#প্রিয়_বেগম
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #পর্ব_১৫
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা
মরিয়মকে ঘিরে বসে গল্প করছিল সকলে। হাজারো প্রশ্ন সবার, হাজারো কৌতূহল তাকে জানার জন্য। মরিয়মও সবাইকে জানার জন্য অত্যধিক কৌতুহলী। একসময় বুঝতে পারলেন ইউভান অনেক ভালো ছিল এতগুলো বছর। ভালো মানুষের কাছে মানুষ হয়েছে। খোদেজা ছাড়া সকলেই উনার সাথে হেসেখেলে কথা বলেছে। কি এক জড়িমায় খোদেজা কক্ষেও আসেননি। পুত্রের উপর অভিমান কমে এলেও বেড়েছে পুত্রবধূর সাথে। সে তো কোনোদিন তার সাথে হেসেখেলে কথা পর্যন্ত বলেনি, আজ নিজ শ্বাশড়িকে কত যত্ন, কত হাসাহাসি। নিজের মা আর নিজের শ্বাশুড়িকে কত যত্ন করে খাওয়ালো। খাওয়াবেই তো। নিজের বলে কথা। পালিত মাও নয়,পালিত শ্বাশুড়িও নয়। সে তো কত খারাপ খারাপ কথা বলেছিল তার সাথে। তারা তো বলেনি।
শেহজাদ কক্ষে এসে দেখলো অপরূপা এখনো আসেনি। আজব মেয়ে, তার সামনেও আসছে না। সামনে না এলে রাগ ভাঙাবে কি করে? সে মা মরিয়মের কক্ষে চলে গেল।
তাকে প্রবেশ করতে দেখে সিভান বলে উঠলো,
‘ ভাইজান তোমার নামের সাথে আমার নাম বেশ মিল আছে। তুমি ইউভান আমি সিভান। তাই না?’
শেহজাদ চোখ সরু করে তাকিয়ে বলল,
‘ তাই তো। সেটা তো ভেবে দেখিনি। ‘
সিভান ফোকলা হাসলো। তারপর হাই তুলতে তুলতে বলল,
‘ ঘুম আসছে। আমি যাই। সবাইকে টা টা। ‘
যাওয়ার পথে শেহজাদ তার গাল টেনে দিল। সে গাল ঢলতে ঢলতে তার কক্ষে চলে গেল। বাকিরাও চলে গেল। অপরূপা মরিয়মের চুলে বেণী পাকিয়ে সামনে ফিরিয়ে বলল,
‘ হয়েছে? ‘
মরিয়ম হেসে বলল,
‘ হ্যা। রাত হয়েছে। ঘুমুতে যাও। ‘
অপরূপা শেহজাদের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ না। আর কিছুক্ষণ থাকি। ঘুম আসছে না। আপনি ঘুমান। ‘
মরিয়ম বালিশে শুয়ে বলল, ‘ তোমার মা ঘুমিয়েছে। ‘
‘ হ্যা মাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে এসেছি।’
শেহজাদ কপাল কুঁচকে চেয়ে থাকলো অপরূপার দিকে। মরিয়ম বালিশে শুয়ে চোখ বুঁজতে বুঁজতে বলল,
‘ ইউভান নিয়ে যাও তোমার বউকে। ‘
অপরূপা নিজেই উঠে এল। কক্ষ হতে বেরিয়ে যেতে যেতে ব্যঙ্গ করে নামটা ডাকলো,
‘ ইউভান! ‘
শেহজাদ তার পেছন পেছন এসে কক্ষের দরজা বন্ধ করে বলল,
‘ ভালোই লাগছে শুনতে। ওটা ডেকো। ‘
‘ আমার মাথা খারাপ হয়েছে আর কি। ‘
বিছানা গুছিয়ে পর্দা ফেলে জানালা বন্ধ করে অপরূপা মাথার নীচে হাত রেখে শুইয়ে পড়লো। শেহজাদ আলো নিভিয়ে পাশে এসে বসে থাকলো পিঠের নিচে বালিশ রেখে। অপরূপার দিকে তাকিয়ে রইলো।
গরম গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে পড়তেই পিলে চমকে পাশ থেকে সোজা হতেই মুখের উপর একটা প্রিয়মুখের উপস্থিতি দেখতে পেল অপরূপা। সরে যাবে তখুনি তার গলার ভাঁজে নাক ডুবিয়ে প্রলম্বিত শ্বাস টানলো শেহজাদ। রাগী সুরে বলল, স্বামীর আদর নেয়ার সময় ব্যাঘাত ঘটানো মহাপাপ।
অপরূপা তার কথা শুনে সব ভুলে ফিক করে হেসে উঠলো। শেহজাদ মুখ তুলে তাকাতেই অপরূপা তাকে জড়িয়ে ধরে রাঙা মুখ লুকোলো বুকের মাঝে।
___________
তটিনী ফজরের আজানের পরপর ঘুম থেকে উঠে গেল। মহলের অনেকে উঠে গেছে নামাজ আদায় করার জন্য। সায়রা সোহিনীরা সাড়ে পাঁচটার দিকে উঠে নামাজ পড়ে। বয়স্করা উঠে যায়। আজ তটিনীও উঠে গেল। নামাজ সেড়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে শাহানার কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। দেখলো শাহানার দরজা আধখোলা। তটিনী উঁকি দিয়ে দেখলো আম্মা নামাজ পড়ছে। সে শেরহামের কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। দরজা খোলা দেখে ভাবলো শেরহাম কক্ষে নেই। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতেই অবাক হলো শেরহামকে উদাম গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে। সারারাত কি দরজা এভাবে খোলা ছিল? পাগল নাকি, কেউ ঢুকে মেরে ফেললেও তো বলতে পারবেনা। তটিনীর রাগ লাগলো। এত বড় লোক নইলে ঠাস ঠাস করে চড়াতে চড়াতে গাল লাল করে দিত। ভাবনায় মেরেও দিল চড়। কিন্তু সত্যি সত্যি মারতে পারলে উচিত হতো। ভাবতে ভাবতে দেখলো টেবিলের উপর খাবার ঢাকা। বাসন তুলতেই দেখলো ভাত, ডাল,মাংস সব রয়ে গেছে। তারমানে খায়নি। তটিনীর আরও রাগ লাগলো। শেরহামের দিকে এগোনোর আগে বাইরে উঁকি দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর পাশে এসে বসলো। সে যেইহাতে তলোয়ারের কোপ মেরেছিল সেই হাতের সেলাই এখনো শুকোয়নি, তারমধ্যে আজকে আরেকটা আঘাত। এই লোক একেবারে মরে যেত তাও হতো। তার আর সহ্য হচ্ছে না। না ভালো সহ্য হচ্ছে, না খারাপ। একেবারে সামনে থেকে দূরে চলে গেলে ভালো হতো। না নিজে মরছে, না কাউকে মরতে দিচ্ছে। একদম পাশে পা টেনে বসায় শেরহাম নড়েচড়ে উঠে এল তার কোলে। মাথাটা কোলে তুলে দিয়ে আবারও ঘুমে তলিয়ে গেল। তটিনীর সারা শরীরে কম্পন ধরলো শেরহামের মাথাটা উদরে ছোঁয়া লাগায়। কি গরম শরীর!
চোখ গেল কাঁধে, যেখানে তীর গেঁথেছে। সেখানে ব্যান্ডেজ বাঁধা। ব্যান্ডেজেও রক্ত লেগে আছে। তটিনী কাঁপা কাঁপা হাত রাখলো শেরহামের কপালে। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর। কি আজব! এই লোকের কি জ্বরে, আঘাতে কিছু হয় না? এমন অযত্নে পড়ে থাকলে তো তাকে খুঁজেও পাওয়া যেত না। আর ইনি দিব্যি শান্তির ঘুম দিচ্ছেন। সে মাথাটা বালিশে রেখে নেমে গেল। দুটো শুকনো কাপড় ভিজিয়ে একটা কপালে জলপট্টি দিল। অপরটা দিয়ে দিয়ে গা মুছে দিল।
তারপর থালাবাসনগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেল। ফিরে এসে কপাল থেকে ভেজা কাপড়টা সরিয়ে তা পুনরায় ভিজিয়ে কপালে দিতেই দেখলো শেরহামের চোখদুটো খোলা। চমকে গেল সে। দাঁত চিবিয়ে বলল,
‘ জ্বর এসেছে। না খেয়েদেয়ে মরার মতো পড়ে রয়েছ কেন? মরে গেলে তো সবাই বলবে সবাই মিলে তোমাকে মেরে ফেলেছে। ‘
শেরহাম কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে বসলো। বসার সময় বাহু চেপে চোখ বন্ধ করলো। তারপর বসে খ্যাঁক করে উঠে বলল,
‘ ওই তুই এই ঘরে কি করিস? সারারাত দরজা খোলা রেখেছি আসিসনি। এখন কি করিস? ঢং করতে এসেছিস? তোকে কে বলেছে আমার সেবা করতে? এতবছর আমি তোর সেবা ছাড়া থাকিনি? তখনি কি তোর বাপ গিয়েছে আমার সেবা করতে?’
তটিনী চোখমুখ শক্ত করে বলল,
‘ তাহলে পঁচে মরো। ‘
বলেই ভেজা কাপড়টা শেরহামের মুখে ছুঁড়ে মেরে বেরোতে চলে যাচ্ছিলো। শেরহাম হাতটা ধরে টান দিয়ে তার গায়ে ফেলে জড়িয়ে ধরে নীচে ফেলে দিল। তটিনীর মেজাজ গরম হয়ে গেল। বলল, আমি চিৎকার করব।
‘ কর। সবাই জানুক তুই রাতে আমার ঘরে ছিলি। ‘
‘ নষ্ট লোক। ‘
‘ তুইও নষ্ট। ‘
তটিনী রাগ তরতরিয়ে বাড়লো। বলল,
‘ ছাড়ো। তালাক দাও। নইলে আমি তোমাকে তালাক দেব। তোমার সাথে একটা মুহূর্তও আমার থাকতে ইচ্ছে করছেনা। ‘
শেরহামের মেজাজ চট গেল। উঠে গেল সে।
তারপর তটিনীকে হাত ধরে টেনে তুলে নিয়ে কক্ষের বাইরে ছুঁড়ে মারলো। তারপর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল।
তটিনী দরজায় লাতি দিতে দিতে বলল,
‘ জা**নোয়ারের বাচ্চা আর ডাকিস আমাকে। মরে গেলেও আসবো না। ‘
শেরহাম তক্ষুণি দরজা খুলে বলল, ‘ যাহ, খাবার নিয়ে আয়। কাউকে দিয়ে পাঠালে খবর আছে। ‘
তটিনী বলল, ‘ আনবো না।’
শেরহাম হেসে উঠে বলল,
‘ আমি সবাইকে বলব তুই আমাকে আদর করতে এসেছিস সকাল সকাল। ‘
তটিনী রাগে ফুঁসতে লাগলো। বলল,
‘ শয়**তানের বাচ্চা। ‘
শেরহাম হাসতে হাসতে কেদারায় বসে পড়লো।
তারপর হঠাৎ করেই হাসি থামিয়ে দিয়ে মুখহাত ধুঁতে চলে গেল।
_______
রসাইঘরে শাহানা হামিদার সাথে ফুলকলি, মতিবানু কাজ করছে। তটিনীকে দেখে শাহানা জিজ্ঞেস করলো,
‘ কোথায় গিয়েছিলে? ‘
তটিনী চোখ নামিয়ে নেয়। ছোটস্বরে বলল,
‘ ওর জ্বর এসেছিল। দেখতে গিয়েছি। ফুলিআপা তাড়াতাড়ি রুটি পুড়ে ওর জন্য দিয়ে দাও। রাতে খায়নি। ‘
শাহানা বলল,
‘ ঠিক আছে। ফুলি দিয়ে আসবে। তুমি বোনদের ডেকে দাও। ‘
তটিনী নড়লো না একপাও। শাহানা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কি হলো? ‘
‘ আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। না নিয়ে গেলে চেঁচামেচি করবে সকাল সকাল। ‘
হামিদা বলল, ‘ আপা থাক এখন বারণ করো না। তনী সত্যি বলছে। চেঁচামেচি শুরু করে দিলে মেহমানরা কি বলবে? ‘
শাহানা কিছু বলল না। খোদেজা ফুলকলিকে বলল,
‘ এই তাড়াতাড়ি কর। ‘
রুটি হয়ে আসতেই তটিনী হালুয়া আর মাংসের ঝুরাঝোল বেড়ে নিল। তারপর নিয়ে গেল। খোদেজা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলো, মেয়েটাকেও বশ করলো নাকি? ‘
শাহানা বলল, ‘ আমি কি করে তাকে মুক্ত করব? ‘
খোদেজা বলল, ‘ আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। ‘
তটিনী কক্ষে খাবার নিয়ে এল। দস্তানা বিছিয়ে থালা রেখে বলল, ‘ খেয়ে উদ্ধার করো। ‘
শেরহাম চাবুক নিয়ে কি যেন করছে। তটিনী বলল,
‘ এসব কি? চাবুক দিয়ে কাকে মারবে? ‘
‘ তোকে। ‘
তটিনী আঁতকে উঠে বলল,
‘ মানে কি? জ্বরে পাগলের প্রলাপ। যত্তসব। সন্ধ্যায় কাজী আসবে। আমাকে কাগজে কলমে তালাক দেবে। ‘
শেরহাম চাবুক রেখে তার দিকে তেড়ে এসে বলল,
‘ সত্যি? ‘
তটিনী পিছিয়ে গিয়ে বলল,
‘ তো কি মিথ্যে বলব কেন? তোমার মতো খু**নী, জালেম, জা*নোয়ার, নাফ*রমান জাদুকরের সাথে আমি একঘরে সংসার করতে পারব না। তুমি জাহান্নামি বলে আমিও কেন জাহান্নামি হবো? তোমার প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছি এজন্যও আমার গুনাহ হচ্ছে। ‘
শেরহাম চোখজোড়া দপদপ করে জ্বলে উঠলো হিংস্র শ্বাপদের ন্যায়। তটিনীর বাহু খামচে ধরে মুখোমুখি টেনে এনে বলল,
‘ আমাকে সহানুভূতি দেখাতে বলেছি? তোর সহানুভূতি ছাড়া এত বছর থাকিনি? আমার জন্য তোকে জাহান্নামি হতে কে বলেছে? সংসারও কে করতে বলেছে? আমি এতদূর পর্যন্ত এসেছি তোর সাথে সংসার করব বলে? এইসব সংসার টংসার করার জন্য আমি এখানে এসেছি? ‘
বলেই ঠেলে দিয়ে তটিনীকে বসিয়ে দিল বিছানায়। তটিনী কান্না গিলে চেঁচিয়ে বলল,
‘ তাহলে আজকেই তালাক দিবি শ**য়*তান। ‘
শেরহাম কেদারায় বসে বলল
‘ দেব। যাহ বেরোহ এখন। ‘
তটিনী যেতে যেতে আবারও ফিরে তাকালো। বলল,
‘ তুমি মরলেও কেউ কাঁদবে না তোমার জন্য। ‘
শেরহাম ত্যাড়া জবাব দিল,
‘ না কাঁদুক। ‘
‘ তুমি যে এত ক্ষমতা ক্ষমতা করছে এইসব কবরের নীচে গেলেও করিও। ‘
‘ করব। ‘
‘ কঠোর শাস্তি পাবে তুমি। জাহান্নামের আগুনে পুড়ে মরবে। তোমার এত এত শক্তি, ক্ষমতা তখন কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহর কাছে তুমি অতি নিকৃষ্ট। তোমার লাশও নেবেনা মাটি। ‘
বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো সে। শেরহাম রক্তচোখে চেয়ে বলল,
‘ মরতে না চাইলে চলে যাহ এখন। মাথায় রাগ তুলবি না। বের হ বলছি। ‘
তটিনী বের হলো না। মুখের উপর বলল,
‘ তুমি মরলে আমি তোমার মুখও দেখবো না। ‘
শেরহাম চমকিত হয়ে তাকালো সে কথায়। তটিনী একমুহূর্তও দাঁড়ালো না।
_________
সায়রা কক্ষ ঝাড়ু দিচ্ছিলো। শেহজাদ পাশ দিয়ে যেতে যেতে তাকে ডাক দিল।
‘ সায়রা! ‘
‘ জ্বি ভাইজান। ‘
‘ আসর কক্ষে এসো। ‘
‘ জ্বি যাচ্ছি। ‘
শেহজাদ দেখলো সেখানে সকলেই উপস্থিত আছে। কেদারায় বসতেই নেয়েঘেমে হন্তদন্ত পায়ে সাফায়াত এসে বলল,
‘ ভাইজান কিছু কথা ছিল। জরুরি। এখানে বলতে চাচ্ছি না। দ্রুত আসুন। ‘
অপরূপা,তটিনী সায়রা, সোহিনী, শবনম সবাই এসে উপস্থিত হলো।
শেহজাদ বলল,
‘ বসো। আগে আমার কথা বলি। তারপর তোমার কথা শুনবো। ‘
‘ জরুরি ছিল ভাইজান। ‘
খোদেজা কেদারায় বসা অবস্থায় তাড়া দিয়ে বলল,
‘ কি বলতে চাচ্ছো পুত্র? আমার ত ভয় করছে। ‘
শেহজাদ রয়েসয়ে সাফায়াতের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ সায়রাকে নিয়ে তোমাকে এক জায়গায় যেতে হবে, পারবে? ‘
সাফায়াত আর সায়রা চোখাচোখি হয়। চোখ সরিয়ে সাফায়াত প্রশ্ন করে,
‘ জ্বি কোথায় নিয়ে যেতে হবে? ‘
‘ সাত সমুদ্দুর, তেরো নদী পার হয়ে যেদিকে চোখ যায়। তুমি ছাড়া আপাতত কাউকে বিশ্বস্ত মনে হচ্ছে না ওর হাত তুলে দেয়ার। ‘
সকলের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। খোদেজা, শাহানা, হামিদা সকলেই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সায়রা লজ্জায় মাথা নামিয়ে দ্রুতগতিতে কক্ষ ত্যাগ করলো। সাফায়াত আলাভোলা চোখে তাকিয়ে রইলো শেহজাদের মুখপানে। অপরূপা মিটিমিটি হাসলো। শাহানা ছাড়া সকলেই বলে উঠলো, আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ভালো খবর। এত দুর্যোগের মাঝে একটু আনন্দ। ‘
তটিনী এগিয়ে এসে সাফায়াতকে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ অনেক খুশি হয়েছি ভাইজান। মোবারকবাদ। ‘
সাফায়াত তাকে একহাতে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ কিন্তু ভাইজান আমি..
‘ আবার কিন্তু কেন?..
সাফায়াত বলল,
‘ আমি তনীকে একটা সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে দিয়ে তারপর ভাবতে চাই। এমতাবস্থায় সম্ভব নয়। আমার নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে ওকে দেখলে। আমি ভাই হয়ে কিছুই করতে পারিনি তার সুখের জন্য। ‘
শেহজাদ দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, ‘ কথাটা কিন্তু আমার দিকেও আসে। আমি কি ওর কেউ না? ও সুস্থ জীবন পাক, একজন উত্তম জীবন সঙ্গী পাক আমিও চাই।
তটিনীর বুক ভারী হয়ে এল। টলমলে চোখে সাফায়াতের দিকে চেয়ে বলল,
‘ আপনি মত দিন। আপনার নিকাহ’র সাথে আমার এসবের কোনো সম্পর্ক নেই ভাইজান। আমি খুশি হবো, কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও আনন্দিত হবো। আমার কপালে যা আছে তাই হবে। আপনি কষ্ট পাবেন না। আমার জীবন নিয়ে আমার আফসোস নেই। সবকিছু খোদাতায়ালার পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে। উনি একদিন সব ঠিক করে দেবেন। ‘
বলতে বলতে ফোঁপাতে লাগলো সে। শাহানা শাড়ির আঁচল টেনে চোখ ডাকলেন। মুহূর্তেই নীরবতা নামলো চারপাশে। অপরূপা ঠিক এই জায়গায় এসে থমকায়। নিজেকে ভারী অপরাধী মনে হয়। সে সম্রাটের জীবনে না এলে তটিনীকে এতটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। এই অনুতাপ তার কোনোদিনও ঘুচবে না।
সবাই বেরিয়ে যেতেই শেহজাদ সাফায়াতকে বলল,
‘ কি খবর এনেছিলে বললে না তো? ‘
সাফায়াত বলল,
‘ শেরহাম সুলতানের পতন চাই বলে সবখানে ঘোষণাপত্র লাগানো হয়েছে। কে করেছে তা জানিনা। তবে আমার মনে হচ্ছে মেয়ে আর বাচ্চাদের অপহরণের বিষয়টির সাথে যে বড় ভাইজান জড়িত এটা সবখানে জানাজানি হয়ে গেছে। ‘
________
তটিনী চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যাবার পথে দ্বিতল চত্বরে দাঁড়িয়ে শেরহামকে দেখলো সদরকক্ষে। হাতে মদের বোতলজাতীয় কিছু একটা। জ্বরের ভেতর মদ খাচ্ছে! আজ কি ম*র*বে নাকি?
শেরতাজ সাহেব গালমন্দ করছে তা দেখে।
‘ দিনদপুরের মহলের ভেতর এসব অনাচার করতে তোমার বিবেকে বাঁধেনা? আর কত অবক্ষয় হবে তোমার? ‘
শেরহাম উনার কথায় মৃদুমন্দ মাথা দুলিয়ে মদের বোতল উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল হেলেদুলে। বাইরে বেরিয়ে চিৎকার পাড়তে লাগলো। সামাদ আর মুরাদ এসে বাতাস করা শুরু করলো।
তটিনী নীচে গিয়ে তার হাত ধরে বলল,
‘ এসব রঙ্গ ছাড়ো। কক্ষে যাও। ওঠো। ‘
শেরহাম হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মাতাল কন্ঠে বলল,
‘ আমি বিবাহিত। আমাকে ছুঁবেন না। ‘
চলবে……
শেষের লাইনটা একটা জোকস থেকে নেয়া