাভ চোখদুটো মেলে।
সায়রা কাঁদতে থাকে। উরুতে মাথা রেখে পা দুটো আঁকড়ে ধরে কাঁদে। শেহজাদ ওর মাথায় হাত রেখে বলে,

কাশীম ছুঁড়েছে গুলি। ভেতরে যাও।

সায়রা মাথা তুলে বলে, আপনি এখন বলবেন না তুমি আমার বোন নও। আমাকে ভাইজান ডেকো না। আপনি কবে থেকে রক্তের সম্পর্ক নিয়ে এত ভাবতে শুরু করেছেন? সারা নগরের মানুষ আপনার মুখ চেয়ে থাকে। ওদের সাথে কি আপনার রক্তের সম্পর্ক আছে? তাহলে ওরা কি আপনাকে ভালোবাসে না? আপনি কি বাসেন না?

শেহজাদ বলল,
তুমি ছোট। সাফায়াতের সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নাও। ওর সাথে মেজাজ দেখিয়ে কথা বলেছ। ভেতরে যাও।

সায়রা সাফায়াতের দিকে তাকিয়ে কান্না থামিয়ে বলে,

তা অবশ্যই করব। আপনি দেখুন সবাই চলে এসেছে।

শেহজাদ দাঁড়িয়ে পড়ে। জলদগম্ভীর স্বরে বলে,

আমার কি একটু একা থাকারও মুরোদ নেই?

খোদেজা পেছনে এসে দাঁড়ায়। বলে,

আমার সাথে কথা বলো শেহজাদ।

শেহজাদ সরে গিয়ে বলে,

আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। আমাকে একা থাকতে দিন।

শাহাজাহান সাহেব বললেন,
আমাদের উপর রাগ থাকলে ঝেড়ে ফেলো। ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাওয়ার চাইতে ঝেড়ে ফেলা ভালো।

শেহজাদ উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
আচ্ছা! তাহলে উত্তর দিন কেন এতদিন আমার কাছ থেকে সত্যিটা লুকোলেন? কোনো উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের? কেন ভাইজানের মুখে আমাকে শুনতে হলো আমি এই মহলের কেউ নই? উত্তর আছে আপনাদের কাছে? আছে?

ওর ধমকের সুরে কেঁপে উঠলো সবাই।

তোমার দাদাজান বলতে বারণ করেছেন তাই বলিনি।

আমার আদর্শ ছিলেন উনি। উনি আমার ভালো চাইতে গিয়ে যে আরেকজনের সাথে অন্যায় করেছেন। এতে কি আমি তার শত্রু হয়ে যাইনি?

তোমার দাদাজান মানুষ চিনতেন তাই তোমাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন।

শেহজাদ লম্বা পা ফেলে এগিয়ে এসে বলে,
আপনার বিবেক কি বলছে? বিবেককে প্রশ্ন করুন আপনি শেরহাম সুলতানের জায়গায় থাকলে কি করতেন? কেন উনি প্রতিহিংসায় জ্বলবেন না? কেন আমাকে শত্রু ভাববেন না? আমি কি উনার সাথে অন্যায় করিনি? একজন পালিতপুত্র হয়ে যদি আমি সম্রাটের আসনে বসে থাকি উনি উত্তরসূরী হয়ে কেন তাজ্যপুত্র হবেন? কেন বঞ্চিত হবেন? আমি সবাইকে উত্তম ফয়সালা দিয়ে থাকি আর আমিই যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে আদর্শ হলাম কি করে?

শেরতাজ সাহেব বলেন,
কি চাইছো তুমি? ওর হাতে তুলে দেবে সব?

হ্যা দেব। উনি সুযোগ চাইছেন সুযোগ দেব। আমার পদমর্যাদা চাই না। আমার চাই শান্তি।

ও তোমাকে শান্তি দেবে বলে মনে হয়?

শান্তি এখনও পাচ্ছি কোথায়? আমার শান্তি দরকার। এই মহলে শান্তি নেই। কোনো অপরাধ না করেও আমি শাস্তি পাচ্ছি রোজ। এই মহলে আমি থাকব না।

ও চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই খোদেজা পথ আটকিয়ে বলে,

পুত্র! তোমার মুখ চেয়ে সবাই বাঁচার শক্তি পায়। তুমি আনন্দে থাকলে সবাই আনন্দিত। তুমি কষ্টে থাকলে সকলেই কষ্টে থাকে। তুমি এই মহলের প্রাণ। তুমি মহল ছেড়ে কোথায় যাবে? আমাদের সবাইকে এভাবে শাস্তি দিওনা।

আমার কারণে কেউ কষ্ট পাবে না। কেউ না। না এই মহলের কেউ, না নগরবাসী।

খোদেজা ওর মুখ ধরে কেঁদে বলে, আমায় আম্মা ডাকলেনা একবারও! আমি তোমায় পেটে ধরিনি বলে কি মা হতে পারিনি? তোমার কি কখনো মনে হয়েছিল আমি তোমার পালিত মা? নাড়ি কাঁটা ধন না, তুমি আমার হৃৎপিণ্ড। তুমি তোমার আব্বাকে জিজ্ঞেস করো আমি কার মুখ চেয়ে বেঁচে উঠেছি। জিজ্ঞেস করো কত ঝড় তুফান সামলে তোমাকে আগলে রেখেছি।

আমি মহল ছেড়ে দেব বলেছি। আপনাদের না।

খোদেজা তার গালের দুপাশে হাত চেপে ধরে মুখটা টেনে এনে বলে,
তাহলে একবার আম্মা ডাকো। মনে হচ্ছে কতদিন শুনিনা সেই ডাক। একবার ডাকো। একবার।

শেহজাদ পিছিয়ে গিয়ে হাতের বাহুতে মুখ মুছে বলে,

আমাকে আর মায়ায় জড়াবেন না আম্মা। আমি ক্লান্ত। বিশ্রাম চাই।

হেঁটে অতিথিঘরের দিকে চলে যায় সে। খোদেজা কান্নায় ভেঙে পড়ে। শাহজাহান সাহেব এসে ধরেন। বলেন, পাগল হয়ে গেলে বেগম? তোমাকে আম্মা ডেকেছে শুনলে না?

ও তো আমার কথা বিশ্বাস করলো না। ও আমার কি ওকে একটু বুঝিয়ে বলো।

সায়রা এসে মাকে বলে, আম্মা ভাইজান রাগের মাথায় কি না কি বলছে কেন আপনি এমন করছেন?

খোদেজা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
হায় আল্লাহ! ওর কষ্টগুলো আমাকে দিন।

________________

নাচনেওয়ালীরা এসে হাজির মহল প্রাঙ্গনে। শেরহাম তাদের এনেছে। মহলের কেউ তাদের নিকাহ উপলক্ষে খুশি নয়। তাই দুদিন ধরে তারা গানবাজনা করবে। হৈহল্লায় মাতিয়ে রাখবে। দলে দলে দলে গান বাজনার লোক, আর নাচনেওয়ালীরা এসে ভরে গেল। অতিথিশালা ভর্তি হয়ে গেল। সেই অতিথিশালাটি মহলের উত্তরপাশে। তার একটি কক্ষে শেহজাদ ঘুমন্ত।
মহলের আগাগোড়া সাজানোর কাজ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে। তার রক্ষীদের সাথে শেহজাদের রক্ষীদের একপ্রকার তলোয়ার যুদ্ধ লেগে গেল সেসময়। শেরহামের আদেশে যুদ্ধ থামলো। দুজন রক্তারক্তি হলো। তারা শেহজাদের রক্ষী।
দুপুর হতে হতে মহল আর যতদূর রাস্তা ছুঁয়েছে ঠিক ততদূর আলোরবাতি দিয়ে সাজালো শেরহাম। সিভান তা দেখে মহাখুশি। শুধু মনখারাপ হয় যখন শেহজাদ ভাইজান আর সুন্দর বউয়ের কথা মনে পড়ে। দুজনকেই সে দেখছেনা অনেকক্ষণ।
ঘাটে দুটি জাহাজ এসে থেমেছিল। শেহজাদ সেখানে গিয়েছে। জাহাজের মাল গুদামে মজুতকরণ করার পর তার দায়িত্ব শেষ। সে সেইসব কাজ সম্পাদন করে মহলে ফিরে দেখলো সারামহল আলোয় ঝলমল করছে। প্রাঙ্গনে পা রাখতেই গানের তালে তালে নাচছে একদল নাচনেওয়ালী।
একদল যুবতী অপরূপাকে সাজিয়ে নিয়ে এল। তার পড়নে সাদা ঘাগরা, মাথা গোলাপী ঝালর দ্বারা আবৃত। হাতে পায়ে সুশোভিত লঙ্কার। অপরূপা সবাইকে দেখতে দেখতে হঠাৎ শেহজাদের দিকে চোখ যেতেই থমকে যায়। শেরহাম ছুটে এসে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে নাচনেওয়ালীদের মাঝখানে অপরূপাকে দাঁড় করিয়ে দেয়। অপরূপা ফের শেহজাদের দিকে তাকায়। এখন তার ভরসা এই মানুষটা।

শেহজাদ চোখ সরিয়ে পা বাড়াবে ঠিক তখনি শেরহাম ওর পথ আটকে দাঁড়ায়।

ফিরে চাবি দিবি বলেছিলি।

শেহজাদ পকেট থেকে চাবি নিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে দিল। শেরহাম কেড়ে নিয়ে বলল,

যাহ। তোর এখানে কাজ নেই। সায়রাদের পাঠিয়ে দে।

শেহজাদ পা বাড়ালো। সিভান এসে ওর পা আঁকড়ে ধরে বলল,

ভাইজান সুন্দর বউকে দেখো।

শেহজাদ ওকে কোলে তুলে নিয়ে ওর কক্ষের দিকে পা বাড়িয়ে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে বলে,

এটা সুন্দর বউয়ের হাতে গুঁজে দিয়ে আসবে। কেউ না দেখেমতো।

সিভান ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল, আচ্ছা।

সে দৌড়ে দৌড়ে চলে গেল। অপরূপাকে ঘিরে ধরে সবাই নাচছে। সে কাগজটা নিয়ে তাদের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরূপার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে করতে ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। শেরহাম এসে ওকে তুললো। দেখলো একটা কাগজ পড়ে আছে ওর বুকের নীচে।

চলমান……..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ