প্রিয় বালিকা পর্ব-২৮+২৯+৩০+৩১

0
357

#প্রিয়_বালিকা |২৮+২৯|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

অভয় রৌদ্রের অগোচরে তার চারপাশে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন এঙ্গেলে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।রৌদ্র অভয়ের কথায় থতমত খেয়ে সটান শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে যায়।দ্রুতগতিতে আইসব্যাগটি কোমর থেকে সরিয়ে মাথায় দিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
– কো কোমর ভেঙেছে?কোথায়?আমি তো জাস্ট এমনিতেই একটু আইস মানে।আরে তোর বোনটা এতো ব্রিটিশ না শুধু প্যাকপ্যাক করে সারাদিন।মাথাটাই গরম করে দেয় প্যাকপ্যাক করতে করতে তাই তো একটু আইস দিচ্ছি মাথায়।

অভয় বিদ্রুপের হাসি দেয়।মশকরার সুরে বলে,
– বাসর রাতেই মাথায় হাত?এখনো তো দিন বাকি।আজ কোমর ভেঙেছে কাল দেখিস আবার পাটায় পিষে না ফেলে!

রৌদ্র বিরক্ত হয়ে মুখ বাঁকিয়ে আছে।এতো সকালে অভয়কে দেখে ভ্রুকুটি করে বলে,
– তুই এতো সকালে উঠলি কিভাবে?নাকি ঘুমাসনি এখনো?

– ঘুমিয়ে ছিলাম এক দেড় ঘন্টার মতো।বাবা এসেছে ফোন করে গেট খুলতে বলল।তুই ঘুমাসনি?

রৌদ্র উত্তর করে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।অভয় হাই তুলতে তুলতে সেখান থেকে নিজের ঘরে চলে যায়।অভয় চলে যেতেই রৌদ্র চোখমুখ কুঁচকে আইসব্যাগটি মাথা থেকে নামিয়ে আবারো কোমরে চেপে ধরে।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে আভার ঘরের দিকে অগ্রসর হয়।
আভা এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।রৌদ্র একটি শ্বাস ফেলে আভার পাশে বসে।আভার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কোমল হয়ে যায় তার।ঠোঁটে দেখা যায় মুচকি হাসি।এটা তার বউ!তার বউ!বউ! “বউ” শব্দটা বার উচ্চারণ করে সে।ধীরে ধীরে নিচু হয়ে ফিসফিস করে কয়েকবার শব্দটি বলে,”বউ!বউ!”
হঠাৎই আভা মৃদুমন্দ স্বরে অস্পষ্ট শব্দে সাড়া দেয় রৌদ্রের ডাকে।হাসি প্রগাঢ় হয় রৌদ্রের।আভার নাকে নিজের তর্জনির আলতো ছোঁয়া দেয়।নাক ছাড়িয়ে ঠোঁটে নামে তর্জনি।সেখানেও থেমে থাকে না।ধীরে ধীরে গলার দিকে অগ্রসর হয়।আচমকা থেমে যায় তর্জনি।হাত গুটিয়ে আভার মুখের দিকে তাকিয়ে শুঁকনো ঢোক গিলে রৌদ্র।আলতো হাতে আভার মাথা উঠিয়ে নিজের বাম হাত মাথার নিচে রাখে।আভার মাথা নিজের বুকে চেপে শুয়ে পড়ে।উষ্ণ ছোঁয়া দেয় আভার কপালে।আভা নিস্তব্ধ নির্বিকার ঘুমিয়ে আছে রৌদ্রের প্রশস্থ বুকে।

দশটার বেশি বেজে বাড়িতে সকলে ঘুম কাল বেশি রাত করে ঘুমানোর ফলে এখনো কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি।প্রেমা উঠেছেন। নতুন জামাইয়ের জন্য নানা পদের খাবার রান্না করেছেন। কিন্তু মেয়ে কিংবা জামাই কারো কোনো খোঁজ নেই।গতকাল রাত করে ঘুমানোর কথা মাথায় রেখে তিনি কাউকে ডাকতেও পারছেন না।ঘুম ভালো না হলে সারাদিনটা শরীর খারাপ লাগে।তারও কেমন মাথা ঝিম ঝিম করছে।তাই তিনি খাবার টেবিলে সকল খাবার ঢেকে সোফায় গিয়ে একটু গা মেলে বসে পড়লেন।অনেকদিন টিভি দেখা হয়না ভেবে টিভি ছাড়েন তিনি।
আভার ঘুম মাত্রই ভাঙে।চোখ খুলতেই নাকে লাগে এক সুন্দর পুরুষালি সুগন্ধি।সে জানে এটি কার শরীরের ঘ্রাণ তাই চোখ বুঁজে বড় শ্বাস টেনে মুচকি হাসে সে।রৌদ্রের বাম হাতের উপর তার মাথা।প্রথমবারের মতো রৌদ্রকে এতো কাছ থেকে দেখছে সে।রৌদ্রের মুখশ্রীতে নিজের তর্জনি ঘোরাতে ঘোরাতে বিড়বিড় করে রৌদ্রের বর্ণনা করে সে,
– হান্টার আইস উইথ বিউটিফুল ল্যাশেস।ফেরার স্কিন,শার্প জো লাইন,ডিম্পল,থিন লিপস!

ঠোঁট মেলে রৌদ্রের কপালে দীর্ঘ এক চুমু খায় আভা।নিঃশব্দে ধীর গতিতে নেমে আসে বিছানা থেকে।রৌদ্র এখন গভীর ঘুমে তাই তাকে কোনো প্রকার বিরক্ত না করে ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে আভা।বাড়ির কেউ এখনো ওঠেনি।বসার ঘরে মাকে সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখে সেদিকে এগিয়ে যায় আভা।মায়ের পাশে বসে চুপচাপ।প্রেমা মেয়েকে একপলক দেখে টিভির দিকে তাকিয়ে বলে,
– জামাই এখনো ওঠেনি?

চোখ বড় বড় করে ফেলে আভা।বড় বড় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,”জামাই!” রাতারাতি মায়ের এ পরিবর্তনে ভীমড়ি খায় সে।মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে না বোঝায়।প্রেমা টিভি অফ করে বলেন,
– আচ্ছা চল তুই খাবি খিদে লেগেছে না?

আভা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।সকলে সকালের নাস্তা মিস করে একবারে দুপুরের খাবারের জন্য টেবিলে জড়ো হয়।সকলে আছে দুপুরের খাবারের সময় শুধু অভয় নেই।আভার একহাতে ফোন অন্য হাতে খাবার খাচ্ছে।বিষয়টা খুবই দৃষ্টিকটু।রৌদ্র বেশ রেগে আছে আভার এমন আচারণে।বড়দের সামনে এমন আচারণ একদমই গ্রহণযোগ্য নয়।এক পর্যায়ে রৌদ্র রাগি স্বরে বলে উঠলো,
– আভা ফোনটা রেখে খাবার খাও।

আভা একবার রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি দিয়ে আবারো ফোনের দিকে নজর দেয়।রৌদ্রের রাগ দ্বিগুণ হয়।তবু সে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে খাবার খায়।হঠাৎ আভা উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।সকলের নজ আভার দিকে পড়ে।প্রেমা রাগি স্বরে বলে,
– দিন দিন সভ্য অসভ্য বলে কিছু আর থাকছে না।কখন থেকে বলছি ফোন রাখ।বাবা,স্বামীর সামনে ফোন চালাতে লজ্জা করে না?

আভার কোনো কথায় কানে যাচ্ছে না।সে মুখে হাত দিয়ে হেসেই যাচ্ছে।আরাভ সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন।রৌদ্র বিব্রত হয় আভার এমন হাসিতে।উঠে গিয়ে আভার ফোনটা টান দিয়ে নিয়ে নেয়।ফোনের স্ক্রিনে চোখ যেতেই সে হতভম্ব হয়ে যায়।স্ক্রিনে তারই ছবি।সে করুণ মুখভঙ্গিতে কোমরে হাত দিয়ে আছে।ক্যাপশনে লেখা,”মেনশন করুন আপনার সেই বন্ধুকে যে বাসর রাতে বউয়ের লা’থি খেয়ে কোমর ভাঙে।”
রৌদ্রের বুঝতে বাকি থাকে না এটা কার কাজ।কারণ উপরে তার প্রফাইলের নাম এবং ছবি জ্বল জ্বল করছে।রৌদ্র দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
– অভয়…!

সোজা হাঁটা ধরে অভয়ের ঘরের দিকে।অহনা ঘরে নেই।তাই কোনোকিছু না বলেই ঢুকে পড়ে ঘরে।অভয় আরাম করে ঘুমিয়ে আছে।রৌদ্র চিৎকার করে ওঠে,
– অভয়ের বাচ্চা….!

সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে ওঠে অভয়।আশেপাশে কাউকে খুঁজতে খুঁজতে উৎকন্ঠিত স্বরে বলে,
– কোথায় আমার বাচ্চা?কোথা আমার বাচ্চা?

রৌদ্র ফোনটা অভয়ের মুখের সামনে ধরে বলে,
– এটা কি?

অভয় ভ্রু কুঁচকে বলে,
– এটা তো আমার বাচ্চা না।

রৌদ্র জোরে একটি চ’ড় দেয় অভয়ের মাথায়।সঙ্গে সঙ্গে যেন অভয়ের মস্তিষ্কে প্রাণ এলো।কিছুক্ষণ পরেই পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ঘর কাঁপিয়ে হাসে সে।ভ্রু নাচিয়ে বলে,
– সারপ্রাইজটা কেমন লাগল বল?

রৌদ্র রাগে কটমট করে বলে,
– এখনই ডিলিট করবি এটা।নাহলে কিন্তু তোর খবর আছে অভয়।

অভয় এবার বুক ফুলিয়ে সোজা হয়ে বসে।রৌদ্রকে পাত্তা না দিয়ে বলে,
– বড় শা’লা আমি তোর সম্মান দিয়ে কথা বল।

চট করে রৌদ্রের হাতের দখলে চলে যায় অভয়ের গলা।তবে বেশি জোরে চাপ পড়ে না গলায়।তাতে অভয়ের প্রাণ বেরিয়ে যায় যায়।রৌদ্র অভয়ের গলা ধরে ঝঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে তেজি স্বরে বলে,
– শা’লার শা’লা ডিলিট করবি কিনা বল?

অভয় তড়িঘড়ি উত্তর করে,
– আরে আরে করছি করছি গলা ছাড় রৌদ্র।

অভয়কে ছেড়ে দেয় রৌদ্র।হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
– আম্মু খেতে ডাকে তোকে।

– হ্যাঁ যাচ্ছি।

অভয় বিড়বিড় করে রৌদ্রকে গা’লি দিতে দিতে পোস্টটি ডিলিট করে দেয়।ফ্রেশ হয়ে চলে যায় খাবার খেতে।
খাবার টেবিলে একটি সুন্দর প্রস্তাব রাখে অভয়,
– সবাই মিলে ঘুরতে গেলে কেমন হয়?

প্রেমা বলেন,
– আমাদের সময় নেই তোরা চারজন ঘুরে আয়।তুই-অহনা,রৌদ্র-আভা।

আভা চট করে বলে,
– কোথায় যাওয়া যায়?

অভয় কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
– সুন্দরবন?

লাফ দিয়ে ওঠে আভা।উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,
– সুন্দরবন?হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো সুন্দরবন যায়।দুবলার চর যাবো বঙ্গোপসাগর দেখবো।

রৌদ্রও সম্মতি জানায়,
– হ্যাঁ,যাবো।কাল শহরে গিয়ে ও কয়েকদিন ভার্সিটিতে যাক আমিও কয়েকটা প্রজেক্ট কমপ্লিট করে নিই।তারপর সবাই মিলে “সুন্দরবন” ঘুরতে যাবো।

– হ্যাঁ তোদের ফ্লাটের মালিকের সাথে কথা বলেছি গতকাল।গিয়ে আমাকে ইনফর্ম করিস।

– আচ্ছা।

খাবার শেষে সকলে নিজের ঘরে।আভা এখনো যায়নি।ইচ্ছা করেই যায়নি।কেমন যেন লজ্জা লাগছে তার।একটা পুরুষ তার ঘরে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে।তার খাটে ঘুমিয়েছে।তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছে।গতকাল তেমনকিছু মনে না হলেও এখন তার ভিষণ লজ্জা করছে।কি অদ্ভুত তাই না?দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাজারো জল্পনা কল্পনা করে চলেছে আভা।দরজা সামান্য চেপে দেওয়া।আভা চোখ বন্ধ করে জোরে একটি শ্বাস নিয়ে খুব সাবধানতার সহিত দরজা খুলে।উঁকি ঝুঁকি দিয়ে রৌদ্রকে কোথাও দেখতে পায় না সে।ভ্রু কুঁচকে ভাবে, “কোথাও বেরিয়েছে নাকি?” পা টিপে টিপে ঘরে প্রবেশ করে সে।ওমনি দরজা বন্ধ করে দেয় কেউ।পিছন ফিরে রৌদ্রকে দেখে ঘাবড়ে যায় সে।দূরে সরে যাওয়ার আগেই আভার কোমর নিজের হাতে আবদ্ধ করে ফেলে রৌদ্র।ভ্রু নাচিয়ে বলে,
– কিরে ছেমড়ি?তোর যে একটা চিকনা চাকনা বর আছে ভুলে গেছিস নাকি হ্যাঁ?

রৌদ্রের এমন কথায় হাসি আসে আভার।দুই ঠোঁট এক করে হাসি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।রৌদ্র বাঁকা হেসে তার বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আভা দৃষ্টি নত করে মিনমিনিয়ে বলে,
– ভুলবো কেন?বর কি ভোলার জিনিস?

রৌদ্রের কন্ঠস্বরে মেনে এলো এক অদ্ভুত মোহ।সে স্বর ধ্বনি তুলে সে বলে,
– তাহলে এতক্ষণ কোথায় ছিলি শুনি?

আভা চোখ তুলে রৌদ্রের তীক্ষ্ণ আঁখি যুগলে দৃষ্টি ফেলতে পারে না।তার দৃষ্টি রৌদ্রের প্রশস্থ বুকে।রৌদ্রের ডান হাত আভার গলা আর ঘাড় জুড়ে আবৃত হয়।বৃদ্ধ আঙুল বিচরণ করে আভার ডান গালে।চোখের মণিতে দেখা যায় নেশালো কিছু বাক্য।কিন্তু তা পড়তে আভা ব্যর্থ তাই তো দৃষ্টি নামিয়ে থেমে থেমে শ্বাস নেয় সে।রৌদ্র বৃদ্ধ আঙুল দিয়েই আভার থুতনি সামান্য তুলে হিসহিসিয়ে বলে,
– আমার চোখের দিকে তাকাও।

তৎক্ষনাৎ আভার সোজা জবাব পাওয়া যায়,
– না।

মুচকি হাসে রৌদ্র।ঠোঁটের কোণে দেখা মেলে চিরচেনা দু’টি সূক্ষ্ণ ভাঁজ।কোমরের বাঁধন দৃঢ় করে পূর্বের স্বরে বলে,
– কেন?

এবার নিচু স্বরে জবাব এলো,
– আপনার চোখে তাকালে মনে হয় আমার দিকে প্রাণঘাতী বিষ মেশানো তীর ধেয়ে আসছে।

আভার কন্ঠে এমন আবেগি বাক্যে হাসির রেখা বৃদ্ধি পায় রৌদ্রের ঠোঁটে।রৌদ্র কোমল স্বরে বলে,
– দ্বিতীয়বারের মতো যেদিন দেশে এলাম সেদিন তো তাকিয়ে ছিলে,অপলক দৃষ্টিতে।প্রাণ হারিয়েছ?হারাওনি তো,আজও হারাবেনা তাকিয়ে দেখ।

আভা শুঁকনো ঢোক গিলে।চোখের পাতা এক করে মৃদুস্বরে বলে,
– আজ না।

আভার কথায় ভ্রুকুটি করে রৌদ্র।আভার আরো সান্নিধ্যে চলে আসে।ধীরগতিতে আভার কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দেয়।অতঃপর সে স্পর্শ স্থান পায় আভার বন্ধ দু’টি চোখে।প্রথমে ডান চোখ তারপর বাম চোখ।ধীরে ধীরে সে স্পর্শ প্রগাঢ় হয়ে আভার নাকের ডগায় ঠেকে।এই মুহুর্তে আভার শ্বাস কেউ আঁটকে রেখেছে।হৃৎপিণ্ড পাঁজরের সাথে ভীষণ গতিতে বারি খাচ্ছে।রৌদ্রের হৃৎস্পন্দনও বৃদ্ধি পায়।আভার মস্তিষ্ক বার বার বলে,”এবার রৌদ্র কি করবে?সে কি এই স্পর্শের আরো গভীরে যাবে?সে কি নিজের অধরের কলংক ছুঁইয়ে আভার অধরকেও কলংকিত করবে?নাকি এখানেই থেমে যাবে?”
আভার চিন্তা মাঝেই রৌদ্রের অধরের স্পর্শ গাড় হতে থাকে।সে স্পর্শ কিছুক্ষণ থেমে থাকে আভার নাক এবং ঠোঁটকে পৃথক কারী ফাঁকা স্থানে।আভার বুকের ভিতর কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে ভীষণ জোরে জোরে আঘাত করছে।মস্তিষ্ক বিকল হয়েছে অনেক আগেই।হাত পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে।এক নিষিদ্ধ ঘোরে থাকা রৌদ্রের মস্তিষ্ক দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যায় এখানেই থেমে যাবে নাকি নিজের অসভ্য অনুভূতিগুলোকে প্রশ্রয় দিবে।
আচমকা বেজে ওঠে রৌদ্রের ফোনটা।ঘোর কেটে যায় তার।শুঁকনো ঢোক গিলে আভার কোমর ছেড়ে দেয়।আভা লজ্জায় মাথা নত করে মুখের সামনে আসা একগোছা ছোট চুল কানের পিছনে গুঁজে দেয়।রৌদ্র গলা ঝেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোন রিসিভ করে।অপর প্রান্ত থেকে শোনা যায় তার মা রোদেলার রাগি কন্ঠস্বর,
– রৌদ্র এসব কি দেখলাম আমি।তুমি বিয়ে করেছ?কিভাবে করতে পারলে তুমি এটা?তোমার মম ড্যাডের কি কোনো দাম নেই তোমার কাছে?আমাদের কি কোনো ইনপর্টেন্স নেই তোমার লাইফে?এটা তুমি কিভাবে করতে পারলে?হাউ কুড ইউ রৌদ্র?হাউ কুড ইড?

রৌদ্র একপলক আভার দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।আভা রৌদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো অদ্ভুত চাহনিতে।পরমুহূর্তেই কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়তেই দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলে সে।মুখ থেকে হাত সরিয়ে লাজুক হেসে ঠোঁটের উপরে তর্জনি রাখে।এখানে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল রৌদ্রের স্পর্শ।এক চিমটি নিচে নামলেই নরম তুলতুলে চিকন দু’টো ঠোঁট স্পর্শ করে ফেলতো রৌদ্র।ভাবতেই গাল গরম হয়ে যায় আভার।দুইহাতে আবারো মুখ ঢেকে ফেলে সে।দ্রুততার সহিত বিছানায় উঠে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘাপটি মেরে থাকে সে।আজ আর রৌদ্র মুখো হওয়া যাবে না।রৌদ্রের সামনে যাবে কি করে সে?

মায়ের একের পর এক প্রশ্নে বিরক্ত রৌদ্র।মুখ দিয়ে “চ্” শব্দ করে বলে,
– মম আমাকে কি কিছু বলার সুযোগ দিবে নাকি নিজেই বলে যাবে?

থেমে যায় রোদেলা।রৌদ্র এবার শান্ত স্বরে বলে,
– তোমাকে কে বলেছে এই কথা?

রোদেলার সোজাসাপটা জবাব,
– কিছুক্ষণ আগে অভয়ের স্ট্যাটাস দেখলাম।ওটা কি সত্যি ছিল?

রৌদ্র নির্বিকার স্বরে বলে,
– হ্যাঁ।

ক্ষেপে যান রোদেলা।রাগে তার সারা শরীর রি রি করতে শুরু করে।রাগে ক্ষোভে চেঁচিয়ে বলেন,
– তোমার কি কোনো ধারণা আছে আমরা তোমার জন্য কি না করেছি?আমরা তোমাকে নামকরা ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করিয়েছি।তুমি যখন যা চেয়েছ তাই দিয়েছি।তুমি স্পোর্টস কার চেয়েছ তোমাকে ইস্ট্যান্ট কার কিনে দেওয়া হয়েছে।তুমি যখন যা করতে চেয়েছ তাই করেছ আমরা কিছু বলিনি।আমাদের কি সামান্য পরিমাণ স্পেকটেশন থাকতে পারে না তোমার থেকে?দুই দিনের ঐ মেয়ের জন্য তুমি তোমার বাবা-মাকে ছেড়েছ,তোমার সুন্দর ক্যারিয়ার ছেড়েছ।কেন রৌদ্র?ঐ মেয়ের কি যোগ্যতা আছে?ঐ মেয়ে তোমার নখেরও যোগ্য নয়।না আছে রূপ না আছে গুণ।পরেও তো মনে হয় ঐ বাংলাদেশের সস্তা ভার্সিটিতে!

রৌদ্র রাগে ফুঁসছে।সে হুংকার ছেড়ে বলে,
– শ্যাট আপ মম।জাস্ট কিপ ইওর মাউথ শ্যাপ।তুমি আভাকে কখনো কাছ থেকে দেখোনি।তাই তুমি অন্তত আভার যোগ্যতা বিচার করতে এসো না।আমার বউ আমার যোগ্য কিনা সেটা আমি বিচার করবো,তুমি না।আর যে সস্তা ভার্সিটির কথা বলছ সেখান থেকেই কিন্তু তুমি আজ ঐখানে বসে ককটেল খাচ্ছো।ম্যানারস ম্যানারস করে মানুষের ইমোশনকে খুন করে ফেলে তোমার উন্নত জীবন।ছেলের সামনে ড্রিংকস করে আসাটাও কি উন্নত জীবনের ম্যানারস?ছেলের সাথে চেয়ার্স বলে ও’য়াইন খাওয়াটাও কি তোমার উন্নত জীবনের ম্যানারস?যদি তাই তাহলে চাই না আমার এমন উন্নত জীবন।আমি আমার সন্তানকে একটা সুস্থ পরিবেশে বড় করতে চাই যেখানে তাদের শুধু আমার টাকার প্রয়োজন থাকবে না।যেখানে তাদের আমার ভালোবাসার প্রয়োজন থাকবে।যেমন আমার প্রয়োজন ছিল।টাকা দেওয়াটাই শুধু বাবা মায়ের কর্তব্য নয়।

রোদেলা গুমরে কেঁদে উঠলেন।ছেলের মধ্যে জমা দুঃখ,কষ্ট,ক্ষোভ আজ আঁচ করতে পারলেন তিনি।করুণ স্বরে বলেন,
– বাবা আমি বুঝতে পেরেছি আমাদের তোমাকে আরো সময় দেওয়া উচিত ছিল।কিন্তু আমরা ভেবেছি তোমার নিজস্ব স্পেস দরকার। তাই তো সাথে তোমাকে তোমার মতো ছেড়ে দিয়েছি সবসময়।

– মম হ্যাঁ লাইফে পার্সনাল স্পেসের দরকার আছে কিন্তু মাঝে মাঝে আঁকড়ে ধরার জন্যেও কাউকে প্রয়োজন।কখনো ম্যানারসের বাইরে গিয়েও ফ্র্যাংকলি কথা বলা প্রয়োজন।বাবা মা ছেলের মধ্যে ফর্মাল রিলেশনশিপ মানায় না।যাইহোক,আমাদের জন্য দোয়া করবে।চায়লে এসে ঘুরে যেতে পারো,রাখছি।

রোদেলা উত্তেজিত স্বরে বলেন,
– দেখ বাবা আমার কথাটা শোনো,তুমি আভাকে নিয়ে চলে আসো অস্ট্রেলিয়া।প্লিজ..!

– সম্ভব নয় মম,রাখছি।

– রৌদ্র…!

কল কেটে দেয় রৌদ্র। একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঢোক গিলে।ভালো লাগছে না কিছু।ছোটবেলায় কত ভালো ছিল সে।বাবা মায়ের সাথে কত সুন্দর সুন্দর সময় কাটিয়েছে সে।কোনো দোটানা ছিল না তখন।দিন দিন যত বড় হয়েছে বাবা মায়ের সাথে সম্পর্কটি হয়ে গিয়েছে ততই ফর্মাল।এটা সবসময় কষ্ট দেয় রৌদ্রকে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় আভা,রৌদ্র এবং অভয়।দেড় ঘন্টার মাথায় পৌঁছেও যায়।অভয় চলে যায় নিজের অফিসে।রৌদ্র আভা নিজেদের জন্য ভাড়া নেওয়া ফ্লাটে।ফ্লাটটি দ্বিতীয় তলায় বেশ বড়সড় এবং খোলামেলা।সব ডেকোরেশন আগেই করা হয়েছে।তিন রুমের ফ্লাটের সবচেয়ে ছোট রুমটি রৌদ্রের কম্পিউটার ল্যাব।বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত।এক কোণায় একটি বইয়ের তাক।আভা এসব যন্ত্রপাতি একদমই পরিচিত হয়।সে কম্পিউটার মানে জানে একটা মনিটর,একটা মাউস,একটা,কীবোর্ড,একটা সিপিইউ,একজোড়া সাউন্ড বক্স। কিন্তু এখানে আরো অনেককিছু দেখতে পাচ্ছে সে।রৌদ্র সর্বপ্রথম তার কম্পিউটার সেটআপ চেক করতে এই ঘরে প্রবেশ করে।আভাও তার পিছু পিছু আসে।এসে এতোসব যন্ত্রপাতি আর তার দেখে মাথা ঘুরতে শুরু করে তার।রৌদ্র সব ঠিকঠাক দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলে,
– যাক বাবা! পি.সি সেট আপ কমপ্লিট এখন ডেটাগুলো নিতে হবে।

আভা নাক সিটিয়ে চলে এলো সেখান থেকে।একে একে ঘুরে দেখে সম্পূর্ণ ফ্লাট।মাঝারি আকারের একটি রান্নাঘর,একটি ড্রয়িং স্পেস যেখানে একটি তিন সিটের সোফা এবং দুই সিটের দু’টি সিঙ্গেল সোফা বসানো।তার কিছুটা দূরেই ডাইনিং টেবিল।বড় দুই রুমের একটির সাথে ওয়াশরুম এবং বেলকনি সংযুক্ত আর সেটাই রৌদ্র আভার বেডরুম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।অন্য ঘরটিতে শুধু মাত্র একটি মাঝারি আকারের বেড ফেলে রাখা হয়েছে।রৌদ্র আভার ঘরে আছে ওয়াল আলমারি,একটি বড় বেড,একটি ড্রেসিং টেবিল আর কিছু সৌখিন আসবাব।যাদের অনুপস্থিতিতে ঘরের সৌন্দর্য একফোঁটাও নষ্ট হবে না।আভা দরজায় দাঁড়িয়ে ঘর দেখছিল।ঠিক তার পিছনে নিঃশব্দে এসে গা ঘেঁষে দাঁড়াল রৌদ্র।আজ থেকে শুরু হলো একজোড়া বাবুইপাখির ছোট্ট একটি সংসার।

চলবে…

#প্রিয়_বালিকা |৩০|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

আভা খুব সাবধানে রৌদ্রের কম্পিউটার ল্যাবের দরজা সামান্য খুলে উঁকি দিয়ে দেখছে।রৌদ্র সানগ্লাস চোখে মনিটারের সামনে বসা।সারাঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।মনিটারের কড়া আলোয় রৌদ্রের মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সে খুব মনোযোগ দিয়ে মনিটারে তাকিয়ে আছে।আভা ছোট একটা ঢোক গিলে আবারো খুব সতর্কতার সহিত দরজা বন্ধ করে দেয়।রাত অনেক হয়েছে।আভা মনে মনে ভাবে কিছু রান্না করে রাখা যাক।যেহেতু আগামীকাল তার ভার্সিটিতে পর পর দুইটা ক্লাস আছে তাই আসতে দেরি হবে।ততক্ষণ তো রৌদ্র না খেয়ে থাকতে পারে না তাই এখন রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিলেই ভালো হবে।আভা ওড়না আড়াআড়িভাবে কোমরে বেঁধে নেমে পড়ল রান্না করতে।এক এক করে একপদ তার পর দুইপদ রান্না শেষ করে।তিন নম্বর পদ রান্নার সময় ডাক পড়ে তার,
– আভা… আভা! আভা?

রৌদ্র সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে এদিকে কড়াইয়ে পেঁয়াজ পুড়ে যাচ্ছে।কোন দিকে সামলাবে ভাবতে গিয়ে আরো বেশি গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলে আভা।পুড়া পেঁয়াজ কোনো কিছু না ভেবেই এক মগ পানি ঢেলে দেয়।মেজাজ বিগড়ে যায় মুহুর্তে।চুলো বন্ধ করে ছুট লাগায় রৌদ্রের কাছে।তড়িঘড়ি দরজা খুলে তেজি স্বরে বলে,
– কি হয়েছে?

রৌদ্র চেয়ারে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে একাধারে আভাকে ডেকে চলেছে।আভা ঝাড়ি দিতেই সে অবাক হয়ে বলে,
– এ কেমন এটিটিউড?

আভা আগের মতোই ঝাড়ি দিয়ে বলে,
– রান্না করছিলাম আমি।আপনার ডাকাডাকিতে সব গুলিয়ে গিয়েছে।

রৌদ্র শব্দ করে হাসে।যে হাসি দেখে দ্বিগুণ শরীর জ্বলতে থাকে আভার।পূর্বের ন্যায় ঝাড়ি দিয়ে বলে,
– হাসি বন্ধ করে কি জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন।

রৌদ্র হাসি থামিয়ে গম্ভীর হয়ে যায়।ভ্রু কুঁচকে শান্ত কন্ঠে বলে,
– এই এটিটিউডে আমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছি না?যাও এক কাপ কফি নিয়ে আসবে।উইথ এক্সট্রা সুগার এন্ড মিল্ক।

আভা কিছু একটা ভেবে ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো।বুকে হাত গুঁজে দৃঢ় ব্যক্তিত্বের সাথে বলে,
– ওর্ডার করলে দিবো না রিকুয়েষ্ট করেন।

রৌদ্র কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আভাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করল।এই চার আঙুল মেয়েকে এখন রিকুয়েষ্ট করা লাগবে তার?তবে এখন কফিটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।তাই এই রাত দুপুরে ঝামেলা না পাকানোটাই ভালো।এসব ভেবে রৌদ্র একটি মিষ্টি হাসি দিলো যার মধ্যে ছিল ক্ষোভের চিহ্নও।হাসি দিয়ে বারবার চোখের পলক ফেলে মিষ্টি করে বলে,
– আপনার হাতে বানানো এক কাপ কফি কি পেতে পারি,মাই কুইন?

আভার বেশ মনে ধরে রৌদ্রের এমন শিশুসুলভ বাচনভঙ্গি।সেও উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে চলে যায় রৌদ্রের জন্য কফি তৈরি করতে।কিছুক্ষণ পর কফি নিয়ে ফিরেও আসে।কীবোর্ডের পাশে মগটা রেখে মনিটরে তাকায় সে।কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,
– এগুলো কি করছেন?

রৌদ্র মনিটরে চোখ রেখেই বলে,
– একটা অ্যাপ ডিজাইন করছি।

আভা বিস্মিত স্বরে বলে,
– অ্যাপ..?!

রৌদ্র উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।আভার হাত ধরে টেনে তার সামনে বসিয়ে দেয়।কৌতুহলী আভা জিজ্ঞেস আবারো জিজ্ঞেস করে,
– কি অ্যাপ।

রৌদ্র আভার চোখে চোখ রেখে বলে,
– ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট রিলেটেড একটা অ্যাপ।নাম “ইভেন্ট প্লানার”

– এটা দিয়ে কি হবে?

– এটাতে বিভিন্ন ইভেন্ট কোম্পানির প্রফাইল এবং ডেটা থাকবে।সকল ধরণের ছোট বড় কোম্পানি এটাতে প্রফাইল ক্রিয়েট করতে পারবে।তাদের বিভিন্ন জায়গায় করা কাজের কিছু অংশ তারা তাদের প্রোফাইলে শেয়ার করবে। তারপর তাদের রেটিং এবং কাজের নমুনা দেখে ক্লাইন্ট ইন্সট্যান্ট কোনো ঝামেলা ছাড়ায় তাদের পছন্দের ইভেন্ট কোম্পানি হায়ার করতে পারবে।বুঝেছ কিছু?এতে সময়ও বাজবে আবার সুন্দরভাবে কাজও হবে।

আভা কৌতুহলী স্বরে বলে,
– এটা কি আপনি বানাচ্ছেন?

– আইডিয়াটা আমার নয় তবে এর ডিজাইন করার জন্য আমাকে হায়ার করা হয়েছে।এটা অন্যকেউ লঞ্চ করবে আমি করতে পারবো না।এটার ডিজাইনার আমি বাট ওনার অন্যকেউ।

– ওহ্ আচ্ছা। তারমানে এই অ্যাপের মালিক অন্যকেউ?

– হ্যাঁ।কাল ভার্সিটি আছে না?যাও ঘুমাও।আমার দেরি হবে অনেক।

আভার মন খারাপ হয়ে গেল।সে মুখ কালো করেই বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।রান্নাঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বেডরুমে চলে যায় আভা।চুপচাপ শুয়ে পড়ে সে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে থম মেরে বসে বিছানায় কিছুক্ষণ বসে রইলো আভা।আশেপাশে রৌদ্রের ছায়া টুকুও নেই।তব্দা খেয়ে আরো কয়েক মিনিট বসে রইলো।সে।মনে মনে ভাবে রৌদ্র কি সারারাত ঘুমাইনি?বড় বড় চোখে বিছানা থেকে নেমে পাশের ঘরে যায় সে।রৌদ্র গতকাল রাতে যেখানে বসেছিল এখনো সেখানেই বসে এক ধ্যানে মনিটারের দিকে তাকিয়ে আছে।আশেপাশে চিপসের খালি প্যাকেট আর কোল্ড ড্রিংকসের খালি ক্যান।আভা অবাক সুরে বলে,
– আপনি ঘুমাননি?

রৌদ্র এক নজর আভার দিকে দেখে আবারো মনিটরে তাকায়।কোনো জবাব করে না।আভা হতভম্ব হয়েই চলে আসে সেখান থেকে।খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে রৌদ্রকে ডাক দেয়।রৌদ্রকে অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর সে খাবার খেতে আসে।আভাকে তাড়া দিয়ে বলে,
– জলদি খেতে দাও অনেক খিদে লেগেছে।

আভা বর বড় চোখেই খাবার তুলে দেয় রৌদ্রের পাতে।অবিশ্বাস্য সুরে বলে,
– আপনি সারারাত না ঘুমিয়ে এখনো ঠিক আছেন কিভাবে?

রৌদ্র খাবার মুখে দিতে দিতে বলে,
– আমার অভ্যাস আছে।তাছাড়া একাজগুলো রাতেই আসে।বাংলাদেশে এসে টাইমে একটু ঝামেলা হয়ে গিয়েছে।ওরা যখন ওর্ডার দেয় তখন ওদের ওখানে দিন বাট আমাদের এখানে রাত।বুঝলে?

– আপনি কি ফ্রিল্যান্সিং করেন?

– কিছুটা তেমনই।বুঝলে?

– হাত দিয়ে খান।

আভার এমন কথায় খাওয়া থেমে গেল রৌদ্রের।সে হাত দিয়ে খেতে পারে না।তবু বউ বলেছে তাই সে চামচ পাশে রেখে মুঠোয় খাবার নিয়ে মুখে মুড়ির মতো ছুঁড়ে দিলো।যার ফরে খাবার কিছুটা নিচে পড়ে যায়।আভা চোখ গরম করে তাকায় রৌদ্রের দিকে।রৌদ্র মেকি হেসে বলে,
– পারি না তো।

আভা মুখ ভেঙচি দিয়ে নিজের খাবার খায়।রৌদ্রের মাথায় কোনো ধুরন্ধর বুদ্ধি খেলে যেতেই মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে তার।নড়ে চড়ে আভাকে বলে,
– তুমি খাইয়ে দাও।

আভা মুখ ঝামটি দিয়ে বলে,
– চামচ দিয়েই খান আমার ক্লাস আছে।

রৌদ্র আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার নিষ্ঠুর,ব্রিটিশ বউয়ের দিকে।মলিন মুখে কাটা চামচ দিয়ে খাবার খেয়ে বেড রুমে যেতে যেতে বলে,
– আমি ঘুমাই তুমি।

চট করে আভা বলে,
– দরজা লক করবে কে?

– বাইরে থেকে লক করে যেও।

– আপনি বের হবেন না?

– না।

রৌদ্র বেডরুমে চলে যায় ঘুমানোর উদ্দেশ্যে।আভা খাবার টেবিল পরিষ্কার করে রেডি হয়ে নেয় ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।দরজায় কলিং বেল বাজাতে কপাল কুঁচকায় আভা।বিছানায় ঘুমানো রৌদ্রের দিকে একবার তাকিয়ে দরজা খুলতে যায়।দরজা খুলবে কি খুলবেনা নিয়ে দ্বিধায় ভোগে।অনেকক্ষণ অতিক্রম হলে দরজা খোলে আভা।বাইরে দাঁড়িয়ে আছে একদল তাগড়া পুরুষ।যাদের গায়ে একটি বুলেট প্রুফ কোর্ট যেটাতে বড় বড় করে ইংরেজি এবং বাংলায় লেখা “র‍্যাব”।ঘাবড়ে যায় আভা।তারা আভার দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে।আভা মিনমিন করে বলে,
– আপনারা?

তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক লোকটি সুন্দর সুশীল ভাষায় উত্তর দেন,
– আমরা র‍্যাব-৬। আপনার সাথে আর কেউ আছেন?

আভা কোনোমতে উত্তর করে,
– হ্যাঁ আমার হাসবেন্ড।

– ডাকুন ওনাকে।

আভা মাথা নাড়িয়ে ঘরে চলে যায়।রৌদ্রকে কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর সে ঘুম থেকে উঠে পরে।প্রথমে র‍্যাবের লোকদের দেখে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে যায় সেও।পরমুহূর্তেই নিজেকে স্বাভাবিক করে জিজ্ঞেস করে,
– জ্বী অফিসার বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

অফিসারের সোজাসুজি জবাব,
– আমরা আপনার বাসা তল্লাশি করতে চাই।

আভা দ্বিমত করে কিছু বলতে যাবে তৎক্ষনাৎ তাকে ইশারায় থামিয়ে দেয় রৌদ্র।র‍্যাবের লোকদের সম্মতি দিলে তারা পুরো বাসাটা লণ্ডভণ্ড করতে শুরু করে।ডুকরে কান্না বেরিয়ে আসতে চায় আভা।সে কখনো এইসব র‍্যাব,পুলিশ,আর্মি এদের মুখোমুখি হয়নি।রৌদ্র শান্ত দৃষ্টিতে র‍্যাবের লোকদের সকল কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে।রৌদ্রের কম্পিউটার ল্যাব ঘুরে একজন লোক রৌদ্রকে বলেন,
– আপনার কম্পিউটারটি অন করেন।

রৌদ্র কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ নজরে তার দিকে তাকিয়ে থেকে কম্পিউটার অন করে দেয়।তারা কম্পিউটারে কিছু একটা পরখ করে সিনিয়র অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলেন,
– জ্বী স্যার ডিভাইসের আইপি এড্রেস মিলে গিয়েছে।তবে ইউজার নেম চেঞ্জ করে “আফসিন রৌদ্র” করা হয়েছে।আগে শুধু র‍্যানডম কিছু সংখ্যা ছিল।

ভ্রু কুঁচকে আসে রৌদ্রের।সিনিয়র অফিসার রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে বলেন,
– সাইবার ক্রাইমের অপরাধে আপনাকে এরেস্ট করা হলো মি.আফসিন রৌদ্র।

চমকে উঠলো রৌদ্র এবং আভা।রৌদ্র বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
– হোয়াট?

অফিসার খুব স্বাভাবিকভাবেই বলেন,
– আপনার ডিভাইস থেকে একাধিকবার নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাকিং এর চেষ্টা হয়েছে।আপনি কি জানেন এর শাস্তি কি হতে পারেন এর শাস্তি কি হতে পারে?যেহেতু আপনি একাধিক এইকাজ করেছেন ফলে আপনার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে।এবং সর্বনিম্ন শাস্তি সাত বছরের জেল এবং পঁচিশ লাখ টাকা জরিমানা।

রৌদ্রের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।আভা অফিসারের কথা শুনে হু হু করে কেঁদে দেয়।রৌদ্র বিস্মিত স্বরে বলে,
– কিন্তু অফিসার আমি তো গতকালই এটা কিনেছি।তাছাড়া আমি এসবের কিছুই জানি না।

– সরি মি.আফসিন রৌদ্র আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।

আবার কান্নার বেগ বেড়ে গেল।র‍্যাবের বাকি সদস্যরা পিসি সহ আরো কিছু জিনিস সিল করে ফেলে।রৌদ্র আভাকে একহাতে জরিয়ে বলে,
– কান্না করো না।অভয়কে ফোন করো ফোন করে বলো পিসি কোথা থেকে কিনেছে? পিসি সেকেন্ড হ্যান্ড কিনা?

আভা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
– পিসি আপনি কিনেনি?

– আমি সময় পেলাম কোথায়?অভয় কিনেছে পিসি।ওকে ফোন করো দ্রুত।অফিসার আমার ওয়াইফ তো এখানে একা আপনারা কি ওকে একটু ওর ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন?

অফিসার কিছুক্ষণ ভেবে সায় দিলেন।তার সহকারীদের ইশারায় আভাকে পৌঁছে দিতে বলে।আভা জেদি স্বরে বলে,
– না আমি আপনার সাথে যাবো।

সঙ্গে সঙ্গে ধমক দেয় রৌদ্র,
– এইহ্ তুমি আমার সাথে গিয়ে কি করবে?তুমি কি উকিল নাকি যা বলছি তাই করো।

অফিসার রৌদ্রকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।আভাকে নিয়ে বের হলেন র‍্যাবের একজন সহকারী।আভা থেকে থেকে ডুকরে কেঁদে উঠছে।মুহুর্তেই সবখানে ছড়িয়ে পড়ে এ খবর।রৌদ্রের মা-বাবার কানেও যায় এ খবর।রোদেলা অস্থির হয়ে পড়ে ছেলেকে দেখার জন্য।তৎক্ষনাৎ এমার্জেন্সি টিকেট কেটে ফ্লাইট ধরে রৌদ্র এবং হামিদ।

চলবে…

#প্রিয়_বালিকা |৩১|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

আভাকে অভয়ের অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়ে যায় র‍্যাবের গাড়ি।আভা অভয়কে একাধিক বার ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু তার কোনো খবর নেই।হয়তো কোনো জরুরি মিটিং-এ সে আঁটকে আছে।বেশ কিছুসময় দাঁড়িয়ে লাগাতার কল করার পর কল রিসিভ হয়।অভয় বেশ চিন্তিত স্বরে আভাকে জিজ্ঞেস করে,
– আভা কি হয়েছে? এতোবার কল করছিস কেন?কোনো প্রবলেম হয়েছে নাকি?

আভা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নাক টেনে বলে,
– ভাইয়া তাড়াতাড়ি নিচে এসো।

অভয়ের চিন্তা বেড়ে গেল।সে উদ্বেগ স্বরে বলে উঠলো,
– কি হয়েছে আভা?

আভা শুধু একই কথা বলে গেল,
– ভাইয়া তুমি নিচে এসো, প্লিজ!

অভয় আর কোনো প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করে না।দ্রুতগতিতে নিচে নেমে আসে।দেখতে পায় বিদধস্ত তার বোন দাঁড়িয়ে।বুকের ভিতর ধক করে হয়ে অভয়ের।উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে আসে আভার কাছে।আভাকে নিজের বাহুডোরে আগলে নিয়ে জানতে চায়,
– কি হয়েছে বোনু?এভাবে কাঁদছিস কেন?রৌদ্র কোথায়?ও কিছু বলেছে তোকে?

আভা কান্নার বেগে কিছু বলতে পারে না।ভাইয়ের বুকে মুখ গুঁজে গলা ছেড়ে কেঁদে ওঠে সে।অভয়ের উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়।বোনকে সে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখিনি।আভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নরম স্বরে বলে,
– কি হয়েছে বল আমায় বোনু?রৌদ্র কিছু বলেছে তোকে?আমাকে একবার বল জান নিয়ে নিবো ওর।

শেষের কথাটি কঠিন সুরে বলে অভয়।যা শুনে কেঁপে ওঠে আভা।কান্নার বেগ আরো বৃদ্ধি পায়।হিঁচকি তুলে থেমে থেমে বলে,
– ভাইয়া ওরা রৌদ্রকে নিয়ে গিয়েছে।জেলে নিয়ে গিয়েছে। তুমি তুমি কোথা থেকে কম্পিউটার কিনেছ?ওরা ওটার জন্য রৌদ্রকে নিয়ে গিয়েছে।

অভয় আভার এমন ছাড়া ছাড়া বাক্য প্রথমেই আমলে আনতে ব্যর্থ হয়।স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আভার দিকে।আভার কথাগুলো মস্তিষ্ক মিলিয়ে বলে,
– কম্পিউটারের জন্য নিয়েছে মানে?

আবা পুনরায় থেমে থেমে বলে,
– ওরা বলছে রৌদ্র নাকি পুরো নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক না কি যেন করছে আমি বুঝিনা।তাই ওরা ওনাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে।

অভয় বিস্মিত হয়ে বলে,
– রৌদ্র হ্যাক করছে?নেটওয়ার্ক সিস্টেম?

আভা তেজি স্বরে বলে,
– না উনি করেনি।তুমি কম্পিউটার নিয়েছ যার থেকে সে করছে।

অভয়ের মাথায় বাজ পড়ে।চোখ বড় বড় করে শুঁকনো ঢোক গিলে আবাকে বলে,
– রৌদ্র এখন কোথায় আছে?

আভা নাক টেনে বলে,
– র‍্যাম নিয়ে গিয়েছে মনে হয় পুলিশের কাছে থানায়।

অভয় আর এক মুহুর্ত দেরি না করে আভাকে নিয়ে পাশ্ববর্তী থানা চলে যায়।থানায় প্রবেশ করতে করতে আভা ডুকরে কেঁদে উঠে বলে,
– উনি আমার হাতে খেতে চেয়েছিল।আমি কেন খাইয়ে দিলাম না!

অভয় বোনকে ধরে শান্তনা দিতে দিতে থানার ভিতরে চলে যায়।থানার ভিতরে একটা কাঠের বেঞ্চে মাথা নত করে বসে আছে রৌদ্র।র‍্যাব এবং পুলিশ মিলে রৌদ্রকে কোর্টে তোলা এবং জেলে দেওয়ার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করছেন।পুলিশের একজন কনস্টেবল রৌদ্রকে জিজ্ঞেস করেন,
– আপনার পক্ষ থেকে কি কোনো ল-ইয়ার হায়ার করা হয়েছে?তার কি কোনো বক্তব্য আছে এ বিষয়ে।

রৌদ্র কোনো উত্তর করে না।কিই বা বলবে সে?তার পক্ষ থেকে ল-ইয়ার যে হায়ার করবে সে কই?এর মধ্যে থানায় প্রবেশ করে আভা এবং অভয়।অভয়কে দেখে প্রাণ ফিরে পায় রৌদ্র।অভয় উৎকন্ঠা হয়ে বলে,
– রৌদ্র এসব কি হচ্ছে?

রৌদ্র বিভ্রান্ত স্বরে বলে,
– আমি কিছু জানি না।সারারাত কাজ করে সকালে ঘুমিয়েছিলাম হঠাৎ করে ওনারা এসে বলেন বাসা সার্চ করবে তারপর তারপর কম্পিউটার সার্চ করে বলেন এই ডিভাস থেকে নাকি কোনো বড় ওয়েব অর নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করার চেষ্টা হয়েছে।কম্পিউটারটা কি সেকেন্ড হ্যান্ড?

অভয় অপরাধীর মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো। কাচুমাচু স্বরে বলে,
– কম্পিউটার আমার একজন কলিং কিনে এনেছিল।আমি টাইম বের করতে পারিনি তাই তাকে বলেছিলাম কিনে আনতে।

– ক্যাশ মেমো,ওয়ারেন্টি কার্ড কই?

– আমাকে দেয়নি।বলেছে এটা নাকি ইম্পোর্টেড পিসি।এর পিছনের সিল যতদিন থাকবে ততদিন ওয়ারেন্টি।

বিস্ময়ে চোখ বেরিয়ে এলো রৌদ্রের।অবিশ্বাস্য সুরে বলে,
– আর তুই এই কথা শুনে এটাকে ঘরে টেনে নিয়ে এলি?তোর মতো একটা শিক্ষিত মানুষকে এভাবে কেউ ঠকাতে পারে তা আমি ভাবতেও পারছি না।

অভয় নত সুরে বলে,
– আমি তকন তাড়াহুড়োয় ছিলাম মাথায় এতোকিছু খেলেনি।তুইও বললি পিসি আর্জেন্ট দরকার।তাই আমি পিসি পেয়ে এতোকিছুর কথা ভুলে গিয়েছিলাম।সরি বন্ধু।

রৌদ্রের রাগে শরীর জ্বলছে।এতক্ষণে সে আভাকে দেখে অভয়ের পাশে দাঁড়িয়ে নাক টেনে টেনে কেঁদে যাচ্ছে।এমনিতে তো অভয়ের কথা শুনে রাগ উঠে গিয়েছে তার উপর আভার কান্না যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিলো।রৌদ্র আভাকে ঝাড়ি দিয়ে বলে,
– আর তুমি ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদছ কেন?ভাই-বোন দু’টোই মাথামোটা।

এতে করে আভার কান্না আরো বেড়ে যায়। বিরক্ত হয় রৌদ্র চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ভয়ে চুপসে যায় আভা।অভয় বোনকে একহাতে আগলে রৌদ্রকে বলে,
– ওর উপর রাগ দেখাচ্ছিস কেন?

রৌদ্র আবারো ত্যাড়া স্বরে বলে,
– এটাকে আবার শানিয়ে আনতে হয়েছে কেন?

– তো ওকে কোথায় রাখতাম?কি করবো এখন বল?

– আপাতত কোনো ল-ইয়ার হায়ার করে বেল এর ব্যবস্থা কর।বেল না দিতে চায়লে জামিনের ব্যবস্থা কর।কোথায় ফাঁসিয়ে দিলি শা’লা!

রৌদ্র নিজের চুলে আঙুল চালিয়ে এদিকে ওদিকে তাকায়।আভা গোল গোল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে রৌদ্র ত্যাড়া কন্ঠে বলে,
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

আভা এবার ক্ষিপ্ত হলো।কাঁদো কাঁদো মুখে বলে,
– আমার সাথে তেজ দেখাচ্ছেন কেন?

রৌদ্রের আবারো ত্যাড়া জবাব দেয়,
– ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কান্না লাগছে কেন তাহলে?মরে গিয়েছি আমি?

আভার মুখে অসহায়ের ছাপ ভেসে ওঠে।অভয় তার পরিচিত ল-ইয়ারকে ফোন করে সবকিছু ঠিকঠাক করে নিয়ে আসতে বলে।একজন পুলিশ কর্মকর্তা রৌদ্রের উদ্দেশ্যে বলে,
– আপনি কি কোনো ল-ইয়ার হায়ার করেছেন?

রৌদ্র অতি নরম সুরে বলে,
– জ্বী।খুব শীঘ্রই আসবেন তিনি।

– আচ্ছা তাহলে আপনাকে ততক্ষণ ভিতরে বসতে হবে।

পুলিশ থানায় থাকা লক-আপ দেখিয়ে বলেন।আভা ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রৌদ্রের দিকে।রৌদ্র সম্মতি জানিয়ে সেদিকে যেতে চায়লে হাত টেনে ধরে আভা।একপ্রকার খামচে ধরে তার হাত।জেদি কন্ঠে বলে,
– না আপনি ভিতরে যাবেন না।

বিরক্ত হয় রৌদ্র।ভ্রু কুঁচকে আভাকে একপলক দেখে পুলিশের দিকে তাকায়।সেও আভার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।রৌদ্র পুলিশের উদ্দ্যেশে বলে,
– স্যার ওনাকে কি এক গ্লাস পানি দেওয়া যায়?

অফিসার বিনয়ী স্বরে বলেন,
– জ্বী অবশ্যই।চলুন ম্যাম আমার সাথে চলুন।

রৌদ্র চোখ গরম করে আভাকে পুলিশের সাথে যেতে বলে।আভাও সভয়ে লোকটির সাথে যায়।
অভয়কে কল করে রৌদ্রের লোকেশন জেনে নেয়।যতদ্রুত সম্ভব চলে আসেন তিনি থানায়।থানায় প্রবেশ করেই হৈ-হুল্লোড় করেন তিনি।বারবার পাগলের মতো প্রলাপ বকেন,
– আমার ছেলে কোথায়?আমার ছেলে এমন কিছু করেনি।

পুলিশ অফিসাররা বেশ বিরক্ত হয় রোদেলার এমন আচারণে। থানার পরিবেশ হঠাৎই গরম হয়ে যেতে দেখে কপাল কুঁচকে আসে রৌদ্রের বাইরে তাকিয়ে মাকে দেখে মৃদু ঠোঁট নাড়িয়ে উচ্চারণ করে,
– মম!

ছেলের করুণ কন্ঠ স্বরে থমকে যান রোদেলা।টলমল চোখে পাশে তাকিয়ে ছেলেকে জেলের শক্তপোক্ত রডের ওপাশে দেখে বুকের ভিতর হু হু করে ওঠে তার।নিজের ডুকরে আসা কান্নাকে আঁটকাতে না পেরে ভেজা কন্ঠে বলে,
– বাবা!আমি একশোবার নিষেধ করলাম আসিস না আসিস না।দেখলি তো মায়ের কথা না শুনলে কত বিপদে পড়তে হয়!না না তোকে আমি এভাবে দেখতে পারবো না।এখনই তোর বেলের ব্যবস্থা করবে লিনডা।

রৌদ্র বিস্মিত কন্ঠে বলে,
– লিনডা?!

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে