প্রিয় বেগম পর্ব-০৬

0
1569

#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_৬
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

বন্দী কুঠুরিতে থাকা সেই সন্ত্রাসটাকে মুক্তি দিয়েছে ডাকাতদল। তাদের সাথে লোকটা পালিয়েছে।

খবরটা শোনার পর মেজাজ আরও বিগড়ে গেল শেহজাদের। তিরিক্ষি মেজাজে বলল,

তারমানে এই জানো*য়ারের সাথে ডাকাতেরও হাত ছিল! এমন জানলে তো আগেই তার গর্দান নিতাম। জা*নোয়াদের আওলাদ।

খোদেজা এসে শান্ত গলায় বলে

শেহজাদ মাথা ঠান্ডা রাখো পুত্র। এখন মাথা গরম করলে চলবে না।

শেহজাদ মাকে আশ্বস্ত করলো। ওদিকে মতিবানু বিলাপ করেই যাচ্ছে। সেই বিলাপ শুনে শেহজাদের রাগ জ্যামিতিক হারে বর্ধিত হচ্ছে।

তুমি থামবে?

এক ধমকে মতিবানু থেমে গেল। মুখের উপর শাড়ির আঁচল টেনে নিয়ে একদৌড়ে সায়রা আর সোহিনীর কাছে গিয়ে বসে।
সায়রা বলে উঠে, মতিআপা তোমার সাথেই তো ফুলিআপা ঘুমায়। ও ওঠে গেল তুমি তা টের পাওনি?

মতিবানু আবারও বিলাপ শুরু করে। গলা টেনে টেনে বলে,

মোরে মরার ঘুমে ধরছে গো বুবু। মুই টেরও পাইলাম না। ওরে ফুলি তুই কোথায় গেলি রে। বাপের বংশে তুই একমাত্র আছিলি। তুইও কি মোরে একলা রাইখা চইলা গেলি রে ফুলি।

শেহজাদ তার বিলাপ শুনে কটমট চোখে তাকিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে।

ঠিক তারপর নিস্তেজ, নিষ্প্রাণ অপরূপা নির্জীবতা কাটিয়ে চোখ মেলে চারপাশে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো।

সায়রা বলল

অপা আমরা আছি। তুমি ভয় পেওনা।

অপরূপা উঠে বসার চেষ্টা করলো। সোহিনী তাকে বসতে সাহায্য করলো। সায়রা তার চুলগুলো নিয়ে কোনোমতে এলোমেলো হাতে বেণুনী পাকিয়ে দিতে লাগলো। খোদেজা এসে তার সামনে বসে বলল

এই মেয়ে তোমাকে ওরা কি করেছে?

সায়রা ডাক দেয়

আম্মা এসব কেমন প্রশ্ন?

অপরূপা ডুকরে কেঁদে উঠে। তার মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।

সায়রা পানি আনে। অপরূপা তার হাতে ঢকঢক করে পানি খায়। সোহিনী তাকে হাত নাড়াতে বারণ করে। বাহুতে ছেঁড়া ব্লাউজ ঢেকে দেয় শাড়ির আঁচলে। অপরূপা হাত পা গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে। সায়রা বলল

অপা মহলে ডাকাত ঢুকেছিল।

অপরূপা অত্যাধিক বিস্ময়ে হা হয়ে তাকায়। সায়রা তাকে সবটা খুলে বলে। অপরূপা তার সাথে যা যা ঘটেছে সবটা বলে গলার পাশে হাত চেপে কেঁদে উঠে ফুঁপিয়ে।

শাহজাহান সাহেব এসে মাথায় হাত রাখে।

কেঁদোনা তুমি। খোদা সহায় হয়েছেন। নইলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারতো।

ফুলকলির চিন্তায় অপরূপার বিষয়টি চাপা পড়ে থাকে।

অপরূপার গায়ে চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়ে সায়রা আর সোহিনী তাকে নিয়ে তাদের কক্ষে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

তারমধ্যেই পুলিশরা ফুলকলির ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে মহলে ফিরে আসে। মতিবানু হায়হায় করে কেঁদে উঠে তার নিথর দেহের কাছে ছুটে যায়। সাফায়াত বিছানার চাদর এনে ঢেকে দেয় ফুলবানুকে। তার ফুলের মতো চেহারায় নরদানবদের নোংরামোর ছাপ স্পষ্ট লেগে আছে। বাকিরা স্তব্ধ হয়ে যায়। অপরূপার বক্ষ কেঁপে উঠে। সেবার গ্রামের বাঁশবাগানে এমন একটা ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিল। মতিবানুর আহাজারিতে প্রায় সকলেরই চোখ ভিজে উঠে। সাফায়াতের পেছনে শেহজাদ দাঁড়িয়ে স্থিরচিত্তে চেয়ে থাকে ফুলকলির শায়িত দেহের দিকে।

পৌঢ় ডাক্তার এসে তার নাঁড়ি দেখে উৎফুল্লতার সহিত বলে উঠলো

জান আছে জান আছে। মরে নি।

শেহজাদ এগিয়ে আসে।

ও বাঁচবে?

হ্যা। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন সাহেব।

শেহজাদ সাফায়াতকে ডাক দেয়। বাকি কাজের লোকগুলো এসে লম্বা কাঠের পাতলা পাটাতনে করে ফুলকলিকে নিয়ে ছুটে হাসপাতালের উদ্দেশ্য।

পুরো মুখে হাত বুলিয়ে ঘাম মুছে একেকটা আদেশবাণী ছুঁড়তে হঠাৎ অপরূপার দিকে শেহজাদের চোখ পড়ে । আর থমকে যায় সে। অপরূপাও তাকে তাকাতে দেখে গুটিয়ে যায় সায়রা আর সোহিনীর পেছনে। শেহজাদ চোখ সরিয়ে নেয় অন্যত্র। সায়রা অপরূপার হাত ধরে। অভয় দিয়ে বলে,

ভাইজান ইচ্ছে করে তোমাকে আঘাত করেনি অপা। আমার ভাইজান খুব ভালো মানুষ। তুমি ভাইজানের জন্য মনে দ্বেষ পুষে রেখোনা। দেখো ওই লোকটা ডাকাতদলেরই সদস্য ছিল যাকে মারা হচ্ছিল চাবুক দিয়ে। সে এখন ডাকাতদের সাথে পালিয়েছে।

অপরূপার হতচকিত চোখে তাকায়।

ওই লোকটা যার জন্য রোগা লোকটাকে মেরেছি?

হ্যা। সে-ই ডাকাত দলের সদস্য।

অপরূপা বিস্ময়ে বিহ্বলিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার ভুল ভাঙে। ক্রোধের অনলে জ্বলতে জ্বলতে ভাবে এমন জানলে সে ওইদিনই লোকটাকে গলা টিপে মারতো। জা*নো*য়ার।

খোদেজা মাথায় হাত ঠেকিয়ে বলল

খোদা কি মুসিবত চলে এল আমাদের উপর। এই মেয়ে যেদিন থেকে মহলে ঢুকেছে সেদিন থেকে শান্তি নেই। এ কোন আজরাইল ঢুকে পড়েছে আমার মহলে। হে পরওয়ারদিগার তুমি শয়তানদের হাত থেকে রক্ষা করো।

অপরূপা কষ্টেসৃষ্টে গিলে ফেললো সম্পূর্ণ অপবাদ। চাচীও তাকে নষ্টা, বে*শ্যা, অলক্ষী ডাকতো। কিন্তু কেন ডাকতো তার জানা নেই।

শাহজাহান সাহেব খোদেজার কথায় ক্ষেপে গিয়ে বললেন

বেগম চুপ করো। মেয়েটা আঘাত পেয়েছে তুমি দেখতে পাচ্ছ না?

খোদেজা দ্বিগুণ ক্ষোভে জ্বলে উঠে বলে,

মেয়েটা কেন বললো সে বিবাহিত? সে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে কেন মহলে এল? তাকে জিজ্ঞেস করুন।

শাহজাহান সাহেব অপরূপার দিকে অনুপায় চোখে তাকিয়ে বলল

তুমি কেন মিথ্যে বললে অপরূপা? আমি তোমাকে কন্যাস্নেহে দেখেছি। তুমি বিপদে পড়বে বলে মহলে নিয়ে এসেছি। সেই তুমি আমায় মিথ্যে বললে এটা আমি মানতে পারছিনা।

শেহজাদ পেছনে হাত রেখে অন্যত্র তাকিয়ে মনোযোগ রেখেছে তাদের কথোপকথনে। অপরূপার মুখে কোনো কথা নেই।

সায়রা জিজ্ঞেস করলো,

অপা সত্যি করে সবটা বলো। পুলিশ কিন্তু তোমায় সন্দেহ করছে।

খোদেজা কটমট গলায় বলল,

এই মেয়েকে বের করে দিন। ওকে আমার সুবিধার লাগছে না। ও সবাইকে মেরে ফেলবে। ওই লোকটাকে বাঁচাতে চেয়েছিল সে। এখন সেও ডাকাত দলের একজন। এই মেয়েও ডাকাতদলের একজন নইলে ওই লোককে মারার কারণে তার জ্বললো কেন? কেন কুতুবকে চাবুক মারলো?

মায়ের কথায় যুক্তি আছে দেখে শেহজাদ চুপ করে থাকলো। অপরূপাও চুপ করে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনে কথা বলছে না।

শেরতাজ সাহেব খুব কড়া ধাঁচের মানুষ। তিনি হাঁক ছেড়ে বললেন

এই মেয়ে কথা বলো। কেন তুমি মহলে এসেছ মিথ্যে বলে? কি উদ্দেশ্য তোমার? তুমি ডাকাতদলের কেউ? সত্যি কথা বলো। সবটা শুনে তোমাকে আর ছাড় দেয়া হবে না।

অপরূপা তেজঃপূর্ণ চোখে চেয়ে থাকলো।

শেরতাজ সাহেব ভীষণ বিস্ময়ে ফেটে পড়ে চেঁচিয়ে বললেন

এই মেয়ে এখনো চুপ করে আছে। শেহজাদ এই মেয়ে নিশ্চয়ই কোনো কুমতলব নিয়ে এখানে এসেছে। তুমি ওকে এক্ষুণি বন্দী করার আদেশ দাও।

শেহজাদ একনজর অপরূপার দিকে তাকালো। অপরূপা তার আঁখিতে আঁখি মিলাতেই শেহজাদ এগিয়ে আসে। প্রশ্ন করে,

সত্যি কথা বলো রূপা ।

অপরূপা সায়রার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। ফোঁপাতে থাকে অনবরত।

শেহজাদ মেজাজ ঠিক রেখে মনঃস্থির করে বলে,

আমরা পুলিশের সাথে আজই তার গ্রামে যাচ্ছি। তার সম্পর্কে সবটা জেনে আসবো। তারপর সিদ্ধান্ত নেব তার পরিণত কি হবে? ততক্ষণ তাকে নজরে নজরে রাখবে।

অপরূপার চোখে জল নামে এতক্ষণ পর যেন ঘন কালো মেঘ ফুঁড়ে বর্ষণ। হ্যা, মহলের সবাই যখন নিদ্রামগ্ন, মাঝরাত্রিরে সে ঘুম থেকে উঠে হারিকেন নিয়ে ছাদের লোহার দরজাটা খোলা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এমনিই খুলেছিল। ডাকাত আসবে কে জানতো?

শেহজাদ বেরিয়ে পড়ে সাফায়াতের সাথে। সে বেরুতেই শেরতাজ সাহেব উনার লোকবল দ্বারা অপরূপাকে অন্ধকার কামরায় বন্দী করে। সায়রা আর সোহিনীর খারাপ লাগে। তারা আর্জি জানায়

অপা অসুস্থ। ভাইজান আসা অব্দি তাকে মুক্তি দিন।

শেরতাজ সাহেব কথা শুনলেন না। এমনকি এও বললেন, মেয়েটাকে নিয়ে একটা কথাও যদি কেউ বলে তার পরিণতি খুব খারাপ হবে।

বাড়ির অন্য কাজের বুয়া কুমু আর টুনু অন্ধকার কামরার আশেপাশে ঘুরঘুর করে অপরূপাকে ভরসা দেয়।

এই মেয়ে কেঁদোনা। আমরা আছি বাইরে।

অপরূপা তার সবল হাতে দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলে

খোদার কছম আমি কখনো সেচ্ছায় কারো ক্ষতি করিনি। আমাকে মুক্তি দিন।

কাঁদতে কাঁদতে অবশ হয়ে আসা তার শরীর। শক্তি ফুরিয়ে আসে। মাথা ঝিমঝিম করতে করতে সে বসে পড়ে দরজা ঘেঁষে। শাড়ির আঁচল টেনে গায়ে জড়িয়ে হাত পা গুটিয়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে। কাঁপতে কাঁপতে ডাকে

দাদীজান! কোথায় তুমি? আমি খুব কষ্টে আছি দাদীজান!

দরজার ওপাশে কুমু আর টুনু কাঁদতে থাকে তার সাথে সাথে। এমন ফুলের মতো মেয়ের গায়ে এমন অপবাদ মানায় না। সাহেব ভাইজান ফিরে এসে তাকে মুক্ত করুক।

কয়েক লগ্ন পার হওয়ার পর, অপরূপার কান্নার শব্দ আর শুনতে পাওয়া যায় না। সে ক্ষান্ত হয়ে লোহার কপাটে মাথা এলিয়ে বসে থাকে। অন্ধকার কুঠরিতে বসে তার চোখের পাতায় ভেসে আসে সোনালি অতীতের স্বর্ণাভ মুহূর্তগুলো।

***********

অপরূপার অতীত…….

পাতাঝড়ার দিন শেষে গ্রামবাংলা সেজেছে নতুন রূপে। গাছে সবুজ কচি কচি পাতার বাহার, কোকিলের মধুর সুর, পাখির কলকাকলিতে মেতে থাকে তৈমুর বাড়ির আশপাশ। এটি তৎকালীন জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল।

তখন সন্ধ্যাবেলা। সুভার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল অপার বাড়িতে এসে। অপার চাচী কুসুমকে সুভার ভালো লাগে না। মহিলা সারাক্ষণ পেঁচার মতো মুখ করে রাখে।
অপা তাকে বলেছে পরীক্ষা শেষ হলে সে সুভার সাথে পালা দেখতে যাবে। আজ পালার দিন। কিন্তু অপার বাড়িতে আসার পর থেকে অপার কোনো হোল দোল নেই। দাদীজানের কাছে কথাটা কিছুতেই বলতে পারছেনা অপা। দাদীজান আজকাল কড়া হয়েছেন বেশ। অপাকে একা ছাড়তে চান না। গ্রামের কয়েকজনের কুদৃষ্টি পড়েছে তার উপর। মা বাবার ছত্রছায়া সন্তানের উপর না থাকলে তাদের জন্য সমাজটা ভয়ংকর হয়ে উঠে। খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। নূরজাহান অপাকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। একজন ভালো পাত্রের সন্ধান কিছুতেই মিলছে না। ছেলে দেখতে শুনতে ভালো হলেও স্বভাব ভালো না। কথাবার্তার কোনো ঠিক নেই। তারউপর পড়াশোনা নেই। তৈমুর বাড়ির আশেপাশে একমাত্র অপা-ই মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে। মা বাবা ব্যতীত অন্য কোনো খুঁত নেই তার জীবনে। সে সদ্য জন্মলাভকৃত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ চেহারার অধিকারীনি, তার ঘন পাপড়িযুক্ত কালো আঁখি দুটির দিকে তাকালে ঘোর লাগতে বাধ্য, তার সুললিত কন্ঠস্বর বসন্তদূতীকেও হার মানায়। পিতামাতার ছত্রছায়ায় বেড়ে না উঠলেও সে দাদীজানের কাছ নৈতিক শিক্ষা পেয়েছে, কোরআন পাঠ শিখেছে, পুঁথিগতবিদ্যায় দীক্ষিত হয়েছে, নম্রভদ্র ও মিষ্টভাষী হওয়ার কারণে পাড়াপড়শিরা তাকে স্নেহ করে। কুসুমের তীব্র অবজ্ঞা, তাচ্ছল্য তাকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি তার সুশ্রী বদনে বিন্দুমাত্র বেদনার ছাপ ফেলতে পারেনি।

দাদীজান অপার প্রস্তাব শুনে রুক্ষ স্বরে ধমক দিলেন।

যাত্রায় মেলা মানুষ আসে। যাইতে পারবি না। তোরে যাইতে দিতাম না অপু।

মুরগীর খাঁচা থেকে মুরগী বের করতেই মুরগীটা চেঁচাতে থাকে। অপরূপা কানে আঙুল দিয়ে দাদীর পিছু পিছু ঘুরঘুর করে,

মানুষ আসুক। দাদীজান আমরা খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো। আমি আর সুভু যাব আর আসবো।

নূরজাহান কড়া চোখে তাকায়। বলে,

বারণ করেছি মানে যাবি না অপু। সন্ধ্যে বেলায় থুবড়ী মাইয়্যাদের ঘর থেকে বাইর হওন ভালা না।

সুভার মুখটা ছোট হয়ে আসে। সে সনাতন ধর্মের মেয়ে। সে বেরোনোর সময় মাও প্যানপ্যান করছিল কিন্তু বাবা তাকে অনুমতি দিয়েছিল। তাই সে সেজেগুজে হাজির হয়েছে অপার বাড়িতে। কিন্তু অপার দাদীজান বেঁকে বসেছে।
মাগরিবের আজান পড়তেই পুকুরে গিয়ে অযু করে নামাজ পড়ে নিল অপরূপা। সন্ধ্যায় দাদীকে সে হাদিস পড়ে শোনায়। আজ মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরে গেছে।

সুভা তখনও যায়নি। অপা না গেলে সেও যেতে পারবে না। একা একা পালা দেখে মজা নেই। এখন মেয়েদের বসার জন্যও ব্যবস্থা করা হয়েছে ওখানে। কত গ্রাম থেকে লোক আসবে! কত শিল্পীদের সামনে থেকে দেখা যাবে।

অপরূপা নামাজ শেষ করে এসে সুভার পাশে বসলো। বলল,

দাদী যেতে দেবে না।

এখনও সময় আছে। তোর দাদীকে কি আমি কিছু বলব?

অপা বারণ করে দেয়।

এই না না। দাদীজান বকাঝকা করবে।

দাদীজান তখন দই দিয়ে মুড়িমাখা নিয়ে ঘরে এলেন। সুভা আর অপাকে দিয়ে বললেন

এগুলো খেয়ে নে। সুভু খেয়ে তোর বাড়ি যা। থুবড়ী মাইয়্যাদের বেশিক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকোন ভালা না।

সুভা মুখ খুলে।

দাদী একবার অপুরে যাইতে দাও। আর কক্ষণো এমন আবদার করতাম না। মা কালীর দিব্যি।

মায়া মায়া মুখ করে তাকালো সুভা। অপা বলল

থাক সুভু। তুই বাড়ি যাহ। আর যাব না।

অপা অভিমানী মুখ করে ঘরের কাপড়চোপড় গোছাতে থাকে।

সুভা দইমুড়ি চিবোয়। নূরজাহানকে অপার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিটমিট করে হাসে।
অপা নাক টানে। ফুঁপিয়ে বলে

এই সুভু যাহ। রাত হয়ে যাবে।

পূর্ণিমার রাত। আজ নতুন চাঁদ উঠেছে। ভয় নেই।

নূরজাহান বাইরে তাকালো। ঠিকই তো আজ পূর্ণিমার রাত।

সুভা চৌকি থেকে নেমে বলল,

আইচ্ছা তাইলে যাই দাদীজান।

দাদীজান শান্তকন্ঠে বলে,

ওই রহিম্যারে বলি তোরা যাইতেছোস। ও তোগোরে দেইখা দেইখা রাখবো।

অপা বলল

আমি যাব না।

দাদীজান উল্টোসুরে বলে,

আমি রহিম্যারে গিয়া বলি।

দাদীজান বেরিয়ে যেতেই সুভা চৌকি থেকে লাফ দিয়ে নামলো। কোমর দুলিয়ে বলল,

কাম হয়ে গেছে রে অপু। দাদীজানকে ভালোই ডোজ দিছিস। চল চুল বেঁধে দিই।

অপার চুলে বিণুনী পাকিয়ে দিতে দিতে সুভা আর অপা খিলখিল সুরে হেসে উঠলো আনন্দে। বাইরে তারা ভরা আকাশের মধ্যিখানে মস্তবড় চাঁদ দেখে অপার মন আনন্দে নেচে উঠলো।

সুভার সাথে যাত্রাপালা দেখতে বেরিয়ে পড়লো সে।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে