#প্রিয়_বেগম
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ #পর্ব_৭
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা
শেরহামের চিৎকার শুনে ছুটে এল সকলে। মাগরিবের নামাজ কালাম শেষ করে সকলেই সান্ধ্যভোজনে ব্যস্ত ছিল। অপরূপা নামাজ শেষ করে আগরবাতি জ্বালিয়েছে সবে। মসজিদ থেকে ফিরেছে শেহজাদ সাফায়াত আর বয়স্করা। তন্মধ্যে শেরহামের আগমন আর চেঁচামেচি সকলেই স্তব্ধ। সিভানকে ছুটতে দেখে অপরূপা বলল,
‘ কি হয়েছে ছুটছো কেন? ‘
সিভান হাঁপিয়ে উঠে বলল,
‘ বড় ভাইজান এসেছেন। তনী আপু আজ মহাবিপদে ভাবীজান। ‘
বলেই সে আবারও ছুটে গেল।
অপরূপা দ্রুত পা চালিয়ে রসাইঘরে যেতেই দেখলো রসাইঘরে কেউ নেই। ফুলকলি, মতিবানু, কুমু, টুনু সকলেই শাহানার কক্ষের দিকে ছুটছে। সে সেদিকে পা বাড়াতেই দেখলো শাহানার কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে একনাগাড়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছে শেরহাম। ডান হাতটা পুরোপুরি বাঁধা। বাম হাতটা অনবরত নেড়ে তটিনীকে আদেশ করছে সামনে আসার জন্য। সায়রা সোহিনী শবনম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে জবুথবু হয়ে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ।
শেহজাদ আর সাফায়াত এসে শেরহামকে দেখে হতবাক হয়ে তাকালো। অসুস্থতার ভেতরেও চেঁচামেচি করছে? সোজা মারতে চলে এল? এ কেমন মানুষ?
হঠাৎই ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল তার। তটিনী ভাইজানের একটা পাঞ্জাবি কেটে পুতুলের কাপড় বানিয়েছিল, সেদিন ঠিক একইভাবে চেঁচিয়েছিল ভাইজান। সেদিনকার পরিস্থিতি আর আজকের পরিস্থিতি কত তফাত! সেদিনকার শেরহাম সুলতান আর আজকের শেরহাম সুলতানের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সেদিন বকঝকা করলেও আজ হাতের মুঠোয় ফেলে আঘাত করতেও দুবার ভাববেন না তিনি।
শেহজাদ এগিয়ে গিয়ে বলল,
‘ ও বাচ্চা মেয়ে। ভুল হয়েছে গিয়েছিল। তোমার তো আরও দুদিন হাসপাতালে থাকার কথা। ফিরে এসে ওর উপর চড়াও হচ্ছো কেন? ‘
শেরহাম ধমক দিয়ে বলল,
‘ আমার বউ। আমি যা ইচ্ছে করব। তোর বউকে তো টানছি না। সর। ‘
অপরূপা ইশারা করে বলল, ‘চুপ থাকতে। তটিনীর ক্ষতি করলে তখন দেখা যাবে। ‘
শেরহাম দরজায় লাতি বসিয়ে বলল,
‘ এই তুই কি বেরোবি? এই দরজা ফেলে ভেতরে যেতে আমার বেশি সময় লাগবে না। ‘
তটিনী শাহানার বুকে আরও গুঁজে গেল। বলল,
‘ আম্মা আমি এখন কি করব? আমাকে সোজা মেরে ফেলবে। কিছু একটা করো। ‘
শাহানা হেসে ফেললেন এমন পরিস্থিতিতে। হাসি থামিয়ে বললেন,
‘ বাইরে শেহজাদের গলার আওয়াজ শুনলাম। সে নিশ্চয়ই তোমাকে রক্ষা করবে। ভয় পেওনা। আমি ওর মুখোমুখি হই। ভবিষ্যতে এমন কাজ ভুলেও করবে না। তালাক হওয়ার আগ অব্দি ও তোমার স্বামী। ‘
তটিনী কাঁদতে থাকলো। শাহানা মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ ভরসা রাখো। কিছু হবে না। ও অসুস্থ। তোমাকে কিছু করতে পারবে না। ‘
তটিনী গায়ের উপর কাঁথা টেনে নাকমুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলো। শাহানা দরজা মেলে দিতেই শেরহামের চিল্লানি থেমে গেল। শাহানা বলল,
‘ এবারের মতো তোমার বেগমকে ক্ষমা করে দাও। ও অনুতপ্ত। ‘
‘ অনুতপ্ত মানে? কোপটা বুকে দিলে সেখানেই শেষ হয়ে যেতাম। তুমি সরো। আজ এই নিমকহারামের একদিন কি আমার একদিন। ‘
তটিনী চেঁচিয়ে বলল,
‘ আমাকে মারলে আজকেই তালাক দেবে। ‘
‘ তোকে তালাক দেয়ার জন্য এসেছি আমি। আয় তালাক দেব। বের হ। তুই বের হবি কি হবি না একটা বল। ‘
তটিনী চেঁচিয়ে বলল,
‘ হবো না। তুমি যা পারো করো। তোমাকে আমি ভয় পাই না। ‘
বলেই হু হু করে কাঁদতে লাগলো নিঃশব্দে। শেরহাম শাহানাকে সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তটিনীকে কাঁথা মুড়িয়ে শোয়া দেখলো। সাফায়াত তার সাথে সাথে ভেতরে প্রবেশ করে বলল,
‘ ভাইজান ওর হয়ে আমি মাফ চাইছি। কক্ষে তলোয়ার রাখবেন না আজ থেকে। ও না বুঝে ভুল করে ফেলেছে। ‘
‘ তোর বোন সব বুঝে আর এটা বুঝেনি তলোয়ার খেলার জিনিস নয়। এর আগেও অনেকবার আমাকে আঘাত করতে চেয়েছিল। আমি চুপ ছিলাম বলে এত বাড় বেড়েছে। এই ওঠ। ‘
এগিয়ে গিয়ে কাঁথা টেনে নিল সে। তটিনী লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। তার চোখমুখ ফোলা, গলার স্বর আর চেহারার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। শেরহাম কপাল ভাঁজ করে তাকিয়ে ভাবলো, আচ্ছা এই ব্যাপার? ভয়ে কাঁদছে আর এদিকে গলা পাকাচ্ছে। অবস্থা কাহিল করে দেবে সে আজ।
তটিনী আঙুল দেখিয়ে বলল,
‘ একদম এগোবে না। ভাইজান!’
সাফায়াতের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো সে। সাফায়াত এগিয়ে গিয়ে তটিনীর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ আমি মাফ চেয়েছি। তনী তুমিও মাফ চাও। ‘
তটিনী মাফ চাইলো না। সাফায়াতের পেছন থেকে উঁকি দিয়ে শেরহামের মুখখানা দেখে ভারী মায়া হলো। আহারে কত রক্ত ঝড়েছিল কাল! একদম উচিত হয়েছে।
শেরহাম সাফায়াতকে সরিয়ে তার হাত খপ করে ধরতেই তটিনী একছুটে পালালো। খালি পায়ে দৌড় মারলো কক্ষের বাইরে। কারো দিকে না তাকিয়ে ছুটলো যেদিকে দুচোখ গেল। সবাই কিছু বুঝে উঠার আগেই শেরহামও ততক্ষণে তার পিছুপিছু দৌড় লাগিয়েছে। তবে বেশিদূর যায়নি। হাতের মুঠো শক্ত করে পাশের ফুলটবে ধড়াম করে লাতি বসিয়ে গর্জে বলল,
‘ তোকে খু***ন করে তবেই আমি শান্ত হবো বেয়াদব। ‘
তটিনীর গলার আওয়াজ ভেসে এল।
‘ জা*নোয়ার, অ**মানুষের বাচ্চা হাত কেটেও শান্ত হয়নি। ‘
শাহানা মুখে শাড়ির আঁচল গুঁজে বলল,
‘ দেখেছ মেয়ের মুখটা থামে না। ‘
শেরহাম গর্জন করে বলল,
‘ এইই,, কে অ* মানুষের বাচ্ছা? ‘
শেরতাজ সাহেব বললেন,
‘ ঠিকই তো বলেছে। তুমি ভালো মানুষের বাচ্চা নও। ‘
শেরহাম দাঁতে দাঁত চেপে রুক্ষ দৃষ্টিতে তাকাতেই সোহিনী এসে বলল,
‘ আব্বা ভাইজান অসুস্থ। এসব কথা না বললে হয় না। ‘
‘ তোমার ভাইজানকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে? তোমার ভাইজানকে তার বেগম মারতে চাইবে না কেন? মেয়েটার সাথে কম অন্যায় করেছে তোমার ভাইজান? জোর করে নিকাহ করাটা কি ন্যায়? নাকি দিনদুপুরে মেয়ে অপহরণ করে তাদের ইজ্জতভ্রষ্ট করাটা ন্যায়? তাদের মতো তোমার ভাইজানও এসব কাজে জড়িত ছিলনা তার নিশ্চয়তা কি? অপরূপার সাথে তো কম ছলনা করেনি সে। অপরূপার উচিত ছিল সবার প্রথমে ওকে মারা। সে দয়া করেছে বলে তনী করবে এটা কোথায় লেখা আছে? তাকে মারতে চেয়েছে তার উপযুক্ত কারণ আছে। অন্য কেউ হলে অনেক আগেই মেরে ফেলতো। ‘
শেরহাম বাজখাঁই গলায় বলল,
‘ চুপ। একদম চুপ। এখানে যারা আছে সবাই আমার ভাড়াটিয়া। আরেকটা কথা বললে সব কটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। ‘
তটিনী দূরে এসে দাঁড়ালো চুপটি করে। শেরহাম দ্বিগুণ গর্জে বলল,
‘ আমার খেয়ে আমার পড়ে আমার গায়ে আঘাত করার মজা তো আমি হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেব ওকে। এর পর ভবিষ্যতে কেউ এমন সাহস দেখাতে গেলে সোজা গর্দান নিয়ে নেব। যাতে তড়পাতে তড়পাতে মরে। ‘
পেছনে ফিরে তটিনীকে দেখতে পেল সে।
চোখ গরম করে রাগে কিড়মিড় করতে করতে বলল,
‘ তোকে নিকাহ করাটা আমার ভুল হয়েছে। নিকাহ না করলে তুই সবার কাছে নষ্টাই থেকে যেতি। ছাড়বো না তোকে আমি। ‘
চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে যাওয়ার সময় অপরূপার সামনে গিয়ে থামলো সে। অপরূপা চোখ তুলে তাকাতেই সে বলল,
‘ আমার আরেকটা সৈন্য যদি আহত হয় তোমার খবর আছে। সবার নাচানাচি বন্ধ করে দেব। ‘
অপরূপা কিছু বলল না। শেরহাম গটগট পায়ে হেঁটে কক্ষের দিকে চলে গেল। তটিনী ধীরপায়ে আসতেই শাহানা বলল, ‘ এরকম আর কখনো করবে না। এতবড় কাজ কি করতে পারলে তুমি? ‘
শেরতাজ সাহেব বললেন,
‘ থাক। আর বকিস না। কাল থেকে শুধু বকেই যাচ্ছিস ওকে। ও কেন কাজটা করেছে সেটা নিয়ে ভাব।’
সোহিনী বলল,
‘ আব্বা তুমি প্রশয় দিচ্ছ? ভাইজানের কিছু হয়ে গেলে…
সোহিনীকে থামিয়ে দিয়ে শেরতাজ সাহেব বললেন,
‘ ভালো হতো মরে গেলে । আমরা শান্তিতে থাকতে পারতাম। মায়ের মতো সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়ার জন্য এসেছে। আমি সেই চিত্র দেখতে পাচ্ছি নগরে। সেই একই দৃশ্য। ধ্বংস হবে। করুণ পরিণতি হবে ওর। এত মানুষের অভিশাপ ওকে শান্তি দেবে না। ‘
তন্মধ্যে বিকট শব্দ গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসতে লাগলো। পুরো মহল যেন কেঁপে উঠলো সেই শব্দে। আকাশের উড়ন্ত পাখিরা খেই হারালো। কেমন পোড়া পোড়া গন্ধে ছেয়ে গেল চারপাশ। সোহিনী কেঁদে উঠে বলল,
‘ আমার ভাইজানের কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না। ‘
শেহজাদ বলল,
‘ কিছু হবে না বোন। কেঁদোনা। দেখছি আমরা। ‘
সবাই ছুটে গেল একসাথে। তটিনীও গেল। শেরহাম একনাগাড়ে বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে যাচ্ছে। সামাদ আর মুরাদের কথাও শুনছে না। বাম হাতের
সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গুলি ছুঁড়ছে। ঘোড়াশালের ঘোড়াগুলি ডেকেই যাচ্ছে অনবরত। শেহজাদ গিয়ে বন্দুক কেড়ে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে মেরে বলল,
‘ কি শুরু করেছ তুমি?’
শেরহাম অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকালো। বলল,
‘ যা করছি বেশ করছি। ‘
‘ আর কি কি করার বাকি আছে তোমার? তুমি কি থামবে নাকি আমাকে থামাতে হবে শেষপর্যন্ত? আমি যা আজ পর্যন্ত করিনি তা করতে আমাকে বাধ্য করো না ভাইজান। মেয়ে অপহরণ, দিনেদুপুরে ডাকাতি, বসতি দখল, জাহাজ আক্রমণ করে জাহাজ ডুবে যাওয়ার মিথ্যা ঘটনা রটিয়ে দেয়া, অবৈধ অস্ত্র পাচার, বাজার দর বৃদ্ধি এসব কি হচ্ছে নগরে? কোনো উত্তর আছে তোমার কাছে? ‘
শেরহাম প্রবল আক্রোশে বলল,
‘ বন্দুকের গুলি ছুঁড়লো পুনরায়। ‘
অপরূপা এসে শেহজাদের হাত ধরে টেনে বলল,
‘ আপনি দয়া করে চলে আসুন। তর্কে জড়াবেন না। ‘
শেরহাম সেই হাত ধরাধরি দেখে আবারও বন্দুক ছুঁড়লো। অপরূপা কানচাপা দিল দু’হাতে। শেহজাদ তা দেখে চলে এল অপরূপাকে নিয়ে। শেরহাম গুলি ছুঁড়তেই লাগলো যতক্ষণ না শেষ হলো। বউ স্বামীকে বিপদ থেকে বাঁচায়, আর তার বউ তাকে মারতে চায়। হারামির বাচ্চাকে তালাক দিয়ে দেবে সে। গুলি শেষ হয়ে আসতেই বন্দুক ফেলে দিল সে। ডান হাত চেপে ধরে কেদারায় মাথা এলিয়ে বসে থাকলো সে। সামাদ এসে হাঁটুমুড়ে বসে বলল,
‘ হুজুর এই মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আজ হাতে মেরেছে কাল বুকে মারবে। আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মেয়েটা। ‘
‘ যা করার কর। এখন সামনে থেকে দূর হ। ‘
সামাদ আর মুরাদ সরে গেল। সোহিনী গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এল। হাঁটুমুড়ে বসে বলল,
‘ ভাইজান কিছু খাবার আনি? হাসপাতালে কি না কি খেয়েছেন। ‘
শেরহাম তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
‘ পারলে তনীর বাচ্চাকে এনে দে। কু**পিয়ে মা*রি। ‘
সোহিনী আঁতকে উঠলো। তটিনী এসে শেরহামের পেছনে দাঁড়িয়েছিল সবে, তা শুনে পুনরায় পালালো। এই লোক দেখছি তাকে মেরেই ছাড়বে।
________________
রসাইঘরে হাত কেটে ফেলেছে অপরূপা। তাই রান্নার কোনো কাজে সে হাত লাগাতে পারছেনা। জরুরিও নয়। ফুলকলি, মতিবানু, কুমু টুনু রান্না সেড়ে ফেলে। এমনিতেই ওরাই সব হাতের কাছে যোগাড় করে এনে দেয় অপরূপার আদেশ মতো। অপরূপা শুধু কাঠি নেড়ে রাঁধে। আজ তাও করছে না। শেহজাদ তাকে বলেছে সমুদ্রে নিয়ে যাবে। কখন নিয়ে যাবে তা বলেনি। মহল বিপদগ্রস্ত। জাদুকরদের প্রধান শিকার সে তাই শেহজাদ তাকে নিরাপদে রাখতে চাইছে। অপরূপার অনুরোধে সমুদ্রে নিয়ে যাবে বলেছিল। অপরূপার অপেক্ষা ফুরোয় না। এদিকে তটিনীকে নিয়েও চিন্তায় আছে বেশ। শেরহাম সুলতান একপ্রকার আতঙ্কে রেখেছে সবাইকে।
তটিনী হনহনিয়ে রান্নাঘরে এল। বলল,
‘ কুমু আপা কোথায়? আমার কাপড়চোপড় গুলো কোথায়? ছাদ থেকে নিয়ে আসোনি? ‘
শাহানা বলল,
‘ কুমু তো নেই। এই টুনু কুমুদিনী গেল কই? ‘
টুমু দু’পাশে মাথা নেড়ে বলল,
‘ জানিনা ফুপুম্মা। ‘
অপরূপা বলল,
‘ কক্ষে বোধহয়। আমি ডেকে আনছি। ‘
সে কক্ষের দিকে হেঁটে গেল। শেহজাদের খরগোশকে দেখতে পেল। কক্ষ থেকে হাঁটতে এখানে চলে এসেছে। সে কোলে তুলে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে কুমুর কক্ষে গিয়ে দেখলো কুমু নেই। সে ডাকাডাকি করলো। গোসলখানার দিকে গেল। কুমু সেখানেও নেই।
হঠাৎই কারো দৌড়ে যাওয়ার শব্দ হলো মহলের পেছন দরজার দিকে। খরগোশটিকে ছেড়ে দিয়ে অপরূপা সেদিকে এগিয়ে গেল। দরজার কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে ডাকলো,
‘ কুমু আপা তুমি কি এখানে? ‘
সে দরজা পার হয়ে গেল। দূরের ঝোপঝাড় যেন নড়ে উঠেছে। সেই দোলনাটা দেখতে পেল সে। সেটিও দুলছে। অপরূপার গা ভার হয়ে এল দোলনাটিকে দুলতে দেখে। এগিয়ে গিয়ে ডাকলো,
‘ কুমু আপা আমি জানি তুমি আশপাশেই আছো। কোথায় তুমি? বের হয়ে এসো। লুকিয়ে পড়লে কেন? ‘
অপরূপাকে অবাক করে দিয়ে হাসতে হাসতে ঝোপের আড়াল হতে বেরিয়ে এল কুমুদিনী। হাতের মুঠোয় বেলীফুল। তীব্র ঘ্রাণ এসে নাকে ঠেকলো অপরূপার। কুমুদিনী হাসতে হাসতে বলল,
‘ তোমাকে ভয় দেখাইছি। ভয় পাইছো? ‘
অপরূপা বুকে থুতু ছিটিয়ে বলল,
‘ নাহ। কি ফুল এগুলো?’
কুমুদিনী তার নাকের কাছে ফুলগুলো শুঁকিয়ে বলল,
‘ বেলীফুল। ‘
অপরূপা গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে চোখ বুঁজলো।
হেসে বলল,
‘ খুব সুগন্ধি। ‘
কুমুদিনী অপরূপার চোখের দিকে স্থির চেয়ে থাকলো অনেকক্ষণ। তারপর কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে হাতের ভেতর কিছু একটা গুঁজে দিয়ে কানে কানে ফিসফিস করলো। অপরূপা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। হেসে উঠে বলল,
‘ ওহ এই ব্যাপার? ‘
কুমুদিনী মাথা দোলালো। অপরূপা হেঁটে চলে গেল। সে চলে যেতেই কুমুদিনী ভীতচোখে ঘাড় ঘুরিয়ে ঝোপের দিকে তাকালো । ঝোপটা নড়ে উঠলো পুনরায়।
অপরূপা কক্ষে গিয়ে দেখলো শেহজাদ বন্দুকে গুলি ভরছে। পাশেই কিছু খাতাপত্র। কলমদানি। অপরূপাকে আসতে দেখে শেহজাদ চোখ তুলে তাকালো। বলল,
‘ কি ব্যাপার? এসময় আপনার তো এদিকে পা পড়ে না। ‘
অপরূপার মুখ দিয়ে কথা বেরোলো না। শেহজাদ ড্রয়ার খুলে সেখানে খাতাপত্র রাখলো। আর উপরে কলমদানি সাজিয়ে অপরূপার দিকে ফিরতেই দেখলো অপরূপা বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। শেহজাদ ওর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
‘ রাণীর মুখভার কেন? বন্দুক কেন….
অপরূপা ওকে আর কথা বলতে দিল না।
সে নিকটে এগোনোর আগেই বন্দুক দিয়ে জোরে বাড়ি মারতেই মাথার একপাশ চেপে ধরে শেহজাদ অবাক চোখে তাকিয়ে ডাকলো,
‘ রূপা! ‘
অপরূপা আরও একটা বাড়ি মারতেই শেহজাদ টেবিল ঘেঁষে মেঝেতে পড়ে গেল। অপরূপা ওর মাথাটা কোলে তুলে ফতুয়ার হাতা তুলে ডান হাতের বাহুবন্ধনী খুলে নিজের হাতেরটা মুঠোয় থাকা বাহুবন্ধনী পড়িয়ে দিয়ে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। শেহজাদের মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হতে লাগলো।
চলবে…….