প্রিয় বেগম পর্ব-১৭+১৮

1
1242

#প্রিয়_বেগম
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #পর্ব_১৭
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

শাহানার ক্রন্দনে মহলের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো। অনুপমা আর হামিদা মিলে তাকে শান্ত করানোর চেষ্টায় রত। মাথায় পাগড়ি প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে কক্ষ হতে হন্তদন্ত পায়ে বেরিয়ে এল শেরহাম। সোজ সদর কক্ষ পার হয়ে আসার সময় সাফায়াত তার পথ আটকে বলল,
‘ ঠিকানা দাও, কোথায় ওকে রাখা হয়েছে। ‘
শেরহাম উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। সাফায়াত কাঁধের পোশাক আঁকড়ে ধরে বলল,
‘ আমার উত্তর চাই। ‘
শেরহাম আঁকড়ে ধরা পোশাকের দিকে চোখ নীচু করে তাকিয়ে বলল,
‘ বিয়ের রাতে হাত ভাঙতে চাইছিস? নাকি একেবারে হারাতে? ‘
সকলেই আঁতকে উঠলো। সায়রা এসে সাফায়াতের হাত থেকে পোশাক ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
‘ কেন এখন বিবাদে জড়াচ্ছেন? ওদিকে কত বিপদে না আছে। ভাইজান আপনার কারণেই তো আপুকে অপহরণ করা হলো। আপনি কেন ঠিকানা বলছেন না? ‘
শেরহাম দাঁত চিবিয়ে বলল,
‘ পাঁচশোরও অধিক ডাকাত আছে ওখানে। এরা দলবল নিয়ে গেলে তনীকে আস্ত রাখবে ওরা?
সাফায়াত চেঁচিয়ে উঠে বলল,
‘ ওর কিছু হলে তোমার লা**শ ফেলে দেব আমি। অনেক কষ্ট দিয়েছ ওকে। ‘
শেরহাম আবারও পা বাড়ালো কথা কানে না নিয়ে। শেরতাজ সাহেব পথরুদ্ধ করে বললেন,
‘ ঠিকানা দাও। শেহজাদ আর সাফায়াত যাবে। তোমার বিশ্বাস নেই। তুমি নিজেই একটা ভক্ষক তুমি কি রক্ষা করবে তাকে। ‘
শেরহাম বলল,
‘ এই বুড়ো। সরে দাঁড়াও। ধাক্কা মেরে অক্কা দিতে দু মিনিট লাগবে না আমার। আমার মায়ার শরীর নয় যে আমি ভাবলো তুমি আমার জন্মদাতা। তোমার ছোট ছেলের কথা ভেবে সরে দাঁড়াও। ‘
শেরতাজ সাহেব ওর গালে কষে চড় বসাতে দেরী করলো কিন্তু সে শেরতাজ সাহেবকে ধাক্কা মারতে দেরী করলো না। ভাগ্যিস শেহজাদ এসে ধরেছে!

শেহজাদ শেরতাজ সাহেবকে পড়া থেকে আটকে রুক্ষ স্বরে বলল,

‘ সবার কি মাথা খারাপ? এসময় নাটক করছো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে? ভাইজান তুমি ঠিকানা দাও বাড়াবাড়ি না করে। তুমি নিজেই জানো তনী নিষ্পাপ মেয়ে। ‘

‘ তোকে যেতে হবে না। তোর বউকে পাঠা। তনীকে ফিরিয়ে দেবে ওরা। পারবি? বুকে সে সাহস আছে? ‘

‘ আমার বেগমকে রক্ষা করা যেমন আমার ধর্ম, তোমার বেগমকে রক্ষা করাও তোমার ধর্ম। জীবনে ভালোকাজ তো কিছু করোনি অন্তত যে মেয়েটা তোমাকে তিনবেলা বেড়ে খাওয়াতো তার কথা ভাবো। ‘

শেরহাম বলল,
‘ পথ ছাড়। আমি যা ভালো বুঝি তা-ই করব। এত ফটরফটর না করে পারলে কবর খুঁড়ে রাখ। ‘

সকলেই স্তব্ধ। আঁতকে উঠলো এমন কথায়।
শাহানা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলল,

‘ তুমি কি করে এমন কথা মুখে আনতে পারো? ওর জীবনে অভিশাপ তুমি । আমি আমার মৃত বাবার সিদ্ধান্তকে ঘেন্না করি। তিনি নিজমুখে আমার মেয়ের ধ্বংস বলে গিয়েছেন। তোমার কখনোই ভালো হবেনা শেরহাম। ও অপরূপা নয় যে আত্মরক্ষা জানে, এমন কোমলপ্রাণ মেয়ের সাথে এত নির্দয় কি করে হতে পারো তুমি? ‘

শবনম কাঁদতে কাঁদতে মাকে শান্ত করায়।

‘ আম্মা এমন করবেন না। ‘

সাফায়াত গর্জে বলল,

‘ সায়রা ছাড়ো আমাকে। আজকেই সবকিছুর ইতি ঘটাবো আমি। কবর আজকে তোমাকে দেব আমি।’

শেরহাম ধারালো তলোয়ারের খাপ পিঠের পেছনে গেঁথে বেরিয়ে গেল হনহনিয়ে। শেহজাদ ডেকে বলল,

‘ কাশিম ওর পথ আটকাও। যতক্ষণ না ঠিকানা দিচ্ছ ততক্ষণ তোমাকে ছাড়বো না আমি। ‘

শেরহাম ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। তলোয়ারের খাপ হতে তলোয়ার বের করতেই শাহজাহান সাহেব এসে শেহজাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে,

‘ কেন ওকে আটকাচ্ছ? ও চেনে ওসব ডাকাতের আস্তানা, ওর চলাফেরা সেখানে। সেখানে তোমরা কিছু করতে পারবে না। কাশিম পথ ছাড়ো। ‘

সৈন্যরা সরে দাঁড়ালো।
শেরহামের হিংস্র কালো ঘোড়াটি হুংকার তুলছে। শূন্যে পা তুলে মাটিতে রাখতেই মাটিসহ কাঁপছে।
শেরহাম পিঠে চড়ে বসতেই ছুটতে ছুটতে একটা পুটলি নিয়ে এল সোহিনী। শেরহামের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘ ভাইজান আপনি যা যা বলেছেন সব দিয়েছি। আপুর কোনো ক্ষতি যেন না হয়। আমার পর যদি কেউ আপনার ভালো চায় সেটা আপু। ‘

শেরহাম পুটলিটা নিয়ে বলে,

‘ অকারণে মহল থেকে বের হবি না। যারা মরতে চায় তাদের বের হতে বলবি। যাহ। ‘

সোহিনীর মন খারাপ হয়ে আসে। শেরহামের তেজস্বী ঘোড়াটি টগবগিয়ে ছুটে চলে ধুলো উড়িয়ে। শেরহামের সৈন্যরা অতিথিশালায় থেকে যায়। শেরহামের পেছন পেছন শেহজাদও বেরিয়ে যায় সাফায়াতকে নিয়ে। বেশকিছুদূর যাওয়ার পর পথ হারিয়ে অন্য পথে ছুটে চলে তারা। পরাগ পাহাড়ে রাখা হয়নি তটিনীকে। রাখা হয়েছে জংলাহাঁটার একটা ডাকাত আস্তানায়। সেটি এক ভয়ংকর নিষিদ্ধ জায়গা। জনমানবের জন্য ভীতিকর, চারপাশে গা ছমছম করা ভুতুড়ে পরিবেশ। পরাগ পাহাড়ের সেই পথ দিয়ে যেতে যেতে পার হতে হয় একটা ছোটখাটো মরা নদী। সেই নদীর পানির রঙ কালো। নদীটাকে অভিশপ্তও ধরা হয়। ডাকাতদের নৌকা চলে বেশি।
শেরহাম সেই পথেই ছুটে চললো।
পাহাড়ি এলাকার চারদিকে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। দূরের পাহাড়ি জঙ্গল থেকে ভেসে আসে শিয়ালের আর্তনাদ, বিভিন্ন প্রাণীর হাঁকডাক। বনের নিজস্ব প্রাণশূন্য থমথমে শব্দকে নাড়িয়ে দিয়ে সরু পথ অনুসরণ করে চাঁদের নীলাভ আলোয় কুয়াশাজড়ানো অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে মরা নদীর সামনে গিয়ে পৌঁছালো। তার ঘোড়াটিকে নিরাপদ স্থানে বেঁধে। মরা নদীটি পার হওয়ার জন্য উপায় খুঁজতে লাগলো সে। দূরে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আছে এমন কয়েকজনকে একটা নৌকায় চড়ে আসতে দেখলো সে। নিজের হাতের মশালটি ফেলে দিয়ে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলো নৌকাটি ঘাটে পৌঁছার অপেক্ষায়। নৌকাটি ঘাটে পৌঁছালো তখনি দপদপ শব্দে নৌকা হতে নেমে দলসহ কিসের উদ্দেশ্যে যেন হেঁটে যেতে যেতে চোখের আড়াল হলো। তারা আড়াল হতেই সে আড়াল হতে বের হয়ে নৌকাটিতে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। ডাকাত মাঝিটা তার উপর হামলে পড়লো। নখের আঁচড় কাটলো গালে। অনেক কষ্টে শেরহাম তাকে ফেলে গলা চেপে ধরলো। ডাকাতটি খঞ্জর বের করার সাথে সাথে শেরহাম তার মুখে ঘুষি মারলো বার কয়েক। তারপর খঞ্জরটি কেড়ে নিয়ে পেটের মধ্যে দু তিনবার গেঁথে দিল। ডাকাতটি তারপরও ক্ষান্ত হলো না। পেট চেপে ধরে শেরহামকে নৌকা থেকে ফেলে দেয়ার জন্য লাতি বসালো। শেরহাম নৌকা থেকে পড়তে গিয়েও পড়লো না। ডাকাতটা ঢলে পড়লো ধীরেধীরে। শেরহাম তার গায়ের কালো মুখোশ খুলে নিয়ে লাতি মেরে নদীতে ফেলে দেয়। মুখোশ পড়ে নিয়ে দ্রুতগতিতে বৈঠা চালিয়ে নদী পার হলো। নৌকা ঘাটে বেঁধে জংলাহাঁটার ডাকাত আস্তানার দিকে পা বাড়ায় সে। সামনে পাতাবিহীন গাছ দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা। পথেপথে মশাল জ্বালানো। সে একটি মশাল তুলে নিয়ে হাঁটা ধরে। আস্তানায় পৌঁছাতেই দেখতে পায় বাদামী রঙের প্রকান্ড ভয়ংকরী বাসভবন। ডাকতের দলবল দেখতে পেল সে।
দলে দলে গোল গোল হয়ে তার চারপাশে বসে তাস খেলছে অনেকে। কেউ কেউ মদের আসরে বসে একসাথে বসে মদ গিলছে। কালো মুখোশসমেত পোশাক পড়ে থাকায় তাদের একজন ভেবে কেউ তাকে সন্দেহ দেখলো না। মুখটা পুরোপুরি খুললো না, আধখোলা রেখে দিল।

নিজেদের কাজে মগ্ন সবাই। শেরহাম চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে করতে দলে মিশে গিয়ে মদের আসরের দিকে এগিয়ে গেল। মদ খেয়ে মাতালের মতো ঢুলছে সবাই মিলে। বিশ্রী রকমের গালাগালও করছে। সেই দলে মিশে গিয়ে বাসভবনের ভেতর প্রবেশ করতেই বড়সড় রাজাসনে বসে আছে ডাকাত দলের সর্দার আর চন্দ্রলাল। শেরহামের হাতের মুঠি শক্ত হয়ে এল। একজন ডাকাতের সাথে ধাক্কা লাগতেই ডাকাতটি মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে শেরহামকে গালি দিয়ে ধাক্কা মারবে ঠিক তখনি শেরহাম হাতের ঘুষি বসালো। অমনি টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়লো ডাকাতটি। ডাকাত সৈন্যরা এসে ঘিরে ধরলো শেরহামকে। শেরহাম সামনের দুজনের মুখ বরাবর লাতি বসিয়ে রাজাসনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একলাফে চন্দ্রলালকে ধরে গলায় তলোয়ার ধরে অপরহাতে মুখোশ টেনে খুলে বলল,

‘ অস্ত্র ফেল সকলে। ওকে কোথায় রেখেছিস সোজা নিয়ে চল। নয়ত এর গলায় এখনি ত**লোয়ার চালাবো। ‘

চন্দ্রলাল হতভম্ব। এত এত পাহাড়া টপকে কি করে এত নিকটে চলে এল শেরহাম? সকলেই অস্ত্র নীচে নামিয়ে রাখলো। চন্দ্রলাল সেই কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। গলার কাছেই তলোয়ার। এই শেরহাম সুলতান সব পারে। সে বলল,

‘ তুই এটা ভালো করছিস না শেরহাম সুলতান। ‘

‘ মেয়েঘটিত ব্যাপারে জড়িয়েছিস কেন শয়তান?’

আর উপায়ান্তর না দেখে চন্দ্রলাল তাকে কক্ষের দিকে নিয়ে যায়। কক্ষের তালা খুলে দিয়ে চাবিটা রেখে দেয় শেরহাম। তারপর চন্দ্রলালের বুকের একপাশে তলোয়ার দিয়ে হামলা করে ছুুুঁড়ে ফেলে কামরায় প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। একটা ছোটখাটো ঝালি ফটক দিয়ে আলো ঢুকছে কামরাটিতে। একপাশে মশাল জ্বলছে। আধো অন্ধকারাচ্ছন্ন কামরার এককোণে খড়ের উপর শায়িত নারীদেহটি দেখে দ্রুতবেগে ছুটে গেল সে। মুখটার দিকে তাকালো পূর্ণ দৃষ্টি মেলে। আধশোয়া হয়ে ঝুঁকে পড়ে মুখ ধরে ডাকাডাকি করলো,

‘ তনী! এই তনী। ওঠ। এই তনীর বাচ্চা। ‘

তটিনী ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে নির্জীব হয়ে শুয়ে পড়েছিল। চোখ লেগে গিয়েছে। চোখ মেলে মুখের সামনে হঠাৎই শেরহামকে দেখে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো সে।
আকস্মিক দুহাতে টেনে গলা জড়িয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলো। হু হু করে কেঁদে উঠতেই শেরহাম তার পিঠের নীচে হাত গলিয়ে শরীরটা তুলে নিয়ে গালে,গলায় চুম্বন করে মুখ ডুবিয়ে রেখে বলে,

‘ চল পালাই। ‘

চলমান…..

#প্রিয়_বেগম
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #পর্ব_১৮
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

তটিনীর উত্তেজিত মস্তিষ্ক কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই লোহার দরজাটিতে পদাঘাত পড়তে লাগলো জোরে জোরে। হয়ত এবার দরজা ভাঙার প্রয়াস চলছে। তটিনী কিছু বলে উঠার পূর্বেই শেরহাম তটিনীকে ছেড়ে দিল, তটিনী ছাড়তে চাইলো না। তার চাওয়া অপূর্ণ রেখে শেরহাম তাকে রেখে দরজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। তটিনী কোনোমতে দাঁড়িয়ে পড়লো। দরজার করাঘাত সাথে ডাকাতগুলোর হৈহৈ শব্দে তটিনীর গায়ে ঘাম দিয়েছে। বুক ধড়ফড় করছে। মনেপ্রাণে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো সে। শেরহাম পাগড়ি খুলে ঝেড়ে কাপড়টা খুলে ফেললো প্রায়। তটিনীর গায়ে জড়িয়ে দিল সেটি। তারপর হাতটা শক্ত করে ধরলো। দরজার ওপাশ হতে ডাকাত সর্দার গুলজার বলল,

‘ দরজা খোল সাহস থাকলে। মুখোমুখি হ। ‘

শেরহামের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এল। তটিনী ওর দু’হাতে শেরহামকে ধরে রাখলো। দোয়াদরুদ পড়তে লাগলো। দরজার করাঘাত বাড়তে বাড়তে শেরহাম তার গায়ের চাদরের নীচ হতে দাহ্য বোমা বের করে ছুঁড়ে দিল দরজার নীচ দিয়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় তটিনী স্তব্ধ। চিৎকার দিয়ে উঠলো সেও বাকিদের সাথে সাথে। বিকট শব্দ কান ঝালাপালা করে দিল। সাথে সাথে দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো আগুনের লেলিহান শিখা। মুহূর্তেই আগুনের কালো কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল চারপাশ। দরজাটি পুড়তে পুড়তে ধপাস করে পড়ে যেতেঔ তটিনীকে নিয়ে সরে পড়লো শেরহাম। তটিনী কাশা শুরু করলো। তার চোখমুখ লাল হয়ে এল। শেরহাম তার হাত ধরে বেরিয়ে গেল সেই কামরার ভেতর থেকে। পায়ে আগুনের আঁচ লেগে গেল। অনেকগুলো ডাকাত আহত হয়েছে। আরও ছুটে এল দলে দলে। শেরহাম তটিনীর হাত ধরে দাহ্য বোমা আরও একটি ছুঁড়ে দিল বাসভবনের ভেতরে। বিধ্বংসী আগুন জ্বলতে লাগলো দাউদাউ করে। বাসভবন থেকে বেরিয়ে প্রবেশ মুখে আরও একটি বোমা ছুঁড়লো। যদিও তার ব্যাপ্তি বেশিদূর নয়। তবে চারপাশে আগুন জ্বলছে।

সামনে থাকিয়ে দেখলো সকলেই তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ডাকাত সর্দার আর চন্দ্রলাল গুরুতর আহত বিধায় তারা অন্য কামরায় ধরাশায়ী হয়ে পড়ে আছে।

সামনে দাঁড়ানো কয়েকজন একসাথে ছুটে এল তলোয়ার নিয়ে। শেরহাম তটিনীকে পেছনে নিয়ে গিয়ে বুক বরাবর লাতি বসালো তাদের। পরপর দুটো দাহ্য বোমা ছুঁড়ে দিল সামনে আর পেছনে। ব্যস! ছিটকে পড়লো সকলে। ধোঁয়ায় কাশতে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে থাকলো। তটিনী খুকখুক করে কাশা শুরু করলো। শেরহাম তার হাত ধরে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের পাশ দিয়ে লম্বা লম্বা পায়ে হেঁটে আস্তানার প্রবেশ অভিমুখে ছুটে চললো একটা মশাল তুলে নিয়ে।
তটিনী ঘাড় ঘুরিয়ে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে থাকা ডাকাতগুলোকে দেখতে দেখতে শেরহামের সাথে সাথে পা বাড়ালো। খেয়াল করলো তার গায়ের শাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছে। আগুন দেখার সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠতেই শেরহামের পা থমকে গেল। শাড়ির আঁচলে আগুন দেখে দিশেহারা হয়ে পড়লো, হাত দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু নিভলো না। এক সময় খেয়াল করলো দলেদলে ছুটে আসছে ডাকাতদল। হাতে মস্তবড় ধারালো তলোয়ার। আরও একটি দাহ্য বোমা ছুঁড়ে তটিনীর হাত ধরে পুনরায় দৌড়াতে শুরু করলো সে। তটিনী হাঁপিয়ে উঠলো।
শেরহাম বাঁধা নৌকায় তটিনীকে নিয়ে উঠলো । তারপর শাড়ির আঁচলটি ভিজিয়ে দিল পানিতে। আগুন নিভে যেতেই বৈঠা তুললো দ্রুত।
তারপর বোমা নিয়ে ছুঁড়ে মারলো ঘাটের দিকে, ডাকাতদের বেঁধে রাখা নৌকাগুলোর দিকে। গনগন করে আগুন প্রসারিত হলো চারপাশে। শেরহাম বৈঠা তুলে দ্রুতবেগে নৌকা টানলো। নৌকা এদিকওদিক হেলে পড়তেই তটিনী একপ্রকার হাঁমাগুড়ি দিয়ে তার কাছে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে চুপটি করে বসে রইলো।
পরিস্থিতি এখনো বিপদমুক্ত নয় তাই শেরহাম বৈঠা চালাতে লাগলো দ্রুতগতিতে। এদিকে নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে এল ডাকাতদল। তাদের উদ্দেশ্য করে গোলাগুলি করতে লাগলো। তটিনী সেদিকে তাকিয়ে শেরহামকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। শেরহাম তাদের নৌকাকে উদ্দেশ্য করে অবশিষ্ট থাকা বোমা ছুঁড়তেই পানি থেকে ছলকে উঠলো আগুন। তটিনী চোখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে কানচাপা দিল দু’হাতে।

নৌকা ঘাটে এসে ভীড়তেই শেরহাম তটিনীকে নিয়ে অন্য হাতে মশাল নিয়ে ছুটতে ছুটতে পাহাড়ের পাদদেশে জঙ্গলে বেঁধে রাখা ঘোড়ার কাছে ছুটে গিয়ে দঁড়ি খুললো। তার ঘোড়াকে দেখে তটিনীর ঠোঁটে হাসি ফুটলো। শেরহাম ঘোড়ার পিঠে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘ আয়। ‘

তটিনী হাত বাড়িয়ে বলল,

‘ কিন্তু আমি তো..

বলার আগেই শেরহাম তাকে টেনে তুলে নিল তার পেছনে। দড়িটা দিয়ে তটিনীকে নিজের সাথে বেঁধে নিতেই তটিনী তাকে জড়িয়ে ধরলো। পিঠে মুখ লাগিয়ে বলল,

‘ ও আল্লাহ! আমি তো পড়ে মরে যাব। ‘

শেরহাম ধমকে বলল,

‘ একদম চুপ। তুই সহজে মরবি না। মরলে আমি আসার আগে মরে যেতি। অযথা ফটরফটর করবি না। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব। ‘

সারা দুনিয়ার মানুষ এসেও যদি তাকে একথা বিশ্বাস করতে বলে তটিনী করবে না অন্তত আজকের ঘটনার পর। সে মৃদু হেসে পিঠে মুখ চাপলো। শেরহাম গা ঝাড়া মেরে বলল,

‘ এমনি ধর। মুখ ঘষাঘষি করছিস কেন? ‘

তটিনী সাথে সাথে বলল,

‘ তুমিও তো আমার গালে মুখ ঘষেছ। এখনো জ্বলছে। ‘

শেরহাম তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে লাগাম টান দিল।
তটিনী তাকে দু’হাতে শক্ত করে ধরে রেখে যেতে যেতে দেখে পাহাড়ি পথ চাঁদের নীলাভ মিটিমিটি আলোয় হেসে ওঠেছে। সরু পথের দুই পাশ হতে লতাপাতা ও নাম না জানা নানা বৃক্ষের তাজা ঘ্রাণ ভেসে আসছে। শীতল বাতাস গায়ে লাগতেই অদ্ভুত পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু বৃক্ষরাজি ও দমকা হাওয়া নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে তাদের। এমন ভয়ংকর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এর পূর্বে হয়নি তার।

মশালের আলো অনুসরণ করে গহীন অভয়ারণ্যের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে ঘোড়াটি ছুটতে লাগলো। কিছুটা দূরেই কয়েকটা আগুনের মশাল দেখতেই ঘোড়াটি থেমে গেল। শেরহাম লাগাম টেনে বলল,

‘ কি হলো? চল। ‘

ঘোড়া চললো না। শেরহাম দেখতে পেল মশালগুলো। সেগুলো ধরে রাখা মানুষগুলো হেঁটে আসতে লাগলো তাদের দিকে। শেরহাম উল্টো পথে ফেরার প্রস্তুতি নেবে তার আগেই বাতাসের গতিতে শাঁ করে একটি তীর এসে বিঁধে গেল তার বাম হাতের বাহুতে। সাথেই সাথেই গর্জে উঠলো সে। তটিনী ভড়কে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই শেরহামের হাত থেকে মশাল পড়ে গেল। লাগাম ছেড়ে দিল সে। তটিনীকে সাথে নিয়ে পড়ে গেল জঙ্গলের মাটিতে। তটিনী স্তব্ধ, বাকহারা। দড়ি খুলে শুধুই ঝাঁকাতে লাগলো শেরহামকে। তীরটা দূরে ছুঁড়তেই দেখতো পেল তীর গাঁথা অংশ হতে গলগল করে রক্ত নির্গত হচ্ছে। হাতের তালু আগুণে পোড়া। তটিনী দিশেহারা, পাগলপারা। বোবার মতো শেরহামের মুখ দু’হাতে আগলে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে অস্ফুটস্বরে কেঁদে উঠলো। শেরহাম কিছু বলতেও চাইলো কিন্তু বলতে পারলো না। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা চোখদুটোর সাথে মশালটিও নিভে গেল। অন্ধকার আর ওই লোকগুলোকে এগিয়ে আসতে দেখে তটিনী কেঁদে উঠলো সশব্দে। রক্ত দেখে কাঁদতে কাঁদতে নিজেও চেতন হারালো।

বয়স্ক অতি বেঁটেমতো দুটো লোক মশাল হাতে ছুটে আসতেই শেরহামের ঘোড়াটি হামলা করে উঠলো তাদের উপর। তারা সেটিকে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে এগিয়ে এসে দেখতে পেল এক রমণী তার নিজ পুরুষের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।

_________________

শেহজাদ আর সাফায়াত কাউকেই ফিরতে না দেখে শাহানা আরও ভেঙে পড়লো। মহলে উপস্থিত অতিথিরাও একেকজন এমন ঘটনায় হতচকিত। রাত বাড়ায় যে যেই কক্ষে পেরেছে ঘুমিয়ে গিয়েছে। অপরূপা শাহানার মাথার কাছে বসে রইলো। কোনোমতে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। সকলেই বসে আছে শাহানার পাশে। সিভান ঘুমে ঢলে পড়েছে। বাকিরা সদরকক্ষে। সায়রা বিয়ের পোশাকআশাক বদলে সোহিনী আর শবনমের সাথে মহল আঙিনায় কেদারায় বসে আছে। আয়শার চোখ ফুলে গিয়েছে মায়ের সাথে কাঁদতে কাঁদতে। কারো মনে দুদন্ড শান্তি নেই।

শেহজাদ আর সাফায়াত ফিরলো একরাশ হতাশা নিয়ে। মহলের আঙিনায় বসে রইলো। সৈন্যদের পাঠিয়ে দিল আরাম করার জন্য। তারা ফিরেছে দেখে সকলেই ছুটে এল। অপরূপা এসে শেহজাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ কোনো খোঁজ পাননি? ‘

শেহজাদ দু’পাশে মাথা নাড়ায়। বলে, ভাইজান আমাদের পথ ভুলিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছেন। ‘

‘ আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আমার মনে হয় উনি উনার বেগমের সাথে অতটা কঠোর হতে পারবেন না। ঠিকই উদ্ধার করবেন। ‘

শেহজাদ বলে,

‘ কি করে বুঝলে? ‘

অপরূপা আমতাআমতা করে বলে,

‘ উনাদের মধ্যেকার সম্পর্ক অতটাও নড়বড়ে নয়।’

*******

সাফায়াত শাহানার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,

‘ আল্লাহর উপর ভরসা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই আম্মা। আল্লাহকে ডাকুন। ‘

তাকে খালি হাতে ফিরতে দেখে শাহানার কান্না আরও বেড়ে যায়। অনেক কষ্টে তাকে শান্ত করিয়ে ঘুম পাড়ায় সাফায়াত। আয়শা মায়ের বুক জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। সাফায়াত তাকেও ঘুম পাড়ায়। তারপর আঙিনায় এসে শেহজাদের পাশে বসে বলে,

‘ উনি কাজটা ঠিক করেননি। নাই বা গেলাম ওখানে। অপেক্ষা তো করতে পারতাম তার আশেপাশে!’

শেহজাদ হতাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ঘাড় ফিরিয়ে সায়রাকে দেখতে পায়। ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,

‘ তনীকে ফিরতেই হবে। কক্ষে যাও। বিশ্রাম করো। ‘

‘ আপনি? ‘

‘ আমার চিন্তা করো না। তুমি যাও। ‘

অপরূপাও মাথা নাড়লো। সাফায়াত কক্ষে চলে গেল। তার অগোছালো কক্ষ হঠাৎ করে সুশোভিত ঠেকায় হঠাৎই খেয়াল হলো এই কক্ষে তার বেগমের আগমন ঘটেছে।
গায়ের পোশাক পাল্টে মুখে পানির ছিঁটে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিছানার পর্দা সরাতেই সায়রাকে দেখতে পেল মাথার নীচে হাত দিয়ে চোখ বুঁজা অবস্থায়। ঘরের আলো নিভিয়ে, হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে পাশাপাশি শুইয়ে পড়তেই দেখলো সায়রা চোখ মেলেছে। কিছুক্ষণ নীরবে চাওয়াচাওয়ি শেষে সে এগিয়ে এসে সাফায়াতের বুকে মাথা রেখে ডুকরে উঠলো। সাফায়াত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। কপালে দুঠোঁট চেপে জড়িয়ে ধরে রাখলো বুকের সাথে।
তাদের মন মনকে ছুঁয়েছিল সেই কবে, আজই তো প্রথম, বুকে মাথা ঠেকানো আর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ানো। নীরবে কেটে গেল সময়। ভালোবাসার অপর নাম নীরবতা।

________________

তটিনীর যখন জ্ঞান ফিরে সে নিজেকে দেখতে পায় একটা অদ্ভুত জায়গায়। গুহার মতো জায়গা। আগরবাতি আর গোলাপজলের সুগন্ধি চারপাশে। জায়গাটা পরিষ্কার ঝকঝকে। দূরেই ছোটখাটো একটা চেরাগ জ্বলছে। কামরাটির চারপাশে ছোট ছোট নুড়িপাথর। জায়নামাজ, তজবী, কলস, হাতুড়ি, সোনালী রঙের পেয়ালা আরও নানান জিনিস। শোয়া থেকে উঠামাত্র সে দাঁড়িয়ে পড়লো শক্ত বিছানার উপর হতে। একছুটে বেরিয়ে গেল সেই কামরাটি হতে। সাথে সাথেই পা জোড়া থমকে গেল। মুখোমুখি গুহাটির সম্মুখপথে আগাগোড়া সাদা জুব্বাপড়া একজন বৃদ্ধকে একটি বিশালাপাথরের উপর নামাজরত অবস্থায় দেখতে পেল। ভয়ে জমে গেল সে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এল।
চাঁদের আলোয় ফকফকা আকাশ। দূরের ঝাপসা ঝাপসা উঁচুপাহাড় দেখা যাচ্ছে। কুয়াশাচ্ছন্ন বনজঙ্গল। এখন রাত কত হবে ভাবলো সে। ইনি কি তাহাজ্জুদ পড়ছেন? হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বাড়তে লাগলো তার। পদধ্বনি শুনতে পেয়ে পিছু ফিরতেই দেখলো তার কোমর সমান দুটো লোক এসে থেমেছে। তাদের দেখে পিছিয়ে গেল তটিনী। মোনাজাত শেষে বৃদ্ধ লোকটাও তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। লোকদুটোকে কি যেন ইশারা করলো তারা সরে পড়লো। তটিনী ভয়ে ভয়ে এগিয়ে বৃদ্ধ লোকটার দিকে এগোতে যাবে তিনি আঙুল তার করলেন সামনের দিকে। তটিনী কিছু বুঝলো না। বলল,

‘ আমার সাথে আমার….

উনি ফের ইশারা করলেন সেদিকে। তটিনী সেদিকে পা বাড়ালো এইবার। যেতে যেতে পা থমকালো তার। আগুনের মশালের সামনেই বসা থাকা পুরুষের পিঠ আর মাথার পেছনের দিকটা দেখে ঠোঁটে তার হাসি ফুটলো। একমুহূর্তও দেরী না করে ছুটে গেল সে। শেরহামের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। শেরহাম তাকে দেখে চোখ তুলে তাকালো। তটিনী তার নিকটে গিয়ে বসে গায়ের চাদরে নিজেকেও ঢেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে চোখ বুঁজে বলল,

‘ ওরা কারা?’

শেরহাম তীর্যক চোখে বৃদ্ধ লোকটির দিকে তাকায়। উনি একপলক তাদের দেখে হাতে তজবী জপতে জপতে পুনরায় ফিরে যান পাথরের কাছে। শেরহামের দিকে ধীরেধীরে তাকায় তটিনী। বলে,

‘ উনি কি এখানে থাকেন? কে উনি? ‘

শেরহাম বলে,

‘ আমার নানা। ‘

তটিনী বড় বড় চোখ করে তাকায়। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে শেরহাম কঠিনস্বরে বলে,

‘ বেশিকথা বললে উনার কাছে তোকে রেখে চলে যাব।’

তটিনী তার গলা জড়িয়ে আরও শক্ত করে। বলে,

‘ তুমি যে এখন অসুস্থ। তোমার সেবা করবে কে?’

‘ দরকার নেই সেবার। ছাড়। ‘

তটিনী তার গলা টেনে ধরে গালের নখের আঁচড়ের ক্ষতে ঠোঁট ছোঁয়ায়। মুখটা তার দিকে টেনে ফিরিয়ে অজস্র চুম্বন আঁকে পুরুষালী মুখটায়। তারপর ঠোঁটের দীর্ঘ আলিঙ্গনে মত্ত হয়ে উঠে।

কয়েক মুহূর্ত পর নিজেকে ছাড়িয়ে শেরহাম রেগে জিজ্ঞেস করে,

‘ মরতে চাস তুই? ‘

তটিনীর স্পষ্ট জবাব।

‘ হ্যা। ‘

শেরহামের রোষাগ্নি দৃষ্টিতে তটিনী একদৃষ্টে তাকিয়ে ভালোবাসা খুঁজে মরে। শেরহাম ওর দৃষ্টিজোড়ায় তারজন্য নিখাঁদ ভালোবাসা দেখে। সেই ভালোবাসায় সে তার হিংস্রস্বত্তার বিনাশ দেখতে পায়। তিলে তিলে গড়ে তোলা পাপের সাম্রাজ্যকে ভেঙে গুড়িয়ে যেতে দেখে। তৎক্ষনাৎ তটিনীকে সরিয়ে দিতে যাবে তখুনি তার পোশাক টেনে ধরে তটিনী বলে উঠে,

‘ আরেকবার। আর চাইবো না। জীবনেও না। ‘

শেরহাম রোষাবিষ্ট চোখে চেয়ে থাকে।

ধীরেধীরে হার মানে তটিনীর জেদের কাছে। তার কোমল পেলব ওষ্ঠধর নিজের বলিষ্ঠ ঠোঁটের ভাঁজে লুকিয়ে নেয় । এই প্রথম স্বেচ্ছায় ঠোঁটের দীর্ঘ চুম্বনে রত হয় দুজন।

বেঁটেমতো লোক দুটো তাদের ডাকতে এসে এমন দৃশ্য দেখে ফেলায় একেঅপরের চোখ চেপে ধরে।

চলমান……….

1 মন্তব্য

  1. Ei porbe sherham er kase totinir ador khaoar abdar ta ja lage na,,,,,, just dile Jaya lage,,,,, 😍😍,,,,,,2nd poricched a sherham totinir proti j dhire dhire durbl hoia Jay,,,,, Eita khub e valo lage,,,,, golpotar proti akorshon baraya dey,,,,,, 😍😍😍😍

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে