#প্রিয়_বালিকা |৩৬|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
করমজল থেকে শীপ সরাসরি দুবলার চর যাওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ট্যুর অপারেটরের প্রস্তাবে শীপের গন্তব্য নির্ধারণ করা হয় কটকা সমুদ্র সৈকত।কটকা সমুদ্র সৈকত ঘুরে তারপর শীপ দুবলার চর শুঁটকির স্বর্গে যাবে।শীপ যথাযথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোংলা থেকে নব্বই কিলোমিটার দূরে কটকা সমুদ্র সৈকতের একটি খালে নোঙর তোলে।খাল থেকে ট্রলারে করে দফায় দফায় শীপের সবাইকে নিয়ে আসা হয় কটকা জেটিতে।রৌদ্র ও তার ভ্রমণসঙ্গীরা দ্বিতীয় দফায় ট্রলারে ওঠার সুযোগ পায়।জেটিতে আসতেই চোখে বাঁধে রেস্ট হাউজ।সেখানে স্বল্প খরচে রাত্রি যাপন করা যায়।এই সুন্দর প্রকৃতির মাঝে একটি রাত প্রিয় নারীকে নিয়ে কাটানোর খুব ইচ্ছে হচ্ছিল রৌদ্রের। কিন্তু হাতে বেশি সময় নেই।এখানে মাত্র তিন থেকে চার ঘন্টা থাকার সুযোগ আছে।তারপরই আবার পাড়ি জমাতে হবে দুবলার চরের উদ্দেশ্যে।আভা শাড়ি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেখে রৌদ্র বেশ ক্ষেপে গেল।ক্ষিপ্ত স্বরে বলে উঠলো,
– শাড়ি পরার কি দরকার ছিল?এমনি একটা থ্রিপিস পরে আসলে হতো।
আভাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাশ থেকে লিনডা মুখ বাঁকিয়ে সুর টেনে বলে,
– ঢং!
আভা বিরক্ত হয় লিনডার কথায়।তবু প্রকাশ করে না।টলার থেকে নামতে না পেরে হাত বাড়িয়ে দেয় রৌদ্রের দিকে।রৌদ্রের টাকনুর সামান্য উপর পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে।আভা নামলে তার শাড়িও হাঁটু অবধি ভিজে যাবে।আভা এতো কিছু ভেবে শাড়িটা পরেনি।রৌদ্রের ভালো লাগবে ভেবে পরেছে।এভাবে সকলের সামনে অপদস্ত হতে হবে জানলে শাড়ি নিয়েই আসত না সে।আভা মুখ কালো করে বলে,
– আমাকে আবার শীপে দিয়ে আসতে বলেন না।আমি যাবো না।
রৌদ্র আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে পেল সবাই অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।শুধু তারাই এখনো ট্রলারের কাছে দাঁড়িয়ে।রৌদ্র ট্রলারের নিচে আর আভা ট্রলারের উপরে দাঁড়িয়ে সাত পাঁচ ভেবে চলেছে।রৌদ্র আর কালবিলম্ব করে না।সে সোজা আভার কোমর একহাতে জরিয়ে ধরে।তারপর উঁচু করে ট্রলার থেকে নামিয়ে নেয়।তবে ছাড়ে না ওভাবে উঁচু করে রাখে।আভা রৌদ্রের গলা জরিয়ে ভয়াতুর স্বরে বলে,
– এই কি করছেন পড়ে যাবো।
রৌদ্র “টু” শব্দটাও করে না।একহাতে আভাকে উঁচু করে বড় বড় পা ফেলে শুষ্ক জায়গায় চলে আসে।ধীর গতিতে নামিয়ে দেয় আভাকে।রৌদ্র বেপরোয়া ভঙ্গিতে বলে,
– শুঁটকি মাছের ওজনও তোমার থেকে বেশি।
আভা যেন রৌদ্রকে চিনলোই না এমন ভাব নিয়ে সামনে হাঁটা শুরু করলো।রৌদ্র ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো আভার যাওয়ার দিকে।তারপর গলা উঁচিয়ে বলল,
– আমি না নিয়ে এলে এমন ভাব নেওয়া লাগতো না।
রৌদ্রের কথায় ফিরে তাকায় আভা।বিগলিত হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় রৌদ্রের দিকে।রৌদ্র দেরি না করে আভার হাতে হাত গলিয়ে দেয়।আভাকে একহাতে জরিয়ে হেঁটে চলে সকলের পিছু পিছু।অভয় রৌদ্রের উদ্দেশ্যে বিদ্রুপের স্বরে বলে,
– কিরে আশিক বউ তো আমাদেরও আছে আমরা তো তোর মতো বগলের নিচে নিয়ে ঘুরি না।তোর বউ কি হুরপরী নাকি?
রৌদ্র আভার দিকে তাকিয়ে হেসে অভয়কে বলে,
– হুরপরী হলেও ছেড়ে দিতাম।
অহনা অভয়ের পেটে গুঁতা দিয়ে বলল,
– দেখছ ভাইয়ার থেকে শিখো কিছু।
অভয়ের মুখটা ভোঁতা হয়ে গেল।সে রৌদ্রকে সকলের সামনে লজ্জায় ফেলতে গিয়ে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেল।সে এবার হালকা কেশে গলা ঝাড়ে আশেপাশে তাকিয়ে মানুষজন দেখে বউয়ের হাত ধরার ইচ্ছাটা উবে যায়।রৌদ্র কিভাবে পারে লোকজনের সামনেও এভাবে বউয়ের সাথে ঢলাঢলি করে হাঁটতে একটুও লজ্জা করে না তার?অভয়ের তো হাত ধরতে গিয়েই ঘাম ছুটে যাচ্ছে।এক মিনিট!মেয়েতে এলার্জি তো রৌদ্রের ছিলো।এ রোগ তাকে আবার কবে আক্রমণ করলো? সে নিজের বউয়ের হাতটাই ধরতে লজ্জায় মরে যাচ্ছে ওদিকে নিরামিষ রৌদ্র কি সুন্দর বউকে বগলের নিচে নিয়ে হেলেদুলে হেঁটে চলেছে।অভয় আবার গলা খাঁকারি দেয়।সাহস করে বউয়ের হাতটা চেপে ধরে।তাতে অবশ্য অহনার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।সে নির্বিকার ভঙ্গিতে হেঁটে চলেছে এতে অভয়ের সংকোচটাও কেটে যায়।
আভা মুখ তুলে রৌদ্রের দিকে চায়ল।রৌদ্র মিষ্টি হেসে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখালো।আভা হেসে বলে উঠলো,
– আপনি এতো ভালো কেন রৌদ্র।
রৌদ্র ভাবুক ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁট বের করে বলে,
– উমম তা তো জানি না।
আভা অপরাধী সুরে বলে,
– সরি কাল আপনাকে যা নয় তাই বলেছি।আ’ম সো সরি।
রৌদ্র আভাকে নিজের সাথে আরো দৃঢ়ভাবে চেপে ধরে বলে,
– ইট’স ওকে।এটা কোনো ব্যাপার না।সংসারে ঝগড়াঝাটি হবে স্বাভাবিক কিন্তু যতই ঝগড়া হোক আলাদা ঘুমানো যাবে না বুঝলে।
আভা চোখ বড় বড় করে আশে পাশে তাকিয়ে রৌদ্রের হাতে চাপর দিয়ে বলে,
– এখানে ঘুমানোর কথা আসছে কোথা থেকে?
রৌদ্র এক চোখ টিপ দিয়ে আবারো ঠোঁট পাউট করে।শব্দ করে হেসে ফেলে আভা।কিছুদূর হেঁটে যেতেই দেখা মেলে কাঠের ট্রেইল।যে কাঠের ট্রেইল দূর দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত।এটি বেয়ে হাঁটতে শুরু করে সকলে।ধীরে ধীরে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করে সকলে।সকলের একদম সামনে হাঁটছেন টুরিস্ট গাইড।সে সকলকে সুন্দরবন ও কটকা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানাচ্ছেন সকলকে।জঙ্গেলর ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল একঝাঁক হরিণ এদিকে ওদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে।কয়েকজন টুরিস্ট তাদের ঘাসও খাওয়াল।অভয়ও অহনাও খাওয়ালো ঘাস।আজ রৌদ্র ছবি তুলছে না আজ ক্যামেরা লিনডার কাছে সেই সকল মুহুর্ত ফ্রেমবন্দী করছে।আভা ভয়ে হরিণকে ঘাস খাওয়ানোর সাহস পেল না।সহসা দেখা মিলল সুন্দরবনের সবচেয়ে আলোচিত জিনিস তা হলো সুন্দরী গাছ।ছোট সুন্দরী গাছে চারপাশটা ভরে আছে।আর এই সুন্দরী গাছের কারণেই সুন্দরবনের নামকরণ করা হয়েছে “সুন্দরবন”। আরো কিছু গাছপালা দেখা গেল।যেমন-গোলপাতা,কেওড়া আরো বিভিন্ন বন্য গাছগাছড়া।তারা যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ততোই নতুন নতুন বিভিন্ন জিনিস চোখে পড়ছে সকলের।বানরেরদল একগাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে,বন্য শুকর চারিদিকে গন্ধ নিয়ে চলেছে খাবারের সন্ধ্যানে।বিভিন্ন জানা-অজানা পাখিদের কোলাহল সবমিলিয়ে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ।আভা এবং রৌদ্রের পাশাপাশি হাঁটছে এক বিদেশি যুবক।ছেলেটি বারবার তাদের দিকে তাকাচ্ছে বিষয়টি রৌদ্র লক্ষ্য করলে নম্র স্বরে ছেলেটিকে বলে,
– হোয়ার আ’র ইউ ফ্রম?
ছেলে নিজস্ব বাচনভঙ্গিতে উত্তর করে,
– আ’ম ফ্রম লন্ডন।
– আই সি হউ ইজ দিস প্লেস?
ছেলেটি পুলকিত স্বরে বলে,
– আও দিস প্লেস ইজ বিউটিফুল। আই হ্যাব নেভার হ্যাড সাচ আ গুড টাইম বিফোর।এন্ড ওয়ান মোর থিংক ইউ আ’র সাচ আ কিউট কাপল।
রৌদ্র হাসিমুখে বলে,
– থ্যাংক ইউ।
অতঃপর আবারো সকলে চারিপাশ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জীবটি হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।কিন্তু বাঘ দেখার সৌভাগ্য সকলের হয় না।আভাও তার ভ্রমণসঙ্গীদেরও বুঝি বাঘ দেখা ভাগ্যে ছিল না।কিন্তু তারা বাঘে থাবায় বালুতে হওয়া ছাপ দেখতে পায়।বাঘ তার বিশাল পায়ের ছাপ ফেলে এই রাস্তা ধরে হেঁটেছে।আভা পায়ের ছাপের দিকে চেয়ে শুঁকনো ঢোক গিলে।শরীরের সবকটা লোম দাঁড়িয়ে যায় তার।রৌদ্রের হাত খামচে ধরে সে।রৌদ্র স্মিত হেসে আভাকে আশ্বাস দেয়,
– বাঘ এখান থেকে হেঁটে চলে গিয়েছে জঙ্গলের আরো ভিতরে।আর আসবে না ভয় পেও না
ঘন্টা চারেক তারা এভাবেই আসেপাশে ঘুরাঘুরি করে রওনা হয় দুবলার চরের জন্য।শীপে উঠেই আভা শাড়ি বদলে ফেলে একটি খয়েরী রঙের সিল্কের থ্রিপিস পরে।বেশ কিছু ঘন্টার ব্যবধানে তারা চরে পৌঁছায়।এখানেও ট্রলারে করে চরে নিয়ে যাওয়া হয়।আভা জুতো খুলে হাতে নেয়।চরে পা রাখতেই পায়ে নরম কিছুর স্পর্শ পায়।লাফিয়ে ওঠে রৌদ্র আভার হাত ধরে আছে আভাকে লাফাতে দেখে বলে,
– কি হলো হঠাৎ?লাফাচ্ছ কেন?
আভা কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিমায় বলে,
– পায়ে যেন কি লাগছে।
আভা পায়ের পাতা পুরো না ফেলে বৃদ্ধ আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।রৌদ্র আভার কথায় হাঁটু ভেঙে বসে বালু থেকে জেলির মতো কিছু একটা তুলে আভার মুখের সামনে ধরে।আভা চিৎকার করে ওঠে ভয়ে।রৌদ্র উচ্চস্বরে হাসছে পাশে অভয় আর অহনা দাঁড়িয়েও হাসছে।লিনডা মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে,
– এহ্ ন্যাকা!
রৌদ্র জিনিসটি আবার বালুতে ফেলে হাত ঝেড়ে বলে,
– এটা জেলি ফিস।ভাটায় আঁটকে গিয়েছে এখানে জোয়ার এলে আবার চলে যাবে।এখন চলো।
তারা চর বেয়ে অনেকটা দূরে গিয়ে যার যার নিজস্ব ক্যাপ তৈরি করে।আজ রাত এখানেই থাকবে।বন ফায়ার আর ফিস বারবিকিউ হবে।সকলে খুব বেশি আগ্রহী।দেখতে দেখতে আলো ফুরিয়ে এলো।রৌদ্র-আভা চরের বালুতে বসে সূর্য ডোবা দেখছে।বাতাসে এক মোহনীয় সুঘ্রাণ।যা উত্তপ্ত করে তুলছে রৌদ্রের সারা শরীর।সে ক্ষণে ক্ষণে উষ্ণ স্পর্শ ছুঁইয়ে দেয় আভার কপালে,গালে,চোখে।মাঝে মাঝে সে স্পর্শ আভার থুতনিতেও স্থাণ পায়।বেখেয়ালিতে আবার কখনো অধরের একটুকরো অংশ ছুঁয়ে যায় সে স্পর্শ।কেঁপে ওঠে আভা।শুঁকনো ঢোক গিলে নিষ্পলক চেয়ে থাকে অস্তমিত সূর্যের দিকে।ধীরে ধীরে বিশালাকৃতির সে অগ্নিকুণ্ড পানির অতল গভীরে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে চলেছে।একসময় নিজের সবটুকু বিশাল জলরাশিকে উৎসর্গ করে সে।ধরনীতে নেমে আসে আঁধার কালো রাত।রৌদ্রের অনবরত ঠোঁটের স্পর্শগুলো ভীষণভাবে কাতর করে তোলে আভাকে।নেশাক্ত দৃষ্টিতে রৌদ্রের চোখে চোখ রাখে সে।রৌদ্রের শিকারী দৃষ্টি তাকে হিসহিসিয়ে কিছু বলে তবে তা বিশ্লেষণ করার আগেই ডাক পড়ে তাদের,
– এই যে জোড়া শালিক বারবিকিউ খাবে নাকি পেট ভরা?
ঘোর কাটে দু’জনারই।তবে অনুভূতির প্রখরতা কাটে না এক বিন্দুও বরং সে আকাঙ্খা তীব্র থেকে তীব্র হয়।রৌদ্রের যেন উঠতে অনিহা।সে এখনো আভার দিকে তাকিয়ে ঠাঁই বসে আছে।আভা হেসে রৌদ্রের হাতে বারি দিলো।তারপর নিজেই উঠে দাঁড়ালো রৌদ্রের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
– চলেন ডাকে তো।
রৌদ্র ভোঁতা মুখে নিচের ঠোঁট বের করে বলে,
– না গেলে কি হয়?
আভাও রৌদ্রের মতো একই ভঙ্গিতে বলে,
– গেলে কি হয়?
রৌদ্র অনিচ্ছার শর্তেও উঠলো এবার।আভাকে একহাতে চেপে এগিয়ে গেল সকলের দিকে।সকলে বন ফায়ার জ্বালিয়ে তার চারপাশে গোল হয়ে বসে আছে।পাশেই চিকেন বারবিকিউ আর ফিস বারবিকিউ হচ্ছে।মাংস পোড়া ঘ্রাণে মোঁ মোঁ করচ্ছে চারিদিকটা।কারো হাতে গিটার কেউবা প্রিয় মানুষের কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিতে আঁখি যুগল বন্ধ করে আছে।রৌদ্র এবং আভাও সেখানের একটি জায়গায় নিজেদের জন্য জায়গা করে নিলো।গিটারের সুর তুলে সকলে একসাথে গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠলো,
“এই সাগরপাড়ে আইসা আমার মাতাল মাতাল লাগে
এই রূপ দেখিয়া মন পিঞ্জরায় সুখের পক্ষী ডাকে
পারতাম যদি থাইকা যাইতাম এই সাগরের পাড়ে
ঝিনুক-মালা গাঁইথা কাটায় দিতাম জীবনটারে
আমার মন বসে না শহরে
ইট পাথরের নগরে
তাই তো আইলাম সাগরে
তাই তো আইলাম সাগরে!”
বারবিকিউ তৈরি শেষ এবার সকলে ভাগ বাটওয়ার করে খাওয়ার সময়।এদিকে জোয়ারে পাড়ের বেশ খানিকটা পানিতে ডুবে গিয়েছে।আকাশটাও কেমন অশ্রুসিক্ত।রৌদ্র মাথা তুলে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।আকস্মিক ঝুম করে আকাশ ফেটে নেমে এলো রহমতের পানি।সকলে তড়িঘড়ি বারবিকিউসহ প্রয়োজনীয় সকল জিনিস ক্যাম্পে রেখে আনন্দ উল্লাস করতে করতে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ল সমুদ্রের পানিতে।আভা রৌদ্রের হাতে টান দিয়ে উত্তেজিত স্বরে বলল,
– রৌদ্র তাড়াতাড়ি ক্যাম্পের ভিতরে চলেন ভিজে যাচ্ছি।
রৌদ্র আকাশ পানে মুখ তুলে চোখের পাতা বন্ধ করে ঠাঁই বসে রইলো।রাতের আধারে সমুদ্রের পাড়ে বৃষ্টি যেন একটুকরো স্বর্গ এনে দিলো রৌদ্রের হৃদয়ে।সে আচমকা উঠে আভার হাত আঁকড়ে ধরে ছুট লাগালো সমুদ্রের জলে।এতোক্ষণে সকলে ভিজে জুবুথুবু।রাতের আঁধারে এভাবে পানিতে নামা বিপদজনক হলেও তা এখন কারো মস্তিষ্কে কড়া নাড়তে সক্ষম হচ্ছে না।সকলে যার যার নিজেদের মতো সমুদ্রের জলে আনন্দ উল্লাস করতে ব্যস্ত।জোয়ারে সমুদ্রের পানি শান্ত।তবে মাঝে মাঝে উত্তাল স্রোত এসে সকলকে স্থানচ্যুত করছে।রৌদ্র আভা বেশ অনেকটা জলে নেমে গেল।একে অপরের দিকে পানির ছিটে দিয়ে চলেছে।বেশ আনন্দ করছে তারা।আভা প্রথমে ভয়ে নামতে না চাইলেও এখন সেই সবচেয়ে বেশি মজা করছে।এর মধ্যে একমুহূর্তের জন্যও আবার হাত ছাড়েনি রৌদ্র।শক্ত করে নিজের হাতে আবদ্ধ করে রেখেছে সে আভার হাত।হঠাৎই বিশাল এক স্রোতের ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে গেল আভা।শরীরের ওজন কম হওয়ায় তাকে স্রোতের নিচে চাপা পড়তে হলো।সবকিছু ভিষণ অদ্ভুত লাগল আভার কাছে।কানে কোনো শব্দ পৌঁছাল না তার।চোখে কাউকে দেখতে পেল না সে।হঠাৎই কোনো এক অজানা অন্ধকূপ তলিয়ে গেল সে।কোনোকিছু অনুভব করার অবস্থায় রইলো না সে।শুধু অনুভব করল তার ডান হাতটা কেউ শক্ত করে চেপে ধরে আছে।
চলবে…
#প্রিয়_বালিকা |৩৭|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
প্রবল স্রোতের নিচে আভাকে চাপা পড়তে দেখে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল রৌদ্রের।হৃৎপিণ্ড হালকা হয়ে দেহ থেকে বেরিয়ে আসতে চায়ল।রৌদ্র শক্ত করে ধরে থাকা আভার হাতটা আরো বেশি শক্ত করে চেপে ধরে।আভাকে টেনে নিজের সাথে আগলে নেয়।স্রোত চরে বারি খেয়ে আবারো ফিরে যেতেই আভাকে জরিয়ে পাড়ে চলে আসে রৌদ্র।আভা অনবরত কেশে চলেছে।সকলের দৃষ্টি যায় আভার দিকে।পাড়ে বসে আভাকে নিজের বুকের সাথে চেপে রৌদ্র কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
– কিছু হয়নি আভা।দেখ সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।
– আভার কি হয়েছে?
অভয়ের প্রশ্নে ভীত হয় রৌদ্র।গলা ঝেড়ে আমতা আমতা করে বলে,
– কিছু না।ঐ স্রোত হলো না তাই একটু পানি খেয়ে ফেলেছে।
সমুদ্রের সামনে থাকা রিসোর্টের কৃত্রিম আলোই চারিদিকটা বেশ আলোকিত।রৌদ্র আভাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে অভয়কে বলল,
– অভয় যা তো একটা গরম কাপড় নিয়ে আয়।
আভা পেট মুচড়ে বমি ঠেলে এলো।সমুদ্রের নোনা পানি পেটে ঢুকেছে।গলা বুক জ্বলে ছাঁই হয়ে যাচ্ছে।আভা “ওয়াক ওয়াক” করে বমি করার চেষ্টা করে।কিন্তু পেট থেকে পানি ছাড়া কিছুই বের হয়না।আভার কোনো জ্ঞান নেই।জ্ঞান থাকতেও যেন সে বেহুঁশ।আশেপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই অনুভব করতে পারছে না সে।রৌদ্র আভাকে বমি করতে দেখে আভাকে সোজা করে বসানোর চেষ্টা করল।তবে আভা নিজের ভর ধরে রাখতে সক্ষম না হয়ে বারবার এলিয়ে পড়ে রৌদ্রের শরীরে।রৌদ্রের হাত পা এখনো কাঁপছে।গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।কিছুক্ষণ আগের দৃশ্য চোখের সামনে ভাসতেই সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে তার।আভা রৌদ্রের বুকে চুপটি করে ঝিমাচ্ছে।রৌদ্র আভার মুখে কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভেজা চুলগুলো কম্পনরত হাতে সরিয়ে দিলো।আভার কপালে গভীর চুম্বন শেষে শক্ত করে চেপে ধরে নিজের বুকে।
ধীরে ধীরে সম্মতি ফেরে আভার।হুঁশ হতেই সর্বপ্রথম অনুভব করে রৌদ্রের অস্বাভাবিক গতিতে ছুটে চলা হৃদয় স্পন্দ।দূর্বল আভা চিন্তিত হয়।রৌদ্রের বুকের বামপাশে আলতোভাবে হাত রাখে।ধীর গতিতে মাথা তুলে রৌদ্রের মুখের দিকে নিভু নিভু দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাতর স্বরে বলে,
– আপনি ঠিক আছেন?আপনার হার্ট এতো ফার্স্ট বিট করছে কেন?
আভাকে চোখ খুলতে দেখে জ্বলজ্বল করে ওঠে রৌদ্রের চোখমুখ। বুক আভার মাথা সরিয়ে দু’হাতে আভার মুখমণ্ডল আগলে নিয়ে বলে,
– এখন কেমন লাগছে তোমার?পানি খেয়েছ অনেক?ভয় পেয়েছ?
আভা কিছুক্ষণ কাতর চোখে রৌদ্রের দিকে চেয়ে থাকে।কিছুক্ষণ আগে ঘটা ঘটনাগুলো মনে পড়তেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে আভা।তৎক্ষনাৎ আভাকে আবারো নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে রৌদ্র।শান্তনার স্বরে বলে,
– হুঁশশ! কাঁদে না।দেখ,সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।আমরা পাড়ে। আমি আছি তো ভয়ে পেও না।
আভা রৌদ্রের বুকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নাক টেনে বলে,
– এক্ষুনি সব শেষ হয়ে যাচ্ছিল।আমি আমি ভেবেছি আপনাকে আর দেখতে পাবো না।আপনার সাথে আমার আর সংসার করা হবে না।
– কেঁদো না প্লিজ দেখো তোমার কিছু হয়নি।আমারো কিছু হয়নি।আমরা সবাই ঠিক আছি।তুমি আমার সাথে আছো আমি তোমার সাথে আছি।কারো কিছু হয়নি ওটা জাস্ট সামান্য একটা ঢেউ ছিল।
অভয় ক্যাম্প থেকে তোয়ালে এনে দিলো।রৌদ্র আভাকে বুকে রেখেই তোয়ালে দিয়ে ভালো করে পেঁচিয়ে দিলো তাকে।আভা রৌদ্রের দিকে দূর্বল চাহনি দিয়ে ও দূর্বল স্বরে বলে,
– পেট জ্বলছে।ছেহ্ কি লবণ পানি।
আভার মুখ ভঙ্গি দেখে এবং বিবৃতিতে উপস্থিত সকলে হেসে দিলো।রৌদ্রের ঠোঁটেও এতোক্ষণে দেখা গেল মৃদু হাসি।আভাকে ধরে আনা হলো ক্যাম্পের সামনে করা বন ফায়ারের কাছে।ঠান্ডায় কাঁপুনি উঠে গিয়েছে মেয়েটার।ক্যাম্পে গিয়ে কাপড় বদলে আবার আগুনে সামনে জড়ো হয় সকলে।হাতের গরম কফি আর বারবিকিউ যেন কিছুক্ষণ আগের সেই থমথমে পরিবেশটা আবারো প্রাণোচ্ছল করে তোলে।
সুন্দর কিছু মুহূর্ত একসঙ্গে কাটানোর পর সকাল হতেই সকলে আবার রওনা হয় নিজেদের বাড়ির পথে।
বাড়িতে ফিরে লিনডা নিজের দেশে ফিরে যায়।অভয় নিজের কাজে অহনা মুন্সি বাড়িতে ফিরে যায়।প্রবহমান সময় যেন গড়িয়ে যায় চোখের পলকে।রৌদ্র আভার সম্পর্কের বয়স বেড়ে হয় এগারোটা মাস।কিন্তু কারো প্রতি কারো ভালোবাসা,যত্ন,শ্রদ্ধা এক বিন্দু পরিমাণও কমে না।রৌদ্র একটি কোম্পানিতে আইটি এন্ড ইনফরমেশন সিকিউরিটি এইচ.টি.এম.এল. ডেভলপার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে।ছয় সংখ্যার বিশাল বেতন পায় সে।পাশাপাশি সপ্তাহে দুই একটা প্রজেক্ট নিয়েও কাজ করে।রৌদ্রের কথা সত্য প্রমাণ করে থার্ড সেমিস্টারে আভার সত্যিই দুইটি কোর্সে সাপ্লি আসে।তবে রৌদ্র এ নিয়ে তেমন কিছু বলেনি।সে দুই কোর্সে আবারো পরীক্ষা দেয় তবে সিজিপিএ তেমন ভালো হয়না।পরের সেমিস্টারে রৌদ্রের গাইডলাইনে হাই সিজিপিএ তোলে আভা।বড়সড় একটি বাসা নিয়েছে রৌদ্র।জায়গা কিনেছে আভা এবং তার নামে।জীবন বেশ ভালো কেটে যাচ্ছে তাদের।আগামীকাল শুক্রবার হওয়ায় রৌদ্রের ঘুমাতে যাওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই।আভা এই নিয়ে চারবার ডেকে গিয়েছে কিন্তু রৌদ্র তার কম্পিউটার রুমে সেই যে ঢুকেছে তার আর কোনো খোঁজ নেই।আভা এবার পা টিপে টিপে রৌদ্রের কম্পিউটার রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো।দরজার সাথে কান লাগিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ভিতরে কি চলছে।কিন্তু কোনো টু শব্দও তার কানে এলো না।আভা আগের মতোই সতর্কতার সহিত নিঃশব্দে রুমের দরজা খুলে মাথা গলিয়ে ভিতরে উঁকি দিলো।রৌদ্র এক ধ্যানে বিশালাকৃতির মনিটারে তাকিয়ে।হাতে একটি ফ্যান্সি গেমিং কন্ট্রোলার।আভা মনিটরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পায় সেখানে কার রেসিং ভিডিও গেইম চলছে।তরতরিয়ে আভার মাথায় রাগ উঠে যায়।এদিকে আভা ডেকে চলেছে আর সে বারবার,
– আসছি দাঁড়াও একটা জরুরি কাজ করছি
বলে বলে এখানে গেইম খেলছে?এটা তার জরুরি কাজ?আভা রেগেমেগে ভিতরে প্রবেশ করতে গিয়েও থেমে গেল।রান্নাঘরে গিয়ে এককাপ কফি তৈরি করে মুখে একটি কৃত্রিম অমায়িক হাসি ফুটিয়ে রৌদ্রের কম্পিউটার রুমে প্রবেশ করে সে।একদম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কফিটি কীবোর্ডের পাশে রাখে।রৌদ্র একপলক তাকিয়েও দেখলো না আভাকে।সে গেইম খেলায় এতোটাই মগ্ন যে আভা এসেছে তা সে ঠাওর করতে পারিনি।আভা আরো বেশি চটে গেল।সে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল,
– রৌদ্র এটা আপনার জরুরি কাজ?
এতোক্ষণে রৌদ্র আভার দিকে চায়লো।তবে দৃষ্টি স্থির রাখে না।তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি ফিরিয়ে আবারো মনিটরে তাকায়।আভা তা দেখে ঠোঁট গোল করে একটি শ্বাস ছাড়ে।পূর্বের ভঙ্গিতে বলে,
– আপনার জন্য কফি করে এনেছি।
– আভা একটু ওয়েট করো আর ত্রিশ সেকেন্ড পরেই ফিনিশ লাইন ক্রস করবো আর মিশন কমপ্লিট হবে।
রৌদ্রের ব্যস্ত স্বরে এমন বাক্য পছন্দ হয় না আভার।সে সারা ঘরে চোখের মণি ঘুরিয়ে সুইচবোর্ডে রৌদ্রের কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত প্লাগটির দিকে নজর স্থির করে।মস্তিষ্ক জুড়ে খেলে যায় এক শয়তানি বুদ্ধি।ধীর গতিতে সেদিকে এগিয়ে যায়।সুইচবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে রৌদ্রকে একপলক দেখে।রৌদ্রকে দেখতে বেশ লাগছে আবার হাস্যকরও লাগছে।হাঁটু অবধি কালো ট্রাউজার, খালি গা,এলোমেলো চুল আর বরাবরের মতো চোখে সানগ্লাস। আভা ঠোঁট চেপে হেসে সুইচবোর্ডে থেকে প্লাগটি খুলে দিলো।মাত্রই ফিনিশ লাইনটি ছুঁতে চলেছিল রৌদ্র। আচমকাই কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেল তার।রৌদ্র গেমিং কন্ট্রোলারটি নিজের হাঁটুতে বারি দিয়ে বলে উঠলো,
– হো’লি শি’ট!
আভা মুখে হাত দিয়ে হাসে।রৌদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে দুঃখী স্বরে বলে,
– কি হলো রৌদ্র? ফিনিং লাইন ক্রস করা হলো না বুঝি?
– আ’ম শিওর এটা তুমি করছো।ইচ্ছা করে করছো।ইশশ!আরেকটু হলে মিশন কমপ্লিট হয়ে যেত।
– আও..!আমি করলাম নাকি?আ’ম সো সরি।
আভা এবার রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
– তখন থেকে ডাকছি আমাকে যেন চোখেই দেখছেন না।এসব বাচ্চাদের মতো গেইম না খেলে তো আমাকে একটু সময় দিতে পারেন।তাহলে আমাদের রিলেশনশীপটা আরো হেলদি হয়।
– রিলেশনশীপ হেলদিই আছে আর হেলদির প্রয়োজন নেই তোমাকে আরেকটু হেলদি হতে হবে।তোমাকে একটু ওয়েট গেইন করতে হবে।
– আমি তো খাই কিন্তু শরীরের না লাগলে আমি কি করবো?
– শোনো আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।চলো আমরা বেবি নিই তাহলে তুমি মোটা হয়ে যাবে।আমি দেখেছি বেবি হলে সব মেয়েরাই গোলুমোলু হয়ে যায়।
আভার রাগ পড়ে গেল।সে লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নত করে ফেলল।
– বেবি?!
বলেই মুখটা হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে আভা।রৌদ্র বাঁকা হেসে তার দিকে চেয়ে আছে।আচমকাই গম্ভীর ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
– হ্যাঁ বেবি। বাট এখন না তোমার গ্রাজুয়েশন শেষ হবে।বাড়ি কমপ্লিট হবে তারপর।
আভার মুখটা কালো হয়ে যায়।ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
– কেন এখন না কেন?গ্রাজুয়েশনের পর কেন?বাবু হলে কি সমস্যা?আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করবো কিন্তু বাবুও হবে।
– না আগে গ্রাজুয়েশন।আর তাছাড়া আমি আরেটু সবকিছু গুছিয়ে নিই তারপর।এখনো অনেককিছু বাকি।
– কি বাকি?
– ওটা সারপ্রাইজ।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রৌদ্র।আভাকে কোলে তুলে বেডরুমের দিকে অগ্রসর হলো।
আভাকে কোল থেকে নামিয়ে কাবার্ড থেকে ছোট একটি বাক্স বের করলো রৌদ্র।বাক্সটি খুলে আভার সামনে ধরলো।দেখা গেল একজোড়া পাথর বসানো চুড়ি।পাথরগুলো জ্বলজ্বল করছে,সম্ভবত ডায়মন্ড।আভা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে সে চুড়ি জোড়ার দিক।রৌদ্র চওড়া হেসে বলল,
– বিয়ের পর সেভাবে কোনো গিফট দেওয়া হয়নি এটা তোমার গিফট।
রৌদ্র চুড়ি দু’টো নিজের আভার হাতে পরিয়ে দিলো।প্রথমে ডান হাতে এবং পরে বাম হাতে।আভা হা করে হাত দু’টো চোখের সামনে ধরে তাকিয়ে আছে।সে শুঁকনো ঢোক গিয়ে রৌদ্রের দিকে তাকায়।রৌদ্র আবার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।হাতে আগে থেকে একজোড়া সোনার চুড়ি ছিল।ডায়মন্ডের চিকন চুড়ির সাথে সোনার চুড়ি দু’টো তেমন মানালো না।তাই আভা সোনার চুড়ি খুলে ফেলল।হাত ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলল,
– খুব সুন্দর।
– কে পছন্দ করেছে দেখতে হবে না?
– আপনি আমার হাতের মাপ জানলেন কিভাবে?
– আমার তর্জনি আর বৃদ্ধ আঙুল এক করলে যতটুকু গোলহয় তোমার হাত ততটুকুই।তাও একবার নিশ্চিত হওয়ার জন্য তোমার ঘুমের ঘোরে ফিতার মাপ নিয়েছিলাম।
– অনেক সুন্দর হয়েছে।
– তাহলে আমাকে থ্যাংক ইউ কিসি দিয়ে দাও তাড়াতাড়ি।
শব্দ করে হেসে ফেলে আভা।রৌদ্র চোখ বন্ধ করে ডান গাল এগিয়ে দেয় আভার দিকে।আভা ধীর গতিতে দু কদম এগিয়ে আসে রৌদ্রের কাছে।মুখ এগিয়ে রৌদ্রের গালে ঠোঁট ছোঁয়ানোর আগেই কি মনে করে থেমে যায়।গালে ঠোঁট না ছুঁইয়ে আচমকা ঠোঁট ছোঁয়ায় রৌদ্রের গলার উঁচু অংশে।স্পর্শ স্থির রাখে অনেকটা সময়।চোখ বড় হয়ে যায় রৌদ্রের।শুঁকনো ঢোক গিলতেই আভার ঠোঁটের নিচে থাকা উঁচু অংশটি কেঁপে ওঠে।রৌদ্র অজান্তেই তার ডান হাত আভার কোমরে বিচরণ করে।আভার ছোট ছোট স্পর্শ রৌদ্রের শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।আজ কতগুলো মাস কাছে আসা হয়,ভালোবাসা হয়।তবু যেন দু’জন দু’জনের ছোঁয়ায় নতুনত্ব খুঁজে পায় রৌদ্র আভা।আভা সরে আসতেই অবিলম্বে রৌদ্র মুখ ডুবিয়ে দিলো আভার মসৃণ গলদেশে।ভালোবাসা নাম মাদকে মস্তিষ্ক বিকল হলো একজোড়া বাবুইপাখির।
রৌদ্রের কেনা জায়গার উপর বিশাল কাঠামোর একটি বিলাসবহুল বাড়ি হবে।আজ প্রথম ইট বসানো হবে বাড়ির দালানে।সকলের আনন্দ বাঁধ ভাঙা।আভা এতোটাই খুশি যে থেকে থেকে কিছুক্ষণ পরপর তার চোখে জল জমা হচ্ছে।রৌদ্র চেয়েছিল তার বাবা-মাও আজ এখানে উপস্থিত থাক।কিন্তু তাদের জরুরি কাজের জন্য তারা আসতে পারবেন না।তাই সর্বপ্রথম আভাকেই দেওয়া হলো ইট বসানোর জন্য।সাদা পাঞ্জাবিতে জুম্মার নামাজ শেষে সকলকে একসাথে এখানে নিয়ে জড়ো হয়েছে রৌদ্র।রৌদ্র একটি ইট আভার দিকে এগিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
– ওখানে দাও।
আভা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ইটটি বসিয়ে দিলো। এরপর রৌদ্র দিলো।আগামীকাল থেকে জোরদারভাবে শুরু হবে বাড়ি বানানোর কাজ।বাড়ির ভীতে ইট বসানো শেষে রৌদ্র তাকে অন্য একটি জায়গায় নিয়ে গেল।সেখানেও ভীত তৈরি করা হচ্ছে।আভা অবাক স্বরে রৌদ্রকে জিজ্ঞেস করে,
– এটা কি?এখানে আবার কি হচ্ছে?
– মসজিদ। নাম কি দেওয়া যায় বলো তো?
আভা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে।রৌদ্র নির্বিকার।আভাকে অবাক হতে দেখে সে আভার নাকে টোকা দিয়ে বলে,
– আচ্ছা নাম পরে ঠিক করবো।এখন চলেন এখানেও কনস্ট্রাকশনের কাজ উদ্ভোদন করবেন আমার গুড লাক।
আভা একাধারে মুগ্ধ এবং অবাক।রৌদ্র এখানে মসজিদ তৈরি করছে?কই সে তো কিছুই জানে না।এই সারপ্রাইজের কথায় কি গতকাল রৌদ্র তাকে বলেছিল?অসম্ভব সুন্দর এ সারপ্রাইজ।হৃদয়ে দাগ কেটে গেল এ সারপ্রাইজ।এই মুহুর্তে আভার আরো আরো আরো বেশি ভালোবাসতে মন চায়লো রৌদ্রকে।
চলবে….
#প্রিয়_বালিকা |৩৮|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
মুন্সি বাড়িতে উৎসবের আমেজ।জোড় কদমে চলছে বাড়ি সাফ সাফাইের কাজ।আজ বাড়িতে নতুন সদস্য আসবে।মুন্সি বাড়ির বংশধর অভয়ের রাজকুমার আজ বাড়িতে আসবে।সাতদিন বয়সী রাজকুমারকে স্বাগত জানাতে সকলে ব্যতিব্যস্ত।গাড়ির শব্দ হতেই সকলের চোখমুখ চকচক করে উঠলো।সকলে তড়িঘড়ি বাড়ির বাইরে চলে গেল।আরাভ সাহেবের কোলে অভয়ের রাজকুমার।অভয় দূর্বল অহনাকে ধরে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে।অহনার রক্তস্বল্পতার কারণে খিঁচুনি উঠে যায় যার কারণে সাতদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়।এখন সুস্থ তবে পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন তার।প্রেমা সকলের আগে আরাভ সাহবের থেকে ছেলের রাজকুমারকে কলে তুলে নিলেন।
– দেখি আমার দাদুভাইকে আমার কলে দাও।
– দাদুভাই কি শুধু তোমার একার নাকি?আমাদের সকলের রাজকুমার সে।
অহনা দূর্বল ভঙ্গিতে হাসে।বলে,
– বাবা আপনাদের দাদুভাইয়ের নাম ঠিক করেছেন?
চট করে তিন্নি বলে উঠলো,
– আমি ঠিক করেছি একটা নাম।
– কি নাম?
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল অভয়।সকলের দৃষ্টি তিন্নির দিকে সে কি নাম বলবে সকলে তা শোনার জন্য আগ্রহী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
– যেহেতু ভাইয়ার নাম অভয় তাহলে ভাইয়ার বাচ্চার নাম হওয়া উচিত নির্ভীক কি বলো?একই অর্থ।
আভা বিগলিত হেসে বলে,
– খুব সুন্দর নাম।নির্ভীক মুন্সি।এটাই ভালো হবে।
আভা মায়ের কোল থেকে নির্ভীককে কোলে তুলে নিলো।অহনাকে নিচের একটি ঘর নির্ধারণ করে দেওয়া হলো।আপাতত তার সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।তাই সুবিধা মতো তাকে নিচের ঘর দেওয়া হলো।আভা নির্ভীককে কোলে নিয়ে তার সাথে বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে,
– হ্যালো আব্বু আমি তোমার ফুপি।ফুপি তোমাকে অনেক ভালোবাসে।ফুপি তোমাকে একটা ঘড়ি ব্রেসলেট দিবো।একটা ছোট্ট ব্রেসলেট একটা বড় ব্রেসলেট। কেমন?
রৌদ্র আভাকে দেখছে আর ঠোঁট মেলে হাসছে।আভা রৌদ্রের দিকে এগিয়ে এলো।নির্ভীককে রৌদ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– কোলে নিবেন?
– দাও।
রৌদ্র অতি সতর্কতার সাথে কোলে তুলে নিলো নির্ভীককে।আভা মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে দু’জনের দিকে।আনমনে বলে ওঠে,
– আপনাকে তো বাচ্চা কোলে সুন্দর লাগে।
– এসব কথায় চিরা ভিজবে না।আগে গ্রাজুয়েশন শেষ করো।
– উফ্ আপনি এতো কঠিন কেন?আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু মনটাকে নরম করে ভাবুন তো।
– বললাম না গ্রাজুয়েশন শেষ করো।তাছাড়া বাড়ি শেষ হোক।আর তো মাত্র এক কি দেড়মাসের মতো লাগবে বাড়ি শেষ হতে।আমার বাচ্চাকাচ্চাকে আমি ভাড়া বাড়ি মানুষ করতে চাই না।আর তোমারও তো মনে হয় চারটা সেমিস্টার বাকি আছে না?এতো সময় লাগে তোমাদের গ্রাজুয়েশনে।
– এতো সময় কই?চার বছর।
– আমি তিন বছরে শেষ করেছি গ্রাজুয়েশন।
– তাহলে দেখেন এখনো চারটা সেমিস্টার মানে এখনো কত দেরি রৌদ্র।এতদিন ওয়েট করতে হবে?
– হ্যাঁ।
আভা ব্যর্থ স্বরে বলে,
– ওকে।
– আচ্ছা ও চোখ খুলে না কেন?এতো ঘুমাই কেন?কখনো দেখি না জেগে আছে।যখন দেখি তখনই ঘুমাচ্ছে।
– বাচ্চারা প্রথম এমনই চোখ বন্ধ করে শুধু ঘুমাই।
– কি শান্তি না ওদের।শুধু ঘুমাও আর খাও।খাও আর ঘুমাও।
আভা হেসে বলল,
– হ্যাঁ ঠিক বলেছে।
রৌদ্র কিছুক্ষণ নির্ভীককে কোলে রেখে নাড়াচাড়া করে আবারো আভাকে দিয়ে দিলো।আভা রৌদ্রকে বলল,
– রৌদ্র ওর সাথে আমার কিছু ছবি তুলে দেন না।
রৌদ্র পকেট থেকে ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।আভা সেগুলো দেখে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,
– দেখছেন ওকে আমার কোলে কত সুন্দর মানিয়েছে।
– দেখলাম।
– বুঝেছেন আমি কি বলতে চাইছি?
– বুঝলাম।
– তাহলে এখন আপনার কি সিদ্ধান্ত?
রৌদ্র নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,
– গ্রাজুয়েশন শেষ হবে তারপর।
– ধূ’র বাবা এক কথা জিকির করে যাচ্ছে।
মুখ গোমড়া করে সেখান থেকে অহনার কাছে চলে গেল আভা।আভার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে রৌদ্র।তিন্নি মিন্নিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
– কি খবর তিন্নি মিন্নি? পড়ালেখা কেমন চলছে?
– ভালো চলছে ভাইয়া।দুপুরে খেয়েছেন?
– হ্যাঁ।অভয়কে দেখলে বলবে আমি একটু খুঁজেছি।
– আচ্ছা।
তিন্নি মিন্নি চলে যায়।রৌদ্র সোফায় বসে টিভি চালু করে।সংবাদ শোনা হয়ে ওঠে না কিছুদিন।আজ একটু বিজনেস নিউজগুলো দেখবে সে।এর মধ্যে অভয়ও হাজির হয় সেখানে।রৌদ্রকে জিজ্ঞেস করে,
– খুঁজেছিস নাকি শুনলাম?
– হ্যাঁ আয় বস।
অভয় রৌদ্রের পাশে বসে। রৌদ্র সতসক দৃষ্টিতে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে নেয় কপউ আছে কিনা।রৌদ্রকে কিছু বলতে না দেখে অভয় বিরক্ত হয়ে বলে,
– কই কি বলবি বল তাড়াতাড়ি।
রৌদ্র নিচু স্বরে অভয়কে ঝাড়ি দিয়ে বলে,
– আরে বলছি তো দাঁড়া না।
– হ্যাঁ তো বল না!
– শোন, আমি তোর বোন মানে আমার বউকে প্রপোজ করতে চাই।ম্যারেজ প্রপোজাল দিতে চাই।তো অনেক এরেঞ্জমেন্ট করতে হবে।তুই কি আমাকে হেল্প করবি?
– বিয়ে প্রপোজাল মানে তোদের তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
– হয়েছে কিন্তু অনুষ্ঠান তো হয়নি।এখন অনুষ্ঠান করতে চাইছি।তো বিয়ের আগে ওকে প্রপোজ করতে চাই।তুই ওকে কিছু বলে দিস না আবার ।ও কিছু জানে না।ওকে সারপ্রাইজ দিবো।
– ওকে করবো হেল্প।কিন্তু প্রপোজ করবি কোথায়?
– শ্যামা নদীর পাড়ে।ঐখানে সুন্দর করে ডেকোরেট করে ঐখানে প্রপোজ করতে চাই।
অভয় তৃপ্তির হাসি দেয়।রৌদ্র যে তার বোনের কতবেশি কেয়ার করে তার প্রমাণ সে ক্ষণে ক্ষণে টের পায়।অভয় হাসিমুখে রৌদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলে,
– ওকে আমি সব এরেঞ্জ করে করে ফেলবো।তুই টেনশন নিস না।
হাফ ছেড়ে বাঁচে রৌদ্র। অভয় জিজ্ঞেস করে,
– কবে করতে হবে?
– আগামীকাল সব ডেকোরেশন করে ফেলবি।আমি পরশু ওকে প্রপোজ করবো।
– ওকে কাজ হয়ে যাবে।
– থ্যাংক ইউ রে দোস্ত।
– শুধু থ্যাংকস বললে হবে না গিফটও দিতে হবে।
রৌদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কি গিফট?
– একটা ভাগ্নে বা ভাগ্নি গিফট দিতে হবে।
রৌদ্র মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– এখন তুইও তোর বোনের মতো শুরু করিস না প্লিজ।
অভয় শব্দ করে হেসে উঠে যায়।রৌদ্রকে বলে,
– আচ্ছা তুই বস আমি একটু অহনাকে দেখে আসি।কিছু খাবি নাকি?
– না তুই যা।
সকাল থেকে অভয় আর রৌদ্র নিখোঁজ। ফোন করলে ফোন ধরে না।কোনো খোঁজ খবর নেই।এদিকে আভাসহ বাড়ির সকলের দুশ্চিন্তায় ঘাম ছুটছে।দুই দু’খানা তরতাজা জোয়ান ছেলে আচমকা বাড়ি থেকে গায়েব?আভা বসার ঘরে পায়চারি করতে করতে বলল,
– এসবের কোনো মানে হয়?কত রাত হলো এখনো দু’জনর একজনেরও কোনো খবর নেই।
আরাভ মেয়েকে উদ্বিগ্ন হতে দেখে বললেন,
– তুই একটু ঠান্ডা হয়ে বস মা।ওরা চলে আসবে এখনই।হয়তো গিয়েছে দুই বন্ধু মিলে কোথাও।
অহনা চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো,
– তাই বলে ফোনটা ধরবে না?
আভা পূর্বের ন্যায় উদ্বেগ স্বরে বলে,
– কিভাবে শান্ত হই বাবা?সকাল থেকে কোনো খবর নেই এতো রাত হতে চললো তবু বাড়ি ফেরার নাম নেই।ফোনটাও ধরছে না।
সকলের উদ্বেগ্নতা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠিক তখনই বিধস্ত অবস্থায় বাড়িতে প্রবেশ করে রৌদ্র অভয়।তাদের চোখে মুখে ভর করেছে এক রাশ ক্লান্তি।আরাভ সাহেব তাদের দেখে চট করে বললেন,
– ঐ তো ওরা!
সকলে নজর ঘুরিয়ে তাদের দিকে স্থির করলো।আভা রেগেমেগে রৌদ্রের উদ্দেশ্যে বলল,
– এই আপনারা কোথায় গিয়েছিলেন?আর ফোন ধরেন না কেন?
অভয় এবং রৌদ্র চোর ধরা পড়ার মতো মুখ করে ঢোক গিলে।দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি বলবে।অভয় চোখের ইশারায় বলে,”আমি দেখছি।”তারপর আভাকে বলে,
– আ আমরা তো একটা কাজে গিয়েছিলাম।
– কি এমন কাজ যে ফোনটাও একটু ধরা যায় না?
– আরে ছেলে মানুষের কত কাজ আছে তোরা মেয়ে মানুষ তা কি করে বুঝবি?যা সর সর এখন।আম্মু খিদে পেয়েছে খেতে দাও।
অভয় প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসে।রৌদ্রও তার পিছুপিছু বসে।আভা এখনো তাদের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সকলের খাওয়া শেষে যে যার ঘরে চলে যায়।রৌদ্র ল্যাপটপে কিছু টাইপ করছে।আবার কখনো ফোনে কাউকে বলছে,”আচ্ছা ওটার সফট কপি আমাকে মেইল করো আমি দেখি একটু।তারপর তোমাকে বলবো কি কি ইম্প্রুভ লাগবে।আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। আচ্ছা তুমি সেন্ড করো।
আভা রৌদ্র চারপাশে গোল গোল হয়ে ঘুরছে আধঘন্টা হবে।রৌদ্র মাঝে মাঝে কোণা চোখে দেখছে আর নিজের কাজ করছে।এমন একটা ভাব সে ছাড়া ঘরে আর কেউ নেই।অনেকক্ষণ যাবৎ আভাকে নিজের চারপাশে এমন ঘুরতে দেখে এবার রৌদ্র মাথা তুলে বলল,
– কি হয়েছে আমাকে কেন্দ্র করে এমন গোল গোল হয়ে ঘুরছ কেন?ঘুম নেই?
অমনি বিগলিত হেসে দিয়ে ন্যাকা স্বরে বলল,
– আপনিই তো আমার কেন্দ্রবিন্দু তাই না?আপনাকে কেন্দ্র করে ঘুরবো না তো কাকে কেন্দ্র করে ঘুরবো?
রৌদ্র আঁড়চোখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– কি হয়েছে বলো তো?
আভা এবার বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়।রৌদ্রকে জেরা করার ভঙ্গিতে বলে,
– ঘটনা কি?সত্যি সত্যি বলেন।আপনারা দু’জন এমন গায়েব হয়ে গেলেন।তারপর আাবার ফিরেও এলেন।এসে বলেন কাজে আঁটকে ছিলেন।কি চলছে আপনাদের ভিতর?সত্যি সত্যি বলেন…
রৌদ্র মুখ বাঁকিয়ে বেপরোয়া ভঙ্গিতে বলে,
– প্রেম চলছে নাও হ্যাপি?
আভার চোখ বড় বড় করে বলল,
– নাউজুবিল্লাহ!আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দান করুক।
– মরার দোয়া করে দিলে?
– রাত দুপুরে কি সব উল্টো পাল্টা বকছেন আল্লাহ মাবুদই জানে।
রৌদ্র এবার দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
– রাত দুপুরে উল্টো পাল্টা বকছেন আপনি মিসেস আফসিন রৌদ্র।টিপিক্যাল বউদের মতো বরকে জেরা করছেন।কাজ থাকতেই পারে তাই বলে রাত দুপুরে এসব আচরণ শুরু করবেন আপনি?মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার।
আভার মুখভঙ্গি পরিবর্তন হলো।রৌদ্রের শেষ কথায় দুঃখ নেমে এলো আভার মুখে।করুণ স্বরে বলল,
– চলেন ঘুমাবেন।চুল টেনে দিচ্ছি।
রৌদ্র একপলক আভার দিকে তাকিয়ে লেপটপ বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।খাওয়া ঘুম বাদ দিয়ে সারাদিন আজ রোদের মধ্যে দুজনে মিলে সবকিছু ডেকোরেশন করেছে।রোদের তাপে মাথার শিরা উপশিরা পর্যন্ত দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে।আভা রৌদ্রের পাশে গিয়ে বসে।তারপর রৌদ্র বড় বড় মসৃণ চুলগুলো হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেয়।একপর্যায়ে ব্যাথাটা এমন তীব্র আকার ধারণ করে যে ব্যাথায় কাতরাতে থাকে শান্ত রৌদ্র।আভা ভেবে পায় না কি করবে।রৌদ্রকে এমন করতে দেখে ভয়ে গলা দেহ থেকে রুহ্ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তার।সে উদ্বেগ স্বরে বলে,
– রৌদ্র কি হয়েছে আপনার?বেশি খারাপ লাগছে?ডাক্তার ডাকতে বলবো?
রৌদ্র কোনোমতে বলে,
– না না তুমি এক কাজ করো বরফ নিয়ে এসো।তারপর আমার কপালের এই রগে কিছুক্ষণ ধরো।খুব ব্যাথা করছে।
আভা কিছুক্ষণ ভাবল কি করবে।এমন করা কি ঠিক হবে?তারপর আর সাত পাঁচ না ভেবে রৌদ্রের কথা মতো বরফ নিয়ে এলো সাতে নিয়ে এলো একটা টাফনিল।ওষুধটা রৌদ্রকে খাইয়ে দিয়ে আইস ব্যাগটি রৌদ্রের মাথায় চেপে ধরে সে।ব্যাথা কমে আসতেই ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় রৌদ্র।তার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে আভা।যাক এতোক্ষণ একটু শান্ত হয়েছে।দীর্ঘক্ষণ সময় নিয়ে রৌদ্রের কপালে চুম্বন করে সে।
ঘুমের মধ্যে কেউ আভার হাত,পা,মুখ বেঁধে কাঁধে তুলে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।ঘুম ছুটে যেতেই ছটফট শুরু করে সে।মুখ দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ করে,
– উম উম উম…
মনে মনে ভাবে কে হতে পারে?রৌদ্র? নাকি অন্যকেউ? না না তার ধারণা মতে রৌদ্রের সামনে থেকে তাকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার সাহস কেউ করবে না।তাহলে এটা রৌদ্রই হবে।কি করতে চায়ছে লোকটা?কালকের মাথা ব্যাথা কি এখনো রয়ে গেল?যার জন্য এমন পাগলামো করছে সে?
চলবে….
#প্রিয়_বালিকা |৩৯|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
আভা অনবরত লাফিয়ে চলেছে।তার চোখ,মুখ,হাত এখনো বাঁধা।রৌদ্র কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে আভার দিকে।মেয়েটা শান্ত থাকতে পারে সবসময় তিড়িং বিড়িং করে।রৌদ্র বিরক্ত হয়ে বলে,
– উফ্ লাফানো বন্ধ করবে তুমি?একটু শান্ত হয়ে থাকতে পারো না।এমনভাবে লাফাচ্ছ মনে হচ্ছে কেউ তোমার শরীরে আগুন দিয়ে দিয়েছে।
– উম্ উম্
– দাঁড়াও তো খুলছি।
রৌদ্র কপাল কুঁচকে রেখেই প্রথমে আভার হাতের বাঁধন খুলে দেয়।হাত ছাড়া পেয়ে আভা নিজেই চটজলদি মুখ আর চোখ থেকে বাঁধন খুলে ফেলে।বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,
– আরে আপনি তো দেখছি একেবারে গুন্ডা। আমাকে এভাবে কিডন্যাপ করার মানে কি?আমি আপনার নামে অপহরণের মামলা করবো।
– হয়ে গিয়েছে?শেষ?
রৌদ্রের এমন চড়া বাক্যে আভা ভোঁতা মুখে আমতা আমতা করে বলে,
– হ..হ্যাঁ।
রৌদ্র নাক কুঁচকে বলে,
– দুই মিনিট একটু শান্ত হয়ে দাঁড়াতে পারো না!উফ্ এতোটুকু আনতে গিয়েই আমার দম বেরিয়ে গেল।
আভা মুখ ভেঙচি দিয়ে চোখ ঘুরিয়ে চারপাশে দৃষ্টি ফেলল।সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো সে।এতো সুন্দর করে নদীর পাড়টাকে সাজিয়েছে কে?কৃত্রিম সাদা ফুলে সজ্জিত জায়গাটা।সাদাফুলের মধ্যে ভিন্ন রঙের ফুলে সজ্জিত বড় একটি হার্টশেপ।টকটকে লাল রঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।গাছে এবং চিকন সুতা টেনে হাতে আভার বিভিন্ন সময়ের ছবি টানানো হয়েছে।রৌদ্রের সাথেও রয়েছে কিছু ছবি।সব ছবিই ক্লিক করেছে রৌদ্র।সবগুলো ছোট ছোট করে বের করে সুতার সাথে ক্লিপ দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।ছবির নিচে এক কি দুই শব্দের ছোট্ট ছোট্ট নোট।আভা এগিয়ে এলো একটি ছবির কাছে।যেটাতে সে এবং রৌদ্রের হাসোজ্জল মুহুর্ত বন্দী। আলতো হাতে ছবিটি ধরে নিচে লেখা নোটটি মৃদু ঠোঁট নাড়িয়ে পড়লো,”হানি এন্ড আইসক্রিম”
আভার ঠোঁট প্রসারিত হলো।সে পিছন ফিরে রৌদ্রের দিকে তাকায়।রৌদ্র তার দিকেই তাকিয়ে।আভাকে তাকাতে দেখে কোমল স্বরে বলে,
– ইউ আ’র মাই হানি,আ’ম ইওর আইসক্রিম।
আভা মৃদু শব্দে হেসে মাথা নত করে ফেলে।ধীর পায়ে রৌদ্রের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
– তা হঠাৎ এসব কেন জনাব?
পরমুহূর্তেই কিছু মনে পড়ে যেতেই আভা অস্থির ভঙ্গিতে বলল,
– এই গতকাল আপনি আর ভাইয়া এইসব করেছেন?
রৌদ্র চোখের ইশারায় এবং মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
– তা এসব কেন শুনি?
– বলছি বলছি দাঁড়াও।
বলতে বলতে রৌদ্র নিজের প্যান্টের পকেটে হাত দিলো।পকেট থেকে বের করল একটি ছোট্ট বক্স।কালো বক্সটি সাদা ফিতায় বাঁধা।বক্সটি খুলে আভার সামনে এক হাঁটু গেড়ে তা আভার দিকে এগিয়ে দিলো।বক্সটিতে থাকা ছোট পাথরের আংটিতে সূর্যের আলো পড়তেই ঝিলিক দিয়ে উঠলো তা।রৌদ্র ভারি এবং শীতল কন্ঠে বলল,
– উইল ইউ ম্যারি মি মিসেস আফসিন রৌদ্র?
আভা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রৌদ্রের দিকে।এই মুহুর্তে সে এমন কিছু আশা করেনি।আভা ঘন পলক ফেলে কোনো কিছু না ভেবে বলে উঠলো,
– মানে?
রৌদ্রের রোম্যান্টিক মুডের দফারফা করার জন্য এই একটি শব্দই দরকার ছিল।রৌদ্র নিজেকে সংযত করতে ঠোঁট গোল করে একটি শ্বাস ছাড়ে।তারপর আবার হাসি হাসি মুখ করে থেমে থেমে বলে,
– আই সেইড উইল ইউ ম্যারি মি মিসেস আফসিন রৌদ্র?
রৌদ্রের এমন কথা তৎক্ষনাৎ ধরতে পারে না আভার মস্তিষ্ক।সে তো রৌদ্রেরই বউ তাহলে রৌদ্র আবার তাকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করছে কেন?আভা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– নিজেই তো বলছেন মিসেস আফসিন রৌদ্র। আবার বলছেন “উইল ইউ ম্যারি মি” বিয়ে না হলে মিসেস আফসিন রৌদ্র হলাম কি করে?
রৌদ্র আবার তপ্ত শ্বাস ফেলে।ভীষণ রাগ হচ্ছে তার আভার উপর।একটা সামান্য সেন্টেন্স বুঝতে পারে না!রাগটাকে দমিয়ে কটমট করে বলল,
– হ্যাঁ বিয়ে হয়েছে।অনুষ্ঠান তো হয়নি।তাই বাড়ি উঠবো যেদিন সেদিন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সবাইকে তোমার সাথে আমার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।তখন থেকে এটাই বলে যাচ্ছি কিন্তু তুমি এমনই গাঁ’ধা যে একটা সামান্য সেন্টেন্স বুঝতে পারো না।
আভার মুখ গোমড়া হয়ে যায়।মাথা নিচু করে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– আমি কি করে বুঝবো আপনি এতোসব প্লান করেছেন?আমাকে কি কিছু বলেছেন আপনি?
– এবার তাড়াতাড়ি বলেন আপনি কি আমার বউ হিসেবে সবার সাথে পরিচিত হতে রাজি?আরো একবার কবুল বলতে রাজি? হাঁটু ব্যাথা হয়ে গেল আমার!
আভা ঝড়ের গতিতে মাথা নাড়িয়ে রৌদ্রকে ধরে উঠিয়ে দিলো।রৌদ্র চোখ মুখ খিঁচে পা একবার ভাঁজ করছে আরেক বার মেলে দিচ্ছে।পায়ে ব্যাথা হয়ে গিয়েছে তার।আভা রৌদ্রের হাতে থাকা আংটির দিকে তাকিয়ে বলল,
– বাহ্ খুব সুন্দর তো আংটিটা।
রৌদ্র পায়ের ব্যাথায় আংটির কথা ভুলেই গিয়েছিল।আভার কথায় সে আংটির দিকে তাকালো।আংটিটি বের করে বক্সটি আবারো পকেটে ঢুকে আভার সামনে হাত বাড়িয়ে দিলো।আভা রৌদ্রের হাতে হাতের উপর হাত রাখলে অনামিকায় আংটিটি পরিয়ে দিলো রৌদ্র।তৎক্ষনাৎ আংটির উপর মৃদু শব্দে একটি চুমু খেলো।আভার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
– এবার আমার বউ বউ লাগছে।চুড়ি, রিং পারফেক্ট বিবাহিত নারী।
আভা মুখ ফুলিয়ে বলল,
– বিবাহিত নারী?!কেমন শোনালো যেন।
– তো কি অবিবাহিত বলবো?
– না..বিবাহিত নারীই ঠিক আছে।কিন্তু একটা জিনিস নেই।
রৌদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
– কি?
– নাকফুল।
– নাক ছিদ্র করা আছে?
– না।
– তাহলে থাক দরকার নেই আর ছিদ্র করার।নাকফুল পরতেই হবে এমন কোনো নিয়ম নেই।সো ওটা স্কিপ করলাম।
আভাও এ নিয়ে আর মাথা ঘামালো না।এখন নাক ছিদ্র করতে গেলে সে ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করবে।তার থেকে রৌদ্রের কথায় মানায় শ্রেয়।রৌদ্র আভার দুইহাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে আভাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।আদুরে স্বরে বলল,
– হার্টবিটটা একটু গুণে দাও তো।
আভা স্মিত হেসে রৌদ্রের বামপাশে মাথা রাখে।চোখ বন্ধ করে অনুভব করে রৌদ্রের হৃৎস্পন্দন।রৌদ্র শক্ত করে আভাকে নিজের সাথে আগলে নেয়।কয়েক মুহুর্তের দু’জনেই ভুলে যায় পৃথিবীর সকল চিন্তা চেতনা। বুঁদ হয়ে থাকে একে অপরের শরীরের সুমিষ্টঘ্রাণে।দীর্ঘ আলিঙ্গন শেষে নিরবতা ভেঙে রৌদ্র বলল,
– কতটা হলো?
আভা বুকে মাথা রেখেই জবাব দিলো,
– ৭৮ টা।
ঠোঁট প্রসারিত করে আভাকে বুক থেকে ওঠালো রৌদ্র।আভার কপালে নিজের ঠোঁটের কলঙ্ক ছুঁইয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলল সে।বলল,
– ঠিক তো?
– কোনো সন্দেহ আছে?
– একবারের জন্য মনোযোগ ক্ষু’ন্ন হলো না?
– হলো না।
– কেন?
– কারণ আপনাতে মনোযোগ দিতে আমার কষ্ট হয়না।তাই মনোযোগ ক্ষুন্নও হয় না।
– মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ভালোবাসা বেশি দৃঢ়।কিন্তু কখনো কখনো মনে হয় তোমার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা স্বাদহীন বিবর্ণ একবিন্দু পানির ফোঁটা মাত্র।
– কখনো কখনো একবিন্দু পানি অভাবে মানুষের প্রাণহীন হয়।আপনার ঐ একবিন্দু ভালোবাসায় আমার জন্য যথেষ্ট রৌদ্র।
রৌদ্র বাকরুদ্ধ হয়ে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে তার প্রিয় বালিকার দিকে।আভার প্রণয় মাখা বাক্যের বিপরীতে সে একটি শব্দই উচ্চারণ করে,
– ভালোবাসি।
আভা কোনো প্রতিত্তোরে করে না।নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে থাকে রৌদ্রের দিকে।মুখে কোনো শব্দ উচ্চারিত না হলেও তার চাহনি রৌদ্রের কানে কানে বলে,
– আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি রৌদ্র।
রোজ রাতে খাওয়ার টেবিলে মুন্সিবাড়ির প্রতিটি সদস্যকে পাওয়া যায়।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।সকলে নিশ্চুপ হয়ে খাবার খাচ্ছে।রৌদ্র সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
– আমি ঠিক করেছি বাড়ি হয়ে গেলে একটা অনুষ্ঠান করবো।আভা আর আমার বিয়ে তো হুট করেই হয়ে গিয়েছে।তাই এখন একটু অনুষ্ঠান করে সকলের দোয়া নিতে চাই।
আরাভ সাহেব রৌদ্রের প্রস্তাবে খুশি হয়ে বলেন,
– এ তো খুব ভালো খবর।তা কবে করবে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছ?
– আগামী মাসেই বাড়ি আর মসজিদ কমপ্লিট হয়ে যাবে।আগামী মাসেই করতে চাচ্ছি।
তিন্নি উৎফুল্লতা নিয়ে বলে,
– ভাইয়া বিয়ে কি মসজিদে হবে?
– তেমনটাই ইচ্ছা আছে।
– আমারও না মসজিদে বিয়ে করার খুব ইচ্ছা।
অভয় মুখ বাঁকিয়ে বিদ্রুপ করে বলল,
– এহ্ এখনো মাধ্যমিক শেষ করতে পারলো না আবার বিয়ে!ঠা’স করে লাগাবো কানের নিচে একটা।
তিন্নি ন্যাকা স্বরে প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলে,
– বড় মা…
প্রেমা অভয়কে চোখ রাঙিয়ে বলল,
– কিরে অভয় বিয়ে হলো এক বাচ্চার বাপ হলি তাও বাচ্চাদের মতো বোনদের সাথে ঝ’গড়া করা ছাড়তে পারলি না?
আভাও সায় দিয়ে বলে,
– হ্যাঁ তাই দেখো আম্মু আস্ত একটা বে’য়াদব ছেলে।
প্রেমা আভার দিকেও চোখ গরম করে তাকালো।রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে কোমল হেসে বলল,
– আব্বু তোমার বাবা-মাকে জানিয়েছ?তারা কি আসবেন?
– হ্যাঁ জানিয়েছি।আসবে মম আর ড্যাড।
আচমকা আভা বলে উঠলো,
– সাথে আবার ঐ লিনডা ফিনডাও আসবে নাকি?
বলেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো আভা।আঁড়চোখে বাবার দিকে একপলক তাকিয়ে ধীরে ধীরে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সকলের দিকে তাকালো।সকলে তার দিকেই তাকিয়ে।তা দেখে বোকা হাসি দিলো আভা।রৌদ্র ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
– না ও ওর বয়ফ্রেন্ডে সাথে মালদ্বীপে গিয়েছে।
আভা নিজের মনে মনে বলল,”ভালোই হয়েছে মেয়েটা সবসময় আমাকে এটা ওটা বলে অপমান করত।”
– মা বাবা কবে আসবে?
– মাসের প্রথমেই চলে আসবে।এমনই তো বলল।
তিন্নি উত্তেজিত হয়ে বলে,
– ইয়াহু..!খুব মজা হবে বিয়েতে।অনেক খাওয়া দাওয়া হবে।অনেক ছবি তোলা হবে।
অভয় খোঁচা দিয়ে বলে,
– শুধু খাওয়া আর খাওয়া হচ্ছিস তো ফুটবল।
– ভাইয়া….!
চলবে….